জার্মানির প্রভাবশালী চ্যান্সেলর অটো ভন বিসমার্ক (Otto von Bismarck) প্রায় ১৮৮০ সালের দিকে সর্বপ্রথম আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র (Welfare State) প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্য ছিল জনগণের জীবনমান স্থিতিশীল করে কল্যাণ নিশ্চিত করা। স্বীকার করছি, ধারণাটি খুবই চমৎকার এবং মহৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু একটি ধারণা কিংবা মতবাদের ভালো-মন্দ কেবল মুখের চটকদার বুলি শুনে নির্ণয় করা যায় না। তার প্রায়োগিক ফলাফলও পরখ করে দেখতে হয়।
আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র আবিষ্কারের পর থেকেই পশ্চিমা এবং তাদের সমগ্র অনুসারীরা এটিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাদের রাষ্ট্রগুলোকে ধীরে ধীরে ‘কল্যাণের’ দিকে এগিয়ে নিয়েছে। যার ‘সুফল’ সবাই এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও সর্বত্র নৈতিকতার চরম দূর্ভিক্ষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধর্মকে পায়ের তলায় পিষ্ট করে অধর্ম নিয়ে সবাই পশুর মতো দিনাতিপাত করছে। গুম, খুন, ধর্ষণ কিংবা সুইসাইডের মতো প্রানঘাতি ভাইরাস এখন মহামারির রূপ ধারণ করেছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃহত্তম সংখ্যা।
চলমান শতাব্দীতে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মুসলমান বোমার আঘাতে নিহত হওয়া এবং কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে হিরোশিমায় প্রায় সত্তর হাজার বনি আদম খুন হয়ে যাওয়া ওয়েলফেয়ার স্ট্যাইটের ‘সফলতার’ আরেক জ্বলন্ত উদাহরণ।
এরকম শত শত ‘সাফল্যমণ্ডিত’ অধ্যায় রচিত হওয়ার পর অবশেষে এটা বুঝতে বাকি থাকে না যে, কথিত কল্যাণরাষ্ট্র কুফফারদের বানানো বস্তা পচা সস্তা কথা ছাড়া আর কিছুই নয়।
জনগণের সিমপ্যাথি পাবার লোভে রাজনীতিবিদরা তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এরকম হাজারো পরিভাষা ব্যবহার করে। সাম্য, শান্তি, মানবাধিকার, নারী স্বাধীনতা সহ আরো বিচিত্র ধরণের মনভুলানো উক্তি প্রায়ই আমরা পশ্চিমাদের মুখে শুনি। এতে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এই পরিভাষাগুলো যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠার দাবীদার কোনো ব্যক্তি উচ্চারণ করেন তখন তা সত্যই আমাদেরকে ব্যথিত করে। উম্মাহকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচাতে কলম ধরতে বাধ্য হই।
গণতান্ত্রিক ইসলামি রাজনীতিবিদরা প্রায়ই বলেন— ক্ষমতায় গেলে আমরা কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। কাউকে বুরকা-নিক্বাব পড়তে বাধ্য করা হবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি...।
হুবুহু পশ্চিমা এবং তাদের মদদপুষ্ট সেকুলার চাটুকার ক্ষমতাসীনদের মতোই তাদের বয়ান। তারা ইসলামি রাজনীতি করে, অথচ একবারও মুখ ফুটে বলতে পারে না— আমরা ইসলামি রাষ্ট্র চাই। দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে আল্লাহর শরিয়াহ বাস্তবায়ন করতে চাই। তারা ভয় পায়— পাছে যদি আন্তর্জাতিক মোড়ল গোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়।
এটাই বাস্তবতা। আপনি যার সিস্টেমের ভিতরে থাকবেন তার চরণেই দিনশেষে মাথা ঠেকাবেন। যারা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর মানহাজ দিয়ে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা করে তারা শত প্রতিকূলতায় থেকেও আল্লাহর সাহায্যে এক সময় বিজয় ছিনিয়ে আনে। আল্লাহর বিধান পালনে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই থোড়াই কেয়ার করে না। আর যারা দ্বীনের দুশমনদের মানহাজ দিয়ে দ্বীন কায়েম করতে চায় তাদের সব সময় খেয়াল রাখতে হয় মানহাজের প্রভূরা যেন তাদের কোনো কাজে অসন্তুষ্ট না হয়। প্রয়োজনে তারা ইসলামকে কাস্টমাইজ করবে। দ্বীনের শত্রুদের চাহিদার ভিত্তিতে দ্বীনকে সার্জারি করে নতুন আকৃতি দিবে। একটা সময় আকৃতি বিকৃত হতে হতে তাদের ইসলাম এবং তারা নিজেরাই এক সময় বিলীন হয়ে যায়। বাকি রয়ে যায় সিস্টেম এবং সিস্টেমের প্রভূরা।
গণতান্ত্রিক ইসলামিস্টদেরকে এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করলেই তারা জবাব দেন, আমরা এগুলো হিকমাহ’র স্বার্থে করছি। প্রথমে (দ্বীনকে বিকৃত করে হলেও) যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে হবে। অতঃপর সবকিছু আমাদের আয়ত্বে চলে আসার পর ইসলামি রাষ্ট্র কিংবা খিলাফার ঘোষণা দিয়ে ফেলব। বাহ! কত চমৎকার যুক্তি! কি সুন্দর তাদের বুদ্ধি!
