Announcement

Collapse
No announcement yet.

কিতাবুত্ তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল: তৃতীয় পর্ব- “ভালোবাসি তোমায় হে জিহাদ”

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কিতাবুত্ তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল: তৃতীয় পর্ব- “ভালোবাসি তোমায় হে জিহাদ”














    Cover Pages




    আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
    মুহতারাম ভাইয়েরা!
    আলহামদুলিল্লাহ! ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ!!
    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অশেষ মেহেরবানীতে আজ আপনাদের সামনে আমরা কিতাবুত তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল” কিতাবটিরতৃতীয় পর্ব: ভালোবাসি তোমায়, হে জিহাদ!” নিয়ে হাজির হয়েছি। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ!!!



    আলহামদুলিল্লাহ! প্রথম এবং দ্বিতীয়- পর্ব দু’টি প্রকাশিত হওয়ার পর আপনারা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, তাতে আমরা আপনাদের হৃদয় নিঙরানো ভালোবাসার উষ্ণ পরশ অনুভব করেছি। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ!!! আপনাদের নেক দু‘আ-ই আমাদের পাথেয়, সম্মুখে পথচলার প্রেরণাধার!
    কিতাবুত তাহরীদ, তৃতীয় পর্ব নিয়ে কিছু কথা:


    প্রিয় ভাই! আমরা জিহাদী জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে সকলেই কম-বেশি অবগত রয়েছি। জিহাদ কোনো ছেলে খেলা নয়। জিহাদ মানে অশ্রু, ঘাম আর রক্তের হোলিখেলা। জিহাদ মানে সতত ত্রস্ততা, ভয় ও আশংকা। জিহাদ মানে বাতিলের অন্ধকার কারাগারে নির্যাতনের স্টীমরোলার আর ধুঁকে ধুঁকে মরা। জিহাদ মানে দিবানিশি মৃত্যুর হাতছানি আর জীবনের আশংকা। জিহাদ মানে বুলেটের বিদীর্ণ আঘাতে জমিনে লুটিয়ে পড়া; বোমার আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও টুকরো-টুকরো হওয়া।
    তাছাড়া, জিহাদ মানে নিন্দুকের নিন্দা, আর সমাজ থেকে বয়কট হওয়া। জিহাদ মানে পরিবার-পরিজন হারানো আর ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়া। এককথায়, জিহাদ মানে দুনিয়ার সর্বস্ব খোয়ানো; সর্বোচ্চ ক্ষয়-ক্ষতি আর দুঃখ-যাতনার সম্মুখীন হওয়া। এ এক ঈমানের ভয়ানক ও চরম পরীক্ষা!
    কিন্তু তারপরো কেন আল্লাহ তা‘আলা বললেন,
    قُلۡ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ وَإِخۡوَٰنُكُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ وَعَشِيرَتُكُمۡ وَأَمۡوَٰلٌ ٱقۡتَرَفۡتُمُوهَا وَتِجَٰرَةٞ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَآ أَحَبَّ إِلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٖ فِي سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٢٤

    বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা (ক্ষতি বা) বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর, এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লার বিধান আসা পর্যন্ত (দেখ, তোমাদের পরিণতি কি হতে যাচ্ছে), আর আল্লাহ তা‘আলা ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ২৪)
    অদ্ভূত বিষয়! জিহাদের মতো এমন একটি কঠিন আমলকে দুনিয়ার সবকিছু থেকে এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও ভালোবাসতে হবে; এটি কী করে সম্ভব, যার প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে দুঃখ-কষ্টের অমোঘ পঙক্তিমালা???
    আবার রাসূলুল্লাহ , তাঁর নিজ হাতে গড়া সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তী সলফে সালেহীনদের সীরাতের দিকে তাকালে অবাক হতে হয়, কিভাবে তারা জিহাদকে এত ভালোবেসেছেন!! কিভাবে জিহাদ প্রেমে তাঁরা তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন!! এটা কিভাবে সম্ভবপর হয়েছে??? কী তার রহস্য???
    সেই রহস্যই উন্মোচিত করা হয়েছে আমাদের আজকের পর্বটিতে- “ভালোবাসি তোমায়, হে জিহাদ!” (আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।)
    প্রিয় ভাই, চলুন না, আমরা জিহাদ প্রেমের সেই রহস্য উদ্ঘাটনে নেমে পড়ি এবং জিহাদপ্রেমের অকুল দরিয়ায় ঝাঁপ দিয়ে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করি।
    আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন।

    Back Page
    ************************************************** ************
    কিতাবুত তাহরীদআলাল ক্বিতাল: তৃতীয়পর্ব
    ভালোবাসি তোমায়, হে জিহাদ!


    কিতাবের পিডিএফ লিংক:
    https://archive.org/details/tahrid3

    কিতাবের টেক্সট লিংক:
    https://justpaste.it/8bid7


    ************************************************** ************
    ************************************************** ***********

    এই পর্যন্ত প্রকাশিত কিতাবুত তাহরীদ এর পর্বগুলো পড়ুন নিচের লিংকে

    পর্ব-১: আগ্নেয়গিরি হতে অগ্নুৎপাত:
    দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক-https://bit.ly/tahrid1
    পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/kitabuttahrid1
    ....................................
    পর্ব 02: তাওহীদ ও জিহাদ
    দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid2
    পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/kitabuttahrid2
    ....................................
    পর্ব ০৩: ভালোবাসি তোমায় হে জিহাদ!
    দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid3
    পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/tahrid3
    ......................................
    পর্ব ০৩: তোমাকেই শুধু চাই হে শাহাদাত!
    দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid4

    পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/tahrid4_20230125
    ************************************************** **********

    ************************************************** ***********
    ইসলামের সোনালি অতীত, উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত বিজয়গাঁথা নিয়ে একটি কিতাব-
    কালজয়ী ইসলাম”
    দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্ পোস্ট লিংক: https://bit.ly/kaljoyi-islam
    পিডিএফ লিংক: https://bit.ly/kaljoie-islam
    জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

    ************************************************** ************






  • #2
    উৎসর্গ:-

    “কিতাবুত্ তাহরীদ্ ‘আলাল ক্বিতাল” কিতাবটি সেই সকল মর্দে “মুজাহিদ ফী সাবিলিল্লাহ্” ভাইদের প্রতি উৎসর্গ করা হল-
    • যারা হক প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এবং তাগুত ও বাতিলের মূলোৎপাটনে শীশাঢালা প্রাচীর।
    • যারা নিজেদের জান-মাল আল্লাহর কাছে বিক্রয় করে দিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।
    • যারা নিজেদের বাড়ী-ঘর ত্যাগ করে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল ও গিরিগুহাকে নিজ আবাসস্থল বানিয়ে নিয়েছেন।
    • যারা কখনো বন্দুকের ছায়াতলে আবার কখনো ট্যাংকের গোলায় জান্নাত খুঁজে বেড়ান।
    • যারা অসহায় উম্মাহর নারী-শিশু ও মজলুমানদের ফরিয়াদের জবাবে অলী ও নাসীর (বন্ধু ও সাহায্যকারী) রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
    • যারা উম্মাহর ইয়াতীম শিশুদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য নিজেদের সন্তানদেরকে ইয়াতীম করছেন।
    • যারা উম্মাহর মা-বোনদের ইজ্জত-আব্রু আর সম্ভ্রম রক্ষার্থে নিজেদের মা-কে সন্তানহারা আর স্ত্রীকে বিধবা বানাচ্ছেন।
    • যারা গভীর রজনীতে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মহান রবের দরবারে শাহাদাতের মৃত্যুর জন্য আবেদনে মগ্ন।
    • যারা দুশমনের মোকাবেলা করতে গিয়ে হাত-পা, নাক-কান ইত্যাদি হারিয়ে পঙ্গুত্বের জীবন যাপন করছেন।
    • যারা ঘোড়ার লাগাম ধরে কোনো অসহায় নারী ও শিশুর চিৎকার ও মজলুম ভাইয়ের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত।
    আমার প্রাণপ্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা!
    আপনাদের করকমলে আমার হ্রদয়ের উষ্ণ ভালোবাসার এক চিলতে এই নযরানা মেহেরবানী করে গ্রহণ করুন।
    আপনাদের এক নগণ্য আশেক
    -মুসআব ইলদিরিম




    Comment


    • #3
      بسم الله الرحمن الرحيم


      কিতাবুত তাহরীদ আলাল ক্বিতাল, তৃতীয় পর্ব

      ভালোবাসি তোমায়, হে জিহাদ!
      মুসআব ইলদিরিম

      সূচিপত্র
      ....................
      =>একজন জিহাদ প্রেমিকের ঐতিহাসিক চিঠি
      =>ইবাদত নিয়ে খেল-তামাশা!!!


      **ওহে ইবাদতকারী! ওহেআল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিঅন্বেষণকারী!
      **ওহে সওয়াব প্রত্যাশী!
      **ওহে হেরেম শরীফের আবাদকারী!
      **ওহে আল্লাহর ভয়ে ভীত পরহেযগার ব্যক্তি!
      **ওহে ইবাদতে কল্যাণ প্রত্যাশী!
      **ওহে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী!
      **ওহে জান্নাতের আকাঙ্ক্ষাকারী!
      **ওহে আল্লাহর বান্দা!
      **ওহে হারামাইনের আবেদ!
      **ওহে ঘরে উপবিষ্ট মিসকিন!
      **ওহে, স্ত্রীর আচলের ছায়ায় আশ্রয়গ্রহণকারী ব্যক্তি!
      **প্রিয় বন্ধু! একজন আবেদ কখনোই (সওয়াব ও মর্যাদার দিক থেকে) একজন মুজাহিদের সমান হতে পারে না:
      **ওহে বন্ধু, ওহে দুনিয়ার গোলাম!
      **ওহে আবেদ ব্যক্তি! ওহে বুযুর্গ!

      ** আবার বন্ধু! জেনে রাখ- মুজাহিদ ভাইয়েরাই সর্বাধিক তাকওয়াবান, আল্লাহ তাআলাকেভয়কারী, আল্লাহর কাছে মুজাহিদ ভাইয়েরাই সবচেয়ে জ্ঞানী এবং সবচেয়েআরেফ বান্দা।
      **ওহে বৃদ্ধ! ওহে অক্ষম! ওহে যৌবনের আড়ালে যার বার্ধক্যেরকঙ্কাল!
      **ওহে যার যৌবনরস ফুরিয়ে গেছে! যার শৌর্য-বীর্য শুকিয়ে গেছে!
      **বন্ধু হে! তুমি কি তোমার নিজের অস্তিত্বকে ভালোবাস না?
      **বন্ধু হে! তুমি কি তোমার পরিবার-পরিজনকে ভালোবাস না?
      **ওহে তুমি কি মনে করছো, এখনতো আমরা দুর্বল, শারীরিক সক্ষমতা নেই, অর্থ সম্পদ নেই, অস্ত্র-শস্ত্র নেই, জিহাদ করবো কিভাবে?
      **ওহে বন্ধু! জিহাদের জন্য তোমার প্রস্তুতি কোথায়?
      **ওহে বন্ধু আমার! তুমি কি তোমার নিজের ব্যাপারেনিফাকেরভয় কর না??
      **বন্ধু হে! তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রে সত্যবাদী???
      **প্রিয় বন্ধু আমার! আমি তোমার কাছে যাব না, বরং তুমিই আমার নিকট চলে আস!
      **বন্ধু, আর কি বলব তোমায় বল! সবশেষে বলছি, তুমি ফরয বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে মগ্ন হয়ে আছো না তো? এতো ইবাদতের পরও তুমি ফরয তরককারী হয়ে যাচ্ছ নাতো? নিজের মনকে একটি বুঝ দিয়ে নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা খাচ্ছ নাতো?
      **আল্লাহ তাআলা হুকুম করেছেন কী, আর আমরা করছি কী!!!

      =>স্ত্রীর প্রতি বীর মুজাহিদ আনোয়ার পাশার চিঠি
      **জিহাদ প্রেমের এক অনুপম নিদর্শন:

      =>স্ত্রী-সন্তানের প্রতি আব্দুল্লাহ্ আয্যাম রাহি. এর অন্তিম চিঠি




      => একজন জিহাদ প্রেমিকের ঐতিহাসিক চিঠি
      .................................................. ..................

      ‘ইমামুল জিহাদ’ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহিমাহুল্লাহর নাম শুনেনি এমন কোনো মুজাহিদ পৃথিবীতে আছে কিনা আমার জানা নেই। যদি থেকে থাকে, তবে এটি মুজাহিদ হিসেবে বড় অন্যায়। তাঁর ছিল অসাধারণ মেধা, অতলান্ত জ্ঞান, সীমাহীন খোদাভীতির পাশাপাশি উন্নত রুচি, শানিত ব্যক্তিত্ব¡ প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও জিহাদের ময়দানে অসাধারণ বীরত্ব। এছাড়া তিনি ছিলেন ইলম ও আহলে ইলমের পৃষ্ঠপোষক, গরীব মিসকীনের দরদী বন্ধু, ওলী আল্লাহ, যাহিদ, আবিদগণের চোখের মনি। নির্যাতিত, নিপীড়িত, অসহায় মুসলমানদের জন্য তার ধমনীতে তপ্ত শোনিত ধারা প্রবাহিত হতো।

      তিনি ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম। তিনি নিজেই বলেন,“আমি চার হাজার শাইখ থেকে ইলম অর্জন করেছি।” ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লহ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের যুগে তাঁর চেয়ে অধিক ইলম অন্বেষণকারী আর কেউ ছিল না।’ ইলম হাছিলের উদ্দেশ্যে তিনি তৎকালীন বিশ্বের বড় বড় কেন্দ্র যথা: মক্কা, মদীনা, শাম, মিশর, ইয়ামান, কুফা, বসরা, জাযীরা প্রভৃতি এলাকা ভ্রমণ করেন।

      তিনি ছিলেন হাদীস শাস্ত্রেরও ইমাম। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহর উস্তাদ ইমাম আলী ইবনে মাদীনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “ইলম দুই ব্যক্তি পর্যন্ত গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। একজন হলেন আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক। দ্বিতীয় জন ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন।”

      তিনি ফিকাহ শাস্ত্রেরও ইমাম ছিলেন। ইয়াহহিয়া বিন আদম বলেন, “আমি যখন সূক্ষ্ম মাসআলাসমূহ তালাশ করি এবং তা ইবনুল মুবারকের রচনাবলীতে না পাই, তখন আমি তা অন্য কোথাও পাওয়ার ব্যাপারে হতাশ হয়ে যাই।” এই ছিল ফিকহ শাস্ত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহিমাহুল্লাহর স্থান। কিন্তু তাঁর এই পর্যায়ে পৌঁছা কোন্ মহান ব্যক্তিত্বের অনুগ্রহের ফসল ছিল তা তাঁর মুখ থেকেই শুনুন। তিনি বলেন,

      تَعَلَّمْتُ الْفِقْهَ مِنْ أَبِيْ حَنِيْفَةَ

      “আমি ফিকহ ইমাম আবু হানীফা থেকে অর্জন করেছি।”
      এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনের একটি উজ্জ্বল দিক হলো তিনি অসাধারণ পান্ডিত্যের পাশাপাশি একজন অসম সাহসী বীরপুরুষও ছিলেন। জীবনের বিপুল সময় তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহে কাফিরদের সাথে জিহাদ করে কাটিয়েছেন। তাঁর জীবনীতে পাওয়া যায় তিনি “ত্বরাসূস” নগরীতে বহুবার জিহাদের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। জিহাদের ময়দানে তিনি ছিলেন একজন পরীক্ষিত বীর সেনানী। তাঁর সহযোদ্ধাগণ জিহাদের ময়দানে তাঁর অসাধারণ বীরত্বের চমকপ্রদ ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন।

      আবদাহ বিন সুলায়মান মারওয়াযী বলেন, আমরা রোমের ভূ-খণ্ডে ইবনে মুবারকের সাথে এক বাহিনীতে ছিলাম। এক সময় আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মুখোমুখি হলাম। উভয়পক্ষ সারিবদ্ধ হল। এমন সময় শত্রু সৈন্যের এক ব্যক্তি বের হয়ে এসে আমাদেরকে দ্বৈতযুদ্ধের আহ্বান করল। তখন আমাদের সারি থেকে এক ব্যক্তি বের হলেন এবং লোকটিকে হত্যা করলেন। শত্রু সারি থেকে দ্বিতীয় আরেকজন বের হয়ে আসল। তিনি তাকেও হত্যা করলেন। তৃতীয় জন আসলে তাকেও হত্যা করলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে মোকাবেলার জন্য আহ্বান করতে লাগলেন। শত্রু সারি থেকে চতুর্থ এক ব্যক্তি বের হয়ে আসল। তিনি তার সাথে কিছুক্ষণ লড়াই করার পর তাকেও হত্যা করলেন। তখন লোকেরা তাঁকে দেখবার জন্য ভীড় করতে লাগল কিন্তু তিনি তার পরিধেয় বস্ত্রের প্রান্ত দ্বারা তার মুখ ঢেকে রাখছিলেন। আমি তার কাপড়ের প্রান্ত ধরে টান দিলাম, ফলে তার মুখ অনাবৃত হয়ে গেল। দেখলাম, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক। এ জাতীয় বীরত্বের ঘটনা আরো বহু আছে। এক ময়দানে তিনি এরূপ দ্বৈতযুদ্ধে একের পর এক ছয়জন রোমান বীরকে হত্যা করেন।
      [কিতাবুল জিহাদ, “আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ.” অধ্যায় দ্রষ্টব্য, পৃ:৫৫-৭৫
      কিতাব লিংক: https://archive.org/details/kitabuljihad_202210 ]

      যাইহোক, একবার বিখ্যাত তাবেয়ী, আবেদ হযরত ফুযাইল বিন আয়াজ রাহিমাহুল্লাহ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ কে বাইতুল্লাহয় এসে রমযান মাসে নফল উমরাহ, সুন্নত ইতিকাফ করার পরামর্শ দিয়ে চিঠি লিখেন। কেননা বাইতুল্লাহয় এক রাকাত নামায আদায় করলে এক লক্ষ রাকাতের সওয়াব হয়। কাবাঘরের দিকে তাকালে প্রতি পলকে এক লক্ষ নেকী। সেখানে গেলে ঈমান চাঙ্গা হয়। সারা দুনিয়ার আল্লাহর ওলীরা এখানে আসেন, তাঁদের সোহবত মিলবে। রমযান মাসে তো সওয়াবের কোনো হিসাবই নেই। তাছাড়া মদীনা শরীফে এক ওয়াক্ত নামাযে পঞ্চাশ হাজার রাকাতের সাওয়াব মিলবে। আল্লাহর রাসূল ﷺ এখানে আছেন। তাঁর সোহবতে থাকা যাবে। তাই এত লাভের আমল ছেড়ে এত কষ্ট করে জিহাদের ময়দানে থাকার কী দরকার???


      জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ এক ঐতিহাসিক চিঠি লিখেন। তিনি লিখেন,
      يَا عَابِدَ الْحَرَمَيْنِ لَوْ أَبْصَرْتَنَا - لَعَلِمْتَ أَنَّكَ فِيْ الْعِبَادَةِ تَلْعَبُ
      مَنْ كَانَ يَخْضَبُ جِيْدُهٗ بِدُمُوْعِهٖ - فَنُحُوْرُنَا بِدِمَائِنَا يَتَخَضَّبُ
      أَوْ كَانَ تَتْعَبُ خَيْلُهٗ فِيْ بَاطِلٍ - فَخُيُوْلُنَا يَوْمَ الصَّبِيْحَةِ تَتْعَبُ
      رِيْحُ الْعَبِيْرِ لَكُمْ وَنَحْنُ عَبِيْرُنَا - رَهْجُ السَّنَابِكِ وَالْغُبَارُ الْأَطْيَبُ
      وَلَقَدْ أَتَانَا مِنْ مَّقَالِ نَبِيِّنَا - قَوْلٌ صَحِيْحٌ صَادِقٌ لَا يَكْذِبُ
      لاَ يَسْتَوِىْ غُبَارُ خَيْلِ اللهِ فِيْ - أَنْفِ امْرِئٍ وَدُخَانُ نَارٍ تَلْهَبُ
      هٰذَا كِتَابُ اللهِ يَنْطِقُ بَيْنَنَا - لَيْسَ الشَّهِيْدُ بِمَيِّتٍ لَا يَكْذِبُ

      ইবাদতে মগ্ন আবেদ হায়রে মক্কা-মদিনায়!
      দেখলে মোদের জানতে তুমি লিপ্ত খেল-তামাশায়।
      তোমরা বক্ষ ভাসাও সেথায় নয়নের জল বানে,
      মোরা হেথায় রঙ্গীন করি বক্ষ তাজা খুনে।
      তোমাদের অশ্ব ক্লান্ত হয় বৃথা অকারণে,
      মোদের অশ্ব ঢলে পড়ে লড়ে যুদ্ধ-রণে।
      মৃগনাভীর ঘ্রাণ যদিও তোমাদের কাছে প্রিয়,
      যোদ্ধা ঘোটকের ক্ষুরধুলি মোদের পছন্দনীয়।
      প্রিয় নবীজীর অমর বাণী বেজেছে মোদের কানে,
      সত্য, সঠিক, শুদ্ধ যাহা কে তারে মিথ্যা জানে।
      জাহান্নামের ধোঁয়া সেথায় ঢুকবে কেমন করে,
      জিহাদের ধুলিকণা ঢুকেছে যার নাসিকা ভরে?
      কুরআন পাকে ঘোষিত হয়েছে সত্য মোদের তরে,
      শহীদ কখনো যায় না মরে, কে বলে মিথ্যা তারে?”

      চিঠিটি হাতে পেয়ে হযরত ফুযাইল রাহিমাহুল্লাহ কান্না শুরু করে দেন এবং বলেন, ইবনুল মুবারক আমাকে অনেক নসীহত করেছে! সে সত্য বলেছে।

      প্রিয় ভাই!
      উল্লেখিত শেরগুলোর মাঝে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহি. কুরআন ও হাদীসের আলোকে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় মুজাহিদগণের ফযিলত বর্ণনা করেছেন। মুজাহিদের জীবন ও মরণ উভয়টি একজন আবেদ অপেক্ষা অতি উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। হযরত ফুযাইল বিন আয়ায ছিলেন একজন বিখ্যাত তাবেয়ী (সাহাবায়ে কেরামের পরেই যাদের মর্যাদা), মুহাদ্দিস, আবেদ ও যাহেদ; তিনি দিবা-নিশি মক্কা-মদীনায় ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রাহি.) এর পত্রটি অত্যন্ত আনন্দচিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছেন। পত্র পড়ে মূল্যবান নসিহতের জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের শুকরিয়া আদায় করেছেন। এবং পত্র বাহককে পুরষ্কৃৃত করেছেন।

      যাইহোক, এই চিঠিটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষতঃ চিঠিটির প্রথম স্তবকটি আবেদ ব্যক্তিদের জন্য অনেক বড় একটি নসীহত। মক্কা-মদীনার হেরেম শরীফে ইবাদত করা, সেখানে ইতিকাফ করা, আল্লাহর রাসূলের রওযা মুবারকে জীবনে একবার অন্ততঃ সালাম দিতে পারা কতই না সৌভাগ্যের বিষয়!
      কিন্তু যে সকল ভাই জিহাদ ত্যাগ করে “হারামাইন শরীফাইন”-এ সওয়াবের আশায় যিন্দেগী কাটান (‘খাইরুল কুরুন’ হওয়া সত্ত্বেও) তাদের ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহিমাহুল্লাহ কেন বললেন যে, “এটা মূলতঃ ইবাদতের নামে আল্লাহ তাআলার সামনে খেল-তামাশায় লিপ্ত হওয়ার নামান্তর”! আসলে এটি গভীরভাবে ভাববার বিষয়- কেন আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহিমাহুল্লাহ একথা বললেন, আর তাঁর বন্ধু ফুযাইল রাহিমাহুল্লাহ কী বুঝে কাঁদলেন!

      প্রিয় ভাই আমার! আমরা কি এথেকে কিছু বুঝতে পেরেছি???
      চলুন! বিষয়টি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা যাক।
      হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক রাহিমাহুল্লাহ হয়তো তাঁর বন্ধুকে এই কথাগুলোই বুঝাতে চেয়েছিলেন-

      Comment


      • #4
        =>ইবাদত নিয়ে খেল-তামাশা!!!
        ..................................................

        **ওহে ইবাদতকারী! ওহেআল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিঅন্বেষণকারী!

        বন্ধু! তোমার ইবাদতের লক্ষ্য কী? সারা জীবন হারামাইন শরীফাইনে পড়ে থেকে ইবাদত করার মাকসাদ কী? তোমার ইবাদতের লক্ষ্য যদি হয়ে থাকে “আল্লাহর সন্তুষ্টি”, তাহলে তো তুমি ময়দানের ইবাদত করতে, কেননা, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো “তাঁর রাহে জিহাদ করা”। জিহাদী মেহনত করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার উপর সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হতেন!

        দলীল: হযরত আবু সালেহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাঁরা (কয়েকজন সাহাবী) আলোচনা করছিলেন, “যদি আমরা জানতে পারতাম, কোন্ আমলটি সর্বোত্তম বা আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক পছন্দনীয়!” তখন নাযিল হলো.....

        يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ١١

        মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে উত্তম ব্যবসার সন্ধান দিব না, যাতোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বুঝ। (সূরা আস সাফ ৬১: ১০-১১)
        (কিতাবুল জিহাদ, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ., পৃ. ৮১)

        যদি তুমি সত্যিই ইবাদত করাকে ভালোবেসে থাক আর তুমি যদি এমন একটি ইবাদতের সন্ধানকারী হও, যেটিতে আল্লাহপাক তোমার উপর সর্বাধিক সন্তুষ্ট হবেন, এমন আমলের সন্ধান পেলে তুমি আমৃত্যু তা করে যেতে, তাহলে সে তো ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্’। কেননা, একবার কয়েকজন আনসারী সাহাবী, যাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহুও ছিলেন, তাঁরা এমন একটি আমল তালাশ করছিলেন যে আমলটি আল্লাহপাক সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন; আর তাঁরা নিয়ত করেছিলেন যে, তারা এমন একটি আমলের সন্ধান পেলে আজীবন সেই মেহনতের সাথে জুড়ে থাকবেন। তখন তাদের ব্যাপারেও যে আয়াতসমূহ নাযিল হয়, তা হলো সূরা ছফের আয়াতসমূহ। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাত লাভের পূর্ব পর্যন্ত জিহাদে লিপ্ত ছিলেন।
        আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
        إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلَّذِينَ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِهِۦ صَفّٗا كَأَنَّهُم بُنۡيَٰنٞ مَّرۡصُوصٞ ٤
        “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, যেন তারা এক শিশাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীর।” (৬১ সূরা ছফ: ০৪)

        عن ابي أمامة رضي الله عنه عن النبيى صلى الله عليه وسلم قال: ذروة سنام الإسلام الجهاد في سبيل الله، لا يناله الا افضلهم

        হযরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেন- “জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া। এ আমল ঐ ব্যক্তিই সম্পাদিত করতে পারবে, যে সর্বোত্তম/আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট অত্যধিক প্রিয়।” (মু‘জামে কাবীর, তাবরানী-৮/২২৪)

        বন্ধু! আমরা তো নানান রকম নিয়ত করে থাকি, যেমন- অমুক আমল বা অমুক মেহনত আজীবন করতেই থাকব, অমুক আমল বা অমুক মেহনতের সাথে আজীবন লেগেই থাকব, অন্য কোনো আমল বা মেহনত করবো না, তাইনা? বন্ধু, তুমি কি জান, উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানগণ অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম, যারা হলেন আমাদের আদর্শ, তারা কোন্ আমলের সাথে আজীবন, মওত পর্যন্ত জুড়ে থাকার জন্য শপথ করেছিলেন?

        حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ حُمَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا يَقُوْلُ كَانَتْ الأَنْصَارُ يَوْمَ الْخَنْدَقِ تَقُوْلُ :
        نَحْنُ الَّذِيْنَ بَايَعُوْا مُحَمَّــدَا * عَلَى الْجِهَادِ مَا حَيِيْنَا أَبَـدَا
        فَأَجَابَهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ :
        اللَّهُمَّ لَا عَيْشَ إِلَّا عَيْشُ الْآخِرَهْ * فَأَكْرِمْ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِـرَهْ

        আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ খন্দকের যুদ্ধের দিন আবৃত্তি করছিলেনঃ

        نَحْنُ الَّذِيْنَ بَايَعُوْا مُحَمَّــدَا *

        عَلَى الْجِهَادِ مَا حَيِيْنَا أَبَـدَا

        মুহাম্মদের সা. হাতে করেছি শপথ জিহাদের,
        পিছু হটবনা কভূ পূর্বে মউতের।
        আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উত্তর দিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ্! পরকালের সুখ হচ্ছে প্রকৃত সুখ; তাই তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে সম্মানিত কর। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৬১)


        ***ওহে সওয়াব প্রত্যাশী!

        তুমি যদি হেরেম শরীফে ইবাদত করে থাক অধিক সওয়াবের আশায়, তাহলে তোমার জানা উচিত ছিল, জিহাদই হলো সর্বোত্তম, লাভজনক ব্যবসা, অল্প পরিশ্রমে অনেক বেশি মুনাফা লাভ হয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,


        يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ١١

        “মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে উত্তম ব্যবসার সন্ধান দিব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বুঝ।” (সূরা আস সাফ ৬১: ১০-১১)

        عن حنظلة الكاتب رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: خير أعمالكم الجهاد
        হযরত হানযালা কাতিব (রা.) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, “তোমাদের আমল সমূহের মধ্যে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট আমল।” (তারিখে ইবনে আসাকির ১/৪৬৮)

        عَنْ سُهَيْلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ: مَقَامُ أَحَدِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ سَاعَةً خَيْرٌ لَّهُ مِنْ عَمِلِهِ عُمَرُهُ فِيْ أَهْلِهِ

        হযরত সোহাইল রাদি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কে এরশাদ করতে শুনেছি যে, “তোমাদের কারো সামান্য সময় আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় (যুদ্ধের কাতারে/জিহাদের জন্য) দাঁড়ানো তার পরিবার পরিজনের মধ্যে থেকে সারা জীবনের নেক আমলের চেয়ে উত্তম।” (মুসতাদরাকে হাকেম)

        বন্ধু তুমি কি জান, জিহাদের জন্য হিজরত করা কেমন সওয়াবের আমল?

        عن أبي فاطمة رضى الله عنه قال:قال رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : عليك بالهجرة فإنه لا مثل لها

        রাসূলুল্লাহ্ ﷺইরশাদ করেন, “তুমি আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করতে থাক। কেননা হিজরতের ন্যায় (সওয়াবের) কোনো আমল নেই। অর্থাৎ হিজরত সবচেয়ে উত্তম আমল।” (নাসাঈ-৪১৭২)

        عن عبدالله بن عمرو كنتُ عندَ رسولِ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم وطلَعتِ الشَّمسُ، فقالَ: يأتي اللَّهَ قومٌ يومَ القيامةِ، نورُهُم كَنورِ الشَّمسُ، فقالَ أبو بَكْرٍ: أنَحنُ هم يا رَسولَ اللَّهِ؟ قالَ: لا، ولَكُم خيرٌ كثيرٌ، ولَكِنَّهمُ الفُقَراءُ والمُهاجرونَ الَّذينَ يُحشَرونَ مِن أقطارِ الأرضِ

        হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম, তখন সূর্য উদিত হলো। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন একটি দল উপস্থিত হবে যাদের নূর সূর্যের আলোর ন্যায় চমকাতে থাকবে। তখন আবূ বকর (রাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, আমরাই কি তারা? তিনি ﷺ উত্তর দিলেন, “না, তোমাদের জন্য তো অনেক কল্যাণ রয়েছে, কিন্তু তারা হলেন দরিদ্র ও মুহাজিরগণ, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদেরকে একত্রিত করা হবে।” (মুসনাদে আহমাদ)

        বন্ধু! তুমি কি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য ব্যয় করার ফযীলত জান?

        عَنْ خُرَيْمِ بْنِ فَاتِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كُتِبَتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ ‏"‏

        প্রিয় রাসূল ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের জন্য) কিছু ব্যয় করে, তার আমলনামায় সাত শত গুণ লেখা হয়ে থাকে।” (তিরমিযী-১৬২৫, মিশকাত-৩৮২৬, নাসাঈ, তা’লীমুর রাগীব ২/১৫৬)

        বন্ধু হে! তোমার কাছে কি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের কাজে এক সকাল বা এক বিকাল ব্যয় করার ফযীলতের হাদীস সমূহ পৌঁছেছে?

        عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ غَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَمَوْضِعُ سَوْطٍ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ‏"‏

        রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় (জিহাদের/যুদ্ধের ময়দানে) একটি সকালের ব্যয় পৃথিবী এবং এর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। জান্নাতের এক চাবুক পরিমাণ জায়গা পৃথিবী এবং এর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম।” (সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৭৫৬), নাসা-ঈ, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৪৮)

        حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لَغَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ‏"‏‏.‏

        রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “আল্লাহর পথে (যুদ্ধের ময়দানে/জিহাদের কাজে) একটা সকাল কিংবা একটা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া ও তার সমস্ত জিনিস (এর অধিকারী হওয়া কিংবা তা সাদাকা করার সওয়াব) হতে অধিক উত্তম।” (বুখারী-২৭৯২ ও মুসলিম)

        عَنْ الْحَسَنِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ : غَدْوَةٌ أَوْ رَوْحَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا، وَلَوْ قُوْفُ أَحَدِكُمْ فِي الصَّفِّ خَيْرٌ مِّنْ عِبَادَةٍ رَجُلٍ سِتِّيْنَ سَنَةً

        রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এক সকাল কিংবা এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাটা (যুদ্ধ করা) গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে সে সমস্ত জিনিস হতে উত্তম। আর তোমাদের কারোও যুদ্ধের ময়দানে কাতার বন্দী হওয়া ষাট বৎসরের (নফল) নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।” (মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক-৫/২৫৯, হাদীস নং-৯৫৪৩)

        عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ: يَوْمٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ يَوْمٍ فِيْمَا سِوَاهُ

        হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাদি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে এই এরশাদ করতে শুনেছি যে, “আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় (জিহাদের ময়দানে) একদিন উহা ব্যতীত হাজার দিন অপেক্ষা উত্তম।” (নাসাঈ-৩১৭২)

        أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، قَالَ: حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي أَيُّوبَ، قَالَ: حَدَّثَنِي شُرَحْبِيلُ بْنُ شَرِيكٍ الْمَعَافِرِيُّ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيَّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রغَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ وَغَرَبَتْ

        আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, “আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল বের হওয়া সেসব কিছু থেকে উত্তম, যার উপর সূর্য উদিত হয় অথবা অস্ত যায়।” (সহীহ; সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১১৯)



        বন্ধু! তুমি কি জান, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য একদিন বা এক রাত্রি সীমানা পাহারা দেয়া কী পরিমাণ সওয়াবের কাজ?

        عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَلَرَوْحَةٌ يَرُوحُهَا الْعَبْدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ لَغَدْوَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا ‏"‏ ‏.‏ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

        সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, “আল্লাহ তা’আলার পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া পৃথিবী ও তার উপরের সকল কিছু হতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জায়গা পৃথিবী ও তার মধ্যকার সব কিছু হতে উত্তম। আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের কাজে/যুদ্ধের ময়দানে/সীমান্ত পাহারাদারীতে) বান্দার এক বিকাল অথবা এক সকালের ব্যয় পৃথিবী ও তার উপরের সকল কিছু হতে কল্যাণকর।” (সহীহ্, বুখারী-২৭৯৪, ২৮৯২, ৬৪১৫; জামে' আত-তিরমিজি-১৬৬৪)

        রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ইরশাদ করেন,

        رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ يَوْمٍ فِيمَا سِوَاهُ مِنَ الْمَنَازِلِ

        “আল্লাহর রাস্তায় একদিনের সীমান্ত পাহারায় রত থাকা অন্যান্য স্থানের হাজার দিন হতে উত্তম।” (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১৬৯)

        عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ্রمَنْ رَابَطَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَوْمًا وَلَيْلَةً كَانَتْ لَهُ كَصِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ، فَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُ، وَأَمِنَ الْفَتَّانَ، وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ

        সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন এবং এক রাত সীমান্ত পাহারায় রত থাকে তার জন্য এক মাস সাওম পালন করার ও (রাত জেগে) ইবাদতের সওয়াব রয়েছে। সে ইন্তিকাল করলেও তার সে আমল জারি থাকবে যা সে করত (কিয়ামত পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে) আর সে সকল ফিতনা/কবরের আযাব হতে রক্ষিত থাকবে, আর (কবরে) তাকে (শহীদদের মত) রিযিক বরাদ্দ করা হবে।”

        [সহীহ্, সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১৬৮, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৬৫; ফাযালা ইবনু উবাইদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা দেখুন- মিশকাত তাহকীক ছানী (৩৪) এবং (৩৮২৩), তা’লীকুর রাগীব (২/১৫০), সহীহা (৫৪৯), সহীহ্ আবূ দাঊদ (১২৫৮), জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬২১, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৫০০]

        رباط يوم في سبيل الله أفضل من صيام ألف يوم، وقيام ألف ليلة
        রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত প্রহরা দেয়া হাজার দিন রোযা রাখা এবং হাজার রাত্রি ইবাদত করার চেয়ে উত্তম।” (তিরমিযী, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)

        عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُولُ: حَرْسُ لَيْلَةٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَفْضَلُ مِنْ صِيَامِ رَجُلٍ وَقِيَامِهِ فِيْ أَهْلِ أَلْفِ سَنَةٍ اَلسَّنَةُ ثَلَاثُ مِأَةِ وَسِتُّوْنَ يَوْمًا وَالُيَوْمُ كَأُلْفِ سَنَةٍ

        হযরত আনাস বিন মালেক রাদি. বর্ণনা করেন, আমি রাসূূলুল্লাহ্ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, “জিহাদের ময়দানে একটি রাত পাহারাদারী করা ঘরে বসে এক হাজার বছর নামায-রোযা করার চেয়ে উত্তম। উল্লিখিত বছর হবে তিনশত ষাট দিনে। তবে একদিন হবে এক হাজার বছরের ন্যায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২/২০৪)

        ‘‘সুবহানাল্লাহ”।


        উল্লিখিত হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করলে সত্যিই অবাক হতে হয় যে, এক রাত জিহাদের ময়দানে পাহারার কি পরিমাণ ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। চলুন, অংকটা একটু হিসেব করে নেই,

        হাদীসের ভাষ্যমতে,
        এক বছর = ৩৬০ দিন
        অতএব, ১০০০ বছর = ১,০০০ x ৩৬০= ৩,৬০,০০০ দিন
        আবার, প্রতিটি দিন ১০০০ বছরের সমান।
        তাই, ০১ দিন হবে = ৩,৬০,০০০ দিনের সমান
        অতএব, ১০০০ বছর বা ৩,৬০,০০০ দিন হবে=
        ৩,৬০,০০০ x ৩,৬০,০০০= ১২,৯৬০,০০,০০,০০০ (বার হাজার নয়শত ষাট কোটি) দিনের সমান= ৩৬,০০,০০,০০০ (ছত্রিশ কোটি) বছরের সমান।

        আল্লাহু আকবার!!!
        অর্থাৎ, আল্লাহর রাস্তায় একদিনের পাহারাদারির সওয়াব = বারহাজার নয়শত ষাট কোটি দিন ইবাদাতের সাওয়াব লাভ হবে।

        সুতরাং প্রিয় বন্ধু! উপরের হাদীস থেকে তো এটিই বুঝে আসে যে, আমার একরাত্রির পাহারাদারির সওয়াব = তোমার ছত্রিশ কোটি বছরের নামায ও ছত্রিশ কোটি বছরের রোযার সমান সওয়াব!!!!!!



