আফগানিস্তানের মুসলিম মুজাহিদ জাতি ও বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে অবস্থিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
১ – আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আপনারা আমার পক্ষ থেকে হৃদয়-নিংড়ানো শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকলের সিয়াম, সালাত, সাদাকাহ ও আমলে সালেহ কবুল করুন – এই দু’আ করছি।
আল্লাহ পাকের কাছে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাদের এমন এক ঈদুল ফিতর উদযাপন করার সুযোগ দিয়েছেন যখন আফগানিস্তান সকল বিদেশি দখলদার শক্তি হতে পুরোপুরিভাবে মুক্ত। ৪৩ বছরব্যাপি দীর্ঘস্থায়ী ও বিধ্বংসী যুদ্ধ অবশেষে সমাপ্ত হয়েছে এবং আফগানিস্তান এসেছে ইসলামি হুকুমাতের সুশীতল ছায়ায়। আফগান ভূমি শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
২ –প্রিয় দেশবাসী!
ইসলামি ইমারতের জন্য মুজাহিদীনদের জিহাদ, আত্মত্যাগ এবং সবার সবরকম প্রচেষ্টা উচ্চ প্রশংসার দাবিদার এবং আল্লাহর কাছে আমার দু’আ- তিনি যেন তাঁদের সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতে জাযায়ে খায়ের দান করেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা দুই দশকব্যাপি সকলের ত্যাগ ও শাহাদাতকে কবুল করুন এবং পঙ্গুত্ববরণকারি, শরণার্থী, আহত ও বন্দি সকলকে তাঁদের কষ্টের পরিপূর্ণ বিনিময় দান করুন। আল্লাহ আমাদের শক্তি দিন যেন আমরা বিধবা ও ইয়াতিমদের পরিবারের দেখভাল করতে পারি। (আমীন)
৩ – যেহেতু আফগানিস্তান আর বিদেশী আগ্রাসনের অধীনে নেই, তাই সময় এসেছে সকল আফগানের একত্রিত হয়ে তাদের দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও কল্যাণে কাজ করার।
নিরাপত্তা হলো উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মৌলিক শর্ত, এবং ইমারতে ইসলাম সৌভাগ্যক্রমে এই নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করেছে বহু শুহাদার প্রাণের বিনিময়ে। এখন আফগানিদের দায়িত্ব দেশকে পূনর্গঠনে কাজ করা এবং সততা ও সাহসের সাথে দরিদ্র ও অভাবীদের সঙ্গী হওয়া।
৪ – প্রিয় দেশবাসী!
ইসলামি ইমারত তার সকল বিরোধীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে এবং বাস্তবে তা বাস্তবায়ন করেছে। এই সাধারণ ক্ষমার ভিত্তিতে, আমি আবারও সকল আফগানকে তাদের দেশে আসার এবং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এদেশে আর কোনো ষড়যন্ত্রকারী অবশিষ্ট নেই। তবে কেউ যদি এই সাধারণ ক্ষমাকে উপেক্ষা করে দেশে যুদ্ধ কিংবা কোনোরূপ অস্থিতিশীলতা তৈরির প্রয়াস চালায়, তাকে আমাদের পক্ষ থেকে কঠিন পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে।
৫ – আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়া সব আফগানকে আমি আহবান করছি দেশে ফিরে আসার। আফগানিস্তান সকল আফগানদের জন্য বাসস্থান এবং সব আফগানদের অধিকার আছে শান্তিতে বসবাস করার। কেউ আপনাদের সাথে শত্রুতা করতে চাচ্ছে না। যারা দেশে ফিরে এসেছেন তারা সকলেই সম্মানের সাথে শান্তিতে বসবাস করছেন। অতএব, আপনারও স্বদেশে ফিরে যাওয়া উচিত এবং অন্য দেশে জোরপূর্বক অভিবাসনের জীবন ছেড়ে যাওয়া উচিত।
৬ – আফগানিস্তানের ইসলামি ইমারত দেশের পুনর্গঠনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। যার জন্য এটি দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান সমস্ত সক্ষমতা ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে একটি উপযুক্ত অর্থনৈতিক কমিটি নিয়োগ করেছে। এছাড়াও, জাতীয় ব্যবসায়ী, অর্থদাতা এবং শিল্পপতিদের আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে তাদের ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ইসলামী আমিরাত সকল নির্মাণ প্রকল্প ও প্রচেষ্টার পিছনে দাঁড়াবে এবং জোরালোভাবে সমর্থন করবে। আমি আফগানিস্তানে বিনিয়োগের জন্য দেশি ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানাই। ইসলামি আমিরাত আপনাকে সহযোগিতা করবে এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত উপায় ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে।
