সম্পাদকীয় (Editor’s letter)
যুদ্ধে গুপ্ত হত্যা একটি ফলপ্রসূ পন্থা। জীবন ও জ্ঞান এর বিকাশের সাথে সাথে এটির কৌশলেরও বিকাশ লাভ করে। রসূল - মুহাম্মাদ (তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) এই পন্থা ব্যবহার করেই অনেক অপরাধী (কাফের) নেতাকে হত্যা করেছেন যেটার অনেক প্রভাব ছিল সত্য-মিথ্যার মধ্যকার যুদ্ধের ভারসাম্য রক্ষায়। আর শত্রু-মিত্রর ব্যাপারে রসূল - মুহাম্মাদ (তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) এর যেমন ব্যবহার ছিল তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করেই আজ আমরা এখানে। তাঁর কর্মপন্থাই সত্যের পথে আমাদের দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
পূর্বের সংখ্যায় (Issue#14: Assassination operation) আমরা সাধারণভাবে গুপ্ত হত্যার ব্যাপারে এবং বিশেষভাবে, কোনো কর্মস্থলে গুপ্ত হত্যার সম্পর্কে আলোচনা করেছি। শারলি হেব্দো, যেটি ছিল একটি সুসংগঠিত এবং সুশৃঙ্খলভাবে বাস্তবায়িত আক্রমণ, সেটিকে একটি ‘ঘটনা-পর্যালোচনার বিষয়’(case study) হিসেবে ধরে সহজভাবে/বোধগম্যভাবে আক্রমণটির (operation) বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি যাতে করে এটা ‘একাকী মুজাহিদ’(the lone mujahid) এর জন্য যথাযথ ও মানানসই হয়।
এই সংখ্যায় আমরা একজন মুজাহিদের স্তরকে পেশাগত(professional) স্তরে উন্নিত করার জন্য OSJ(open source jihad)-এ গুপ্ত হত্যা সম্পর্কে আলোচনা চালিয়ে যাবো। এখানে আমরা তাকে অবহিত করাব সেসব পদ্ধতি যা আরো পেশাগত এবং সেসব উপায় যা আয়ত্তে আনার জন্য প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন্ন প্রশিক্ষন এবং অভিজ্ঞতা যাতে সে একটি ‘অগ্রগামি স্তর’(Advanced level)-এ পৌছাতে ও নৈপুণ্য অর্জন করতে পারে।
আল্লাহর ইচ্ছায়, শত্রুর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে এসব সামরিক আক্রমণ উক্ত মুযাহিদের লক্ষ্য অর্জনে পর্যায়ক্রমে সহায়তা করতে পারে। আমাদের পূর্বোক্ত একটি পলিসি(policy)- ‘স্নায়ুগুলো(nerves) কর্তন ও মস্তক বিচ্ছিন্নকরন’(Cutting the nerves and isolating the head) আমাদের শত্রু-আমেরিকার উপর প্রয়োগ করা শুরু করেছি। আর তাদের স্নায়ু(nerve) হলো তাদের অর্থনীতি(economy)। এটা করতে হলে আমাদের যা করতে হবে তা হল- আমেরিকাকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ও পৃথক করা। এ বিষয়টি আমাদের বুঝে আসবে, প্রথমত, আল্লাহর ইচ্ছায় এবং পরবর্তীতে, আমাদের কর্মপ্রচেষ্টায় মনোযোগ প্রদান এবং সঠিক লক্ষ্যবস্তু(target) নির্বাচনের মাধ্যমে। যেসব ব্যক্তিবর্গ তাদের বিপুল সম্পদ(massive wealth) আমেরিকায় বিনিয়োগ করে এবং এর(আমেরিকার) ব্যাংকগুলোতে জমা করে তাদের লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে, আল্লাহর ইচ্ছায়, পূর্বের সংখ্যায় উক্ত ব্যক্তিবর্গ-এর যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল তা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে, আমেরিকান প্রসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়টি আমেরিকান নাগরিকদের জীবনে সামান্য প্রভাব ও পরিবর্তন নিয়ে আসলেও, আমাদের জন্য বিষয়টি একই। কারণ, একজন নির্বোধ প্রার্থী- যে কিনা ইসলামের প্রতি তার স্পষ্ট বিদ্বেষ প্রকাশ করে এবং অপরজন- যে কিনা মুসলমানদের বন্ধু হওয়ার মিথ্যা ভান করে, আর তাদের উভয়ের থাকার পরেও মুসলিম ভূমিগুলোতে আমেরিকার চাপিয়ে দেয়া পলিসির কারনে হাজারো মুসলিম প্রাণ হারাচ্ছে। যখন সন্ত্রাস মোকাবেলার অজুহাতে আমেরিকা তার প্রত্যক্ষ শাসন পদ্ধতি ও ক্ষমতা চাপিয়ে দিতে ব্যর্থ হল, যখন ইসলামিক দলগুলোর সাথে অনেকগুলো যুদ্ধে তারা নিষ্পেষিত, ক্লান্ত ও ব্যর্থ হল এবং যখন তারা বুঝতে পারলো যে, জয়ের পরিবর্তে বরং পরাজয়ই বরন করে নিতে হচ্ছে তখন তারা বিভিন্ন চুক্তি ও পরিকল্পনা করতে লাগলো যে কিভাবে ‘নিরাপদে’ পিছু হটা যায়। এরপর আরেমিকা এটাও অনুধাবন করলো যে, এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের সবচেয়ে ভাল পন্থা হচ্ছে- মুসলিম ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলোর মাঝে যুদ্ধের শিখা প্রজ্বলিত করা। এখানে লক্ষ্য এটা না যে কোনো দল বা গোষ্ঠীকে দুর্বল করে দেয়া, বরং সুন্নিদের সম্পূর্ণ রূপে নিঃশেষ করে দেয়া।
এটাই সে ধরণের যুদ্ধ যা আজ সুন্নি মুসলিমদের ঘিরে রয়েছে। যেহেতু, আমেরিকা ময়দানে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে মুসলিমদের মোকাবেলা করতে অক্ষম, তাই তারা যুদ্ধে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে মুসলিমদের নিঃশেষিত ও দুর্বল করে দিচ্ছে যাতে করে মুসলিমরা ইসলামি শরিয়তের ছায়াতলে স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন না করতে পারে। এগুলো আমেরিকার সেই নোংরা পলিসি যা ওবামার শাসন আমলে ডেমোক্রেটিক পার্টি কর্তৃক প্রণীত হয়েছিল। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা ক্রুসেডের ছায়াতলে প্রকাশ্যে হত্যা , যুদ্ধ ও ইসলামের প্রতি তাদের স্পষ্ট শত্রুতা ও বিদ্বেষের ঘোষণা দেয়। ডেমোক্রেটসরা হাসিমুখে মুসলিমদের পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করে। তারা ইরানের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে দৃঢ় করলো এবং সুন্নিদের মারার জন্য সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করলো। তারা ইরাক সরকারকে সাহায্য করে, সিরিয়ায় বাশারের কর্মকাণ্ডকে দেখেও না দেখার ভান করলো এবং ইয়েমেনে হুথিদের সাথে গোপন চক্রান্ত করলো- সুন্নিদের মারার জন্য ও যুদ্ধ করার জন্য। অবশই মহান আল্লাহ তায়ালা সত্য। তিনি বলেন, “আর তারা তোমাদের সাথে ততক্ষন যুদ্ধ করতে থাকবে যতক্ষন না পর্যন্ত তোমাদেরকে তোমাদের দীন থেকে বের করে নেয়, যদি তারা পারে” (২:২১৭)। এটা সত্য ও মিথ্যার মধ্যকার শত্রুতা। এবং এটা, যারা আল্লাহর ইবাদাত করে ও যারা শয়তানের ইবাদাত করে তাদের মধ্যকার পুরাতন লড়াই। ধর্মীও এবং উপদেশমূলক কথার পোশাক পরিধান করে শয়তান যদি আপনার কাছে আসে তাহলে সেই পোশাকের নিচের কপটতা, ধোঁকা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ আপনি কখনই ধরতে পারবেন না।
