চলতি মাসে গত ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডে’তে শ্রীলঙ্কায় চার্চ ও উঁচু মানের হোটেলে সুইসাইডাল হামলা চালানো হয়। এরপর থেকে এই হামলার বিষয়ে নানামুখী মন্তব্য এবং বিশ্লেষণ সোশ্যাল মিডিয়াতে উঠে আসছে। যেগুলোর মধ্যে কোনটা মজার, কোনটা অন্তঃসার শূণ্য, কোনটা তথ্য নির্ভর। আর হলুদ মিডিয়াগুলোর নিউজ দেখে মনে হচ্ছে সুইসাইড এ্যাটাকার মৃত্যুর পর নিজে এসে এক কাপ চা খেতে খেতে নিউজ ডেস্কে বসে হামলা সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট জমা দিয়ে গেছে। তাই ইচ্ছা হলো অধমের মস্তিষ্ককে একটু চিন্তার খোরাক দেই। ফলশ্রুতিতে লিখতে বসার অনুপ্রেরণা। তবে আমার এই সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য এটা না যে হামলার ব্যাপারে শরঈ বৈধতা বা অবৈধতা নিয়ে কথা বলা। তবে, অনুভূতি ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে আমি এটাই বলবো যে, নিঃসন্দেহে আমি এই হামলায় নিহত মুশরিকদের জন্য সামান্যতমও দুঃখিত না। কাফেরদের জন্য দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই যখন কি না মাসজিদুল আক্বসার জন্য, শামের জন্য, জিংজিয়াং প্রদেশ ও তুর্কিস্থানের জন্য, কাশ্মীরের জন্য, আরাকানের জন্য কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখগুলো শুকিয়ে গেছে, যন্ত্রণায় অন্তরগুলো শক্ত হয়ে গেছে।
যাই হোক, মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে দু’টি প্রেক্ষাপট নিয়ে সামান্য আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ। অতঃপর আমরা জানার চেষ্টা করবো কোন্ সে ত্রীভূজ প্রেম কাহিনী যা সানডে ম্যাসাকারের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং কি সেই অশনী সংকেত যা ম্যাসাকারের কারণে দৃশ্যপটে চলে এসেছে। যদিও হিন্দ প্রদেশের মুসলিমরা সামষ্টিকভাবে নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ, নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার মতো ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়েই আসন্ন গাযওয়াতুল হিন্দের একটি পর্যায় অতিক্রম করছে।
প্রেক্ষাপট - ১
“One Belt One Road (OBOR)” তথা “Belt and Rode Initiative (BRI)” নামক এশিয়া-ইউরোপ ভিত্তিক প্রজেক্টের কার্যক্রম শুরু করে চায়নার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মূলত এশিয়ার সাথে ইউরোপকে যুক্ত করার জন্য প্রাচীন বাণিজ্যিক রুটগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০১৩ সালে এই প্রজেক্টের কাজ শুরু করা হয় যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে চীনের সাথে মধ্য এশিয়ার দেশসমূহের এবং ইউরোপ ও ইন্ডো-প্যাসিফিক সমুদ্র তীরবর্তী দেশসমূহের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক রুট তৈরি করা। যেটাকে বলা হচ্ছে সিল্ক রোড বা সিল্ক রুট। আর OBOR/ BRI হচ্ছে মূলত রাস্তা, রেইলওয়ে, তেল পাইপলাইন, বিদুৎ গ্রিড, বাণিজ্যিক বন্দর এবং বিশ্বের অন্যতম অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর নেটওয়ার্ক যা চীনকে সমগ্র বিশ্বের সাথে যুক্ত করবে।
উল্লেখ্য OBOR/ BRI প্রজেক্টকে বিশেষ দু’টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেঃ
=> Belt দ্বারা বুঝানো হচ্ছে “সিল্ক রোড ইকোনোমিক বেল্ট” যা ভূমি ভিত্তিক। এটি চীনকে মধ্য এশিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের সাথে যুক্ত করবে।
=> Road দ্বারা বুঝানো হচ্ছে “২১ শতকের সামুদ্রিক সিল্ক রোড” যা সমুদ্র ভিত্তিক। এটি চীনকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ায় সংযুক্ত করবে।
OBOR/ BRI এর অধীনে ছয়টি ইকোনোমিক করিডোর এবং একটি সামুদ্রিক রুট প্রস্তাব করা হয়েছেঃ
=> New Eurasian Land Bridge. (Connect Western China to Western Russia)
=> China – Mongolia – Russia Corridor (North China to Eastern Russia via Mongolia)
=> China – Central Asia – West Asia Corridor (Western China to Turkey via Central and West Asia
=> China – Indochina Peninsula Corridor (Southern China to Singapore via Indo-China)
=> China – Pakistan Corridor (South Western China to and through Pakistan)
=> Bangladesh – China – India – Myanmar Corridor (Southern China to India via Bangladesh and Myanmar)
=> Maritime Silk Road connecting Coastal China to the Mediterranean via Singapore-Malaysia, the Indian Ocean, the Arabian Sea and the Strait of Hormuz.
