টাইমলাইন : ইউরোপে নবী অবমাননা ও শাস্তি
২৯ আগস্ট, ২০০৪ সাল – সাবমিশন নামে একটি সিনেমা প্রকাশ করে থিও ভ্যান গগ নামে ডাচ সিনেমা নির্মাতা। সিনেমাটিতে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করা হয়।
২রা নভেম্বর, ২০০৪ সাল – সকালবেলা কাজে যাওয়ার সময় সাবমিশন সিনেমার প্রকাশক থিও ভ্যান গগকে হত্যা করেন মুহাম্মাদ বুয়েরি নামে একজন মুসলিম যুবক। এ সময় থিও ভ্যান গগের পেটে সিনেমাটির লেখিকা আয়ান হিরসি আলীকেও হত্যার হুমকিমূলক একটি নোট ছুরি দিয়ে গেঁথে রাখেন তিনি।
৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০০৫ সাল – প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে ‘জিল্যান্ডস-পোস্টেন’ নামক ডেনমার্কের একটি পত্রিকা।
অক্টোবর, ২০০৫ সাল – দেশটির মুসলিমরা এ নিয়ে প্রতিবাদ জানান। পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ডেনমার্ক সরকার। বরং, ১০টি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের রাষ্ট্রদূতরা ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে বসার অনুরোধ করলেও, ডাচ প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে বসতে রাজি হয়নি।
নভেম্বর, ২০০৫ সাল – জার্মানি ও বসনিয়ার দুটি ম্যাগাজিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননামূলক কার্টুনগুলো পুনঃপ্রকাশ করে।
২০০৬ সাল – বিশ্বের বিভিন্ন কুফফার দেশের ম্যাগাজিন ও পত্রিকাগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটূক্তিমূলক কার্টুনগুলো পুনঃপ্রকাশ করতে শুরু করে। তারা সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানে আঘাত হানতে শুরু করে। আর তাদের নেতারা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত তাদের পক্ষ নেয়।
এই তথ্য-সন্ত্রাসী ও শাতিমে রাসূলদের প্রতিক্রিয়ায় সারাবিশ্বের মুসলিমরা বিক্ষুব্ধ হন। বিভিন্ন দেশে এসব ক্রুসেডার সন্ত্রাসীগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, বয়কটের ডাক দেন। এসময় অনেক জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, হতাহতের খবরও আসে। মুসলিমরা ক্রুসেডার ইউরোপীয়দের দূতাবাসে হামলা চালান।
৩রা ফেব্রুয়ারী, ২০০৬ সাল – আরব আলেম শাইখ বদর বিন নাদের আল-মাশারের একটি অডিও ক্লিপ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে তৈরি করা অবমাননাকর কার্টুনকে ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যুদ্ধের একটি অংশ বলে উল্লেখ করেন। মুসলিমদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমাদের অস্ত্র কোথায়? শত্রুরা তোমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি করছে। জেগে ওঠো।”
৯ই ফেব্রুয়ারী, ২০০৬ সাল – শার্লি এবদো পত্রিকা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে অবমাননাকারী জিল্যান্ডস-পোস্টেন’ এর একটি কার্টুনসহ নিজেদের তৈরি করা আরো কয়েকটি কার্টুন প্রকাশ করে।
১লা মার্চ, ২০০৬ সাল – বিশ্বের কুখ্যাত সব শাতিমে রাসূল শার্লি এবদোর সাথে একাত্মতা পোষণ করে। বাংলাদেশের তাসলিমা নাসরিনও আছে এ তালিকায়।
২০০৭ সাল – এ সময়টাতে বিভিন্ন ইসলামবিদ্বেষী পত্রিকা মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন পুনঃপ্রকাশ করতে থাকে।
মার্চ , ২০০৮ সাল – শাইখুল মুজাহিদিন শহীদ (ইনশাআল্লাহ) উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কার্টুন পুনঃপ্রকাশের ব্যাপারে সতর্ক করেন, হুমকি দেন।
২রা জুন, ২০০৮ সাল – পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ডেনমার্কের দূতাবাসে শহিদী হামলা চালান আল-কায়েদার একজন মুজাহিদ। এতে ৬জন নিহত এবং আরো প্রায় ২৪জন আহত হয়। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন তৈরির জবাবেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানায় আল-কায়েদা।
অক্টোবর, ২০০৮ সাল – ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের অফিসিয়াল মুখপাত্র কারী ইউসুফ আহমাদী হাফিজাহুল্লাহ একটি সাক্ষাতকারে বলেন, উরুজগান প্রদেশে ডেনিশ (ডেনমার্কের) বাহিনীই হবে আমাদের প্রধান টার্গেট। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন তৈরির ইস্যুতে তিনি আরো বলেন, এই ডেনিশদের আফগানিস্তান থেকে বের হতে বাধ্য করা হবে।
২০০৯ সাল – আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে তৈরি করা ব্যঙ্গাত্মক ছবিগুলো দিয়ে একটি বই প্রকাশ করে।
