গ্রেফতার হওয়ার অর্থ হলো নিজেকে কাফেরদের কর্তৃত্বে দিয়ে দেওয়া।
আর ইসলামে একজন মুসলমানের জন্য স্বেচ্ছায় কাফেরদের কর্তৃত্ব বরণ করা হারাম। হিজরতের বিধান তো ইসলামে এ জন্যই দেয়া হয়েছে
একই কারণে কোনো কাফেরকে মুসলমানদের নেতা বানানো বা কোনো কাফের মুসলিম গোলামের মনিব হওয়ার বৈধতা ইসলামে নেই।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
অর্থ: আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের ওপর কাফেরদের কোনো কর্তৃত্ব রাখেননি
হাদীস শরীফে এসেছে,
অর্থাৎ; ইসলাম সর্বদা উঁচুতে থাকবে, নিচু হবে না।
উপরোক্ত কায়দা থেকে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম একটি পরিস্থিতিকে ব্যতিক্রম বলেছেন।
এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন। অধ্যায়টির নাম:
অর্থাৎ: “কেউ বন্দীত্ব বরণ করবে, কি করবে না”?
এ অধ্যায়ে তিনি হাদীদুল আশারাহ বা দশ সাহাবীর হাদীসটি উল্লেখ করেছেন;
যে দশজনকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোয়েন্দা বানিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন।
পথিমধ্যে তাদেরকে বনী লিহয়ানের কিছু লোক ঘিরে ফেলে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সাহাবীদের সেই দলটি একটি টিলার ওপর আশ্রয় নেন।
এক পর্যায়ে বনী লিহয়ানের লোকগুলো দশ জনের ওই বাহিনীকে প্রস্তাব দেয় যদি তাঁরা নিচে নেমে এসে আত্মসমর্পণ করে তাহলে তারা (মুশরিকরা) তাঁদেরকে নিরাপত্তা দিবে।
তখন সাহাবীদের কেউ কেউ মুশরিকদের প্রতিশ্রুতির ওপর নেমে আসেন।
কিন্তু হযরত আসেম বিন সাবিত রাযি. -যিনি ওই বাহিনীর আমীর ছিলেন- তিনি বললেন, আমি কাফেরদের নিরাপত্তা নিয়ে আত্মসমর্পণ করবো না।
ফলে তিনি প্রাণপণ লড়াই করে শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে যান।
হাফেয ইবনে হাজার রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
“বন্দী ব্যক্তির জন্য কাফেরের নিরাপত্তা গ্রহণ না করার অবকাশ রয়েছে;
এমনকি নিহত হওয়ার আশংকা থাকলেও আত্মসমর্পণ না করার সুযোগে আছে।
কেননা তাদের কাছে আত্মসমর্পণের অর্থ হলো, তার ওপর কাফেরদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও তাদের আইন-কানুন প্রয়োগ হওয়া।
তবে এটা ওই ক্ষেত্রে যখন সে ‘আযীমত’ তথা শরিয়তের কঠোর নীতি অবলম্বনের ইচ্ছা করবে।
অন্যথায় যদি সে ‘রুখছত’ তথা শরীয়তের সহজ নীতি অবলম্বনের ইচ্ছা করে তাহলে তার জন্য কাফেরের নিরাপত্তা গ্রহণ করার অবকাশ আছে।
তবে দু'টোর যে কোনোটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার যে রয়েছে, এ ব্যাপারে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম একমত
তবে ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে তিনি আত্ম সমর্পণকে হারাম বলেছেন।
তিনি বলেনঃ
“বন্দী হওয়া আমার কাছে সংগত মনে হয় না; বরং শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়াই আমার কাছে বেশি পছন্দনীয় ।
কারণ, বন্দী জীবন খুবই কঠিন। মৃত্যু তো একদিন আসবেই।”
অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম যদিও দুটোর যে কোনোটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিয়েছেন কিন্তু 'আযীমত' তথা শরিয়তের কঠোর নীতি অবলম্বন করে কাফেরের হাতে আত্মসমর্পণ না করাই যে উত্তম, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
কেননা আত্মসমর্পণ করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
শহীদ ইউসুফ উয়াইরী রহ. বলেনঃ
এটি তাছাড়া কোনো মুজাহিদ যদি শক্রর হাতে আত্মসমর্পণ করে তাহলে একদিকে যেমন রয়েছে পরাজয়, লাঞ্ছনা, মুসলমানদের মনোবলে ভাঙ্গন তৈরি ও মুজাহিদীনের অবস্থানে ফাটল সৃষ্টি করার মতো বিষয়;
