উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ’র বিশেষ সাক্ষাৎকার
(প্রথম পর্ব)
পার্ট - ৮
(প্রথম পর্ব)
পার্ট - ৮
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আপনার দৃষ্টিতে বৈশ্বিক কুফরের মোকাবেলায় মুসলিম উম্মতের এই সফলতার কারণ কি?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আল্লাহর উপর ভরসা এবং শরীয়ত বহির্ভূত সমস্ত পথ ও পন্থা পরিহার করে আল্লাহর কিতাবের দেওয়া শরীয়ত সম্মত পন্থা গ্রহণ করা এই সফলতার প্রথম কারণ। আজ অধিকার আদায়ের জন্য যে ‘আইনি’ এবং ‘গণতান্ত্রিক’ পন্থার কথা বলা হয়, এগুলো সব কুফরের কুৎসিত, শয়তানি পন্থা। এগুলোর মাধ্যমে আগেও কখনও মুসলমানরা তাদের ইসলামী অধিকার পায়নি, আর না ভবিষ্যতে তারা অধিকার আদায় করতে পারবে। দীনি জামাআতের যেই ভাইয়েরা যখন যেখানে এসব পন্থা অবলম্বন করেছে, তারা সবাই পথ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে। যখন আমরা এই কথা বলি তখন আল্লাহর শপথ এদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা এবং কল্যাণকামিতার উপর ভিত্তি করেই এরকম কথা বলি। আমাদের আফসোস যে, এই জামাআতগুলো এসব পন্থা অবলম্বন করে নিজেরাও দীন থেকে দূর হয়ে গেছে। আজ অবস্থা এমন যে, শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য সত্যিকার প্রচেষ্টা তো বহু দূরের কথা, শুধু শরীয়ত প্রতিষ্ঠার দাবি করার জায়গাও গণতন্ত্র এদের দেয়নি। অর্থাৎ অতীতে যেখানে প্রথমে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার নামে দেশজুড়ে আন্দোলন চালানো যেত এবং অন্যায় অশ্লীলতাকে বন্ধ করার জন্য গণবিক্ষোভ ও প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেওয়া যেত, আজ এসবের জায়গায় গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মানবাধিকার অথবা নামসর্বস্ব রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় স্বার্থের মতো অস্পষ্ট এবং বাতিল পরিভাষার হৈচৈ তো অবশ্যই করা যাচ্ছে, কিন্তু জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রতিরোধের যে প্রয়োজনীয়তা তার জন্য কোনো সাথি আপনি পাবেন না। বাস্তবতা এটাই যে, আমর বিল মারূফ (সৎ কাজের আদেশ) এবং নাহী আনিল মুনকার (অসৎ কাজের নিষেধ) এবং আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার মতো ফরযগুলো এই পন্থার মূলনীতি অনুযায়ী বাতিল হিসেবে গণ্য হয়। তাহলে এই পথ ও পন্থার মাধ্যমে কোন কল্যাণ আসবে? রাশিয়ার পরাজয়, ইসলামী ইমারতের প্রতিষ্ঠা এবং এর বরকতময় কাফেলার ধারাবাহিকতা এবং বিজয়। একইভাবে দুনিয়ার অন্যান্য জায়গায় জিহাদি আন্দোলন ছড়িয়ে যাওয়া এবং এর সফলতা, শরীয়ত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন– এসব সফলতার প্রথম কারণ এসব শরীয়ত বহির্ভূত পথ ছেড়ে নবুয়্যতী মানহাজ, শরীয়ত সম্মত পন্থা, দাওয়াত ও জিহাদের মানহাজকে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরা প্রমাণিত হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ, ইসলামী বিশ্বকে দখল করে রাখা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গোলামি থেকে জিহাদি আন্দোলনকে স্বাধীন করা। এসব বাহিনী তো বৈশ্বিক কুফরী শক্তির দাস এবং শরীয়তের সবচেয়ে বড় শত্রু, এদের জীবন মরণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুনিয়াবি স্বার্থের কারণে হয়ে থাকে, এজন্য এদের নিয়ন্ত্রণ থেকে জিহাদি আন্দোলনকে মুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি ছিল। অতীত অভিজ্ঞতা এই বাস্তবতাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে, এসব বাহিনীর হাতে নিজের লাগাম ছেড়ে দেওয়া জিহাদি আন্দোলনের ব্যর্থতারই সমার্থবোধক; উপমহাদেশ থেকে আরব বিশ্ব পর্যন্ত ইতিহাস এই শিক্ষাই দেয়। এজন্য এখন জিহাদি আন্দোলন এসব বাহিনীকে নিজেদের অবলম্বন বানায়নি এবং নিজেদের লাগাম নিজেদের হাতেই রেখেছে।
