Announcement

Collapse
No announcement yet.

সকল পর্ব || আহলুল হারামের আন্দোলনে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব - শাইখ হামজা বিন উসামা হাফিজাহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সকল পর্ব || আহলুল হারামের আন্দোলনে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব - শাইখ হামজা বিন উসামা হাফিজাহ








    আহলুল হারামের আন্দোলনে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব
    মজলিস: ১


    বিলাদুল হারামাইন (কথিত সৌদি আরব) এর ব্যাপারে বার্তা
    – শায়খ হামজা বিন উসামা বিন লাদেন হাফিজাহুল্লাহ

    আর্কাইভ ডাউনলোড লিঙ্ক:



    পিডিএফ ডাউনলোড:




    إنّ الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضلّ له، ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أنّ محمدًا عبده ورسوله، صلى الله عليه وعلى آله وصحبه وسلم تسليمًا كثيرًا.
    নিশ্চই সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, আমরা তাঁর প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। তাঁর কাছে সাহায্য চাই। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের নফসের অনিষ্ঠতা ও মন্দ আমল থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দান করেন, তাঁকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারেনা। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন হেদায়াতকারী নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। আর অসংখ্য সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাব্যে কেরামের উপর।
    হামদ ও সালাতের পর-
    আমার এই বার্তা
    মুসলিম উম্মাহর প্রতি, বিশেষ করে বিলাদুল হারামাইনের আমাদের অধিবাসীদের প্রতি-
    সাহাবায়ে কেরাম ও ওই সকল মহান বিজয়ীদের বংশধরদের প্রতি, যাদের বাপদাদাগণ জমিনের দৈর্ঘ্য- প্রস্তকে ইসলামের নূর দ্বারা আলোকিত করেছেন।
    কুরাইশ ও উতাইবাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান... বনি তামিম, হারব ও জুহাইনার বিশস্ত ব্যক্তিবর্গের প্রতি-
    জাহরান ও গামেদের বাজপাখি... ও বনি শাহর ও খাওয়ালিদের সিংহদের প্রতি-
    দাওয়াসেরের ঈগল... ও ক্ষিপ্র শিকারি বীরদের প্রতি-
    মুতায়ের ও কাহতানের বাহাদুরব্যক্তিবর্গ ও ইজ্জত, সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী গর্বিত উপজাতীয় গোত্রগুলোর প্রতি-
    সম্মানিত শায়েখ ও সকল বৈশিষ্টের ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন স্বাধীন যুবকদের প্রতি-

    السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
    আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহু
    আমি মহান আল্লাহর কাছে কামনা করি, যেন তিনি আপনার মর্যাদাকে উঁচু করে দেন, আপনাদের রিজিকে প্রশস্থতা দান করেন, আপনাদেরর প্রয়োজনসমূহ পুরো করে দেন ও আপনাদেরকে আখেরাতে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন। ... আপনাদের কাছে আমার একটি কথা হল জুলুম ও অবাধ্যতা বৃদ্ধি পাওয়া সম্পর্কে, বিলাদুল হারামাইনে আমাদের জনগণের উপর যার প্রয়োগ করা হচ্ছে। এবং মহান শরীয়তের বিরোধিতা বৃদ্ধি পাওয়া সম্পর্কে, যাতে আমাদের দেশের শাসকবর্গ লিপ্ত রয়েছে। যেমন কাফের সাথে বন্ধুত্ব ও মুমিনদের প্রতি শত্রুতা। এবং আল্লাহ তায়ালা যা নাজিল করেছেন, তা ব্যতিত অন্য বিধান দ্বারা ফায়সালা করা। যেমন সুদ হালাল করা, অথচ আল্লাহ তায়ালা তা হারাম করেছেন। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহকে নিষিদ্ধ করা অথচ আল্লাহ তায়ালা তা ওয়াজিব করেছেন। ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক মন্দ বিধান, যা সকল দেশে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ভুমিতেও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম অভিভাবক।...
    ، فقد قال صلى الله عليه وسلم لعتبة بن ربيعة وهو مشرك كافر: "أقد فرغت يا أبا الوليد؟". قال: نعم، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "فاسمع مني"، قال: أفعل"[1].
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উতবাহ ইবনে রবিয়াহ নামক একজন কাফের ও মুশরিককে বললেন- হে আবুল ওয়ালিদ! তুমি কি অবসর হয়েছ! সে বলল- হ্যা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তুমি আমার থেকে শোন! সে বলল- আমি এমনটি করলাম।
    (সিরাতে নববি লিইবনি হিশাম- ২/১৩২)
    এই বিষয়ে হাদিসটিকে সামনে রেখে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরও দুটি হাদিস আপনাদের সামনে পেশ করছি- যা মুমিনদের জন্য নাজাতের মাধ্যম।
    ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ তাঁর সহিহ মুসলিমে রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন-
    عن النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم- أنّه قال: "من رأى منكم منكرًا فليغيّره بيده فإن لم يستطع فبلسانه فإن لم يستطع فبقلبه وذلك أضعف الإيمان"
    তিনি ইরশাদ করেছেন- তোমাদের কেউ যদি কোন মন্দ কাজ হতে দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা বাঁধা প্রদান করে। যদি সে সক্ষম না হয়, তাহলে যেন মুখ দ্বারা বাঁধা প্রদান করে। আর যদি এতেও সক্ষম না হয়, তাহলে যেন অন্তরে ঘৃণা করে। আর এটাই হল ইমানের সর্বনিম্ন স্তর।
    (মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ঈমান- ৭০)
    ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ তাঁর সহিহ মুসলিমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরও বর্ণনা করেছেন- তিনি ইরশাদ করেছেন-
    عن النبيّ -صلّى الله عليه وسلّم- أنّه قال: "ما من نبىّ بعثه اللّه فى أمّة قبلى إلاّ كان له من أمّته حواريّون وأصحاب يأخذون بسنّته ويقتدون بأمره ثمّ إنّها تخلف من بعدهم خلوف يقولون ما لا يفعلون ويفعلون ما لا يؤمرون فمن جاهدهم بيده فهو مؤمن ومن جاهدهم بلسانه فهو مؤمن ومن جاهدهم بقلبه فهو مؤمن وليس وراء ذلك من الإيمان حبّة خردل"[2].
    আমার পূর্বে এমন কোন নবীকে প্রেরণ করা হয়নি, যার উম্মাতের মধ্য থেকে তাঁর এমন সাথী ও অনুসারী হয়নি, যারা...... (মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ইমান-৫০) .
    হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা! আপনাদের কাছে আমার এই পত্রে একটি বিষয় উল্লেখ করা আবশ্যক যে, এই পত্রটি দেওয়া হচ্ছে- এই শাসকদেরকে আমাদের পূর্বসূরি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের পবিত্র ও মুবারক নসিহাহ প্রদানের পর। অতঃপর প্রতিবেদনসমূহ লেখা হয়ে গেছে। এবং তাঁর স্বাক্ষরসমূহ জমা করা হয়ে গেছে। এবং সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সৌদি রাজ পরিবার প্রজ্ঞাময় দাওয়াত ও উত্তম উপদেশাবলি গ্রহণ না করে, তাঁদেরকে গ্রেফতার, লাঞ্ছিতকরণ ও শাস্তি প্রদান করেছে। অতঃপর তাঁদেরকে বিতাড়িত ও হত্যা করেছে। যখন সংশোধনকারীদের সামনে সকল পথ অবরুদ্ধ হয়ে গেল, এবং ক্রুসেডরদের জন্য ঘাটিসমূহ, বিমানঘাঁটি ও নৌঘাঁটিসমূহ খুলে দেওয়া হল। তখন সংশোধনকারীগণ সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসিয়ত অনুযায়ী কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
    ، "أخرجوا المشركين من جزيرة العرب
    তোমরা মুশরিকদের জাজিরাতুল আরব থেকে বের করে দাও!
    (বুখারি-৩১৬৮, মুসলিম- ১৬৩৭ )
    এবং তাঁরা হেজাযে আমেরিকান ক্রুসেডরদের টার্গেটসমূহে আক্রমণ করার জন্য দাড়িয়ে গেলেন। এবং তাঁরা এটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন যে, তাঁরা নিরাপত্তা কর্মী ও সংরক্ষিত লোকদের হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট নন। শাসকেরা এটা অস্বীকার করল এবং ক্রুসেডরদের নিরাপত্তা দিল। এবং তাদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধের ডামাডোল বাজিয়ে দিল। অতঃপর তাঁরা অসংখ্য মুমিন, মুওয়াহহিদ ও শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ যুবকদের হত্যা করল, যারা আফগানিস্তানের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়েছিলেন। এছাড়া আরও অনেককে তাঁরা বন্দি করেছে, যাদের মধ্যে উলামায়ে কেরাম ও মর্যাদাসম্পন্ন ইলমের ছাত্ররাও রয়েছেন। আর এমন কিছু উত্তম ভাই –যারা কারাগারে ছিলেন, তাঁদেরকে এই শাসকেরা পরবর্তীতে ফাসি দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের উপর তাঁর প্রশস্ত রহমত বর্ষণ করুন। এবং তাঁদেরকে জান্নাতের সবচে’ উত্তম স্থান দান করুন। আমিন
    আমাদের এই বার্তাটি হচ্ছে সংশোধনকারীদের সকল প্রচেষ্টা ব্যয় হওয়ার পর অবাধ্যদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দাওয়াত।
    ইহা আমেরিকার উকিলদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দাওয়াত।
    ইহা ক্রুসেডরদের থেকে আমাদের দেশকে মুক্ত করার দাওয়াত, যা আমেরিকার অক্টোপাসে আবদ্ধ রয়েছে, আর আমেরিকা হচ্ছে দেশের আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র রাজনীতির কর্তৃত্ব গ্রহণকারী।
    ইহা ইসলামী শরীয়তকে পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের দাওয়াত, যেভাবে আমাদের রব পূর্ণরূপে নাজিল করেছেন আমীর, ধনী, মন্ত্রী, দুর্বল, মিসকিন ও ফকির সকলের উপর।
    ইহা তাওহীদকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার দাওয়াত, যাতে রয়েছে তাওহিদুল হাকিমিয়াহ। এবং শিরক ও খোদাদ্রোহিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দাওয়াত, যাতে রয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের শিরক।
    ইহা মুরতাদ তাগুতদের পতন ও গুজব রটনাকারী মুনাফিকদের লাঞ্চিত করার দাওয়াত।
    ইহা দিন বদলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা ও মুসলমানদের এই পরিবর্তনের জন্য স্বীয় বক্তৃতা, লিখনি ও মিডিয়ার দ্বারা দাওয়াত প্রদানের আহবান।
    ইহা হারামাইন শরিফাইনকে রক্ষা করার ওয়াজিব হক বাস্তবায়নের দাওয়াত, যা আমাদের উপর মুসলিম উম্মাহর আমানত।
    ইহা উম্মাহর মুক্তি ও তাঁদের নেতৃত্ব ও মর্যাদার দিকে একটি মজবুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার উপর তাঁদের নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনার দাওয়াত।
    ইহা আমাদের বন্দি ভাই ও পবিত্র ও নিষ্কলুষ বন্দিনী বোনদের মুক্ত করার দাওয়াত।
    ইহা প্রকৃত ইজ্জত অনুসন্ধান ও স্বাধীনতার সাধ ভোগ করার দাওয়াত।
    ইহা সৌদি রাজবংশের মিডিয়ার বৃত্ত থেকে আকলকে মুক্ত করার দাওয়াত।
    ইহা অপরাধী সৌদি রাজবংশের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটানোর দাওয়াত, যারা বিলাদুল হারামাইনকে কাইসার ও কিসরার মত সাম্রাজ্য বানিয়ে রেখেছে। বিলাদুল হারামাইনকে নিজেদের বংশে নামকরণ করেছে। বিলাদুল হারামাইনের কল্যাণসমূহকে বশীভূত করে রেখেছে। তাঁর অধিবাসীদের হকসমূহকে আত্মসাৎ করে রেখেছে। তাঁদের উপর জুলুম করেছে, তাঁদেরকে নিপীড়ন করছে ও তাঁদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। কেমন যেন এটা তাদের মালিকানাধীন সম্পদ।
    ইহা দেশের সম্পদসমূহ তাঁদের বৈধ মালিকদের নিকট পুনরায় বণ্টন করে দেওয়ার দাওয়াত। উম্মাতের সম্পদসমূহকে অবৈধভাবে অপচয় ও অপব্যায়কারী বড় বড় চোরদের থেকে হিসাব গ্রহণের দাওয়াত।
    ইহা অভাবীদের মুখে মুচকি হাঁসি ফিরিয়ে আনা ও ঋণগ্রস্তদের থেকে দুঃখ ও পেরেশানি দূর করার দাওয়াত।
    হে আমাদের বিলাদুল হারামাইনের প্রিয় অধিবাসীগণ! নিশ্চই আমাদের বরকতময় ভূমিকে আল্লাহ তায়ালা বাইতুল হারামের নির্মাণের জন্য পসন্দ করেছেন। এটা হচ্ছে মানুষের ইবাদতের জন্য তৈরি সর্বপ্রথম ঘর। এই ঘরের অনেক মর্যাদা ও সম্মান রয়েছে, যা সকল মুসলমান অবগত। এটা হচ্ছে এমন স্থান, যার জন্য মুসলমানগণ নিজদেদের অন্তর উৎসর্গিত করেন। এই ঘরের দিকে মুখ করেই নামাজ পড়েন। এই ঘরকে কেন্দ্র করেই হজ ও উমরাহ করার ইচ্ছা করেন। এই ঘরের জন্যই নিজেদের অন্তরকে উৎসর্গ করেন। এই ঘরের সাথে বাড়াবাড়ি প্রদর্শনকারী প্রত্যেককে প্রতিরোধ করেন। এছাড়াও এই ঘরের আরও অনেক মহান গুরুত্ব রয়েছে। নিশ্চই আমাদের এই বরকতময় দেশ ভৌগলিক, কৌশলগত, অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক বড় বড় বৈশিষ্ট এর অধিকারী। ইহা পৃথিবীর কলব তথা ঠিক মধ্যখানে অবস্থিত। বেশ কিছু সমুদ্র রয়েছে এবং সমদ্র প্রণালী রয়েছে। এবং আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক বানিজ্যের অনেক লাইনে এবং রফতানিযোগ্য জৈব পেট্রোল এর অনেক লাইনে তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে। এছাড়া আরও অনেক বৈশিষ্ট রয়েছে, যেগুলো প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব বুঝায়। যিনি আলিমুল গাইব এবং সর্বদ্রষ্টা। যাতে আসমানি রিসালাতসমূহের পরিসমাপ্তিকারি, বৈশ্বিক মুহাম্মাদি রিসালাত ও ইসলামের চিরস্থায়ী রিসালাতের বিষয় বাস্তব হয়। যাকে আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য যথেষ্ট করে পাঠিয়েছেন, যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
    ﴿وما أرسلناك إلّا كافّةً للنّاس بشيرًا ونذيرًا ولكنّ أكثر النّاس لا يعلمون﴾
    আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
    সুরা সাবা-২৮
    সুতরাং বিলাদুল হারামাইন হল ওহী ও কুরআনের অবতরণস্থল। প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী। যেখান থেকে ইসলাম পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামের উপকার ও বরকত অসংখ্য মানুষের মাঝে ব্যাপক হয়েছে।
    বিলাদুল হারামাইনের আরও অনেক পবিত্র, কৌশলগত, ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। সিয়াদাতু খাইরিল উমাম ফি ইন্তাকাজাতি আহলিল হারাম (হারামের অধিবাসীদের বিপ্লবে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ নেতৃত্ব।) শিরোনামে আমাদের ধারাবাহিক মজলিসগুলোতে তাঁর আলোচনা আসবে। যেখানে আমরা বিলাদুল হারামাইনে পরিবর্তনের বিষয়টি স্পষ্ট করবো। এবং বিইজনিল্লাহ সমগ্র উম্মাহর মাঝে তাঁর উপকার ফিরে আসবে। যাতে আবার আমাদের ভূমি মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত নেতৃত্বের দিকে ফিরে আসে, যেমনটি পূর্বে ছিল। এবং আমাদের উম্মাহ নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। উম্মাহর সম্মান সমুন্নত হয়। ইসলামের ঝাণ্ডা সকল চুড়ায় উত্তোলিত হয়। এবং আল্লাহ তায়ালার শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত হয়। ও পুরো দিন আল্লাহ তায়ালার জন্য হয়ে যায়।
    আমরা আমাদের এই বার্তায় এমন আরও কিছু বিষয় বলবো, যাতে আমরা পরিবর্তনের দাওয়াত নিয়ে আমাদের প্রচেষ্টাকে সংশোধনকারীদের প্রচেষ্টার সাথে মিলাতে পারি, এবং ঈমান ও হিকমতের ইয়েমেনে আমাদের প্রিয়তম শায়েখ ও ভাইদের প্রচেষ্টার সাথে মিলাতে পারি। ফলে আমরা জালেম, স্বৈরাচার শাসকদের পতন ঘটাতে সম্মিলিত, ঐক্যবদ্ধ ও মজবুত হতে পারবো।
    কেননা এটা একটি তিক্ত বাস্তবতা যে সউদের বংশধরেরা হচ্ছে আমাদের দেশের শাসক। তাঁরা উম্মাহর শত্রু। তাঁরা উম্মাহকে ভালবাসেনা। তাদের উম্মাহর বিষয়সমূহের কর্তৃত্বশীল হওয়া একটি অগ্রহণযোগ্য বিষয়। হে উম্মাহ! আপনারা তাদেরকে তাদের বন্ধুদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করুন! - শায়েখ আব্দুল্লাহ আজ্জাম, আনওয়ার শাবান, আহমাদ ইয়াসিন, কমান্ডার খাত্তাব, উসামা বিন লাদেন, মোল্লা মুহাম্মাদ উমর, আবু মুসআব আয-যারকাবি (আল্লাহ তাঁদের সকলের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আমিন।) এর মত মুজাহিদ, মুহাজির ও আনসারগণ তাদের বন্ধু? নাকি ক্রুসেডর ও মুরতাদরা তাঁদের বন্ধু? যেমন- ক্লিনটন, বুশ, ব্রিটেনের রানী, টনি ব্লেয়ার, ওবামা, হুসনি মোবারক, বিন আলী ও সিসি? জ্ঞানীরা কি এটা ভাবতে পারেন যে আমরা উম্মাহর পবিত্র ভূমিসমূহের পবিত্র নেতৃত্বের লাগাম উম্মাহর শত্রুদের হাতে তুলে দিবো? অথবা উম্মাহর শত্রুদের বন্ধুদের হাতে?
    হে আমাদের প্রিয় জনগণ! এটা অত্যান্ত আবশ্যকীয় বিষয় যে, আমরা হারামাইন শরিফাইন ও ইসলামের পবিত্র নিদর্শনসমূহকে আমাদের ঘাড়ে উম্মাহর আমানত মনে করবো। যা আমাদেরকে সোপর্দ করা হয়েছে। সুতরাং এই আমানতকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা আমাদের জন্য ওয়াজিব।
    এই আমানতের ওয়াজিবকে সঠিকভাবে আদায়ের ক্ষেত্রে সবচে’ অগ্রগন্য কাজ হবে- তাঁকে রক্ষা করা, শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁকে সাহায্য করা। স্বৈরাচারীদের প্রতিহত করণ ও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য এ ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট ও মুল্যবান ত্যাগ প্রদান করা। বাহিরের বিভিন্ন ফ্রন্ট ও ভিতর থেকে হারামাইন শরিফাইন অভিমুখে রাফেজিদের অগ্রসরমান বিপদ সবার জন্য ভয়াবহ- এটা প্রকাশ পেয়ে গেছে। খারেজিদের এই জোয়ার সাধারণ বা মুহূর্তের কোন বিষয় ছিলনা। ধোঁকাপূর্ণ বিলম্বিত পদক্ষেপের দ্বারা গত দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা সাংগঠনিক ও দলীয় জোয়ার শুরু করেছে, কিন্তু তা চলমান রয়েছে। এমনকি তাঁরা ইয়েমেনের রাজধানী সান’আ ও আরও অনেক প্রতিরক্ষাকেন্দ্র দখলে নিতে সক্ষম হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট ও তিনিই উত্তম অভিভাবক। তাদের একজন তো স্পষ্ট করে বলেই দিয়েছে- “নিশ্চই আমরা অচিরেই কয়েক বছরের ব্যবধানে মক্কা মোকাররমাতে পোঁছে যাবো”। অত্যান্ত আফসোস! গত দীর্ঘ দুই বছরেও সৌদি রাজ পরিবার তাদের এই ধারাবাহিক আগ্রাসনকে রুখতে পারেনি।
    তাঁরা বিশ্ববাসীকে রাফেজিদের মাত্র একটি জামায়াতকে প্রতিহত করতে তাদের বাহিনীর অক্ষম হওয়া ও দুর্বলতাকে নিশ্চিত করেছে। সুতরাং এই বাহিনীর দ্বারা কি হবে যখন তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করবে? যেমনিভাবে তাঁরা আমেরিকানদের বিষয়ে তাদের নমনীয় ইচ্ছাও তারা নিশ্চিত করেছে। সৌদি যুদ্ধ কমান্ডাররা যুদ্ধের ময়দানে শোচনীয় পরাজয়বরণকারী সাব্যস্ত হয়েছে। তারা কুয়েতে রাজনীতির অঙ্গন ও মহলে সাহায্য করতে বাঁধা প্রদান করেছে। কুয়েতকে আলোচনার জন্য প্রস্তুত করা ও গোলাগুলি বন্ধ করতে সৌদি রাজ পরিবার ও তাদের চেলারা নির্লজ্জভাবে আমেরিকার অংশগ্রহণে উপসাগরীয় অঞ্চলে দাড়িয়ে গেছে। তারা মুকাল্লা শহরে আমাদের আনসার আশ শরিয়ার মুজাহিদ ভাইদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছে। অথচ সেই সময়ে আনসার আশ শরিয়ার মুজাহিদ ভাইগন হুতিদের অবরুদ্ধ করা ও তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন। তাদের চক্রান্ত ও শত্রুতাকে প্রতিহত করছিলেন। সেখানে মহান আত্মত্যাগ ও কুরবানি প্রদানে আমাদের ভাইয়েরা অগ্রসর হচ্ছিলেন। তারা মুকাল্লার সাধারণ মুসলিমদের সেবায় খুব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যা দূরের ও কাছের সবাই দেখেছেন। আমরা আল্লাহর কাছে দুয়া করি যেন, আল্লাহ তাঁদের কবুল করুন। তাঁদেরকে উত্তম বদলা দিন। কিন্তু সৌদি রাজ পরিবার তাঁদেরকে ও তাদের আত্মমর্যাদাকে ছেড়ে দেইনি। তারা হুতিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি। মুসলিমদের মাঝে শরীয়ত প্রতিষ্ঠা ও তাদের খিদমতের জন্য লড়াই করেনি। তারা মুজাহিদদের উপর হামলা করেছে। মুজাহিদদের আক্রমনের বিরুদ্ধে সিমালঙ্গনকারী হুতিদের সাহায্য করেছে। এই কারণে তারা ইয়েমেনের মুসলমানদের দুইবার ধোঁকা দিয়েছে। সুতরাং তারা হুতিদের প্রতিরোধে সক্ষম নয়। তারা মুসলমানদের মাঝে ও যারা হুতিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাদের প্রতিরোধ করছে, তাদের মাঝে ছিদ্র করতে পারবেনা।
    আর সামনে আমি দুটি আন্তরিক ও গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা পেশ করবো।
    প্রথম বাস্তবতাঃ সৌদি রাজ পরিবার হারামাইন শরিফাইনের প্রতিরক্ষার যোগ্য নয়, ইয়েমেনে বিভিন্ন সময়ে হুতিদের কাছে বারবার পরাজয় বরণ, হুতিদের বিরুদ্ধে টার্গেটে আঘাত হানতে অক্ষম “কঠিন ঝড়” নামক একটি শোচনীয় ব্যর্থতা হচ্ছে তাঁর উৎকৃষ্ট দলীল।
    দ্বিতীয় বাস্তবতাঃ মিডিয়া ও রাজনীতিতে বলাবলি সত্ত্বেও রাফেজি বাহিনী হারামাইন শরিফাইনের দিকে লাগাতা এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের অবস্থান কি? কিভাবে আমরা আমাদের ঘাড়ে রয়ে যাওয়া আমানতকে রক্ষা করবো। কিভাবে আমরা আমাদেরকে ও আমাদের দেশকে সাহায্য করবো?
    হে আমাদের প্রিয় জনগণ! সাহাব্যে কেরামের বংশধরগণ... নিশ্চই যে ওয়াজিব আমাদের অপেক্ষা করছে, তা খুবই মহান, আর সে আমানতটি খুবই ভারি। সর্বোত্তম ব্যক্তি হল, যারা এই ওয়াজিব আদায়ের ক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাদের আছার অনুসরণ করবে ও তাঁদের আমলের উপর ক্ষান্ত করবে, যারা মাদরাসাতুন নববি থেকে বের হয়ে ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের ইচ্ছা ছিল দ্বীন শিক্ষা করা ও সে অনুযায়ী আমল করা। এবং জবান ও সিনার দ্বারা পৃথিবীর আনাচে কানাচে দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে এই দ্বীনের তাবলীগ করা। তাঁরা জাজিরাতুল আরবের জনগণকে শুধু দাওয়াত প্রদানের উপর ক্ষান্ত করেননি। তেমনিভাবে তাঁরা শুধু জবান দ্বারা দাওয়াত দিয়েই বসে থাকেননি। সুতরাং তাঁদের সম্মুখে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সেই সত্য বাণী বিদ্যমান ছিল, যা দ্বারা তাঁদের পথ আলোকোজ্জ্বল ছিল।
    ﴿لقد أرسلنا رسلنا بالبيّنات وأنزلنا معهم الكتاب والميزان ليقوم النّاس بالقسط وأنزلنا الحديد فيه بأس شديد ومنافع للنّاس وليعلم اللّه من ينصره ورسله بالغيب إنّ اللّه قويّ عزيز﴾،
    আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
    সুরা হাদিদ-২৫
    একটি পথ প্রদর্শনকারী কিতাব ও তাঁকে সাহায্যকারী তরবারি। আপনার রবের হেদায়াত ও সাহায্যের জন্য ইহাই যথেষ্ট।
    তাঁদের ছিল আকাশচুম্বী মহান হিম্মত ছিল। নক্ষত্রের চাইতেও উপরে হচ্ছে তাঁর বিচরন। এমনকি তাঁদের একজন কিছু সংক্ষিপ্ত ও সীমাবদ্ধ কথা বলেছিলেন, যা ইতিহাস আজো পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রেখেছে। কেননা সেগুলো ছিল ইজ্জত ও গৌরবের কথা। যদি ইজ্জত জেরা করে, তাহলে এই মহান অর্থ যে বুঝে সেই বলতে পারবে। আর তা হল যখন মহান সাহাবী রবি’ ইবনে আমের রাঃ কাদেসিয়ার ময়দানে পারস্য বাহিনীর কমান্ডার রুস্তমের নিকট গেলেন। তাকে এই অবস্থায় আল্লাহর দিকে আহবান করলেন যে, তাঁর গায়ে ছিল মোটা পোশাক, হাতে ছিল তরবারি ও ছোরা এবং অল্প পালকবিশিষ্ট ঘোড়া, যাতে তিনি আরোহী অবস্থায় ছিলেন। এমনকি তিনি বিছানো কার্পেটের মাঝে ঘোড়া দিয়ে মাড়িয়ে দিলেন। অতঃপর ঘোড়া থেকে নামলেন ও রুস্তমের নিরাপত্তা বাহিনীর একজনের সাথে কথা বললেন। তিনি সামনে অগ্রসর হলে এবং তাঁর কলব ছিল কুরআনের নুরে আলোকিত। তাঁর গায়ে ছিল অস্ত্র ও বর্ম এবং মাথায় ছিল সাদা শিরস্ত্রাণ। একটি পথপ্রদর্শনকারী কিতাব ও তাঁকে সাহায্যকারী তরবারি।
    তারা তাঁকে বলল- তুমি তোমার অস্ত্র নিচে রাখ!
    তিনি বললেন- তোমরা আমাকে ডেকেছ... যদি তোমরা আমার তোমাদের কাছে আসা না চাও, তাহলে আমি ফিরে যেতে চাই... রুস্তমকে ডাক... তিনি বললেন তাকে নিয়ে আস!
    তিনি দামি কার্পেটের উপর তাঁর বর্শার উপর ভর হয়ে বসলেন। ফলে কার্পেটের কাপড় ছিরে গেল। তারা তাঁকে বলল- তুমি আমাদের কাছে কেন এসেছ? তিনি বললেন- আল্লাহ তায়ালা আমাদের পাঠিয়েছেন যাতে আমরা মানুষকে গোলামদের ইবাদত থেকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিয়ে যাই। এবং দুনিয়ার সঙ্কীর্ণতা থেকে আখেরাতের প্রশস্ততার দিকে এবং অন্যান্য ধর্মের জোর- জুলুম থেকে ইসলামের ইনসাফের দিকে নিয়ে যাই। আল্লাহ আমাদের তাঁর দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে মানুষকে তাঁর দিকে আহবান করি। সুতরাং যে তা কবুল করে নিবে, আমরা তাঁর থেকে ফিরে যাবো, আর যে অস্বীকার করবে, আমরা তাঁর সাথে যুদ্ধ করতে থাকবো, এমনকি আমরা আল্লাহর ওয়াদার দিকে ফিরে যাবো।
    তারা বলল- আল্লাহর ওয়াদা কি? তিনি বললেন- যে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মারা যাবে, তাঁর জন্য জান্নাত। আর যে জীবিত থাকবে, তাঁর জন্য বিজয়।
    সুতরাং আমরা এটাকেই পসন্দ করি। এদিকেই আহবান করাকে ভালোবাসি।
    সকল সাহাবায়ে কেরামের-ই ইচ্ছা ছিল, ইসলামের প্রচার করা, দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পরা। যারা ইসলামের উপর নির্ভর করবে, তাঁদের দুনিয়া থাকবেনা। যারা ইহার জন্য চেষ্টা করবে, তাঁদের ব্যবসা থাকবেনা। যারা দুনিয়াকে লাথি দিবে তাঁদের দামি বাড়ি, সুন্দর গাড়ি, উচ্চ বেতন থাকবেনা। কেননা এই সবগুলোই দুনিয়ার সঙ্কীর্ণতা। তাঁরা এগুলোকে ভালবাসেনা, তাঁরা প্রশস্ত আখেরাতকে ভালবাসে। মানুষকে সে দিকেই পরিচালিত করে।
    সুতরাং সম্মান কতইনা মধুময় ও দামি... কিন্তু... যে তাঁর সাধ আস্বাদন করেছে...
    আলোচনার সারাংশঃ নিশ্চই আমাদের দেশে জরুরি পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। যাতে বড় বড় অপরাধী চোর ও আমেরিকার উকিলদের পতন ঘটানো যায়। ক্রুসেডরদের থেকে কুরআনের অবতরণস্থলকে মুক্ত করা যায়। সাফাবিদের থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে হারামাইন শরিফাইনকে সাহায্য করা যায়। নতুন শাসন কায়েম করা যায়, যা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত হবে। তা ইনসাফের প্রসার ঘটাবে। শুরার পরামর্শে পরিচালিত হবে। জিহাদকে পুনরুজ্জীবিত করবে। মুসলমানদের নেতৃত্ব ও গৌরবের প্রত্যাবর্তন ঘটাবে। আমাদের দেশের অথৈ সম্পদ ফকির, মিসকিন ও মুখাপেক্ষী লোকদের মাঝে বণ্টন করবে। বিইজনিল্লাহ সকলেই ইজ্জত, স্বাধীনতা ও সম্মানের সাথে জীবন যাপন করবে।
    এ কারনেই আমরা সকল মুসলমানকে জাজিরাতুল আরবে তাঁদের বক্তৃতা, লেখনী, মিডিয়া ও সুমিষ্ট স্বরের দ্বারা বিপ্লবে অংশ গ্রহণের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। তেমনিভাবে তাঁদেরকে তাঁদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ঘটিত একটি কমিটি গঠনের আহবান জানাচ্ছি। যা সত্যবাদি, সম্মানিত উলামায়ে কেরাম, মুখলিস ও খোদাভীরু দায়ী, প্রশাসনের দয়া দক্ষিনা থেকে নিষ্কলুষ ব্যক্তিগণ দ্বারা গঠিত হবে। বিশেষ করে সামাজিক সংযোগ রক্ষাকারী মুখলসি যুবকগণ এই কমিটিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। তাঁরা পরিবর্তনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে। জাতিকে তাঁদের অধিকারের ব্যাপারে সজাগ করে তুলবে। তাঁদের কাছে ধারাবাহিক বাস্তবতা তুলে ধরবে যে, এই হাকিকতকে চুরি করা, নষ্ট করা, আত্মসাত ও জবর দখলের ক্ষেত্রে এই শাসকেরা অনুশীলন করছে।
    যুবক, যুদ্ধে সক্ষম ব্যক্তিবর্গ ও যাদের উপর শাসকেরা বাড়াবাড়ি করেছে- তাঁদেরকে আমরা ঈমান ও হিকমতের ইয়েমেনে তাঁদের মুজাহিদ ভাইদের সাথে যোগদানের আহবান জানাচ্ছি। যাতে আবশ্যকীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
    ﴿ومن يهاجر في سبيل اللّه يجد في الأرض مراغمًا كثيرًا وسعةً ومن يخرج من بيته مهاجرًا إلى اللّه ورسوله ثمّ يدركه الموت فقد وقع أجره على اللّه وكان اللّه غفورًا رحيمًا﴾.
    যে কেউ আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে। যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও রসূলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার সওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।

