Announcement

Collapse
No announcement yet.

ভারতের বাংলাদেশের উপর আধিপত্যবাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষতের স্টেটিক্স

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ভারতের বাংলাদেশের উপর আধিপত্যবাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষতের স্টেটিক্স


    ঐ দিনটিতে আমার একটি আশংকা ছিল। দূঃখজনকভাবে আনুমানিক মাত্র চৌদ্দ সপ্তাহের মাথায় আজ তা বাস্তব। অতএব, আমি এখন বাংলাদেশের বিগত ১৬ বছরের রাজনীতিকে আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণা থেকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছি। শুরুতে বলে রাখি, ধারণাটি আমার একান্ত নিজস্ব। এবং হয়তো আমার ধারণা পুরোপুরি ভুল। হয়তো আমি বাস্তবতা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে অজ্ঞ। হয়তো আমি একজন নির্বোধ। তবে, সবকিছু বিবেচনার পর আমার মনে হয়েছে যে, হোক আমার ধারণা সঠিক কিংবা ভুল, হোক তা বুদ্ধিমত্তা কিংবা নির্বুদ্ধিতার পরিচয়, হোক তা শিক্ষিত কিংবা গণ্ডমূর্খের চিহ্ন, যেটাই হোক না কেন, আমার উচিত ওসব কিছু বিবেচনা না করে বিষয়টা সবার সম্মুখে প্রকাশ করা।

    ধারণাটি হলো - "বাংলাদেশে বিগত ১২ বছর কিংবা তারও আগে থেকে কোনো বিরোধী দলের অস্তিত্ব নাই। এই দীর্ঘকাল যাবত বাংলাদেশে যা কিছু ছিল, এর সবগুলি আসলে 'Controlled Opposition'। এবং এই কথাটি তিতা হলেও আমার মতে সত্য।"

    এখন, এই নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষগুলোর মাঝে ব্যক্তিগতভাবে অসংখ্য ত্যাগী মানুষেরা ছিলেন এবং আছেন। যাদের ত্যাগের কথা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। এই মানুষগুলো নিষ্ঠাবান, তারা নিজ দলের প্রত্যক্ষ আদর্শের প্রতি পরিপূর্ণভাবে অনুগত। যারা কিনা নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দলের ও দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু, দল হিসাবে সামগ্রিকভাবে নয়াদিল্লির চরম বিরোধী কোনো দল কিংবা সাবেক সরকারের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি কোনো দলের বাংলাদেশে অস্তিত্ব না থাকার অন্তত এক যুগ ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। আর এই বাস্তবতা অনস্বীকার্য।

    আমরা এখন ভুল করে নিয়মিত বলে চলেছি যে, 'Fascist চলে গেছে'! অথচ আমরা ভুলে যাই যে, বাংলার মাটিতে সত্যিকারের 'Fascist' সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। আমাদের প্রধান শত্রুর যে আলোচনা, সেখানেও উনি আসবেন না। ওনার দায়িত্ব ছিল এদেশে আমাদের প্রত্যক্ষ শত্রু এবং প্রধান শত্রুর মূল হাতিয়ার হিসাবে কাজ করার। কিন্তু, হাতিয়ার পরিচালনার পেছনে যে শত্রুটি, সেটা উনি ছিলেন না। আর যে ছিল, সে কিন্তু সরেও যায়নি। বরং সে নিজস্ব স্থানেই এখনও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে রয়ে গেছে। এবং সে যে 'Fascist কাঠামো' তৈরি করেছিল, সেটাও চলছে বহাল তবিয়তে।

    সদ্য সাবেক 'Prime Minister' এর আমাদের ওপর ক্ষমতার মেয়াদ ছিল ১৬ বছর। এই সময়ের মাঝে সে যত নির্যাতন এবং নিপীড়ন চালিয়েছে, এর সমস্ত কিছু কি সে স্রেফ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য করেছে? নাকি সে সমস্ত কিছু শুধুমাত্র নিজের প্রতিশোধস্পৃহা নিবারণের জন্য করেছে? এখানে উত্তর হলো, প্রতিশোধস্পৃহা নিবারণ তথা নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য উনি মূলত এগুলো করলেও, এখানে নিজ স্বার্থ হাসিল ওনার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। উনি ছিলেন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও জনসাধারণের ওপর নয়াদিল্লি কর্তৃক মোতায়েনকৃত একটি অস্ত্র মাত্র!