অপরদিকে
মুজাহিদীন সহ সকল
মুসলিমের ব্যাপারে শত্ৰুপক্ষকে খুশি করার বিষয়ও । এর ফলে শত্রুপক্ষের মনোবলকে আরও চাঙ্গা করা হয়।
এতকিছুর পরও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সে যেই মৃত্যু থেকে বাঁচতে চাচ্ছিল তা থেকেও নিস্তার নেই।
বরং এক্ষেত্রে সে আরো জঘন্য লাঞ্ছনাকর মৃত্যুর সম্মুখীন হবে। তাছাড়া রয়েছে তথ্য ফাঁস হওয়ার মতো ভয়ংকর বিষয়, যা অন্য ভাইদেরকেও আক্রান্ত করবে।”
মোট কথা, ওপরের ঘটনায় সাহাবায়ে কেরাম রাঃ যা করেছেন তার খবর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছেছিলো।
সেখানে দু'টি দিক ছিলো;
এক, প্রাণপণ লড়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা
দুই. তাদের হাতে বন্দি হওয়া।
উক্ত ঘটনা থেকে উভয় অবস্থার বৈধতা প্রমাণিত হয়।
কেননা এর বিপক্ষে কোনো দলীল আমরা পাই না।
সুতরাং বর্তমানেও যদি কেউ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় অর্থাৎ হত্যা বা বন্দিত্ব থেকে পলায়নের কোনো সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে এ হাদীসের আলোকে এ দুটো পরিস্থিতির কোনো একটি গ্রহণ করা যাবে।
তবে ওপরের ঘটনায় যারা মুশরিকদের নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে নেমে এসেছিলেন তাঁদের আত্মসমর্পণ ও বর্তমান সময়ের তাগুতের কাছে আমাদের আত্মসমর্পণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
সাহাবীদের মধ্যে যারা নেমে এসেছিলেন তাঁদেরকে নিরাপত্তা প্রদানের প্ৰতিশ্ৰুতি দেওয়া হয়েছিলো ।
আর এটা সম্পূর্ণ বৈধ প্রতিশ্রুতি । সেখানে দোষনীয় যতটুকু ছিলো তা হলো-
নিজেদেরকে কাফেরদের কর্তৃত্বে দিয়ে দেওয়া ৷ কিন্তু তাদের ওপর কাফেরদের আইন-কানুন প্রয়োগ করা হবে এ কথার প্রেক্ষিতে তাঁরা নেমে আসেননি।
পক্ষান্তরে বর্তমান সময়ে যারা বন্দিত্ব বরণ করে নেয় তাঁদের এ কথা খুব ভালোভাবেই জানা থাকে যে, তারা নিজেকে তাদের কর্তৃত্বে দেওয়ার পাশাপাশি তাগুতের আইন-কানুন তাদের ওপর প্রয়োগ করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
সুতরাং ওখানে বন্দিত্ব বরণ করে নেয়া বৈধ হলেও এখানে বৈধ হবে না।
সারকথা হলো, নিজেকে কাফেরের হাতে কেবল তখনই সোপর্দ করা যাবে যখন নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া যাবে।
* পলায়ন থেকে অক্ষম হলে । * বন্দি হলেও দ্বীনের ব্যাপারে কোনো ফেতনার শিকার হবে না বলে নিশ্চিত হলে।
* মুজাহিদীনের জন্য ক্ষতির কারণ হবে এমন কোনো তথ্য ফাঁস হওয়া থেকে নিরাপদ মনে হলে।
* নিজের জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে আস্থাশীল হলে বা তাদের দ্বারা সে আক্রান্ত হবে না এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা থাকলে ৷
সুতরাং কারো কাছে যদি মুজাহিদীনের গোপন তথ্য থাকে এবং শত্ৰুপক্ষ যদি নিৰ্যাতন করে বা যাদু প্ৰয়োগ করে সেসব তথ্য বের করে নেয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রে তাগুতের হাত থেকে পলায়নের সুযোগ থাকলে নিজেকে তাদের হাতে সমর্পণ করা জায়েজ হবে না।
বরং শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম সহ আরও অনেকের ফতোয়া হলো, এক্ষেত্রে তার জন্য আত্মহত্যা করাও বৈধ।
আমি আমার “নাবযাতুন ফীল আমালিয়্যাতিল ইশতিশহাদিয়্যা” কিতাবে এ ব্যাপারে কিছু দলিল উল্লেখ করেছি।
সুতরাং গোপন তথ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা আর নিজেকে কাফেরদের হাতে সোপর্দ করার মাধ্যমে গোপন তথ্য ফাঁস করে সকলকে ক্ষতির সম্মুখীন করা- উভয়টি কি এক হতে পারে?
