সোমালিয়ায় দখলদার বাহিনীর চেকপয়েন্টে গাড়িবোমা হামলা, তাগুত মিডিয়ার অতিরঞ্জন; সাধারণ মানুষের হতাহতে শাবাব মুখপাত্রের শোকবার্তা
গত ২৮ ডিসেম্বর সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে দখলদার তুর্কি ও সোমালিয় সরকারি মুরতাদ বাহিনীর একটি সামরিক নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে হামলা চালান হারাকাতুশ শাবাবের একজন ইস্তেশহাদি মুজাহিদ। হামলায় বহু সংখ্যক দালাল মুরতাদ সেনা, পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি অনাকাঙ্খিতভাবে চেকপয়েন্টে থাকা একটি গাড়ির বেশ কয়েকজন সাধারণ মুসলিম নাগরিকও নিহত হয়েছেন।
বরাবরের মতো আন্তর্জাতিক কুফফার চক্র এবং সোমালিয়ার দালাল প্রশাসন হামলায় কেবল সাধারণ নাগরিকদেরকে হতাহত দেখিয়ে হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে এই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, তারা নিরীহ সাধারণ মুসলিমদেরকে টার্গেট করেছে। অথচ দুনিয়ার তাবত কুফফার মিডিয়াও নিউজ করেছে যে, জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন মদদপুষ্ট ও তুর্কি মুরতাদ বাহিনীর সামরিক নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলা সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতও হানে।
হারাকাতুশ শাবাব এর পক্ষ থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর প্রদান করা এক অফিসিয়াল বার্তায় বলা হয়েছে, ব্যাপক অনুসন্ধানের পর উক্ত হামলায় হতাহতের যে সংখ্যা পাওয়া গেছে তা হচ্ছে,
তুর্কি সামরিক কর্মকর্তা- ৪,
তুর্কি বাহিনীর সহযোগী যোগানদাতা- ৪,
তুর্কি বাহিনীর দোভাষী- ১,
তুর্কি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তারক্ষী- ১২,
চেকপয়েন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ- ২১,
দালাল সরকারের মিলিশিয়া- ৬,
সোমালি সরকারের গোয়েন্দা-চর – ৯,
দালাল সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তা- ৪,
অর্থাৎ, সর্বমোট ৬১ এরও অধিক কুফ্ফার ও মুরতাদ সেনা নিহত হয়।
সাধারণ মুসলিম-২৩ জন।
হামলায় সর্বমোট নিহতের সংখ্যা ৮৪ জন।
এছাড়াও এই হামলায় ৬৯ এরও অধিক দখলদার তুর্কি ও সোমালিয়ার মুরতাদ সেনা সদস্য আহত হয়।
অথচ হতাহতের এই সংখ্যাকে আড়াল করে কেবল সাধারণ মুসলিমদেরকে ছবি ও ভিডিওতে দেখিয়ে মুরতাদ বাহিনীর প্রোপাগান্ডা মিডিয়াগুলো এই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যেগুলো কোন যাচাই ছাড়াই এদেশীয় হলুদ মিডিয়াগুলোও জোড়ালোভাবে প্রচার করতে থাকে।
হামলাটি কোথায় হয়েছে এবং কারা নিহত হয়েছে তা জানার জন্য জার্মান ভিত্তিক মিডিয়া “ডয়চে ভেলে’তে ২৮শে ডিসেম্বরে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে দু’টি লাইন তুলে দিচ্ছি −
“A car bomb exploded at a busy security checkpoint in Somalia’s capital …
অর্থাৎ সোমালিয়ার রাজধানীতে একটি ব্যস্ত নিরাপত্তা চৌকিতে গাড়ী বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে…
হামলায় হতাহতের ব্যাপারে রিপোর্টে আরো লিখেছে, the victims included university students, other civilians and security personnel. অর্থাৎ হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, অন্যান্য বেসামরিক নাগরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে।