    ১৯৮১ সালের মে মাসের ১৭ তারিখে এই অস্ত্রকে নয়াদিল্লি আমাদের মাঝে ডেপ্লয় করে। এর পূর্বে ০৬ বছর যাবত ভারতের রিসার্চ & অ্যানালাইসিস উইং (RAW) ওনাকে প্রস্তুত করে এদেশে ওদের ভবিষ্যৎ অপারেশনের জন্য। এবং ওদের আলোচ্য অপারেশনের লক্ষ্য কি? উত্তর হলো, বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ওরা '৭৫ সালের আগস্টের ১৫ তারিখের পর পরিবার হারানো শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে জার্মানি থেকে সরিয়ে নয়াদিল্লিতে নিয়ে আসে।

    এসময় নয়াদিল্লির 'Prime Minister' ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে এই সম্পূর্ণ তৎপরতার দেখভাল করেন। ওদেরকে নয়াদিল্লিতে তখন নতুন আবাসনের ব্যবস্থাও করে দেয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সেসময় ইন্দিরা গান্ধী যে এত আন্তরিকতার সাথে শেখ পরিবারের অবশিষ্ট সদস্যদের এভাবে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে গেলেন, এটা কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্ন নির্দোষ আন্তরিকতার ফলাফল ছিল না। বরং এর পেছনে RAW এর নিখুঁত বিশ্লেষণ এবং সে অনুযায়ী প্রদত্ত পরামর্শ যে কাজ করেছিল, তা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব।

    যাইহোক, শেখ হাসিনা তখন ওদের জন্য মূল্যবান রত্ন। সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ একটি 'Asset'। ওরা যখন তাই ওনাকে হাতের নাগালে পেলো, তখন স্বাভাবিকভাবেই ওনার পারিবারিক দল আওয়ামী লীগ, এদেশে নয়াদিল্লির একমাত্র বিশ্বস্ত দলে পরিণত হয় (আগে থেকে পছন্দের দল)। এবং যেহেতু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়েকে ওরা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, ফলে এখানে অন্য কোনো দলের নয়াদিল্লির বিশ্বস্ত মিত্র হয়ে ক্ষমতা পাওয়ার সুযোগ তখনই শেষ হয়ে যায়।

    অন্য দলগুলোকে এসময় নয়াদিল্লি একটি ভিন্ন ভূমিকায় কাজে লাগাবার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনাটি হলো, দলগুলোকে ভেতর থেকে কব্জা করে সেগুলোকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পুতুল হিসাবে খাঁড়া করে রাখা। এর ফলাফল হিসাবে আমাদের দেশের রাজনীতিতে 'Controlled Opposition' এর আগমন হয়।

    প্রশ্ন হতে পারে, আমাদের ভূখণ্ডে দিল্লির 'Controlled Opposition' রাখাটা কেন দরকার? উত্তর হলো, নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষের দরকার কারণ, নয়াদিল্লি আমাদের ভূখণ্ডকে তখন নিজ হাতের মুঠোয় নেওয়ার এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এবং ওদের সে পরিকল্পনার সর্বশেষ পর্ব হলো পূর্ণ দখলদারিত্ব। যে পর্যন্ত পৌঁছানোর পর চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে দু'টি পথ অবলম্বন করা যায়।

    ০১| Peaceful Takeover।
    ০২| Violent Takeover।

    অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দিল্লি আমাদের নিয়ে ওদের পরিকল্পনায় 'শান্তিপূর্ণ দখল প্রক্রিয়াকে' অগ্রাধিকার দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ বলতে আমি এখানে রক্তপাতহীন বোঝাচ্ছি না। শান্তিপূর্ণ বলতে এখানে তুলনামূলক বাঁধা বিহীন প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করছি। যেখানে আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর তেমন কোনো বাঁধা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর তরফ হতে থাকবে না। এবং এটা যে ওদের চূড়ান্ত লক্ষ্য, তা আমরা বুঝতে পারি দেশের নানান ক্ষেত্রের শাখা-প্রশাখায় ওদের হয়ে কাজ করা 'Asset' এর মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা দেখে। গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্টরা আশা করি জানেন যে, শত্রুর মাঝে একটা বিশ্বাসঘাতক খুঁজে নিজ দলে টেনে আনবার জন্য কি পরিমাণ অর্থ এবং শ্রম ব্যয় করতে হয়। ভারতের জন্য দৃশ্যমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পাকিস্তান কিন্তু 'Existential Threat'।

