আমিরুল মু’মিনিন শাইখুল হাদিস
মৌলভী হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাহ হাফিজাহুল্লাহর ঈদবার্তা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলার। আমরা তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা নফস ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে তাঁর নিকট আশ্রয় কামনা করি। তিনি যাকে হেদায়াত দান করেন, তাকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারে না। আমরা যখন গুনাহ করি, তিনি ব্যতীত কেউ আমাদের পরিশুদ্ধ করতে পারেন না। আমি এই সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, নেই তাঁর কোনো শরিক; মুহাম্মদ সা. তাঁর বান্দা ও রাসুল।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِينًا ﴿١﴾ لِّيَغْفِرَ لَكَ اللَّـهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيمًا ﴿٢﴾ وَيَنصُرَكَ اللَّـهُ نَصْرًا عَزِيزًا ﴿٣﴾
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সুস্পষ্ট এক বিজয় দান করেছি। যাতে আল্লাহ্ তা’আলা আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন; আর আপনাকে পরিচালিত করেন সরলপথে। আপনার জন্য আরো অনেক শক্তিশালী সাহায্য অপেক্ষা করছে। (সূরা আল-ফাতহ:০১-০৩)
দীনের প্রহরী মুজাহিদিন এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর প্রতি:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্
আপনাদের জানাচ্ছি পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক!
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা আপনাদের সিয়াম, কিয়াম ও তিলাওয়াতসহ সবধরনের আমল কবুল করুন। মুজাহিদ ও মুজাহিদদের সেবায় আন্তরিক এই উম্মাহর কষ্টক্লেশ, চিন্তা-পেরেশানির বিনিময়ে মহান আল্লাহ্ তা’আলা আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। শহিদদের পরিবার এবং আত্মীয়পরিজনদের সবরে জামিল দান করুন।
প্রিয় আহলে ইমান, আমি এই বার্তায় চলমান ঘটনাপ্রবাহ ও আমাদের সার্বিক অগ্রগতির বিচারে ইমারাতে ইসলামি আফগানিস্তানের বর্তমান পলিসি ও কর্মপদ্ধতি তুলে ধরার প্রয়াস পাবো:
১. আমাদের এই জিহাদের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন, আফগানের ভূমিকে দখলদারমুক্ত করা এবং ইসলামি খিলাফতের আদলে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ইমারতে ইসলামিয়ার মুজাহিদিনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জনমনে আজ দিবালকের ন্যায় স্পষ্ট। আমাদের কর্মকাণ্ড ধোঁয়াশাচ্ছন্ন নয়, কারো কাছে গোপন নয়। আমি আমার প্রত্যেক মুজাহিদ ভাইকে বিনীতভাবে বলছি, আপনি আপনার দায়িত্বের প্রতি সচেতন হোন। নিবিষ্টমনে আপনার কাজটুকু করে যান। সবধরনের ফিৎনা, অপপ্রচার ও মিথ্যাচার উপেক্ষা করে দুর্বার ছুটে চলুন মাঞ্জিলপানে। নিজের ও ইমারাহর উন্নতি সাধনে সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন, সর্বোপরি আনুগত্য ও একতার মাধ্যমে ইমারাহ প্রদত্ত আমানত রক্ষা করুন।
২. ইমারতে ইসলামি আফগান জনগণের অংশবিশেষ। সুদীর্ঘ চল্লিশ বছরের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা এমন একটি সন্ধিক্ষণে এসে উপনিত হয়েছি। আমি আফগানিস্তানের সমস্ত আলিম, বুদ্ধিজীবী, লেখক, কবি-সাহিত্যিক, একাডেমিক, স্থানীয় নেতা এবং মোড়লদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা, একতা, সংস্কার ও পুনর্বাসন সর্বোপরি এই ভূমিতে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ইমারতে ইসলামির সহযোগী হয়ে কাজ করুন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে আফগান জনসাধারণের মাঝে ইসলামি জ্ঞান, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির বিস্তারে, নিজ মাতৃভূমে ইসলামি অস্তিত্ব বিনির্মাণে এবং সবধরনের কুসংস্কার,বিদআত ও প্রচলিত রীতিনীতির মূলোৎপাটনে আপনাদেরকে অগ্রসেনানী হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। আপনারা তাঁদের সামনে জিহাদ, ইসলামি জীবনব্যবস্থা এবং আফগানদের ইমানদীপ্ত ইতিহাসের বয়ানগুলো উপস্থাপন করুন। মুজাহিদিনের সার্বিক পলিসি সম্পর্কে তাদেরকে ওয়াকিবহাল করুন।
৩. আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ইমারতে ইসলামি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ইসলামি ইমারতের সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সম্পর্ক পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আমরা ইসলামি রাষ্টগুলোর সাথে ভ্রাতৃত্ব ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এছাড়াও আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক স্থাপনেও আমরা আগ্রহী।
৪. দখলদারিত্বের অবসানের পর আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামো ও সার্বিক অবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে যারা চিন্তিত এবং সংশয়গ্রস্ত, তাদেরকে আমরা পুনর্বার আশ্বাস দিচ্ছি, ইসলামি ইমারাতের পলিসি একচেটিয়া নয়। আমাদের খিলাফাহ-ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ, জাতপাতের কোনো বিভেদ থাকবে না। কাউকেই বঞ্চিত করা হবে না, কেউ নিজেকে পরাধীন বোধ করবে না। দেশের সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ ইসলামি শরিয়াহর আলোকে গৃহীত হবে।
৫. কিছু বিদেশী গোয়েন্দাসংস্থা এখনো আফগানিস্তানে তাদের দূরভিসন্ধিমূল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জাতি, ধর্ম ও ভাষাগত বিভেদ উস্কে দিয়ে ইমারতে ইসলামির অগ্রগতি ঠেকাতে তারা হেন পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমরা এসব গোয়েন্দাসংস্থাকে হুঁশিয়ার করছি, ইতোপূর্বে ইমারতে ইসলামি সবধরনের ষড়যন্ত্র ও দূরভিসন্ধি শক্তহাতে প্রতিহত করেছে । আমাদের সেই শক্তিমত্তা এখনো বিদ্যমান আছে। এহেন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না হলে আমরা কাউকে একবিন্দু ছাড় দিবো না। সময়ের পাওনাটুকু মিটিয়ে দেওয়া হবে অক্ষরে অক্ষরে।