একদিকে, জার্মানির “ডয়চে ভেলে”সহ দুনিয়ার প্রায় সকল মিডিয়া এই সংবাদ প্রচার করেছে যে, হামলাটি নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে হয়েছে এবং তাতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি (অনাকাঙ্খিতভাবে) অন্য সাধারণ মানুষও মারা গেছে; অন্যদিকে, হলুদ মিডিয়াগুলোই আবার এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে যে, হারাকাতুশ-শাবাব সাধারণ মুসলিমদেরকে টার্গেট করেছে! অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে, হারাকাতুশ শাবাবের আল-মুজাহিদীন দখলদার ও মুরতাদ বাহিনীর চেকপয়েন্টে হামলা চালান এবং অনাকাঙ্খিতভাবে হামলার সময় সেখানে মুসলিমদের একটি গাড়ি এসে পড়ে। আর তাই, মুসলিমদেরকে হতাহত হওয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে হামলার পর হামলায় হতাহতদের আসল চিত্র এবং সোমালিয়ায় জিহাদের বাস্তবতা বিস্তারিত তুলে ধরে হারাকাতুশ শাবাবের মুখপাত্র শাইখ আলি মাহমুদ রাজি হাফিজাহুল্লাহ আশ-শাবাব নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে তাদের পরিচালিত স্থানীয় রেডিওকে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেন,
, “গত শনিবার ২ জুমাদিউল উলা ১৪৪১ তথা ২৮ ডিসেম্বর তারিখে মোগাদিসুর আফগোয়ি এলাকার “এক্স কন্ট্রোল ইন্টারসেকশনে” তুরষ্ক এবং মুরতাদ সরকারী বাহিনীর উপর মুজাহিদগণ একটি হামলা চালান, যার মাধ্যমে সোমালিয়ায় মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মুরতাদ তুরষ্ক বাহিনী ও তাদের নিরাপত্তাদানকারী মুরতাদ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
কিন্তু হামলার সময় হামলাস্থলে অনাকাঙ্খিতভাবে চলে আসে সাধারণ মুসলিমদের একটি গাড়ি, যার ফলে সেখানে উপস্থিত থাকা সাধারণ মুসলিমদের মধ্যেও বেশ কিছু মানুষ হতাহতের শিকার হন। আমরা এজন্য সর্বোচ্চ দুঃখ প্রকাশ করছি এবং হামলায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিমদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তা’আলার কাছে কামনা করছি, তিনি যেন নিহত মুসলিমদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন এবং তাদেরকে জান্নাতে স্থান দেন। আমি আরো কামনা করছি, আল্লাহ যেন তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্যধারণ ও শোক সইবার তাউফিক্ব দান করেন। অনুরুপভাবে আহতদের জন্য দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ সবার জন্য কল্যাণের কামনা করছি।”
হারাকাতুশ শাবাব মুখপাত্র আরো বলেন, মুসলিমদের এই হতাহতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমরা। অথচ এই হামলাকে কেন্দ্র করে ক্রুসেডার, মুরতাদ বাহিনী এবং তাদের মিডিয়াগুলো মুজাহিদদের বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট প্রোপাগান্ডা চালিয়ে হারাকাতুশ শাবাবের ইমেইজ ক্ষুণ্ণ করতে চাচ্ছে। যদি তারা সত্যিকারেই মুসলিমদের কষ্ট নিয়ে চিন্তিত হতো, তাহলে তারা সোমালিয়ার মুসলিমদের উপর আমেরিকা, ইথিউপিয়া ও কেনিয়ার অব্যাহত বর্বরোচিত অপরাধের ব্যাপারে কথা বলতো। অথচ, তারা এটা করছে না।
এই উম্মাহর জন্য আমরা আমাদেরকে কুরবানি দেই, এই উম্মাহর সন্তানরাই মুজাহিদ, যারা দ্বীন, ভূমি এবং ইজ্জতের প্রতিরক্ষায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছে, আল্লাহ তাদেরকে শহিদ হিসেবে কবুল করুন। দখলদার তুর্কি মুরতাদ বাহিনী এবং সোমালিয় মুরতাদ বাহিনী তাদের গাড়ি আড়াল করতে মানব বর্ম হিসেবে এসব মুসলিমদের গাড়ি রেখে দেওয়ায় তারাও এই হামলার মধ্যে পড়ে যায়।”
এছাড়াও সম্মানিত মুখপাত্র বলেন,
“আমরা, সোমালিয়ার মুসলিমরা, মুসলিম উম্মাহরই অংশ। আমাদের ভূমি দখল করা হয়েছে এবং আমাদেরকে আল্লাহর শরিয়ত দিয়ে শাসন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে হানাদার শত্রুকে পরাজিত করতে আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর জিহাদ এবং ক্রুসেডার ও তাদের মুরতাদ সহযোগীদের বিরুদ্ধে এমন সকল পন্থায় কিতাল করাকে ফরজ করেছেন, আল্লাহর সুদৃঢ় শরিয়ত আমাদেরকে যেসব পন্থা বৈধ করেছে।
