তালেবানের দাপুটে সামরিক উত্থান,
নয়া বিশ্বের আগমনী বার্তা
নয়া বিশ্বের আগমনী বার্তা
আমি যখন শাম ও আমাদের অন্যান্য জিহাদী ময়দানের ভাইদের সামরিক অনুশীলনগুলো দেখতাম তখন ভাবতাম, কবে আমরা আবারো একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি রাষ্ট্র এবং শক্তিশালী একটি সামরিক বাহিনী দেখতে পাবো? যাদের সামনে কুফ্ফার বিশ্ব হাঁটু গেড়ে বসবে, কুফ্ফার বিশ্ব তাদের ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ, এখন বৈশ্বিক জিহাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, হয়তো খুব শীগ্রই আমরা সেই দিন দেখতে পাবো ইনশাআল্লাহ।
বিগত ২০ বছর ধরে, ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের জানবায তালেবান মুজাহিদিন ক্রুসেডার আমেরিকা, ন্যাটো জোট এবং তাদের গোলাম মুরতাদ কাবুল বাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে লড়াই করে আসছেন। ঐ সময় থেকে তাঁরা কুফ্ফার ও মুরতাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের পরিচালিত অভিযান আর জিহাদি ময়দানের উপর বিভিন্ন ভিডিও ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে আসছেন। এসব প্রকাশনা তাঁরা নিজেদের অফিসিয়াল আল-ইমারাহ্, আল-হিজরা এবং মানবাউল-জিহাদ স্টুডিওগুলোতে প্রচার করে আসছেন। সেগুলোর অনেক ভিডিও আমিও দেখেছি। এসব ভিডিওর মধ্যে আল-হিজরাহ এবং মানবাউল-জিহাদ স্টুডিওগুলোর প্রকাশিত ভিডিওগুলো ছিল সাধারণত উচ্চমানের এবং উচ্চ নকশাকৃত; যেগুলোতে খুবই আকর্ষণীয়ভাবে জিহাদের বাস্তবতা, সামরিক অনুশীলন এবং রিবাতের ভূমিতে মুজাহিদদের কাটানো দিনগুলো তুলে ধরা হতো। এ ভিডিওগুলো দর্শকদেরকে জিহাদের প্রতি আগ্রহী করে তুলতো। দর্শকরা এসবের মাধ্যমে মুজাহিদদের ব্যাপারে ত্বাগুতী মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণাগুলোর বাস্তবতা বুঝতে পারতেন।
আলহামদুলিল্লাহ্, তালেবান মুজাহিদদের নির্মিত ভিডিওগুলোতে এখন অনেক নতুনত্ব এসেছে; যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে তালেবান মুজাহিদিন সর্বাধিক উৎসাহমূলক ৪১ মিনিটের “ভিক্টোরি ফোর্স-1 (বিজয় বাহিনী)” নামে অভিনব একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিক্টোরি ফোর্সের প্রথম কিস্তি প্রকাশের সাথে সাথে আসন্ন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কিস্তিও খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হবে বলেও তালেবানদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ভিডিওটি খুবই আকর্ষণীয় এবং জিহাদ করতে ইচ্ছুক দ্বীনি ভাইদের জন্য উৎসাহমূলক ছিল। এটি আফগানিস্তানের বাহিরে অর্থাৎ বহির্বিশ্বেও বেশ সাড়া ফেলেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও এটি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছে। এই ভিডিও প্রকাশের কিছুদিন পূর্বে তালেবান তাদের ‘শহীদ ব্যাটালিয়ন’-এর প্রশিক্ষণেরও বেশকিছু দৃশ্য প্রকাশ করেছিল। যেগুলো দেখে কাবুল বাহিনীর মাঝে রীতিমত একধরনের ভয় কাজ করতে শুরু করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার অন্য অনেক কর্মী ও দর্শকদের মতো আমিও ভিডিওটির ট্রেইলার দেখার পর এটি প্রকাশের অপেক্ষায় ছিলাম। তালেবানদের অফিসিয়াল পুশ্তভাষী মিডিয়ায় ভিডিওটি প্রচারিত হলে আমি মাঝারি মানের ভিডিওটি ডাউনলোড করেছি। ভিডিওটি দেখে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। তাদের সফলতা ও দ্বীনের পথে তাদের অবিচলতার দো’আ করেছি।
৪১ মিনিটের দীর্ঘ এই ভিডিওটিতে তালিবান কর্তৃক (আল-ফাতাহ্ সামরিক ক্যাম্প) পরিচালিত সেরা সামরিক অনুশীলন ও সামরিক মহড়ার হৃদয় প্রশান্তিকর দৃশ্যাবলী দেখানো হয়েছে। এমন দুর্দান্ত সামরিক অনুশীলন ও মহড়া যা আগে কেউ দেখেনি এবং কয়েক বছর আগে সাধারণ মানুষ মুজাহিদদের থেকে এমনটি কল্পনাও করতে পারেনি।
এখন কথা হচ্ছে, হঠাৎ করে তালেবানদের এ জাতীয় উচ্চমানের সামরিক মহড়ার ভিডিও প্রকাশের উদ্দেশ্য কী?
