বদরের জিহাদি চেতনা: উম্মাহর বিজয়ের পথ
আজ ১৭ই রমাদান, আজ ইয়াওমে ফুরকন গাজওয়ায়ে বদরের দিন। মুসলিম উম্মাহর হৃদয় এইদিন আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল, বদর মুমিনের প্রিয় নাম, বদর মুমিনের চলার পথে পাথেও, বদর মুসলিম উম্মাহর বিজয়ের পথ, বদরের পথ ধরে উস্মাহ বরাবরেই বিজয়ের দিকে হেঁটেছে, মাথা উচুঁকরে দাঁড়িয়েছে, সকল জুলুম ও বর্বরতার লাগাম টেনে ধনেছে। ইতিহাস সাক্ষী উম্মাহর জিবনে যখনেই বিপর্যয় এসেছে, বদরের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই হয়েছে, ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বদরের পথ ধরেই মুসলিম উম্মাহর সম্মান মর্যাদা ও নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হয়েছে। ইয়ারমুক, কাদিসিয়া, হিত্তিন, অাইনে জালুত বদরেরেই নতুন নতুন সংস্করণ।
প্রিয় ভাই! মুসলিম উম্মাহ আজ পরাজিত নিপীড়িত, ও নির্যাতিত। অারাকান, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়ামেন, পূর্ব তুর্কিস্তান সহ গোটা পৃথিবী আজ মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত, এই করুন সময়ে মুসলিমদের ঘুড়ে দাড়াঁনোর জন্য প্রয়োজন আরো একটি বদর, কারণ বদরের পথেই উম্মাহর মুক্তি উত্তানের একমাত্র পথ, এই পথেই রাসূলﷺআমাদের দেখিয়ে গেছেন। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় আজ আমরা বদরকেই ভুলে গেছি, বদরের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিব দূরের কথা আমাদের আলোচনা থেকেও বদর আজ বিদায় নিয়েছে। রাসূলﷺএর অনুসৃত পথ ই'দাদ ও জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ এর পরিবর্তে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রেরর মত কুফুরী সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা ইসলাম কায়েম করার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করে যচ্ছি যুগ যুগ ধরে, ফলে এক শতাব্দী কাল ধরে আমরা কাফিরদের পদতলে পিষ্ট হচ্ছি।
প্রিয় ভাই! একটু চিন্তা করে দেখুন রাসুলুল্লাহর পথ ছেড়ে মুসলিম উম্মাহ কিভাবে তার হারানো সম্মান ও মর্যাদা ফিরে পাবে? আজ বদরের স্মৃতি বিচলিত ১৭ই রমাদান, চলুন মোবারক এই দিনে কিছু গাজওয়ায়ে বদর নিয়ে আলোচনা করা যাক। রাসূলﷺমের মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর ততদিনে রাসূলﷺমুসলিমদের সাথে নিয়ে মদিনার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা গুছিয়ে এনেছেন, এবার তিনি মক্কার কাফেরদের সঙ্গে বুঝাপড়ার দিকে মনযোগী হলেন, তিনি ভালোভাবে জান্তেন মক্কার কুরাইশদের শক্তি ও পতিপত্তি মূলউৎস হল সিরিয়ার ব্যবসাবাণিজ্য। আর তাদের কাফেলা মদিনার পাশদিয়েই সিরিয়া অাসা-যাওয়া করে, তাই তিনি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাফিরদের শক্তি ও প্রভাব ধ্বংস করার পরিকল্পনা করলেন, একবার তিনি খবর পেলেন কুরাইশ সর্দার আবু সুফিয়ান একটি বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে মদিনার পাশদিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরছে। রাসূলﷺএই কাফেলার উপর হামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