    অথচ ওরা কিন্তু পাকিস্তানে এত বিশ্বাসঘাতক নিজেদের দলে টানবার চেষ্টা করেনি, ওরা কিন্তু ওখানে তুলনামূলকভাবে এত বেশি শ্রম ও অর্থ ব্যয় করেনি, যতটা না ওরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিগত ১৬ বছর যাবৎ করে আসছে। এমন অস্বাভাববিক গোয়েন্দা তৎপরতার পেছনে যে পরিমাণ আগ্রহের দরকার, তা শুধুমাত্র একটি আগ্রাসন ও দখলের পরিকল্পনা থেকে আসা সম্ভব।

    মূল আলোচনা থেকে কিছুটা সরে গিয়েছিলাম। আমরা আবার সেদিকে ফেরত আসছি। কথা হলো, 'Peaceful অথবা Violent', দখলের উদ্দেশ্যে চালানো ওদের আগ্রাসন যেমনই হোক না কেন, ওদের পরিকল্পনা হলো আগ্রাসনের মূহুর্তে যথাসম্ভব কম বাঁধার মুখোমুখি হওয়া। আমাদের মাঝে আশা করি সকলের ১৩ই জুলাই, ২০২৪ সালের একটি খবর স্মরণে রয়েছে। এদিন বাংলাদেশের উচ্চ আদালত আমাদের Border Guard Bangladesh (BGB) এর জন্য জাতীয় সংসদকে উদ্দেশ্য করে একটি পরামর্শ প্রদান করে। উক্ত পরামর্শে বলা হয় যে, 'BGB' যেন 'Trafficking' বন্ধ করবার জন্য বাংলাদেশের সকল সীমান্তে সীমান্ত রেখা হতে দেশের অভ্যন্তর পর্যন্ত ০৮ কিলোমিটার জমি সম্পূর্ণ ফাঁকা এবং সমতল করে ফেলে।

    এবং শুধু তাই নয়, উচ্চ আদালত আরও পরামর্শ দেয় যে, 'BGB' এর উচিত এই সম্পূর্ণ ০৮ কিলোমিটারকে এমনভাবে প্রস্তুত করা, যেন এই সম্পূর্ণ জায়গা এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়! এসময় পরামর্শদাতারা এটুকুতে ক্ষান্ত হয়নি। ওরা আরও বলে যে, এই ০৮ কিলোমিটারকে 'BGB' নিজেদের ঘাঁটি ও সামরিক চৌকি সহ যাবতীয় স্থাপনা এবং প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের কাজে ব্যবহার করতে পারে!

    এটা যে কত ভয়ানক অশুভ একটি পরামর্শ ছিল, তা আশা করি বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের সাবেক সরকার থাকলে এই পরামর্শ হয়তো বাস্তবায়িতও হয়ে যেতো। আমরা এখন জানি যে, এমন অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহীদের অভাব আসলে আমাদের দেশে নাই। আর এই পরামর্শ বাস্তবায়িত হলে কি ঘটতো?

    পরামর্শ বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে কোনো একদিন যখন 'Indian Armed Forces' এর সাঁজোয়া, পদাতিক এবং বিমান বাহিনী হামলা শুরু করতো, তখন উক্ত ০৮ কিলোমিটার ওদের 'Free Fire Zone' এ পরিণত হতো। ইণ্ডিয়ান আর্টিলারির আঘাতে নিমিষে শেষ হয়ে যেতো আমাদের বর্ডার গার্ড। এসময় নয়াদিল্লির পরামর্শে বিস্তৃত অঞ্চল ধরে প্রাকৃতিক কোনো বাঁধা কিংবা আড়াল না রাখায় আমাদের 'First Line of Defence' এর সৈনিকেরা তখন অসহায়ের ন্যায় প্রাণ হারাতেন। তাদের ওখানে কিছু করার থাকতো না।

    এটা হতে পারতো তখন পিলখানার গণহত্যা দিয়ে এদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর আরম্ভ হওয়া নিপীড়নের সর্বশেষ পর্ব। যার শেষ হতো 'Border Guard Bangladesh' এর সর্বস্তরের সম্মুখযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় দিয়ে। এবং ইণ্ডিয়ান আর্মির পদাতিক ও সাঁজোয়া বাহিনী দ্রুততার সাথে কিছু বুঝে উঠবার পূর্বে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সকল ঘাঁটির দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতো। এসময় সেনাবাহিনীর সকল স্তরে বসে থাকা নয়াদিল্লির বিশ্বাসঘাতকেরা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন শুরু করলে বাকি কাজ সম্পন্ন হতো (এই অংশটা এখনও পুরোপুরি সম্ভব)।