১লা জানুয়ারী, ২০১০ সাল – মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র অঙ্গনকারী এক কার্টুনিস্টকে হত্যার চেষ্টা করেন আল-কায়েদা সোমালিয়ান শাখা হারাকাতুশ শাবাবের একজন মুজাহিদ। কিন্তু পুলিশের গুলিতে আহতাবস্থায় গ্রেফতার হন ঐ মুজাহিদ।
২০১১-২০১৪ সাল – প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননাকারীদেরকে বেশ কয়েকবার হত্যাচেষ্টা চালানো হয়।
৭ই জানুয়ারী, ২০১৫ সাল – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী শার্লি এবদোর অফিসে হামলা চালান আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখার মুজাহিদগণ। এতে কুখ্যাত ১২ শাতিমে রাসূল কার্টুনিস্ট নিহত হয় এবং আহত হয় আরো ১১ জন।
১লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সাল – শার্লি এবদোর কুখ্যাত কার্টুনিস্ট সন্ত্রাসীরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে অঙ্কিত ব্যঙ্গচিত্র পুনঃপ্রকাশের ঘোষণা দেয়। ফ্রান্স সরকার শার্লি এবদোর প্রতি সমর্থন জানায় এবং ইসলাম নিয়ে বাজে মন্তব্য করে।
২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সাল – শার্লি এবদো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন পুনঃপ্রকাশ করায় একজন নবীপ্রেমিক পাকিস্তানী যুবক শার্লি এবদোর পুরাতন অফিসের সামনে ছুরি নিয়ে হামলা চালান। এ হামলায় ২জন আহত হয়। শার্লি এবদোর অফিস পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি জানতেন না।
১৬ই অক্টোবর, ২০২০ সাল – ফ্রান্সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননাকারী স্যামুয়েল প্যাটি নামে এক শিক্ষককে হত্যা করেন একজন শিশানী মুসলিম তরুণ।
এরপরের ঘটনা সবার জানা। বিশ্বনবীর অবমাননায় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে ফ্রান্স সরকার। আর সরকারের সাথে আছে ইসলামবিদ্বেষী ফরাসি নাগরিকরাও। তারা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে অবমাননা করছে।
ফ্রান্সে সরকারি বহুতল ভবনে দেখানো হচ্ছে বিশ্বনবীকে নিয়ে শার্লি এবদোর নবী অবমাননামূলক ব্যঙ্গচিত্র। এভাবে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে কুলাঙ্গার শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে ফরাসি নাগরিকরা। প্যাটির পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দিয়েছে, ‘আমরা কার্টুন প্রকাশ বন্ধ করবো না।’
ফ্রান্সের সরকারের বিগত বছরগুলোর অবস্থান ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বক্তব্য স্পষ্ট করছে তারা বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের মতো ঔদ্ধত্য দেখানো থেকে নিবৃত হবে না। এর আগে দেশটি বাংলাদেশ থেকে পলাতক নাস্তিক লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে আশ্রয়, সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান ও ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পুরস্কৃত করেছে, পাকিস্তানের কুখ্যাত শাতিমে রাসূল আসিয়া বিবির আশ্রয়স্থলও ফ্রান্স।
বর্তমানে এই কুফফারগোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে কুৎসা রটনাকারী কা’ব ইবনে আশরাফের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যে কা’বের শেষ পরিণতি হয়েছিলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে সম্মানিত সাহাবীর আক্রমণে শোচনীয় মৃত্যু। ফ্রান্সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত অপরাধের মধ্যে এখন আর সীমাবদ্ধ নেই, ঘৃণ্য বিষয়টি এখন তাদের জাতীয় সত্ত্বার সাথে মিশে গেছে। বর্তমানে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে কা’ব বিন আশরাফে পরিণত হয়েছে বলাই যথার্থ হবে।
ক্রুসেডার ফ্রান্স রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিশ্বনবীর অবমাননায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই বিঘ্নিত করলো। তারা নিজেদের নাম শাতিমে রাসূলের খাতায় লিখিয়ে আল্লাহর জমিনে বসবাসের অধিকার হারিয়েছে। তাদের দূতাবাস, তাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এমনকি তাদের জনগণেরও নিরাপদে থাকার আর অধিকার নেই; সেটা হোক ফ্রান্সে, ব্রিটেনে, পাকিস্তান, ভারত কিংবা বাংলাদেশে।
প্রত্যেক এলাকার মুসলিমদের উচিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আক্রমণকারী এসব শাতিমে রাসূলদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া। তাদের পাওনা নিজ নিজ এলাকায় মিটিয়ে দেওয়া।
লেখক: রাফিদ ইয়াজভান
Comment