উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ’র বিশেষ সাক্ষাৎকার
(প্রথম পর্ব)
পার্ট - ৬
(প্রথম পর্ব)
পার্ট - ৬
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আফগানিস্তানে মার্কিন জোটের লক্ষ্য কী ছিল? আর যদি আমেরিকা নিজ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে থাকে তাহলে তার এই ব্যর্থতার ফলাফল কী?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ প্রথম লক্ষ্য ছিল জিহাদি আন্দোলনকে এবং এই তালিকার শীর্ষে ইসলামী ইমারত এবং আল-কায়েদাকে ধ্বংস করা। কিন্তু জিহাদি আন্দোলন কি শেষ হয়েছে? আলহামদুলিল্লাহ, আফগানিস্তানে এই আন্দোলন আজও প্রতিষ্ঠিত আছে, মুজাহিদেরা আমীরুল মুমিনীন শায়খ হেবাতুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ) ‘র নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। জিহাদি কাফেলা আগে থেকে শক্তিশালী হয়েছে। আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি অংশ মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে। একের পর এক বিজয়। মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় আমেরিকান সামরিক বাহিনী এবং চোর লুটেরাদের নিয়ে গঠিত এদের যে স্থানীয় এজেন্ট আফগান সামরিক বাহিনী আছে, তারা আজ পা ফেলার জায়গা পাচ্ছে না। সবশেষ উপায় এদের কাছে রয়েছে বোমাবর্ষণ; কিন্তু বোমাবর্ষণ করে তো আর ভূমি দখল করা যায় না। শাসন করার জন্য ভূমিতে নামতে হয় এবং এটা এদের সাধ্যের মাঝে নেই। এরপর এটাও দেখুন, যে জিহাদি আন্দোলনকে কান্দাহার এবং তোরাবোরা হতে দাফন করে দেওয়ার জন্য আবরাহার এই বাহিনী এসেছিল, সেই বরকতময় আন্দোলন পুরো দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ছায়াদার বৃক্ষ হয়ে পূর্ব ও পশ্চিমে বেশ কিছু ভূখণ্ডে আহলে ঈমানদের অন্তর ও চোখ শীতলকারী হয়ে উঠেছে। আজ আমেরিকার সামনে শুধু আফগানিস্তান ই নয়, বরং ইয়েমেন, সোমালিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মালি এবং উপমহাদেশসহ পুরো দুনিয়ায় আলহামদুলিল্লাহ কুফরী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই জিহাদি আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহর অনুগ্রহে আরও বিস্তৃত এলাকায় আজ তাওহীদের পতাকা পত পত করে উড়ছে।
দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল শরীয়তকে শেষ করে দেয়া … প্রথম কথা শরীয়ত শেষ করার কী দরকার ছিল? শরীয়তের সাথে শত্রুতা কেন? কারণ, যেখানে শরীয়ত থাকবে সেখানে আল্লাহর বান্দা তৈরি হবে, সেখানে জুলুমের প্রতি ঘৃণা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে। সেখানে এদের অজ্ঞতায় পূর্ণ শাসনব্যবস্থা এবং পচা-গলা সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা জন্ম নিবে। এজন্য এরা দুনিয়ার কোনো প্রান্তরেই শরীয়তকে সহ্য করতে পারে না। যাই হোক আমেরিকার এখানে আসার একটি লক্ষ্য ছিল শরীয়ত ধ্বংস করা। এখন কি শরীয়ত ধ্বংস হয়ে গেছে? এদের নোংরামি আর শয়তানিতে ভরা সংস্কৃতি কি এখানে চালু হয়েছে? আজও যেসব এলাকায় মুজাহিদদের ক্ষমতা আছে, আলহামদুলিল্লাহ সেখানে শরীয়তের উপরেই আমল হচ্ছে, কুফরের ক্ষতিকর শাসনব্যবস্থা নেই, এদের পশ্চিমা সংস্কৃতির যে নোংরামি, এগুলোর নাম নিশানাও আপনি কোথাও পাবেন না … এটা শুধু এখানে আফগানিস্তানের অবস্থা নয়, বরং যেসব এলাকায় আল্লাহ মুজাহিদদের বিজয় দিচ্ছেন, সেখানে আপনি শরীয়তের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেখবেন।
