বহু পূর্বে এক ভাইকে টর ব্রাউজার দিয়ে দিয়ে দাওয়াহ ফোরাম ভিসিট করা শিখিয়েছিলাম, প্রথমবারের মত ভিজিট করার পর ঐ ভাইটি আমাকে বললো, "এবার কি আমাদের বাসায় rab আসবে।"
এই ডাকাত ত্বাগুত বাহিনীগুলো এদেশের আলেম, দ্বাঈ, দ্বীনি মহলের নেতৃবৃন্দ, মুরব্বী, আকাবের থেকে শুরু করে সাধারণ বা জিহাদপ্রেমি মুসলিম যুবকদের কলিজার কাঁপন সৃষ্টিকারী হয়ে আছে, ইয়া আসাফা! আর এদের পেইজে দেখি গর্বভরে প্রচার করে, "জঙ্গীদের আতঙ্ক!!"
অথচ তারা কিছু স্পেসিফিক ইউনিফর্মধারী ভাড়াটিয়া ভুুড়িওয়ালা পুরুষ যারা কি টাকা পয়সার বিনিময়ে অন্যে লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করে। তার মূল্য শুধু হাতের ধাতব নলটাই। এই ভাড়াটিয়াগুলোর ভয়ই আজকে এই উম্মাহর শত বছর যাবত অভিভাবকহীন হয়ে থাকার কারণ। আর 'বন্দুক!!' আরেহ যেখানে জিহাদ শুরু হয় সেখানে বানের স্রোতের মতো তা ঢুকতে থাকে।
এক বন্দুকের ভয় উম্মাহর মধ্যে কত ফেতনা, কত তাহরিফ, কত ঈমানবিধ্বংসী মতবাদ ঢুকার সুযোগ করে দিলো! এক বন্দুকের ভয় কত মানুষের ঈমান ধ্বংসের কারণ হলো। এই বন্দুকের ভয়কে কাজে লাগিয়ে কত কুফফার শক্তি মুসলিমদের উপর মাতব্বরি করছে। হে বন্দুক! জীবনে প্রথমবারের মত হাতে আসার পর আমি তোকে লক্ষ্য করে বলবো, "এতোদিন, আমার কিংবা মুসলিম যুবকদের রক্ত হিম করার জন্য তুই দায়ী ছিলি, আজ তুই আমার গোলাম। তুই যখনই প্রয়োজন হবে তখনই যেকোনো দ্বীনের দুশমনের রক্ত ঝরাতে বাধ্য!"
এদেশের কত মুসলিম যুবক থেকে বৃদ্ধ হয়েছে আর বৃদ্ধ থেকে আরো বৃদ্ধ হয়ে কবরে গিয়েছে। কিন্তু দ্বীন কায়েমে উত্তপ্ত ময়দানে পা ফেলার সাহস ও সৌভাগ্য তাদের হয়নি কেবলমাত্র বন্দুকধারী কিছু ভাড়াটের ভয়ে। হায়! মানুষকে কে বুঝাবে, এসব ভাড়াটে ইতরদের জুলুমের চেয়ে আমার রবের পাকড়াও আরো ভয়াবহ!
