শেখ হাসিনার রিদ্দা,
ধোঁয়াশা? নাকি সুস্পষ্ট?
ধোঁয়াশা? নাকি সুস্পষ্ট?
কয়েকদিন আগে কলকাতায় গিয়ে হিন্দুদের এক পূজা মণ্ডপ উদ্বোধন করায় সাকিব আল হাসানকে দেশের আলেম সমাজ তওবা করার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনাকে তওবার আহ্বানকারী কেউ কি আছে? হাসিনাতো অসংখ্যবার সুস্পষ্ট শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়েছে!
অথচ, এদেশের জনগণের কাছে শেখ হাসিনাকে উপস্থাপন করা হয় অত্যন্ত পরহেজগার, নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াতকারী, তাহাজ্জুদগুজার হিসেবে। শেখ হাসিনা নিজেও অনেক সময় তাহাজ্জুদ বা কুরআন তিলাওয়াতের কথা বলে থাকে। শেখ হাসিনা আল্লাহর ওলী, জান্নাতে শেখ হাসিনার হক আছে এমন কথাও বলা হয়ে থাকে! পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান উল্লেখ করেছিল, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত পুণ্য অর্জন করেছে যে, তার বেহেস্তে যাওয়ার অধিকার আছে, হক আছে!
https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=199798 [হক আছে]
অথচ সহিহ বুখারি এবং মুসলিম শরিফের হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি,
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَنْ يُنْجِىَ أَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُه قَالُوا: وَلَا أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ؟ قَالَ: وَلَا أَنَا إِلَّا أَنْ يَتَغَمَّدَنِى اللّٰهُ مِنْهُ بِرَحْمَتِه
“তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার আমল তাকে জান্নাতে দাখিল করতে পারে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনিও কি নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমিও নই। তবে আমার পালনকর্তা যদি তার অনুগ্রহের দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন”।
যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে, "শুধুমাত্র নিজের আমলঃ দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানালেন সে জায়গায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলছে, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত পুণ্য অর্জন করেছেন যে, তার বেহেস্তে যাওয়ার অধিকার আছে, হক আছে! নাউজুবিল্লাহ! নির্লজ্জের আচরণ করতে করতে তারা ভুলে যায় কোন জায়গায় তাদের সীমার শেষ! মুখের নোংরা চাটুকারিতায় তারা হয়ত কিছু জাহেলকেই ধোঁকা দিতে পারবে এর বেশি নয়!
অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে কওমি জননী উপাধি দিতেও কুণ্ঠা বোধ করেননি। তবে আজ আমরা কুরআন এবং সুন্নাহ দ্বারা যাচাই করে দেখব ইনশাআল্লাহ ‘কওমী জননী’ তাহাজ্জুদগুজার, জান্নাতে অধিকার অর্জন করে নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদৌ কি দ্বীনের মধ্যে আছে নাকি সে রিদ্দার মধ্য দিয়ে মুরতাদ, ধর্মত্যাগী, বেদ্বীন হয়ে গেছে -
১) হিন্দুদের প্রতিমা দুর্গার ব্যাপারে শেখ হাসিনার মন্তব্য:
পূজার অনুষ্ঠানের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক চোখে পড়ার মত, শুধু তাই নয় সে বেশ গর্বের সাথে উল্লেখ করে তিনি কতটি পূজার মণ্ডপের ব্যবস্থা করেছেন। দুর্গা পূজার অনুষ্ঠানে হিন্দুদের সাথে পূজার মণ্ডপে উপস্থিত হয়ে শেখ হাসিনা মন্তব্য করে -
" ... গজে করে নাকি যখন মা দুর্গা আসে, তখন দেশে নাকি অনেক ফসল হয়, এটা একটা কথিত আছে। কাজেই আমরা আশা করি আগামীতেও ফুলে ফলে ফসলে ভরে উঠবে, দেশের মানুষ উন্নত হবে ..."