৬. মার্কিন-তালিবান চুক্তি সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি ইমারতের সবচেয়ে বড় সফলতা। মুজাহিদিনরা চুক্তির প্রতি এখনোবধি দায়বদ্ধ আছেন। আমরা বিরোধী পক্ষকে দৃঢ় আহ্বান জানাই, আপনারা চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। এমন কোনো কাজ করবেন না যার ফলে চুক্তিভঙ্গ তরান্বিত হয়। চুক্তির ধারা অনুযায়ী অনতিবিলম্বে আফগানিস্তান থেকে সকল মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা জোর তাগিদ জানাচ্ছি।
৭. কাবুল প্রশাসন আমাদের বন্দীদের প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাই, চুক্তির ধারা অনুযায়ী আমাদের বন্দীদের মুক্তি তরান্বিত করতে আপনারা মার্কিন ও কাবুল প্রশাসনের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এ্যাডভোকেসি করুন।
৮. আমরা আমাদের আঞ্চলিক শত্রুদের প্রত্যেককে সাধারণ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যদি তারা তাদের কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে আসে। লক্ষ লক্ষ নারী-শিশু ও শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত ইসলামি ইমারতের অগ্রযাত্রায় আপনারা বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।
৯. সাধারণ জনগণের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। যুদ্ধকালীন মুজাহিদিনের হাতে যাতে সাধারণ জনগণের জান-মালের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক। এরপরেও আল্লাহ্ না করুন যদি কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে কিংবা ভুলবশত এমনটা হয় তবে যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট মুজাহিদদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এছাড়াও ক্ষয়ক্ষতির সমপরিমাণ অর্থদণ্ড ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, সাধারণ মানুষ প্রায়শই মার্কিন ও কাবুল বাহিনীর হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। শত্রুরা মুজাহিদিনের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে শেষে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর হামলা করে। আমরা শত্রুদের অনুরোধ করছি, আপনারা হামলার টার্গেট বাছাইয়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি ভঙ্গ করবেন না। সিভিলিয়ানদের উপর কোনোধরনের হামলা চালাবেন না।
১০. বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাস একটি বিশ্বব্যাপী-মহামারী আকার ধারণ করেছে। মানুষের মূল্যবোধ ও ফিতরাতের যখন অবক্ষয় ঘটে, আল্লাহ্ তা’আলার নাফরমানি যখন সর্বব্যাপিতা লাভ করে তখন আল্লাহ্ তা’আলা এসব আযাব-গযবের মাধ্যমে বান্দাকে সতর্ক করেন। আমাদের উচিৎ মহান আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সাহায্য কামনা করা, নিজেদের কর্মকাণ্ড সংশোধন করে নেওয়া এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আশাকরা যায় এতে মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে মরণঘাতি করোনা থেকে হেফাজত করবেন।
আমরা ইতোমধ্যে ইসলামি ইমারাহর বিভিন্ন অঞ্চল ও প্রদেশগুলোতে জনসচেতনামূলক ক্যাম্পেইন করেছি। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; এবং চিকিৎসা খাতে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দিয়েছি।
আমি আফগানের জনসাধারণকে বলবো, আপনারা সবধরনের স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। করোনা বিষয়ে সামাজিক পর্যায়ে সর্বাত্মক সচেতনতা তৈরি করুন। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসংস্থাগুলোর প্রতি আমার বিনীত *অনুরোধ থাকবে, আপনারা এই সংকট উত্তরণে আফগান জনমানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। বিভিন্ন চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট ইকুয়েপমেন্ট দিয়ে আমাদের চিকিৎসকদের সহায়তা করুন।
১১. আমি মুজাহিদ সৈন্যদের জনসাধারণের সাথে ভালো আচরণের নির্দেশ দিচ্ছি। আপনারা তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতেকরে তাদের অভিশাপ ও বদদু’আর কারণ হতে হয়। আপনারা তাঁদের জান-মালের প্রহরী; তাই নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ক্ষমতার অপব্যবহার, ভোগবিলাস ও লোভলালসা থেকে নিজেদেরকে নিবৃত্ত রাখুন।
সর্বশেষ আমি সমাজের উচ্চবিত্ত ও ধনিক শ্রেণির মানুষদের লক্ষ্য করে বলছি, আপনারা জানেন চলমান করোনা পরিস্থিতি কতো মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট করে দিয়েছে, কতো মানুষকে বেকারত্বে পর্যবশিত করেছে, শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে; এমতাবস্থায় আপনারা সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের প্রতি আপনাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। অনাথশিশু, অভাবী মানুষ এবং আহত মুজাহিদদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানে সচেষ্ট হোন।
ওয়াসসালাম
——————————————-
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রধান
আমিরুল মু’মিনিন শাইখুল হাদিস মৌলভী হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাহ
২৭.০৯.১৪৪১ হিজরি
২০.০৫.২০২০ ইংরেজি
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রধান
আমিরুল মু’মিনিন শাইখুল হাদিস মৌলভী হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাহ
২৭.০৯.১৪৪১ হিজরি
২০.০৫.২০২০ ইংরেজি
Comment