এখন মূল প্রসঙ্গে আসি।
বর্তমান সৌদি সরকার একটি মুরতাদ ও কাফেরদের এজেন্ট সরকার।
এই সরকার কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে।
মুশরিক ও কবর পূজারীদেরকে সহায়তা করছে। আল্লাহর নাধিলকৃত আইন পরিপন্থী বিচারিক আদালত কায়েম করেছে। তাগুতের কাছে বিচার চাচ্ছে।
ওরা দ্বীনের সাথে বিদ্রপকারীদের ব্যাপারে নিশ্চুপ এছাড়াও তাদের মাঝে আরও বিভিন্ন ঈমান ভঙ্গের কারণ বিদ্যমান।
বরং ঈমান ভঙ্গের প্রতিটি বিষয়ে তারা কয়েক ধাপ এগিয়ে। কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং বন্ধুত্বের যৌক্তিকতা সবার সামনে তুলে ধরছে।
শুধু তাই নয়, বরং এটাকে গর্বের সাথে ফলাও করে প্রকাশ করছে।
অপরদিকে যারা কাফেরদের বিরোধীতা করে এ সরকার তাদের বিরোধীতায় নেমেছে ।
আর যারা কাফেরদের তোষামোদ করে তাদের সাথে এদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
অপরদিকে যারা কাফেরদের সাথে বারাআতের (সম্পর্ক ছিন্নের) ঘোষণা দেয় অথবা সেই সত্য প্রকাশ করে যা তারা অপছন্দ করে, তাঁরা ওদের নির্যাতনের যাতাকলে পিষ্ট হয়।
তাদের ঈমান ভঙ্গের যত কারণ রয়েছে তার সামান্য কিছুই এখানে তুলে ধরা হলো।
যদি সৌদি সরকার একটি সার্বভৌম সরকার হতো (অর্থাৎ ইউরোপ, আমেরিকার কথায় উঠবস না করতো) তবুও এ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করা জায়েয হতো না।
কিন্তু যেখানে এ সরকার আমেরিকার এজেন্ট বা প্রতিনিধি হয়ে বসে আছে সেক্ষেত্রে তার কাছে আত্মসমর্পণ কীভাবে বৈধ হতে পারে?
তার কাছে আত্মসমর্পণ করা মানে আমেরিকার কাছেই আত্মসমৰ্পণ করা।
কেননা মুজাহিদদেরকে আটকের নির্দেশ আমেরিকাই দেয় এবং এর দ্বারা সে-ই ফায়েদা লুটে ।
আদ্যোপান্ত তার সুরক্ষা ও স্বার্থ রক্ষাই এসবের উদ্দেশ্য।
তাছাড়া বন্দীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো এদেরই মাধ্যমে যথাসময়ে আমেরিকার কাছে পৌঁছে যায়।
কোনো এক ত্বাগুত তো এটা গর্বের সাথে বলেও ফেলেছে; সম্ভবত তার নাম- বন্দর বিন সুলতান ।
সে বলেছে, অধিকাংশ সেল এবং জিহাদী কর্মকান্ড ধ্বংস করা হয়েছে সৌদি কারাগারে আটক বন্দীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ।
তেমনিভাবে কোনো মুজাহিদ সৌদি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করার অর্থ হলো নিজেকে হামিদ কারজাইয়ের কাছে সমর্পণ করা, অথবা কুয়েত, মিশর, ইয়েমেন ও আমেরিকার তাবেদার অন্য যে কোনো সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করা;
এদের কারো মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বৰ্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা ঈমানদারদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর ।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় যে, যে সরকার মুজাহিদদেরকে গ্রেফতার করতে চাচ্ছে তা মুসলিম সরকার;
তাদের ঈমান বিধ্বংসী কর্মকান্ডের কথা না হয় বাদই দিলাম, তারা আমেরিকার চর হয়ে মুসলমানদের গ্রেফতার করছে- এসব কিছু থেকে না হয় দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখলাম,
তারপরও যে কারো কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া আবশ্যক নয়,
এমনকি সে যদি রাষ্ট্রপ্রধানও হয়; যখন জানবে, তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টকারী একজন জালেম।
যদি কেউ অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ছিনিয়ে নিতে আসে তাহলে হাদীসের ভাষ্যমতে ওই জালেমের সাথে কিতাল করা বৈধ।
হাদীসে এসেছে, এক সাহাবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে প্রশ্ন করলেনঃ
“কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে এলে আমি কী করবো?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে দিবে না।
বললেন, যদি সে আমার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমিও তার সাথে লড়াই কর।
ওই সাহাবী বললেন, যদি সে আমাকে হত্যা করে? বললেন, তাহলে তুমি শহীদ।
অতঃপর সাহাবী বললেন, যদি আমি তাকে হত্যা করি?
