বিসমিল্লাহি রহমানির রাহীম।
১। বেশ কিছুদিন যাবত সিলেট এলাকা বন্যায় প্লাবিত। সোশাল মিডিয়া সিলেটের বন্যার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে ভরে গেছে কিন্তু সরকার নিয়ন্ত্রিত হলুদ মিডিয়াগুলো এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চুপ। শেষ মুহুর্তে ঠেকায় পরে কেউ কেউ কিছু নিউজ করছে। এমনিতেও কুফরি আইনে শাসনকারী এসকল ইসলাম-বিদ্বেষী প্রশাসন থেকে কী বা আশা করা যায়! তাই আমরা কখনোই উম্মাহর ব্যাপারে ওদের নাম-কা-ওয়াস্তে ত্রাণের উপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না!
২। সম্মানিত মুজাহিদিন ভাইগণ,
পুরো মুসলিম উম্মাহ এক দেহের মতো। আমরা কীভাবে উম্মাহর এই বিপদে চুপ করে থাকতে পারি? আমাদের সংখ্যা যতই কম হোক, সামর্থ্য যতই সীমিত হোক - আমরা সাধ্যমতো এই বিপদের দিনে উম্মাহর সাহায্যে উঠে দাঁড়ানো উচিত। হয়তো আমরা নিজ তানজিমের নামে সেখানে যেতে পারবো না কিন্তু আমাদের রব তো তা দেখবেন, জানবেন। তাঁর কাছেই শুধু আমরা প্রতিদান চাই, দুনিয়ার কোন বাহবা নয়।
৩। আমরা সকল মুজাহিদিন ভাইগণকে আহবান করছি, নিজ নিজ এলাকায় সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে উদ্ধার তৎপরতায় কিংবা ত্রাণ বিতরণে কিংবা মেডিকাল সাপোর্ট মিশনে অংশ নেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিন।
৪। বন্যা দূর্গত এলাকাসমূহে সাহায্যের সম্ভাব্য উপায়সমুহ হতে পারেঃ
ক। নৌকা / ট্রলার ইত্যাদি নিয়ে দূর্গত এলাকায় গিয়ে নিজেরা উদ্ধারকার্য পরিচালনা।
- এটি এখন সবচেয়ে বেশী জরুরী। জীবন রক্ষাকারী আইটেম এই মুহুর্তে খাবারেরও আগে নৌকা। দূর্গত লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ কোন জায়গায় পৌঁছে দেয়ার জন্য নৌকা খুবই জরুরী।
- সিলেটে এখন মানুষ এক বেলার জন্য এক লক্ষ টাকা অফার করেও নৌকা পাচ্ছে না।
- অনেকে ত্রাণ বা উদ্ধারে যাচ্ছেন কিন্তু ফিরে আসতে হচ্ছে নৌকার অভাবে।
- আমাদের চেষ্টা করা উচিত - নিজে এলাকার আশেপাশে কোথাও থেকে নৌকা-ট্রলার ইত্যাদি কিনে বা কয়েকদিনের জন্য ভাড়া করে ট্রাকের মাধ্যমে কিংবা নৌপথে সিলেট-সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা। এটি করা গেলে এটি হবে সর্বোত্তম সাহায্য আল্লাহু আ'লাম।
- এমনকি নৌকা জোগাড় করতে না পারলে, সিলেটের আশেপাশের এলাকার ভাইরা চাইলে কলাগাছ, প্লাস্টিক ড্রাম ইত্যাদি ম্যানেজ করে ভেলা বানিয়ে নিয়ে যেতে পারেন আশেপাশের এলাকায়।
খ। নিজেরা উদ্ধারকার্য পরিচালনা করতে অক্ষম হলে অন্য ইসলামিক সংস্থাসমূহ যারা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে - দূর্গত এলাকায় তাদের হাতে নৌকা পৌছে দেয়া। তবে নিজেরা যথাসম্ভব অংশগ্রহণ করা উত্তম।
গ। মোমবাতি-ম্যাচ, রান্না করার স্টোভ বা চূলা, শূকনা খাবার-কাপড়, ঔষধ, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদি পৌঁছে দেয়া। এসব এখন সিলেটে দুষ্প্রাপ্য এবং দাম অনেকগুন।