গজে করে মা দুর্গা আসবে তাই শেখ হাসিনা আশা করে ফসল ভালো হবে! নাপাক মুশরিকদের নাপাক হাতে বানানো কাদা মাটির মূর্তির চিত্রিত আগমনের কারণে শেখ হাসিনা আশা করে দেশের ফসল ভালো হবে!
আল্লাহ বলেন -
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّى تُؤْفَكُونَ
হে মানুষ, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও জমিন থেকে রিজিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ? [ সুরা ফাতির ৩৫:৩ ]
অনেকেই বলতে পারেন শেখ হাসিনা মজা করে বা নিছক কথার খাতিরে কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার খাতিরে এমন কথা বলেছেন। চলুন দেখা যাক এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কি বলেছেন,
وَلَئِن سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِن نَّعْفُ عَن طَائِفَةٍ مِّنكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ
“আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার”। (সুরা তাওবাঃ ৬৫- ৬৬)
২)* ইমান ও কুফরকে সমান সমান মর্যাদা প্রদান:
শেখ হাসিনা নিজদের দাবি অনুযায়ী দেশের সংবিধান সংশোধন করে প্রত্যেক ধর্মকে সে সমান মর্যাদা দিয়েছে। সে বলেছে, ‘প্রত্যেক ধর্মের সমান মর্যাদা এবং সমান অধিকার থাকবে আমরা সেটাই এবার জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে তা নিশ্চিত করেছি’।
দেখা যাক আল্লাহ কি বলছেন -
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে কেবলমাত্র ইসলাম” (সুরা আলে-ইমরানঃ ১৯)
কিন্তু শেখ হাসিনার মতে কাফের মুশরিকদের ধর্ম এবং আল্লাহর ধর্ম ইসলাম সমান মর্যাদা পাবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে কাফের মুশরিকদের ধর্মের অবস্থান হচ্ছে -
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
‘যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে’। [ সুরা ইমরান ৩:৮৫ ]
তাছাড়া যারা ইসলামকে বাদ দিয়ে শিরকি ধর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই’। [ সুরা মায়েদা ৫:৭২ ]
সমান মর্যাদার বিষয়টিও শেখ হাসিনা এনেছে। দেখা যাক আল্লাহর দৃষ্টিতে কার মর্যাদা কেমন? আল্লাহ বলছেন -
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ
‘ইজ্জত, সম্মান তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুমিনদের জন্যই, কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না’। [ সুরা মুনাফিক্বুন ৬৩:৮ ]
শেখ হাসিনা তাহলে সব ধর্মের সমান মর্যাদার বিষয়টা কোথা থেকে পেল! এটি যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেননি তা তো সুস্পষ্ট! এমন কাজের বিষয়টি আল্লাহ তায়ালাই পরিষ্কার করে দিচ্ছেন এভাবে -
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘তাদের কি এমন শরীক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্যে সে ধর্ম সিদ্ধ করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি ? যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকত, তবে তাদের ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয় যালেমদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’। (সুরা আশ-শূরা: ২১)
৩) পর্দানশীল নারীদের জীবন্ত তাঁবু বলে উপহাসঃ
ইসলামের ফরজ হুকুম পর্দা। এই ফরজ হুকুমটির ব্যাপারে আল্লাহ কি বলেছেন -
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সূরা আহযাব : ৫৯)
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে’।-ফাতহুল বারী ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪
যেখানে প্রয়োজনের জন্য শুধু মাত্র একটি চোখ খোলা রাখার অনুমতি আছে, আর সমস্ত শরীর আবৃত থাকতে হবে এমন অবস্থায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে মুসলিম নারীদের পর্দার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছে, ‘হাত মোজা পা মোজা নাক-চোখ ঢাইকা একেবারে এটা কি? জীবন্ত টেন্ট (তাঁবু) হয়ে ঘুরে বেড়ানো, এর তো কোনো মানে হয় না।”
//
((https://www.youtube.com/watch?v=ggLPPnxFHSs।)
//
শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আল্লাহর হুকুম দেয়া পর্দা ব্যঙ্গাত্মক অর্থে জীবন্ত তাঁবু! সম্মানিত উম্মাহাতুল মু’মিনিনসহ সালাফে সালেহিনদের পবিত্র মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাগণ আল্লাহর হুকুম পর্দার ব্যাপারে যে অনুশীলন করে এসেছেন তা শেখ হাসিনার কাছে জীবন্ত তাঁবু!
