হে যুবক, জেগে ওঠো
“কে আছো এমন, যে কাব বিন আশরাফকে হত্যা করবে? সে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে!”
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আহ্বানে দাঁড়িয়ে গেলেন মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু।
“হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি?”
তারপরের কাহিনী সবারই জানা। অত্যন্ত কৌশলে নিজ জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে কীভাবে তিনি কাব বিন আশরাফকে জাহান্নামে পাঠিয়েছিলেন। নবীকে কষ্ট দেওয়ার পর, তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করার পর, বেঁচে থাকার অধিকার কারো থাকে না।
আপনার-আমার জীবনের চেয়েও প্রিয় মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজও যেন ঠিক এ কথাই বলছেন,
“কে আছো এমন, যে ফ্রান্সকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিবে? তারা যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিচ্ছে!”
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ অপমানে কি আমাদের মন কাঁদে না? ফ্রান্সের এ ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণে আমাদের ঈমানি গায়রতে কি ঝাঁকুনি লাগে না? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ অপমানের জবাব আজ দেবে কে! কেউ কি নেই মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর উত্তরসূরি হওয়ার!
আহ! বুকটা এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছে! হৃদয়টা নীল হয়ে যাচ্ছে এ ব্যথায়!
হে যুবক, আর কতকাল ঘুমিয়ে রবে? এখনো কি জাগবে না? চেয়ে দেখ, যে নবী তোমাদের জন্য বিচারদিনের সে ভয়াবহ সময়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন; উত্তপ্ত সে দিনে যে মানুষটি তোমাদেরকে হাউজে কাউসারের পানি পান করতে দিবেন, তাঁর ইজ্জতে যে আঘাত করা হচ্ছে! তবুও কি জাগবে না তোমরা?
তোমরা কি এতটাই অক্ষম? এতটাই দুর্বল? আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর কথা কি জানা নেই তোমাদের? অন্ধ, দরিদ্র একজন সাহাবী৷ নবীপ্রেম এ অন্ধ মানুষটির শরীরে এনে দেয় এক দুর্দমনীয় শক্তি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সেই ইহুদির নারীর কটুকথা তিনি সহ্য করতে পারেননি। গলাটিপে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন সেই নারীকে। ( আবু দাউদ ৪৩৬২, আস সুনালুল কুবরা, বাইহাকী ৭/৯৬ )
এটাই তো ঈমান! এটাই তো নবীপ্রেম! একেই তো বলে সুন্নিয়াত।
আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর থেকে কি প্রেরণা পেতে পার না তোমরা? না-কি তোমাদের অনুভূতি শক্তিই নেই? তোমাদের সে ঈমান কোথায়? কোথায় তোমাদের নবীপ্রেম?
“আল কুফরু মিল্লাতুন ওয়াহিদা”। কুফফাররা আজ দলবেঁধে নেমেছে ইসলামকে মুছে দেওয়ার মিশনে। ওরা আমাদেরকে কচুকাটা করছে সর্বত্র। আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আমাদের সন্তানদের এতিম বানাচ্ছে। আমাদের বোনদের করছে বিধবা। শুধু কি এইটুকুই? না, আরো আছে। ওরা কালামুল্লাহকে পদদলিত করছে! আমাদের নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিচ্ছে! প্রকাশ্যে তাঁর ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে!
কিন্তু ওরা জানে না, মুসলমানের ঈমানের শক্তি কতটা! এ গাফেল যুবকদের যেদিন হুঁশ ফিরবে, সুপ্ত বিবেকগুলো যেদিন জেগে ওঠবে, ঈমানি চেতনা যেদিন উদ্বেলিত হবে, সেদিন পথেঘাটে, প্রান্তরে-প্রান্তরে কেবল ওদের কর্তিত মস্তক পড়ে থাকবে৷
হে যুবারা, জেগে ওঠো। শাতিমে রাসূলের পরিণতি মৃত্যু বৈ দ্বিতীয় কিছু নেই। শাতিমে রাসূলের রক্ত মূল্যহীন। এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকারই তাদের নেই। তোমরা কি মুআজ ও মুআওয়াজ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুমার বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস ভুলে গেছ? এ যুগের ফিরআউন আবু জাহেলকে তাঁরা কেন হত্যা করতে অতটা উদগ্রীব ছিলেন?
আবদুর রহমান ইবনু আউফ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দাঁড়িয়ে আছি, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম, অল্প বয়ষ্ক দু’জন আনসার যুবকের মাঝখানে আছি। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল, তাদের চেয়ে শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি। তখন তাদের একজন আমাকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, চাচা! আপনি কি আবু জাহেলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে ভাতিজা, তাতে তোমার দরকার কী? সে বলল, আমাকে জানানো হয়েছে যে, সে আল্লাহ্*র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালাগালি করে। সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখতে পাই, তবে আমার দেহ তার দেহ হতে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষন না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু আগে নির্ধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায় আশ্চর্য হলাম। তা শুনে দ্বিতীয়জন আমাকে খোঁচা দিয়ে ঐ রকমই বলল। তৎক্ষণাৎ আমি আবু জাহেলকে দেখলাম, সে লোকজনের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমি বললাম, এই যে তোমাদের সেই ব্যক্তি, যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে। তারা তৎক্ষণাৎ নিজের তরবারি নিয়ে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করল। (সহিহ বুখারী : ৩১৪১)
যে যুবক, এসো ঘর ছেড়ে। তরবারিতে শান দাও, প্রস্তুত করে নাও ঘোড়াগুলোকে। এসো, যুক্ত হও উম্মাহর শার্দূলদের সাথে। নিশ্চিহ্ন করে দাও কুফরি শক্তিকে।
লেখক: আবদুল্লাহ আবু উসামা
Comment