আয়া সুফিয়া কি বোকামির নিদর্শন হয়ে গেছে?
- শাইখ আবু মুহাম্মাদ মাকদেসী
- শাইখ আবু মুহাম্মাদ মাকদেসী
শিরোনামের কাঠিন্যতার জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি; ইহার দ্বারা উদ্দেশ্য কোন ব্যক্তি নয় বরং নির্দিষ্ট চিন্তাধারা।
তবলা বাদক শাইখরা আজান ফিরে আসার মত ঘটনায় এরদোগানের জন্য প্রকাশ্যে ও গোপনে চেঁচামেচি করছে। আল্লাহর শত্রু আতাতুর্ক আয়া সুফিয়াকে জাদুঘর ঘোষণা করার প্রায় আশি বছর পর আবার সেখানে নামায চালু হবে। আতাতুর্ক ইহা ছাড়াও আরো অসংখ্য দ্বীন ও শরীয়তের নিদর্শন পরিবর্তন করেছিল।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এই বিশাল বিজয়েও বর্তমান প্রশাসনের কাছে আতাতুর্কের অবস্থান বা সম্মান একটুও পরিবর্তন বা কমে নি। তারা আজান ফিরিয়ে আনাকে সম্মান ও উদযাপন করছে কিন্তু এই আযান নিষিদ্ধ করার মূল আদেশদাতা যে ছিল তার সম্মানকে কমায় নি।
নিঃসন্দেহে এই ধরনের ফলাফল এত সমস্যা সত্ত্বেও; শুধু নিচুশ্রেনীর ব্যক্তিদের কাছে সম্মানিত হয়। এমনকি এই ব্যাপার তারা যুদ্ধ ও বিজয়ের হাদিসগুলো ব্যবহার শুরু করেছে।
কিন্তু যারা প্রশাসন ও তাদের চক্রান্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে; সে যদি সাধারন মানুষও হয়ে থাকে; মিডিয়ার মাধ্যমে এই ঘটনাকে অনেক বেশি প্রচারের মাঝে সন্দেহ খুঁজে পাবে।
বিশেষ করে তার স্বরণ শক্তি যদি মাছের বুদ্ধির মত না হয় এবং মাত্র কিছু বছর পূর্বে এরদোগানের জবাবের কথা মনে থাকে যা সে আয়া সুফিয়াতে নামাজ ফিরিয়ে আনার দাবি কারীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল। সেখান সে বলেছেঃ (সুলতান আহমদ মসজিদ ও সুলাইমানিয়া মসজিদ কি ভরে গেছে যার ফলে আয়া সুফিয়া খুলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে?! যে আমাদের মসজিদগুলোতে নামাজ পড়বে সে দেখতে পাবে মুসল্লি দ্বারা দুই কাতারই পূর্ণ হচ্ছে না।)
তাহলে আজকের দিনে এত ঢোল বাজানোর পিছনে কি কারণ হে এরদোগান ?! এখন কি মসজিদগুলো ভরে গেছে ও জায়গা সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে এবং তোমাদের আয়া সুফিয়া প্রয়োজন হয়েছে ?! নাকি তুমি তুর্কিদের ধর্মীয় ও জাতীয় অনুভূতি নিয়ে খেলা করছ; যাতে সর্বশেষ নির্বাচনে যে ভোটগুলো কম হয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনতে পার! যার ফলে একসময় তোমার দল ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধী পক্ষের সাথে জোট করতে বাধ্য হয়েছিল।
দশ তারিখ আয়া সুফিয়াতে আজান দেওয়া হয়েছে এবং মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা লক্ষ্য করেছি। যার ফলে তুর্কি প্রশাসন ও এরদোগানের দলের প্রতি ধর্মীয় আবেগ শুধু তুর্কি জনগনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং এই প্রচারণা ও অনুভূতি বিভিন্ন শাইখ, চিন্তাবিদ এবং জিহাদীদের মাঝেও ছড়িয়ে পরেছে। কিছু দিন পর সম্ভবত সেখানে জুমার সালাত আদায় করা হবে; তখন এই আলোচনা আবার নতুন করে শুরু হবে; অনেক শাইখ ও ডক্টররা নতুন করে তবলা বাজাবে।
অনেক নির্বোধ মনে করে, আয় সুফিয়ার মিনারে আযানের আওয়াজ উঁচু হওয়াতে আমরা দুঃখিত; তারা ভাবে মুসলমানদের খুশি এবং যা তারা বিজয় মনে করে তাতে আমরা দুঃখ পাই। আশ্চর্য! অবশ্যই এটা মিথ্যা অপবাদ। আমরা কখন এই ধরনের কিছু প্রকাশ করেছি?