এটা খুব সহজেই অনুমেয় যে, OBOR/ BRI অনেক বড় লক্ষ্যমাত্রার একটি প্রজেক্ট যা ৬৫ টি রাষ্ট্রকে তার কার্যক্রমের আওতায় পরিবেষ্টন করে রেখেছে। যেখানে চীন বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য প্রজেক্টের সাথে সংযুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে স্বল্প মূল্যে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ইনভেস্ট করার পরিকল্পনা করেছে।
এই প্রজেক্টকে কেন্দ্র করে চীন সরকারের বিশেষ লক্ষ্যমাত্রগুলো হচ্ছেঃ
=> আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বাণিজ্যিক অঙ্গনে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করা বিশেষত এশিয়ায়।
=> বাণিজ্যিক ক্ষেত্র বর্ধনের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো। এর ফলে চীন তার পণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নতুন নতুন মার্কেট তৈরি করবে।
=> আন্তর্জাতিক পরিসরে চীনা মুদ্রার প্রচলন বাড়ানো এবং “ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ কারেন্সি” হিসেবে ইউয়ান তথা চীনা মুদ্রার ভূমিকা শক্তিশালী করা।
=> চীনের মধ্যে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করা।
=> আফগানিস্থান, পাকিস্থানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামোগত ঘাটতি দূরীকরণে কাজ করা।
OBOR/ BRI প্রজেক্ট ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানঃ
=> আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রাশিয়ার পরেই যে রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দীতায় অবতীর্ণ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উত্তর কোরিয়া, চীন এবং ইরান। কয়েক যুগের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের উপর যেভাবে আধিপত্য তৈরি করেছে সেখানে দ্বিতীয় কোন চরিত্রের আগমন যুক্তরাষ্ট্র কোন ভাবেই মেনে নেবে না এবং এই আধিপত্যে সে কোন অংশীদার রাখতেও রাজী না। তাই যে কোন রাষ্ট্রের যে কোন প্রজেক্ট যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দী রাষ্ট্রগুলোকে কোন দিক থেকে উপকৃত করে বা শক্তিশালী করে তাহলে তার অগ্রগতি রোধে এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র যথাসাধ্য চেষ্টা জারি রাখবে এটাই স্বাভাবিক। নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক সব সময়ই সাপে-নেউলে। আর চীনের এই প্রজেক্টে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় ইকোনোমিক করিডোর হচ্চে চীন-মঙ্গোলিয়া-রাশিয়া করিডোর যা চীনের উত্তোরাঞ্চলকে মঙ্গোলিয়া হয়ে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের সাথে যুক্ত করেছে। দুই প্রতিদ্বন্দী রাষ্ট্রর জোটবদ্ধতা যুক্তরাষ্ট্র সহজভাবে নিতে চাইবে না।
=> আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বাণিজ্যিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিদ্বন্দীতায় চীন অগ্রগামী হোক যুক্তরাষ্ট্র এটা কখনো হতে দিতে চাইবে না।
=> আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক অঙ্গনে চীনের নতুন নতুন মার্কেট উন্মুক্ত করার সম্ভাবনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া’র আশঙ্কাকে যুক্তরাষ্ট্র কোন ভাবেই মেনে নিবে না।
=> তালিবান তথা আফগানিস্থান-পাকিস্থানের সীমান্তবর্তী জিহাদী কার্যক্রম ইস্যুতে চলতি সময়ে পাকিস্থানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইমরানের সরকারকে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আইএমএফ’এর উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ঠিক সেই সময় পাকিস্থানকে চীনের ঋণ প্রদান অথবা চীন-পাকিস্থান ইকোনোমিক করিডোর প্রস্তাবনার আওতায় রাখা কোনটাই যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না।
প্রজেক্ট ইস্যুতে ভারতের অবস্থানঃ
ভারত ইতিমধ্যে OBOR/ BRI প্রজেক্টকে বয়কট করেছে। এর পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণগুলোকে নিম্নরুপে চিহ্নত করা যায় -
=> এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় শত্রু এবং প্রতিদ্বন্দী হচ্ছে চীন।
=> China – Pakistan Corridor যা পাকিস্থানের অধিভূক্ত আযাদ কাশ্মীর দিয়ে গেছে। এটা ভারত তার সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষার প্রতিবন্ধক মনে করে।