    সুরা নিসা-১০০
    বার্তা শেষের পূর্বে আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, অবশ্যই আমাদের ইখলাস ও সত্যবাদিতার গুণ অর্জন করতে হবে। হক কথা বলতে হবে। আপনারা সেই দিনকে স্মরণ করুন, যেদিন সৃষ্টিকর্তা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ হিসাব গ্রহণ করবেন।
    ، ﴿يومئذ تعرضون لا تخفى منكم خافية﴾،
    সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন কিছু গোপন থাকবে না।
    সুরা হাক্কাহ-১৮
    আমাদের সকলকেই আল্লাহ তায়ালার সম্মুখে দাঁড়াতে হবে।
    ، ﴿يوم يفرّ المرء من أخيه * وأمّه وأبيه * وصاحبته وبنيه * لكلّ امرئ منهم يومئذ شأن يغنيه﴾،
    সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।
    সুরা আবাসা-৩৪-৩৭
    সুতরাং আমরা আমাদের দেশের মন্দ কর্মকাণ্ডসমূহের ক্ষেত্রে চুপ থাকার ব্যাপারে কি জবাব দিবো? ... আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি এবং আমাদের পূর্বে অনেক ব্যক্তি অগ্রসর হয়ে গিয়েছেন। ... কিভাবে ওই সকল লোকেরা মহারাক্রমশালি আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে? যারা মানুষকে কুরআনের কিছু অংশ মানতে আহবান করে আর কিছু অংশকে গোপন করে। আল্লাহ তায়ালা কি বলেননি –
    : ﴿أفتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض﴾،
    তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর?
    সুরা বাকারা-৮৫
    আল্লাহ তায়ালা কি আরও বলেননি-
    ﴿اليوم يئس الّذين كفروا من دينكم فلا تخشوهم واخشون اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينًا﴾،
    আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
    সুরা মায়েদা-৩
    আপনারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে কেন ভয় করছেন না? চিরঞ্জীব মহাপরাক্রমশালী আল্লাহকে কেন লজ্জা করছেন না? আপনারা কি মৃত্যুকে ভয় করেননা? আপনারা কি কবরের ভয়াবহতাকে ভয় করেননা?
    আমাদের নিস্ফল সৃষ্টি করা হয়নি। আমাদের অযথা দুনিয়াতে পাঠানো হয়নি। নিশ্চই আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য পাঠানো হয়েছে। আমাদের দেশে আল্লাহ তায়ালার শরিয়ত কায়েম হবে? নাকি ফাসেকি, নষ্টামি, অবাধ্যতা, ফিতনা সৃষ্টিকারীদের আশ্রয়দান, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত কাফেরদের মেহমানদারি কায়েম থাকবে? কেন হকের কালিমাকের আওয়াজ বুলন্দ করার ক্ষেত্রে ভয় করা হবে? কেন আমরা মানুষকে আল্লাহ তায়ালার নাজিলকৃত শরীয়তের দিকে আহবান করছিনা? আমরা কি উপযুক্ত হয়ে গেছি যে আমরা শরীয়ত প্রতিষ্ঠায় আমাদের বাড়াবাড়ির ব্যাপারে ও তাগুত মুরতাদদের ব্যাপারে আমাদের নিশ্চুপ থাকার ব্যাপারে ও ব্যভিচারিণী নষ্টা ক্রুসেডর মহিলা ও পুরুষদের অক্টোপাস থেকে আমাদের বিলাদুল হারামাইনকে কলুষমুক্ত করার ব্যাপারে আমাদের নিশ্চুপ থাকার ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার কাছে হিসাব দিতে পারবো? এমনিভাবে আমরা কি সাহাবায়ে কেরামের ভূমিকে ক্রুসেডরদের থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে সাহায্য করেছি, যেখানে ক্রুসেডর ব্যভিচারিণীরা ভ্রমণ করছে? আমরা দুনিয়ার পশ্চাদপদতা ও চাকচিক্যকে লাথি মারি। কেন আমরা এই অপরাধী তাগুত মুরতাদদের জন্য নতিস্বীকার ও অপমানের দ্বারা সন্তুষ্ট হয়ে যাবো?
    এটাই কি আমাদের অবস্থান...? এটাই কি আমাদের চিন্তা-ভাবনা? হিসাব দিবসকে কি আমরা স্মরণ করছি?...
    সুতরাং পুরুষরা কোথায়? স্বাধীনচেতারা কোথায়? ওই সকল লোকেরা কোথায়, যারা সেই দিনের ব্যাপারে তাঁদের রবকে ভয় করে যেদিন সবাই হতবিহবল হয়ে ভ্রুকুঞ্চিত হবে? তাগুতদের মুখের সামনে হক কালিমা উচ্চারণকারী লোকেরা কোথায়? মুনাফিকদের পোশাক বিদীর্ণকারীরা কোথায়? তাঁরা মুনাফিকদের সেই কথাই বলে, যা আব্দুল্লাহ ইবেন উবাই ইবনে সুলুলকে বলা হয়েছিল-
    "اجلس أي عدوّ الله، لست لذلك بأهل
    হে আল্লাহর শত্রু বস! তুমি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নও! আল্লাহর পথের মুজাহিদেরা কোথায়? ওই সকল লোকেরা কোথায়, যারা উচ্চমূল্যে নিজেদেরে জানকে আল্লাহ তায়ালার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন? শাহাদাত কামনাকারী লোকেরা কোথায়? ওই সকল লোকেরা কোথায়, যারা শাহাদাতের নেতৃত্ব কামনা করেন? যাদেরকে কিয়ামতের দিন তাঁদের সর্দার হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাঃ এর সাথে একত্রিত করা হবে।
    হে মুমিনগণ! এটাই তোমাদের দিন! হে মুসলমানগণ! এটাই আপনাদের সময়! সুতরাং আপনারা সেই কাজের জন্য উঠে পরুন, যার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ও আপনাদের ক্ষমা করুন। আমাদেরকে তাঁর পথে মাকবুল শাহাদাতের মাধ্যমে মৃত্যু দান করুন।
    হে আল্লাহ! আমাদের এই উম্মাহকে হেদায়াতের উপর সুদৃঢ় করুন! যাতে তাঁরা আনুগত্যশীল হয়ে সম্মানিত হবে। এবং অবাধ্যরা অপমানিত হবে। এবং সৎ কাজের আদেশ দেওয়া হবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করা হবে।
    হে আল্লাহ! আমাদের জালেম জাতির জন্য ফিতনা বানাবেন না! আমাদের আপনার রহমতে কাফের জাতি থেকে রক্ষা করুন।
    হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহ মাফ করে দিন! আমাদের বিষয়ে আমাদের ছাড়াছাড়িকে ক্ষমা করে দিন। আমাদের কদমকে দৃঢ় করে দিন! আমাদেরকে কাফের জাতির উপর সাহায্য করুন।
    وآخر دعوانا أن الحمد لله ربّ العالمين




    Last edited by আবু আব্দুল্লাহ; 08-28-2018, 09:18 PM.
    আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!

  • #2


    আহলুল হারামের জাগরণে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব
    দ্বিতীয় পর্ব