তেমনি কেবলমাত্র এরকম কাল্পনিক জুজুর ভয়ের কারণে আমাদের ভাইয়েরা দাওয়াহ ফোরামের মত এক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাস্তব কথা হলো, ত্বাগুত নিজেও চায় মানুষ যেনো সবসময় তার ভীতিতে থাকে। মূর্তির জন্য এর চেয়ে বড় আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে যে মানুষ তাকে ভয় পাচ্ছে! মানুষ যত বেশি তাদের ভয় পাবে তত কম তাদের বিদ্রোহী বের হবে। যুবকরা তাকে ভয় পাওয়ার মাধ্যমে যদি তার বিরুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত থাকে এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের দিকে মনোযোগ দেয় তাহলেই তো ত্বাগুতের টিকে থাকার পথ আশংকামূক্ত হবে। কয়েক দশকের জন্য নিরাপদে মুসলিমদের কাধে বসে খাওয়া যাবে। এই কারণেই তো তারা প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে যুবকরা যেনো জিহাদী বিষয়ে আগ্রহী না।
এই তো মালিতে জিহাদ শক্তিশালী হবার পর বুরকিনা ফ্যাসোর মতো আসেপাশের দেশগুলো বন্যার পানির মতো টাকা ব্যয় করছে ছেলেরা যেনো জিহাদের দিকে না যায়।
একটা ছেলে যদি পুলিশ ধরবে এই কাল্পনিক ভয়ের কারণে ফোরামের মতো সাইটে ভিজিট করতে সাহস না পায় তাহলে তো সে ত্বাগুতদের কার্যক্রমকে আরো সহজ করে দিলো।
একটা প্রবাদ আছে, চোখের সামনে নেই, তো অন্তরেও নেই। একটা সময় ধরা যাক আপনি প্রচুর জিহাদী জযবাসম্পন্ন ছিলেন। এরপরে যেকোনো কারণেই হোক এ থেকে বিরতি নিলেন। স্বাভাবিক ব্যাপার হলো এ যে আপনার ভিতর থেকে আস্তে আস্তে তা নিষ্প্রভ হতে থাকবে। আপনি কোনো কর্মপন্থা ও পরিচর্যা ছাড়া আপনার জিহাদী আবেগকে একটা বয়স পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবেন। এক পর্যায়ে আপনি ঝরে যাবেন। ষাড়ের লেজে আপনি এমনভাবে আঁকড়ে ধরবেন যে আপনার আর কখনো জিহাদের রজ্জু আঁকড়ে ধরতে পারবেন না। আপনি তখন অজুহাত দেখাবেন ফ্যামিলি চালাতে গিয়ে সম্ভব হচ্ছে না।
এইটাই তো তাওয়াগিত চায়!
নব্বইয়ের দশকে এরকম বহু মানুষেরই অন্তরে জিহাদের জযবা ছিলো। সঠিক পরিচর্যা আর কর্মপন্থার অভাবে তা হারিয়ে গেছে।
যেসব ভাই জামাআতের সাথে সম্পৃক্ত তারা তো আল্লাহর রহমতে তাদের দিলে জিহাদের সঠিক পরিচর্যা করতে পারছেন। কিন্তু যারা জামাআতের সাথে সম্পৃক্ত না তারা তাদের তো একটা জায়গা দরকার যেখানে তারা নিরাপদে বিচরণ করতে পারবেন। মুজাহিদ ভাইদের সোহবতে কাটাতে পারবেন। এখানেই আসে জিহাদি ফোরাম।
এবার আসি জিহাদী ফোরামে ভিজিট করা আসলে কতটা রিস্কি তা নিয়ে।
আমি আসলে একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অনলাইন এনোনিমিটি নিয়ে পড়াশোনা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অনেক হ্যান্ডস-অন এক্সপেরিয়েন্স। আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা ও অভিজ্ঞতা অনুসারে অনলাইনে জিহাদী ফোরামে বিচরণ বা ভিজিটিংয়ে রিস্কের মাত্রা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ যেখানে সরকারি আমলাতন্ত্র প্রচন্ড দূর্নীতিগ্রস্থ। আর আমলাতন্ত্র দূর্নীতিগ্রস্থ হওয়াতেই আমাদের জন্য উপকার বয়ে এনেছে। কারণ সরকারগুলো যদি স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল হতো আমাদের জন্য এই ভূমি অনেক কঠিন হয়ে যেতো।
হ্যাঁ, রিস্ক আছে। সেটা তাদের জন্য যারা ফোরামের মেইনটেনেন্সের দায়িত্বে আছেন। কারণ তাদের শত্রু সরাসরি নেশন স্টেইট। কাজেই তাদের কাজের জন্য প্রশিক্ষিত লোক দরকার। কিন্তু আপনি আমি যারা সাধারণ ভিজিটর বা ইউজার তাদের জন্য রিস্ক কম।
এমনকি আপনি ফোরামে ফেসবুকের চেয়েও বেশি নিরাপদ। কারণ ফেসবুক আপনার সকল তথ্য সংগ্রহ করছে যেখানে ফোরাম আপনার তথ্যকে নিজের আমানতদারিতার সঙ্গে প্রটেক্ট করছে। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে গ্রেফতার হতে দেখেছি। কিন্তু জীবনেও শুনিনি যে ফোরামে লেখে কেউ গ্রেফতার হয়েছে।
মোদ্দাকথা ফোরামের ব্যাপারে কাল্পনিক জুজুর ভয় সৃষ্টি করা মূলতঃ তাগুতের এজেন্ডাগুলোরই একটি অংশ যার মাধ্যমে তারা তাদের শত্রুদের থেকে মানুষকে দূরে রাখতে পারবে।
আমরা কিভাবে এর মোকাবেলা করবো?
