Announcement

Collapse
No announcement yet.

শত্রু-মিত্র নির্ণয়ে ব্যর্থতা শতাব্দীর জঘন্যতম একটি অভিশাপ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শত্রু-মিত্র নির্ণয়ে ব্যর্থতা শতাব্দীর জঘন্যতম একটি অভিশাপ

    ‘অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের বিরুদ্ধে (ইসলামবিদ্বেষী) অন্যান্য সম্প্রদায় একে অন্যকে আহ্বান করবে, যেরূপ খাবার পাত্রের প্রতি ভক্ষণকারী অন্যান্যদেরকে ডেকে থাকে’— বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এই ভবিষ্যদবাণীর দ্ব্যর্থহীন বাস্তবতার সাক্ষী দিচ্ছে। বিশ্বের মুসলমানরা আজ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। শতাব্দীকাল ধরে পুরো মুসলিম মিল্লাতে চলছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, কাশ্মির কিংবা তুর্কিস্তান— সমগ্র ভূখণ্ডই আজ লালে লাল হচ্ছে উম্মাতে মুহাম্মদির রক্তে। অপরদিকে একই জাতির অন্যান্য সদস্যরা পার করছে এক বিলাসিতাময় জীবন। বাড়ি, গাড়ি, নারী আর ক্যারিয়ারের পিছনে তাদের পুরো জীবন উৎসর্গ করে দিচ্ছে। ইউনিভার্সিটির গ্রেজুয়েশন আর চাকরির পজিশন বাড়াতেই তাদের সব সময় ব্যয় হয়। মাযলুমদের নিয়ে ভাবার কোনো ফুরসত তাদের নেই। এমনকি এ সংক্রান্ত আলোচনা মুখে আনতেও তারা নারাজ। পাছে পশ্চিমা প্রভূরা যদি জঙ্গি, চরমপন্থি ট্যাগ লাগিয়ে দেয়।

    এতকিছুর পরও উম্মাহর এই ক্রান্তিলগ্নে একটি দল তাদের বিলাসী জীবন ও সুন্দর ক্যারিয়ারকে পিছনে ফেলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উম্মতের রক্তের বদলা নিতে দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের কারো কারো নিজ জন্মভূমিতে ছিল বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। ছিল রূপকথার শাহজাদাদের মতো রঙিন জীবন। কিন্তু উম্মাহর ব্যথায় ব্যথিত হয়ে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে তারা দুর্গম পাহাড়ের কণ্টকাকীর্ণ গুহাগুলোকে নিজেদের বাসস্থান বানিয়ে নিয়েছেন। তারা চাইলে অন্য সবার মতো দামী দামী গাড়িতে চড়ে সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে কোনো বিলাসবহুল রেস্তরাঁয় বসে নানাপদের আহার দিয়ে উদরপূর্তি করতে পারতেন। কিন্তু মাযলু্মানদের আর্ত চিৎকার তাদেরকে ধূলিমলিন তাবুতে বসে শুকনা রুটি খেয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য করে। কুফফারদের ড্রোন সব সময় তাদেরকে তাড়া করে বেড়ায়। কিন্তু তারা ভীত হয় না। আয়নাঘর, গুয়ান্তামো বে কিংবা সিদনায়ার মতো নরক সদৃশ জিন্দানখানায় বন্দী করে তাদের উপর চালানো হয় জাহান্নামের বিভীষিকা। তবুও তারা জিহাদের পথ ছেড়ে দেয় না। তাগুত আমেরিকা ও তার দোসররা তাদের মস্তকের দাম নির্ধারণ করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। তবুও তাদেরকে দমানো যায় না। কুফফাররা গুটিকতক এই গুরাবাদেরকে এতোই ভয় পায় যে, তাদের কেউ কেউ দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরও কোথাও তাদের আলোচনা হলে আলোচনাকারীর উপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোতে তাদের নাম লিখতে গিয়ে নানা কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। নতুবা একাউন্ট ব্যান কিংবা রেস্ট্রিক্টেড হয়ে যাবে। অথবা একাউন্ট ব্যবহারকারীকে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নযরের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

    কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! অধিকাংশ মুসলমান এখনো পর্যন্ত আত্মোৎসর্গকারী এই মহান মুজাহিদদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বেখবর। দাজ্জালি মিডিয়ার মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডায় প্রভাবিত হয়ে উম্মাহর এই শার্দূলদেরকে তারা জঙ্গি ও চরমপন্থী বলে গালি দেয়। তাদের ধারণা, এসব জঙ্গিদের জঙ্গিবাদী (!) কর্মকাণ্ডের ফলেই সমগ্র মুসলিম দুনিয়ায় কাফেররা তাণ্ডব চালাচ্ছে। অথচ তারা বেমালুম ভুলে গেছে— মুসলিমদের উপর কুফফারদের চালানো তাণ্ডবের প্রতিশোধ স্বরূপই এই মানুষগুলো জিহাদে লিপ্ত হয়েছিল, যাকে তারা জঙ্গিবাদ আখ্যা দিচ্ছে।

    মুজাহিদগণ অনলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রম চালালে কতিপয় শায়েখ ও তাদের অনুসারীরা বলেন— দেখো, খারেজিরা গর্তে লুকিয়ে থেকে সবাইকে জিহাদের উস্কানি দিচ্ছে। তারা কেন সরাসরি ময়দানে গিয়ে জিহাদ করছে না? অতঃপর যখন বাস্তব ময়দান থেকে মুজাহিদিনদের সফলতার সংবাদ আসে তখন তারা বলে উঠেন— এদের তো আকিদা ঠিক নাই।

    গুরাবাদেরকে অপবাদ দেওয়া হয় তারা নাকি পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। অথচ বাস্তবতা হলো, এই মানুষগুলোকে কেবল খুঁজে পাওয়ার জন্যই সম্মিলিত কুফফার জোট বিশ্বময় অজস্র গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রেখেছে। তাদেরকে হত্যা করার বিনিময়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করে রেখেছে।

    আমাদের সম্মানিত স্কলাররা মাহফিলের মাইকের সামনে বসে বক্তব্য দেন— বিল ক্লিনটন আবিষ্কার করেছে তালেবান। জর্জ ডব্লিউ বুশ আবিষ্কার করেছে আল কায়দা। সম্ভবত তারা বুঝাতে চান, পুরো দুনিয়ায় চলমান যুদ্ধবিগ্রহের মূল হোতা আল কায়দা এবং তার শাখা প্রশাখা। অথচ আল কায়দার জন্মের সহস্র বছর আগে থেকেই সমগ্র বিশ্ব, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব কুফফার ও মুশরিকিনদের রোষানলের শিকার হয়ে আসছে।

    অপরদিকে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে চেপে বসা তাগুত শাসকরা পশ্চিমা কুফফার জোটের সাথে সরাসরি আঁতাত করে চললেও এই সমস্ত শায়েখগণ তাদের মহান (!) শাসকদের উপর একটা ফুলের টোকাও দিতে চান না। উলটো এদের আনুগত্য করাকে ফরয ঘোষণা দিয়ে বসেন। তাওহিদের চেতনাধারী কেউ এই শাসকদের কুফর ও রিদ্দাহ প্রকাশ করে দিলে তাকে বাগাওয়াত ও খারিজিইয়্যাতের ফতোয়া দিয়ে কোণঠাসা করে ফেলা হয়। জঙ্গি ও মানহাজি ট্যাগ দিয়ে তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পায়তারা করা হয়।

    হায় উম্মাহ! আপনারা কবে থেকে এমন অন্ধ হয়ে গেলেন? নিজের কালিমার ভাইদেরকে ডিঙ্গিয়ে কালিমার শত্রুদের প্রতি আপনাদের এতো বিশ্বাস কবে থেকে তৈরি হলো?