কিভাবে সম্ভব অথচ আমরা যেখানে শিরিক ও মূর্তি ছিল সেখান থেকে তাওহীদের বানী আবার উচু হওয়াতে খুশি প্রকাশ করেছি; আমরা আশা করি আয়া সুফিয়াতে যা শুনেছি অতি শীঘ্রই তা আন্দালুস, ইশবিলিয়াহ, গ্রানাডা ও অন্যান্য জায়গার মসজিদের ব্যাপারেও শুনবো যা খ্রিস্টানদের গির্জায় পরিণত হয়েছে।
কিন্তু এই বিজয়ে কখনোই চক্ষু প্রশান্ত হয় না যখন তার সিদ্ধান্ত এমন শিরকী পার্লামেন্ট থেকে আসে যা নিজেই মানব রচিত আইন, তাগুত ও শিরকের বিধান তৈরী করে। আমরা বিজয় আশা করি এবং তা তাওহীদ ও জিহাদের পতাকা তলে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু সেই সাথে আয়া সুফিয়ার আজান যা মুশরিকদেরকে দুঃখিত করেছে আমরা তাতে দুঃখিত নয়।
আমাদের দুঃখের কারণ হচ্ছে তাগুতের পক্ষ থেকে ইহাকে নিয়ে খেলা ও ধোকাবাজি করা। জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য দ্বীনকে ব্যবহার করা। কোন সন্দেহ নেই এটা পথভ্রষ্ট নেতাদের ফিতনা যা দাজ্জালের ফিতনা অনুরূপ। প্রত্যেক নবী তার উম্মতকে ইহা থেকে পানাহ চাইতে ও তাতে ধোকাগ্রস্থ না হতে আদেশ করেছেন।
তা না হলে কিভাবে এরদোগানের ধর্মনিরপেক্ষতা বিশাল বিজয়ে পরিণত হয়! কিভাবে আয়া সুফিয়ার মিনারে আযানের আওয়াজ উঁচু হওয়াতে সেখানে আল্লাহর নবীর হাদীসগুলোকে ব্যবহার করা হয়! যদি এটা তাদের উপর দাজ্জালের ফিতনা না হয় ?!
কিভাবে সাংবিধানিক জিহাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা ভালো কাজে পরিনত হয়? গণতান্ত্রিক ও পার্লামেন্ট কেন্দ্রিক সংগ্রামের জন্যে জেল খাটা; সত্যবাদিতা দায়ীদের ত্যাগে পরিণত হয়? কিভাবে শহীদ ও মুজাহিদদের বিজয়ে পরিনত হয় ?!
তোমরা কোন মুজাহিদ ও দায়ীদেরকে উদ্দেশ্য করছ? বিভিন্ন ফ্রন্টে আমাদের ভাইদের জিহাদ কি ধর্মনিরেপক্ষতা প্রসার করার জন্যে বা শুধু আয়া সুফিয়ার মিনারে আজানের আওয়াজ উচু করার জন্যে ?!
যদি বলেনঃ অবশ্যই না
আমরা বলবঃ তাহলে শাইখরা তবলা ও বাঁশি বাজিয়ে কাদেরকে উদ্দেশ্য করছে? তারা কি শহীদ দ্বারা তুর্কিতে আদনান মেন্দারেসের মত যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদেরকে বুঝাচ্ছে? নাকি আরবাকান ও এরদোগানের মত যারা বন্দি হয়েছে তাদেরকে বুঝাচ্ছে? আমরা স্পষ্ট ও সরাসরি কথা পছন্দ করি? অস্পষ্ট কথা অপছন্দ করি যা দ্বারা সবাইকেই উদ্দ্যেশ্য করা যায়।
কিছু তুর্কি ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিঃ আয়া সুফিয়ার আযানে অমুক শাইখদের তবলা বাজানো ও বিজয় ঘোষণাতে তুর্কি জনগণ কি বুঝবে? তমুক শাইখ “জিহাদ ও ত্যাগে”র প্রশংসা দ্বারা যা এই ফলাফল নিয়ে এসেছে তা থেকে তারা কি বুঝবে?
তারা বলেছেঃ এতে এরদোগানের শাসনের সম্মান ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না; যে চলমান সময়ে নির্বাচনে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে; তাই তার এই ধরনের মিডিয়ার সাপোর্ট দরকার ছিল যা এই সমস্ত শাইখরা করে দিয়েছে, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়।
সেখানে যখন নামাজ চালু হবে তখন এই আওয়াজ আবার উচু হবে; এরদোগান চায় তার বিরোধীদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে, যাতে তুর্কি জনতার সামনে মহান বিজয়ী হিসেবে নিজেকে পেশ করতে পারে। কেমন যেন তার সমস্ত বিরোধীরা ইসলামের শত্রু। কারণ আয়া সুফিয়ার ক্ষেত্রে মুহাম্মদ আল ফাতেহের অবস্থান তুর্কিদের মাঝে অনেক প্রশিদ্ধ এবং ব্যবহার যোগ্য। তার মধ্যে রয়েছে আয়া সুফিয়াতে নামাজ আদায়ে বাধাদানকারী সকলের জন্য আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতাগণ এবং সমস্ত মানুষের লা’নত।
তারা জানে এই কার্ডগুলোকে খেলায় কখন ও কিভাবে ব্যবহার করবে; এটা দাজ্জালের ফিতনা অনুরূপ যেখানে দ্বীন মিথ্যাকে সত্য বানানোর জন্যে ব্যবহার করা হয়। তারা এই লা’নতকে নির্বাচনে তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে, যদিও তা কখনোই মাল’উন আতাতুর্কের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে নি।
এজন্য আমরা নিশ্চিত করে বলবো আয়া সুফিয়াতে আজান আমাদেরকে দুঃখিত করেনি; এমনকি নির্বাচনে বিজয়ের জন্য এরদোগান ইহাকে ব্যবহার করাতেও আমরা দুঃখিত হইনি। কারণ আমরা অনেকবার বলেছি, বর্তমানে অন্য দলগুলোর অবস্থা এরদোগান থেকে আরও খারাপ।
আমাদেরকে দুঃখিত করেছে কিছু শাইখ ও দায়িদের বিপথগামীতা ও ভ্রষ্টতা; গনতন্ত্র ও ধর্মনিরেপক্ষতার ত্যাগের পক্ষে তবলা ও বাঁশি বাজানোতে অংশগ্রহন; গনতন্ত্র ও নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুতকৃত ধোকায় খুশী হওয়া।
আল্লাহ তায়ালাই সত্য পথের দিকে হেদায়াত দাতা।
Comment