আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের বার্তা
‘রক্ত দিয়ে ঈদ উদযাপন’
‘রক্ত দিয়ে ঈদ উদযাপন’
بِسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
উপমহাদেশের মুসলিমরা যখন ঈদ উদযাপন করছে, বাহারিরকম নতুন পোশাকে সেজে দিগ্বিদিক ঘুরছে, আত্মীয়-অনাত্মীয়ের মিছিলে বাড়িতে সাজসাজ রব, ঠিক তখন কাশ্মীর উপত্যকার দুই তেজদীপ্ত মুজাহিদ যুবক নিজেদের তপ্তলাল তাজা খুন ঢেলে দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের শাহাদাহ্ কবুল করুন।
ঈদের দিন ভোরবেলা। অন্ধকার ভেদে সূর্যরশ্মি ঠিকরে পড়তে শুরু করেছে উপত্যকায়। ঘুমঘুম চোখে হেঁটে চলছেন দুই মুজাহিদ। জিহাদে অংশগ্রহণের পর থেকে বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন; শত্রুরা পিছু লেগে আছে সার্বক্ষণিক। অন্যমনস্ক হয়ে হয়তো ভাবছেন পরিবারের সদস্যদের কথা। এমতাবস্থায় মুশরিক সৈন্যদের একটি ফোর্স তাঁদেরকে ঘেরাও করে ফেলে। ফোর্স-কমান্ডার তাঁদের দুজনকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।
কিন্তু না, যে অন্তর এক আল্লাহ্ তা’আলার সামনে আত্মসমর্পণ করেছে, তা কখনো মুশরিক গো-পূজারীদের সামনে নত হতে পারে না। দুজনের হাতে দুটিমাত্র সাধারণমানের পিস্তল আর বারোটি বুলেট। লড়তে হবে এ নিয়েই। একজন মুজাহিদ কখনো শত্রুর হাতে পরাস্ত হতে পারে না। রবের জান্নাত যাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, সে কি কখনো স্বেচ্ছায় গ্লানির-বন্দিত্ব বরণ করে নিতে পারে? সে কি পারে মুশরিকদের সামনে আত্মসম্মান বিলিয়ে দিতে?
আচানক গুলি ছুঁড়তে শুরু করলো মুশরিক সৈন্যদল। আর বসে থাকার সময় নেই। তাকবির ধ্বনি তুলে সামান্য এ রসদটুকু নিয়েই ফায়ারিং শুরু করলেন দুই মুজাহিদ। একটি-দুটি করে নিমিষেই ফুরিয়ে গেলো সবগুলো বুলেট। তারপর। তারপর কী হলো? না, তাঁরা ঈদের জামা’আতে অংশগ্রহণ করেননি। তাঁদের জানাযাতেই বরং অংশ নিয়েছে মুজাহিদিন। শূন্য হাতে লড়েছেন তাঁরা; তবে প্রতিদান তাঁদের অনেকবড়। আল্লামা ইকবালের ভাষায়:
‘কাফিরের ভরসা তো অস্ত্রসস্ত্রে
মুমিন তো লড়ে তাঁর ইমানি জোরে’
তাঁদের এই শাহাদাহর ঘটনায় শিক্ষা রয়েছে আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের প্রতিজন মুজাহিদের জন্য যাঁরা আল্লাহ্ তা’আলার জমিনে তাঁর বিধানের বাস্তবায়নে লড়ে যায় নিরন্তর। প্রিয় মুজাহিদ, আপনারা কি তাঁদের এই আত্মত্যাগের ঘটনায় লড়াইয়ের প্রেরণা খুঁজে পান না? একজন মুজাহিদের অভিধানে আত্মসমর্পণ আর তোষামোদ শব্দদ্বয়ের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’আলার সন্তুষ্টিকল্পে জীবন বিলিয়ে দেয়ার মাঝেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা আর অনন্তজীবনের সুখ।
কিছু প্রো-পাকিস্তানী কীট মুজাহিদিনকে নিরস্ত্রকরণে সর্বান্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুরতাদ আইএসআই গোয়েন্দারা অসংখ্য মুজাহিদকে ভুলভাল বুঝিয়ে তাঁদের হাত থেকে অস্ত্র কেঁড়ে নিয়েছে, এমনকি মুজাহিদদের সহায়-সম্বল, টাকা-পয়সা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। অপরদিকে দাওলার উদভ্রান্ত কর্মকাণ্ড দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছেন অনেকে। মুজাহিদিনকে হত্যা করা থেকে শুরু করে তথ্যপাচার, গুপ্তচরবৃত্তির মতো ন্যাক্কারজনক কাজ পর্যন্ত করেছে দাওলার অনুসারীরা।
এতোসব ষড়যন্ত্র ও ঘাত-প্রতিঘাতের পরেও আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা’আর মূলনীতি থেকে একবিন্দু সরে আসেনি আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ। এই পথ রুক্ষ, এই পথ স্রোতের বিপরীতে। কিন্তু এ পথের প্রান্তরে রয়েছে দুটি প্রতিদান। হয়তো বিজয়, সম্মান আর শরিয়ার নে’য়ামত, অন্যথায় শাহাদাতের ঈর্ষণীয় মর্যাদা। তোমাদের এই লড়াই, দুঃসাহসী মোকাবিলা আর অবশেষে সম্মানের সাথে মৃত্যুকে আলিঙ্গন, এসব আমাদের হৃদয়ে শতো মুজাহিদের জীবন্ত সত্তা হয়ে বেঁচে থাকবে যুগযুগ; আমাদের দিয়ে যাবে অনুপ্রেরণা। শত্রুর তীব্র আক্রমণের মুখে সাহসে যোগাবে তাকবির ধ্বনি তুলে ঝাঁপিয়ে পড়তে।
তোমরা যাঁর সন্তুষ্টির আশায় জীবনকে করেছো তুচ্ছজ্ঞান, সেই মহান রবকে সাক্ষী রেখে আমরা পুনর্বার বলছি, তোমাদের এই রক্তের সাথে আমরা কখনো প্রতারণা করবো না। এই রক্তনদের উপরেই নির্মিত হবে খিলাফাহর ভিত; এই রক্তনদের উপরই প্রতিফলিত হবে আজাদি কাশ্মীরের সূর্যদীপ। ইনশাআল্লাহ্। ওহে কাশ্মীর ও হিন্দুস্তানের মুসলিমরা, তোমরা বুকে হাত রেখে বলো তো, এই শহিদদের রক্ত কি শুধুমাত্র তোমাদের সম্মান ও আত্মমর্যাদা ফিরে পাওয়ার উদ্দেশ্যেই নয়? তোমাদেরকে শান্তির ঘুম ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই নয়? তবুও তোমরা কেন মুজাহিদিনের বিরোধিতায় সিদ্ধহস্ত? কবে তোমরা ফিরবে বলো?
পরিশেষে দু’আ করি, আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের প্রচেষ্টগুলো কবুল করুন। আমাদের অন্তর থেকে সবধরনের বক্রতা দূর করুন। ওয়ামা ‘আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
-----------------------------------------------
শাওয়াল, ১৪৪১
মে, ২০২০
Comment