তালিবান-যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সমঝোতাঃ মিথ্যাচারের স্বরুপ উন্মোচনে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ
ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বাস করতে চায় যে, আফগানিস্থানে তাদের সমাপ্তি আনন্দদায়ক হবে। ডিফেন্স এন্ড স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে তালিবানের সাথে তাদের একটি “রাজনৈতিক বোঝাপড়া” হওয়া দরকার। কিন্তু এটা আসলে বাস্তবধর্মী নয়। কারণ, আফগানিস্থানে কোনঠাসা হয়ে পড়া জালেম এ্যামেরিকা তালিবানদের ভূমিতে যেভাবে তাদের পরিসমাপ্তি দেখতে চায় তা নির্ভর করছে একমাত্র এবং কেবলমাত্র ইসলামিক ইমারাত আফগানিস্থান তথা তালিবানদের উপর। আর এই জুলুমের লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে এ্যামেরিকার পরিসমাপ্তি তালিবানদের ইচ্ছানুযায়ীই হবে। তালিবানদের সেই ইচ্ছায় না কোন পিছুটান আছে আর না কোন ছাড়।
নিচের তিনটি দিক বিবেচনা করলেই বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহঃ
১. আফগানিস্থানে ইসলামীক ইমারাত পরিপূর্ণরুপে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বিইযনিল্লাহ। গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে দোহা বৈঠকে তালিবান প্রতিনিধিগণ যখন তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছিলেন, তখন তারা বলেছিলেন, "ইসলামীক ইমারাহ অফ আফগানিস্থান" এর "রাজনৈতিক কার্যালয়" থেকে তাদের প্রতিনিধিরা এ্যামেরিকানদের সাথে দেখা করেছিল। সেপ্টেম্বর মাসের অনুরুপ চলতি মাসে মস্কো কনফারেন্সে তালিবান নিজেকে 'ইসলামিক ইমারাত' বলে ৬১ বার পরিচয় দিয়েছে। তাদের মুখে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসলামিক ইমারাতের নাম ঘোষণা করাই প্রমাণ করে এসব বৈঠক আদতে কোন চুক্তি নয়, বরং এগুলো জুলুমবাজ যুক্তরাষ্ট্রের মুখে একেকটি উন্মুক্ত চাপড়। আর তালিবান আফগান কেন্দ্রিক কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া-পাওয়াকে থোরাই কেয়ার করে।
ওবামা প্রশাসন, যে তালিবানদের সাথে সমঝোতায় যেতে উন্মুখ ছিলো সে নিজেই স্বীকার করেছে যে, ২০১৩ সালে কিছু নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে তালিবান তাদের দোহা অফিস উন্মুক্ত করে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে এরকমঃ
“তালিবান দোহাশাখা (দূতাবাস) নিজেদেরকে ইসলামিক ইমারাতের অংশ দাবি করতে পারবে না।“
কিন্তু এটাই ছিলো তালিবানদের প্রথম কাজ যখন তারা ২০১৩ সালে দোহা অফিস উন্মুক্ত করে। সেই সময় তালিবান প্রতিনিধি “ইসলামিক ইমারাত অফ আফগানিস্থান” লিখা ব্যানার উত্তোলন করেই দোহা অফিসের যাত্রা শুরু করে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার আফগান জোটকে চরমভাবে বিব্রত করেছিলো।
