একটি রাষ্ট্র যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশের লাভ-ক্ষতির দৃষ্টিকোণ থেকে। সেই পদক্ষেপ কতটা লাভজনক হবে আর কতটা ক্ষতিকর হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে রাষ্ট্রের কর্ণধারদের দূরদর্শিতার উপর। কিন্তু সর্বসাধারণের জান-মাল যেন শাসকশ্রেণীর উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার পেছনে ব্যবহৃত না হয়, সেদিকে দেশের মানুষের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
কিছু দিন আগে পাকিস্তান প্রচার করেছে যে, দেশটিতে দায়েশ সংঘটিত হচ্ছে। যা খুবই শঙ্কার কারণ। অথচ ইতিপূর্বে দায়েশের নামে পাকিস্তানের মাটিতে যেসব হামলা হয়েছে সেগুলোর কোনোটিকেই পাক সরকার দায়েশের হামলা বলে স্বীকার করেনি। বরং জোরালো ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে।
আর আজ যখন দায়েশের কোন তৎপরতা তাদের উৎপত্তিস্থলেও চোখে পড়েনা তখন পাকিস্তান নিজ দেশে দায়েশের উপস্থিতি আবিষ্কার করেছে এবং জোর গলায় প্রচার করছে।
যেসকল দেশে দায়েশের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে বা যেসব দেশ দায়েশ দায়েশ বলে চিৎকার চেঁচামেচি করেছে সেসব দেশের কী পরিণতি হয়েছে তা সকলেরই জানা। সিরিয়া ও ইরাক আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। আফগানিস্তান আমাদের প্রতিবেশী দেশ। চোখ মেলে তাদের অবস্থা দেখে নেয়া খুব কঠিন কিছু নয়।
প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া,ইরান এবং মধ্য এশীয় দেশগুলোর সহমর্মিতা ও আর্থিক সহায়তা লাভের জন্য আফগান সরকার ঘোষণা করেছিল যে দেশটির ৩৩/৩৪ টি প্রদেশে দায়েশ খুবই সক্রিয়। ফলে সেখানে তালেবান বিরোধী যুদ্ধের পাশাপাশি শুরু হয় দায়েশ বিরোধী যুদ্ধ। একটির জায়গায় সৃষ্টি হয় দুটি ফ্রন্ট। এভাবে বহু দেশের সামনে আফগানিস্তানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার দরজা খুলে যায়। এখন আফগান জনগণ বহুমুখী যুদ্ধের মাঝে পড়ে নিষ্পেষিত হচ্ছে। অথচ যতটা হৈচৈ করা হয়েছে, আফগানিস্তানে দায়েশের তৎপরতা তার ধারে কাছেও ছিলনা।
তেহরিকে তালেবান এবং অন্যান্য সংগঠনের নামে আমেরিকার কাছ থেকে পাকিস্তান যে আর্থিক সাহায্য লাভ করত তা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া আমেরিকার দিনকাল খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা। এখন অর্থের নতুন উৎস পেতে পাকিস্তানের মাথায় নতুন রণাঙ্গন খোলার নেশা চেপেছে।
পাকিস্তান সরকারের ভাষ্যমতে পূর্বের লড়াইগুলোতে পঞ্চাশ হাজার নিরাপরাধ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এখন যদি দায়েশ বিরোধী লড়াইয়ের নতুন ফ্রন্ট খোলা হয় তাহলে ভেবে দেখা উচিত হবে যে, যেসব রাষ্ট্র বিদেশিদের হয়ে দায়েশ বিরোধী লড়াই করছে সেসব দেশের পরিণত কী হয়েছে।
সন্দেহ নেই এই যুদ্ধে আগের যুদ্ধের চেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারাবে।
অতীতে পাকিস্তান সরকার চেচেন ও উজবেকদেরকে সঙ্গ দিয়ে রাশিয়ার কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়েছিল। কারণ এরা পরে রাশিয়ার যমদূত হয়ে আবির্ভূত হয়েছিল আর এখন দায়েশের পতাকা তলে সমবেত হয়েছে। ফলে পাক সরকার রাশিয়ার আশির্বাদ ও নগদ নারায়ণ পেতে দায়েশের জুজু দেখিয়ে খাল কেটে কুমির আনতে উঠেপড়ে লেগেছে।
প্রথমে আমেরিকার ডলার পেয়ে গোলামী করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে । আর এখন আমেরিকার বিরাগভাজন হয়ে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনার ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, তাদের অর্থ লিপ্সার বলি হবে সাধারণ নিরাপরাধ মানুষ।
এ লক্ষ্যে প্রথমে রাশিয়ার এক প্রতিনিধি দলকে মিরানশাহে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও শিয়া আলেমদের এক প্রতিনিধি দলকে। তাদের সামনে পেশ করা হয় “অভিযানের সময় উদ্ধার হওয়া” দায়েশের একখানা পতাকা। দাবি করা হয় যে, এই অঞ্চলে দায়েশ তৎপর ছিল। তার প্রমাণ “উদ্ধার” হওয়া এই পতাকা। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালিয়েছি।
অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, মিরানশাহের অভিযান ছিল তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান, ইমারতে ইসলামিয়া এবং হাফেজ গুল মুহাম্মদের দলের জানবায মুজাহিদের বিরুদ্ধে। অপারেশনের নাম ছিল “জরবে আজব”।
তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান, ইমারতে ইসলামিয়া এবং হাফেজ গুল মুহাম্মদের দলের জানবায মুজাহিদগণ এখনো পাকিস্তানের জালিম সরকারের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাখতুনরা সবসময়ই স্বাধীনচেতা। কোন কিছুর বিনিময়েই তারা নিজেদের দ্বীন ও ঈমান বিক্রি করতে প্রস্তুত নয়। এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে,পাকিস্তান দায়েশের নামে তাদেরকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মুহাম্মদ খোরাসানী হাফিযাহুল্লাহ
কেন্দ্রীয় মুখপাত্র, তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান।
৫ই জুমাদাল ঊলা,১৪৪০ হিজরী
১১/০১/২০১৯ ঈসায়ীসূত্র:http://gazwah.net/?p=19190
Comment