কসাই মোদির অপরাধনামা! (তৃতীয় পর্ব)
শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২৬-২৭ মার্চ ঢাকা সফরে আসছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কসাই নরেন্দ্র মোদী।
বাংলাদেশের হিন্দুঘেষা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে মোদী ঢাকা সফর করবে। বাংলাদেশের কথিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ নামের শিরকী পূজা উপলক্ষে মোদির এই সফর।
সারাবিশ্বে মোদি সন্ত্রাসী নামে পরিচিত। বিশ্বের প্রথম ১০ জন সন্ত্রাসীর তালিকায়ও ছিল মোদির নাম। শেখ হাসিনা সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মুসলিমদেও বিভিন্ন শিরক করতে বাধ্য করে। অথচ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান গাওয়া এই শেখ হাসিনাই চরম সাম্প্রদায়িক মোদি সরকারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। লাল গালিচা সংবর্ধনা দিতে চাচ্ছে। এমন কর্মকান্ডে এটা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণিত হয় যে শেখ হাসিনা ভারতের দালাল। দেশের মানুষের মতামতের কোনো দাম তার কাছে নেই। প্রভু ভারত যা বলবে শেখ হাসিনা তা-ই করবে।
মোদির উত্থানের পর থেকে ভারতের মুসলিমদের উপর অত্যাচার তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। ভারতে মুসলিমদের উপর বহু দশক ধরে চলমান নির্যাতনের দীর্ঘ অপরাধনামার সংক্ষিপ্ত কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে এই আমাদের এই সিরিজে। গত দুই পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম বাবরি মসজিদ ধ্বংস, গুজরাট গণহত্যা এবং কাশ্মীরের মুসলিমদের উপর ভারতের অত্যাচার-নির্যাতন নিয়ে। এই সিরিজে আমরা আলোচনা করব মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতের দ্বারা দিল্লি গনহত্যা এবং গো-রক্ষার নামে পিটিয়ে মুসলিম মারার মতো বর্বর কর্মকান্ড নিয়ে ।
৪/ দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যা:-
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতের মুসলিম বিরোধী আইন ‘সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নামে পরিচিত এই আইনের কথা উঠলে ব্যাপক হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়।
আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত নিপীড়িত সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব পাওয়ার সুযোগ হয়েছে এই বিলের মাধ্যমে। কিন্ত আশ্চর্যজনকভাবে মুসলিমদের জন্য এজাতীয় কোনো সুযোগের ব্যবস্থা রাখা হয় নি। ভারতীয় আইনের আধারে প্রথমবারের মত ধর্মীয় পরিচয়কে নাগরিকত্ব লাভের শর্ত হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ, গনত্বান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত নিজেকে পরিচয় দেয়। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ব্যাপারে ভারতের মাথাব্যাথার শেষ নেই। কিন্তু মোদি সরকার নিজেরাই চরম সাম্প্রদায়িক, মুসলিম বিদ্বেষী আইন তৈরি করে। এই সাম্প্রদায়িক আইনের বিরুদ্ধে কেউ যেন প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য হিন্দুত্ববাদী উগ্র মোদি সরকার লেলিয়ে দেয় রাষ্ট্রীয় সকল শক্তিকে।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। অন্তর্ভুক্ত ছিল রাজধানী দিল্লি, উত্তর প্রদেশ রাজ্য, ব্যাঙ্গালোর শহর ও কর্ণাটক রাজ্যের কিছু অংশও। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই উত্তর প্রদেশ, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ, পাটনা, চন্ডিগড়, মুম্বাই, দিল্লি, এবং অন্যান্য শহরগুলিতে লাখ লাখ বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। সেই সুযোগে মুসলিম বিদ্বেষী মোদি সরকার হাজার হাজার মুসলিমদেরকে গ্রেপ্তার করে। জামেয়া মিলিয়ার মতো বিশ্ব বিদ্যালয়গুলো রাতের আঁধারে পুলিশ এবং উগ্র হিন্দুরা ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিবাদকারীদের উপর। মুসলিম নারীরাও তাদের অত্যাচার থেকে রেহায় পায় না। খোদ ভারতের সেক্যুলার সমালোচকদের মতেও, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ছিল ভারতের ২০ কোটির বেশি মুসলিমদের কোনঠাসা করার ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী’ এজেন্ডা।