        বন্ধু তুমি কি জান, কারা সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে??
        عن عبد الله بن عمرو بن العاص عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ্রهل تدرون أول من يدخل الجنة من خلق الله؟গ্ধ قالوا: الله ورسوله أعلم. قال: ্রأول من يدخل الجنة من خلق الله الفقراء والمهاجرون الذين تسد بهم الثغور ويتقى بهم المكاره، ويموت أحدهم وحاجته في صدره لا يستطيع لها قضاء, فيقول الله -عز وجل- لمن يشاء من ملائكته: ائتوهم فحيوهم، فتقول الملائكة: نحن سكان سمائك وخيرتك من خلقك أفتأمرنا أن نأتي هؤلاء فنسلم عليهم؟!! قال: إنهم كانوا عبادا يعبدوني لا يشركون بي شيئا، وتسد بهم الثغور، ويتقى بهم المكاره، ويموت أحدهم وحاجته في صدره لا يستطيع لها قضاء، قال: فتأتيهم الملائكة عند ذلك فيدخلون عليهم من كل باب سلام عليكم بما صبرتم فنعم عقبى الدارগ্ধ. صحيح لغيره

        আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “তোমরা কি জান আল্লাহর মাখলুকের মধ্যে কে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে? তারা বললঃ আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহর মাখলুকের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে অভাবী ও মুহাজিরগণ, যাদের দ্বারা সীমান্তসমূহ বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা হয় ও যাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কষ্টকর বিষয়সমূহ থেকে বাঁচা হয়। তাদের কেউ মারা যায় কিন্তু তার প্রয়োজন তার অন্তরেই থাকে, তা পূর্ণ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ফেরেশতাদের থেকে যাকে ইচ্ছা বলবেন, তাদের কাছে যাও, তাদেরকে সালাম কর। অতঃপর ফেরেশতারা বলবে, আমরা আপনার আসমানের অধিবাসী, আপনার সর্বোত্তম মাখলুক, আপনি আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের কাছে যাব এবং তাদেরকে সালাম করব?! তিনি বলেন, তারা এমন সব বান্দা ছিল যারা আমার ইবাদত করত, আমার সাথে কাউকে শরীক করত না। তাদেরকে দ্বারা সীমান্তসমূহ বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা হতো ও তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কষ্টকর বিষয়সমূহ থেকে বাঁচা হতো, তাদের কেউ মারা যেত কিন্তু তার প্রয়োজন তার অন্তরেই থাকত, সে তা পূর্ণ করতে পারত না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অতঃপর তখন তাদের নিকট ফেরেশতাগণ আসবেন, প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবেন এ কথা বলতে বলতে যে, তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছো,আর আখেরাতের প্রতিদান কতইনা সুন্দর!” (মুসনাদে আহমদ)

        বন্ধু, তুমি কি আল্লাহর জন্য জিহাদের ময়দানে একটি তাকবীরের ফযীলত জান?

        عن إبن عمر رضى الله تعالى عنهما قال: قال رسول الله ﷺ: من كبّر تكبيرة في سبيل الله، كانت كصخرة في ميزانه يوم القيامة أثقل من السماوات والأرض وما فيهن، ومن قال في سبيل الله لا إله إلا الله، والله أكبر رافعاً صوته بها كتب الله له بها رضوانة الأكبر ومن يكتب له رضوانه الأكبر جمع الله بينه وبين محمد وإبراهيم وسائر الأنبياء-عليهم الصلاة والسلام

        রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,“যে আল্লাহর পথে (জিহাদের ময়দানে) একটি তাকবীর দিবে, কিয়ামত দিবসে তা মীযানে এমন পাথরের আকার ধারণ করবে, যা আসমান, যমীন ও তার মাঝের সবকিছুর চেয়ে বেশি ভারী হবে। আর যে আল্লাহর পথে উচ্চস্বরে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” বলবে, আল্লাহ তা`আলা তার জন্য ‘মহাসন্তুষ্টি’ লিখে দিবেন, তাকে মুহাম্মাদ ﷺ, ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও সকল নবীর সাথে একত্রিত করবেন।” (তানযীহুশ শরীয়াহ, খ. ২, পৃ. ১৭৮)

        ফকীহ আবুল লাইস সমরখন্দী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “মহাসন্তুষ্টি”-এর ব্যাখ্যায় মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, তা আল্লাহ তা`আলার দীদার। আবার কেউ বলেন, তা আল্লাহর এমন সন্তুষ্টি, যার পর তিনি আর অসন্তুষ্ট হবেন না। (তাম্বীহুল গাফিলীন, পৃ. ৩৯১)


        বন্ধু, তুমি কি জান, মুজাহিদের ঝিমুনি ত্রিশটি গোলাম আযাদ করার চেয়েও বেশি সওয়াবের কাজ?

        وروى عثمان بن عطاء، عن أبيه قال: دخل رجل مع عبد الرحمن بن عوف في حائط له فأعتق ثلاثين رقبة، فجعل الرجل يتعجب من ذلك، فقال له عبد الرحمن: أفل أخبرك بعمل أفضل منه؟ قال: نعم. قال: بينما رجل يسير في سبيل الله تعالى على دابة وسوطه متعلق في أصبعه ، إذ نعس نعسة فسقط سوطه، فلروعته بسوطه أفضل مما رأيتني صنعت.


        এক ব্যক্তি আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়ালাল্লাহু আনহুর সাথে তাঁর বাগানে প্রবেশ করল। বাগানে প্রবেশ করে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু ত্রিশটি গোলাম আযাদ করে দিলেন। লোকটি তা দেখে দারুন বিস্মিত হলো। তখন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আচ্ছা, তাহলে কি আমি তোমাকে এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আমলের কথা বলে দিব? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, “যখন কেউ তার বাহন জন্তুতে আরোহন করে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য চলতে থাকে আর তার চাবুকটি আঙ্গুলে ঝুলানো থাকে। এমনি অবস্থায় ঝিমুনিতে তার চাবুকটি পড়ে যায়। তার চাবুকটি পড়ে যাওয়ার কারণে তাঁর যে কষ্ট হলো এবং তার পরিবর্তে সে যে সওয়াব পেল, তা আমি যা দান করেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি।” (তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ. 391)

        Comment


        • #5
          ***ওহে হেরেম শরীফের আবাদকারী!
          যদি তুমি প্রতি রাকাতে এক লক্ষ রাকাতের সওয়াবের প্রত্যাশায় কাবার আঙিনায় নামায আদায় করে থাকো, তাহলে জেনে নাও, আমি অন্ধকার গুহায় নামায আদায় করে প্রতি রাকাতে দুই লক্ষ রাকাতের সাওয়াব লাভ করছি। কেননা, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন,

          صلاة في مسجدي هذا أفضل من عشرة ألاف في غيره إلا المسجد الحرام، وصلاة في المسجد الحرام أفضل من مئة ألف صلاة في غيره، وصلاة في سبيل الله أفضل من مئتى ألف صلاة

          “আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববীতে) একবার নামায আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য মসজিদে দশ হাজার বার নামায আদায় করার সমান। মসজিদে হারামে নামায আদায় করা এক লক্ষ বার নামায আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর আল্লাহর পথে (জিহাদে) একবার নামায আদায় করা দুই লক্ষ বার নামায আদায়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” (তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ. 386)

          عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ أَوْ أَىُّ الأَعْمَالِ خَيْرٌ قَالَ ‏"‏ إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ‏"‏ ‏.‏ قِيلَ ثُمَّ أَىُّ شَيْءٍ قَالَ ‏"‏ الْجِهَادُ سَنَامُ الْعَمَلِ ‏"‏ ‏.‏ قِيلَ ثُمَّ أَىُّ شَيْءٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏"‏ ثُمَّ حَجٌّ مَبْرُورٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏

          হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী করীম -ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন্ কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা।” আবারো জিজ্ঞাসা করা হলো, এরপর কোন্ কাজটি উত্তম? নবীজী ﷺ উত্তর দিলেন, “এরপরে উত্তম হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।” পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হলো, এরপর কোনটি উত্তম? প্রিয় নবীজী ﷺ উত্তর দিলেন, “এরপর হচ্ছে, মাবরূর (মকবুল) হজ্জ।” (বুখারী-২৬, মুসলিম-৮৩)

          عَنْ أَبِي ذَرٍّ، أَنَّهُ سَأَلَ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَيُّ الْعَمَلِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «إِيمَانٌ بِاللَّهِ، وَجِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
          হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন আমলটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বললেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।” (বুখারী, মুসলিম)

          عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ مَوْقِفُ سَاعَةٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ قِيَامٍ لَيْلَةِ الْقَدْرِ عِنْدَ الحَجَرِ الْأَسْوَدِ

          রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “আল্লাহর পথে (পাহারার/জিহাদের কাজে) একটি মুহূর্ত অবস্থান করা কদরের রাতে হাজরে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে ইবাদত করার চাইতে উত্তম।” (ইবনে হিব্বান ১৫৮৩, ইবনে আসাকির, বায়হাকী)

          عَنْ آدَم بْنِ عَلِىٍّ قَالَ سَمِعْتُ إِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ: لَسَفَرَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَفْضَلٌ مِنْ خَمْسِيْنَ حَجَّةٍ

          হযরত আদাম বিন আলী (রহ.) বর্ণনা করেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন,“আল্লাহর পথে জিহাদ করা পঞ্চাশবার হজ্ব করার চেয়ে উত্তম।” (সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর-৩/২/১৬৭-১৬৮, কিতাবুল জিহাদ, আব্দুলাহ ইবনে মুবারক)

          عَنْ سَعِيْدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ قَالَ نَوْمَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ سَبْعِيْنَ حَجَّةً تَتْلُوْهَا سَبْعُوْنِ عُمْرَةً - (كشف الاستار كتاب الجهاد باب فضل الجهاد، مشارع اشواق)

          হযরত সাঈদ বিন আব্দুল আজীজ (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাহে মুজাহিদের ঘুম ওমরাসহ সত্তর বার হজ্ব করার চেয়েও উত্তম।

          عَنْ أَنَسً بِنْ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ َعَلَيْهِ وَسَلَّمَ: غَزْوَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَعْدَ حَجَّةِ الْإِسْلَامِ أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ حَجَّةٍ. (كشف الاستار كتاب الجهاد باب فضل الجهاد، مشارع الاشواق الى مصارع العشاق: ٢٠٦/٢١٥)

          হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেন, “ফরয হজ্ব আদায় করার পর আল্লাহ্ তা‘আলার রাহে কোনো একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এক হাজার বার হজ্ব করার চেয়ে উত্তম।” (কাশফুল আসতার, মাশারিউল আশওয়াক্ব ইলা মাসারিয়িল উশশাক)

          আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

          ۞أَجَعَلۡتُمۡ سِقَايَةَ ٱلۡحَآجِّ وَعِمَارَةَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ كَمَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَجَٰهَدَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ لَا يَسۡتَوُۥنَ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٩

          “তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো ও কাবা ঘর আবাদ করাকে সে ব্যক্তির কাজের সমপর্যায়ের মনে করো- যে ঈমান আনে আল্লাহ তা‘আলার উপর, পরকালের উপর এবং জিহাদ করেছে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায়; এরা কখনো আল্লাহর কাছে সমান নয়; আল্লাহ তা‘আলা কখনো যালেমদের সঠিক পথ দেখান না।” (৯ সূরা তাওবা: ১৯)

          অতএব, হে বন্ধু! ওহে সওয়াব তালাশকারী! কাবাঘর আবাদ করে, বছর বছর হজ্জ-উমরা করেও যদি একজন মুজাহিদের সমান সওয়াব লাভ করতে না পার, তাহলে পৃথিবীর কোথায় ইবাদত করে তুমি তার সমান সওয়াব পাবে?

          বন্ধু, আরো লক্ষ্য কর! শেষোক্ত আয়াতে “আল্লাহ তায়ালা কখনো যালেমদের সঠিক পথ দেখান না।” এই কথাটি কেন বললেন?

          “যার যতটুকু মর্যাদা তাকে ততটুকু মর্যাদা না দেয়াটা তার উপর যুলুম।” যেমন ধর, একটি স্বর্ণের গলার হারকে যদি একটি কুকুরের গলায় পরানো হয়, তবে তা ঐ গলার হারটির উপর যুলুম হবে। কেননা, এটি একজন নারীর গলায় শোভা পাবার কথা। ঠিক এমনিভাবে, জিহাদ সর্বোত্তম, সর্বাপেক্ষা শানদার, সর্বোচ্চ এবং ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল, যার উপর গোটা ইসলামের অস্তিত্ব নির্ভর করে; তাই তুমি যদি জিহাদকে ততটুকু গুরুত্ব ও মর্যাদা না দাও, যতটুকু গুরুত্ব ও মর্যাদা আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল ﷺ দিয়েছেন, তাহলে তুমি ‘জিহাদ’এর উপর যুলুম করলে, এককথায় তুমি আল্লাহ পাকের নিকট ‘যালেম’ সাব্যস্ত হলে। আর আল্লাহ এরূপ ব্যক্তিকে পথ দেখান না। অর্থাৎ জিহাদের গুরুত্ব বুঝার তাওফিক তিনি পাবেন না। আবার, জিহাদকে তার প্রাপ্য মর্যাদা না দেয়ার কারণে আল্লাহ পাক অন্তরকে বক্র করে দেন, যার ফলে অনেক সময় একজন মুফতী, মুফাসসির কিংবা মুহাদ্দিস সাহেবও জিহাদের অপব্যাখ্যা করে বসেন। (নাউযুবিল্লাহ) যালেমদের অন্তর্ভূক্ত হওয়া থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। আমীন।
          আর এমনটি তখনই হয়, যখন জিহাদকে উপলব্ধি না করার কারণে, জিহাদের আহ্বানে না সাড়া দেয়ার কারণে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক বান্দা ও তার অন্তরের মধ্যে অন্তরায় হয়ে যান, ফলে সে কখনোই হক ও সঠিক পথ তথা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর পথ পায়না। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
          يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَجِيبُواْ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمۡ لِمَا يُحۡيِيكُمۡۖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَحُولُ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَقَلۡبِهِۦ وَأَنَّهُۥٓ إِلَيۡهِ تُحۡشَرُونَ
          “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের (আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের) প্রতি আহ্বান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। জেনে রেখ, (জিহাদ না করলে/জিহাদের প্রতি অবহেলা করলে) আল্লাহ্ মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। বস্তুত, তোমরা সবাই তাঁরই নিকট সমবেত হবে।” (সূরা আল আনফাল ৮:২৪)
          সুতরাং বন্ধু, সাবধান!





          ***ওহে আল্লাহর ভয়ে ভীত পরহেযগার ব্যক্তি!

          যদি তুমি আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির ভয়ে ইবাদত করে থাক, তাহলে জেনে নাও, শাস্তি থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।

          يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ - تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ

          “হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে উত্তম ব্যবসার সন্ধান দিব না, যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে মর্মন্তুদ শাস্তি হতে, উহা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।” (৬১ সূরা সফ: ১০-১১)

          عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ‏ "‏ لاَ يَجْتَمِعُ فِي النَّارِ كَافِرٌ وَقَاتِلُهُ أَبَدًا ‏"‏ ‏.‏

          আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন, “কোন কাফির ও তার হত্যাকারী (মুসলিম) কখনও জাহান্নামে একত্রিত হবে না।” (সহীহ, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৪৯৫)



          বন্ধু! তুমি জান কি, যে জাহান্নামের ভয়ে তুমি ইবাদত কর, আল্লাহর রাস্তার ধুলাবালি-ই সেই জাহান্নামের আগুনকে নিভিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট??

          عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ وَلاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ هُوَ مَوْلَى أَبِي طَلْحَةَ مَدَنِيٌّ ‏.‏

          আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,“আল্লাহ্ তা‘আলার ভয়ে যে লোক ক্রন্দন করে তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার পালানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ্ তা‘আলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না (অর্থাৎ, আল্লাহ্ তা‘আলার পথের মুজাহিদ কখনো জাহান্নামে যাবে না)।” [সহীহ্, মিশকাত (৩৮২৮), তা’লীকুর রাগীব (২/১৬৬), সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১০৭, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৩৩]

          عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ عُثْمَانَ وَأَبِي رَيْحَانَةَ ‏.‏ وَحَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ شُعَيْبِ بْنِ رُزَيْقٍ

          ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে আমি বলতে শুনেছিঃ “জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ্ তা’আলার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে ঘুমবিহীনভাবে রাত পার করে দেয়।” [সহীহ্, মিশকাত (৩৮২৯), তা’লীকুর রাগীব (২/১৫৩); জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৩৯]

          عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ: مَا خَالَطَ قَلْبَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ رَهْزٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلَّا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ

          হযরত আয়েশা রাদি. বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে এই ইরশাদ করতে শুনেছি যে, “যার শরীরে আল্লাহর রাস্তার ধুলাবালি প্রবেশ করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর জাহান্নামের আগুনকে অবশ্যই হারাম করে দিবেন।” (মুসনাদে আহমাদ, তাবারানী, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ-৫/৫০২)

          আল্লাহর রাসূল ﷺ আরো ইরশাদ করেন,

          عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: لَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ فِيْ جَوْفِ عَبْدٍ أَبَدًا

          “ আল্লাহর পথের ধূলি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোনো বান্দার উদরে কখনো একত্রিত হবে না।” (তিরমিযী, নাসাঈ-৩১১২, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

          عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ .... لَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ فِيْ مَنْخَرِيْ مُسْلِمٍ أَبَدًا

          “আল্লাহ তা‘আলার রাস্তার ধূলাবালি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও কোনো মুসলমানের নাকের ছিদ্রে একত্র হতে পারে না।” (নাসাঈ-৩১১৫, তিরমিযী)

          عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ: مَا مِنْ رَجُلٍ يَغْبَرُّ وَجْهَهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلَّا أَمَّنَ اللهُ وَجْهَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

          “যে ব্যক্তির চেহারা আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় (জিহাদের ময়দানে) ধুলিময় হয়, আল্লাহ্ তা‘আলা কেয়ামতের দিন তার চেহারাকে অবশ্যই (দোযখের আগুন হতে) রক্ষা করবেন।” (বাইহাকী-৪/৪৩)

          مَا اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ ‏‏

          “আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের ময়দানে) বান্দার দুটি পা ধূলি ধূসরিত হবে এবং আবার তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে, এমনটি কখনো হতে পারে না।” (বুখারী-২৮১১)

          عَنْ أَبِيْ عَبْسٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: مَنْ اغْبَرَّتْ قَدَمَهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ حَرَّمَهُ اللهُ عَلَى النَّارِ

          “যার দুটি পা আল্লাহর রাস্তায় ধুলি ধুসরিত হয়, মহান আল্লাহ্ উক্ত পা দুটির উপর জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিয়েছেন।”(সহীহ বুখারী ২৮১১, নাসায়ী ৩১১৬; তিরমিযী ১৬৩২; বায়হাকী ৬০৮৭; আহমাদ ১৪৯৯০)

          তাহলে বন্ধু! ভেবে দেখেছ কি? এককথায়, হাত-পা, নাক-মুখ, উদর ইত্যাদি শরীরের যে কোনো এক অংশে আল্লাহর রাস্তার ধূলাবালি লাগলেই হলো, ব্যস! আল্লাহ্ তা‘আলা ঐ বান্দার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিবেন। সুব্হানাল্লাহ!!