    সৌদি রাজপরিবার : ইতিহাসের অজানা কথা
    শাইখ হামজা বিন উসামা হাফিজাহুল্লাহ


    PDF



    WORD





    ألحمد لله الكريم الذي أصبغ نعمه علينا باطنة وظاهرة، العزيز الذي خضعت لعزته رقاب الجبابرة. وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له شهادة نرجو بها النجاة في الدار الآخرة. وأشهد أن محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وعلى آله وصحبه وسلم تسليما كثيرا
    সমস্ত প্রশংসা সেই পরম দাতা আল্লাহ তা’আলার জন্য, যিনি আমাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সর্বাঙ্গীণে ভরপুর নিয়ামত দান করেছেন৷ সমস্ত প্রশংসা সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলার জন্য, যার প্রতাপের সামনে সকল প্রতাপশালীদের গর্দান নত হয়ে যায়৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং তাঁর কোন শরীক নেই৷ এমন সাক্ষ্য, যা দ্বারা আমরা পরকালে মুক্তির আশা করে থাকি৷ আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল৷ আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সঙ্গী-সাথীদের প্রতি অঝোরে রহমত বর্ষণ করুন৷
    হামদ ও সালামের পর–
    সমগ্র উম্মতে মুসলিমাহর প্রতি ব্যাপকভাবে এবং আমাদের হারামাইন শরীফ দেশের জনগণের প্রতি বিশেষভাবে...
    ألسلام عليكم ورحمة الله وبركاتة
    আপনাদের সামনে আহলুল হারামের জাগরণে খাইরুল উমামের নেতৃত্বের দ্বিতীয় পর্ব উপস্থাপন করছি; যেখানে আমরা উল্লেখ করেছি জাজিরাতুল আরবের নব্য ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি ও মুসলিম উম্মাহর অনেক সন্তান সম্পর্কিত চেপে রাখা বাস্তবতাসমূহ; যেখানে এসে জড়ো হয়েছে শত্রুদের সকল প্রবঞ্চনা ও দালালদের সকল বিশ্বাসঘাতকতা এবং যা নিয়ে জালিয়াতি করা ও যার বিকৃতি সাধনের ঠিকাদারি গ্রহণ করেছে সৌদি সরকার৷ ফলে এমন প্রজন্মের আবির্ভাব হওয়া শুরু হয়েছে, যারা হারামাইন শরীফের দেশের ইতিহাসের সাথে পরিচিত হচ্ছে একমাত্র সৌদি পরিবারের কাছ থেকে৷ যারা নিজেদের ইতিহাস নিজহাতে লিখেছে যাকে খুশি ওপরে তোলার জন্য, যাকে খুশি অধীনস্থ বানানোর জন্য, যাকে খুশি মর্যাদায় উন্নীত করার জন্য এবং যাকে খুশি অবজ্ঞা ও তুচ্ছজ্ঞান করার জন্য৷
    তাই জাজিরাতুল আরবের জনগণের সামনে ইতিহাস বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরা আমরা নিজেদের জন্য আবশ্যক মনে করছি, যেন আমাদের দেশের জালেমরা কি পরিমাণ জুলুম করে যাচ্ছে তারা তা আঁচ করতে পারে; যেন তারা তাদের এমন অনেক অধিকার সম্পর্কে অবগত হতে পারে, যা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে ও যা আজ স্বঘোষিত "উলুল আমর" তথা অভিভাবকদের অধিকার বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে; এবং আমরা যেন সে অধিকারসমূহ পুনরুদ্ধারে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাতে পারি৷
    ইতিহাস বিষয়ক শিক্ষা একজন মুসলিমের জীবনে বিরাট গুরুত্ব বহন করার কারণে কুরআনুল কারীমে আমাদের নিকট পূর্ববর্তী উম্মতদের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এবং একাধিক জায়গায় ইতিহাস ও অতীতের লোকদের সংবাদ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা ও পর্যালোচনা করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
    আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
    قل سيروا في الأرض ثم انظروا كيف كان عاقبة المكذبين
    অর্থাৎঃ বলে দিনঃ তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে।
    (সূরা আনআম: ১১)
    অন্যত্র বলেনঃ
    قل سيروا في الأرض فانظروا كيف كان عاقبة الذين من قبل كان أكثرهم مشركين
    অর্থাৎঃ বলুন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।
    (সূরা রুম: ৪২)
    আল্লামা ইবনে খলদুন রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ “কেননা ইতিহাসশাস্ত্র হচ্ছে এমন এক শাস্ত্র, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এক জাতি থেকে আরেক জাতি পালাক্রমে যার চর্চা করে থাকে এবং যেখানে এসে সকল কাফেলা যাত্রাবিরতি করে থাকে ও উষ্ট্রী বেঁধে থাকে...”৷ এক পর্যায়ে তিনি বলেনঃ “এবং তার অভ্যন্তরীণ পর্বে রয়েছে সৃষ্টিজগতের জন্য চিন্তা, গবেষণা ও পরিতোষণ৷ তার মূলনীতিসমূহ অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং তা হচ্ছে ঘটনাসমূহের ধরন ও হেতু সম্পর্কে একটি গভীর জ্ঞানপাত্র৷ ফলে তা হেকমত ও প্রজ্ঞা অর্জনের সুপ্রতিষ্ঠিত উৎপত্তিস্থল এবং তা এর উপযুক্ত যে, তাকে হেকমত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ ইলমের কাতারে গন্য করা হবে৷”
    আগের পর্বে আমরা জাজিরাতুল আরব কী পরিমাণ গুরুত্ব বহন করে তা উল্লেখ করেছি, যে গুরুত্ব আমাদের শত্রুদেরও নজর এড়াতে পারেনি৷ তাই যে সুপারপাওয়ার সমগ্র বিশ্বের উপর তার প্রভাব বিস্তার করার স্বপ্ন দেখে, সে জাজিরাতুল আরবের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করাকে সারাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি মনে করে৷
    ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে উসমানিয়া খেলাফত তথা অটোমান সাম্রাজ্যের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দী শক্তি ছিল বৃটেন, যা জাজিরাতুল আরবের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তখন ক্ষিপ্রগতিতে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডগুলো থেকে উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদেরকে বহিষ্কার করে দিয়েছিল৷ বৃটেন এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কুয়েত গভর্নর মুহাম্মাদ আছ-ছাবাহকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং তার স্থলে বৃটেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু মুবারক আছ-ছাবাহকে ক্ষমতায় বসায়৷ এর দ্বারা বৃটেনের উদ্দেশ্য হল কুয়েতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং বৃটিশদের অনুগামী একটি সুরক্ষিত এলাকা তৈরি করা ও সেখান থেকে উসমানিয়াদেরকে অপসারণ করা৷ এটা ছিল উসমানিয়া খেলাফতের সাথে ভবিষ্যৎ সংঘর্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আর ঐ লোকটাকে কি আপনারা চিনেন, যে কুয়েত থেকে হারামাইন শরীফের দেশে বৃটিশ ক্রুসেডারদের প্রভাব অনুপ্রবেশের পথ সুগম করে দিয়েছিল? সে হচ্ছে আব্দুল আযীয বিন সৌদ, যে বৃটিশদের প্রতি মনোনিবেশ করে বৃটিশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেছিল৷ তার এই অনুরোধ বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল দারুণভাবে৷ কেননা নজদ-ই ছিল একমাত্র অঞ্চল, যা বৃটিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল এবং উসমানিয় খেলাফতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইবনে রশিদের দখলে ছিল৷
    আব্দুল আযীয বৃটেনের সম্মতি পেয়েছিল এবং বেশিদিন তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি; এরইমধ্যে তার অনুগত চল্লিশজনের একটি সেনাদল কুয়েত থেকে রিয়াদ অভিমুখে বেরিয়ে পড়ে, যা তখন উসমানিয়া খেলাফতের মিত্র রশিদী আমিরগণের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল৷ সেসময় জাজিরাতুল আরবের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় অঞ্চল তাদের রাজত্বের আওতাধীন ছিল, যা উত্তরে হাইল থেকে শুরু করে মাঝখানে কাছীম হয়ে দক্ষিণে রিয়াদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল৷
    ইবনে সৌদ ও তার সৈনিকরা অবিচার ও বিশ্বাসঘাতকতাকে আবরণ বানিয়ে রাতের অন্ধকারে রশিদীদের ওপর আক্রমণ করে এবং সেই প্রাসাদ অভিমুখে অগ্রসর হয়, যেটিতে ইবনে রশিদের প্রতিনিধি আ’জলান থাকতেন৷ তারা তাকে অবরোধ করে ও তার দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে সবধরনের অন্যায় সাধন করে এবং উসমানিয়া খেলাফতের এই মিত্রকে হত্যা করে রিয়াদ দখল করে নেয়৷ এ হামলাটিই ছিল জাজিরাতুল আরবে সৌদ পরিবারের প্রথম পদচিহ্ন, যা ইবনে সৌদ নিজের প্রভাব বিস্তারে উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করেছিল। এটি সংঘটিত হয়েছিল ১৩১৯ হিজরী মোতাবেক ১৯০২ ঈসায়ী সালে৷
    সৌদি উপন্যাসগুলো এই রণাঙ্গনের যাবতীয় শরিয়তগর্হিত কাজগুলো যেমনঃ বৃটিশদের খুশি করার জন্য উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের প্রতি জুলুম-আগ্রাসন চালানো, অন্যায়ভাবে মুসলমানদের হত্যা করা ও তাদের নিষ্পাপ রক্ত প্রবাহিত করা, ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছে এবং এরচেয়ে আগে বেড়ে আব্দুল আযীয যে উসমানিয়া খেলাফতকে বিক্রি করে দিয়েছে ও যার বৈধতার স্বীকারোক্তি সে দিত, সেই উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের প্রতিনিধির প্রাসাদকে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্মৃতিসৌধে রূপান্তর করেছে, যা অচিরেই একটি তীর্থস্থানে রূপ নেবে৷
    আব্দুল আযীয বিন সৌদ উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যায়৷ সে নজদের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে এবং তার হাতে কয়েকটি শহরের পতন ঘটে ও কাছীমকে সে উভয়পক্ষের মধ্যকার একটি ভয়াবহ উত্তপ্ত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে লড়াই অব্যাহত রাখে৷
    ইবনে সৌদের পক্ষ থেকে উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের বিরুদ্ধে বারংবার এ সকল আক্রমণ পরিচালনা করা সত্ত্বেও মমতাময়ী উসমানিয়া খেলাফত ক্রমাগতভাবে ইবনে সৌদের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছিলেন দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি এবং যুদ্ধের ইতি টানার প্রচেষ্টা স্বরূপ৷
    এক্ষেত্রে উসমানিয়া খেলাফত কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেঃ
    ইবনে সৌদ কাছীমের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার পর উসমানিয়া নেতৃত্ব তাকে কাছীম ও দক্ষিণ নজদের গভর্নর হিসেবে মেনে নেয়৷ প্রাথমিকভাবে তাকে কাছীমের জেলা অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এবং এরপর তার প্রতি সদয় হয়ে তাকে উসমানিয়া খেলাফত কর্তৃক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়৷
    ১৩৩১ হিজরীর জুমাদিউস সানি মাস মোতাবেক ১৯১৩ ঈসায়ী সনের মে মাসে ইবনে সৌদ সৌদি আরবের উসমানিয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যার অধীনে উসমানিয়াগণ নিশ্চিত করেন যে, আব্দুল আযীয পাশা উসমানিয়া ফরমান অনুযায়ী নজদের গভর্নর নিযুক্ত হয়েছেন৷
    উসমানিয়া খেলাফত ভূপৃষ্ঠে ঘটমান বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করতো ও ইবনে সৌদের সাথে একবার মতৈক্যে পৌছার পরও ধারাবাহিকভাবে তার বিশ্বাসঘাতকতা করতে থাকা, বৃটিশদের ছত্রছায়ায় তার ঘুরঘুর করা ও উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের সাথে তার ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া দেখে আশ্চর্যবোধ করতো৷ ফলে ইবনে সৌদ যখন কুয়েতিদের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হল ও সকল বৃটিশদের সমর্থন করতে লাগলো, যারা উসমানিয়াদের কর্তৃক ইবনে রশিদকে সহায়তা করাকে কুয়েতে অবস্থিত নিজেদের স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরুপ মনে করতো, তখন উসমানিয়াগণ তাদের মিত্র ইবনে রশিদের নিকট সৈন্য-সামান্ত ও সরঞ্জামাদি প্রেরণ করতে শুরু করেন৷
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের সাথে সাথে সুপারপাওয়ারগুলোও সেজন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে৷ তাই উসমানিয়া কর্মকর্তাগণ উভয় পক্ষের মাঝে সন্ধি স্থাপন এবং উভয়ের প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি সামরিক সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করবে, এই প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করার জন্য প্রয়াস চালিয়েছিলেন৷
    ইবনে সৌদ উসমানিয়া খেলাফতের আহবানে সাড়া দিয়ে তাদের সাথে সন্ধি করতে একমত হয়েছিলেন এবং ১৩৩২ হিজরীর জুমাদিউস সানি মাস মোতাবেক ১৯১৪ ঈসায়ী সনের মে মাসে ইবনে সৌদ ও উসমানিয়াদের মাঝে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ তাতে ধার্য করা হয় যে, উসমানিয়া ফরমান অনুযায়ী নজদ ইবনে সৌদের অধিকৃত অঞ্চল সমূহের মধ্যেই বহাল থাকবে এবং বংশপরম্পরাক্রমে তা তার পুত্র ও নাতিদের হাতে হস্তান্তর করা হবে৷ পাশাপাশি এ চুক্তি ইবনে সৌদকে বারণ করেছিল কোন বিদেশী শক্তির সাথে চুক্তিমূলক কোন সম্পর্ক রাখতে বা তার অধিকৃত অঞ্চলসমূহে অবস্থিত বিদেশী কাউকে কোন বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে৷
    সুতরাং, ইবনে সৌদ, আব্দুল আযীয পাশা তখন "উপ গভর্নর" ও উসমানিয়াদের বন্ধু ছিল এবং উসমানিয়াগণও তাকে নিজেদের অধীনস্থ উসমানিয়া কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করত৷ কিন্তু উসমানিয়াদের উল্লিখিত পদক্ষেপের বিনিময়ে ইবনে সৌদ কি এই অবস্থা বহাল রেখেছিল?
    নজদ অঞ্চলে উসমানিয়া ক্ষমতার পতন ঘটাতে বৃটিশরা স্থানীয় মিত্রদের সহায়তাকেও আবশ্যক বলে গণ্য করছিল৷ তাই তাদেরকে তারা সন্ধান করতে লাগল এবং তারা নিজেদের জন্য বিশ্বস্ত এজেন্ট ও সহযোগীরূপে ইবনে সৌদ ব্যতিত আর কাউকে খুঁজে পেলো না৷ এক বছর যেতে না যেতেই সে উসমানিয়া খেলাফতের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে ফেলল৷ উসমানিয়া খেলাফত ও মুসলিম উম্মাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে বৃটিশদের সন্তুষ্ট করে ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়৷ অথচ সে জানে যে, এ চুক্তিবদ্ধ হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে উসমানিয়া খেলাফতের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া এবং বৃটিশ ও তার মিত্রদেরকে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়া৷ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনি কতইনা উত্তম কর্মবিধায়ক৷
    পরবর্তীতে আব্দুল আযীয বিন সৌদকে তার বিশ্বাসঘাতকতার প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে বৃটেন বিভিন্ন ধরণের সহায়তা করেছিল৷ সহায়তাসমূহের মধ্যে আর্থিক সহায়তা, সামরিক সহায়তা, প্রতিকূল অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা, উপদেশ-পরামর্শ, পরিকল্পনা এবং অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে তাকে উপকৃত করা ছিল উল্লেখযোগ্য৷
    যেসকল বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ইবনে সৌদকে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হেনরি আরভিন শেক্সপিয়ার, যে আব্দুল আযীযকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা করে দিকনির্দেশনা প্রদান করত ও তার কাজকর্ম পরিচালনা করত৷ শেক্সপীয়ার কর্তৃক আব্দুল আযীয বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান ও সেগুলোকে বিভিন্ন সারিতে বিন্যাসকরণ হচ্ছে ইবনে সৌদের প্রতি বৃটিশদের সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তার জ্বলন্ত প্রমাণ৷
    ১৩৩৩ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাস মোতাবেক ১৯১৫ ঈসায়ী সনের জানুয়ারী মাসে ইবনে সৌদ ও ইবনে রশিদের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ ইহুদী বংশোদ্ভূত বৃটিশ ক্যাপ্টেন শেক্সপিয়ার ছিল আব্দুল আযীয ও তার সাথে থাকা তার সহমনা অন্যান্য বাহিনীর কমান্ডার৷ এ যুদ্ধেই উসমানিয়া খেলাফতের মিত্ররা শেক্সপিয়ারকে গুলি করে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন ও তাকে তরবারী দ্বারা কেটে ফেলেছিলেন৷ তেমনিভাবে হত্যা করেছিলেন তার সেক্রেটারীকেও৷ তখন শেক্সপিয়ারের হত্যার উপর আব্দুল আযীয তার বৃটেনস্থ মহামান্য ব্যক্তির নিকট অনুতপ্ত হয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের বৃটিশ প্রতিনিধির নিকট একটি শোকবার্তা প্রেরণ করেন৷