৭ – ইসলামি ইমারত আঞ্চলিক ও বিশ্বের সব দেশের সাথে স্থিতিশীল সম্পর্ক চায়। আমরা চাই অন্য দেশগুলো উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে আমাদের সাথে লেনদেন করুক।
দোহা চুক্তি অনুযায়ী আফগানিস্তানের কোনো বিষয়ে আমেরিকার বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ ইমারতে ইসলাম সহ্য করবে না, একই সাথে আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি ইমারতে ইসলাম দোহা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করবে। ইমারতে ইসলাম সর্বদা চুক্তি রক্ষা করে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও চুক্তি রক্ষা করেই চলবে।
৮ – নিঃসন্দেহে পৃথিবীটা একক গ্রামে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি দেশ একে অন্যের সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বের নিরাপত্তা ইস্যুতে আফগানিস্তানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব আমরা চাই সব দেশ ইসলামি ইমারতেকে স্বীকৃতি দিক, যাতে করে আমরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আলাপ-আলোচনা করে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি।
প্রতিবেশী দেশগুলোকে আমরা বলতে চাই, আফগান শরণার্থীদের সাথে আপনারা আন্তর্জাতিক বিধি মোতাবেক আচরণ করুন। তাদেরকে সম্মানের সহিত দেশে ফিরে আসার সময় দিন। মানবাধিকারের লঙ্ঘন দু’টি দেশের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি ব্যতিত কিছুই করতে পারে না। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাকে বলতে চাই, আফগানদের দেশে ফিরে আসার জন্য যথাযথ সুযোগ দেয়া হোক।
৯ – আমরা আমাদের প্রতিবেশী এবং অন্যান্য দেশগুলির প্রতি আহ্বান জানাই- আফগান শরণার্থীদের সাথে আন্তর্জাতিক অনুশীলন এবং মান অনুযায়ী আচরণ করতে। তাদের স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সাথে তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য সময় এবং অনুমতি দিন। মানবাধিকার লঙ্ঘন কারো স্বার্থে নয়, বরং তা জাতিগুলোর মধ্যে ক্রমাগত বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করে। আমি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির প্রতি আহ্বান জানাই, আফগানদের তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য।
১০ – ইসলামি শাসনব্যবস্থার অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে আমর বিল মা’রুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার। এই লক্ষ্যে দায়িত্বশীল প্রশাসনকে আমি আহবান করছি শরীয়াহ এর দিকে প্রজ্ঞার সহিত, আন্তরিকতা দিয়ে ও বাড়াবাড়ি পরিহার করে মানুষকে দাওয়াহ দিতে। আফগানদেরও উচিত দায়িত্বশীল প্রশাসনকে ভালো কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ এর ক্ষেত্রে সহায়তা করা, যাতে করে সবাই মিলে একসাথে দেশ থেকে বিদ্রোহী মনোভাব ও গুনাহ এর কাজগুলো দূর করা যায়।
১১ – আফগানিস্তানে পপি ও অন্যান্য সব রকমের মাদকের চাষাবাদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামি ইমারতের এই নির্দেশকে অবশ্যই সবাইকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। গর্হিত এই কাজের জন্য জড়িত সবাইকে মূল্য দিতে হবে।
পপি সমস্যা সমাধানের জন্য ইমারতে ইসলাম কৃষকদের বিকল্প জীবিকা ও চাষাবাদের ব্যবস্থা করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও ইমারতে ইসলাম এই ব্যাপারে সাহায্য আশা করছে।
১২ – আমরা আফগানিস্তানে নারী ও পুরুষের সকল শরয়ী অধিকারকে সম্মান করি এবং তার পূর্ণ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবং এই ব্যাপারে অন্য কারো চিন্তিত হবার প্রয়োজন নেই। মানবাধিকারের দোহাই দেখিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কোনো অবকাশ এখন নেই। গত ২০ বছরের তুলনায় আফগানরা এখন তাদের জীবন, নিরাপত্তা এবং মর্যাদার মতো অধিকারগুলো আরও বেশি ভোগ করে, যেটি উপেক্ষা করা যায় না। আফগানরা এখন বিগত ২০ বছরের তুলনায় ভালো আছে।