          বন্ধু! তুমিতো চাও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে, তাইনা? তাহলে, তুমি কি চাওনা তোমার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যাক?

          রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো ইরশাদ করেন,
          حُرِّمَتْ عَيْنٌ عَلَى النَّارِ سَهِرَتْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
          “যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় (সীমান্ত পাহারাদারী বা যুদ্ধের কাজে) বিনিদ্র থাকে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করা হয়েছে।” (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১১৭)
          সুব্হানাল্লাহ!!



          বন্ধু! আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে) একদিন রোযা রাখার দ্বারা জাহান্নাম কতদূরে যায় জান কি?

          রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেন,

          عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ جَعَلَ اللَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ خَنْدَقًا كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ‏"
          “কোন লোক যদি একদিন আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় রোযা আদায় করে, তাহলে আল্লাহ্ তা’আলা তার ও জাহান্নামের মাঝখানে আকাশ ও যমীনের মাঝখানের দূরত্বের সমতুল্য একটি পরিখা সৃষ্টি করে দিবেন।
          [হাসান সহীহ্, সহীহা (৫৬৩), জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬২৪]

          عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ زَحْزَحَهُ اللَّهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا ‏"‏ ‏.‏ أَحَدُهُمَا يَقُولُ سَبْعِينَ وَالآخَرُ يَقُولُ أَرْبَعِينَ

          আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “যে লোক একদিন আল্লাহ্ তা’আলার পথে রোযা আদায় করে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছরের (পথের) দূরত্বে রাখবেন।” (উরওয়া ও সুলাইমানের) একজনের বর্ণনায় সত্তর বছর এবং অপরজনের বর্ণনায় চল্লিশ বছর উল্লেখ আছে। [সহীহ্, তা’লীকুর রাগীব (২/৬২), জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬২২]

          عَنْ عُمْرِو بْنِ عَبَسَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : "‏ مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بَعُدَتْ مِنْهُ النَّارُ مَسِيْرَةَ مِائَةَ عَامٍ

          রাসূূূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় রোযা রাখল, তার নিকট হতে জাহান্নামের আগুন একশত বছরের দূরত্ব পরিমাণ দূর হয়ে যাবে।” (তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৩/৪৪৪)


          সুবহানাল্লাহ!!!

          প্রিয় বন্ধু! আবার শুন! আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ধমকি শুনে রাখ! যেই আযাব থেকে তুমি পালাতে চাচ্ছ, জিহাদ ত্যাগ করার কারণে সেই আযাবই তোমাকে গ্রেপ্তার করবে।

          إِلَّا تَنفِرُواْ يُعَذِّبۡكُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا وَيَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيۡ‍ٔٗاۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٣٩

          “তোমরা যদি (তাঁর পথে জিহাদের জন্য) বের না হও, তাহলে (এ জন্যে) তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দিবেন (দুনিয়াতে লাঞ্ছনা ও কুফ্ফারদের চাপিয়ে দিয়ে আর আখিরাতে জাহান্নাম দিয়ে) এবং তোমাদের অন্য এক জাতি দ্বারা বদল করে দিবেন, তোমরা তার কোনই অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না, আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল।” (০৯ সূরা তাওবা: ৩৯)


          ***ওহে ইবাদতে কল্যাণ প্রত্যাশী!


          যদি তুমি কামনা করে থাক, ইবাদতের দ্বারা দ্রুত কল্যাণ লাভ হোক, তাহলে জিহাদই সবচেয়ে দ্রুত কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে।

          ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١١

          “এটা (ঈমান ও জিহাদ) তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝতে।” (৬১ সূরা সফ:১১)

          كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡ‍ٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٢١٦

          “তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। হতে পারে একটা বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তো বা কোনো একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দীয়, অথচ তোমাদের জন্য তা অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহ তাআলাই জানেন, তোমরা জান না।” (২ সূরা বাকারা: ২১৬)


          ***ওহে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী!
          যদি তুমি চাও, ইবাদতের দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি হাসিল করে তোমার গুনাহ মাফ করাবে, তাহলে তোমার জন্য জিহাদই ছিল গুনাহ মাফের সবচেয়ে সহজ উপায়।

          يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ١١

          یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ وَیُدۡخِلۡکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ وَمَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ  ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

          মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে উত্তম ব্যবসার সন্ধান দিব না, যাতোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর; যদি তোমরা বুঝ।তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।(সূরা আস সাফ ৬১: ১০-১২)

          قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ..............

          রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তাআলা শহীদকে ছয়টি পুরস্কার দান করবেন। ১. রক্তের প্রথম ফোটাটি মাটিতে পড়ার সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়.......” (তিরমিযী-১৬৬৩ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)

          عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُكَفِّرُ كُلَّ خَطِيئَةٍ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ جِبْرِيلُ إِلاَّ الدَّيْنَ ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِلاَّ الدَّيْنَ ‏"‏

          আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “আল্লাহ্ তা’আলার পথে মৃত্যুবরণ করা সকল পাপের কাফ্ফারা হয়ে যায়।” তখন জিবরাঈল (আঃ) বললেন, ঋণ ব্যতীত (তা ক্ষমা করা হয় না)। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “ঋণ ব্যতীত।” (সহীহ্, মুসলিম-১৮৮৬, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৪০)



          Comment


          • #6
            ***ওহে জান্নাতের আকাঙ্ক্ষাকারী!

            যদি তুমি ইবাদতের দ্বারা জান্নাত প্রত্যাশী হও, তাহলে জেনে রাখ, জান্নাতে যাওয়া এতো সহজ নয়, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে জান্নাতে দেয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিবেন, কে জিহাদ করেছে, আর কে জিহাদ করেনি। বন্ধু! এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অন্যান্য আমল আমাদের কোনো কাজে আসবে কিনা, ভয় রয়ে যায়!!

            أَمۡ حَسِبۡتُمۡ أَن تَدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ وَلَمَّا يَعۡلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ مِنكُمۡ وَيَعۡلَمَ ٱلصَّٰبِرِينَ١٤٢

            “তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ তাআলা এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।” (৩ সূরা আলে ইমরান: ১৪২)

            أَمۡ حَسِبۡتُمۡ أَن تَدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ وَلَمَّا يَأۡتِكُم مَّثَلُ ٱلَّذِينَ خَلَوۡاْ مِن قَبۡلِكُمۖ مَّسَّتۡهُمُ ٱلۡبَأۡسَآءُ وَٱلضَّرَّآءُ وَزُلۡزِلُواْ حَتَّىٰ يَقُولَ ٱلرَّسُولُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥ مَتَىٰ نَصۡرُ ٱللَّهِۗ أَلَآ إِنَّ نَصۡرَ ٱللَّهِ قَرِيبٞ ٢١٤

            “তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনিভাবে শিহরিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাঁদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? তোমরা শুনে নাও, আল্লাহর সাহায্য একান্তই নিকটবর্তী। (২ সূরা বাকারা: ২১৪)

            أَمۡ حَسِبۡتُمۡ أَن تُتۡرَكُواْ وَلَمَّا يَعۡلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ مِنكُمۡ وَلَمۡ يَتَّخِذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَا رَسُولِهِۦ وَلَا ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَلِيجَةٗۚ وَٱللَّهُ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ ١٦

            “তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নিবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা হতে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ১৬)

            وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡ حَتَّىٰ نَعۡلَمَ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَنَبۡلُوَاْ أَخۡبَارَكُمۡ ٣١

            “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের মধ্যে জিহাদকারীকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থানসমূহ (অবস্থা ও কর্মকাণ্ড) যাচাই করি।” (৪৭ সূরা মুহাম্মাদ:৩১)

            يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ١١

            یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ وَیُدۡخِلۡکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ وَمَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ  ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

            মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে উত্তম ব্যবসার সন্ধান দিব না, যাতোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর; যদি তোমরা বুঝ।তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেনএবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।(সূরা আস সাফ ৬১: ১০-১২)

            ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ أَعۡظَمُ دَرَجَةً عِندَ ٱللَّهِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٢٠
            يُبَشِّرُهُمۡ رَبُّهُم بِرَحۡمَةٖ مِّنۡهُ وَرِضۡوَٰنٖ وَجَنَّٰتٖ لَّهُمۡ فِيهَا نَعِيمٞ مُّقِيمٌ ٢١
            خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًاۚ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥٓ أَجۡرٌ عَظِيمٞ ٢٢

            “যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে, এবং আল্লাহর রাহে জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে; তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম। (২১) তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাদের পরওয়ারদেগার স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, সেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী শান্তি। (২২) তথায় তারা থাকবে চিরদিন। নিঃসন্দেহে (আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদদের জন্য) আল্লাহর কাছে আছে মহা পুরস্কার।”
            (০৯ সূরা তাওবাহ: ২০-২২)

            عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ أَوْفَى أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: وَاعْلَمُوْا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوْفِ

            রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “জেনে রাখ, জান্নাত তরবারির ছায়াতলে অবস্থিত।” (সহীহ বুখারী ২৮১৮)

            রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো ইরশাদ করেন,
            اِنَّ اَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوْفِ

            “নিঃসন্দেহে জান্নাতের দরজাসমূহ তরবারীর ছায়াতলে অবস্থিত।” (মুসলিম)

            عَنْ مُعَاذَ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: يَا نَبِيَّ اللهِ، أَخْبِرْنِيْ بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ؟ قَالَ: بَخٍ لَقَدْ سَأَلْتَ عَنْ عَظِيْمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيْرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ تَعْبُدُ الله عَزَّ وَجَلَّ وَلَا تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا وِتُقِيْمُ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوْبَةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوْضَةَ أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى رَأْسِ الْأَمْرِ وَعُمُوْدِهِ وَذُرْوَةِ سَنَامِهِ؟ أَمَّا رَأْسُ الْأَمْرِ الْإِسْلَامُ أَسْلِمْ تَسْلَمْ وَأَمَّا عُمُوْدُهُ فَالصَّلاَةُ وَأَمَّا ذُرْوَةُ سَنَامِهِ فَالْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

            হযরত মুআজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন আমল বলে দিন, যে আমল আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বাহ্! তুমি একটি গুরুত্বপূর্ণ কঠিন বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। তবে এটা আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য সহজ করে দেন তার জন্য খুবই সহজ। আর তা হলো: এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। ফরজ সালাতগুলো কায়েম করবে। ফরজ যাকাত আদায় করবে। আমি কি তোমাকে সকল কাজের মূল ভিত্তি, তার পিলার বা খুঁটি এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া সম্পর্কে বলবো না? সকল কাজের মূল হলো ইসলাম। তাই তুমি ইসলাম গ্রহণ করো এবং শান্তিতে থাক। আর তার পিলার বা খুঁটি হলো সালাত। এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হলো ‘আল জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’ আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা। (মুসতাদরাকে হাকেম ২৪০৮ হাদীসটি সহীহ, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী। মুসনাদে আহমদ ২২০৬৪, সুনানে বাইহাকী ১৮২৫৩)

            ‏عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَأَعْلَى الْجَنَّةِ، أُرَاهُ فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ، وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ ‏"‏‏

            তিনি ﷺ আরো ইরশাদ করেন, “যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তাদের জন্য জান্নাতে একশতটি স্তর রয়েছে, প্রতিটি স্তরের পার্থক্য আসমান-যমীনের সমান। সুতরাং তোমরা যখন আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইবে, জান্নাতুল ফিরদাউস চাইবে, কেননা সেটিই জান্নাতের সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ মাকাম। এরই উপরিভাগে পরম করুনাময় ‘আর-রহমানের’ আরশ অবস্থিত।” (বুখারী)

            সুবহানাল্লাহ!!!

            তাই বন্ধু! যদি আমরা পরকালে সহজে জান্নাত চাই, তাহলে জিহাদ ও সবরের পরীক্ষায় অবশ্যই বসতে হবে; আল্লাহর রাস্তায় অবশ্যই যুদ্ধ করতে হবে; এ পরীক্ষায় আমাদেরকে অবশ্যই উত্তীর্ণ হতে হবে। নচেৎ জান্নাত মিস্ হয়ে যায় কিনা ভয় হয়, বন্ধু!!



            আর বন্ধু! যেহেতু তুমি ইবাদতের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করতে চাও, তুমি কি চাওনা তোমার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাক???

            مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فَوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

            রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “মুসলিম মিল্লাতের অন্তর্ভূক্ত যে কোনো ব্যক্তি ক্ষণকালের জন্যও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ-২২১৬/২৫৪১, তিরমিযী-১৬৫৭, সুনানে আন-নাসায়ী-৩১৪১,)

            عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فَوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَمَنْ جُرِحَ جُرْحًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ نُكِبَ نَكْبَةً فَإِنَّهَا تَجِئُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَغْزَرِ مَا كَانَتْ لَوْنُهَا الزَّعْفَرَانُ وَرِيحُهَا كَالْمِسْكِ ‏"‏ ‏

            মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন, “যে মুসলমান আল্লাহ্ তা‘আলার পথে উষ্ট্রীর দুইবার দুধ দোহনের মধ্যবর্তী (সময়ের পরিমাণ) সময় জিহাদ করল তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আল্লাহ্ তা‘আলার পথে যে আহত হল অথবা আঘাতপ্রাপ্ত হল, এই জখম কিয়ামতের দিবসে আরো তাজা হয়ে উপস্থিত হবে। এই জখমের রং যাফরানের মত হবে এবং এর ঘ্রাণ কস্তুরীর মত সুগন্ধময় হবে।” (সহীহ্, ইবনু মাজাহ-২৭৯২; জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৫৭)

            عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏:‏ ‏"‏ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُدْخِلُ بِالسَّهْمِ الْوَاحِدِ ثَلاَثَةَ نَفَرٍ الْجَنَّةَ ‏:‏ صَانِعَهُ يَحْتَسِبُ فِي صَنْعَتِهِ الْخَيْرَ، وَالرَّامِيَ بِهِ، وَمُنْبِلَهُ، وَارْمُوا وَارْكَبُوا، وَأَنْ تَرْمُوا أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ تَرْكَبُوا،

            ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি : একটি তীরের কারণে মহান আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তীর প্রস্তুতকারী, যদি সে জিহাদের নেক আশা নিয়ে প্রস্তুত করে, (যুদ্ধে) তীর নিক্ষেপকারী এবং যে ব্যক্তি তা নিক্ষেপের উপযোগী করে নিক্ষেপকারকে সরবরাহ করে (নিক্ষেপের জন্য তীর এগিয়ে দেয়)। তোমরা তীরন্দাজী ও অশ্বারোহীর প্রশিক্ষণ নাও। তোমাদের অশ্বরোহীর প্রশিক্ষণের চাইতে তীরন্দাজীর প্রশিক্ষণ আমার নিকট অধিক প্রিয়।” [সুনান আত-তিরমিযী (২৭৭/১৭০৩), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬১৮/২৮১১); সুনানে আন-নাসায়ী, -৩১৪৬]

            عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَعْنِي ‏ "‏ يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ الْمُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ هُوَ عَلَىَّ ضَامِنٌ إِنْ قَبَضْتُهُ أَوْرَثْتُهُ الْجَنَّةَ وَإِنْ رَجَعْتُهُ رَجَعْتُهُ بِأَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ ‏"‏

            রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো ইরশাদ করেন, “অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ আমার পথে জিহাদকারীর জন্য আমি নিজেই যামিন। আমি তার জীবনটা নিয়ে নিলে তবে তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেই। আমি তাকে (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) ফিরিয়ে আনলে তবে তাকে ছাওয়াব বা গানীমাতসহ ফিরিয়ে আনি।” [সহীহ্, তা’লীকুর রাগীব (২/১৭৮), জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬২০]



            ***ওহে আল্লাহর বান্দা!

            তুমি যে জান্নাত কামনা করছ, তুমি কি এখন পর্যন্ত তোমার জানকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে বিক্রয় করতে পেরেছ? আল্লাহ তাআলার ইরশাদ শুন,

            إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقّٗا فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ وَٱلۡقُرۡءَانِۚ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ مِنَ ٱللَّهِۚ فَٱسۡتَبۡشِرُواْ بِبَيۡعِكُمُ ٱلَّذِي بَايَعۡتُم بِهِۦۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١١١

            “আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে, অতঃপর মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক (সত্যবাদী)? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনদেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।” (৯ সূরা তাওবা: ১১১)

            বন্ধু, ভালোভাবে খেয়াল কর-
            এই আয়াতটিতে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের সাথে একটি ব্যবসা করছেন। এখানে ক্রেতা স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজে, বিক্রেতা ঈমানদারগণ (যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং পরকালে বিশ্বাসী), যে জিনিস রব্বে কারীম ক্রয় করছেন তা হলো মুমিনের জান ও মাল, বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।
            আচ্ছা, বন্ধু! এই আয়াতটিকে তোমরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে ব্যবহার কর; অথচ এই ব্যবসায়ের স্থান (বাজার) কোথায় হবে, তা তো আল্লাহ পাক নিজেই বলে দিয়েছেন “তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে, অতঃপর মারে ও মরে” অর্থাৎ, জিহাদের ময়দান। ‘মারা আর মরা’ তো যুদ্ধের ময়দান ছাড়া সম্ভব নয়। আর এই ওয়াদা (যুদ্ধের বিনিময়ে যে জান্নাত দিবেন তা) যে সত্য এই ব্যাপারে তিনি সুব্হানাহু ওয়া তা‘আলা নিজেই তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনের দলীল দিচ্ছেন।

            সুতরাং, বন্ধু! জান্নাত পেতে হলে আমাদের জান ও মালকে আল্লাহর রাস্তা তথা যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে বিক্রয় করতে হবে।


            ***ওহে হারামাইনের আবেদ!

            বন্ধু! তুমি জান্নাত থেকে কত পিছনে পড়ছ একটু চিন্তা কর!