    প্রিয় ভাইয়েরা!
    আমাদের হারামাইন শরীফের জনগণ থেকে এই ঐতিহাসিক বাস্তবতাগুলো লুকিয়ে রাখার জন্য সৌদি সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে থাকে৷ তারা জানে যে, এগুলো প্রকাশিত হয়ে গেলে তাদের বৈধতা বাতিল হয়ে যাবে, আমাদের মহানুভব জনগণ তাদের অন্যায়-নিপীড়ন নিরবে সয়ে যাবে না এবং তারা মেনে নিতে পারবে না যে, ক্রুসেডারদের দালালরা তাদের ওপর শাসন চালাবে৷ কাজেই বিভিন্ন উপায়ে তারা সে ইতিহাসকে লোকচক্ষুর আড়াল করে রাখা ও তাতে জালিয়াতি করা শুরু করেছে৷ কোমলমতি শিশুদেরকে তাদের শিক্ষা পাঠ্যক্রমে বাল্যকাল থেকেই সৌদ পরিবার সম্পর্কে একটি উৎকৃষ্টতর প্রতিকৃতি দেওয়া হয়৷ তাদের সামনে এসকল বাস্তবতাসমূহের খুব সামান্যই তুলে ধরা হয়৷ আর যখন তুলে ধরা হয় তখন সে আলোচনা থাকে আইনসম্মত চরিত্রায়ন ও বাস্তব উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত৷ সুতরাং সেক্ষেত্রে তাদেরকে বলা হয়না যে, সেটি ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের নিকট সাহায্য কামনা করা ও সেটি ছিল আব্দুল আযীয কর্তৃক উসমানিয়া খেলাফতের হাতে কৃত বাইআতকে ভঙ্গ করা; বলা হয়না যে, আব্দুল আযীয ঐ সমস্ত পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের একজন, যারা মুসলমানদের খলিফা হিসেবে যার নিকট বাইআত গ্রহণ করেছে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করেছে ও দ্বীনের দুশমনদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে৷ তাদের নিকট এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ওয়াজিব হওয়ার শরয়ী দলিল বর্ণনা করা তো দূরের কথা বৈধ হওয়ার দলিলও বর্ণনা করা হয়না৷ যেমনিভাবে প্রচলিত উপন্যাসগুলো সৌদি রাজ্যের আবির্ভাবকে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট তথা সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় উল্লেখ না করে একটি আঞ্চলিক আক্রমণ হিসেবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। অথচ আব্দুল আযীয বৃটেনের পক্ষে উসমানিয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, যার চাক্ষুষ পরিণাম ছিল ফিলিস্তিনে বৃটিশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, আর এটাই ছিল ইসরাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মসৃণ পন্থা৷
    সে যুদ্ধে ক্রুসেড বিদ্বেষ ও ইহুদিবাদ প্রবণতা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার ছিল৷ এ কারণেই মিশর আক্রমণের কমান্ডার লর্ড এলেনবি ১৩৩৬ হিজরীর সফর মাস মোতাবেক ১৯১৭ ঈসায়ী সনের ১০ই ডিসেম্বর সৈন্যদেরকে জেরুজালেমের সম্মানার্থে পদব্রজে সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে জেরুজালেমে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। সেখানেই তার প্রসিদ্ধ বিবৃতিটি প্রদান করেন যে, “এবারই ক্রুসেডের অবসান হলো”৷ তেমনিভাবে বৃটিশ গুপ্তচর টমাস এডওয়ার্ড লরেন্সকে এই উৎসবে শরীফ হুসাইনের নিকট উপস্থিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে সে৷
    এভাবে ইতিহাস আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, ইবনে সৌদ আব্দুল আযীয পাশা ক্রুসেডারদের সুহৃদ বন্ধু এবং তাদের জন্যে সে হারামাইন শরীফ দেশে প্রবেশ করার পথ সুগম করে দিয়েছিল৷ মুসলমানদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালনা করতে সে তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেছিল ও এই ন্যাক্কারজনক কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য তাদেরকে সে সুযোগ করে দিয়েছিল৷ এর বিনিময়ে সে উসমানিয়াদের সহিত বৈরী আচরণ ও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, তাদের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছিল ও তাদের নিষ্পাপ রক্ত প্রবাহিত করেছিল এবং উসমানিয়া খেলাফতের হাতে নিজেদের বাইআত ও উসমানিয়া খেলাফতের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করেছিল, যেন বৃটিশদের সাথে সে সুষ্ঠুভাবে চুক্তি সম্পাদন করতে পারে৷
    কিন্তু এতেই কি ইবনে সৌদ পরিতৃপ্ত হয়েছিল?
    ইবনে সৌদ পূর্বোক্ত সকল বিশ্বাসঘাতকতা ও অপমানজনক কর্মকাণ্ডতেই পরিতৃপ্ত হয়নি; বরং বৃটিশদের নথিপত্রে সেগুলো নথিভুক্তকরণেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল৷ সে সম্পর্কিত আলোচনা আমরা পরবর্তী পর্বে অন্তর্ভুক্ত করেছি৷
    হে আল্লাহ্! এ উম্মাহর জন্য আপনি এমন হেদায়াতের পথ সুদৃঢ় করে দিন, যা আপনার আনুগত্যকারীদের সম্মানিত করবে এবং আপনার নাফরমানদের লাঞ্ছিত করবে এবং যা মানুষদেরকে সৎকাজের প্রতি নির্দেশ করবে ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে৷
    হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের পাপ ও আমাদের কাজে যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে তা মোচন করে দিন, আর আমাদেরকে দৃঢ় রাখুন এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন৷
    আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!

    Comment


    • #3

      আহলুল হারামের আন্দোলনে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব
      মজলিস:৩

      সৌদি রাজপরিবারঃ ফিলিস্তিনের বিক্রেতারা
      শাইখ হামজা বিন উসামা বিন লাদেন হাফিজাহুল্লাহ


      ডাউনলোড করুন
      dock


      pdf





      الحمد لله الكريم الذي أسبغ نعمه علينا باطنةً وظاهرةً، العزيز الذي خضعت لعزته رقاب الجبابرة، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له شهادةً نرجو بها النجاة في الدار الآخرة، وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله صلى الله عليه وعلى آله وصحبه وسلم تسليمًا كثيرًا
      সমস্ত প্রশংসা মহানুভব আল্লাহর জন্য, যিনি জাহেরি ও বাতেনি উভয়ভাবেই আমাদের উপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করেছেন; এবং সমস্ত প্রশংসা পরাক্রমশালী আল্লাহর জন্য, যার ক্ষমতার সামনে দাপটশালীদের গর্দান ঝুঁকে পড়ে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, এমন সাক্ষ্য যার উসিলায় আখেরাতে নাজাতের আশা করি। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাঁর উপর, তাঁর পরিবার-সাথীবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং ব্যাপক শান্তি বর্ষণ করুন!
      আম্মা বা’দ,
      বিশ্বের সকল প্রান্তের মুসলিম ভাইবোনদের প্রতি এবং জাজিরাতুল আরবে অবস্থানরত স্বজাতির প্রতি-
      আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
      নিশ্চয়ই ফিলিস্তিন এবং মাসজিদুল আকসা হলো মুসলিম উম্মাহর প্রথম (প্রধান) সমস্যা। মুসলিমদের হৃদয়ে তার প্রতি মহান সম্মান রয়েছে, ফলে বেতনভুক্ত গাদ্দার শ্রেণী ফিলিস্তিনকে বিক্রি করতে লোভাতুর হয়ে গেল। তাও আবার তা রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা ও প্রতিরক্ষা করার মুখোশ পরিধান করে! তাদের মধ্যে রয়েছে সউদ পরিবার। আর তাদের নেতৃত্বে রয়েছে তাদের গুরু আব্দুল আজিজ। যার পক্ষ থেকে সৌদি আরবের লিখিত বর্ণনায় লেখা হয়েছে যে, “ফিলিস্তিনের সমস্যা নাকি তার অন্তরকে পেরেশান করে তুলছে। তার দৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধান হলো, ইহুদিরা যে ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল তাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে আনা। এটা নাকি ফিলিস্তিনে অবস্থিত আরব নেতাদের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ার কারণ হবে। সে ইহুদিদের জন্য সাহায্য পাঠিয়েছিল; তাদের উত্থানের জন্য অস্ত্র ও সম্পদ দিয়ে সহায়তা করেছিল”।
      এটা হলো লিখিত বর্ণনা। এভাবেই সৌদি রাজপরিবারের আকাশে যেই উদিত হবে সেই এমনটা লিখবে এবং ইহুদীদের দস্তরখানায় বসবে।
      ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন-
      وفي الخلفاء وآبائهم وأهلهم قوم أعرض أهل الجرح والتعديل عن كشف حالهم، خوفًا من السيف والضرب، وما زال هذا في كل دولة قائمة يصف المؤرخ محاسنها ويغضي عن مساوئها، هذا إذا كان المحدث ذا دين وخير، فإن كان مداحًا مداهنًا لم يلتفت إلى الورع، بل ربما أخرج مساوئ الكبير وهناته في هيئة المدح
      “খলিফাবর্গ, তাদের পিতৃপুরুষ ও বংশের মাঝে এমন জাতের লোকও রয়েছে, যারা তরবারী ও প্রহারের ভয় দেখিয়ে ন্যায় ও অন্যায়ের বিষয়ে যাচাইকারীদেরকে তাদের অবস্থা যাচাই করা থেকে বারণ করে। এমনটি সকল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। যেগুলোর গুণাবলী ও মন্দ বিষয়াবলী সম্পর্কে ইতিহাসবেত্তাগণ বর্ণনা করেছেন। এমনটি তখন হয়ে থাকে, যখন বর্ণনাকারী দ্বীনদ্বার ও কল্যাণকামী হবে। আর যদি সে তোষামোদকারী ও চাটুকার হয়, যে কিনা খোদাভীতির ভ্রুক্ষেপ করে না, তাহলে ভিন্ন কথা। বরং তারা তো বিশাল ভুলকেও প্রশংসনীয় করে বর্ণনা করে। একজন তার দোষ ধরে দিলে অপরজন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে পড়ে।”
      আল্লাহ তা‘আলা ইমাম যাহাবীর উপর রহম করুন। তিনি তাঁর যামানার শাসক ও ইতিহাসবিদদের কথা বলেছেন। তিনি মুসলিমদের বাইতুল মুকাদ্দাসকে বিক্রয়কারী, মুসলিমদের বিভক্তকারীদের ব্যাপারে বলেননি।
      আমার দাবী উপস্থাপনের পর আমি কিছু বাস্তবতা তুলে ধরতে চাই, যেগুলো মুস্তাকিল বা স্বতন্ত্র সূত্রসমূহের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে, যেন আমরা সেগুলোর মাঝে ও আলে সউদের জাল বর্ণনার মাঝে প্রাচীরসম পার্থক্য ও সুবিশাল ব্যবধান দেখাতে পারি।
      নিশ্চয়ই ফিলিস্তিনের খেয়ানতের ক্ষেত্রে ও তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ক্ষেত্রে আব্দুল আজিজের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। সে-ই আরবের প্রথম শাসক যে ইহুদিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে গ্রহণ করেছে, ফিলিস্তিনের বিপ্লব থেকে পেছনে থেকেছে। এই বিষয়ের বাস্তবতা ও মজবুত প্রমাণ অনেক আছে। তার থেকে কয়েকটির প্রতি ইঙ্গিত করছি-
      ১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানী খেলাফত থেকে পৃথক থাকা, উসমানী রাষ্ট্রকে অপছন্দ করা, এমনিভাবে সে তা ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইসলামি বিশ্বকে খণ্ডবিখণ্ড করতে চেষ্টা চালিয়েছে। আমি এই সিরিজের ‘দ্বিতীয় মজলিসে’ উসমানিয়া সাম্রাজ্যের মিত্র ‘রাশেদ পরিবার’ এর বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের ব্যাপারে কিছু আলোচনা করেছি।
      ২. ফিলিস্তিন যখন ইহুদিদের কাছে অর্পণ করা হয়েছে তখন সে এর বিরোধীতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যখন তার নিকট ইহুদিদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে তখন সে বলেছে-
      إذا كان لاعتراضي هذه الأهمية فأنا أعترف لكم ألف مرة بإعطاء اليهود وطنًا في فلسطين أو غير فلسطين وهذا حق واقع
      “যেহেতু এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তাই আমি তোমাদের (ইহুদিদের) জন্য এক হাজার বার ফিলিস্তিনে অথবা অন্য কোথাও একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার স্বীকারোক্তি দিচ্ছি, আর এটাই বাস্তবায়ন হবে।”
      অতঃপর সে নিজ হাতে লিখেছে-
      أنا السلطان عبد العزيز بن عبد الرحمن الفيصل السعود أقر وأعترف ألف مرة للسير برسي كوكس مندوب بريطانيا العظمى؛ لا مانع عندي من إعطاء فلسطين للمساكين اليهود أو غيرهم كما ترى بريطانيا التي لا أخرج عن رأيها حتى تصيح الساعة
      “আমি সুলতান আব্দুল আজিজ বিন আব্দুর রহমান ফয়সাল আস-সউদ। আমি হাজার বার গ্রেট বৃটেনের স্যার পারসি কক্স এর প্রতিনিধিত্বকে স্বীকার করছি। দরিদ্র ইহুদিদেরকে বা অন্যদেরকে ফিলিস্তিন দিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছি না, যেমনটি আপনি বৃটেনের বেলায় দেখতে পান। আর আমি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসব না যদিও সময় ক্রন্দন করে বলতে থাকে”। [1]
      আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, ঐক্য ভেঙ্গে যাওয়ার পরে –যা ভাঙ্গার ব্যাপারে এই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল- তার উপদেষ্টা এবং ব্রিটিশ সহকারী জন ফেলবি তার সাথে কৌতুক করে বলেছিল, “হয়তো এই স্বাক্ষরই ফিলিস্তিন থেকে সমগ্র ফিলিস্তিনি জনগণের স্থানচ্যুতি সৃষ্টি করবে।”
      আবদুল আজিজ তখন অট্টহাসি হাসা অবস্থায় বলেছিল-
      تريد أن أغضب بريطانيا لأن عددًا من أهل فلسطين سيشرد؟ أهل فلسطين لا يستطيعون حمايتي إذا لم تحمني بريطانيا من الأعداء، ولتحرق فلسطين بعد هذا
      “তুমি কি চাও আমি বৃটেনকে ক্ষেপিয়ে তুলি, কেননা কিছু ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করা হয়েছে? ফিলিস্তিনিরা আমার সাহায্য করতে পারবে না যখন বৃটেন আমাকে শত্রুদের থেকে সাহায্য না করবে। অতঃপর ফিলিস্তিনকে পুড়িয়ে ফেলা উচিত।”
      সুবহানাল্লাহ! আপনার পবিত্রতা হে আল্লাহ! এটা তো মহা অপবাদ!! তুমি কি ফিলিস্তিনকে পুড়িয়ে দেবে যেন আব্দুল আজিজ তার চেয়ারে স্থায়ী হয়? তুমি কি ফিলিস্তিন পুড়িয়ে দেবে যেন আব্দুল আজিজ তার মনিবকে খুশি করতে পারে? তুমি কি মসজিদে আকসাকে পুড়িয়ে দেবে, যেটা দুই কেবলার একটি। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেরাজের রাতের ভ্রমণস্থল এবং প্রস্তরের গম্বুজকে পুড়িয়ে দেবে আব্দুল আজিজকে সাহায্য করার জন্য? আল্লাহর শপথ! কখনোই নয়। বরং সউদ পরিবারের শাসন থেকে তাকে পৃথক করা হবে, রাষ্ট্রে আল্লাহর শরিয়ত প্রতিষ্ঠা করা হবে, ফিলিস্তিনকে সাহায্য করা হবে, মসজিদে আকসাকে স্বাধীন করা হবে ইনশাআল্লাহ।
      ৩. ফিলিস্তিনি বিপ্লবের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া। ১৩৫৪ হিজরি মোতাবেক ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিনে একই সময়ে বৃটেন ও আন্তর্জাতিক ইহুদি শক্তির বিরুদ্ধে মহান বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। বৃটেন ও ইহুদিদের জুলুম, অবিচার, অন্যায়, অপরাধ ও অস্ত্রের মুকাবেলায় মুসলিমরা চমৎকার বীরত্ব প্রদর্শন করে সামনে এগুচ্ছিল। এসময় আব্দুল আজিজ তার দুই ছেলে সউদ ও ফয়সালকে নিয়ে ফিলিস্তিনের মুকাবেলায় সৈনিক প্রেরণ করে বৃটেনের সাথে কৃত ওয়াদাকে সত্যে প্রমাণিত করতে যে, কিছুতেই ফিলিস্তিনিদের স্বপ্ন পূরণ হতে দেওয়া যাবে না। অন্তর প্রশান্তির জন্য ফয়সালের পক্ষ থেকে নিজেদের মাঝে বিপ্লব ভাগ করে নিল। ফলে বিপ্লবের সূচনা হলো। কিন্তু ফিলিস্তিনের কবি আব্দুর রহিম মাহমুদ চুপ থাকতে পারল না। সে আব্দুল আজিজের সম্মুখে দাঁড়িয়ে গেল এবং ব্যথিত হয়ে বলতে লাগল-


      يا ذا الأمير أمـام عينك شاعر

      * * *

      ضمت على الشكوى الحريرة أضلعه
      المسجد الأقصى أتيت تزوره؟!