১৩ – ইমারতে ইসলাম শিক্ষার ভিতকে মজবুত করতে দেশজুড়ে নতুন স্কুল, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করছে। দ্বীনি শিক্ষার সাথে আধুনিকতার সমন্বয় করতে ও শিক্ষার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে ইমারতে ইসলাম কাজ করছে। ইমারতে ইসলাম শিক্ষকদের সময়মত বেতন-ভাতা প্রদান ও শিক্ষাক্রম তৈরির ব্যবস্থা করেছে। আই.ই.এ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, শিক্ষা আমাদের স্বদেশীদের উদ্ধারের চাবিকাঠি এবং দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে।
১৪ – ইসলামী ইমারত জাতীয় স্বার্থ এবং ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে বাক স্বাধীনতার প্রতিও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং সুস্থ ও ইতিবাচক সম্প্রচার সমর্থন করে। আমাদের সম্প্রচার আউটলেটগুলিকে – সরকারী এবং বেসরকারী উভয়ই – আমাদের জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে এবং আমাদের ইসলামী বিশ্বাস ও বৈধ রীতিনীতির সাথে সঙ্গতি রেখে, এবং অবশ্যই গঠনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হবে। আফগানদের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ না করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।
১৫ – যুদ্ধে জর্জরিত হবার কারণে আফগানিস্তানের অনেক এলাকার স্বাস্থ্যখাত গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলোকে আমরা এই ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করতে আহবান করছি। স্বাস্থ্যখাতকে পুনর্গঠিত করতে যা করা দরকার আমরা করবো।।
১৬ – বিগত কয়েক মাসে ইমারতে ইসলাম আফগানিদের আত্মরক্ষার জন্য শক্তিশালী ও যুগোপযোগী একটি ইসলামি সেনাবাহিনী গঠনের ভিত স্থাপন করেছে। একই সাথে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য একটি কার্যকর পুলিশ বাহিনী এবং জাতীয় স্বার্থরক্ষায় একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী গঠন করা হয়েছে। আমাদের সেনাদল উচ্চ মনোবল সম্পন্ন, নৈতিক এবং আফগানিস্তানকে রক্ষায় তারা সদা সচেষ্ট থাকবে। এবং কাউকে আফগানিস্তানের মাটি, নিরাপত্তা এবং স্বার্থের ক্ষতি করতে দেবে না তাঁরা।
১৭ – ইমারতে ইসলামের সকল অফিসার, মুজাহিদীন এবং দায়িত্বশীলদের আহবান করছি আফগানদের সাথে সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে। এবং কোষাগারের অর্থের ব্যাপারে আপনাদের অত্যন্ত সতর্ক হবার আহবান করছি। কোষাগার আপনাদের হাতে সঁপে দেয়া আমানতস্বরূপ, এর যথেচ্ছ ব্যবহার, অপচয় কিংবা আত্মসাৎ করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। কোষাগারের অর্থের ব্যাপারে গাফেল প্রত্যেককে ইমারতে ইসলামিয়ার পক্ষ থেকে কঠিন পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে, আর আল্লাহ পাকের আযাব তো তার জন্য অবধারিতই।
আমি দেশের সকল ধনী ও বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাই- এই শুভ দিনে তাদের দরিদ্র ও অভাবী প্রতিবেশী সহ নাগরিকদের অবহেলা না করে, তাদের সাহায্য করার জন্য। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
পরিশেষে আমি কথার সমাপ্তি টানছি সকলের প্রতি ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে। আপনাদের সবার ঈদ সুখী ও আনন্দময় হোক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আফগানিস্তানকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা দান করুন। (আমীন)
আমির-উল-মুমিনীন
শাইখুল হাদিস হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাহ,
সর্বোচ্চ নেতা, আফগানিস্তানের ইসলামি ইমারত।
২৭/৯/১৪৪৩ হিজরি
২৯/৪/২০২২ ঈসায়ী
অনুবাদক : আব্দুল্লাহ বিন নজর
সংকলক : ত্বহা আলী আদনান
Comment