উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ’র বিশেষ সাক্ষাৎকার
(প্রথম পর্ব)
পার্ট - ৫
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আপনি বর্তমান জিহাদি আন্দোলনকে উপমহাদেশের ইসলামী এবং জিহাদি ইতিহাসের সাথে কিভাবে সংযুক্ত করেন?(প্রথম পর্ব)
পার্ট - ৫
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ ইংরেজরা যখন উপমহাদেশের অধিকাংশ এলাকা থেকে শরীয়ত ধ্বংস করে, তখন শাহ আব্দুল আযীয (রহিমাহুল্লাহ) ১৮০৬ সালে এক ফাতওয়া দেন যে, উপমহাদেশ আর দারুল ইসলাম নেই; এটা দারুল হারব হয়ে গেছে। এরকম ঐতিহাসিক ফাতওয়ার আলোকে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) এবং শাহ ইসমাইল শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) এর জিহাদি আন্দোলন শুরু হয়, (উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালে স্বাধীনতার আন্দোলন এবং শায়খুল হিন্দ (রহিমাহুল্লাহ) এর মতো অন্যান্য জিহাদি আন্দোলনও অস্তিত্ব পায়)।
শাহ আব্দুল আযীয (রহিমাহুল্লাহ) যে উপমহাদেশকে ‘দারুল হারব’ ঘোষণা করে ফাতওয়া দেন, এই ফাতওয়া আজও কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক। কারণ, কত আর কারণগুলো সব আজও পুরো উপমহাদেশে একেবারে পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান। আজ পুরো উপমহাদেশে কোথাও শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত নেই! বরং উপমহাদেশের প্রত্যেক কোণায় কোণায় আজ শরীয়তের শত্রুদের রাজত্ব। উপমহাদেশে মুশরিক, মুলহিদ (নাস্তিক) এবং ক্রুসেডার কাফেরদের ধর্মহীন গোলামদেরই শাসন চলছে। এজন্য শাহ আব্দুল আযীয (রহিমাহুল্লাহ) এর ফাতওয়ার উপর আমল আজও ওয়াজিব। দ্বিতীয় কথা হলো সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) যখন আন্দোলন ও যুদ্ধাভিযান শুরু করেন, যার জন্য হাজার হাজার উলামায়ে কেরামকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং যে আন্দোলনকে শায়খুল হিন্দ (রহিমাহুল্লাহ)-ও পরে সমর্থন দিয়েছিলেন, তো এই আন্দোলন উপমহাদেশে কখনও শেষ হয়নি, বরং অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত পুরো ইতিহাস জুড়ে এই আন্দোলনের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। বাংলায় (বাংলাদেশ) হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং তিতুমীরের উত্তরাধিকারীরা, পাকিস্তানের উপজাতীয় অঞ্চলের ফকির এপি, হাজী তারংযাই এবং মোল্লা পাবন্দের মতো বিখ্যাত নাম এই জিহাদি আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরও এই আন্দোলন এখানে গোত্রীয় এলাকাগুলোতে জারি থাকে। শরীয়ত প্রতিষ্ঠার ওয়াদা যখন এখানকার শাসকেরা পূরণ করেনি, তখন ফকির এপি (রহিমাহুল্লাহ) শরীয়ত প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে আন্দোলন পুনরায় শুরু করেন এবং এই ‘অপরাধে’ পাকিস্তানি বিমানবাহিনী তাদের ইংরেজ এয়ার ভাইস মার্শাল এলেন এর নেতৃত্বে এই আন্দোলনের এক জনসমাগমের উপর নিজেদের প্রথম অভিযান সম্পন্ন করে। এরপরেও এই আন্দোলন জারি থাকে, জোয়ার ভাটা অবশ্যই এসেছে, আর আন্দোলনের উপর এমন জোয়ার ভাটা এসেই থাকে; কোনো ঘটনা অথবা অবস্থা এই আন্দোলনকে তার পুরনো বুনিয়াদের উপর নতুন প্রেরণার সাথে আবার উদ্দীপিত করে তোলে! আমেরিকা যখন এখানে আসে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যখন জিহাদি আন্দোলন ও ইসলামের বিরুদ্ধে খোলাখুলি যুদ্ধ শুরু করে, যখন পাক বাহিনীর আসল চেহারা সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় তখন এখানে মুজাহিদদের আন্দোলনও নতুন প্রেরণা নিয়ে ঐ পুরনো বুনিয়াদের উপরই … নিজ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আবার দাঁড়িয়ে যায়—যে বুনিয়াদের ওপর সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর জিহাদি আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত ছিল … এভাবে এখানে উপমহাদেশের জিহাদি আন্দোলনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। কাজেই আমরা মুজাহিদরা উপমহাদেশে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) এর আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক অর্থে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিন, আমরা যেন সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর কাঙ্ক্ষিত উপমহাদেশকে ইসলামের শত্রু-মুক্ত করতে পারি এবং এখানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়— এই সবকিছু আমাদেরও লক্ষ্য। একইভাবে তাঁর পথ ছিল দাওয়াত ও জিহাদ আর এটা আমাদেরও পথ ও পন্থা। এজন্য আমরা উপমহাদেশের ভেতরে ইনশাআল্লাহ সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর জিহাদি আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা, আল্লাহ আমাদেরকে এই আন্দোলনের হক আদায় করার তাওফীক দান করুন এবং আল্লাহ এখানকার মুসলমানদের জন্য আমাদের এই আন্দোলনকেও সাইয়্যেদ আহমাদ রহিমাহুল্লাহর আন্দোলনের মতো বরকতময় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। আমীন।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ উপমহাদেশ থেকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাক। আপনি উল্লেখ করেছেন আল-কায়েদা উপমহাদেশের বড় লক্ষ্য ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের শক্তিবর্ধন। আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ সতেরো বছরে গড়িয়েছে। আজ সতেরো বছর পরে আপনার দৃষ্টিতে ইসলামী ইমারত আফগানিস্তান কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আজ আলহামদুলিল্লাহ ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের কাফেলা সফলতার সাথে নিজ সফর জারি রেখেছে। মার্কিন জোট হামলা করেছে সতেরো বছর হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে যুগের এই ফেরাউন সব ধরনের শক্তির পরীক্ষা করেছে, আণবিক বোমা ছাড়া এর তূণে যা কিছু ছিল সব কিছু সে শেষ করে ফেলেছে। ডলারও অনেক খরচ করেছে। প্রেরণা দেওয়ার জন্যও অনেক কিছু সাজিয়েছে। যা কিছু তার সামর্থ্যের মধ্যে ছিল সবকিছুর পরীক্ষা সে করেছে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ব্যর্থ হয়ে গেছে। আল্লাহ আমীরুল মুমিনীন মোল্লা উমর (রহিমাহুল্লাহ)-এর নিজ রবের ব্যাপারে কৃত ধারণা সত্য করে দেখিয়েছেন, যা তিনি ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে—“এরা আমাদেরকে পরাজিত করার ওয়াদা করেছে আর আল্লাহ আমাদেরকে বিজয়ী করার ওয়াদা করেছেন, দেখা যাক কার ওয়াদা সত্য হয়।” আলহামদুলিল্লাহ আমেরিকার ওয়াদা মিথ্যা ছিল। আল্লাহর ওয়াদা সত্য ছিল, সত্য আছে। অতএব আল্লাহ আমাদেরকে এই তাওফিক দান করুন, আমরাও আল্লাহর সাথে আমাদের অঙ্গীকার যেন বাস্তবায়িত করতে পারি। আল্লাহ আমাদের জিহাদের রাস্তায় দৃঢ়তা দিন। যাইহোক, আল্লাহ ইসলামী ইমারতের কাফেলা, মুসলিম উম্মতের মুজাহিদ এবং মুসলমানদেরকে বিজয় দিয়েছেন আর আমেরিকা পরাজিত হয়েছে; আজ আমেরিকার এই পরাজয়কে পুরো দুনিয়া দেখছে।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আপনি বর্তমান পরিস্থিতিকে কিসের ভিত্তিতে আমেরিকার পরাজয়ের সমার্থবোধক মনে করেন?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আমেরিকা কিছু লক্ষ্য সামনে নিয়ে এখানে এসেছিল, তার এখানে আসার কিছু উদ্দেশ্য ছিল, ঐসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি অর্জিত হয়েছে? সেগুলো কি অর্জিত হয়েছে; আজ সে কি কোনো নতুন কথা বলা শুরু করেছে নাকি আজও সে তার পুরনো কথার উপরই রয়েছে যেখান থেকে সে তার এই যাত্রা শুরু করেছিল? বাস্তবতা হলো এই যে, আমেরিকা তার লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
চলবে...
Comment