      * * *

      أم جئت من قبل الضيـاع تودعه؟
      وغدًا وما أدراك لا يبقى سوى

      * * *

      دمـع لنـا يهمي وسن نقرعـه

      “হে আমির ওয়ালা! তোর সামনে এক কবি আছে,
      তপ্ত অনুযোগ তার বলকে জমিয়ে দিয়েছে।
      মসজিদে আকসার উপর জুলুম করতে এসেছিস?
      নাকি ভূ-সম্পত্তির যে অঙ্গীকার রয়েছে তার আশায়?
      আগামীকাল তুই জানিস না, কিছুই থাকবে না
      আমার গড়িয়ে যাওয়া অশ্রু আর ঘর্ষণ করা দাঁত ছাড়া।”
      জন ফেলবি ২৪/৪/১৯৫৫ ইং., ১৩৭৪ হি. রমজান মাসে যাহরানে প্রদত্ত একটি বক্তৃতায় ব্রিটিশ নেতৃত্বের প্রতি আনন্দ প্রকাশ করে বলেছিল-
      لقد سرت القيادة البريطانية أعظم سرور ونلنا على إثرها ثلاثة أوسمة تقديرية، الأول لي، والثاني لعبد العزيز، والثالث لفيصل، لهذا الدور، بل لهذا الفاصل التاريخي الذي قام به صديقها الحميم عبد العزيز آل سعود، ووجهت إليه رسالة شكر تفيض بالعواطف لعمله الذي عجز عنه الجميع، كما سر قادة اليهود في فلسطين لهذا الجهد السعودي الجبار
      “বৃটিশ নেতৃত্বে আমি বেশ আনন্দ প্রকাশ করছি। এর প্রতিক্রিয়ায় আমরা তিনটি মেডেল পেয়েছি। প্রথমটি আমার, দ্বিতীয়টি আব্দুল আজিজের, তৃতীয়টি ফয়সালের। এই ভূমিকার জন্য বরং এই ঐতিহাসিক চূড়ান্ত ঘটনার জন্য, যা নিয়ে বৃটেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু আব্দুল আজিজ আলে সউদ সরব হয়েছেন। তার নিকট কৃতজ্ঞতার বার্তা প্রেরণ করছি যে, যে কাজে সকলে অক্ষম হয়েছে সে কাজকে তিনি সম্পর্কের দ্বারা পরিপূর্ণ করেছেন। যেমনিভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদি নেতৃবৃন্দ সৌদি ক্ষমতাশীনদের প্রচেষ্টার কারণে খুশি প্রকাশ করেছে।”
      ইবনে সউদের ফিলিস্তিনি সমস্যায় মনোযোগ না দেওয়ায়, এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাওয়া সত্বেও এটা আরো সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হলো। তার প্রসিদ্ধ এক উক্তি “ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের জাতীয়তা সম্পর্কে আমি ভালো করেই জানি”-তার অবস্থানকে আরও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে।
      ১৯৪৮ সালে প্রথম আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইবনে সউদ কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি, শুধু তার সেনাবাহিনীর একটি দুর্বল ব্যাটালিয়ন পাঠানো ব্যতীত, যারা মিশরীয় সেনাবাহিনীর এক ইউনিট হিসাবে কাজ করেছে।
      পূর্বের বর্ণনা দ্বারা আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, আব্দুল আজিজ-ই হলো প্রথম আরব শাসক, যে ইহুদিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে মেনে নিয়েছে, যে ফিলিস্তিনি বিপ্লবের বিপরীতে বিপ্লবের সূচনা করেছে। তার সিদ্ধান্ত হলো বৃটেনের সিদ্ধান্ত; যদিও কেয়ামত সংঘটিত হয়ে যায়। সে ইহুদিদের প্রতি খুবই দয়াপ্রবণ। তার দৃষ্টিতে ইহুদিরা হলো দরিদ্র, ফিলিস্তিনে তাদের অধিকার রয়েছে। আর তার দৃষ্টিতে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করতে কোনো সমস্যা নেই। ফিলিস্তিনকে পুড়িয়ে ফেলা উচিত, মসজিদে আকসাকে পুড়িয়ে ফেলা উচিত, শুধু বৃটেনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় এবং আব্দুল আজিজ ও তার সন্তানদের সাহায্য করার জন্য।
      এভাবেই আমাদের কাছে সৌদি সংস্করণের মধ্যকার পার্থক্য এবং ইতিহাসের আসল বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে যায়। সৌদি রাজপরিবারের খেয়ানত ফিলিস্তিনি ট্রাজেডিতেও থেমে থাকেনি বরং তা চলমান ছিল, এমনকি তা একটি বক্র মানহাযে পরিণত হয়েছে। তারা বড় থেকে পরবর্তী বড়জন উত্তরাধীকার সূত্রে তা পেয়েছে।
      আব্দুল আজিজের রাজত্ব জাতিসংঘের মৌলিক অংশ। আব্দুল আজিজের প্রকাশ্য উজির ছিল তারই ছেলে ফয়সাল। সে সাংগঠনিক কাজে শরিক ছিল এবং সে তার বাবার প্রতিশ্রুতির সাথে একমত ছিল, যা নেতৃত্ব এবং সদস্য দেশগুলোর অঞ্চলের জন্য সম্মান বহন করে। অর্থাৎ ককেশাস ও মধ্য এশিয়ার মুসলমানদের উপর সোভিয়েত দখলদারিত্বের, প্যালেস্টাইনের উপর ইসরাইলের, ক্যুটা ও মেলিলার (Ceuta & Melilla) উপর স্পেনের এবং পূর্ব তুর্কিস্তানের উপর চীনাদের দখলদারিত্বের সম্মান বহন করে। ফাহদ বিন আব্দুল আজিজ রাবাত শীর্ষক সম্মেলনে তাঁর উদ্যোগ উপস্থাপন করে, যার মধ্যে সে অধিকাংশ ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের ক্ষমতা দখলের স্বীকারোক্তি দেয় এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজও তার উদ্যোগ উপস্থাপন করে, তাও অধিকাংশ ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলি দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেয়। সুতরাং এটি ফিলিস্তিনের প্রতি আলে সউদের সুস্পষ্ট নীতি, কেননা তারা অধিকাংশ ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের দখলদারিত্বকে স্বীকারোক্তি দেয় এবং ফিলিস্তিনের বাকী অংশ মাহমুদ আব্বাসের ন্যায় খেয়ানতকারীর জন্য অর্পণ করে।
      ঐতিহাসিক এই বাস্তবতার আলোকে আমাদের কাছে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আলে সউদ পরিবারের শাসকগোষ্ঠী ইসলামের কিছু নয়। আর তাদের যে দাবী দরবারী আলেমরা প্রচার করে অর্থাৎ তারা হলো মুসলিমদের অভিভাবক, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হারাম-এই সবগুলেই মিথ্যা দাবী। এর ভিত্তিও বাতিল। দ্বীন, উম্মাহ ও পবিত্র নিদর্শনসমূহের সাথে খেয়ানতকারী এই শাসক পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ওয়াজিব। এটি তাদের অপসারণ এবং নির্মূল করার জন্য সহায়ক হবে এবং এর পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত হবে।
      ربنا لا تزغ قلوبنا بعد إذ هديتنا وهب لنا من لدنك رحمةً إنك أنت الوهاب.
      ربنا آتنا في الدنيا حسنةً وفي الآخرة حسنةً وقنا عذاب النار.
      হে আমাদের রব! হেদায়াত দানের পরে আমাদের অন্তরগুলো বক্র করে দেবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের রহমত দান করুন! নিশ্চয়ই আপনি মহান দাতা। হে আমাদের রব! আমাদের আপনি দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন, জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করুন!
      وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين
      এবং আমাদের সর্বশেষ দাবী হলো সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক।

      [1] তারিখে আলে সাউদ-৯৫১
      আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!

      Comment


      • #4
        আহলুল হারামের আন্দোলনে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব
        মজলিস: ৪

        সৌদি রাজপরিবার ও ব্রিটেনের গোপন আঁতাতের ইতিহাস
        - শাইখ হামযা উসামা বিন লাদেন হাফিজাহুল্লাহ


        ডাউনলোড করুন

        pdf


        docx






        الحمد لله الكريم الذي أسبغ نعمه علينا باطنةً وظاهرةً، العزيز الذي خضعت لعزّته رقاب الجبابرة، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له شهادةً نرجو بها النجاة في الدار الآخرة، وأشهد أنّ محمدًا عبده ورسوله صلى الله عليه وعلى آله وصحبه وسلّم تسليمًا كثيرًا.
        হামদ ও সালাতের পর...
        হারামাইনের অধিবাসী ও সকল মুসলিম ভাইয়েরা!
        আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
        বিগত মজলিসে ইবনে সৌদের ক্রুসেডারদের সাথে পারস্পারিক বন্ধুত্বের চুক্তি, মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা, উসমানী খেলাফতের প্রতি শত্রুতা ও তার বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং বাইয়াত ভঙ্গ করা, ক্রুসেডারদের সাথে জোটবদ্ধ হওয়া নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এসব কিছুই ইবনে সৌদ করেছে, যাতে খেলাফতের আনুগত্য থেকে বের হয়ে ইংরেজদের আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
        আমি আরো বর্ণনা করেছিলাম যে, এ সকল পূর্ববর্তী বিশ্বাসঘাতকতা করাকেও ইবনে সৌদ যথেষ্ট মনে করেনি। আর সে এগুলিকে ইতিহাসের পাতায় নথিভুক্ত করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিল, যেহেতু ইতিহাস কারো পক্ষালম্বন করে না। এভাবেই সে নিজের জন্য অজ্ঞতাসারে এক কালো অধ্যায় লিপিবদ্ধ করেছে এবং আল-উকাইর চুক্তিগুলি বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে ...!

        আপনারা কি জানেন আল উকাইরের চুক্তিগুলি কী?
        তা হল- কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব এবং মু‘মিনদের থেকে দায়মুক্তি ও দেশকে ক্রুসেডারদের কাছে হস্তান্তরের চুক্তির নাম। পরোক্ষভাবে ও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি রাষ্ট্র দখল করার নামান্তরই বটে!
        আপনাদের সমীপে এ চুক্তির কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি-
        প্রথম চুক্তিটি সম্পাদিত হয় ১৩৩২ হিজরী মোতাবেক ১৯১৪ ইংরেজী সালে। তাতে আব্দুল আজিজ উসমানি খিলাফতের বিরুদ্ধে ব্রিটেনকে সম্ভাব্য সকল প্রকার সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে সম্মত হয়। অপরদিকে ব্রিটেনও অঙ্গীকার করে যে, তারা যে কারো পক্ষ থেকে আসা সকল প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আব্দুল আজিজকে রক্ষা করবে।
        ***
        আর দ্বিতীয় চুক্তিটি ছিল দারিন কনভেনশন, তা ছিল ক্রুসেডারদের কাছে দেশ বিক্রির চুক্তি। দিনটি ছিল ১৮ই সফর ১৩৩৪ হিজরী মোতাবেক ১৯১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর। উপসাগরীয় অঞ্চলে ব্রিটিশ স্বীকৃত প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পার্সি কক্স ও জন ফিল্বি ...! আর সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ইবনে সৌদ নিজে...!
        উক্ত কনভেনশনের প্রস্তাবনায় উভয় পক্ষের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত চলমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে স্থাপন ও উন্নীত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়, যাতে করে তাদের পারস্পারিক স্বার্থ জোরদার হয়।
        এবার আসুন! কনভেনশনে উত্থাপিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি লক্ষ করি:
        ১.
        ব্রিটিশ সরকার ইবনে সৌদ শাসিত অঞ্চলগুলোকে স্বীকৃতি দেবে এবং ইবনে সৌদকে তার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাধীন শাসক হিসাবেও স্বীকৃতি দেবে। যদি তার অথবা তার পরবর্তী শাসক দ্বারা নির্বাচিত উত্তরাধিকারী কোন ব্যক্তি কোনভাবে বৃটিশ সরকারের বিরোধী না হয়, বিশেষত: এ চুক্তির শর্তাবলীর বিপরীত না হয়, তবে তিনি তার জাতির রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে বিবেচিত হবেন এবং তার পরে তার পুত্র/নাতী তার উত্তরাধিকারী হবেন।
        সহজ ভাষায় শাসক হতে হলে ব্রিটেনের সন্তুষ্টি আবশ্যক। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:
        } وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ {
        অনুবাদ: “ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা আপনার প্রতি কখনও সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না আপনি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করেন” (সূরা বাকারাহ- ১২০)