কথিত আছে— রাজ্য জয়ের চাইতে তা রক্ষা করা কঠিন। গণতন্ত্রবাদীরা রাজ্য জয়ের আগেই যদি শত্রু পক্ষের ভয়ে এরকম ভয়াবহ হিকমাহ অবলম্বন করে ইসলামকে কাট-ছাঁট করে তাহলে কখনো রাজ্য পাওয়ার পর তা রক্ষা করতে তাদের ‘হিকমাহ’ এর লেভেল কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
ইতোমধ্যে নববি মানহাজ দিয়ে পৃথিবীর নানা জায়গায় দ্বীন কায়েমের পরও কোনো তাওহিদবাদী এই মানহাজের কথা বললে সে হয়ে যায় চরমপন্থি। কুফফারদের আগে গণতন্ত্রবাদীরাই বলে উঠে এই তো পাওয়া গেল আরেকজন জঙ্গি।
অপরদিকে এক শতাব্দীকাল ধরে গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েমের চেষ্টায় ব্যর্থতার শত শত উদাহরণ তৈরি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের গণতন্ত্রবাদী ভাইরা দিকভ্রান্তের ন্যায় একই জায়গায় চক্কর দিচ্ছেন বারবার, যেমনিভাবে বনি ইসরাইল ‘তিহ’ প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছিল। পার্থক্য হলো— বনি ইসরাইলিরা ঘুরেছিল চল্লিশ বছর আর আমাদের ভাইদের ঘুরার বয়স প্রায় একশত বছর। বনি ইসরাইলিরা ঘুরেছিল শাস্তিস্বরূপ আর আমাদের ভাইরা ঘুরছে নির্বুদ্ধিতার ফলস্বরূপ।
কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলবে— দিস ইজ হিকমাহ। ভাইরে ভাই! এ কোন হিকমাহ’র দুনিয়ায় এসে পড়লাম! চতুর্দিকে শুধু হিকমাহ’র বাম্পার ফলন।
কাফেরদের রোষানলের ভয়ে যদি এতোই হিকমাহ অবলম্বন করতে চান তাহলে আপনাদেরকে আরেকটু এডভান্স বুদ্ধি শিখিয়ে দিচ্ছি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নাম করে এতোকাল যাবৎ শরিয়াহর অনেক বিষয়েই তো কম্প্রোমাইজ করলেন, এবার আপনাদের দলের নাম থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটাই বাদ দিয়ে দেন। বিশ্বাস করেন ভাই, আমেরিকা এতে বড্ড খুশি হবে। চরমপন্থিদের (!) সমালোচনাও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ দেশের অন্যান্য সেকুলার দলগুলো তাদের কথা এবং কাজে যতেষ্ট মিল রাখে। তারা একটি শতভাগ সেকুলার এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে। কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে না। তাই তাদের ব্যাপারে ফতোয়া স্পষ্ট। আম জনতা বুঝে শুনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
কিন্তু আপনারা একদিকে শরিয়াহ কায়েমের দাবী করেন, অপরদিকে কল্যাণ রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। একবার বলেন মদিনার মতো রাষ্ট্র কায়েম হবে, আরেকবার বলেন কাউকে বোরকা নিক্বাব পড়তে বাধ্য করা হবে না। তাহলে আপনাদের এই মাদানি রাষ্ট্রে করবেন টা কী?
আমরা সবাই বলে থাকি যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। সর্বযুগে মানব জীবনের সব সমস্যার সামাধান কুরআন এবং হাদিসে আছে। তাহলে আপনাদের এই আলট্রা-মডার্ন হিকমাহ জায়েয হওয়ার একটি প্রমাণও কি সেখান থেকে দিতে পারবেন?
কুরআনের হিকমাহ সবাইকে ইসলামের দিকে আহ্বান করে। আর আপনাদের হিকমাহ খোদ আপনাদেরকেই ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়। এ বড় আজিব এক হিকমাহ!
