দা ব্যাটল অফ কান্দাহার:
মুজাহিদদের নিরঙ্কুশ বিজয়
মুজাহিদদের নিরঙ্কুশ বিজয়
কান্দাহার আফগানিস্তানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ন স্থান এবং ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রথম রাজধানী। তাছাড়াও তালিবানদের তিন নেতা, প্রয়াত মোল্লা মোহাম্মদ ওমর ও শহীদ মোল্লা আখতার মোহাম্মদ মানসুর রহিমাহুমুল্লাহ এবং বর্তমান আমিরুল মু‘মিনিন মৌলভি হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা হাফিজাহুল্লাহ্ ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রদেশেরই বাসিন্দা।
কান্দাহার তালিবান এবং মুরতাদ কাবুল সরকারের কাছে সমগ্র দক্ষিণ আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশের মর্যাদা পেয়েছিল। যার ফলে উভয় পক্ষই প্রদেশটির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল এবং এর জন্য তারা তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক এই প্রদেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তালিবান মুজাহিদরা।
এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী বিজয়ের তালিকায় এবার নাম উঠল কান্দাহারের। টানা দুই মাসের নিশ্ছিদ্র অবরোধের পর প্রদেশটির রাজধানী কান্দাহার সিটি মুজাহিদদের হাতে বিজিত হয়েছে। কান্দাহার শহর পুরো আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক দিয়ে রাজধানী কাবুলের পরই এর অবস্থান।
দুই মাসের টানা অবরোধে ও সংঘর্ষে মুরতাদ আফগান বাহিনী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং রসদপত্রের দিক দিয়ে শূন্য হয়ে যাওয়ায় তারা শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। শহরটির বিজয়ের মধ্য দিয়ে পুরো কান্দাহার প্রদেশ ইসলামি হুকুমতের অধীনে এসে পড়েছে।
কান্দাহার প্রদেশের বিজয় তালিবান মুজাহিদীনদের জন্য বিরাট কৌশলগত বিজয়। কান্দাহার অনেক তালিবান মুজাহিদদের আবাসভূমি ও জন্মস্থল। মোল্লা মুহাম্মাদ উমর (রাহিমাহুল্লাহ) এর আফগান বিজয় অভিযান শুরু হয়েছিল কান্দাহার প্রদেশ থেকেই। কান্দাহার বিজয়ের পর এবার তালিবান মুজাহিদগণ লশকরগাহ, তারিনকট এবং কালাত – এই তিনটি প্রাদেশিক রাজধানীতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে পারবেন। একই সাথে কান্দাহার থেকে গণিমত হিসেবে পাওয়া বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম মুজাহিদরা নিজেদের শক্তিশালী করার কাজে ব্যাবহার করতে পারবেন।
তানজিমুল-কায়েদা’র মুজাহিদভাইদের জন্যও কান্দাহার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর সঙ্গি-সাথী ও অনুসারীদের নিয়ে কান্দাহার এয়ার ফিল্ড এর কাছেই তারনাক ফার্ম এলাকায় প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করেছেন। অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত কান্দাহারের শোরাবাক জেলায় আল-কায়েদা দুটি বৃহদাকারের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প পরিচালনা করেছে। কান্দাহারের শোরাবাক জেলায়ই ছিল আফগানিস্তানে আল-কায়েদা মুজাহিদদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।
ইমারতে ইসলামিয়ার অপ্রতিরোধ্য বিজয়ঃ কান্দাহারে উড়ল কালিমার ঝান্ডা
এদিকে মুজাহিদগন ধীরে সুস্থে, কিন্তু দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে আক্রমণ চালাতে থাকেন এবং পরপর আরো কয়েকটি পুলিশ ডিসট্রিক্ট দখল করে নেন। অনেকগুলো পুলিশ ডিসট্রিক্ট হারিয়ে এবার মুরতাদ বাহিনী আমেরিকার সাহায্য ভিক্ষা চায়। ভিক্ষার আহবানে সাড়া দিয়ে ক্রুসেডার আমেরিকার বিমান হামলা শুরু করে। তালিবান মুজাহিদদের সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চলতে থাকে, যদিও এর বিশেষ কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। তালিবান আগের মতোই অগ্রসর হতে লাগল শহরের কেন্দ্রের দিকে।