এ ঘটনার ঠিক ৫ বৎসর পর বর্তমান সময়েও তালিবান নিজেদেরকে “ইসলামিক ইমারাত অফ আফগানিস্থান” নামে অভিহিত করে – দোহা এবং আফগানিস্থান উভয় জায়গায়। এই অতি সাধারণ বিষয়টি মূলত এ্যামেরিকা পরিচালিত সমঝোতা প্রক্রিয়ার ধ্বংসসাধন করে। ওয়াশিংটন আন্তরিকভাবে চায় তালিবান আসরাফ ঘানির প্রশাসনের সাথে মিটমাট করে নিক, তর প্রশাসনকে বৈধ সাব্যস্ত করুক। কিন্তু তালিবান খুব দৃঢ়ভাবেই আসরাফ ঘানির প্রশাসনকে অবৈধ সাব্যস্ত করে। তালিবানের ভাষ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ইসলামিক ইমারাতই বৈধ। এদিকে বৎসরের পর বৎসর ধরে তারা সমান্তরাল একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা দাঁড় করিয়ে চলেছে।
চলতি বৎসর আগস্টে তালিবান আমির ঘোষণা করেন যে, ভবিষ্যতে তার বাহীনিকে আরো বেশি ভূমি নিয়ন্ত্রণ/ শাসন করতে হবে। অন্যদিকে তালিবান আগত পার্লামেন্টারি ইলেকশনকে বর্জন করেছে এই বলে যে, “এটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করাই তাদের ধর্মীয় দায়বদ্ধতা”।
তালিবানের এই দ্ব্যর্থহীন উক্তিই গণতন্ত্রের ধ্বজ্জাধারী শান্তিকামীদের (!) নিম্নোক্ত উক্তিকে সম্পূর্ণরুপে মিথ্যা প্রমাণিত করে যেখানে বলা হয়েছে - “গতকালের মস্কোর বৈঠকে তালেবানের প্রথম শর্তই ছিলো আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও একটি গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক নির্বাচন করা নিয়ে”।
২. পাকিস্থান তালিবানের সিনিয়র নেতৃত্বকে আশ্রয় দেয়া অব্যাহত রেখেছে। আর এটা পাকিস্থান করে থাকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই। তবে এটি ভিন্ন আলোচনা যা পরবর্তী কোন বৈঠকে পর্যালোচনা করা যাবে ইনশাআল্লাহ। বৎসরের পর বৎসর ধরে পাকিস্থানি মিলিটারি ও ইন্টেলিজেন্স তালিবানের উচ্চ নেতৃত্বদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে হক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যদের সহ। হক্কানী নেটওয়ার্ক আল-কায়দার ঘনিষ্ট সহযোগী যা তালিবান শাসনামলে আরো বেশি শক্তি অর্জন করেছে।
সেপ্টেম্বরে পাকিস্থান স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন প্রেম পাকিস্তানের আচরণে কোন পরিবর্তন আনবে না। ফলে, অনেক তালিবান নেতাই এখন সমগ্র বর্ডার জুড়ে আফগান বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রনে মুক্ত। অনতিবিলম্বে তাদের জন্য কোন হুমকি নেই এবং তাদের লোকদের অস্ত্র সমর্পনেরও কোন বাস্তবসম্মত অনুপ্রেরণা নেই।
৩. তালিবান আল-কায়দাকে ত্যাগ করেনি। মার্কিন সরকার মূলত দাবি করে যে, আলোচনায় বসার আগেই তালেবান আল-কায়েদাকে ত্যাগ করেছে। কিন্তু আল-কায়দার আমীর আইমান আয-যওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ) এখনো তালিবান আমীরের পূর্ণ আনুগত্যে আছেন। আল-কায়দা মূলত তালিবানের ব্যানারেই যুদ্ধ পরিচালনা করছে ইসলামিক ইমারাতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে। বিশ্বজুড়ে আল-কায়দার বিশ্বস্থ ও শক্তিশালী প্রচেষ্টা তালিবানের সফলতার রাস্তাকে আরো দ্রুতগামী করছে বিইযনিল্লাহ। যদিও তালিবান কিছু কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করতে পারে কিন্তু আসল বিষয় হচ্ছে, তালিবান কখনোই আল-কায়দাকে ত্যাগ করবে না ইনশাআল্লাহ যা জুলুমবাজ এ্যামেরিকার একটি অলীক স্বপ্ন বা চাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্রঃ
১. https://www.weeklystandard.com/thoma...9sA9gAKWfurToc
২. www.longwarjournal.org
Comment