আমেরিকার হামলার তৃতীয় লক্ষ্য ছিল জনসাধারণকে দাস বানানো … যাতে আমেরিকা যাকে ভালো বলে জনসাধারণও তাকে ভালো মনে করে ; যাকে আমেরিকা খারাপ বলে, জনসাধারণও তাকে খারাপ বলে। এখানকার জনসাধারণ কি এই দাসত্ব কবুল করেছে? আলহামদুলিল্লাহ এখানকার মানুষেরা আজ মুজাহিদদের জন্য জীবন দেয়, তারা মুজাহিদদের নিজেদের জান, মাল ও দীনের রক্ষাকারী মনে করে। আর নিজ দীন ও পবিত্রতার শত্রুদের প্রতি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুজাহিদ এই জনতার শত্রুতাও সব সময় আপনি দেখতে পাবেন।
এই জালেমদের চতুর্থ লক্ষ্য ছিল নিজেকে নিরাপদ বানানো, অর্থাৎ এই জালেমরা জুলুম থেকে নিজেদের হাত তো রুখবেই না, আফগানিস্তান থেকে ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও ইয়েমেন পর্যন্ত আমাদের মা, বোন, ভাই ও বাচ্চাদের তো হত্যা করছে কিন্তু এসব কিছুর পরও এরা নিজেদেরকে প্রতিরক্ষার স্বপ্ন দেখে। আজ আলহামদুলিল্লাহ আমেরিকা এবং এর মিত্ররা আগের চাইতে মোটেও বেশি নিরাপদ নয়; সতেরো বছর পার হয়ে গেছে, এরপরেও আজ এদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজেদের হেফাযত করা। বাজেটের এক বিরাট অংশ এরা নিজেদের ও মিত্রদের প্রতিরক্ষার জন্য খরচ করছে কিন্তু এরপরও তাদের নিউইয়র্ক, ম্যানচেস্টার এবং প্যারিস সেই আগুনের শিখা ও তাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না যেই আগুন এরা আমাদের ঘরে লাগিয়েছিল।
কাজেই এটা ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না, যা দেখে আমেরিকানরা ভয়ে স্তম্ভিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে গেছে। এদের কাছে আজ এমন কোনো কার্ড নেই যা তারা ইতিপূর্বে ব্যবহার করেনি। একজন আহাম্মক ব্যক্তির প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া তাদের মানসিক অবস্থার সত্যিকার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। কোথায় সেই আমেরিকা যার প্রেসিডেন্ট যেখানেই যেত, সৌভাগ্যের আশায় সবাই তার সাথে মিলিত হতো আর কোথায় আজকের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, যে নিজ স্থান সামলানোর জন্য নিজ মিত্রদের কাছে এক এক পয়সার হিসাবের কথা বলে, জাতীয় বাজেটে কাটছাঁট আর সবার আগে আমেরিকার শ্লোগান দিতে থাকে। অতীতে আমেরিকার বৈশ্বিক রাজনীতিতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ সহ্য হচ্ছিল না আর বর্তমানে কুফরী ও ইসলামের যুদ্ধে এই রাশিয়া থেকে লুকিয়ে ও প্রকাশ্যে সাহায্য নিয়ে যাচ্ছে।
এই সব কিছু প্রমাণ করে যে, আমেরিকা এখন ঐ আমেরিকা নেই, এর পরাজয় সুস্পষ্ট আলহামদুলিল্লাহ। আমেরিকার এই পরাজয় এখন শুধু মুজাহিদদের কথা নয়, বরং আমেরিকা এবং এর মিত্রদের কাছ থেকেই এই পরাজয়ের স্বীকৃতি শোনা যাচ্ছে।
চলবে...
Comment