    ইসলামকে পুঁজি করে নির্বাচনে জিতা এরদোগানকে হালের মুসলিমরা নাম দেয় ‘সুলতান এরদোগান’। সিরিয়ান ও ফিলিস্তিনি মুসলমানদেরকে পিছন থেকে ছুরি মারা এবং ন্যাটোর সদস্যপদে থেকে মুসলিম নিধনে কুফফারদেরকে নিয়মিত সহযোগিতা করা যার অনন্য কীর্তি।

    ‘মুশরিকদেরকে জাযিরাতুল আরব থেকে বের করে দাও’— মুহাম্মাদে আরাবি (ﷺ) এর পবিত্র যবান নিসৃত এই উক্তিকে চরম অবজ্ঞা করে পুরো উম্মাহর সাথে গাদ্দারি করে হারামাইনের পাক ভূমিতে নাপাক মার্কিনিদেরকে অবাদে চলার সুযোগ করে দেওয়া আলে সাউদকে তারা বলে ‘খাদিমুল হারামাইন আশ শারিফাইন’। লক্ষ্য লক্ষ্য সাহাবি ও মহান মনীষীদের পদচারণায় ধন্য হওয়া আরবের পবিত্র ভূমিতে নগ্ন নর্তকিদের দিয়ে অশ্লীল নৃত্য করানো আলে সালুলকে নিয়ে তারা খিলাফাহ পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখে।

    পুরো বিশ্বে কুফফারদের ছত্রছায়ায় মুসলিমদের উপর অত্যাচার চালানো সেনাবাহিনীকে নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখে— স্বদেশে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে এরাই মুসলমানদেরকে রক্ষা করবে। অথচ সবাই ভুলে গেছে, এ পর্যন্ত কেবল মুসলমানদের রক্তেই রঞ্জিত হয়েছে মুসলিম দেশগুলোর এই অথর্ব তাগুতবাহিনীর হাত।

    রাসূল (ﷺ) বলেছেন, শেষ জামানায় ইমান রক্ষা করা হাতের মধ্যে আগুন রাখার মতো কঠিন হবে। হাদিসটি শুনে আগে ভাবতাম— আখেরি জামানায় হয়ত মহিলারা স্বল্প বসনে ঘুরে বেড়াবে। ফলে নযরের হেফাযত করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই রাসূল (ﷺ) এই সতর্কবাণী করে গেছেন। কিন্তু এখন দেখছি ফিতনাহ আমাদের ধারণার চাইতেও ভয়াবহ।

    প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠছে, বুড়ো হচ্ছে, অতঃপর একদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। অথচ আদৌ তারা জানতে পারছে না দুনিয়াতে কারা ছিল তাদের দোস্ত, কারা ছিল দুশমন। এর চাইতে বড় দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে! মিডিয়ার ছল-চাতুরি আর মিথ্যে প্রোপাগাণ্ডা দিয়ে উম্মাহকে তাদের আসল শুভাকাঙ্ক্ষীদের ব্যাপারে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে ফেলা— এর চাইতে বড় ফিতনাহ আর কি হতে পারে!

    দুনিয়ার তাবৎ মুসলমান এখন খালিফাতুল্লাহ মাহদির আগমনের প্রহর গুনছে। উনাকে নিয়ে সবার কত জল্পনা-কল্পনা। ভাবখানা এমন, যেন উনার আবির্ভাবের সাথে সাথেই সবাই চট করে উনার বাহিনীতে ভর্তি হয়ে যাবে। অথচ উনাকে শনাক্ত করতে কি পরিমাণ কাটখড় পোড়াতে হবে সেটা মুসলিমরা কল্পনাই করতে পারছে না। যুগের মুসলমানরা যেভাবে আল্লাহর কালামের চাইতে দাজ্জালি মিডিয়াকে বেশি বিশ্বাস করছে, মনে হচ্ছে— পৃথিবীতে খালিফা মাহদির আগমন ঘটে প্রস্তানের সময় চলে আসবে, তখনো সবাই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগবে— ঐ লোকটি কি আসলেই সেই প্রতিশ্রুত মাহদি? নাকি কোনো জঙ্গি? আল ইয়াযু বিল্লাহ।







    ১৬ জুমাদাল আখিরাহ, ১৪৪৬ হি.
    ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ইংরেজি



  • #2
    আল্লাহ আমাদেরকে হকের সাথে আমৃত্যু রাখুন। আমীন
    জাযাকাল্লাহু খাইরান। নিয়মিত লিখবেন ভাই আমাদের জন্য।
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment

    Working...
    X