১২ই রমাদান তিনি ৩১৩জন সাহাবি নিয়ে কুরাইশ কাফেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, আবু সুফিয়ান এই সংবাদ পেয়ে মক্কায় খবর পাঠিয়ে দেয় মুসলিমরা কাফেলায় হামলা করতে যাচ্ছে, তারপর সে পরিচিত পথ ছেড়ে উপকূলের পথ ধরে অবশেষে কোনোভাবে সে নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এদিকে মুসলিমদের অাক্রমণের সংবাদ পেয়ে আবু জেহেল ১৩০০জনের একটি শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে মদিনার উদ্দ্যেসে রওনা হয়ে যায়, আবু সুফিয়ানের কাফিলা নিরাপদে চলে অাসার খবর পেয়েও আবু জেহেল ফিরে যেতে রাজি হয়নি সে দম্ভভরে বলতে লাগল আল্লাহর কসম আমরা এখান থেকে ফিরে যাবনা বরং আমরা বদরে গিয়ে তিনদিন অবস্থান করর, সেখানে উট জবাই করে খাওয়া দাওয়া আনন্দ ফুর্তি ও উল্লাস করব যাতে সমগ্র আরব আমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পর্কে জান্তে পারে।
এদিকে রাসুলﷺআবু জেহেলের অাগমনের সংবাদ পেয়ে বদরের দিকে রওনা হন, ১৭ই রমাদান উভয় দল বদর প্রান্তে মুখামুখি হয়। কাফিররা ছিল সম্পূর্ণ অস্ত্রে সজ্জিত, তাদের হাতে ছিল ১০০ঘোড়া ৬০০লৌহবর্ম আর অসংখ্য উট। অপর পক্ষে মুসলিম বাহিনীর ছিল মাত্র ২টি ঘোড়া এবং ৭০টি উট তরবারির সংখ্যাও ছিল নগণ্য প্রায়ই নিরস্ত্র ৩১৩জন মুজাহিদের প্রায় তিন গুণ বেশি এবং সুসজ্জিত কুফ্ফার বাহিনীর মোকাবেলার দৃশ্য সত্যই বিস্ময়কর। কাফিরদের বিপুল সেনা সমাবেশ ও শক্তিশালী যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখে রাসূলﷺখুবই বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করেন,
الَّلهُمَّ أَنْجِزْلِي مَاوَعَدْتَنِي٭ الَّلهُمَّ آتِ مَاوَعَدْتَنِي٭ الَّلهُمَّ إِنْ تُهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةَ مِنْ أَهْلِ الْإِسْلَامِ لَاتُعْبَدْ فِي الْأَرْضِ
'হে আল্লাহ! আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন। আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা পূর্ণ করুন। হে আল্লাহ! ইসলামের এই ছোট্ট দলটি যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে জমিনে আপনার ইবাদত করা হবে না।
[সহিহুল মুসলিম:১৭৬৩]
রাসূলﷺবার বার এই দোয়া করতে থাকেন আল্লাহর কাছে রোনাজানি করতে থাকেন তিনি এতটায় ব্যাকুল হয়ে পড়েন যে তাঁর কাঁধের চাদরও পর্যন্ত পড়ে যায়, হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযিঅাল্লাহু আনহু এসে চাদরটি কাঁধে তুলে দেন তারপর পিছন থেকে তাঁকে জরিয়ে ধরে বললেন 'হে আল্লাহর নবী! এতটুকু দোয়াই যতেষ্ট আল্লাহ নিশ্চয়ই তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করবেন।
প্রিয় ভাই! আজ আমরা ঘরে বসে দোয়া করেই মুসলিম উম্মাহর মুক্তি ও বিজয়ের সপ্ন দেখি মাঝে মাঝে অল্পসময় দোয়া করি মনে করি আমাদের দায়িত্ব শেষ, ই'দাদ ও জিহাদের কথা আমাদের মনেই আসেনা।
ভাই আমার! যদি কেবল ঘরে বসে দোয়ার মাধ্যমেই কাফিরদের থামানো যেত তাহলে রাসূলﷺকেন এত কষ্ট করলেন? মুষ্টি ময় কয়েকজন নিরস্ত্র সাহাবি নিয়ে কেন হাজারো অস্ত্রে সজ্জিত কাফিরদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন? মনে রাখবেন! মুসলিমদেরকে কাফিরদের মুখামুখি দাঁড়করিয়ে দিয়েই রাসূলﷺদোয়া করেছিলেন, অবশেষে লড়াই শুরু হয়েগেল মুসলিমদের জন্য নেমেএল আসমানি সাহায্য মুজাহিদরা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গেলেন আবু জেহেল সহ কাফিরদের অনেক বড় বড় নেতা নিহত হল সর্বমোট ৭০জন নিহত হল এবং ৭০জনকে বন্দী করা হল আর ১৪জন মুজাহিদ শাহাদত লাভে ধন্য হলেন, এই যুদ্ধের ফলে কাফিরদের মনোবল ধসে গেল তাদের দম্ভ অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ হয়েগেল ,গোটা পৃথিবীতে ইসলাম ও মুসলিমরা এক নতুন শক্তিতে নতুন পরিচয়ে আবির্ভুত হলেন।