হাকডাক দিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে ফোরামে আসার জন্য আহবান করার প্রয়োজন নেই। সবচে ভালো উপায় হলো সোস্যাল মিডিয়াতে ফোরামের লেখাগুলো প্রচার করা। ধরা যাক আপনি ফোরামের লেখা সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার করলেন। লেখার শেষে দিলেন 'দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরাম থেকে সংগৃহীত'। স্বাভাবিকভাবে যেসব ভাই পড়ুয়া এবং অনুসন্ধিৎসু, তারা ফোরামের ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে। তখন আপনি ফোরামে মানুষকে ভিজিট করা শিখাবেন।
আমি নিজেও প্রথমদিকে দাওয়াহ ফোরাম কিংবা আল ফিরদাউসের ব্যাপারে জানতাম না। যখন প্রথমে ফেসবুকে দেখি ভাইয়েরা আল ফিরদাউস বা দাওয়াহ ফোরামের ব্যাপারে আলোচনা করছে তখন আমি এর ব্যাপারে আগ্রহী হই। এবং তাদের কাছ থেকে সাইটগুলোর লিংক নিয়ে ভিজিট শুরু করি। যেটা আমার জীবনে ছিলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এতে আমার উল্লেখযোগ্য দু'টা পরিবর্তন হলো:
১) ছোটবেলায় ফাঁকিবাজিই হোক আর ফ্যামিলির অবহেলার কারণেই হোক, আমি ভালোভাবে কোরআন পড়তে পারতাম না। সুরাহ ফাতিহা আর শেষের কয়েকটা সুরা শুদ্ধভাবে পড়তে পারতাম। এর বাইরে পবিত্র কোরআনের একটা আয়াত ধরলেও ভালোভাবে পড়তে পারতাম না। কিন্ত জিহাদী চিন্তা চেতনা আসার পর ও ফোরামের সাথে সংযুক্তির পর তাজবীদ, অর্থসহ কোরআন পড়া, তাফসির, শানে নুযুল ইত্যাদির দিকে ধীরে ধীরে আগ্রহ তৈরী হতে থাকে।
২) আমার ক্যারিয়ার গোল ছিলো সম্পূর্ণ দুনিয়ানির্ভর। যাতে দ্বীনের স্বার্থ কম ছিলো। কিন্তু নিয়মিত ভিজিটের ফলে জিহাদী আদর্শ আমার ভিতর এমনভাবে গেড়ে বসে যে আমি বাধ্য হয়েছি আমার ক্যারিয়ার গোল ও লার্নিং কার্ভে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে। পাশাপাশি ইন্সটিটিউশন প্রাইডের মতো ভুয়ো জিনিসও আমার ভিতর থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে এসে জায়গা করে দ্বীনের স্বার্থ।
আচ্ছা যদি আমি যদি পুলিশ-র্যাব নামক এক শ্রেণীর ভাড়াটিয়া গুন্ডা-ইতরদের ভয়ে যদি ফোরাম ভিজিট করা থেকে বিরত থাকতাম তাহলে কি এরকম ফায়দা পেতাম?
আশা করি আমরা বুঝতে পেরেছি কেনো ভাইদেরকে বেশী সংখ্যায় ফোরামে জুড়ে দেয়া প্রয়োজন। এই কারণেই ভাইদেরকে বলবো যত পারুন ফোরামের প্রচার করুন। আপনার আশেপাশের যেসব দ্বীনি ভাই, বন্ধু বা ছোটভাই আছেন তাদের ফোরাম ইউস করার পদ্ধতি শিখান। ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচার করুন। ফেসবুকভিত্তিক কমিউনিটি না গড়ে ফোরামভিত্তিক কমিউনিটি গড়ে তুলুন। ফেসবুকের কমিউনিটিকে ফোরামে নিয়ে আসুন। কারণ এরা ফোরামে আরো বেশী স্ট্যাবল ও নিরাপদ। ফেসবুকে লেখার পাশাপাশি ফোরামেও লিখুন। একটা সময় আপনার ফেসবুকের কর্মগুলো হারিয়ে যাবে। কিন্তু ফোরামের লেখা হারাবে না। ৫ বছর পরও আপনার লেখা থেকে কোনো নবীন জিহাদপ্রেমী তরুন ফায়দা পেতে থাকবে যা ফেসবুকে আজও হতে দেখিনি। ঠিক যেভাবে আমরা ২০১৫ সালের ভাইদের লেখা থেকেও উপকৃত হই।
এই ডাকাত ত্বাগুত বাহিনীগুলো এদেশের আলেম, দ্বাঈ, দ্বীনি মহলের নেতৃবৃন্দ, মুরব্বী, আকাবের থেকে শুরু করে সাধারণ বা জিহাদপ্রেমি মুসলিম যুবকদের কলিজার কাঁপন সৃষ্টিকারী হয়ে আছে, ইয়া আসাফা! আর এদের পেইজে দেখি গর্বভরে প্রচার করে, "জঙ্গীদের আতঙ্ক!!"