=> ভারত মহাসাগরে ভারতের আধিপত্য ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এবং ভারত মহাসাগরের মাধ্যমে সামুদ্রিক রুটে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে ভারত আশঙ্কাগ্রস্থ।
=> হিন্দ প্রদেশে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরিমন্ডলে ভারতের একক অবস্থান তৈরি করার প্রতিবন্ধক।
=> আফগানিস্থান সরকার আশরাফ ঘানির সাথে ভারতের বড় ধরণের বিনিয়োগ আছে। যেখানে দ্বিতীয় প্রতিযোগী হিসেবে শত্রু রাষ্ট্র চীনের আগমন ভারত মেনে নেবে না।
=> এই প্রজেক্টের আওতাভূক্ত বিভিন্ন দেশে ভারত বাণিজ্যিক পরিমন্ডলে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
=> ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়বে।
=> প্রতিদ্বন্দীতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে আরো বেশি বেশি অবকাঠামোগত প্রকল্পের কাজে যুক্ত হতে হবে এবং বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজন দেখা দেবে।
প্রেক্ষাপট – ২
ð বোম্বিং হলো শ্রীলঙ্কায়, আর হামলার ১০ দিন আগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” শ্রীলঙ্কান পুলিশ প্রধানকে আগাম সতর্ক করলো। যা অজ্ঞাত কারনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত পৌঁছেনি এবং সব জেনেও শ্রীলঙ্কান পুলিশ হামলা প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ð ইস্টার সানডেকে টার্গেট করে হামলা হলো, হামলা হলো চার্চে এবং হোটেলে, মারা গেলো বেশ কিছু খ্রীষ্টান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কোন হাম্বিতাম্বি করলো না।
ð কোন জিহাদী গ্রুপ দায় স্বীকার করলো না, কিন্তু হামলার পর থেকেই জোরালোভাবে ইন্ডিয়ান মিডিয়াগুলো একটি বিশেষ মুসলিম কমিউনিটির উপর দায় চাপানো শুরু করলো এবং পরবর্তীতে পশ্চিমা মিডিয়া এই দায় চাপানোয় গলা মেলাতে লাগলো।
ð এতোবড় ম্যাসাকারের পরও শ্রীলঙ্কান সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এ বিষয়ে তাদের তৎপর হওয়াই ছিলো স্বাভাবিক।
মূল বিষয়ঃ
আমরা জানি, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভূমির উপরে থাকা রাষ্ট্রীয় জানোয়ার ইজরাইলের যে কোন স্বার্থ রক্ষায় কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যেকোন ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে দেয়ার বা কোন দূর্যোগ সৃষ্টি করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। এর অহরহ নজির আছে আমাদের হাতে।
ঠিক একই ভাবে হিন্দ প্রদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র” অখন্ড ভারত গঠনের মাষ্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষায় চূড়ান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেটা হোক রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক বা ধর্মীয়। আপাত দৃষ্টিতে এটা প্রমাণিত যে, ইস্টার সানডে ম্যাসাকারকে কেন্দ্র করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহপূর্ণ আচরণ এবং ভারতীয় হলুদ মিডিয়ার আগাম তথ্য নির্ভর সংবাদ প্রচার প্রমাণ করে এই হামলা সংগঠনে মূল চক্র হচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র”। যেমনটি বিডিআর বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে চক্রান্ত আঁটা হয়েছিলো। তবে এখানে উদ্দেশ্য এটা না যে “র” কে দায়ী প্রমাণ করা বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্য কোন দেশে না হয়ে কেন শ্রীলঙ্কায় বোম্বিংয়ের ঘটনা ঘটানো হলো তা বুঝার চেষ্টা করা।
শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রধান বিনিয়োগ ছিলো “মাগামপুরা মাহিন্দা রাজাপাস্কা পোর্ট” যার বৃহদাংশ ফান্ড করা হয়েছে চাইনীজ সরকারের পক্ষ থেকে এবং দু’টি চাইনীজ কোম্পানির তত্ত্বাবধায়নে এটির নির্মাণ প্রকল্প পরিচালিত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে কলম্বো পোর্টের পর এটিই হচ্ছে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় পোর্ট। কিন্তু পরবর্তীতে এই পোর্ট নির্মাণ প্রকল্পে চীন থেকে গৃহীত ঋণ পরিশোধে শ্রীলঙ্কান সরকার ব্যর্থ হয়। ফলে ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ঋণ পুনর্গঠন পরিকল্পনার অধীনে এই পোর্টের ৭০ শতাংশ চীন ইজারা নিয়ে নেয় এবং বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব চীনের হাতে সমর্পন করা হয় ৯৯ বৎসরের জন্য।