        ২.
        যদি কোন বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক ইবনে সৌদের নিয়ন্ত্রিত কোন রাষ্ট্র বা তার মিত্র কোন রাষ্ট্র ব্রিটিশ সরকারের পর্যালোচনা ছাড়াই আক্রান্ত হয়, তাহলে ব্রিটিশ সরকার ইবনে সৌদের সহযোগিতা করবে।
        আর তা হল মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য প্রার্থনা করা, কেননা, এই চুক্তির প্রথম টার্গেট হচ্ছে উসমানি খিলাফত এবং তাঁর মিত্রগণ।
        শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) ঈমান ভঙ্গের দশটি কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে অষ্টম নাম্বার কারণ বলেছেন:
        الثامن: مظاهرة المشركين ومعاونـــتهم على المسلمين، والدليل قوله تعالى: { وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ {
        অনুবাদ:- ঈমান ভঙ্গের অষ্টম কারণ: “মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য-সহযোগিতা করা।” আর এর স্বপক্ষে দলীল হচ্ছে: “তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহন করলে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না”। (সূরা: আল মায়েদাহ-৫১)

        ৩.
        ইবনে সৌদ এই কথার উপর সম্মত হয় যে, অন্য কোন বিদেশী জাতি-গোষ্ঠি বা রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক অথবা চুক্তি করা থেকে বিরত থাকবে। উপরন্তু ইবনে সৌদের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রে অন্য যে কোন রাষ্ট্র কর্তৃক অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা হলে অবশ্যই সাথে সাথে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদেরকে অবহিত করবে।
        আর এখানেই... ইবনে সৌদ তার সক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে মুসলিম উম্মাহর প্রতি যে আনুগত্য করেছিল তা ভঙ্গ করেছে। নিজেকে ক্রুসেডারদের প্রতিনিধি এবং তাদের প্রহরী হিসাবে দাড় করিয়েছে!
        অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
        } وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ {
        অনুবাদ: “মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীগণ একে অপরের বন্ধু।” (আত তাওবাহ-৭১)
        আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
        أوثق عرى الإيمان: الموالاة في الله والمعاداة في الله والحبّ في الله والبغض في الله عزّ وجلّ.
        অনুবাদ: ঈমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ শাখা হচ্ছে; “(কারো সাথে) বন্ধুত্ব ও শত্রুতা করা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই, এমনিভাবে ভালোবাসা ও ঘৃণাও একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার জন্যই হবে।”

        ৪.
        ইবনে সৌদ বৃটিশ সরকারের সম্মতি ব্যতিত তার অঞ্চলের কোন অংশকে কোন বিদেশী রাষ্ট্র অথবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের অধিবাসীর কাছে অর্পণ, বিক্রয়, বন্ধক বা ভাড়ায় দেয়া, ভাগ করা অথবা কোনভাবে তা ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে চুক্তিবদ্ধ থাকবে এবং কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সর্বদা বৃটিশ সরকারের পরামর্শ মেনে চলবে, এ শর্তের ভিত্তিতে যে, তাতে বৃটিশ সরকারের নিজস্ব স্বার্থের কোন ক্ষতি করা ব্যতীত।
        এভাবে ইবনে সৌদ দেশকে শত্রুদের কাছে সোনার তশতরীতে করে সমর্পণ করেছে এবং এই চুক্তিতে প্রাঞ্জল ও কার্যকর ভাষা দান করেছে। আরেকটি ব্যাপার হলো: ইবনে সউদের নিয়ন্ত্রনাধীন অঞ্চলগুলো বৃটিশ সরকারের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে, সুতরাং তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী তা ব্যবহার করতে পারবে। তবে এই শর্তে যে, ইবনে সৌদ তাতে বৃটিশদের প্রতিনিধিত্বকারী এবং তাদের বসানো শাসক বলে বিবেচিত হবে।
        উভয়পক্ষ তড়িঘরি করে চুক্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তে উপনীত হয় এবং ইবনে সৌদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে বৃটিশদের পক্ষ অবলম্বনকারী হিসাবে ঘোষনা করে এবং সুনিশ্চিতভাবে এই অঙ্গীকার করে যে, সে বৃটিশদের মিত্রদেরকে আক্রমন করবে না এবং তাদের শত্রুদেরকে সহায়তা করবে না।
        অপরদিকে ইংল্যান্ড অঙ্গীকার করে যে, উসমানী সাম্রাজ্য বিভাজনের পর এই রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আর কোন আলোচনায় বসবে না। তখন আব্দুল আজিজ স্পষ্টভাবে তা অনুমোদন করে। এই চুক্তি স্বাক্ষর করার সময় সে ১০০০ রাইফেল, ২০,০০০ অষ্ট্রেলিয়ান পাউন্ড পেয়েছে। এমনিভাবে বৃটেন মাসিক ভাতা হিসাবে আরো ৫,০০০ অষ্ট্রেলিয়ান গোল্ড পাউন্ড, মেশিনগান ও রাইফেলের চালান নিয়মিত প্রদান করবে বলে অঙ্গীকার করে।
        এটাই হল তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্রের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সউদের অবস্থা!
        লক্ষ করুন- (আল্লাহ আপনাদেরকে রহম করুন) কিভাবে ইবনে সউদ নিজেকে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির এক অনুগত প্রতিনিধি এবং তাদের দালালে পরিণত হয়েছে। উসমানী খিলাফতের মিত্রদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য এবং বৃটিশদের পক্ষ থেকে সম্পদ ও অস্ত্র পাওয়ার বিনিময়ে সে সব কিছু ছেড়ে দিয়েছে!
        এই সব কিছু করার পরেও কি সে মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ হতে পারে?

        কক্স এবং ইবনে সৌদের মধ্যে এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকে তৃতীয় আল উকাইর চুক্তিতে স্বাক্ষর করা পর্যন্ত, যা স্বাক্ষরিত হয় আল উকাইর বন্দরে ১৩৪১ হিজরী রবিউসসানী মাস মোতাবেক ০২ ডিসেম্বর ১৯২২ সালে। শেষবার যখন কক্স আল উকাইর বন্দরে আসে, তখন তার সাথে সম্পাদিত চুক্তির ব্যাপারে সম্পর্কের প্রকৃতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইবনে সৌদ একাধিকবার এভাবে বলেছে যে:
        “আমরা এ চুক্তির পুনরাবৃত্তি করতে পারতাম না, যদি না আমাদের মাঝে আমাদের বন্ধু ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন প্রতিনিধি না থাকত”
        তাছাড়া সে “স্যার” পার্সি কক্সকে ভালোবাসে এবং তাকে সম্মান করে।
        ***
        যখন ইবনে সৌদ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে, কক্সের জন্য তার অন্তরে ভালোবাসা রয়েছে, তখন ব্রিটেন ইবনে সৌদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। আর ইবনে সৌদ তার আন্তরিকতার প্রমান দেখাতে গিয়ে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আনুগত্য করাকে বাদ দিয়েছে, উম্মাহকে বলিদান করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডার ব্রিটেনকে সাহায্য করেছে। সুতরাং ইবনে সৌদ তাদের প্রহরী হয়ে গিয়েছিলেন এবং পুরস্কার হিসাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে তাদেরকে বিপুল সাহায্য করেছিলেন।
        ***
        উপরে উল্লেখিত ডারেন কনভেনশনকে পরবর্তী সময়ে ইবনে সৌদ হারামাইনের ভূমির বাকি অংশে বিস্তৃত করে, অন্যান্য আভ্যন্তরীণ অনেক কারণ থাকা সত্বেও বৃটিশ সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখা ছিল এর একটি প্রধান কারণ, যাতে করে ইবনে সৌদ রাষ্ট্রের অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার শক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আর সে নিজেকে অন্য আমীরদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করতে পারে। আব্দুল আজিজের প্রভাব বিস্তার করার ক্ষেত্রে এটার একটি বিশেষ ভূমিকা ছিল, যার কারণে ইবনে সৌদের অভিযানে সে বিশেষভাবে অবদান রাখে এবং তার বিজয় লাভ হয়...!
        আজ এই পর্যন্তই, এটা নিয়ে আমরা পরবর্তী পর্বে আরো আলোচনা করার চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ.
        رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ.
        رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ.
        অনুবাদ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপ এবং আমাদের কাজে সীমালংঘন আপনি ক্ষমা করুন এবং আমাদের পা সুদৃঢ় রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সূরা আলে ইমরান-১৪৭)
        হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করিও না; এবং আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় হতে রক্ষা করুন। (সূরা ইউনূস-৮৫,৮৬)

        وآخر دعوانا أن الحمد لله ربّ العالمين
        আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!

        Comment


        • #5
          আহলুল হারামের আন্দোলনে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব
          মজলিস: ৫
          এই পর্ব মুল আরবি-ই রিলিজ হয়নি... হলে আমরা অনুবাদ প্রকাশ করবো ইনশা আল্লাহ...
          আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!

          Comment


          • #6
            আহলুল হারামের আন্দোলনে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব
            মজলিস: ৬

            "সৌদি রাজপরিবার ও আমেরিকার গোপন আঁতাতের ইতিহাস"
            শাইখ হামযা উসামা বিন লাদেন হাফিজাহুল্লাহ


            ডাউনলোডঃ
            পিডিএফ (1.2 MB)


            ওয়ার্ড (1.1 MB)




            الحمد للهِ الكريمِ الذي أسبغ نعمه علينا باطنة وظاهرة، العزيزِ الذي خضعت لعزّتِهِ رقاب الجبابرةِ، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له شهادة نرجو بها النجاة في الدارِ الآخرةِ، وأشهد أنّ محمدا عبده ورسوله صلى الله عليهِ وعلى آلهِ وصحبهِ وسلّم تسليما كثيرا.

            أما بعد:

            সব জায়গার মুসলিম ভাইদের প্রতি এবং হারামাইনের দেশে আমাদের অধিবাসীদের প্রতি-
            আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

            এটি ‘আহলুল হারামের আন্দোলনে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব’-এর ৬নং হালাকা। এখানে আমরা জাযিরাতুল আরবের সম্মানিত অধিবাসীদেরকে রাষ্ট্রের তাগুতী শাসকবর্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন, তাদেরকে অপসারণ ও তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করেছি। আমরা উদ্বুদ্ধ করেছি খ্রিষ্টানদের কবল থেকে ওহির কেন্দ্রকে স্বাধীন করতে, ইয়াহুদীদের খপ্পর থেকে হারামাইন শরীফাইনকে হেফাজত করতে এবং এমন সত্যনিষ্ঠ ইসলামী নেযাম প্রতিষ্ঠা করতে, যার মাধ্যমে ইনসাফ ছড়িয়ে পড়বে, শূরা ব্যবস্থা প্রসারিত হবে, জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ জীবন্ত হয়ে উঠবে, গরিব-মিসকিন ও উপযুক্তদের উপর রাষ্ট্রীয় সম্পদ বণ্টনের ব্যবস্থাপনা তৈরি হবে, যাতে করে দেশের জনগণ রাব্বে কারীমের শরীয়তের ছায়াতলে সম্মানের সাথে থাকতে পারে।

            আমরা পূর্ববর্তী হালাকায় উল্লেখ করেছি যে, আল্লাহর ইচ্ছায় অচিরেই হারামাইনের দেশের পরিবর্তন পুরো উম্মাহর উপকারে আসবে। এ পরিবর্তনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য তাদের সম্মান-মর্যাদা ও নেতৃত্বের পথে ফিরে আসতে মূল উপকরণের ভূমিকা পালন করবে।

            আমরা আলোচনা করেছি হারামাইন শরীফাইনের প্রতি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন আগ্রাসী শত্রুদের বিস্তৃতির ভয়াবহতা সম্পর্কে; অবাঞ্ছিত আলে সাউদ শুধু সেসব আগ্রাসীদের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে-ই নয়, বরং তাদের কোনো এক দলের মোকাবেলা করতেও ব্যর্থ। আমরা পরিস্কার করে এও বলেছি যে, আলে সাউদ ও তার বাহিনী হারামাইন শরীফাইনকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার যোগ্য নয়।

            জাযিরাতুল আরবে আমাদের অধিবাসীদের ওপর কর্তব্য হল, তারা যেন শক্তি ও সরঞ্জাম মওজুদ করেন, ইয়াহুদী অন্যান্য শত্রুদের কবল থেকে হারামাইন শরীফাইনকে রক্ষা করার প্রস্তুতি নেন এবং তাদের মুজাহিদ ভাইদেরকে জানে-মাল, ঈমান ও হিকমাহর দ্বারা শক্তিশালী করেন।

            হে মুসলিম ব্যবসায়ী! এখনই সময় হারামাইন শরীফাইনের রক্ষাকারী দলকে সজ্জিত করে সাফল্য অর্জন করার। হে মুসলিম যুবক! শক্তি-সম্বল থাকুক বা নাই থাকুক বেরিয়ে পড় তোমার মুজাহিদ ভাইদের উদ্দেশ্যে; ঈমানের ছায়াতলে শক্তি যোগাতে, তাদের থেকে উপযুক্ত অভিজ্ঞতা শিখতে। সম্মান-মর্যাদার অধিকারী তাঁরাই। তাঁরাই ঈমান ও হিকমার অধিকারী, বিশ্বস্ততা ও বীরত্বের অধিকারী। আমরা এমনটাই মনে করি। তাদের জন্য আল্লাহ তা’আলাই যথেষ্ট।

            পূর্ববর্তী হালকায় আব্দুল আযীয ইবনে সাউদ, যে তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্রের শাসক ও নেতা এবং ভ্রষ্টতার দিকনির্দেষক- তার সম্পর্কেও আমরা এমনটাই আলোচনা করেছিলাম। সেইসাথে বলেছিলাম উসমানী খেলাফতের সাথে তার কী সম্পর্ক, খেলাফতের সাথে কী প্রতারণা সে করেছিল, বাইয়াত ভঙ্গ ও খেলাফতের সাথে সে কীভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। আলোচনা করেছিলাম তার সাথে ব্রিটেনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বের কথা। যে বন্ধুত্বকে ব্রিটেন স্বাগত জানিয়ে ছিল, খুব পছন্দ করেছিল। এমনকি আব্দুল আযীয ইবনে সাউদ বলেছিল, কিয়ামত পর্যন্ত সে ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে না। বেদুইন ইখওয়ানের সাথে তার সম্পর্ক এবং তাদের শাসনকাল খতম হওয়ার পর তাদের সাথে তার প্রতারণার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলাম। আলোচনা করেছিলাম ফিলিস্তিন নিয়ে তার প্রতারণা, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইয়াহুদী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি, ফিলিস্তিনী সম্পত্তি ও তার উপর অবরোধ আরোপের ব্যাপারে তার অবস্থানের কথা। আরো আলোচনা করেছিলাম ইয়াহুদীদের সাথে তার গভীর ভালোবাসা ও আমাদের ফিলিস্তিনী অধীবাসীদের উপর তার কঠোর অবস্থানের কথাও।

            আল্লাহর ইচ্ছায় আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়, ‘আব্দুল আযিয ইবনে সাউদের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক।’