অথচ তারা কিছু স্পেসিফিক ইউনিফর্মধারী ভাড়াটিয়া ভুুড়িওয়ালা পুরুষ যারা কি টাকা পয়সার বিনিময়ে অন্যে লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করে। তার মূল্য শুধু হাতের ধাতব নলটাই। এই ভাড়াটিয়াগুলোর ভয়ই আজকে এই উম্মাহর শত বছর যাবত অভিভাবকহীন হয়ে থাকার কারণ। আর 'বন্দুক!!' আরেহ যেখানে জিহাদ শুরু হয় সেখানে বানের স্রোতের মতো তা ঢুকতে থাকে।
এক বন্দুকের ভয় উম্মাহর মধ্যে কত ফেতনা, কত তাহরিফ, কত ঈমানবিধ্বংসী মতবাদ ঢুকার সুযোগ করে দিলো! এক বন্দুকের ভয় কত মানুষের ঈমান ধ্বংসের কারণ হলো। এই বন্দুকের ভয়কে কাজে লাগিয়ে কত কুফফার শক্তি মুসলিমদের উপর মাতব্বরি করছে। হে বন্দুক! জীবনে প্রথমবারের মত হাতে আসার পর আমি তোকে লক্ষ্য করে বলবো, "এতোদিন, আমার কিংবা মুসলিম যুবকদের রক্ত হিম করার জন্য তুই দায়ী ছিলি, আজ তুই আমার গোলাম। তুই যখনই প্রয়োজন হবে তখনই যেকোনো দ্বীনের দুশমনের রক্ত ঝরাতে বাধ্য!"
এদেশের কত মুসলিম যুবক থেকে বৃদ্ধ হয়েছে আর বৃদ্ধ থেকে আরো বৃদ্ধ হয়ে কবরে গিয়েছে। কিন্তু দ্বীন কায়েমে উত্তপ্ত ময়দানে পা ফেলার সাহস ও সৌভাগ্য তাদের হয়নি কেবলমাত্র বন্দুকধারী কিছু ভাড়াটের ভয়ে। হায়! মানুষকে কে বুঝাবে, এসব ভাড়াটে ইতরদের জুলুমের চেয়ে আমার রবের পাকড়াও আরো ভয়াবহ!
তেমনি কেবলমাত্র এরকম কাল্পনিক জুজুর ভয়ের কারণে আমাদের ভাইয়েরা দাওয়াহ ফোরামের মত এক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাস্তব কথা হলো, ত্বাগুত নিজেও চায় মানুষ যেনো সবসময় তার ভীতিতে থাকে। মূর্তির জন্য এর চেয়ে বড় আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে যে মানুষ তাকে ভয় পাচ্ছে! মানুষ যত বেশি তাদের ভয় পাবে তত কম তাদের বিদ্রোহী বের হবে। যুবকরা তাকে ভয় পাওয়ার মাধ্যমে যদি তার বিরুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত থাকে এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের দিকে মনোযোগ দেয় তাহলেই তো ত্বাগুতের টিকে থাকার পথ আশংকামূক্ত হবে। কয়েক দশকের জন্য নিরাপদে মুসলিমদের কাধে বসে খাওয়া যাবে। এই কারণেই তো তারা প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে যুবকরা যেনো জিহাদী বিষয়ে আগ্রহী না।
এই তো মালিতে জিহাদ শক্তিশালী হবার পর বুরকিনা ফ্যাসোর মতো আসেপাশের দেশগুলো বন্যার পানির মতো টাকা ব্যয় করছে ছেলেরা যেনো জিহাদের দিকে না যায়।
একটা ছেলে যদি পুলিশ ধরবে এই কাল্পনিক ভয়ের কারণে ফোরামের মতো সাইটে ভিজিট করতে সাহস না পায় তাহলে তো সে ত্বাগুতদের কার্যক্রমকে আরো সহজ করে দিলো।
একটা প্রবাদ আছে, চোখের সামনে নেই, তো অন্তরেও নেই। একটা সময় ধরা যাক আপনি প্রচুর জিহাদী জযবাসম্পন্ন ছিলেন। এরপরে যেকোনো কারণেই হোক এ থেকে বিরতি নিলেন। স্বাভাবিক ব্যাপার হলো এ যে আপনার ভিতর থেকে আস্তে আস্তে তা নিষ্প্রভ হতে থাকবে। আপনি কোনো কর্মপন্থা ও পরিচর্যা ছাড়া আপনার জিহাদী আবেগকে একটা বয়স পর্যন্ত ধরে রাখতে পারবেন। এক পর্যায়ে আপনি ঝরে যাবেন। ষাড়ের লেজে আপনি এমনভাবে আঁকড়ে ধরবেন যে আপনার আর কখনো জিহাদের রজ্জু আঁকড়ে ধরতে পারবেন না। আপনি তখন অজুহাত দেখাবেন ফ্যামিলি চালাতে গিয়ে সম্ভব হচ্ছে না।
এইটাই তো তাওয়াগিত চায়!