            রাসূলুল্লাহ ﷺ মূতার যুদ্ধাভিযানে (সারিয়্যা) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা (রা.) কে প্রেরণ করলেন। যেদিন সকালে জামাত যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে গেল, সেদিন ছিল শুক্রবার, জুমুআর দিন।
            হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদিয়াল্লহু আনহু চিন্তা করলেন, এই যুদ্ধে যদি শহীদ হয়ে যাই, তাহলে তো আল্লাহর রাসূলের ﷺ চেহারা মুবারক আর হয়তো কখনো দেখা হবে না, তাঁর পিছনে আর হয়তো কোনোদিন নামায আদায় করতে পারবো না, তাহলে এক কাজ করি, জুুমুআর নামায আল্লাহর রাসূলের পিছনে আদায় করে, পরে বেরিয়ে পড়ব। আর যেহেতু আমার ঘোড়া অনেক দ্রুতগামী, তাই অন্যদের সাথে সহজেই জুড়তে পারব।
            আল্লাহর রাসূল ﷺ জুমুআর নামাযের সালাম ফিরানোর পর দেখলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লহু আনহু এখনো বের হননি। ফলে তিনি মনঃক্ষুণ্য হলেন। তখন নবীজী ﷺ আফসোস করে বললেন,

            لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيْعًا مَا أَدْرَكْتَ فَضْلَ غَدْوَتِهِمْ

            “তুমি দুনিয়ার সব কিছু আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলেও তাদের সকালে বের হয়ে যাওয়ার সমান ফযীলত পাবে না।” (সুনানে তিরমিযী-১/১১৮, মুসনাদে আহমাদ)

            মুসনাদে আহমাদের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, মু‘আয ইবনে আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান, তোমার সাথীরা তোমার চেয়ে কত অগ্রে পৌঁছে গেছে? সে ব্যক্তি উত্তর দিলেন, এক সকাল মাত্র। রাসূলুলাহ ﷺ বললেন, তোমার সাথীরা দুনিয়ার পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে যে দূরত্ব রয়েছে তার চেয়েও অধিক দূরত্বে পৌঁছে গেছে। (মুসনাদে আহ্মদ -৩/৪৩৮)

            عَنْ الْحَسَنِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ : غَدْوَةٌ أَوْ رَوْحَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا، وَلَوْ قُوْفُ أَحَدِكُمْ فِي الصَّفِّ خَيْرٌ مِّنْ عِبَادَةٍ رَجُلٍ سِتِّيْنَ سَنَةً

            রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এক সকাল কিংবা এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাটা (যুদ্ধ করা) গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে সে সমস্ত জিনিস হতে উত্তম। আর তোমাদের কারোও যুদ্ধের ময়দানে কাতার বন্দী হওয়া ষাট বৎসরের নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক-৫/২৫৯, হাদীস নং-৯৫৪৩)

            প্রিয় ভাই! মক্কা-মদীনায় জন্মগ্রহণ করা কিংবা সেখানে মৃত্যুবরণ করতে পারা কতই না সৌভাগ্যের বিষয়, তাই না! এটাতো আমরা সবসময়ই কামনা করে থাকি। কিন্তু আল্লাহর রাসূলের ﷺ মেজাজ দেখ!

            عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: مَاتَ رَجُلٌ بِالْمَدِينَةِ مِمَّنْ وُلِدَ بِهَا، فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «يَا لَيْتَهُ مَاتَ بِغَيْرِ مَوْلِدِهِ»، قَالُوا: وَلِمَ ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا مَاتَ بِغَيْرِ مَوْلِدِهِ قِيسَ لَهُ مِنْ مَوْلِدِهِ إِلَى مُنْقَطَعِ أَثَرِهِ فِي الْجَنَّةِ»

            হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদি. বলেন, এক ব্যক্তি মদীনা মুনাওয়ারায় ইন্তেকাল করলেন। তার জন্মও আল্লাহর রাসূলের ﷺ শহর মদীনায়ই হয়েছিল। প্রিয় নবী তার জানাযার নামায পড়ালেন এবং তার জন্য আফসোস করে বললেন, “হায়! এই ব্যক্তি যদি তার জন্মস্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে মৃত্যুবরণ করত!” সাহাবা রাদি. জিজ্ঞেস করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কেন এরূপ বললেন?” তিনি এরশাদ করলেন, “মানুষ যখন (জিহাদের প্রয়োজনে) তার জন্মস্থান ব্যতীত অন্যত্র ইন্তেকাল করে, তখন তার জন্মস্থান থেকে মৃত্যুস্থান পর্যন্ত জায়গা মেপে তা তাকে জান্নাতে দান করা হয়।” (নাসাঈ-১৮৩৩)

            ***ওহে ঘরে উপবিষ্ট মিসকিন!

            আল্লাহর রাসূলের পিছনে মসজিদে নববীতে জুমুআর নামায আদায় করে, তাঁর চেহারা মোবারক দর্শন করেও যদি আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল দেরী করার কারণে সারা দুনিয়ার সকল সম্পদ দান করেও তার সমান ফযীলত হাছিল করতে না পারা যায়; আল্লাহর রাস্তায় বের হতে এক সকাল কিংবা এক বিকাল দেরী করার কারণে যদি দুই বান্দার মধ্যে মর্তবার পার্থক্য পূর্ব-পশ্চিমের ব্যবধান হয়ে যায়; জিহাদ না করে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেও যদি আল্লাহর রাসূলের আফসোস শুনতে হয়; তাহলে বন্ধু! চিন্তা করে তুমিই বল, তুমি তো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বেরই হওনি, তাহলে তুমি ঘরে বসে থেকে তোমার স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি দান করে দিয়ে, কিংবা অন্য কোন্ আমলের/মেহনতের বদলায় তুমি একজন মুজাহিদের এক সকাল কিংবা এক বিকালের ফযীলত হাছিল করতে পারবে? জান্নাত থেকে, জান্নাতের উঁচু মর্তবা থেকে তুমি কত হাজার বছর পিছিয়ে পড়ছো, তা কি একবার চিন্তা করে দেখেছো, বন্ধু?



            ***ওহে, স্ত্রীর আচলের ছায়ায় আশ্রয়গ্রহণকারী ব্যক্তি!

            বন্ধু! তুমি যদি কাবা ঘরের ছাদের ছায়ায় দাঁড়িয়েও কেয়ামত পর্যন্ত নামায আদায় কর, তাহলেও তুমি ‘ঘরে উপবিষ্ট’ ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত হবে। হও না তুমি কাবাঘরের ইমাম, হও না তুমি মসজিদে নববীর ইমাম, হও না তুমি ‘হারামাইন শরীফাইন’-এর দরস্ দানকারী মুহাদ্দিস, মুফাস্সির কিংবা গ্র্যান্ড মুফতী; কিংবা তুমি হতে পার দ্বীনের অন্য কোনো শাখায় মেহনতকারী সাথী ভাই, তাতে কী!
            (জিহাদ ফরযে আইন হওয়া সত্ত্বেও, অন্যান্য মেহনতের পাশাপাশি) জিহাদ না করে যদি তুমি ঘরে বসে থাক, তাহলে কুরআনের ভাষায় তুমি ‘ক্বয়ীদূন’ (গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান)! আর এ ধরণের ব্যক্তিরা কখনোই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীদের সমকক্ষ হবে না।

            আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

            لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥

            “৯৫. গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান (যারা লড়াই করার ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করে এবং জিহাদ ত্যাগ করার)- যাদের কোনো সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ সব মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে, আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদীনকে উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন। ৯৬. এগুলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে পদমর্যাদা, ক্ষমা ও করুণা; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।”
            (৪ সূরা নিসা :৯৫-৯৬)



            Comment


            • #7
              **প্রিয় বন্ধু! একজন আবেদ কখনোই (সওয়াব ও মর্যাদার দিক থেকে) একজন মুজাহিদের সমান হতে পারে না:

              عَنِ الْحَسَنِ بْنِ أَبِيْ الْحَسَنِ أَنَّ رَجُلًا كَانَ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَهُ مَالٌ كَثِيْرٌ فَأَتَى رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ أَخْبِرْنِىْ بِعَمَلٍ أُدْرِكُ بِهِ عَمَلَ الْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، فَقَالَ كَمْ مَالُكَ؟ قَالَ سِتَّةَ الَافَ دِيْنَارٍ، فَقَالَ لَوْ أَنْفَقْتَهَا فِيْ طَاعَةِ اللهِ لَمْ تَبْلُغْ غُبَارَ شِرَاكِ نَعْلِ الْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَأَتَاُه رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهَ أَخْبِرْنِىْ بِعَمَلٍ أُدْرِكُ بِهِ عَمَلَ الْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، فَقَالَ لَوْ قُمْتَ اللَّيُلَ وَصُمْتَ النَّهَارَ لَمْ تَبْلُغْ نَوْمَ الْمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

              এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ -ﷺ এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি আমার সম্পদ দান করি, তাহলে কি আল্লাহর পথে মুজাহিদদের আমলে পৌঁছতে পারব? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমার সম্পদের পরিমাণ কত? লোকটি বলল, ছয় হাজার দিরহাম।
              রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই সম্পদ যদি আল্লাহ তা‘আলার মনোনীত পথে দান করে দাও তবেও একজন মুজাহিদের পায়ের নিচে জুতার বালি সমপরিমাণ হতে পারবে না।
              অন্য এক ব্যক্তি এসে আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), আমাকে এমন কিছু আমল বর্ণনা করে দিন যার দ্বারা আমি মুজাহিদের আমলের সমপর্যায়ে পৌঁছব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, যদি তুমি সারা রাত্র নামায পড় আর দিন ভর রোযা রাখ তবেও মুজাহিদগণের ঘুমের সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না। (সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর-২/১৫০)

              وعن أبي هريرة رضى الله تعالى عنه قال: جاء رجل إلى رسول الله ﷺ فقال : يا رسول الله كيف لي أن أنفق من مالي حتى أبلغ عمل المجاهد في سبيل الله؟ قال: ومالك؟ قال: ستة ألف. قال: لو تصدّقت بها كان عدل نومة الغازي في سبيل الله.
              হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি যদি আমার সম্পদ দান করি, তাহলে কি আল্লাহ্র পথে মুজাহিদদের আমলে পৌঁছতে পারবো? রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, তোমার সম্পদের পরিমাণ কত? লোকটি বলল, ছয় হাজার দিরহাম। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, “তুমি যদি তা দান করে দাও, তবে তা আল্লাহ্র পথে মুজাহিদের ঘুমের সমানও হবে না।”
              (তাম্বীহুল গাফিলীন, পৃষ্ঠা: ৩৯১)

              عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ الطَّاعِمُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كَالصَّائِمِ فِيْ غَيْرِه سَرْمَدًا ـ (كشف الاستار كتاب الجهاد باب فضل الجهاد، مشارع الاشواق:١١٩/١٦٠)

              হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “জিহাদের ময়দানে মুজাহিদগণের আহার করা জিহাদ ব্যতীত অন্যদের সারা জীবন রোযা রাখার সমান।”

              أن أبا هريرة قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : " مثل المجاهد في سبيل الله - والله أعلم بمن يجاهد في سبيله - كمثل الصائم القائم، وتوكل الله للمجاهد في سبيله بأن يتوفاه أن يدخله الجنة، أو يرجعه سالما مع أجر أو غنيمة ".

              রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো ইরশাদ করেন,“আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ, আর আল্লাহ্ পাকই সবচেয়ে ভালো জানেন কে তাঁর রাস্তায় যুদ্ধ করে, এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ ব্যক্তির মত (যে মুজাহিদ জিহাদ হতে ফিরে আসা পর্যন্ত) অবিরত অক্লান্ত অবস্থায় রোযা ও নামাযে মশগুল থাকে। আর আল্লাহ পাক তাঁর পথে জিহাদকারীর জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন যে, যদি তাকে মৃত্যু দান করেন, তবে তাকে জান্নাত দান করবেন আর যদি ফিরিয়ে আনেন তবে নিরাপদে সাওয়াব ও গনীমত সহ ফিরিয়ে আনবেন।” (বুখারী-২৭৮৭ ও মুসলিম)

              عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا يَعْدِلُ الْجِهَادَ قَالَ ‏"‏ لاَ تَسْتَطِيعُونَهُ ‏"‏ ‏.‏ فَرَدُّوا عَلَيْهِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا كُلُّ ذَلِكَ يَقُولُ ‏"‏ لاَ تَسْتَطِيعُونَهُ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ ‏"‏ مَثَلُ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَثَلُ الْقَائِمِ الصَّائِمِ الَّذِي لاَ يَفْتُرُ مِنْ صَلاَةٍ وَلاَ صِيَامٍ حَتَّى يَرْجِعَ الْمُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏"‏ ‏

              হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করে, একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল,“কোন কাজটি সওয়াবের দিক থেকে আল্লাহর পথে জিহাদের সমতুল্য?” রাসূলে আকরাম ﷺ বললেন, তোমরা সে কাজের মতো শক্তির অধিকারী নও।” সাহাবায়ে কিরাম দুই কিংবা তিনবার কথাটির পুনরাবৃত্তি করলেন। রাসূলে আকরাম প্রতিবার এটাই বলছিলেন, “তোমাদের এরূপ করার মতো শক্তি-সামর্থ্য নেই। এরপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত থাকে তার দৃষ্টান্ত হলো সেই ব্যক্তির মতো, যে রোযা রাখে, কিয়াম করে, আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করে, এবং নামায-রোযার ব্যাপারে গাফিল থাকে না (অনবরত করতেই থাকে যতক্ষণ না); মুজাহিদ জিহাদ শেষে বাড়িতে ফিরে আসে।” (বুখারী-২৮৯৬ ও মুসলিম, তিরমিজি)

              جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ يَعْدِلُ الْجِهَادَ‏.‏ قَالَ ‏ "‏ لاَ أَجِدُهُ ـ قَالَ ـ هَلْ تَسْتَطِيعُ إِذَا خَرَجَ الْمُجَاهِدُ أَنْ تَدْخُلَ مَسْجِدَكَ فَتَقُومَ وَلاَ تَفْتُرَ وَتَصُومَ وَلاَ تُفْطِرَ ‏"‏‏.‏ قَالَ وَمَنْ يَسْتَطِيعُ ذَلِكَ

              বুখারীর আরেক বর্ণনা হল: এক ব্যক্তি নিবেদন করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমায় এমন কোনো আমলের কথা বলুন যা জিহাদের সমতুল্য? তিনি ﷺ বললেন, “আমি এমন কোনো আমল তো দেখছি না।” তারপর আবার বললেন, “তুমি কি এতটা শক্তির অধিকারী, যখন জিহাদকারী আল্লাহর পথে বের হয়, তখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, অতঃপর (মুজাহিদ ফিরে আসার আগ পর্যন্ত) নামায পড়তে থাকবে, এবং গাফলতি করবে না এবং রোযা রাখবে কিন্তু (মুজাহিদ ফিরে আসার আগ পর্যন্ত) ইফতার করবে না।” সে ব্যক্তি বললেন, “এ কাজ করার ক্ষমতা কার আছে?”

              তাহলে বন্ধু!!!
              এত লাভের কাজ রেখে মিছামিছি কিসের পিছনে ছুটছ, বলতো? ঘরে বসে ইবাদত করে কতটুকুই আর সওয়াব কামাই করতে পারবে? নেক আমলের ধোকায় পড়ে কেন ঘরে বসে আছ, বলতো?



              ***ওহে বন্ধু, ভেবে দেখতো, তুমি কার গোলামী করছ?
              বন্ধু হে! একজন আল্লাহর রাহের মুজাহিদ আল্লাহর একটি ফরয হুকুম বাস্তবায়নের জন্য দুনিয়ার সব কিছু ত্যাগ করে থাকেন। স্নেহের মা-বাবা, প্রাণপ্রিয়া স্ত্রী, কলিজার টুকরা সন্তানসন্ততি, ভাই-বোন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, চাকুরী-ব্যবসা, সব। আল্লাহ তা‘আলা মুজাহিদীনকে দুনিয়ার গোলামী থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তারা বান্দার দাসত্ব-শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে এক আল্লাহর হুকুম পালন করে যাচ্ছেন, তাঁর গোলামী করছেন, তাঁর জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিচ্ছেন।

              আর অন্যদিকে, আমরা ঘরের মহব্বত, পরিবারের মহব্বত, মালের মহব্বত, চাকুরী-ব্যবসার (পেশার) মহব্বত ছাড়তে পারছি না। দুনিয়ার গোলামী থেকে ‘আযাদ’ হতে পারছি না। বলতো বন্ধু, তাহলে আমরা আসলে কার গোলামী করছি, আল্লাহ তা‘আলার, নাকি নফ্স ও দুনিয়ার?

              আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

              قُلۡ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ وَإِخۡوَٰنُكُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ وَعَشِيرَتُكُمۡ وَأَمۡوَٰلٌ ٱقۡتَرَفۡتُمُوهَا وَتِجَٰرَةٞ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَآ أَحَبَّ إِلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٖ فِي سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٢٤

              “বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা (ক্ষতি বা) বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর, এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত (দেখ, তোমাদের পরিণতি কি হতে যাচ্ছে), আর আল্লাহ তা‘আলা ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ২৪)

              বন্ধু! বুঝলে তো? পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, ঘর-বাড়ি, ধন-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি ইত্যাদি এগুলো হল দুনিয়া। আর যারা আল্লাহ্, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে যুদ্ধ করা থেকে এসব দুনিয়াকে বেশি মহব্বত করবে তারা হচ্ছে ফাসেক (গোনাহে কবীরা সম্পাদনকারী)। আর আল্লাহ্ তা‘আলা এসব ফাসেকদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দেন না; জিহাদ বুঝবার, আমল করবার, মুজাহিদের মর্তবা হাছিল করার তাওফীক দেন না। আল্লাহ্ পাক আমাদের হেফাযত করুন। আমীন। তাই, বন্ধু, সাবধান!

              ۞فَلۡيُقَٰتِلۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ يَشۡرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا بِٱلۡأٓخِرَةِۚ وَمَن يُقَٰتِلۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيُقۡتَلۡ أَوۡ يَغۡلِبۡ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٧٤

              “কাজেই, আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করাই উচিত। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দান করব।” (৪ সূরা নিসা: ৭৪)

              ***ওহে আবেদ ব্যক্তি! ওহে বুযুর্গ!

              বন্ধু, তুমি তো বুযুর্গি খুঁজে ফির ফরয আমল বাদ দিয়ে কেবল নফল ইবাদতের মধ্যে, আর দ্বীনের একজন মুজাহিদ খুঁজে আল্লাহ পাকের ফরয বিধানের মধ্যে। তুমি তো আতর-সুগন্ধি আর মিষ্টান্ন খাওয়ার মধ্যেই সাওয়াব দেখতে পাও; আর একজন মুজাহিদ ময়দানে সুগন্ধি আর মিষ্টান্ন পাবে কোথায়? আল্লাহর রাস্তার ধুলাবালি, গোলা-বারুদের গন্ধই তার খুশবু, তার মেশক-আম্বর।
              শুন বন্ধু! আল্লাহর রাস্তার ধূলাবালিও তো ঘরে বসে ইবাদত করা অপেক্ষা অধিক মূল্যবান। কেননা, তা জাহান্নামের আগুনকে নিভিয়ে দিবে। আর তোমার ঘরের ইবাদত, তোমার নফল ইবাদতের পাবন্দী তোমার জন্য জাহান্নামের আগুনকে নিভাতে পারবে কিনা তার তো কোনো গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা নেই। আল্লাহর রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন,

              عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: لَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ فِيْ جَوْفِ عَبْدٍ أَبَدًا
              “আল্লাহর পথের ধূলি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোনো বান্দার উদরে কখনো একত্রিত হবে না।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

              عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ .... لَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ فِيْ مَنْخَرِيْ مُسْلِمٍ أَبَدًا
              নবী করীম ﷺ আরো বলেন, “আল্লাহ তাআলার রাস্তার ধূলাবালি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও কোনো মুসলমানের নাকের ছিদ্রে একত্র হতে পারে না।” (নাসাঈ, তিরমিযী)


              প্রিয় ভাই! তোমাকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হাদীস আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই!
              عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ: مَثَلُ الْمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ الصَّائِمِ الْقَائِمِ الْقَانِتِ بِأَيَاتِ اللهِ لَا يَفْتَرُ مِنْ صَوْمٍ وَلَا صَدَقَةٍ حَتّٰى يَرْجِعَ الْمُجَاهِدُ إِلٰى أَهْلِهِ
              হযরত আবু হুরায়রা রাদি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এরশাদ করেছেন, “আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় গমনকারী মুজাহিদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায় যে রোযা রাখে, রাত্রভর নামাযে কুরআনে পাক তিলাওয়াত করে, এবং ততক্ষণ পর্যন্ত অনবরত রোযা ও সদকা করতে থাকে যতক্ষণ না আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় গমনকারী মুজাহিদ ফিরে আসে।” (ইবনে হিব্বান)


              عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ: مَثَلُ الْمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُجَاهِدُ فِيْ سَبِيْلِهِ، كَمَثَلِ الصَّائِمِ الْقَائِمِ الْخَاشَعِ الرَّاكِعِ السَّاجِدِ
              হযরত আবু হুরায়রা রাদি. হতে আরেকটি হাদীসে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে এই এরশাদ করতে শুনেছি, “আল্লাহ্র রাস্তায় গমনকারী মুজাহিদের দৃষ্টান্ত- আর আল্লাহ্ তা‘আলাই খুব ভালো করে জানেন, কে (তাঁর সন্তুষ্টির জন্য) তাঁর রাস্তায় জিহাদ করে- সে ব্যক্তির ন্যায়, যে রোযা রাখে, রাত্রে ইবাদত করে, আল্লাহ্ তা‘আলার ভয়ে তাঁর সম্মুখে অনুনয় বিনয় করে, রুকু করে, সিজদা করে।” (নাসাঈ-৩১২৯)


              অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ যিনি আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য, তাঁর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য যুদ্ধ করেন, তিনি স্বয়ংক্রিয় ভাবেই উক্ত আমলগুলোর সওয়াব লাভ করবেন, একজন মুজাহিদ অটোমেটিক একজন আবেদের সওয়াব/মর্তবা লাভ করে থাকেন, যদিও তিনি সেগুলো না করেন বা কম করে থাকেন।
              বন্ধু! তাই বলে এমন ভাবার কোন কারণ নেই যে, মুজাহিদ ভাইয়েরা নাওয়াফেলের (নফল ইবাদতের) কোনো পাবন্দী করেন না! সারাদিন কেবল ‘অস্ত্র’ আর ‘যুদ্ধ’ ‘যুদ্ধ’ করেন! মুজাহিদ ভাইয়েরা নফল নামায, রোযা, যিকির-আযকার ও অন্যান্য নাওয়াফেলের পাবন্দী আলহামদুলিল্লাহ তোমাদের মতই করে থাকেন। বরং হাকীকত হচ্ছে- আমাদের ময়দানের অনেক ভাইদের নফল ইবাদতের পাবন্দী দেখলে (নিজের নাওয়াফেলের স্বল্পতার জন্য) তুমি লজ্জায় মাথা নিচু করে দিবে! তাদের তিলাওয়াত, তাদের তাহাজ্জুদ, তাদের জিকির-আযকার আর রোনাজারি দেখে আমরাও ঈর্ষান্বিত হই! আহ্! তারাতো দিনের বীর আর রাতের সন্ন্যাসী!!


              বন্ধু! অবাক হবার কিছু নেই। কেননা, মুজাহিদরাই প্রকৃত আবেদ! আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের সর্বাধিক হেফাযতকারী।

              সুবহানাল্লাহ!!!
              প্রশ্ন করতে পার- কিভাবে?
              বন্ধু! ভালো করে বুঝে নাও- কুরআন কারীমে প্রায় ৬,৬৬৬ টি আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজারের মত আয়াতে কেবল তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের বয়ান করা হয়েছে। বাকী রইল এগারোশত আয়াত, যেগুলোতে শরীয়তের সকল বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে; এগুলোই আল্লাহ্পাকের দেয়া বান্দাদের জন্য হুদুদ তথা সীমানা। এই এগারোশত আয়াতের মধ্যে সাড়ে চারশত আয়াতের উপর (প্রায় অর্ধেক সংখ্যক বিধি-নিষেধের আয়াতে) কেবলই যুদ্ধ-জিহাদের আলোচনা। তাহলে তো বন্ধু! ‘আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাযত’ মুজাহিদরাই সবচেয়ে বেশি করে থাকে- এক. নিজে সকল বিধি-নিষেধের উপর আমল করার মাধ্যমে (এগুলোর মধ্যেজিহাদছাড়া বাকিগুলো তোমরাও করছ), আর দুই. নিজের জীবন আল্লাহর রাস্তায় কুরবান করে আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমীনে কায়েম করার মাধ্যমে। ( যে সকল ভাইয়েরা জিহাদ থেকে দূরে আছেন তারা এ কাজটি করছেন না)।

              বন্ধু! এর দ্বারা কি কুরআন কারীমের আমলের (বিধি-বিধানের) অর্ধেক আয়াতকে বেকার বানিয়ে ফেলা হচ্ছে না???
              নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।

              প্রিয় ভাই! আল্লাহ্ তা‘আলা কি আমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করতে নির্দেশ দেননি? তিনি কি ইরশাদ করেননি-
              يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱدۡخُلُواْ فِي ٱلسِّلۡمِ كَآفَّةٗ وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٢٠٨
              “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (০২ বাকারা: ২০৮)

              সুতরাং ভাই! পরিপূর্ণ দ্বীনে প্রবেশের জন্য আমাদের কি জিহাদী মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত নয়?

              Comment


              • #8
                *** আবার বন্ধু! জেনে রাখ- মুজাহিদ ভাইয়েরাই সর্বাধিক তাকওয়াবান, আল্লাহ তাআলাকে ভয়কারী, আল্লাহর কাছে মুজাহিদ ভাইয়েরাই সবচেয়ে জ্ঞানী এবং সবচেয়েআরেফ বান্দা।

                আবারো, প্রশ্ন করতে পার- কিভাবে???

                আল্লাহ তা‘আলার ইরশাদ-
                إِنَّمَا يَخْشَى ٱللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ ٱلْعُلَمَاء
                “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।” [৩৫ সূরা ফাতির: ২৮]

                অর্থাৎ ঘুরিয়ে বললে, যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে, বুঝা যায় তারাই সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী। কেননা, ভয়ের পিছনে যে অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও কারণ রয়েছে, তা হলো আল্লাহ্ পাক সম্পর্কিত জ্ঞান বা পরিচয় (মা’রিফাত)। এই পরিচয় থেকেই ভয়ের উৎপত্তি। যে যত বেশি আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করবে, বুঝা যাবে, সে তত বেশি আল্লাহ্ তা‘আলাকে চিনতে পেরেছে, সে ততবেশি মা’রিফাত লাভ করেছে, সে তত বেশি জ্ঞানী, সে ততবেশি পরহেযগার ও মুত্তাকী!


                এখন প্রশ্ন হল, “আল্লাহর ভয়কাকে বলে??”
                আল্লাহ তাআলারবড়ত্ব ও প্রতাপস্মরণের ফলে অন্তরের মাঝে যে অবস্থা উৎপন্ন হয়, কেবল তাকেইআল্লাহর ভয় বা তাকওয়াবলা যায় না।
                কেননা ভাই, আল্লাহ তা‘আলাকে এই ধরণের ভয় শয়তানও করে থাকে। যেমন, কুরআনে পাকে এরশাদ হয়েছে,
                وَإِذۡ زَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَعۡمَٰلَهُمۡ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ ٱلۡيَوۡمَ مِنَ ٱلنَّاسِ وَإِنِّي جَارٞ لَّكُمۡۖ فَلَمَّا تَرَآءَتِ ٱلۡفِئَتَانِ نَكَصَىٰ عَقِبَيۡهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيٓءٞ مِّنكُمۡ إِنِّيٓ أَرَىٰ مَا لَا عَلَ تَرَوۡنَ إِنِّيٓ أَخَافُ ٱللَّهَۚ وَٱللَّهُ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٤٨
                “আর যখন শয়তান তাদের (কুফ্ফারদের) কার্যকলাপকে নিজেদের দৃষ্টিতে সুদৃশ্য করে দিল এবং বলল যে, আজকের দিনে কোনো মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক, অতঃপর যখন সামনাসামনি হল উভয় বাহিনী তখন সে অতি দ্রæত পায়ে পেছন দিকে পালিয়ে গেল এবং বলল, আমি তোমাদের সাথে নেই, আমি দেখছি- যা তোমরা দেখছ না; আমি ভয় করি আল্লাহকে। আর আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন।” (৮ সূরা আনফাল: ৪৮)

                کَمَثَلِ الشَّیۡطٰنِ اِذۡ قَالَ لِلۡاِنۡسَانِ اکۡفُرۡ ۚ فَلَمَّا کَفَرَ قَالَ اِنِّیۡ بَرِیۡٓءٌ مِّنۡکَ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اللّٰہَ رَبَّ الۡعٰلَمِیۡنَ

                তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলেঃ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করি।
                (আল হাশ্‌র 59:১৬)


                সুতরাং ভাই! আল্লাহর ভয় বা তাকওয়ার প্রকৃত সংজ্ঞা হলো-আল্লাহ তাআলারবড়ত্ব ও প্রতাপস্মরণের ফলে দিলের মাঝে উৎপন্ন অবস্থার কারণে যদি আল্লাহ পাকের নাফরমানী ছেড়ে দেয়া হয় এবং তাঁর হুকুম-আহকাম মানতে নিজেকে বাধ্য করা হয়, তবেই তাকেআল্লাহর ভয় বা তাকওয়া বা পরহেযগারীবলা হবে।

                এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমার মধ্যে ভয় পয়দা হয়েছে কিনা বুঝব কিভাবে? ভয় তো দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না! অন্তরে ভয় থাকলে সেটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, আমল ও কার্যকলাপে প্রকাশ পাবে।

                প্রিয় বন্ধু, ভালো করে বুঝে নাও, আমার মাঝেআল্লাহর ভয়আছে, বা আমি একজন আল্লাহর ভয়ে ভীত পরহেযগার ব্যক্তি”- এটি দাবী করার বিষয় নয়, প্রমাণ করার বিষয়!!!

                সেইভয়তো ভাই ভয় নয়, যেই ভয় আমাকে গুনাহ থেকে বাঁচায় না!
                সেইভয়তো ভয় নয়, যেই ভয় আমার রাতের ঘুম হারাম করে
                আল্লাহর সামনে দাঁড় করায় না!
                সেইভয়তো ভয় নয়, যেই ভয় আমাকে শেষ পরিণতি ও
                আখিরাতের চিন্তায় অস্থির করে তুলে না!
                সেইভয়তো ভাই ভয় নয়, যেই ভয় আমার দীল থেকে দুনিয়ার মহব্বত দূর করে না, আমাকে দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শিখায় না!
                সেইভয়তো আর ভয় নয়, যেই ভয় আমাকে আল্লাহর কোনো ফরয হুকুম আদায় করতে বাধ্য করে না!
                এমনিভাবে, সেইভয়তো ভাই ভয় নয়, যেই ভয় আমাকে (আল্লাহর পাকড়াওয়ের আশঙ্কায়) ঘর থেকে বের করে জিহাদের ময়দানে নিয়ে যায় না!


                প্রিয় ভাই! নামায যে আল্লাহর হুকুম, জিহাদও তো সেই আল্লাহ্রই হুকুম।
                রোযা যে আল্লাহ্র হুকুম, জিহাদও তো সেই আল্লাহ্রই হুকুম।
                তাহলে ভাই, যে আল্লাহর ভয়ে আমি নামায তরক করি না, জিহাদ তরক করার ক্ষেত্রে কেন সেই একই আল্লাহকে ভয় করি না?
                যে আল্লাহর ভয়ে আমি রোযা তরক করি না, জিহাদ তরক করার ক্ষেত্রে কেন সেই একই আল্লাহকে ভয় করি না?
                এমনিভাবে, যে আল্লাহর ভয়ে আমি তা’লীম, তাযকিয়া আর দাওয়াতের মেহনত তরক করি না, জিহাদ তরক করার ক্ষেত্রে কেন সেই একই আল্লাহকে ভয় করি না?
                অথচ, জিহাদ তরক করার ব্যাপারে কত হুমকী ও ধমকী দিয়েছেন কুরআন কারীমে খোদ আল্লাহ্ তা‘আলা, এমনকি পরকালে জাহান্নাম এবং দুনিয়াতে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার মতোও হুমকি দিয়েছেন-
                إِلَّا تَنفِرُواْ يُعَذِّبۡكُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا وَيَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيۡ‍ٔٗاۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٣٩
                “তোমরা যদি (তাঁর পথে জিহাদের জন্য) বের না হও, তাহলে (এ জন্যে) তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের অন্য এক জাতি দ্বারা বদল করে দিবেন, তোমরা তার কোনই অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না, আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল।” (০৯ সূরা তাওবা: ৩৯)

                মুহাম্মাদ আলী সবূনী (রহঃ) উপর্যুক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন:
                [ إلا تنفروا يعذبكم عذابا أليما ] أى ان لا تخرجوا الى الجهاد مع رسول الله ، يعذبكم الله عذابا اليما موجعا ، باستيلاء العدو عليكم في الدنيا ، وبالنار المحرقة في الاخرة ،
                “যদি তোমরা যুদ্ধে বের না হও, তিনি তোমাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তি দেবেন” অর্থাৎ তোমরা যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে জিহাদে বের না হও, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন, দুনিয়াতে তোমাদের উপর শত্রুকে চাপিয়ে দিয়ে। আর পরকালে জ্বলন্ত আগুন দিয়ে। [সফওয়াতুত তাফাসীর, দেখুন:উক্ত আয়াতের তাফসীর]

                তাই ভাই, আমরা যদি সত্যিই আল্লাহ্ তা‘আলাকে প্রকৃত অর্থে ভয় করে থাকি, প্রকৃত অর্থে আমরা মুত্তাকী হয়ে থাকি, সত্যিই যদি আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ্ পাকের আযাব ও জাহান্নামকে ভয় করে থাকি, তাহলে কিভাবে জিহাদ না করে আমরা বসে থাকতে পারি???
                সুতরাং, বুঝা গেল, যেহেতু জিহাদ সবচেয়ে কঠিন ও বিপজ্জনক আমল, আর যে বা যারা সেই সকল বিপদাপদ ও কঠিন পরীক্ষাসমূহ উপেক্ষা করে নিজের জানের বাজি রেখে আল্লাহ্র ভয়ে আল্লাহ্র রাহে জিহাদ করছেন, তাদের অন্তরে আল্লাহ্র ভয় সর্বাধিক! আল্লাহ্কে ভয় করার ক্ষেত্রে মর্দে মুজাহিদগণই সবচেয়ে বেশি সত্যবাদী! সবচেয়ে বেশি ভয় করার কারণে মুজাহিদ ভাইয়েরাই আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। তারাই সবচেয়ে বেশি পরহেযগার ও মুত্তাকী! তারাই সবচেয়ে ‘আরেফ বিল্লাহ! যেমনটি আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন-


                إِنَّمَا يَخْشَى ٱللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ ٱلْعُلَمَاء
                “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।” [৩৫ সূরা ফাতির: ২৮]


                সুবহানাল্লাহ্! এটিই চরম বাস্তবতা!



                ***ওহে বৃদ্ধ! ওহে অক্ষম! ওহে যৌবনের আড়ালে যার বার্ধক্যেরকঙ্কাল!
                বন্ধুহে, আমার কথায় কষ্ট নিও না!

                আমাদের ঘরের ইবাদত আল্লাহর কাছে ততটা মূল্যবান নয়, যতটা একজন মুজাহিদের প্রশিক্ষণের জন্য খেলাধুলা করাটা আল্লাহর কাছে মূল্যবান।
                রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,

                كُلُّ مَا يَلْهُو بِهِ الرَّجُلُ الْمُسْلِمُ بَاطِلٌ إِلاَّ رَمْيَهُ بِقَوْسِهِ وَتَأْدِيبَهُ فَرَسَهُ وَمُلاَعَبَتَهُ أَهْلَهُ فَإِنَّهُنَّ مِنَ الْحَقِّ

                “মুসলিম ব্যক্তির সকল ক্রীড়া-কৌতুকই বৃথা। তবে তীর নিক্ষেপ, ঘোড়ার প্রশিক্ষণ এবং নিজ স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক বৃথা নয়। (কারণ) এগুলো হল উপকারী ও বিধি সম্মত।” (ইবনু মাজাহ-২৮১১; জামে’ আত-তিরমিজি- ১৬৩৭, নাসাঈ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, দারিমী)

                হযরত মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লহু আনহুকে এক কাপড় পরিহিত অবস্থায় দুটি লক্ষ্যবস্তুর মাঝে দৌড় প্রশিক্ষণ নিতে দেখেছি।
                হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি এক কাপড় পরিহিত অবস্থায় দুটি লক্ষ্যবস্তুর মাঝে দৌড় প্রশিক্ষণ নিতেন। (তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ. ৩৯৩)



                **ওহে যার যৌবনরস ফুরিয়ে গেছে! যার শৌর্য-বীর্য শুকিয়ে গেছে!
                প্রিয় বন্ধু আমার!

                একজন মুজাহিদের জন্য রয়েছে ইয্যতের যিন্দেগী আর জিহাদত্যাগীদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা!
                قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الْخَيْلُ فِي نَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‏"‏‏.
                রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “ঘোড়ার কপালে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত কল্যাণ বেঁধে দেয়া হয়েছে।” (বুখারী-২৮৪৯, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, দারিমী।)

                حَدَّثَنَا عُرْوَةُ الْبَارِقِيُّ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الْخَيْلُ مَعْقُودٌ فِي نَوَاصِيهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ الأَجْرُ وَالْمَغْنَمُ ‏"‏‏.‏

                উরওয়াহ বারিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশ গুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। অর্থাৎ (আখিরাতের) পুরষ্কার (জান্নাত) এবং গনীমতের মাল। (বুখারী, হাদিস নং ২৮৫২)

                অপর এক হাদীসে এসেছে,

                العزّ فى نواصى الخيل، والذّلّ فى أذناب البقر

                ঘোড়ার ললাটে ইয্যত রয়েছে। আর অন্যদিকে, গরুর লেজে রয়েছে লাঞ্ছনা। (তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ. ৩৯৩)