এই বন্দরের কৌশলগত অবস্থান ও এর উপর চীনা সরকারের মালিকানা এবং পরবর্তীতে ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অবস্থান এই আশঙ্কাকে সামনে নিয়ে এসেছে যে নিকট ভবিষ্যতে বন্দরটি চাইনীজ নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি প্রজেক্টের অধীনে সামুদ্রিক সিল্ক রোডের কার্যক্রমকে জোরদার করতে এই বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
তাই শ্রীলঙ্কায় চার্চে হামলার মাধ্যমে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে –
=> চলতি মাসে আগামী ২৭ এপ্রিল শুরু হতে যাচ্ছিলো “ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড” সম্মেলন। এটিকে স্থগিত করা, পিছিয়ে দেয়া অথবা ক্ষতিগ্রস্থ করা।
=> ভারতীয় উগ্র রাজনৈতিক দল বিজেপি নির্বাচিত মোদির সরকার এই হামলাকে তাদের ইসলাম বিদ্বেষী রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা।
=> আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোদী সরকারের প্রচারণায় সন্ত্রাসবাদের বিষয়টিকে জোরালোভাবে সামনে নিয়ে এসে জনমনে ধর্মীয় উস্কানি জিইয়ে রেখে নির্বাচনে জয়লাভের জন্য নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা।
=> চীনের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোকে অস্থির করে তোলা। তবে এটা মূলত মার্কিন স্বার্থ।
তবে এটা হচ্ছে একটি প্রক্সি ওয়ার যেখানে ময়দানে মুখোমুখি দু’পক্ষ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন। কিন্তু প্রক্সি ওয়ারের ময়দান হচ্ছে হিন্দ প্রদেশ। আর হিন্দে মূল ক্রীড়ানক রাষ্ট্র হলো ভারত। যেখানে চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দীতায় যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে ‘পিভট ট্যু এশিয়া’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী মোদির ভারত নিয়েছে ‘লুক ইস্ট’ পলিসি। যা এই প্রক্সি ওয়ারকে চলমান রাখবে। আর এই প্রক্সি ওয়ারের একটি নির্দেশক হচ্ছে শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডে ম্যাসাকার।
হিন্দ প্রদেশের মুসলিমদের জন্য অশনী সঙ্কেতঃ
=> এটি শ্রীলঙ্কান সংখ্যালঘু মুসলিমদেরকে নিয়ে একটি আন্তার্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ঠিক তেমন যেমনভাবে আরাকানে মুসলিমদের উপর হত্যাযঞ্জ চাপিয়ে দেয়া হয় এবং তাদেরকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়। তবে এর মাধ্যমে মুসলিম বিদ্বেষে একটু পিছিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কান সরকারকে ইসলামের বিপরীতে ফ্রন্ট লাইনে নিয়ে আসা হবে।
=> হিন্দ প্রদেশকে মূলত একটি প্রক্সি ওয়ারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তবে এই প্রক্সি ওয়ার পরবর্তীতে ধর্মভিত্তিক সংঘাতে রুপ নেবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটা যে, এ প্রদেশের মুশরিকরা বিশেষত ভারত ধর্মভিত্তিক যুদ্ধের জন্য পূর্ণরুপে প্রস্তুতি নিয়েছে এবং নিচ্ছে অথচ মুসলিম নামধারী তাগুত শাসকরা পশ্চিমাদের গোলামীতে নিমজ্জিত আর মুসলিম জনগন হয়ে আছে উদাসীন।
=> নির্বাচনী প্রচারণায় উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন বিজেপী নির্বাচিত মোদির সরকার সরাসরি এই ম্যাসাকারকে জঙ্গিবাদ/ সন্ত্রাসবাদের ট্যাগ লাগিয়ে ইতিমধ্যে ভারতীয় জনমনে একটি সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়িয়ে দিয়েছে। এটা ইঙ্গিত দেয় জয়লাভের পর মোদির সরকার প্রকাশ্যে ভারত থেকে ইসলাম নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মাঠে নেমে পড়বে। আর বাবরী মসজিদের ইস্যুটিও ঝুলিয়ে রাখবে না।
=> ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে যার সামরিক নিরাপত্তা প্রদান করছে বিজিবি। কিন্তু এমন হওয়ার আশঙ্কা আছে যে, বাংলাদেশে কোন একটা ম্যাসাকার ঘটানোর মাধ্যমে নিজ স্বার্থ রক্ষার অজুহাত দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তাদের সন্ত্রাসী সেনাদের অনুপ্রবেশ ঘটাবে।
=> মোট কথা, আসন্ন ভারতীয় পার্লামেন্টারি ইলেকশনের পর হিন্দ প্রদেশে একটি ধর্মীয় সংঘাত সামান্য সময়ের ব্যবধানে স্পষ্ট ও সামগ্রিক রুপ লাভ করবে।
সার্বিক বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। আল্লাহতাআ’লা হিন্দের মুসলিমদেরকে গাযওয়াতুল হিন্দের জন্য প্রস্তুত করুন। এ ভূমিতে চলমান জিহাদী কার্যক্রমকে শক্তিশালী করুন। আমীন।
Comment