নব্বইয়ের দশকে এরকম বহু মানুষেরই অন্তরে জিহাদের জযবা ছিলো। সঠিক পরিচর্যা আর কর্মপন্থার অভাবে তা হারিয়ে গেছে।
যেসব ভাই জামাআতের সাথে সম্পৃক্ত তারা তো আল্লাহর রহমতে তাদের দিলে জিহাদের সঠিক পরিচর্যা করতে পারছেন। কিন্তু যারা জামাআতের সাথে সম্পৃক্ত না তারা তাদের তো একটা জায়গা দরকার যেখানে তারা নিরাপদে বিচরণ করতে পারবেন। মুজাহিদ ভাইদের সোহবতে কাটাতে পারবেন। এখানেই আসে জিহাদি ফোরাম।
এবার আসি জিহাদী ফোরামে ভিজিট করা আসলে কতটা রিস্কি তা নিয়ে।
আমি আসলে একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অনলাইন এনোনিমিটি নিয়ে পড়াশোনা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অনেক হ্যান্ডস-অন এক্সপেরিয়েন্স। আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা ও অভিজ্ঞতা অনুসারে অনলাইনে জিহাদী ফোরামে বিচরণ বা ভিজিটিংয়ে রিস্কের মাত্রা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ যেখানে সরকারি আমলাতন্ত্র প্রচন্ড দূর্নীতিগ্রস্থ। আর আমলাতন্ত্র দূর্নীতিগ্রস্থ হওয়াতেই আমাদের জন্য উপকার বয়ে এনেছে। কারণ সরকারগুলো যদি স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল হতো আমাদের জন্য এই ভূমি অনেক কঠিন হয়ে যেতো।
হ্যাঁ, রিস্ক আছে। সেটা তাদের জন্য যারা ফোরামের মেইনটেনেন্সের দায়িত্বে আছেন। কারণ তাদের শত্রু সরাসরি নেশন স্টেইট। কাজেই তাদের কাজের জন্য প্রশিক্ষিত লোক দরকার। কিন্তু আপনি আমি যারা সাধারণ ভিজিটর বা ইউজার তাদের জন্য রিস্ক কম।
এমনকি আপনি ফোরামে ফেসবুকের চেয়েও বেশি নিরাপদ। কারণ ফেসবুক আপনার সকল তথ্য সংগ্রহ করছে যেখানে ফোরাম আপনার তথ্যকে নিজের আমানতদারিতার সঙ্গে প্রটেক্ট করছে। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে গ্রেফতার হতে দেখেছি। কিন্তু জীবনেও শুনিনি যে ফোরামে লেখে কেউ গ্রেফতার হয়েছে।
মোদ্দাকথা ফোরামের ব্যাপারে কাল্পনিক জুজুর ভয় সৃষ্টি করা মূলতঃ তাগুতের এজেন্ডাগুলোরই একটি অংশ যার মাধ্যমে তারা তাদের শত্রুদের থেকে মানুষকে দূরে রাখতে পারবে।
আমরা কিভাবে এর মোকাবেলা করবো?