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে যাবে।”
মুসলমান ইসলামের সম্মানে সম্মানিত। গাইরুল্লাহর দাসত্ব থেকে সে মুক্ত।
অতএব কেউ যদি তাকে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা বলে ও তাঁর বিধানের সামনে বশ্যতা স্বীকার করতে বলে,
তাঁর দিকে সে স্বেচ্ছায় স্বপ্রনোদিতভাবে ছুটে যাবে ৷ পক্ষান্তরে আল্লাহর বিধান ও শরিয়ত ছেড়ে যে তাকে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সাম্রাজ্যের দিকে আহবান করবে বা কোনো দাপটশীলের দাপট ও অন্যায়ের দিকে আহবান করবে,
সেক্ষেত্রে নিজেকে সেই দাপটশীলের কাছে সোর্পদ করা ও তার কাছে আত্মসমর্পণ করা আবশ্যক নয়।
যেখানে অন্যায়ভাবে কাউকে নিজের সম্পদই দিবে না, সেখানে নিজের জীবন কীভাবে দিতে পারে?
আল্লাহর শপথ! হয়তো সম্মানের সাথে বাঁচবো, নয়তো (লড়াই করে) দেহের অস্থিগুলো চূর্ণ করে ফেলবো
📔ওহে মুজাহিদ ;
লাঞ্ছনাকর বন্দী জীবন নয়
সম্মানজনক মৃত্যুই মোদের কাম্য
🖍️ Collected
আর ইসলামে একজন মুসলমানের জন্য স্বেচ্ছায় কাফেরদের কর্তৃত্ব বরণ করা হারাম। হিজরতের বিধান তো ইসলামে এ জন্যই দেয়া হয়েছে
একই কারণে কোনো কাফেরকে মুসলমানদের নেতা বানানো বা কোনো কাফের মুসলিম গোলামের মনিব হওয়ার বৈধতা ইসলামে নেই।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
অর্থ: আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের ওপর কাফেরদের কোনো কর্তৃত্ব রাখেননি
হাদীস শরীফে এসেছে,
অর্থাৎ; ইসলাম সর্বদা উঁচুতে থাকবে, নিচু হবে না।
উপরোক্ত কায়দা থেকে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম একটি পরিস্থিতিকে ব্যতিক্রম বলেছেন।
এ ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন। অধ্যায়টির নাম:
অর্থাৎ: “কেউ বন্দীত্ব বরণ করবে, কি করবে না”?