৪) মালাউনের সাথে বন্ধুত্বঃ
শেখ হাসিনা একটি মুসলিম প্রধান দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে, রাষ্ট্র পরিচালনার সমস্ত বিভাগসমূহ নিয়ে মুশরিক, কসাই মোদি এবং তার শিরকি হিন্দুয়ানি ব্যবস্থাকে পরম বন্ধু হিসেবে, আউলিয়া হিসেবে গ্রহণ করেছে। এমনকি তার মন্ত্রীরা মুশরিকদের সাথে এই সম্পর্কে রক্তের সম্পর্ক বলে উল্লেখ করতেও বিন্দু মাত্র লজ্জা বোধ করেনি! এই হিন্দুয়ানি সিস্টেম এবং কসাই মোদির কাছে শেখ হাসিনা এতটাই নিবিড় ভালোবাসার বন্ধনে দায়বদ্ধ যে, সে নিজ দেশের মুসলিম জাতি গোষ্ঠীর সমস্ত মূল্যবোধ, ধর্মীয় অনুভূতি এবং ধর্মীয় অধিকারকে বিক্রি করে দিয়ে মুশরিক আউলিয়াদের মনোরঞ্জনে নিজেকে উৎসর্গ করেছে! বিষয়টি এত প্রকট যে, এক লাইনে এভাবে বলা যায় যখনই এদেশে কোনো নাপাক মালাউন আল্লাহ, তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীনের ব্যাপারে কোন কটূক্তি করে, তখন শেখ হাসিনা নিজে আইডি হ্যাকিং এর ব্যাখ্যা সবার সামনে পেশ করে। এবং এর পরপরেই মুসলিম জনতার বুক রক্তাক্ত করে দেয়া হয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা আমাদের জানিয়েছেন –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاء تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءكُم مِّنَ الْحَقِّ
‘হে ! মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে’। [মুমতাহিনাঃ ১]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
لاَّ يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاء مِن دُوْنِ الْمُؤْمِنِينَ
‘মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে’। [আল ইমরানঃ২৮]
৫) উত্তরাধিকারের ব্যাপারে শরীয়াহর আইনের বিরুদ্ধে বলা, এবং তা পরিবর্তনের চেষ্টা
ধর্মনিরপেক্ষ কুফরি সংবিধান দ্বারা চলা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোন পর্যায়েই ইসলামী বিধিবিধান পালন করা হয় না বললেই চলে। ব্রিটিশরা তাদের শাসনামলে, প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের নিজ নিজ ধর্মের রীতি অনুযায়ী উত্তরাধিকার ভাগবাটোয়ারা করার সুযোগ রেখেছিল। অর্থাৎ পিতার মৃত্যুর পর ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী পিতার সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করার সুযোগ মুসলিমদের দেয়া হয়েছিল। একইভাবে হিন্দুদের সুযোগ ছিল তাদের ধর্ম অনুযায়ী উত্তরাধিকার বণ্টনের। ব্রিটিশ শাসনের অবশিষ্ট অংশ হিসেবে এই বিধান এখনো বাংলাদেশ রাষ্ট্রে রয়ে গেছে। কিন্তু মুসলিমরা শরীয়াহ অনুযায়ী উত্তরাধিকার *সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বণ্টন করবে এটুকুও সহ্য করতে পারে না হাসিনা। তাই সে সরাসরি ঘোষণা দিয়ে মুসলিমদের কাছ থেকে শরীয়াহ অনুযায়ী উত্তরাধিকার বণ্টনের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। সে ২০১৯ এর ২৮শে এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে বলে -
‘‘কিন্তু কেবল শরিয়া আইনের দোহাই দিয়ে মা-মেয়েকে বঞ্চিত করে বাবার সম্পদ যে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়, তার কোনো সুরাহা করা যায় কিনা- আপনারা দয়া করে একটু দেখবেন৷ এটা করা দরকার৷’’