    সুতরাং, আমরা দেখলাম যে, ওরা আগ্রাসনের সর্বস্তরে বাঁধার যথাসম্ভব কম মুখোমুখি হতে চায়। যে কারণে ওরা এই বিষয়টিকে পরিকল্পনার কেন্দ্র বানিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

    উপরে আমাদের ভূখণ্ড নিয়ে ভারতের যে লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা এতক্ষণ বলা হলো, ওটার ক্ষেত্রে প্রস্তুত করবার জন্য আশা করি বাংলাদেশের 'Prime Minister' পদ দখলে নেওয়ার গুরুত্ব আমার এখানে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে, সেক্ষেত্রেও পূর্বেকার একটি প্রশ্ন আবার আসতে পারে। তা হলো, দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ দখলে নিতে নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষের প্রয়োজন কি?

    এখানে জবাব হলো, ইতিহাস বলে যে, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা। এমনকি বৃটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ যখন হলো, তখনও বিদ্রোহের বলা চলে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের বাংলার সেনানীদের ছিল। শেখ হাসিনা ওনার চূড়ান্ত মিশনে যখন নয়াদিল্লি মোতায়েন করে, তখন ওদের তাই এটা মাথায় রাখবার প্রয়োজন দেখা দেয়। যেহেতু অন্যায় কর্মকাণ্ড ও প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্র জাতি হিসাবে আমরা বরদাশত করব না, সেহেতু অমন ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়ার জন্য সবচেয়ে নিকটবর্তী এবং তদনুযায়ী তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণে সবচেয়ে সক্ষম ও আগ্রহীদের দল, আমাদের সেনাবাহিনী ও সেনাকর্মকর্তাদের সর্বপ্রথম দমন করার প্রকল্প হাতে নেয় ওরা।

    সাথে সাথে আগ্রাসন চালাবার মূহুর্তে ওদের সাথে যাদের প্রথম দেখা হবে, সেই দূর্ধর্ষ Bangladesh Rifles (BDR) কে ওরা একইসাথে শেষ করে ফেলার পরিকল্পনা করে। এই দু'টি পরিকল্পনা দ্রুততম সময়ের মাঝে বাস্তবায়ন করা হয়। এরই সাথে নতুন প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে এর থেকেও ন্যাক্কারজনক এবং পাশবিক কাণ্ড ঘটাতে শুরু করলেও যেন জনগণকে ঘুম থেকে তোলার মতো কেউ উপযুক্ত স্থানগুলোতে অবশিষ্ট না থাকে, এজন্য রাজনীতির ময়দানে ওদের প্রধানমন্ত্রীর বিপক্ষ দলে কিছু 'Puppet' এর প্রয়োজন হয়। এরাই হলো সেই 'Controlled Opposition' তথা 'নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষ'।

    আর, এদের আরও একটি ব্যবহার ছিল। আমরা দেখেছি যে, বিগত ১৬ বছর যাবত আমাদের দেশে চরম পর্যায়ের জুলুম-নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু, বহির্বিশ্বের চোখে তবুও কাগজে-কলমে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীন হিসাবে বিবেচিত ছিলাম। আর, কাগজে-কলমে গণতান্ত্রিক হওয়ার অনেক লাভ আছে। যেমন, স্বীকৃত স্বৈরশাসকদের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের জন্য চাপ দেওয়া সহজ। দেশের ভেতরে ওদের শত্রু জন্মে দ্রুত এবং ওদের পেছনে বিদেশি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরাও সর্বক্ষণ লেগে থাকে। অন্যদিকে, কাগজে-কলমে গণতন্ত্র থাকলে মানুষ তেমন নজর দেয় না। অন্যায়-অবিচার খুব সহজে করে যাওয়া যায়।