                عَنْ اِبْنِ عُمَر قَالَ، سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْل، اِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِيْنَةِ وَاَخَذْتُمْ اَذْنَابَ الْبَقَرِ وَرَضِيْتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ سَلَّطَ اللهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهٗ حَتىﱣ تَرْجِعُوْا اِلىٰ دِيْنِكُمْ
                হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদিয়াল্লহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ -ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, “যখন তোমরা ‘ঈনাহ’ (এক ধরণের সুদভিত্তিক ব্যবসা)পদ্ধতিতে ক্রয় বিক্রয় এবং ব্যবসা বাণিজ্যে পুরাপুরি মশগুল হয়ে যাবে এবং গরুর লেজ ধরে খেত খামারে মগ্ন হয়ে যাবে আর জিহাদ করা ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর এমন অপমান চাপিয়ে দিবেন, যা ততক্ষণ পর্যন্ত দূর হবে না যতক্ষণ না তোমরা আপন দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে।” (আবু দাউদ)

                অর্থাৎ মানুষ যখন জিহাদে লিপ্ত হবে, তখন তাতে ইসলাম ও মুসলমানদের ইয্যত ও মান-মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে তারা সমাসীন থাকবে। আর যখন জিহাদ পরিত্যাগ করে গরুর লেজের অনুসরণ করবে, লাঙ্গল-জোয়াল নিয়ে ক্ষেত-খামারে লিপ্ত হবে, তখন মুসলমান জাতি হবে লাঞ্ছিত, অপদস্থ।( যেমনটি হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে, পৃথিবীর প্রতিটি আনাচে কানাচে।)



                **বন্ধু হে! তুমি কি তোমার নিজের অস্তিত্বকে ভালোবাস না?
                স্বাভাবিকভাবে কেউ মৃত্যুবরণ করলে মাটি তার দেহকে শেষ করে ফেলবে, তার সুন্দর চেহারা, শুভ্র ত্বক, কাজল কালো চোখ, সুউচ্চ নাসিকা, বলিষ্ঠ দেহ, এগুলো তো হবে কীট আর পোকা-মাকড়ের আহার্য?
                কিন্তু যারা শহীদ হন? আমাদের দয়াবান প্রভু একজন শহীদের দেহকে কবরের মাটি আর পোকা-মাকড়ের জন্য হারাম করেছেন। একটি পশমও তারা স্পর্শ করবে না। তাছাড়া একজন শহীদ কবরে অনন্ত জীবন লাভ করবে, অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণকারীর দেহ কি মৃত্যুর সাথে সাথে পঁচে-গলে ধ্বংস হয়ে যাবে না?
                ওহে বন্ধু! শুনে রাখ! শহীদ না হলে মৃত ব্যক্তির লাশগুলো পঁচে যায়, দুর্গন্ধময় হয়ে যায়, আর বিপরীতে শহীদের রক্ত থেকে মেশক-আম্বরের নয়, বরং এক অপার্থিব সুবাস বেরিয়ে আসে। মৃত্যুর অবস্থার প্রেক্ষিতে মৃত্যুর পর আমাদের কী হালত হবে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি??
                তাছাড়া, একজন শহীদ শাহাদাত লাভের সাথে সাথেই হূরে ঈনের সাক্ষাৎ লাভ করবে; জান্নাতে চলে যাবে; সবুজ পাখি হয়ে জান্নাতে যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াবে, জান্নাতের ফলমূল আহার করবে; মৃত্যুর কষ্ট নেই; কবরের আযাব নেই; হিসাব-নিকাশের ভয় নেই; কিয়ামতের ময়দানে কোনো পেরেশানী নেই; থাকবে সর্বোচ্চ জান্নাতে-জান্নাতুল ফিরদাউসে, আল্লাহ পাকের আরশের ঠিক নিচে, মাওলার প্রতিবেশি হয়ে।
                বলতো বন্ধু! ঘরে বসে আমাদের কোন্ আমলের প্রতিদানে আমরা এগুলোর কোনো একটির আশা করতে পারি??


                **বন্ধু হে! তুমি কি তোমার পরিবার-পরিজনকে ভালোবাস না?
                বন্ধু! তোমরা তো পিতা-মাতা আর স্ত্রী-সন্তানের হক আদায় কর মোবাইলে একটু খোঁজ-খবর নিয়ে, বছরে দুয়েকবার দুয়েক সেট কাপড় দিয়ে, কিছু ভরন-পোষণ করে, দুয়েক লিটার দুধ, কিছু ফল-মূল, আমের মৌসুমে দুয়েক কেজি আম, কাঁঠালের মৌসুমে দুয়েকটা কাঁঠাল খাইয়ে, একটু আদর-যত্ন, সোহাগ-ভালোবাসা দিয়ে।

                অন্যদিকে, আমরা দূরে ময়দানে থেকে আমাদের পরিবার-পরিজনদের তোমাদের মতো হয়ত খোঁজ-খবর নিতে পারি না, আমাদের চক্ষুগুলো তাদের বিরহে অশ্রুপাত করে, জানি, তারাও আমাদের বিরহে ছটফট করে, তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারি না; তবুও আমরা আমাদের রবের ফরয বিধান আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছি, আমরা আশা করি, দুনিয়াতে যদি তাদের সাথে দেখা নাও হয়, আল্লাহর আরশের ছায়াতলে-জান্নাতে একদিন আমরা অবশ্যই একত্রিত হবো, ইনশাআল্লাহ। কেননা, আমাদের রবের ওয়াদা সত্য।

                وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ

                “যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে যাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষের সাথে মিলিত করে দিব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করবো না। (৫২ সূরা ত‚র: ২১)

                বন্ধু! একটু চিন্তা করতো, তখন আমাদের পরিবার পরিজনরা কোন জান্নাতে থাকবে? তারা তখন মুজাহিদের জান্নাতে থাকবে। তারা তখন শহীদের জান্নাতে থাকবে। আমাদের স্ত্রী-সন্তানরা, তারা তো যুদ্ধ না করেও শুধুমাত্র আমাদের বিরহে সবর করার কারণে, মুজাহিদ ও শহীদের জান্নাতে আমাদের সাথে ইনশাআল্লাহ একত্রে থাকবে।

                عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الأَكْبَرِ وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ الْيَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الْحُورِ الْعِينِ وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ ‏

                মিকদাব ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ছয়টি পুরস্কার বা সুযোগ আছে। তাঁর প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সাথে সাথে তাঁকে ক্ষমা করা হয়, তাঁকে তাঁর জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়, কবরের আযাব হতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, সে কঠিন ভীতি হতে নিরাপদ থাকবে, তাঁর মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর এক একটি পাথর দুনিয়া ও তাঁর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম। তার সাথে টানা টানা আয়তলোচনা বাহাত্তরজন জান্নাতী হূরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর সত্তরজন নিকটাত্মীয়ের জন্যতাঁর সুপারিশ ক্ববূল করা হবে।

                (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৬৩)

                عَنْ اَبِيْ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ: يُشَفَّعُ الشَّهِيْدُ فِيْ سَبْعِيُنَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ ـ ابو داود كتاب الجهاد باب في الشهيد يشفع، البيهقى كتاب السير باب الشهيد يشفع، مشارع الاشواق ৭৩৯-১১৪৮
                হযরত আবূ দারদা রাদি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, শহীদ নিজ পরিবারভূক্ত সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করবে।(আবু দাউদ, বাইহাক্বী, মাশারিউল আশওয়াক্ব)

                সুব্হানাল্লাহ!

                একটু ভাব তো বন্ধু! নিজের পরিবার পরিজন আর মা বাবাকে বছরে দুয়েক সেট কাপড় আর দুয়েক কেজি আম খাওয়ানোর তুলনায় কত উত্তম হক আদায় করা এটি!! তাই না!



                **ওহে তুমি কি মনে করছো, এখনতো আমরা দুর্বল, শারীরিক সক্ষমতা নেই, অর্থ সম্পদ নেই, অস্ত্র-শস্ত্র নেই, জিহাদ করবো কিভাবে?

                আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি যে,

                ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ٤١

                “তোমরা বের হয়ে পড়, হালকা বা ভারী সরঞ্জামের সাথে এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।” (০৯ সূরা তাওবা: ৪১)

                ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ ‘হালকা বা ভারী’ এর দশটি অর্থ করেছেন। ১. দলবদ্ধভাবে সারিয়্যা হিসেবে (হালকা) বা পৃথকভাবে (ভারী)।
                ২. যুবক হও (হালকা) কিংবা বৃদ্ধ (ভারী)।
                ৩. আগ্রহ থাকুক (হালকা) বা না থাকুক (ভারী)।
                ৪. ধনী হও (হালকা) কিংবা গরীব (ভারী)।
                ৫. ব্যস্ত হও (ভারী) কিংবা অবসরে থাক (হালকা) ।
                ৬. এমন সম্পত্তি থাকা যা ছাড়তে ইচ্ছা হয় না (ভারী), বা না থাকা (হালকা)
                ৭. পরিবার-পরিজন থাকুক (ভারী) বা না থাকুক (হালকা) ।
                ৮. পদাতিক (ভারী) কিংবা অশ্বারোহী (হালকা)।
                ৯. যুদ্ধের অগ্রগামী বাহিনীতে থাক (ভারী) কিংবা পুরো বাহিনীর সাথে থাক (হালকা)।
                ১০. সাহসী বীরপুরুষ হও (হালকা) কিংবা ভীরু কাপুরুষ (ভারী)।

                ওহে বন্ধু! তুমি এগুলোর বাহিরে কোন্ দলে আছ? তোমার পালানোর কোনো সুযোগ আছে কি?

                قُل لِّلۡمُخَلَّفِينَ مِنَ ٱلۡأَعۡرَابِ سَتُدۡعَوۡنَ إِلَىٰ قَوۡمٍ أُوْلِي بَأۡسٖ شَدِيدٖتُقَٰتِلُونَهُمۡ أَوۡ يُسۡلِمُونَۖ فَإِن تُطِيعُواْ يُؤۡتِكُمُ ٱللَّهُ أَجۡرًا حَسَنٗاۖوَإِن تَتَوَلَّوۡاْ كَمَا تَوَلَّيۡتُم مِّن قَبۡلُ يُعَذِّبۡكُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٦ لَّيۡسَعَلَى ٱلۡأَعۡمَىٰ حَرَجٞ وَلَا عَلَى ٱلۡأَعۡرَجِ حَرَجٞ وَلَا عَلَى ٱلۡمَرِيضِ حَرَجٞۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَاٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَمَن يَتَوَلَّ يُعَذِّبۡهُ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٧

                “১৬। গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিন: আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। তখন যদি তোমরা নির্দেশ পালন কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন। আর যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর যেমন ইতিপূর্বে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছ, তবে তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন। ১৭। (কেবল) অন্ধের জন্যে, খঞ্জের জন্যে ও রুগ্নের জন্যে (জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের না হলে) কোনো অপরাধ নেই, এবং যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে তাকে তিনি জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।” (৪৮ সূরা ফাত্হ:১৬-১৭)



                Comment


                • #9
                  **ওহে বন্ধু! জিহাদের জন্য তোমার প্রস্তুতি কোথায়?

                  বন্ধু, তুমি হয়ত বলবে, আমি তো জিহাদকে সমর্থন করি, জিহাদ করাকে আমিও ভালোবাসি। সুযোগ পেলে আমিও তো জিহাদ করতে চাই। জিহাদের ডাক এলে আমিও জিহাদে জুড়ে যাব।
                  ভালো কথা, বন্ধু! তোমার দাবী যদি সত্যি হয়, তাহলে জিহাদের জন্য তোমার প্রস্তুতি কোথায়?

                  আল্লাহ তা‘আলার হুকুম-

                  وَاَعِدُّوۡا لَہُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّمِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡہِبُوۡنَ بِہٖ عَدُوَّ اللّٰہِ وَعَدُوَّکُمۡ وَاٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِہِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَہُمۡ ۚ اَللّٰہُ یَعۡلَمُہُمۡ ؕ وَمَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَاَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ

                  আর তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য প্রস্তুত রাখ শক্তি ও অশ্ব বাহিনী, তা দিয়ে তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ্‌র শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ্‌ তাদেরকে জানেন । আল্লাহ্‌র পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না ।(সূরা আল আনফাল 8:60)

                  বন্ধু, তুমি যে জিহাদ করতে চাও, তাহলে আল্লাহ্ পাকের এই হুকুমের বাস্তবায়ন তোমার জীবনের কোথায় আছে??
                  তুমি কি অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছ?
                  অস্ত্র ক্রয়ের জন্য কি তুমি অর্থ সঞ্চয় করেছ?
                  মানসিক ভাবে তুমি কি এখনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত?
                  জিহাদের জন্য কি তুমি মাঠ প্রস্তুত করছ?
                  দাওয়াহ্ ও ই’দাদ- এর মেহনত কতটুকু করছ তুমি??
                  জিহাদ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইলম হাছিল করেছ কি তুমি??
                  জিহাদী কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছ কি তুমি??
                  (কিভাবে জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত হব ও প্রস্তুতি গ্রহণ করব এ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন: কিতাবুত তাহরীদ্ দ্বিতীয় পর্ব: তাওহীদ ও জিহাদ, লিংক- https://bit.ly/tahrid2 )


                  বন্ধু! কমপক্ষে, আর কিছু না থাকুক, তুমি কি জিহাদের জন্য শারীরিক ভাবে উপযুক্ত? তুমি কি নিয়মিত শরীরচর্চা দ্বারা নিজেকে যুদ্ধের উপযুক্ত রাখছ? না হলে তো তুমি জিহাদের ময়দানে এসেও লেজ গুটিয়ে পালাবে!
                  আল্লাহ্ পাক আমাদের হেফাযত করুন। আমীন।
                  আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
                  يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا لَقِيتُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ زَحۡفٗا فَلَا تُوَلُّوهُمُ ٱلۡأَدۡبَارَ ١٥ وَمَن يُوَلِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ دُبُرَهُۥٓ إِلَّا مُتَحَرِّفٗا لِّقِتَالٍ أَوۡ مُتَحَيِّزًا إِلَىٰ فِئَةٖ فَقَدۡ بَآءَ بِغَضَبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦
                  “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কাফেরদের সাথে যুদ্ধে মুখোমুখী হবে, তখন পশ্চাদপসরণ করবে না। আর যে লোক সেদিন তাদের থেকে পশ্চাদপসরণ করবে, অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তনকল্পে কিংবা যে নিজ সৈন্যদের নিকট আশ্রয় নিতে আসে সে ব্যতীত- অন্যরা আল্লাহ্র গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার ঠিকানা হল জাহান্নাম। বস্তুতঃ সেটা হল নিকৃষ্ট অবস্থান।” (০৮ সূরা আল আনফাল: ১৫-১৬)


                  বন্ধু! যেখানে তুমি দুই কিলোমিটার হাঁটতে পার না, সেখানে তুমি দশ কিলোমিটার দৌঁড়াবে কি করে? যেখানে তুমি দু’তলা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারনা, সেখানে তুমি পাহাড়-পর্বতের উপর আরোহন করার আশা কর কী করে? খেয়ে খেয়ে ভুঁড়ি বানিয়ে জিহাদ করার আশা করা দিবা স্বপ্ন নয় কি বন্ধু? (জিহাদ লাগলে/ জিহাদের ডাক আসলে জুড়ে যাব!) এটা কি নিজেকে মিথ্যা আশা দেয়া নয়?


                  শুনে রাখ! এরূপ মৌখিক জিহাদের স্পৃহা আল্লাহর রাসূলের যামানার মুনাফেকরাও দেখাত! (আল্লাহই ভালো জানেন আমাদের অন্তরের অবস্থা!)
                  আল্লাহ তাআলার ইরশাদ,
                  ۞وَلَوۡ أَرَادُواْ ٱلۡخُرُوجَ لَأَعَدُّواْ لَهُۥ عُدَّةٗ وَلَٰكِن كَرِهَ ٱللَّهُ ٱنۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَقِيلَ ٱقۡعُدُواْ مَعَ ٱلۡقَٰعِدِينَ ٤٦
                  “আর যদি তাদের যুদ্ধের জন্য বের হবার (প্রকৃত) ইচ্ছা (এরাদা) থাকত, তবে অবশ্যই কিছু না কিছু সরঞ্জাম ব্যবস্থা করত (প্রস্তুতি নিত), (যেহেতু তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়, অন্তরে নেফাক তাই) আল্লাহ তাদের বের হওয়াকে পছন্দ করেননি, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ করা হল, (ঘরে) বসা লোকদের (নারী, শিশু, বৃদ্ধ, শারীরিকভাবে অক্ষম ও অন্যান্য মুনাফেকদের) সাথে বসে থাক।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ৪৬)



                  বন্ধু! ‘তামান্না ও এরাদা’র মধ্যে পার্থক্যটা বুঝে নাও। তামান্না (ইচ্ছা) হলো ঐ আকাঙ্ক্ষার নাম, যাতে কেবল কোনো একটি কাজের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করা হয়, কিন্তু সে কাজটি আঞ্জাম দেয়ার জন্য কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ কিংবা কদম দেয়া হয় না। জিহাদের ক্ষেত্রে কেবল (জিহাদী/শহীদী) তামান্না-ই গ্রহণযোগ্য নয়; জিহাদের জন্য চাই ‘এরাদা’। কোনো একটি কাজের ক্ষেত্রে এরাদা হলো সেই ঐকান্তিক ইচ্ছার নাম যার সাথে কাজটি সম্পাদন করার জন্য যথোপযুক্ত ও সাধ্যমত প্রস্তুতি ও প্রচেষ্টা বর্তমান থাকে।
                  প্রিয় ভাই! আল্লাহর রাসূলের যামানার মুনাফিকরাও জিহাদের জন্য তামান্না প্রদর্শন করতো, কিন্তু তাদের কোনো এরাদা ছিল না, যেমনটি আমরা পূর্বের আয়াতে জেনেছি।

                  আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন-

                  وَقِيلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡاْ قَٰتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَوِ ٱدۡفَعُواْۖ قَالُواْ لَوۡ نَعۡلَمُ قِتَالٗا لَّٱتَّبَعۡنَٰكُمۡۗ هُمۡ لِلۡكُفۡرِ يَوۡمَئِذٍ أَقۡرَبُ مِنۡهُمۡ لِلۡإِيمَٰنِۚ يَقُولُونَ بِأَفۡوَٰهِهِم مَّا لَيۡسَ فِي قُلُوبِهِمۡۚ وَٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِمَا يَكۡتُمُونَ ١٦٧
                  “আর তাদেরকে বলা হল এসো, আল্লাহর রাহে লড়াই কর কিংবা শত্রুদেরকে প্রতিহত কর। তারা বলেছিল, আমরা যদি জানতাম, লড়াই হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে থাকতাম (এবং যুদ্ধ করতাম)। সেদিন তারা ঈমানের তুলনায় কুফরীর কাছাকাছি ছিল। যা তাদের অন্তরে নেই তারা নিজের মুখে সে কথাই বলে; বস্তুতঃ আল্লাহ ভালভাবে জানেন, যা তারা গোপন করে থাকে।” (০৩ সূরা আলে ইমরান: ১৬৭)
                  সুতরাং বন্ধু! তুমি কি ভয় করছ না, এখনও আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে কেন জিহাদের জন্য কবুল করছেন না!!!!