৬) শিরকি কাজে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ - মূর্তির পদতলে অর্ঘ্য প্রদানঃ
কসাই মোদির সাথে শান্তি নিকেতনে ঘুরতে যায় শেখ হাসিনা। শান্তি নিকেতনে প্রবেশের পরে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেয়া হয়, সামনে থাকা মূর্তির পদতলে ফুল ছিটিয়ে দেয়ার জন্য ফুলের পাপড়ি। উপাস্য মূর্তির সামনে ফুল, দুধ, খাবার, পানি ইত্যাদি ঢালা কিংবা পেশ করা মুশরিকদের মূর্তিপূজা তথা ইবাদতের অংশ। হাসিনা ঠিক এ কাজটি করেছে। শেখ হাসিনা সানন্দে সেই মূর্তির পদতলে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেয়।
এছাড়া মূর্তির প্রতি তার আলাদা দুর্বলতা আছে। তার খুব প্রিয় একটি কাজ নিজের বাবার মূর্তি তৈরি করে সেগুলোর সামনে দাড়িয়ে অধোবদনে দাঁড়িয়ে থাকা, কুর্নিশ করা, মূর্তির বেদিতে ফুল দেয়া, মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে মূর্তির দিকেই তাকিয়ে দু'হাত তুলে দুয়া করা। ঠিক ১৫০০ বছর আগের ঘটনা, যেমনটা কাফেররা বলত- আমরা তো এসব মূর্তির পূজা করিনা, এসব মূর্তির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য আশা করি!
মূর্তি বর্জনের হুকুম দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ
‘তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক’। [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:৩০ ]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
إِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا إِنَّ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوا عِندَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
‘তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করছ, তারা তোমাদের রিজিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিজিক তালাশ কর, তাঁর এবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’। [ সুরা আনকাবুত ২৯:১৭ ]
এই হচ্ছে শেখ হাসিনার রিদ্দার সামান্য নমুনা মাত্র! এর যে কোন একটির কারণে প্রধানমন্ত্রী দ্বীনের বাইরে চলে গেছে এবং সে স্পষ্টভাবে ধর্মত্যাগী মুরতাদ! একের পর এক শিরকের আস্তরণ সে নিজের উপরে ছড়িয়ে রেখেছে, আল্লাহর আদেশকে ব্যঙ্গ করেছে, এমনকি আল্লাহর আদেশকে উপেক্ষা করে নিজের মন মত আদর্শের অনুসরণ করেছে।
আর শিরকের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
"যদি তুমি শিরক কর তাহলে তোমার সমস্ত কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে" [সুরা যুমারঃ ৬৫]
সর্বকালের সকল ইমাম, সালফে সালেহিন এবং উলামাগণ এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করেন নি। যে শিরক করে এবং সে অবস্থার উপরেই অটল থাকে তার সকল কর্ম আল্লাহর সামনে শূন্য! অবশ্যই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার, আমরা কি তাহলে নিজেদের মনগড়া চিন্তা চেতনা বা কিছু নির্লজ্জ চাটুকারের চাটুকারিতা বিশ্বাস করব? নাকি সুস্পষ্ট দলিল, কুরআন সুন্নাহ এবং সকল সময়ের ইমামগণ, সালফে সালেহিন এবং উলামাদের রায় বিশ্বাস করব!
Comment