ঘ। দূর্গত এলাকায় খাবার পানি বেশী বহন করা সম্ভব না। এর চেয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট নিয়ে যাওয়া উত্তম হতে পারে। যেমন Halotab
- হ্যালোট্যাব : সাধারণত প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট গুলিয়ে রেখে দিলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। এভাবে পরিশোধিত পানিতে কিছুটা গন্ধ থাকলেও সেটা পরিষ্কার স্থানে খোলা রাখলে বা পরিচ্ছন্ন কোন কাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করলে গন্ধটি বাতাসে মিশে যায়।
ঙ। ডাক্তার ভাইদের সাথে কিছু স্বেচ্ছা-সেবক ভাই মিলে টিম গঠন করা যেতে পারে দূর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য।
চ। দুয়া জারি রাখুন। আমরা সকলে প্রচুর দুয়া ও ইস্তিগফার করা দরকার যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মাহর উপর থেকে এই বিপদ দূর করে দেন। যারা উপরের সকল কাজে জড়িত থাকলেও তাদেরও এই কাজ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে করা উচিত। আর যারা থাকবেন না, তাদের কথা তো বলাই বাহুল্য।
৫। সামাজিক ত্রাণ-কার্যক্রমের ব্যাপারে কিছু জরুরী বিষয়।
ক। আমরা নিজ নিজ এলাকার দ্বীনদার মানুষদেরকে একত্রিত করে ফান্ড জোগাড় করে এই মিশনে নেমে পরার আপ্রাণ চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। যদি সম্মিলিতভাবে ফান্ড সংগ্রহ করে নিজেরা গিয়ে ত্রাণ-বিতরণ বা উদ্ধারকাজে অংশ নিতে একান্তই অপারগ হই, তাহলে সংগৃহীত ফান্ড আমাদের নিজ এলাকার অন্য কোন ইসলামী সামাজিক সংগঠন কিংবা সোশাল মিডিয়াতে পরিচিত কোন ইসলামী সাহায্য সংস্থাকে পৌছে দেয়া যায়।
খ। উদ্ধ্বার কার্যক্রম বা ত্রাণ কার্মক্রমের জন্য বন্যা দূর্গত এলাকার মূল রাস্তার আশেপাশের এলাকা থেকে ভিতরের দিকের এলাকা প্রাধান্য পাবে। যদি যাবার সামর্থ্য থাকে তাহলে সিলেট শহরের চেয়ে সুনামগঞ্জ বা গ্রামাঞ্চলে বেশি ফোকাস করা উচিত।
গ। যাদের নিজেদের কোন বন্ধু, প্রতিবেশী, ক্লাসমেট, আত্মীয় সিলেট বা আশেপাশের এলাকায় আছেন - পারলে তাদেরকে সাথে নিন বা তাদের সাহায্য নিন। এতে আমাদের এই তৎপরতায় ফায়দা বেশী হবে ইনশাআল্লাহ।
ঘ। এই উদ্যোগে আপনার বন্ধু, প্রতিবেশী, ক্লাসমেট, আত্মীয়, এলাকার মুরব্বী, গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে যথাসম্ভব সামিল রাখুন, সকলকে একটিভেট করুন। পারলে এটিকে একটি অঘোষিত কিংবা ঘোষিত "ইসলামিক সামাজিক সংগঠন" হিসেবে রূপদান করুন যেন ভবিষ্যতেও এই সংগঠন এ রকম কার্যক্রম সহজেই গ্রহণ করতে পারে ইনশাআল্লাহ। তবে অবশ্যই এর মূল উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি থাকুন এবং এর নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে রাখুন। তানজিমের তরফ থেকে আপনার কাছে এটি একটি চাহিদা। এটি আপনি নিজের জন্য করবেন না বরং তানজিমের চাহিদা মোতাবেক করবেন - তাই এতে রিয়া এর ভয় নেই ইনশাআলাহ।
আল্লাহ আমাদের কাজে বারাকাহ দান করুন, কাজসমূহকে কবুল করুন। বিপদগ্রস্থ উম্মাহকে সাহায্য করুন। আল্লাহুম্মা আমীন
Comment