২০২৪ সালের মধ্যে 'প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্ত ও ভারত থেকে বিতাড়িত' করার উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী নাগরিকদের তালিকা তৈরির ঘোষণা দেয়ার পর এই আইন নিয়ে শঙ্কা আরো বেড়েছে। তাছাড়া নাগরিকপঞ্জি বা ন্যাশনাল সিটিজেন রেজিস্টার (এনআরসি) এরই মধ্যে উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসামে প্রকাশ করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ১৯ লাখ মুসলিম জাতীয় পরিচয়হীন অবস্থায় রয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক মুসলিমদের জন্য ভারত ইতোমধ্যেই চীনের কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের আদলে বিশাল জেলখানা বানানোও শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে আসামে মোদি সরকার একটি গণহত্যার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে।
এহেন পরিস্থিতে দিল্লির সচেতন মুসলমানেরা মুসলিম বিরোধী আইন ‘সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের চরম বিরোধিতা শুরু করে। ভারত মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও মুসলমানদের বেলায় সামান্য মিটিং মিছিলও সহ্য করতে পারেনি।
২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, উত্তর পূর্ব দিল্লিতে শুরু হয় মোদি প্রশাসনের সহিংসতা, যার ফলে ৪৯ জন নিহত হন। প্রায় ২০০ জন আহত হন।
হিন্দু গেরুয়া সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের সম্পত্তি ও মসজিদগুলিতে ভাঙচুর চালায়।মসজিদের মিনার থেকে মাইক খুলে গেরুয়া পতাকা টানিয়ে দেয়। সে সময় হিন্দুত্ববাদীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে থাকে। হিন্দুদের সহিংসতা বেশ কয়েক দিন যাবত অব্যাহত ছিল । মুসলিমদের সম্পত্তি ব্যাপকভাবে ধ্বংস করা হয়। হিন্দুরা মুসলিমদের বেশ কয়েকটি স্কুল, দোকান, ঘর, যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছু মসজিদও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
হামলার পরে মুস্তাফাবাদ এলাকায় একটি বাড়িতে গিয়ে বিবিসি বাংলার দিল্লির সংবাদদাতা শুভজ্যোতি দেখতে পায় বাড়ির বৈঠকখানায় কয়েকশ’ মুসলিম, যাদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু—তারা বাড়িঘর থেকে পালিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক, অবিশ্বাস। সেখানে মাঝবয়সী এক নারী বলেন, কোথা থেকে হঠাৎ করে জয় শ্রীরাম হুঙ্কার দিয়ে শত শত ‘গুণ্ডা’ মুসলিমদের বাড়িতে হামলা চালায়। ‘তারা চিৎকার করছিল, মুসলমানদের খতম করে দেবো। বাঁচতে দেবো না। তারা বলছিল পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারবে না।’
শুভজ্যোতি জানায়, বহু মানুষ তাকে বলেছেন, সোমবার থেকে দুইদিন ধরে চলা এই সহিংসতার সময় পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয়। যে আতঙ্কের ছাপ তিনি উত্তর-পূর্ব দিল্লির মানুষের চোখেমুখে দেখেছেন তা সহজে যাবে বলে মনে হয় না।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় সেই ঘটনার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তবে এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে কেবল মুসলিম বিক্ষোভকারীদের। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের করো নাম উল্লেখই করা হয়নি চার্জশিটে। ভিক্টিমদের বয়ানের ভিত্তিতে নয়, পুলিশ তদন্তটা সাজিয়েছে তাদের বানানো গল্প আর সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। অথচ আমরা সবাই জানি দাঙ্গার মূলে ছিল বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের ঘৃণা ছড়ানো ভাষণ!।
পক্ষান্তরে, দাঙ্গার সময় পুলিশের বিরুদ্ধেই মারধর, অগ্নিসংযোগ বা ভয় দেখানোর অন্তত আশি-নব্বইটা অভিযোগ এসেছে, কিন্তু পুলিশ একটারও এফআইআর নিতে রাজি হয়নি।'