আমার মনে হচ্ছে, এই ভূখণ্ডে দ্বীন কায়েমের জিহাদে তাওহিদবাদীরা কুফফারদের আগে গণতন্ত্রবাদীদেরই বাধার সম্মুখীন হবে। আল্লাহ যেন আমার আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করেন। আমাদেরকে যেন সিরাতে মুস্তাকিমে অটল থাকার তাওফিক দান করেন।
২৪ রবিউল আখির, ১৪৪৬ হি.
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ইংরেজি
আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র আবিষ্কারের পর থেকেই পশ্চিমা এবং তাদের সমগ্র অনুসারীরা এটিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাদের রাষ্ট্রগুলোকে ধীরে ধীরে ‘কল্যাণের’ দিকে এগিয়ে নিয়েছে। যার ‘সুফল’ সবাই এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও সর্বত্র নৈতিকতার চরম দূর্ভিক্ষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধর্মকে পায়ের তলায় পিষ্ট করে অধর্ম নিয়ে সবাই পশুর মতো দিনাতিপাত করছে। গুম, খুন, ধর্ষণ কিংবা সুইসাইডের মতো প্রানঘাতি ভাইরাস এখন মহামারির রূপ ধারণ করেছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃহত্তম সংখ্যা।
চলমান শতাব্দীতে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মুসলমান বোমার আঘাতে নিহত হওয়া এবং কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে হিরোশিমায় প্রায় সত্তর হাজার বনি আদম খুন হয়ে যাওয়া ওয়েলফেয়ার স্ট্যাইটের ‘সফলতার’ আরেক জ্বলন্ত উদাহরণ।
এরকম শত শত ‘সাফল্যমণ্ডিত’ অধ্যায় রচিত হওয়ার পর অবশেষে এটা বুঝতে বাকি থাকে না যে, কথিত কল্যাণরাষ্ট্র কুফফারদের বানানো বস্তা পচা সস্তা কথা ছাড়া আর কিছুই নয়।
জনগণের সিমপ্যাথি পাবার লোভে রাজনীতিবিদরা তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এরকম হাজারো পরিভাষা ব্যবহার করে। সাম্য, শান্তি, মানবাধিকার, নারী স্বাধীনতা সহ আরো বিচিত্র ধরণের মনভুলানো উক্তি প্রায়ই আমরা পশ্চিমাদের মুখে শুনি। এতে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এই পরিভাষাগুলো যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠার দাবীদার কোনো ব্যক্তি উচ্চারণ করেন তখন তা সত্যই আমাদেরকে ব্যথিত করে। উম্মাহকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচাতে কলম ধরতে বাধ্য হই।
গণতান্ত্রিক ইসলামি রাজনীতিবিদরা প্রায়ই বলেন— ক্ষমতায় গেলে আমরা কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। কাউকে বুরকা-নিক্বাব পড়তে বাধ্য করা হবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি...।
হুবুহু পশ্চিমা এবং তাদের মদদপুষ্ট সেকুলার চাটুকার ক্ষমতাসীনদের মতোই তাদের বয়ান। তারা ইসলামি রাজনীতি করে, অথচ একবারও মুখ ফুটে বলতে পারে না— আমরা ইসলামি রাষ্ট্র চাই। দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে আল্লাহর শরিয়াহ বাস্তবায়ন করতে চাই। তারা ভয় পায়— পাছে যদি আন্তর্জাতিক মোড়ল গোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়।
এটাই বাস্তবতা। আপনি যার সিস্টেমের ভিতরে থাকবেন তার চরণেই দিনশেষে মাথা ঠেকাবেন। যারা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর মানহাজ দিয়ে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা করে তারা শত প্রতিকূলতায় থেকেও আল্লাহর সাহায্যে এক সময় বিজয় ছিনিয়ে আনে। আল্লাহর বিধান পালনে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই থোড়াই কেয়ার করে না। আর যারা দ্বীনের দুশমনদের মানহাজ দিয়ে দ্বীন কায়েম করতে চায় তাদের সব সময় খেয়াল রাখতে হয় মানহাজের প্রভূরা যেন তাদের কোনো কাজে অসন্তুষ্ট না হয়। প্রয়োজনে তারা ইসলামকে কাস্টমাইজ করবে। দ্বীনের শত্রুদের চাহিদার ভিত্তিতে দ্বীনকে সার্জারি করে নতুন আকৃতি দিবে। একটা সময় আকৃতি বিকৃত হতে হতে তাদের ইসলাম এবং তারা নিজেরাই এক সময় বিলীন হয়ে যায়। বাকি রয়ে যায় সিস্টেম এবং সিস্টেমের প্রভূরা।
গণতান্ত্রিক ইসলামিস্টদেরকে এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করলেই তারা জবাব দেন, আমরা এগুলো হিকমাহ’র স্বার্থে করছি। প্রথমে (দ্বীনকে বিকৃত করে হলেও) যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে হবে। অতঃপর সবকিছু আমাদের আয়ত্বে চলে আসার পর ইসলামি রাষ্ট্র কিংবা খিলাফার ঘোষণা দিয়ে ফেলব। বাহ! কত চমৎকার যুক্তি! কি সুন্দর তাদের বুদ্ধি!