এ অধ্যায়ে তিনি হাদীদুল আশারাহ বা দশ সাহাবীর হাদীসটি উল্লেখ করেছেন;
যে দশজনকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোয়েন্দা বানিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন।
পথিমধ্যে তাদেরকে বনী লিহয়ানের কিছু লোক ঘিরে ফেলে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সাহাবীদের সেই দলটি একটি টিলার ওপর আশ্রয় নেন।
এক পর্যায়ে বনী লিহয়ানের লোকগুলো দশ জনের ওই বাহিনীকে প্রস্তাব দেয় যদি তাঁরা নিচে নেমে এসে আত্মসমর্পণ করে তাহলে তারা (মুশরিকরা) তাঁদেরকে নিরাপত্তা দিবে।
তখন সাহাবীদের কেউ কেউ মুশরিকদের প্রতিশ্রুতির ওপর নেমে আসেন।
কিন্তু হযরত আসেম বিন সাবিত রাযি. -যিনি ওই বাহিনীর আমীর ছিলেন- তিনি বললেন, আমি কাফেরদের নিরাপত্তা নিয়ে আত্মসমর্পণ করবো না।
ফলে তিনি প্রাণপণ লড়াই করে শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে যান।
হাফেয ইবনে হাজার রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
“বন্দী ব্যক্তির জন্য কাফেরের নিরাপত্তা গ্রহণ না করার অবকাশ রয়েছে;
এমনকি নিহত হওয়ার আশংকা থাকলেও আত্মসমর্পণ না করার সুযোগে আছে।
কেননা তাদের কাছে আত্মসমর্পণের অর্থ হলো, তার ওপর কাফেরদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও তাদের আইন-কানুন প্রয়োগ হওয়া।
তবে এটা ওই ক্ষেত্রে যখন সে ‘আযীমত’ তথা শরিয়তের কঠোর নীতি অবলম্বনের ইচ্ছা করবে।
অন্যথায় যদি সে ‘রুখছত’ তথা শরীয়তের সহজ নীতি অবলম্বনের ইচ্ছা করে তাহলে তার জন্য কাফেরের নিরাপত্তা গ্রহণ করার অবকাশ আছে।
তবে দু'টোর যে কোনোটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার যে রয়েছে, এ ব্যাপারে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম একমত
তবে ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে তিনি আত্ম সমর্পণকে হারাম বলেছেন।
তিনি বলেনঃ
“বন্দী হওয়া আমার কাছে সংগত মনে হয় না; বরং শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়াই আমার কাছে বেশি পছন্দনীয় ।
কারণ, বন্দী জীবন খুবই কঠিন। মৃত্যু তো একদিন আসবেই।”
অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম যদিও দুটোর যে কোনোটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিয়েছেন কিন্তু 'আযীমত' তথা শরিয়তের কঠোর নীতি অবলম্বন করে কাফেরের হাতে আত্মসমর্পণ না করাই যে উত্তম, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
কেননা আত্মসমর্পণ করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
শহীদ ইউসুফ উয়াইরী রহ. বলেনঃ
এটি তাছাড়া কোনো মুজাহিদ যদি শক্রর হাতে আত্মসমর্পণ করে তাহলে একদিকে যেমন রয়েছে পরাজয়, লাঞ্ছনা, মুসলমানদের মনোবলে ভাঙ্গন তৈরি ও মুজাহিদীনের অবস্থানে ফাটল সৃষ্টি করার মতো বিষয়;
অপরদিকে
মুজাহিদীন সহ সকল
মুসলিমের ব্যাপারে শত্ৰুপক্ষকে খুশি করার বিষয়ও । এর ফলে শত্রুপক্ষের মনোবলকে আরও চাঙ্গা করা হয়।
এতকিছুর পরও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সে যেই মৃত্যু থেকে বাঁচতে চাচ্ছিল তা থেকেও নিস্তার নেই।
বরং এক্ষেত্রে সে আরো জঘন্য লাঞ্ছনাকর মৃত্যুর সম্মুখীন হবে। তাছাড়া রয়েছে তথ্য ফাঁস হওয়ার মতো ভয়ংকর বিষয়, যা অন্য ভাইদেরকেও আক্রান্ত করবে।”
মোট কথা, ওপরের ঘটনায় সাহাবায়ে কেরাম রাঃ যা করেছেন তার খবর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছেছিলো।
সেখানে দু'টি দিক ছিলো;
এক, প্রাণপণ লড়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা
দুই. তাদের হাতে বন্দি হওয়া।
উক্ত ঘটনা থেকে উভয় অবস্থার বৈধতা প্রমাণিত হয়।
কেননা এর বিপক্ষে কোনো দলীল আমরা পাই না।
সুতরাং বর্তমানেও যদি কেউ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় অর্থাৎ হত্যা বা বন্দিত্ব থেকে পলায়নের কোনো সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে এ হাদীসের আলোকে এ দুটো পরিস্থিতির কোনো একটি গ্রহণ করা যাবে।