গুজরাটের দাঙ্গার মতো দিল্লির দাঙ্গাতেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে পুলিশ, কোথাও কোথাও দাঙ্গাকারীদের পক্ষ অবলম্বন করেছে। দিল্লির পুলিশের ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক। জেএনইউতে, বিজেপির ছাত্র সংগঠনের গুণ্ডাদের হামলায় তারা ব্যবস্থা নেয়নি। জামিয়ায় পুলিশ নিজেরাই হামলা চালিয়ে ছাত্রদের নির্বিচারে পিটিয়েছে। বিজেপির মন্ত্রী-নেতারা গুলি করে ‘দেশের গাদ্দারদের’ মারার প্রকাশ্য হুমকি দিলেও পুলিশ বিষয়টিকে পাত্তা দেয়নি। দাঙ্গার সময় মুসলিমদের কাছ থেকে প্রায় ১০,০০০ কল করা হয়েছে পুলিশের কাছে। তবুও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় নি।
গুজরাট দাঙ্গার সাথে কী অদ্ভুত মিল! গুজরাটের দাঙ্গাবাজ মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যাকে বিশ্বমিডিয়া ‘গুজরাটের কসাই’ নাম দিয়েছিল, সে দিল্লি দাঙ্গার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আর গুজরাট দাঙ্গার সময়ে সেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সেখানেও পুলিশ দাঙ্গাবাজদের পক্ষ নিয়েছে, দিল্লিতেও তাই হয়েছে। মোদি-অমিত ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গুজরাটে দাঙ্গার অভিজ্ঞতা নিয়েছিল, এবারও ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়েছে।
৫/ গো-রক্ষার নামে পিটিয়ে মুসলিম হত্যা:
গো-রক্ষার নামে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনার শুরু হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে, যখন উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের শাসন কেবল শুরু হয়েছে। তখন উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা মোহাম্মদ আখলাক তার বাড়িতে গরুর মাংস রেখেছেন বলে অভিযোগ করে গো-রক্ষকরা। কথিত এই অভিযোগে তাকে নির্মমভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে উত্তরখন্ড, ঝাড়খন্ড, বিহার ও ওড়িশ্যাসহ বিভিন্ন প্রদেশে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
গো-রক্ষার নামে বিভিন্ন ঠুনকো অযুহাতে মুসলিমদের পিটিয়ে মেরে ফেলছে ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। বিগত ৩ বছরে অন্তত ৮০ জন মুসলিম এমন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। হতাশাজনক ব্যাপার হল মোদি প্রশাসন এগুলো বিচারের আওতার আনে নি। অনেক তথ্য-প্রমাণ ও ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও ভৌতিক কারণে কেউই আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও অন্তত ৩০টি ঘটনায় উগ্র হিন্দুত্ববাদিদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অনেক প্রমাণ রয়েছে।
কসাই মোদির হাতে মুসলিমদের তাজা রক্তের দাগ লেগে আছে। এই খুনিকে কোন মুসলিম স্বাগত জানাতে পারে না। বাংলাদেশে ৯০% মানুষ মুসলিম। সরকার এদের ট্যাক্সের টাকায় চলে । এমন মুসলিম প্রধান দেশে হিন্দুত্ববাদী মোদির মতো জঘন্য খুনিকে রাষ্ট্রীয় অথিতি করা যায় না। যার হাত মুসলিমের রক্তে রঞ্জিত।
চলবে ইনশাআল্লাহ....
লেখক: উসামা মাহমুদ, প্রতিবেদক আল-ফিরদাউস নিউজ
রেফারেন্স:
[1]Why protests are erupting over India’s new citizenship law- https://tinyurl.com/32jc42jy
[2]21 Killed In Delhi Clashes, Board Exams In Affected Areas Postponed: 10 Points
[3]Delhi violence, day 6 | Updates : https://tinyurl.com/58cu6mts
[4]গুজরাটের দাঙ্গা এবার দিল্লিতে: https://tinyurl.com/x67hbh2t
[5]দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে অভিযুক্ত শুধু মুসলিমরা, বিজেপিকে ছাড়: https://tinyurl.com/xa5w7bej
[6] Delhi continues to burn over CAA: https://tinyurl.com/873wuxcx
[7] গো-রক্ষার নামে ভারতে তিন বছরে ৮০ মুসলিম হত্যা: https://tinyurl.com/4tby55vn
[8] যে কারণে ভারতে গো-রক্ষার নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হচ্ছেনা?: https://tinyurl.com/b8vtvftv
Comment