আগস্টের শুরুর দিকে বেশকিছু তালিবান মুজাহিদ রি ইনফোর্সমেন্ট হিসেবে আসেন। হাজার হাজার মুজাহিদের ঢল নামে কান্দাহারে। মুরতাদ বাহিনী পিছু হটে সরকারি স্থাপনা সমূহে আশ্রয় নেয়। বিমান হামলার সাহায্য নিয়ে তালিবান মুজাহিদদের কয়েকটি আক্রমণ মুরতাদ কমান্ডোরা থামিয়ে দেয়। বিমান হামলায় মুজাহিদদের ক্ষয়ক্ষতি হতে থাকায় তালিবান স্ট্র্যাটেজিস্টদের নজর চলে যায় কান্দাহার এয়ারপোর্টের দিকে। কান্দাহার এয়াপোর্টে মুজাহিদরা একের পর এক রকেট হামলা চালানো শুরু করেন। এতে করে ফাইটার ও বোম্বার জেটগুলো উড্ডয়ন করতে পারছিল না। রকেট হামলার কারণে অনেক ফ্লাইট বিলম্বিত হয় এবং মুজাহিদদের জন্য বিমান হামলার বাধা দূর হয়ে যায়।
কান্দাহারের বিজয়ে ত্বরান্বিত করতে তালিবান নেতাগণ এক কৌশল অবলম্বন করেন। ১১ই আগস্ট মুজাহিদ কমান্ডারদের আদেশ মোতাবেক মুজাহিদগণ প্রবল আক্রমণ চালিয়ে কান্দাহার কেন্দ্রীয় কারাগারে মুরতাদ বাহিনীর প্রতিরক্ষা বেষ্টনী ভেঙে দেন। এরপর মুজাহিদরা কারাগারে প্রবেশ করে ২০০০ (দুই হাজার) মুসলিম বন্দিকে মুক্ত করে দেন।
তালিবান কমান্ডারদের এই সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত ফলদায়ক। কেন্দ্রীয় কারাগার বিজয়ের ফলে মুরতাদ সেনা ও তাদের সহযোগীরা মানসিকভাবে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে যায়। কারাগারটি কান্দাহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনারূপে বিবেচিত হতো। আর কারাগারের বিজয় যেন পুরো কান্দাহার শহরের বিজয়কেই ইঙ্গিত করছিল।
তাদের মানসিক দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তালিবান কমান্ডারগণ শত্রুপক্ষকে শহর ছেড়ে চলে যাবার প্রস্তাবনা পেশ করেন। শহরের সরকার পন্থীরাও মুরতাদ বাহিনীকে প্রস্তাবটি গ্রহণ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করে। ফলে কাবুল সরকারের নিয়োজিত কান্দাহারের গভর্নর রোহুল্লাহ খানজাদা এবং তার কর্মীরা তালেবানদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
আর ১২ আগস্ট রাতে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা বিভিন্ন ক্লিপ্স থেকে দেখা যায়, দলে দলে কান্দাহার ছেড়ে মুরতাদ সেনারা পলায়ন করছে। সেদিনই তালিবান নেতৃবৃন্দ প্রাদেশিক রাজধানীতে মুজাহিদদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ঘোষণা করেন।
কান্দাহার বিজয়ের মধ্যদিয়ে মাত্র গত একদিনেই (১২ আগস্ট) তালিবান মুজাহিদগণ ঐহিতাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ কান্দাহার, হেরাত, হেলমান্দ, গজনি, ঘোর ও বাদগিস বিজয় করে নিয়েছেন।
তালিবান মুজাহিদিন এত দ্রুততার সাথে ঐতিহাসিক, বৃহত্তম ও অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো একের পর এক বিজয় করে নিচ্ছেন যে, যা দেখে পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে যাচ্ছে। তালিবানদের এই বিজয় সকল বিশেষজ্ঞ আর বিশ্লেষকদেরকেও হয়রান করে দিচ্ছে। ফলে আমেরিকাও রাতারাতি তাদের পূর্বকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। তালিবানদের কাছে আমেরিকা নিজেদের দূতাবাসের নিরাপত্তা চাইতেও বাধ্য হয়েছে। এর আগে জাতিসংঘের অফিসে হামলা হলে জাতিসংঘও তাদের অফিসের নিরাপত্তা চেয়েছে, সে সময় তালিবান জাতিসংঘকে এই শর্ত নিরাপত্তা দিতে রাজি হয় যে, আফগানিস্তানে অবস্থিত জাতিসংঘের অবস্থান, তাদের সকল কার্যক্রমের দৈনিক রিপোর্ট এবং জাতিসংঘের অবস্থানের ম্যাপ তালিবানদের কাছে জমা দিতে হবে। তখন জাতিসংঘ তালিবানদের এই শর্ত মেনে নেয়।
লেখক: ত্বহা আলী আদনান
Comment