তবে ওপরের ঘটনায় যারা মুশরিকদের নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে নেমে এসেছিলেন তাঁদের আত্মসমর্পণ ও বর্তমান সময়ের তাগুতের কাছে আমাদের আত্মসমর্পণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
সাহাবীদের মধ্যে যারা নেমে এসেছিলেন তাঁদেরকে নিরাপত্তা প্রদানের প্ৰতিশ্ৰুতি দেওয়া হয়েছিলো ।
আর এটা সম্পূর্ণ বৈধ প্রতিশ্রুতি । সেখানে দোষনীয় যতটুকু ছিলো তা হলো-
নিজেদেরকে কাফেরদের কর্তৃত্বে দিয়ে দেওয়া ৷ কিন্তু তাদের ওপর কাফেরদের আইন-কানুন প্রয়োগ করা হবে এ কথার প্রেক্ষিতে তাঁরা নেমে আসেননি।
পক্ষান্তরে বর্তমান সময়ে যারা বন্দিত্ব বরণ করে নেয় তাঁদের এ কথা খুব ভালোভাবেই জানা থাকে যে, তারা নিজেকে তাদের কর্তৃত্বে দেওয়ার পাশাপাশি তাগুতের আইন-কানুন তাদের ওপর প্রয়োগ করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
সুতরাং ওখানে বন্দিত্ব বরণ করে নেয়া বৈধ হলেও এখানে বৈধ হবে না।
সারকথা হলো, নিজেকে কাফেরের হাতে কেবল তখনই সোপর্দ করা যাবে যখন নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া যাবে।
* পলায়ন থেকে অক্ষম হলে । * বন্দি হলেও দ্বীনের ব্যাপারে কোনো ফেতনার শিকার হবে না বলে নিশ্চিত হলে।
* মুজাহিদীনের জন্য ক্ষতির কারণ হবে এমন কোনো তথ্য ফাঁস হওয়া থেকে নিরাপদ মনে হলে।
* নিজের জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে আস্থাশীল হলে বা তাদের দ্বারা সে আক্রান্ত হবে না এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা থাকলে ৷
সুতরাং কারো কাছে যদি মুজাহিদীনের গোপন তথ্য থাকে এবং শত্ৰুপক্ষ যদি নিৰ্যাতন করে বা যাদু প্ৰয়োগ করে সেসব তথ্য বের করে নেয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রে তাগুতের হাত থেকে পলায়নের সুযোগ থাকলে নিজেকে তাদের হাতে সমর্পণ করা জায়েজ হবে না।
বরং শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম সহ আরও অনেকের ফতোয়া হলো, এক্ষেত্রে তার জন্য আত্মহত্যা করাও বৈধ।
আমি আমার “নাবযাতুন ফীল আমালিয়্যাতিল ইশতিশহাদিয়্যা” কিতাবে এ ব্যাপারে কিছু দলিল উল্লেখ করেছি।
সুতরাং গোপন তথ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা আর নিজেকে কাফেরদের হাতে সোপর্দ করার মাধ্যমে গোপন তথ্য ফাঁস করে সকলকে ক্ষতির সম্মুখীন করা- উভয়টি কি এক হতে পারে?
এখন মূল প্রসঙ্গে আসি।
বর্তমান সৌদি সরকার একটি মুরতাদ ও কাফেরদের এজেন্ট সরকার।
এই সরকার কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে।
মুশরিক ও কবর পূজারীদেরকে সহায়তা করছে। আল্লাহর নাধিলকৃত আইন পরিপন্থী বিচারিক আদালত কায়েম করেছে। তাগুতের কাছে বিচার চাচ্ছে।
ওরা দ্বীনের সাথে বিদ্রপকারীদের ব্যাপারে নিশ্চুপ এছাড়াও তাদের মাঝে আরও বিভিন্ন ঈমান ভঙ্গের কারণ বিদ্যমান।
বরং ঈমান ভঙ্গের প্রতিটি বিষয়ে তারা কয়েক ধাপ এগিয়ে। কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং বন্ধুত্বের যৌক্তিকতা সবার সামনে তুলে ধরছে।
শুধু তাই নয়, বরং এটাকে গর্বের সাথে ফলাও করে প্রকাশ করছে।
অপরদিকে যারা কাফেরদের বিরোধীতা করে এ সরকার তাদের বিরোধীতায় নেমেছে ।
আর যারা কাফেরদের তোষামোদ করে তাদের সাথে এদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
অপরদিকে যারা কাফেরদের সাথে বারাআতের (সম্পর্ক ছিন্নের) ঘোষণা দেয় অথবা সেই সত্য প্রকাশ করে যা তারা অপছন্দ করে, তাঁরা ওদের নির্যাতনের যাতাকলে পিষ্ট হয়।
তাদের ঈমান ভঙ্গের যত কারণ রয়েছে তার সামান্য কিছুই এখানে তুলে ধরা হলো।
যদি সৌদি সরকার একটি সার্বভৌম সরকার হতো (অর্থাৎ ইউরোপ, আমেরিকার কথায় উঠবস না করতো) তবুও এ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করা জায়েয হতো না।
কিন্তু যেখানে এ সরকার আমেরিকার এজেন্ট বা প্রতিনিধি হয়ে বসে আছে সেক্ষেত্রে তার কাছে আত্মসমর্পণ কীভাবে বৈধ হতে পারে?