প্রিয় ভাই! মাত্র ৩১৩জন নিরস্ত্র মুজাহিদরের ১০০০সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে এই বিজয় সত্যই বিস্ময়কর, ইতিহাস সাক্ষী মুসলিমরা কখনই সামরিক শক্তিতে কাফিরদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলনা কিন্তু যখনি তারা আল্লাহর উপর ভরসা করে সল্প শক্তিনিয়ে জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহর পথে অগ্রসর হয়েছে আল্লাহর নুসরত ও সাহায্য কখনো মুসলিমদেরকে কাফিরদের সামনে মাথানত করতে হয়নি যতদিন মুসলিমরা বদরের পথে হেঁটেছে বিজয় ও সাফল্য তাদের পদচুম্মন করেছে, যখনি তারা দুনিয়ার প্রেমে মত্তা হয়ে ই'দাদ ও জিহাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে জিল্লতী ও বেইজ্জতি তাদের ভাগ্যলিপি হয়ে দাঁড়িয়েছে, আজও আমরা পৃথিবীর দিকে তাকালে এই দৃশ্যই দেখতে পাই। আফগানি তালেবানরা বদরের পথেই হেঁটে ছিল তাই আল্লাহ তাদের গোটা পৃথিবীর বিরুদ্ধে বিজয় দান করেছেন, সম্মান দিয়েছেন, মর্যাদা দিয়েছেন, তাদের দ্বীন ও ইমানের হিফাজত করেছেন তাঁরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর অাইন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের সমাজ বেবিচার, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা মুক্ত হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে শাসন থমতা দান করেছেন সুবাহানাল্লাহ! গোটা পৃথিবী তাদের ধুমাটে চেয়েছে কতিত সুপার পাওয়ার অামেরিকাই শুধু নয় নেটযুক্ত বুক্ত ঊনচল্লিশটি রাষ্ট্র দীর্ঘ ১৮বছর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে কিন্তু মোল্লাদের জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহর সামনে সবাইকে হার মান্তে হয়েছে। আজও যারা মুসলিম সমাজে বিভিন্ন অজুহাত ও বিভ্রান্ত ছড়ানো আমাদের শক্তি নেই, আমাদের খিলাফা নেই, আমাদের ভূমির মালিকানা নেই, আমাদের আমির নেই তাদের জন্য আফগানের বিজয় থেকে শিখার আছে অনেক কিছু।
প্রিয় ভাই! আজ মুসলিম উম্মাহ এক সম্ভাবনাময় যুগ সন্দিক্ষনে এসে উপনিত হয়েছে শতাব্দী ব্যাপী লাঞ্ছনার পর উম্মাহর হৃদয়ে বদরের জিহাদি চেতনা আবারো সঞ্চারিত হতে শুরু হয়েছে নিঃসন্দেহে এই শতাব্দী ইসলামের বিজয়ের শতাব্দী, এই শতাব্দী ইনশাআল্লাহ খলিফাতুল্লাহ মাহদীর আবির্ভাবের শতাব্দী, খোরাসানের অবিস্মরণীয় বিজয় সিরিয়া ও ইয়ামেনে আল্লাহর সৈনিকদের বিস্ময়কর উত্তান সোমালিয়া ও মালিতে দাপট ও পরাক্রম আর ভারতিয় উপমহাদেশে ই'দাদ ও জিহাদি চেতনায় এক অভূতপূর্ব বিস্ফুরণ মুসলিম উম্মাহর পূর্ণউত্তানকে সম্ভাবিত করে তুলেছে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি বার বার আমাদের একই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ ইসলামের এই বিজয় অভিযানে আমরা সবাই অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করব। পরিশেষে দোয়া করি আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বদরের পথে পরিচালিত করুন, কুফুরী গণতন্ত্রের ধোঁকা ও গোমরাহি থেকে আমাদেরকে হিফাজত করুন, ই'দাদ ও জিহাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের তাওফিক দান করুন আমিন। ইয়া রব্বাল আলামিন।
Comment