হাকডাক দিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে ফোরামে আসার জন্য আহবান করার প্রয়োজন নেই। সবচে ভালো উপায় হলো সোস্যাল মিডিয়াতে ফোরামের লেখাগুলো প্রচার করা। ধরা যাক আপনি ফোরামের লেখা সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার করলেন। লেখার শেষে দিলেন 'দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরাম থেকে সংগৃহীত'। স্বাভাবিকভাবে যেসব ভাই পড়ুয়া এবং অনুসন্ধিৎসু, তারা ফোরামের ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে। তখন আপনি ফোরামে মানুষকে ভিজিট করা শিখাবেন।
আমি নিজেও প্রথমদিকে দাওয়াহ ফোরাম কিংবা আল ফিরদাউসের ব্যাপারে জানতাম না। যখন প্রথমে ফেসবুকে দেখি ভাইয়েরা আল ফিরদাউস বা দাওয়াহ ফোরামের ব্যাপারে আলোচনা করছে তখন আমি এর ব্যাপারে আগ্রহী হই। এবং তাদের কাছ থেকে সাইটগুলোর লিংক নিয়ে ভিজিট শুরু করি। যেটা আমার জীবনে ছিলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এতে আমার উল্লেখযোগ্য দু'টা পরিবর্তন হলো:
১) ছোটবেলায় ফাঁকিবাজিই হোক আর ফ্যামিলির অবহেলার কারণেই হোক, আমি ভালোভাবে কোরআন পড়তে পারতাম না। সুরাহ ফাতিহা আর শেষের কয়েকটা সুরা শুদ্ধভাবে পড়তে পারতাম। এর বাইরে পবিত্র কোরআনের একটা আয়াত ধরলেও ভালোভাবে পড়তে পারতাম না। কিন্ত জিহাদী চিন্তা চেতনা আসার পর ও ফোরামের সাথে সংযুক্তির পর তাজবীদ, অর্থসহ কোরআন পড়া, তাফসির, শানে নুযুল ইত্যাদির দিকে ধীরে ধীরে আগ্রহ তৈরী হতে থাকে।
২) আমার ক্যারিয়ার গোল ছিলো সম্পূর্ণ দুনিয়ানির্ভর। যাতে দ্বীনের স্বার্থ কম ছিলো। কিন্তু নিয়মিত ভিজিটের ফলে জিহাদী আদর্শ আমার ভিতর এমনভাবে গেড়ে বসে যে আমি বাধ্য হয়েছি আমার ক্যারিয়ার গোল ও লার্নিং কার্ভে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে। পাশাপাশি ইন্সটিটিউশন প্রাইডের মতো ভুয়ো জিনিসও আমার ভিতর থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে এসে জায়গা করে দ্বীনের স্বার্থ।
আচ্ছা যদি আমি যদি পুলিশ-র্যাব নামক এক শ্রেণীর ভাড়াটিয়া গুন্ডা-ইতরদের ভয়ে যদি ফোরাম ভিজিট করা থেকে বিরত থাকতাম তাহলে কি এরকম ফায়দা পেতাম?
আশা করি আমরা বুঝতে পেরেছি কেনো ভাইদেরকে বেশী সংখ্যায় ফোরামে জুড়ে দেয়া প্রয়োজন। এই কারণেই ভাইদেরকে বলবো যত পারুন ফোরামের প্রচার করুন। আপনার আশেপাশের যেসব দ্বীনি ভাই, বন্ধু বা ছোটভাই আছেন তাদের ফোরাম ইউস করার পদ্ধতি শিখান। ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচার করুন। ফেসবুকভিত্তিক কমিউনিটি না গড়ে ফোরামভিত্তিক কমিউনিটি গড়ে তুলুন। ফেসবুকের কমিউনিটিকে ফোরামে নিয়ে আসুন। কারণ এরা ফোরামে আরো বেশী স্ট্যাবল ও নিরাপদ। ফেসবুকে লেখার পাশাপাশি ফোরামেও লিখুন। একটা সময় আপনার ফেসবুকের কর্মগুলো হারিয়ে যাবে। কিন্তু ফোরামের লেখা হারাবে না। ৫ বছর পরও আপনার লেখা থেকে কোনো নবীন জিহাদপ্রেমী তরুন ফায়দা পেতে থাকবে যা ফেসবুকে আজও হতে দেখিনি। ঠিক যেভাবে আমরা ২০১৫ সালের ভাইদের লেখা থেকেও উপকৃত হই।
Comment