Announcement

Collapse
No announcement yet.

আন্তরিক তাওবা পর্ব : (১/২)

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আন্তরিক তাওবা পর্ব : (১/২)


    তাওবা মুমিনের জীবনে আল্লাহ তাআলার কাছে একনিষ্ঠ হওয়ার জন্য একটি মাধ্যম। বান্দা তার পাপের মার্জনা তাওবার মাধ্যমেই করে থাকে ।

    আল্লাহ তা আলা বলেন,
    وَتُوبُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

    "হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহর নিকটে তাওবা করো , আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে ।" (সূরা নূর : ৩১)

    এটি সূরাহ নূরের একটি আয়াত । এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির সেরা মুমিন বান্দাদের বলেছেন যে, তারা যেন তাঁর নিকটে তাওবা করে । অথচ তারা ঈমান এনেছে , কাফেরদের অনেক কষ্ট ও অত্যাচার সহ্য করেছে, তাঁর পথে হিজরত করেছে এবং তার শত্রুদের বিরুদ্ধে যান মাল দিয়ে জিহাদ করেছে । অতঃপর আল্লাহ তাআলা সফলতাকে তওবার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, যেমন উপকরণকে উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত করা হয় । এখানে لَعَلَّ (লায়ালা ) আশা করা যায় শব্দটি ব্যবহার করেছেন -এটা বুঝানোর জন্য যে , তোমরা যখন তাওবা করবে, তখন তোমাদের সফলতা আশা করা যায় । সুতরাং কেবল তাওবাকারী ব্যক্তিই সফলতা আশা করতে পারে, অন্য কেউ নয় । আল্লাহ তা আলা উক্ত সফল তাওবাকারীদের দলভুক্ত করুন (আমিন) ।

    আল্লাহ তা আলা বলেন,
    وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ
    যারা তাওবা করে না তারাই জালিম বা অত্যাচারী । (সূরা হুজরাত :১১)

    আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের দুই ভাগে শ্রেণীভুক্ত করেছেন : ১.তাওবাকারী ও ২. জালিম । এখানে তৃতীয় কোনো শ্রেণী নাই। যারা তাওবা করে না তাদেরকে তিনি জালিম বলেছেন। আসলে তার চেয়ে জালিম আর কেউ নাই। কারণ সে তার রব সম্পর্কে, রবের হক সম্পর্কে, নফসের দোষত্রুটি সম্পর্কে এবং তার আমলের কমতি ও বিপদাপদ সম্পর্কে অজ্ঞ ।


    "সহীহ মুসলিম" - এ এসেছে নবী করীম (স.) বলেছেন ,
    "ওহে লোকসকল,তোমরা আল্লাহর নিকটে তাওবা করো। আমিতো আল্লাহর নিকটে প্রতিদিন একশ বার তাওবা করি ।" (মুসলিম ২৭০২)

    তাওবা ও সুরাহ ফাতিহা :
    যেহেতু তওবা হলো আল্লাহর দিকে ফিরে আসা এবং গুজবপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথ থেকে বেঁচে থাকা, আর এটি কেবল সীরাতে মুস্তাকিমের দিকে আল্লাহর হিদায়াত প্রদানের মাধ্যমেই অর্জিত হয় । আর আল্লাহর হেদায়াত পাওয়া যাবে কেবল তার সাহায্য ও তার তাওহীদের দ্বারা । সেই হিসেবে সূরাহ ফাতিহা সবচেয়ে সুন্দর পদ্ধতিতে এবং সর্বোত্তম বিন্যাসে তায়বাকে অন্তুর্ভুক্ত করে।


    যে ব্যক্তি প্রত্যক্ষ জ্ঞানগত ও প্রজ্ঞাগতভাবে সূরা ফাতিহাকে পৰিপূৰ্ণ হক প্রদান করবে, সে জানতে পারবে যে,খাঁটি তাওবা করা ছাড়া ইবাদতের দিক থেকে সূরা ফাতিহা অধ্যয়ন বিশুদ্ধ ( উপকারী ) হয় না । কেননা গুনাহ সম্পর্কে গাফেল থেকে, গুনাহের উপর অটল থেকে সীরাতে মুস্তাকিমের পরিপূর্ন হেদায়াত পাওয়া সম্ভব নয়। করণ প্রথমত মুর্খ্যতা হলো হিদায়াতের প্রজ্ঞার বিপরীত। দ্বিতীয়ত মূর্খতা ব্যক্তির ইচ্ছা ও ইরাদা কে বিলুপ্ত করে দেয়। এর দরুন হিদায়াতের চলার সংকল্প ও ইচ্ছা আর জন্মায় না। আর এ কারণে তাওবা কেবল তখনি গ্রহণযোগ্য হবে, যখন ব্যক্তি তার গুনাহ সম্পর্কে জানবে, গুনাহকে স্বীকার করবে এবং এর সব ধরণের ক্ষতিকর পরিণতি থেকে বাঁচার পথ খুঁজবে ।