ইসলামের শত্রুরা আজকে যে মাত্রায় মুসলিমদের ভূমিকে দখল করে রেখেছে, এভাবে দখল করার ঘটনা ইতিহাসে পাওয়া যায় না এবং আজকে শত্রুরা যেভাবে মুসলিমদের মাঝে মিশে আছে, অতীতে কখনো এভাবে মুসলিমদের সাথে মিশে থাকেনি।”
আশ-শাবাব মুখপাত্র শাইখ আলি রাজি আরো বলেন,
“আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মুসলিমদের রক্ত হচ্ছে পবিত্র। আল্লাহ তা’আলা তা আমাদের জন্য হারাম করেছেন। আমরা আল্লাহর শরিয়তের অনুসরণ করি। তাদের ধারণা অনুযায়ী যদি মুসলিমদেরকে টার্গেট করাই মুজাহিদদের উদ্দেশ্য হতো, তাহলে “এক্স কন্ট্রোল ইন্টারসেকশন” এর মতো কঠিন জায়গায় না করে অন্য জায়গায়ই করতে পারতো। কিন্তু আমাদের টার্গেট মুসলিমরা ছিল না বরং দ্বীনের শত্রুরা ছিল।
আমাদেরকে এখন শত্রুর সাথে লড়াইয়ের চিত্র নিয়ে ভাবতে হবে এবং তাদের নিকৃষ্ট চক্রান্ত উপলব্ধি করতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, শত্রুরা মুসলিমদের মাঝেই বসবাস করে এবং তাদের সাথে মিশে থাকে। ফলে যখনই মুজাহিদগণ এই শত্রুকে হামলা করেন, তখন মুসলিমরাও ক্ষতির শিকার হয়। আমাদের সামনে এখন দু’টি বিষয়, হয় আমরা মুসলিমদের ক্ষতি থেকে পুরোপুরি রক্ষার জন্য মুসলিমদের সাথে মিশে থাকা এই শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ বন্ধ করে দেবো, ফলে এই শত্রু আমাদের ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পাকাপোক্তভাবে জেঁকে বসবে অথবা আমরা মুসলিমদের ক্ষতি এড়ানো এবং তা সর্বনিম্ন রাখার প্রচেষ্টার সাথে সাথে শত্রুর বিরুদ্ধে কিতাল অব্যাহত রাখবো। একনিষ্ঠ শরিয়ত এবং আকল এটিই জোরালোভাবে নিশ্চিত করে যে, এই শেষের পথটি-ই হচ্ছে সঠিক। আমরা এই পথেই কাজ করে যাচ্ছি, যা রক্তের ব্যাপারে সতর্কতাকে নিশ্চিত করে।”
উল্লেখ্য তুরষ্কের সেনাবাহিনী ও সরকার সোমালিয়ার মুরতাদ দালাল সরকারের সেনাবাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এ লক্ষ্যে তুরষ্কের সেনাবাহিনী সোমালিয়ায় তুরষ্কের বাইরে তাদের সর্ববৃহৎ সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে মুরতাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাদেরকে সবধরণের সহায়তা করে যাচ্ছে।
সোমালিয়ার হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে ন্যাটোর সদস্য তুরষ্ক, আমেরিকা, জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও সোমালিয়ার মদদপুষ্ট দালাল সরকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। দালাল সরকারকে টিকিয়ে রাখতে দুনিয়ার প্রায় সকল কাফের গোষ্ঠী আজ সোমালিয়ায় সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। এজন্য হারাকাতুশ শাবাব সোমালিয়ায় ক্রুসেডার আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক সকল কুফফার বাহিনীর উপর অগ্রাধিকার দিয়ে আক্রমণ করে থাকেন।
উল্লেখ্য, আল্লাহর সাহায্যে সোমালিয়ার মূল ভূখণ্ডের প্রায় অধিকাংশ (যার আয়তন প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গকিলোমিটার) ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এই বিস্তীর্ণ ভূমিতে আল্লাহর শরিয়ত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন হারাকাতুশ শাবাবের মুজাহিদগণ, আলহামদুলিল্লাহ্*। আফগানিস্তানের মতোই সোমালিয়ায় মুসলিমদের জন্য একটি নিরাপদ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আল-কায়েদা সোমালিয়ান শাখা হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদীন।
লেখক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/01/02/30757/
Comment