তৃতীয় কারণ, বৈশ্বিক কুফরের মাথা আমেরিকার উপর আঘাত করা এবং সবকিছু সহ্য করে এই যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকা প্রমাণিত হয়েছে। আগে সে সুরক্ষিত ছিল। আগে এই পাপাচারী, জালেম ও খেয়ানতকারী দুশমন দূরে বসে নিজেদের এজেন্টদের মাধ্যমে মুসলিম উম্মতের উপর জুলুম করত। তার নিজের এসব জুলুমের জন্য কোনো মূল্যই দিতে হত না, কিন্তু এখন নিজেকে রক্ষা করার জন্য তার নিজেরই জান ও মাল যুদ্ধের আগুনে ঢালতে হচ্ছে।
এগারো সেপ্টেম্বরের বরকতময় হামলা জালেমদের এবং বলপ্রয়োগকারীদের মোকাবেলায় মাজলুমদের যুদ্ধের এক সফল পদ্ধতি ও প্রভাবশালী দাওয়াত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই দাওয়াতের উত্তরে লাব্বায়েক বলে উম্মত দাঁড়িয়ে গেছে, যার ফলে আমেরিকার জন্য নিজেকে নিরাপত্তা-বলয়ে লুকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ খোদা হওয়ার দাবিদার আমেরিকা আজ আল্লাহর মুজাহিদদের সামনে নিজেকে একেবারে অক্ষম হিসেবে দেখছে। আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা, আল্লাহ চায় তো আমেরিকা আরও কিছুদিন জিহাদের আঘাতের নিচে থাকবে এবং জিহাদের অব্যাহত আঘাতের ফলে আমেরিকার পতন হবে ইনশাআল্লাহ।
একইভাবে একথাও আপনাদের সামনে তুলে ধরা জরুরি যে, আগে আমেরিকা ইসলামী বিশ্বে আড়ালে থেকে নিজের এজেন্টদের মাধ্যমে কাজ করাতো … এসব এজেন্টরা ধোঁকার মাধ্যমে নিজের গোলামি ও নোংরামির উপর পর্দা ঢেলে রাখতো … নিজেকে উম্মতের নায়ক হিসেবে দেখাত, কিন্তু আমেরিকার উপর আঘাতের কারণে যখন আমেরিকা প্রকাশ্যে সামনে এসে গেল, তখন এর গোলাম বাহিনী ও নেকাবধারী শাসকদের ঘোষণা দিয়ে কুফর ও ইসলামের মাঝে যেকোনো একটি তাঁবুকে নির্বাচন করতে হলো। ফলে মুসলমানদের শত্রু ও বন্ধুকে শনাক্ত করা সহজ হয়ে গেল!
চতুর্থ কারণ ছিল, আজকের দিনের জিহাদি আন্দোলন হকপন্থি আলেমদের থেকে নির্দেশনা নিচ্ছে এবং সেই সাথে এটা নিজেকে বিগত ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা মনে করে। ফলে অভিজ্ঞতা থেকে এই আন্দোলন কার্যক্রম শিখতে পেরেছে এবং শত্রুর চাল এবং ষড়যন্ত্রও বুঝতে শিখেছে, আলহামদুলিল্লাহ। এই গুণের কারণে আল্লাহ একে পাকাপোক্ত বানিয়েছেন, উম্মতের ভেতরে এর মূল মজবুত হয়েছে এবং এই আন্দোলন ফিতনারও মোকাবেলা করতে পারছে। আজ ‘জামাতুত দাওলা’ এর ফিতনা আমাদের সামনে। কিভাবে জিহাদি আন্দোলন এই পথভ্রষ্ট চিন্তা ও ফাসাদের তুফানের মোকাবেলা করেছে এবং জিহাদকে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে তা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট।
আলহামদুলিল্লাহ, এই চার কারণ ছিল বাহ্যিক, যদিও সবচেয়ে বড় প্রথম এবং আসল কারণ হলো আল্লাহর উপর ভরসা, শরীয়তের অনুসরণ, সাহায্যের জন্য শুধু আল্লাহর দিকে তাকানো এবং এরপরে অদৃশ্য থেকে আল্লাহর সাহায্য। আলহামদুলিল্লাহ সফলতা ছিল এবং সফলতার দিকে, শরীয়ত প্রতিষ্ঠার দিকে, স্বাধীনতা, সম্মান ও উন্নতির দিকে এখন এই সফর জারি আছে, আলহামদুলিল্লাহ। আর এজন্য আমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা দরকার, এই রাস্তায় আমাদের পথ দেখানোর জন্য নিজেদের রবের শুকরিয়া আদায় করা দরকার।
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ
অর্থাৎ “সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদের হেদায়াত দিয়েছেন; আর আল্লাহ আমাদের হেদায়াত না দিলে আমরা হেদায়াত পেতাম না।”
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে, পুরো উম্মতকে, নিজের সন্তুষ্টির রাস্তার উপর দৃঢ়তা দিন। আমীন।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ দর্শকবৃন্দ, জাযাকুমুল্লাহু খায়রান। আমাদের পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ কাশ্মীরের জিহাদ এবং কাশ্মীরের স্বাধীনতার আন্দোলনের উপর হবে। সেই পর্বে ইনশাআল্লাহ জামাআত আল-কায়েদা উপমহাদেশের কাশ্মীরের জিহাদের ব্যাপারে অবস্থান এবং আচরণবিধির উপর আলোচনা হবে। সে পর্যন্ত অনুমতি চাচ্ছি, আল্লাহ আপনাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন। ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
চলবে...
Comment