তার কাছে আত্মসমর্পণ করা মানে আমেরিকার কাছেই আত্মসমৰ্পণ করা।
কেননা মুজাহিদদেরকে আটকের নির্দেশ আমেরিকাই দেয় এবং এর দ্বারা সে-ই ফায়েদা লুটে ।
আদ্যোপান্ত তার সুরক্ষা ও স্বার্থ রক্ষাই এসবের উদ্দেশ্য।
তাছাড়া বন্দীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো এদেরই মাধ্যমে যথাসময়ে আমেরিকার কাছে পৌঁছে যায়।
কোনো এক ত্বাগুত তো এটা গর্বের সাথে বলেও ফেলেছে; সম্ভবত তার নাম- বন্দর বিন সুলতান ।
সে বলেছে, অধিকাংশ সেল এবং জিহাদী কর্মকান্ড ধ্বংস করা হয়েছে সৌদি কারাগারে আটক বন্দীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ।
তেমনিভাবে কোনো মুজাহিদ সৌদি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করার অর্থ হলো নিজেকে হামিদ কারজাইয়ের কাছে সমর্পণ করা, অথবা কুয়েত, মিশর, ইয়েমেন ও আমেরিকার তাবেদার অন্য যে কোনো সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করা;
এদের কারো মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বৰ্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা ঈমানদারদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর ।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় যে, যে সরকার মুজাহিদদেরকে গ্রেফতার করতে চাচ্ছে তা মুসলিম সরকার;
তাদের ঈমান বিধ্বংসী কর্মকান্ডের কথা না হয় বাদই দিলাম, তারা আমেরিকার চর হয়ে মুসলমানদের গ্রেফতার করছে- এসব কিছু থেকে না হয় দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখলাম,
তারপরও যে কারো কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া আবশ্যক নয়,
এমনকি সে যদি রাষ্ট্রপ্রধানও হয়; যখন জানবে, তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টকারী একজন জালেম।
যদি কেউ অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ছিনিয়ে নিতে আসে তাহলে হাদীসের ভাষ্যমতে ওই জালেমের সাথে কিতাল করা বৈধ।
হাদীসে এসেছে, এক সাহাবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে প্রশ্ন করলেনঃ
“কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে এলে আমি কী করবো?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে দিবে না।
বললেন, যদি সে আমার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমিও তার সাথে লড়াই কর।
ওই সাহাবী বললেন, যদি সে আমাকে হত্যা করে? বললেন, তাহলে তুমি শহীদ।
অতঃপর সাহাবী বললেন, যদি আমি তাকে হত্যা করি?
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে যাবে।”
মুসলমান ইসলামের সম্মানে সম্মানিত। গাইরুল্লাহর দাসত্ব থেকে সে মুক্ত।
অতএব কেউ যদি তাকে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা বলে ও তাঁর বিধানের সামনে বশ্যতা স্বীকার করতে বলে,
তাঁর দিকে সে স্বেচ্ছায় স্বপ্রনোদিতভাবে ছুটে যাবে ৷ পক্ষান্তরে আল্লাহর বিধান ও শরিয়ত ছেড়ে যে তাকে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সাম্রাজ্যের দিকে আহবান করবে বা কোনো দাপটশীলের দাপট ও অন্যায়ের দিকে আহবান করবে,
সেক্ষেত্রে নিজেকে সেই দাপটশীলের কাছে সোর্পদ করা ও তার কাছে আত্মসমর্পণ করা আবশ্যক নয়।
যেখানে অন্যায়ভাবে কাউকে নিজের সম্পদই দিবে না, সেখানে নিজের জীবন কীভাবে দিতে পারে?
আল্লাহর শপথ! হয়তো সম্মানের সাথে বাঁচবো, নয়তো (লড়াই করে) দেহের অস্থিগুলো চূর্ণ করে ফেলবো
📔ওহে মুজাহিদ ;
লাঞ্ছনাকর বন্দী জীবন নয়
সম্মানজনক মৃত্যুই মোদের কাম্য
🖍️ Collected
Comment