কথিত আছে— রাজ্য জয়ের চাইতে তা রক্ষা করা কঠিন। গণতন্ত্রবাদীরা রাজ্য জয়ের আগেই যদি শত্রু পক্ষের ভয়ে এরকম ভয়াবহ হিকমাহ অবলম্বন করে ইসলামকে কাট-ছাঁট করে তাহলে কখনো রাজ্য পাওয়ার পর তা রক্ষা করতে তাদের ‘হিকমাহ’ এর লেভেল কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
ইতোমধ্যে নববি মানহাজ দিয়ে পৃথিবীর নানা জায়গায় দ্বীন কায়েমের পরও কোনো তাওহিদবাদী এই মানহাজের কথা বললে সে হয়ে যায় চরমপন্থি। কুফফারদের আগে গণতন্ত্রবাদীরাই বলে উঠে এই তো পাওয়া গেল আরেকজন জঙ্গি।
অপরদিকে এক শতাব্দীকাল ধরে গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েমের চেষ্টায় ব্যর্থতার শত শত উদাহরণ তৈরি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের গণতন্ত্রবাদী ভাইরা দিকভ্রান্তের ন্যায় একই জায়গায় চক্কর দিচ্ছেন বারবার, যেমনিভাবে বনি ইসরাইল ‘তিহ’ প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছিল। পার্থক্য হলো— বনি ইসরাইলিরা ঘুরেছিল চল্লিশ বছর আর আমাদের ভাইদের ঘুরার বয়স প্রায় একশত বছর। বনি ইসরাইলিরা ঘুরেছিল শাস্তিস্বরূপ আর আমাদের ভাইরা ঘুরছে নির্বুদ্ধিতার ফলস্বরূপ।
কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলবে— দিস ইজ হিকমাহ। ভাইরে ভাই! এ কোন হিকমাহ’র দুনিয়ায় এসে পড়লাম! চতুর্দিকে শুধু হিকমাহ’র বাম্পার ফলন।
কাফেরদের রোষানলের ভয়ে যদি এতোই হিকমাহ অবলম্বন করতে চান তাহলে আপনাদেরকে আরেকটু এডভান্স বুদ্ধি শিখিয়ে দিচ্ছি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নাম করে এতোকাল যাবৎ শরিয়াহর অনেক বিষয়েই তো কম্প্রোমাইজ করলেন, এবার আপনাদের দলের নাম থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটাই বাদ দিয়ে দেন। বিশ্বাস করেন ভাই, আমেরিকা এতে বড্ড খুশি হবে। চরমপন্থিদের (!) সমালোচনাও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ দেশের অন্যান্য সেকুলার দলগুলো তাদের কথা এবং কাজে যতেষ্ট মিল রাখে। তারা একটি শতভাগ সেকুলার এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে। কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে না। তাই তাদের ব্যাপারে ফতোয়া স্পষ্ট। আম জনতা বুঝে শুনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
কিন্তু আপনারা একদিকে শরিয়াহ কায়েমের দাবী করেন, অপরদিকে কল্যাণ রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। একবার বলেন মদিনার মতো রাষ্ট্র কায়েম হবে, আরেকবার বলেন কাউকে বোরকা নিক্বাব পড়তে বাধ্য করা হবে না। তাহলে আপনাদের এই মাদানি রাষ্ট্রে করবেন টা কী?
আমরা সবাই বলে থাকি যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। সর্বযুগে মানব জীবনের সব সমস্যার সামাধান কুরআন এবং হাদিসে আছে। তাহলে আপনাদের এই আলট্রা-মডার্ন হিকমাহ জায়েয হওয়ার একটি প্রমাণও কি সেখান থেকে দিতে পারবেন?
কুরআনের হিকমাহ সবাইকে ইসলামের দিকে আহ্বান করে। আর আপনাদের হিকমাহ খোদ আপনাদেরকেই ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়। এ বড় আজিব এক হিকমাহ!
আমার মনে হচ্ছে, এই ভূখণ্ডে দ্বীন কায়েমের জিহাদে তাওহিদবাদীরা কুফফারদের আগে গণতন্ত্রবাদীদেরই বাধার সম্মুখীন হবে। আল্লাহ যেন আমার আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করেন। আমাদেরকে যেন সিরাতে মুস্তাকিমে অটল থাকার তাওফিক দান করেন।
২৪ রবিউল আখির, ১৪৪৬ হি.
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ইংরেজি
Comment