নিশ্চয়ই তালেবানদের এধরনের মহড়া ও সামরিক বাহিনীর অনুশীলনের ভিডিও প্রকাশের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বার্তা দেওয়া উদ্দেশ্য হতে পারে। যেমন এর কয়েকটি উদ্দেশ্য এমন হতে পারে-
১. সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করা:
একটি শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও এর প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং এর জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। আর এ লক্ষ্যেই ইসলামি ইমারত তাদের সামরিক মহড়ার আয়োজন করছে। যেন এ মহড়া দেখে আরো যুবক তাদের সাথে যোগ দিতে উৎসাহিত হতে পারে।
২. প্রতিটি সম্ভাব্য উপায়ে কাবুল প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করা:
দোহায় আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু হয়েছে, তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাবুল প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি করা তালেবানদের জন্য এখন সময়ের দাবি। যার ফলাফল হতে পারে, কাবুল প্রশাসন তার জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করবে এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তালেবানদের শর্ত মানতে বাধ্য থাকবে।
৩. শত্রুকে ভয় দেখানো:
সামরিক মহড়া চালিয়ে তালেবানরা শত্রুদের মাঝে ভয় তৈরি করছেন; যাতে তালেবান বিরোধীরা লড়াই না করে পালিয়ে যেতে ও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়; পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী অনৈসলামিক রাষ্ট্রগুলোও যেন কোনো ধরনের আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে নেয়। তালেবানরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাননি, অস্ত্র ফেলে দেননি—শত্রুদেরকে এমন বার্তা দেওয়াও উদ্দেশ্য হতে পারে। আর রক্তপাত রোধ করতে এটি কার্যকর অস্ত্র হতে পারে। অর্থাৎ আগেই ইসলামী রাষ্ট্রের শত্রুদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেওয়ার হিম্মত দুর্বল করে দেওয়া।
৪. নয়াবিশ্বের আগমনী বার্তা পৌঁছে দেওয়া:
ইসলামি আলেমরা এই শতাব্দীকে ইসলামের বিজয়ের শতাব্দী এবং কাফেরদের জন্য পরাজয় ও লাঞ্ছনার শতাব্দী বলে অভিহিত করেন। ইসলামী ইমারতের বিজয়ীবার্তা যেন সমগ্র বিশ্বকে সেই বিষয়টিই পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে আফগানিস্তানের আযম টিভি তালেবানদের ‘শহীদ ব্যাটালিয়ন’ এর একজন কমান্ডারের একটি সাক্ষাতকার নিয়েছিল। সাক্ষাতকারে ঐ তালেবান কমান্ডার বলেছিলেন, ‘আমরা এমন এক বাহিনী তৈরি করছি, যা আগে কেউ দেখেনি। আমাদের যোদ্ধাদের এমন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি যা আগে কেউ গ্রহণ করেনি। আমরা এখন এক নতুন শতাব্দীর পথে হাঁটছি, যেখানে আমাদের শত্রু অনেক, তাই আমরা সকল প্রতিকূল অবস্থার জন্য নিজেদেরকে তৈরি করে নিচ্ছি’।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর অনুগ্রহে তালেবানরা, সামরিক এবং রাজনৈতিক, উভয় দিক থেকেই এখন বিজয়ের পথে রয়েছেন। তাঁরা প্রথমে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ এবং এর জনগণকে সামরিকভাবে নিজেদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেছেন এবং পরে রাজনৈতিক বিতর্কে নিজেদের সমস্ত শর্ত মেনে নিতে কুফ্ফার বিশ্বকে বাধ্য করেছেন।
লেখক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক, আল ফিরদাউস নিউজ।
Comment