            তো তার মাঝে ও ব্রিটেনের মাঝে সব ধরণের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ও মজবুত ঐক্য গঠনের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন ব্রিটেনের শক্তি ফুরিয়ে এল এবং শক্তির সে জায়গাটি দখল আমেরিকা করল, তখন তার সম্পর্ক ব্রিটেন থেকে আমেরিকার দিকে স্থানান্তরিত হল। মুজাহিদদের অপারেশনের কারণে আলহামদুলিল্লাহ আমেরিকার শক্তিও এখন অস্তমিত হওয়ার পথে।

            এ বিষয়ে চুক্তিনামাগুলো আমেরিকার সাথে তার সম্পর্কের ব্যাপারটি আরো শক্তিশালী করে। ১৪/০২/১৯৪৫ ইংরেজি সাল মোতাবেক ১৩৬৪ হিজরীর রবিউল আওয়ালে মার্কিন ক্রুজার কুইন্সির উপর আব্দুল আযিয ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের মাঝে সংঘটিত আলোচিত মিটিংয়ে তারা সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে, সৌদি সরকার আমেরিকার প্রতি আনুগত্যের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে এবং আলে সাউদের বন্ধুত্ব ব্রিটেন থেকে আমেরিকার দিকে স্থানান্তরিত হবে।

            এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র ডকুমেন্টসের দু’টি রিপোর্ট রয়েছে, যা লিখেছে আলে সাউদের প্রতি আমেরিকা কর্তৃক নির্ধারিত মন্ত্রী উইলিয়াম এডি। যার একটিতে বলা হয়েছে, ‘দু’পক্ষের মাঝে দ্রুত গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বাদশা এও বলে, দায়িত্বের ক্ষেত্রে সে প্রেসিডেন্টের যমজ ভাই...। রুজভেল্ট যখন আব্দুল আযিযকে চাকা বিশিষ্ট একটি চেয়ার উপহার দিল তখন আব্দুল আযিয শান্ত দিলে বলেছিল, ‘আমি অবশ্যই একে দৈনিক ব্যবহার করব এবং উপহার প্রদানকারী ও আমার মহান পবিত্র বন্ধুর ভালোবাসার কথা স্মরণ করব।’

            উইলিয়াম এডি তার রিপোর্টে লিখেছিল, ইবনে সাউদ তাকে একাধিকবার বলেছিল, ‘এমন কারো সাথে আমার আজো সাক্ষাত মিলেনি, যে ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান ও ভদ্রতায় প্রেসিডেন্টের বরাবর হতে পারে।’

            আব্দুল আযিয শায়খ হাফেজ ওয়াহবাকে বলেছিল, ‘আমার পুরো জীবনের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সাথে মুলাকাত।’

            রুজভেল্টের সাথে আব্দুল আযিযের সাক্ষাতটি কোনো সাধারণ সাক্ষাত ছিল না; বরং তা ছিল ভয়ানক একটি সাক্ষাতকার, যা মুসলিম উম্মাহর উপর বিপদ ও মসিবতকে ডেকে আনে। এমনকি আমেরিকার সাথে বন্ধুত্বের কথা আলে সাউদ ব্রিটেনের চেয়ে আরো জোড়ালোভাবে প্রকাশ করে। ইবনে সাউদ মার্কিন জাহাজের জন্য সৌদিবন্দরগুলো ব্যবহার এবং বড় একটি মার্কিন বিমানঘাঁটি নির্মাণের অনুমোদন দেয়। মার্কিন সেনাদের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদে একটি এলাকা ভাড়া দেয়, যা পরবর্তীতে সবধরণের সুবিধাসহ আলে সাউদের কাছে ফিরে আসে।

            এটি এমন বিপজ্জনক পরিকল্পনা ছিল, যা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যমানা থেকে এ পর্যন্ত হারামাইনের দেশে খ্রিষ্টান সেনাদের উপস্থিতির এই প্রথম ঘটনা। এ কাজের সাথে অতীতকালে আব্দুল আযিয আবু রিগাল নামে আরেকজন অতিবাহিত হয়েছে। চরম বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তার নামের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল ‘আল-খা-ইনুল আকবার’।

            এমনিভাবে রুজভেল্ট ও ইবনে সাউদ ‘আমেরিকান-সৌদি বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠান’ গড়ে তুলে, যা এখনো পর্যন্ত বহাল রয়েছে। এর কারণেই হারামাইনের দেশ অধিকৃত হয়ে আছে। প্রবেশ করেছে মার্কিন আর্মি ইউনিট ও ব্যাটেলিয়ন। হত্যা করছে লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে। কেড়ে নিচ্ছে মুসলিম উম্মাহর, গরিবদের ধন-সম্পদ, যার হিসাব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এসবের মাধ্যমে হচ্ছে আব্দুল আযিয ইবনে সাউদ, যে এই নিকৃষ্ট রীতিকে তার ছেলে-সন্তান, নাতি-পুতিদের জন্য চালু করেছে এবং এই লাঞ্ছনাকর ইতিহাস নিজ হাতে রচনা করেছে।

            এ হালকাগুলোতে যা আলোচনা হল, তা থেকে পরিস্কার হয়ে গেল যে, আব্দুল আযিযের সময়ে বিশ্বব্যাপী তিনটি শক্তি বিদ্যমান ছিল। তাদের সাথে সে যে আচরণ করেছে তা এই,

            ১. উসমানী শাসন।
            উসমানী শাসনের সাথে সে প্রতারণা করেছে, তার বাইআত ভঙ্গ করেছে এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।

            ২. ব্রিটিশ ক্রুসেডার সাম্রাজ্য।
            ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে সে চুক্তি করেছে, তার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করেছে, এর কারণে ফিলিস্তিনকে পরিত্যাগ করেছে।

            ৩. মার্কিন ক্রুসেডার সাম্রাজ্য।
            মার্কিন সাম্রাজ্যকে সে হারামাইনের দেশে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।

            সুতরাং আব্দুল আযিয উসমানী খেলাফতের সাথে প্রতারণা করল, ফিলিস্তিনকে পরিত্যাগ করল, হারামাইনের দেশে শত্রুদের অনুপ্রবেশের দরোজা খুলে দিল, পবিত্র তিন মসজিদকে ক্রুসেডারদের হাতে বিক্রি করে দিল।

            আমাদের জন্য আল্লাহ তা’আলাই যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কার্যনির্বাহী।

            তাওহীদরাষ্ট্রের প্রবর্তক এমন হতে পারে!?

            সারকথা হল, আব্দুল আযিয ইবনে সাউ হলদ শাসক পরিবারের দাদা, হারামাইনের দেশে ক্রসেডার সৈন্য-শক্তিকে প্রবেশের অনুমতি দানকারী, ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি সবচে’ বড় প্রতারক – যার সমতুল্য অন্য কোন দৃষ্টান্ত হতে পারে না। সে ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসাকে পরিত্যাগকারী, উসমানী সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী, ব্রিটিশ ও মার্কিন সাম্রাজ্যের অভিভাবক, তাদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপনকারী। সে দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট কাফের ক্রুসেডার রুজভেল্ট সম্পর্কে বলেছিল যে, রুজভেল্ট তার যমজ ভাই, পবিত্র মহান বন্ধু। ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে তার সমকক্ষ কেউ নেই। তার সাথে সাক্ষাত করতে পারাটা তার জীবনের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

            তার সন্তানাদী ও নাতি-পুতি কিয়ামত পর্যন্ত সে পথেই চলবে, যা তাদের বাবা তাদের জন্য এঁকেছিল।

            وإذا كان ربّ البيتِ بالدّفِّ ضارِبا *** فشيمة أهلِ البيتِ الرّقص والطّبل

            ‘যখন বাড়ির মালিক দফ বাজাতে শেখে, তখন বাড়ির অধিবাসীরা নাচ ও তবলায় অভ্যস্ত হয়’


            পরিশেষে আমাকে, সকল মুসলমানকে, বিশেষকরে হারামাইনের মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করে বলছি-

            دروس الـعـزِّ إيمانا
            فلم يضعف ولا لانا
            وقـد عانوا كما عانى
            وما ذلّوا لأعدانا
            فِـدا الإسلامِ قتلانا
            لـم يرضوه سلطانا
            بِغيرِ الــدِّينِ مِيزانا
            وإن نقتل فبشرانا
            ويــوم النّصرِ قد حانا





            رسول الـلـهِ أعـطـانا
            مِـن الكـفّارِ كـم عانى
            ولـلإيـمـانِ أنـصـار
            عـلى الأخشابِ قد حمِلوا
            لهـذا الدِّينِ قد صرِعت
            ولم يـخشوا حِمى الطّاغوتِ
            ونـحن اليوم لا نرضى
            نطـيـع الله لا نـعصِي
            فـعـهد الكـفرِ قد ولى

            ***

            আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে ঈমানের দরস দিয়েছেন।
            কাফেরদেরে পক্ষ থেকে কত কষ্ট সহ্য করেছেন, তারপরও দুর্বল হয়ে যাননি, ভেঙ্গে পড়েননি।
            ঈমানের অনেক সাহায্যকারী রয়েছে, তারাও কষ্ট সহ্য করেছে, যেভাবে তিনি সহ্য করেছেন।
            তারা কাষ্ঠ বহন করেছে, তারপরও শত্রুদের বশ্যতা স্বীকার করেনি।
            ইসলামের অনেক উৎসর্গকারীরা দ্বীনের জন্য শহীদ হয়েছেন।
            তাগুতের দাপটকে ভয় পাননি, তাদের রাজত্বে সন্তুষ্টও ছিলেন না।
            আজো আমরা গাইরে দ্বীনকে মানদণ্ড মানতে রাজি নই।
            আমরা আল্লাহর ইতা’আত করি, তাঁর অবাধ্যতা করি না। নিহত হলেও সুসংবাদ গ্রহণ করি।
            কুফুরীকাল পিছুটান দিয়েছে, সাহয্যের দিন এসে গেছে।


            اللّهمّ أصلِح لنا ديننا الذي هو عِصمة أمرِنا، وأصلِح لنا دنيانا التي فيها معاشنا، وأصلِح لنا آخِرتنا التي إليها معادنا، واجعلِ الحياة زيادة لنا في كلِّ خير، واجعل الموت راحة لنا مِن كلِّ شر.

            ربّنا اغفِر لنا.. ولِوالِدِينا.. ولمن له حقّ الدعاءِ علينا.. ولسائِرِ المسلمِين.

            হে আল্লাহ! আমাদের দ্বীনকে বিশুদ্ধ করে দিন, যা আমাদের আশ্রয়। আমাদের দুনিয়াকে সংশোধন করে দিন, যেখানে রয়েছে আমাদের জীবনব্যবস্থা। আমাদের জন্য আখেরাতকে কল্যানময় করুন, যা আমাদের প্রত্যাবর্তণস্থল। প্রত্যেক ভাল কাজে আমাদের হায়াতকে বাড়িয়ে দিন। সব ধরণের মন্দ থেকে রক্ষা করে আমাদের মৃত্যুকে শান্তিময় করুন।

            হে আমাদের প্রভূ! আমাদেরকে, আমাদের পিতা-মাতাকে, আমাদের উপর যাদের দোয়ার হক রয়েছে এবং সকল মুসলমানকে ক্ষমা করে দিন।

            والله غالِب على أمرِهِ ولكنّ أكثر الناسِ لا يعلمون

            وآخر دعوانا أنِ الحمد للهِ ربِّ العالمِين
            .
            আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!

            Comment


            • #7
              জাজাকাল্লাহ

              Comment


              • #8
                Originally posted by আ:রহিম View Post
                জাজাকাল্লাহ
                সম্মানিত ভাই! লক্ষ্য করুন-
                Originally posted by আবু আব্দুল্লাহ View Post

                ফোরামের সম্মানিত নতুন ও পুরাতন মেম্বার ভাইদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমাদের ফোরামে আরবিতে জাঝাকাল্লাহ খাইরান বাটন যুক্ত করা হয়েছে। নিচের ছবিতে দেখে নিন!

                সম্মানিত ভাইদেরকে আমরা আলাদাভাবে জাঝাকাল্লাহ খাইরান না লিখে বাটন ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করছি। আপনারা আপনাদের ভাইদের অনেক মেহনতের পোস্টে একটু বড় করে কমেন্ট করলে ভাইয়েরা আরও সুন্দর, তথ্যবহুল ও জ্ঞানগর্ভ পোস্ট করতে উৎসাহিত হবেন ইনশা আল্লাহ। সামনে থেকে শুধু জাঝাকাল্লাহ খাইরান কমেন্ট এলাও করা হবে না ইনশা আল্লাহ...

                Comment


                • #9
                  জাঝাকুমুল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা ভাইদের সকল খেদমতকে কবুল করে নিন। সবাইকে জিহাদের পথে দৃঢ়তা দান করুন। শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। তাদের প্রতি আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাদেরকে দ্বীনের পথে আরো অগ্রগামী হওয়ার তাওফিক দান করুন। ...আল্লাহুম্মা আমীন
                  ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                  Comment


                  • #10
                    তথ্য বহুল কিন্তু!

                    তথ্য বহুল,তবে ৫ নাম্বার রিলিজ হলো না।আবার ৬ নাম্বারটা হয়ে গেল!
                    অবিরাম করাঘাতে বদ্ধ দরজাও খুলে যায়।

                    Comment


                    • #11
                      আল্লাহ শাইখকে হেফাজত করুন... আমিন।

                      Comment


                      • #12
                        allah amadarka sohid hisaba kobul koran amin.

                        Comment


                        • #13
                          আল্লাহ তায়ালা আমাদের পাঠিয়েছেন যাতে আমরা মানুষকে গোলামদের ইবাদত থেকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিয়ে যাই। এবং দুনিয়ার সঙ্কীর্ণতা থেকে আখেরাতের প্রশস্ততার দিকে এবং অন্যান্য ধর্মের জোর- জুলুম থেকে ইসলামের ইনসাফের দিকে নিয়ে যাই। আল্লাহ আমাদের তাঁর দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে মানুষকে তাঁর দিকে আহবান করি। সুতরাং যে তা কবুল করে নিবে, আমরা তাঁর থেকে ফিরে যাবো, আর যে অস্বীকার করবে, আমরা তাঁর সাথে যুদ্ধ করতে থাকবো, এমনকি আমরা আল্লাহর ওয়াদার দিকে ফিরে যাবো।

                          Comment


                          • #14
                            অনেক উপকারী কিছু বই ৷

                            Comment


                            • #15
                              জাঝাকাল্লাহ খাইরান। হে আল্লাহ আপনি শায়েখকে হেফাজত করুন।হে আল্লাহ ভাইদের সকল খেদমতকে কবুল করে নিন। সবাইকে জিহাদের পথে দৃঢ়তা দান করুন। শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। তাদের প্রতি আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাদেরকে দ্বীনের পথে আরো অগ্রগামী হওয়ার তাওফিক দান করুন। ...আল্লাহুম্মা আমীন

                              Comment

                              Working...
                              X