    আর দেশের ভেতরে নিজের দালাল তৈরি করাও কিছুটা সহজ হয়। পাশাপাশি, নয়াদিল্লি আরেকটি বিষয় উপলব্ধি করেছিল যে, ওদের মহাপরিকল্পনা যত নিখুঁতই হোক না কেন, বৈশ্বিক শক্তির নজর এড়িয়ে এবং বৈশ্বিক পরাশক্তির সাথে টক্কর দিয়ে সেটার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ওরা যদি কাগজে-কলমে ওদের 'Asset' কে ঠিক না রাখতো, তবে সেটা হতো বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতি চ্যালেন্জ জানানো। যা নয়াদিল্লির জন্য ভালো অভিজ্ঞতা হতো বলে মনে হয় না। ওদের এমন পরিকল্পনার প্রধান 'Asset' কে কাগজে-কলমে ঝুঁকির মাঝে রেখে দিলে বৈশ্বিক শক্তি সুযোগ পেলেই ওদের 'Asset' কে ধরে ওদের মাথার ওপর 'Leverage' বানিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা চালাতো।

    সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে নয়াদিল্লি পুরোদস্তুর প্রত্যক্ষ স্বৈরাচারী ব্যবস্থার দিকে না গিয়ে নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষ সমেত একটা 'Illusion' ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা খাঁড়া করে। এসময় এর অংশ হিসাবে বিপরীত পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিবর্গকে ওনাদের সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে আওয়ামী লীগকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়। এসময় নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষ তৈরিতে বাঁধা হয়ে উঠতে পারে এমন ব্যক্তিবর্গকে বিভিন্ন কায়দায় সরিয়ে ফেলা হয়। অতঃপর অবশিষ্ট যারা রয়েছে, ওদের জন্য নয়াদিল্লির এজেণ্ডা বাস্তবায়ন হয় বর্তমানে একমাত্র লক্ষ্য।

    সুতরাং, কোনো কথিত নামধারী ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতা যখন নয়াদিল্লির এজেণ্ডা নিয়ে কাজ করতে থাকা সাম্প্রদায়িক দলের সাথে সুর মিলিয়ে সংসদের আসন বিষয়ে বক্তৃতা দিবেন, তখন আমি বাংলাদেশের মানুষকে অবাক না হতে পরামর্শ দিব। আবার, যখন কোনো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতাকে কুখ্যাত অমিত শাহের (ভারতের 'Minister of Home Affairs') সামনে নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাবে, তখনও আমি বাংলাদেশের মানুষকে অবাক না হওয়ার পরামর্শ দিব।

    সাথে সাথে মনে রাখবেন, বাংলাদেশের মাটিতে নয়াদিল্লি সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ওনার পরিবার এবং ওনার পারিবারিক রাজনৈতিক দল ব্যতীত আর কাউকে বিশ্বাস করে না। অতএব, নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষদের ওরা এদের পুনরায় পুনর্বাসন করানোর দায়িত্ব প্রদান করেছে। আর এতক্ষণ যেমনটা বলেছি যে, নয়াদিল্লি যদি সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায়, সেটা ওরা নিজেদের স্বস্তির জায়গা থেকে নেওয়ার পক্ষপাতী।

    ফলে, নিজেরা স্বস্তির জায়গাতে পৌঁছাবার আগ পর্যন্ত ওরা নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষদের দিয়ে ঢাকা চালাতে চায়। এবং পরিস্থিতি যদি গুরুতর হয় এবং নিয়ন্ত্রিত প্রতিপক্ষদের ওপর সেসময় পর্যন্ত আস্থা রাখা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে সরাসরি সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক দলকেই পুনরায় এনে পুনর্বাসন করে ঢাকার দায়িত্ব দিতে চায় ওরা। এক্ষেত্রে ইরান সিরিয়াতে বাশার আল-আসাদকে যেভাবে ক্ষমতায় রেখেছে, অনুরূপ মডেল অনুসরণ করা হতে পারে। অথবা এর কাছাকাছি নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা ওদের থাকতে পারে। আর এটা ততক্ষণের জন্য, যতক্ষণ পর্যন্ত না নয়াদিল্লি সরাসরি দৃশ্যপটে সামরিক শক্তি সমেত আগমনের সিদ্ধান্ত না নেয়।

    মনে রাখবেন, একটি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয় যুদ্ধের তারিখে। আর একটি গোয়েন্দা সংস্থার জন্য একই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সামরিক বাহিনীর কয়েক দশক পূর্বে।

    (সংগ্রহীত)



  • #2
    জাঝাকাল্লাহু খাইরান

    Comment

    Working...
    X