    তাওবার শর্তসমূহ :
    গুনাহে লিপ্ত হয়ে মুমিন কখনো পরিপূর্ণ স্বাদ ও আনন্দ পেতে পারে না, এর দ্বারা সে কখনো পরিতৃপ্ত হতে পারে না। বরং যখন সে গুনাহে জড়িয়ে যায়, তখন তার অন্তরে পেরেশানি ও অস্থিরতা বিরাজ করে। কিন্তু নাফ্স ও কুপ্রবৃত্তির খাহেশাত আর চাহিদা তাকে ( গুনাহে জড়ানোর ) পেরেশানি থেকে ভুলিয়ে দেয় (ফলে সে গুনাহ করতে থাকে )। অন্তর যখন এই পেরেশানি ও অস্থিরতা থেকে শূন্য হয় এবং গুনাহ ও পাপাচারে দরুন তার আনন্দ-খুশি বেড়ে যায়, তখন সে যেন তার ঈমানের খবর নেয় এবং সে যেন তার অন্তর মৃত্যুর জন্য কান্নাকাটি করে। কেননা তার অন্তর যদি জীবিত থাকত তাহলে অবশ্যই গুনাহে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি তাকে পেরেশানি করে তুলতো, সে চিন্তিত হয়ে পড়ত। অথচ অন্তর কিছুই টের পায় না । আসলে আঘাত দরুন মৃত ব্যক্তি কোনো ব্যথা অনুভব হয় না ।

    গুনাহের এই বেপরোয়া অবস্থা থেকে অল্প সংখ্যক মানুষই পথ খোঁজে পায় কিংবা এই বেপারে সতর্ক হয়। এটি অত্যন্ত ভয়ংকর একটি ক্ষেত্র। তিনটি বিষয় দ্বারা যদি আর প্রতিকার না করা হয়, তাহলে এটি ব্যক্তিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। বিষয় তিনটি হলো: ১.তাওবার পূর্বেই মৃত্যু এসে যাওয়ার ভয়। ২. আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে আল্লাহর যে নিয়ামত হারিয়েছে, তার জন্য অনুশোচনা করা এবং ৩. গুনাহের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে , তা পূরণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা।

    সুতরাং তওবার হলো -
    ১.অতীতে যা হয়েছে তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া ।
    ২.বর্তমানে তাৎক্ষণিকভাবে তা থেকে বিরত থাকা এবং
    ৩ ভবিষ্যতে তাতে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা ।

    আর এই তিনটি বিষয় সেই সময় একত্রিত হয়,যখন একনিষ্ঠ তাওবা সংগঠিত হয় । কেননা সেই সময় ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়, গুনাহ থেকে বিরত থাকে এবং গুনাহে না জড়ানোর দৃঢ় সংকপ্ল করে। ফলে যে দাসত্বের জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে,সে তার দিকে ফিরে আসে । এই ফিরে আসাই হলো প্রকৃত তাওবা। এই বিষয়টি যেহেতু ওই তিনটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে, তাই সেগুলোকে তাওবার শর্ত সাব্যস্ত করা হয়েছে ।

    অনুতপ্ত হওয়া ছাড়া তাওবা সংগঠিত হয়না :
    কারণ যে ব্যক্তি গুনাহ ও মন্দ বিষয়ে লিপ্ত হয়েও কোনো অনুশোচনা করে না; সেটাই আর দলিল যে , সে তাতে সন্তুষ্ট এবং অনড় । আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা হতে একটি হাদিস এসেছে , " অনুতপ্ত হওয়াই হলো তাওবা" । (ইবনে মাজাহ ৪২৫২)

    আর গুনাহ থেকে তাৎক্ষণিক বিরত থাকার বিষয়টিও জরুরি। কারণ গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তাওবা করা অসম্ভব ।

    গুনাহের উপর অটল থাকা আরেকটি গুনাহ। গুনাহের ক্ষতিপূরণে সচেষ্ট না হয়ে বসে থাকার মানে হলো ধারাবাহিকভাবে গুনাহে লিপ্ত থাকা, এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং এতে নিশ্চিন্ত থাকা। আর এটি হলো ধ্বংসের আলামত।

    এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো : আরশের উপর থেকে আল্লাহ তায়ালা দেখেছেন এই বিশ্বাস রাখা সত্যেও প্রকাশ্যে গুনাহে লিপ্ত হওয়া। সতরাং কেউ যদি বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাকে দেখেছেন তা সত্যেও গুনাহে পা বাড়ায়, তাহলে তা অত্যন্ত মারাত্মক বিষয়। আর আল্লাহ তাকে দেখেছেন তিনি সবকিছুতে অবগত আছেন-এই বিশ্বাস যদি না রাখেন , তাহলে তা কুফর। সাথে সাথে ইসলাম থেকে পরিপূর্ণভাবে বের হয়ে যাওয়া । এই দুটি বিষয়ের মধ্যেই গুনাহ করার বিষয়টি আবর্তিত হয় ।

    এই কারণেই তাওবা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য একটি শর্ত হলো এই বিশ্বাস রাখা যে , আল্লাহ তাকে সব সময় দেখেছেন । তার সমস্ত বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত আছেন এবং গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সময়ও তিনি তার দিকে তাকিয়ে থাকেন । করন তাওবা সহিহ কেবল মুসলিম থেকেই । তবে হ্যা, যে ব্যক্তি পূর্বে আল্লাহকে অস্বীকার করার সাথে সাথে আল্লাহ যে তাকে দেখেছেন এটাও অস্বীকার করত, তার তওবাও সহিহ হবে , তার তাওবা হবে ইসলামে প্রবেশ করা এবং আল্লাহ তাআলা কে তাঁর গুণাবলিসহ স্বীকার করে নেওয়া ।

    ইমাম ইবনুল কাইয়্যম (রহঃ)
    বই : মাদারিজুস সালিকীন
    (ঈষৎ পরিমার্জিত )
    চলবে (১/২)..




  • #2
    আল্লাহ তাআলা আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায়...

    Comment

    Working...
    X