এসব কিছুর পরেও আমরা পূর্ব থকে পশ্চিম পর্যন্ত একটি উল্লেখযোগ্য ইসলামিক বিপ্লব দেখতে পারছি। এবং, এমন পরিমান ও পন্থায় জিহাদি বিদ্রোহগুলো হয়েছে যা ইতোপূর্বে প্রায় এক শতাব্দী ধরে কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। তাই, আমাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য যে একমাত্র পথ রয়েছে তা হল- শক্তি ও অস্ত্রের ব্যবহার। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চলমান ঘটনা এবং বিরাজমান বাস্তবতা এটাই প্রমান করে যে, এ বিশ্ব আমাদেরকে ধর্ম পালনের স্বাধীনতার মত মৌলিক ও সাধারন অধিকারও ভোগ করতে দেবে না। তারা গনতন্ত্রের পতাকার তলে আমাদের সাথে যুদ্ধ করে। গনতন্ত্রের পরিপন্থি যেকোনো কিছুই তারা তাদের বিরোধিতার মৌলিক/প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করে। অবশ্যই এটা তাদের জন্য পুরোই অসম্ভব যে তারা আমাদের শরিয়তের আদলে শাসন করতে দেবে। তাই, পরিশেষে ফলাফল এটাই দাঁড়ায় যে, আমেরিকা নামক অত্যাচারী ও প্রভাবশালী বিষফোঁড়াকে যতক্ষন পর্যন্ত মুসলিমদের উপর থেকে তুলে ফেলা না হবে ততক্ষন পর্যন্ত এ লড়াই চলতে থাকবে, ইংশাআল্লহ।
আমরা আমেরিকার বিরুদ্ধে একটি পবিত্র যুদ্ধ লড়ছি। আর আল্লাহর ইচ্ছায়, আমরা কখনই আমাদের অস্ত্র ফেলব না যতক্ষন না আমরা তা পূর্ণ করবো যা আল্লাহ চান। আল্লাহর ইচ্ছায়, বিভিন্ন সংগঠিত জিহাদি দল ও একাকী জিহাদ(lone jihad) এর মাধ্যমে আমরা আমেরিকাকে আঘাত হানতে ও তাদের সাথে লড়াই করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যদিও তা করতে আমাদের আমেরিকার স্বীয় ভুমিতে যেতে হোক না কেন।
একারনেই আমরা inspire magazine এর মাধ্যমে একজন লন মুজাহিদের সামনে স্পষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও প্রায়োগিক কর্মপন্থা(practical method) (যেগুলো শুধু সামরিক নয় বরং শরায়ি, রাজনীতি ও শিক্ষণীয় সকল বিষয়ের সমন্বয়) উপস্থাপন করতে সঙ্কল্পবদ্ধ। এ ম্যাগাজিন সামরিক দিকে মনোযোগ দেয়া হলেও, আমরা অন্যান্য বিষয় গুলোও আলোচনায় আনার চেষ্টা করি এবং লন মুজাহিদকে উৎসাহ দেই যেন সে অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের কোন ঘাটতি অনুভব না করে। আমরা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই যেন তিনি আমাদের ও সকল মুসলিমদেরকে তাকওয়াবান(মুত্তাকি) বানিয়ে দেন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আর, অবশ্যই তিনি এ ব্যাপারে সক্ষম।
ইয়াহইয়া ইবরাহিম। ইন্সপায়ার ১৫।
Comment