                  ***ওহে বন্ধু আমার! তুমি কি তোমার নিজের ব্যাপারেনিফাকেরভয় কর না??

                  যাদের অন্তরে কুফুরী, যারা অন্তর থেকে ইসলাম ও আল্লাহর হুকুমকে কবুল করেনি কিন্তু নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেয়, তাদেরকে “মুনাফিক” বলা হয়।

                  হযরত ইবনে আবি মুলাইকা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমি ত্রিশজন সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম আযমাঈনদের সহিত সাক্ষাৎ করেছি। তাঁরা প্রত্যেকে নিজের সম্পর্কে মুনাফিক হওয়ার ভয় করছিলেন।” (বুখারী)

                  অর্থাৎ তাঁরা মনে করতেন, আমাদের বাহ্যিক অবস্থা যেমন উত্তম, উহার ভিতরগত অবস্থা তেমন উত্তম নয়। এই কারণে তাঁরা নিজের মধ্যে নেফাকের ভয় করতেন।

                  আমরা গুনাহকে যেই পরিমাণ ভয় করি না, সাহাবায়ে কেরাম তো তাঁদের নেক আমল কবুল না হওয়াকে তার থেকে অনেক বেশি ভয় করতেন। হায়! আমাদের অন্তরে নিফাক থাকা সত্ত্বেও আমরা নিজেদেরকে পাক্কা ঈমানদার মনে করি। আর তাঁদের ঈমানকে স্বয়ং আল্লাহ পাক মানদণ্ড ঘোষণা করার পরও তারা নিজেদের ব্যাপারে ‘মুনাফিক’ হয়ে যাওয়ার ভয় করতেন।
                  আহ! তাঁরা আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে কতুটুকু সতর্ক ছিলেন!

                  বন্ধু, তোমার তো মনে আছে নিশ্চয়ই!
                  নবুয়তের যামানায় সর্বপ্রথম যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তা‘আলা মুনাফেকদের মুখোশ উন্মোচন করেন তা হলো ওহুদের যুদ্ধ। মুনাফেকদের সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার অনুসারী প্রায় ৩০০ জন মূল বাহিনী থেকে পেছনে সরে যায়। বাকী ৭০০ জন সাহাবী ৩০০০ কাফেরের বিরুদ্ধে ওহুদের ময়দানে যুদ্ধ করেন। এ থেকে বুঝা গেল, সাহাবায়ে কেরামের জামাতে ঘাপটি মেরে বসেছিল এমন মুনাফেকের সংখ্যা প্রায় ৩০%।
                  লক্ষ্য করার বিষয় হলো, এই মুনাফিকরা সকল আমলই করত। তারা নামায পড়ত, রোযা রাখত, যাকাত দিত, দান-খয়রাত করত, হজ্জ করত, সবই করত। করতো না শুধু একটি আমল, যেই আমল থেকে এরা সর্বদা পিছিয়ে থাকত। যেহেতু জিহাদের ময়দানে গেলে মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে, তাই এরা মৃত্যুর ভয়ে জিহাদ থেকে পালাত।

                  আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

                  وَيَقُولُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَوۡلَا نُزِّلَتۡ سُورَةٞۖ فَإِذَآ أُنزِلَتۡ سُورَةٞ مُّحۡكَمَةٞ وَذُكِرَ فِيهَا ٱلۡقِتَالُ رَأَيۡتَ ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ يَنظُرُونَ إِلَيۡكَ نَظَرَ ٱلۡمَغۡشِيِّ عَلَيۡهِ مِنَ ٱلۡمَوۡتِۖ فَأَوۡلَىٰ لَهُمۡ٢٠ طَاعَةٞ وَقَوۡلٞ مَّعۡرُوفٞۚ فَإِذَا عَزَمَ ٱلۡأَمۡرُ فَلَوۡ صَدَقُواْ ٱللَّهَ لَكَانَ خَيۡرٗا لَّهُمۡ ٢١

                  “(২০) যারা মুমিন তারা বলে: একটি সূরা নাযিল হয় না কেন? অতঃপর যখন কোন দ্ব্যর্থহীন সূরা নাযিল হয় এবং তাতে সশস্ত্র জিহাদের (কিতাল/যুদ্ধের) উল্লেখ করা হয়, তখন যাদের অন্তরে (মুনাফেকীর) রোগ আছে, আপনি তাদেরকে মৃত্যুভয়ে মুর্ছাপ্রাপ্ত মানুষের মত আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখবেন। সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য। (২১) তাদের আনুগত্য আর মিষ্ট বাক্য জানা আছে। অতএব, জিহাদের সিদ্ধান্ত হলে যদি তারা আল্লাহর প্রতি প্রদত্ত অংগীকার পূর্ণ করে (যুদ্ধে শরীক হয়), তবে তাদের জন্য তা মঙ্গলজনক হবে।” (৪৭ সূরা মুহাম্মাদ: ২০-২১)

                  প্রিয় বন্ধু! এই লোকগুলো জিহাদে না জুড়ার কারণে সকল আমলে জুড়া সত্ত্বেও মুনাফেকদের কাতারে শামিল হতো। তাবুকের যুদ্ধের সময়ও এরা ফসল কাটা কিংবা গরমের অজুহাত দেখিয়ে জিহাদ থেকে অব্যাহতি চায়। এরা তো প্রকাশ্য মুনাফেক। এমনকি যারা খাঁটি মুমিন ছিলেন, এবং কোনো কারণ ছাড়াই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি, তাদেরকেও তাওবা কবুল করানোর জন্য পরবর্তীতে অনেক কাঠ-কয়লা পুড়াতে হয়েছিল। সে কাহিনী নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়!!

                  বুঝা গেল, কেউ জিহাদ পরিত্যাগ করলে, তার আল্লাহ্ পাকের দরবারে মুনাফিক সাব্যস্ত হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)

                  আর এজন্য মুনাফিক হয়ে যাওয়ার ভয়ে সাহাবায়ে কেরাম কখনো, কোনোদিন জিহাদ পরিত্যাগ করেননি।


                  সাহাবায়ে কেরামের কাছে “ঈমান মানেই জিহাদ, আর জিহাদ না করা মানেই নিফাক”। আর ইসলামের বিধান সব যুগের জন্য একই। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। তাতে আর কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না। তাই এই ব্যাপারে আমাদের খুব ভয় করা উচিত।

                  عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ بِهِ نَفْسَهُ مَاتَ عَلَى شُعْبَة مِنْ نِفَاقٍ

                  রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,“যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেল যে সে যুদ্ধ করেনি, কিংবা মনে মনে যুদ্ধ করার ইচ্ছাও পোষণ করেনি, সে মুনাফেকির একটি অংশ নিয়ে মারা গেল।” (সহীহ মুসলিম-৫০৪০)

                  عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: مَنْ لَقِىَ اللهَ بِغَيْرِ أَثَرٍ مِنْ جِهَادِ، لَقِىَ اللهَ وَفِيْهِ ثُلْمَةٌ

                  তিনি ﷺ আরো ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি জিহাদের কোনো চিহ্ন ব্যতীত আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট হাজির হবে, সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার দ্বীন ত্রুটিযুক্ত হবে।” (তিরমিযি- ১৬৬৬)

                  তাই, জিহাদ না করে ঘরে বসে থেকে আমরা নিজেদেরর ব্যাপারে কিভাবে এতটা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমাদের অন্তরে নেফাক নেই? এটাতো সহজ কথা যে, যে আল্লাহ কে চাওয়ার ব্যাপারে সত্যবাদী, আল্লাহর হুকুম পুরা করার ব্যাপারে সত্যবাদী, সে যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহ-তে বিশ্বাসী হয়, তাহলে তার কাছে জিহাদের হুকুম আসার পরও সে কিভাবে ঘরে বসে থাকতে পারে? সে কিভাবে জিহাদ বাদ দিয়ে অন্য ফিকির নিয়ে ঘুরতে পারে?

                  প্রিয় ভাই, আমরা কিভাবে বসে থাকতে পারি, আমাদের জীবনের দাম কি আল্লাহর রাসূলের জীবনের চেয়েও বেশি হয়ে গেল??? (নাউযুবিল্লাহ!)

                  অথচ তাঁকে এই দ্বীনের জন্য কত কষ্ট করতে হয়েছে! জীবনকে বাজি ধরতে হয়েছে! ছোট-বড়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৭৩ টি যুদ্ধ করতে হয়েছে! আহত হতে হয়েছে! দন্ত মোবারক শহীদ করতে হয়েছে! রক্তাক্ত হতে হয়েছে!!

                  কোথায় ভাই? আমাদের যিন্দেগীতে যুদ্ধ-জিহাদ কোথায়?? আমাদের যিন্দেগীতে কোথায় রয়েছে সে রক্তাক্ত দাস্তান? কোথায় আমাদের জীবনে দ্বীনের জন্য বিপদাপদের পরীক্ষা? কোথায় সবর ও ধৈর্যের মারহালা?

                  আমরা কি ভাই তাহলে আল্লাহর রাসূলের যামানার মুনাফিকদের মতো পিছনে পড়ে থেকে, দুনিয়ার যিন্দেগী নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকব?? যাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

                  رَضُوۡا بِاَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ فَہُمۡ لَا یَفۡقَہُوۡنَ
                  “তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে এবং মোহর এঁটে দেয়া হয়েছে তাদের অন্তর সমূহের উপর। বস্তুতঃ তারা বোঝে না।” (সূরা আত্ তাওবাহ্ ০৯:৮৭)
                  (আল্লাহ পাক আমাদের হেফাযত করুন। আমীন।)

                  না, ভাই, না, আমাদের কখনোই এটা উচিত নয় যে, আমরা আমাদের হায়াতকে আল্লাহর রাসূলের হায়াত, তাঁর সম্মান ইজ্জত এবং তাঁর আনীত শরীয়তের চেয়ে বেশি প্রিয় ও আপন মনে করব!! আমাদের কি হল ভাই, আমাদের চোখের সামনে বাতিল ও তাগুত আমাদের দ্বীনকে মিটিয়ে দেয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে, অথচ আমরা চুপচাপ বসে আছি?? আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শানে গোস্তাকী করা হচ্ছে, অথচ আমরা এখনো বেঁচে আছি?? আমাদের মায়েদের বুক খালি হোক, যদি আমরা এসব হারামীদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে না পারি!! আমাদের পিতারা পুত্রহারা হোক, যদি আমরা এই শয়তানদেরকে জাহান্নামে পাঠাতে না পারি!!!


                  আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেন-

                  مَا کَانَ لِاَہۡلِ الۡمَدِیۡنَۃِ وَمَنۡ حَوۡلَہُمۡ مِّنَ الۡاَعۡرَابِ اَنۡ یَّتَخَلَّفُوۡا عَنۡ رَّسُوۡلِ اللّٰہِ وَلَا یَرۡغَبُوۡا بِاَنۡفُسِہِمۡ عَنۡ نَّفۡسِہٖ ؕ  ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ لَا یُصِیۡبُہُمۡ ظَمَاٌ وَّلَا نَصَبٌ وَّلَا مَخۡمَصَۃٌ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَلَا یَطَـُٔوۡنَ مَوۡطِئًا یَّغِیۡظُ الۡکُفَّارَ وَلَا یَنَالُوۡنَ مِنۡ عَدُوٍّ نَّیۡلًا اِلَّا کُتِبَ لَہُمۡ بِہٖ عَمَلٌ صَالِحٌ ؕ  اِنَّ اللّٰہَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ۙ

                  “মদীনাবাসী ও পাশ্ববর্তী পল্লীবাসীদের উচিত নয় রাসূলুল্লাহর সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া এবং রাসূলের প্রাণ থেকে নিজেদের প্রাণকে অধিক প্রিয় মনে করা। এটি এজন্য যে, আল্লাহর পথে যে তৃৃৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা তাদের স্পর্শ করে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে ক্রোধের কারণ হয় আর শত্রæদের পক্ষ থেকে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয়-তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত হয় নেক আমল। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের হক নষ্ট করেন না।” (সূরা আত্ তাওবাহ্ ০৯: ১২০)



                  ***বন্ধু হে! তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রে সত্যবাদী???

                  বন্ধু, আমরা সকলেই তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসার দাবী করি, তাইনা!

                  আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

                  قُلۡ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ وَإِخۡوَٰنُكُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ وَعَشِيرَتُكُمۡ وَأَمۡوَٰلٌ ٱقۡتَرَفۡتُمُوهَا وَتِجَٰرَةٞ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَآ أَحَبَّ إِلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٖ فِي سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٢٤

                  “বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা (ক্ষতি বা) বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর, এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লার বিধান আসা পর্যন্ত (দেখ, তোমাদের পরিণতি কি হতে যাচ্ছে), আর আল্লাহ তাআলা ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ২৪)

                  নবীজী ﷺ ইরশাদ করেন,

                  لا يُؤْمِنُ أحدُكم حتى أَكُونَ أَحَبَّ إليه مِن وَلَدِه، ووالِدِه، والناس أجمعين

                  “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পুত্র, তার পিতা এবং অপরাপর সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হব।” (বুখারী ও মুসলিম)

                  এখন প্রশ্ন হলো, আমার হৃদয়ে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের মহব্বত সকল কিছুর চেয়ে বেশি, এমনকি আমার নিজের জীবনের চেয়েও বেশি আছে কিনা বুঝব কিভাবে? এটি পরীক্ষা করার জন্য কোনো ‘কষ্টিপাথর’ আছে কি?

                  আমি অনেক আমল করতে পারি, সারারাত তাহাজ্জুদ, সারা বছর রোযা রাখতে পারি, আমি অনেক বড় আবেদ বা নাম-যশওয়ালা আলেম, আমার অনেক মুরীদান, এটাই কি মহব্বত বেশি হওয়ার আলামত? এটাই কি আল্লাহর ভয় থাকা, প্রকৃত মুত্তাকী হওয়ার দলীল?
                  না বন্ধু, কক্ষনো তা নয়।

                  “নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসার” অর্থই হচ্ছে “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ যখনই আমার জীবন চাইবেন, তখনই আমি আমার জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।”

                  সুতরাং এই ভালোবাসা প্রমাণের একমাত্র মাপকাঠি হচ্ছে, “আমি আল্লাহ ﷻ ও তাঁর রাসূলের ﷺ জন্য এখনি এই মুহূর্তে জীবন দিতে তৈয়ার আছি কিনা! আল্লাহ ﷻ ও তাঁর হাবীবের ﷺ ভালোবাসায় আমার জীবনকে কুরবানি করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি কিনা! আমার দেহের লোমকূপ সংখ্যক যদি জীবন থাকত, তার সবগুলোকেই আল্লাহ ﷻ, তাঁর রাসূল ﷺ ও তাঁর দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দিতে পরিপূর্ণ প্রস্তুত কিনা! আমার মাঝে আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু তথা শাহাদাতের সত্য তামান্না আছে কিনা! আল্লাহ ﷻ ও তাঁর রাসূলের জন্য এই মুহূর্তে আমার আপনজন, দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছু ছাড়তে রাজী আছি কিনা! ঘরে আল্লাহ ﷻ ও তাঁর রাসূল ﷺ-কে রেখে আমার সবকিছু আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে প্রস্তুত আছি কিনা! জিহাদের জন্য আমি সত্যিকার অর্থে প্রস্তুতি নিচ্ছি কিনা! ‘কাবার রবের কসম! যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার দেহের রক্ত আল্লাহর জন্য প্রবাহিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সফল হবনা!’ ‘দ্বীন মিটে যাবে আর আমি জীবিত থাকব, তা হবে না!’ এ ধরনের মানসিকতা আমার মাঝে আছে কিনা”!!!
                  যদি আমার মাঝে এ মানসিকতা ও এসব প্রস্তুতি না থাকে, তাহলে আমি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ-কে সবচেয়ে বেশি মহব্বতকারী নই।

                  আচ্ছা বন্ধু ধর, আমি তোমাকে বললাম, “আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়েও ভালোবাসি কিন্তু তোমার জন্য আমার জীবন দিতে পারবো না।” একটু চিন্তা করে দেখতো, একথাটি কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? কথাটি কতটুকু হাস্যকর?? হা হা হা!

                  বন্ধু, তুমি কি আমাকে তাহলে মিথ্যুক বলবে না??? জীবনই যদি না দিতে পারি তাহলে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসা হলো কী করে? এই ভালোবাসার অর্থ কী?

                  তাই- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ব্যতীত খোদাপ্রেম কিংবা নবীপ্রেম প্রকাশের আর কোনো চূড়ান্ত জায়গা নেই। প্রেমের এই চূড়ান্ত পরীক্ষা পাশ না করা পর্যন্ত প্রকৃত আশেকের সার্টিফিকেট কক্ষনো মিলবে না, কস্মিনকালেও না।

                  বুঝলে তো বন্ধু, মুজাহিদীনে ইসলামের উপরে ‘আশেকে রাসূল’ কিংবা ‘মাশুকে ইলাহী’ আর কেউ হতে পারবে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসার ক্ষেত্রে মুজাহিদ ভাইয়েরাই সর্বাধিক সত্যবাদী, তারাই সবচেয়ে এগিয়ে। আর এটা আমার বানানো কোনো কথা নয়। আল্লাহ তা‘আলার ইরশাদ-

                  إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجٰهَدُواْ بِأَمۡوٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلٰٓئِكَ هُمُ ٱلصّٰدِقُونَ ١

                  “তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জিহাদ করে। তারাই সত্যবাদী।” (৪৯ সূরা হুজুরাত: ১৫)



                  ***প্রিয় বন্ধু আমার! আমি তোমার কাছে যাব না, বরং তুমিই আমার নিকট চলে আস!

                  বন্ধু, তোমাকে একটা কাহিনী শুনাই!
                  তাবুক যুদ্ধে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই পিছনে পড়ে গিয়েছিলেন (যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি) কা‘আব ইবনে মালেক, মুরারা ইবনে রবি এবং হেলাল ইবনে উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুম আযমাঈন; তিনজনই ছিলেন বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধাভাজন আনসার সাহাবী। তাই তাঁদেরকে আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালা অনুযায়ী সামাজিক ভাবে ‘অনির্দিষ্টকালের’ জন্য বয়কট করা হয়, তাদের সাথে কথা বার্তা, সালাম বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়, চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে গেল, তাদেরকে তাদের স্ত্রীদের থেকে পৃথক করে দেয়া হল, যমীন তাদের জন্য ভয়ানক হয়ে উঠল। অথচ তারা বায়‘আতে আকাবা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ- এর সাথে অন্যান্য যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে মুরারা ইবনে রবি এবং হেলাল ইবনে উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বদরী সাহাবী ছিলেন। হেলাল ইবনে উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন একজন বয়োবৃদ্ধ, দুর্বল সাহাবী।

                  সুবহানাল্লাহ! বন্ধু, একটু চিন্তা করতো, তবুও এই প্রখ্যাত সাহাবীগণের উপর কেন ‘সামাজিক বয়কট’ আরোপ করা হল? তাদের জন্য পৃথিবী সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, অনিশ্চিত পরিণতির চিন্তায় তাদের ক্রন্দন করা ছাড়া আর কিছুই তো করার ছিল না।

                  বলতো, তাঁদের এহেন পরিস্থিতির কারণ কি ছিল? জিহাদে অংশগ্রহণ না করা; অথচ তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল ﷺ তো কেবল যুদ্ধ করার নিয়তে বের হয়েছিলেন কিন্তু কোন যুদ্ধ সংগঠিত হয়নি।
                  পঞ্চাশ দিন পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে ক্ষমা করার ঘোষণা দেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

                  وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ حَتَّىٰٓ إِذَا ضَاقَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَضَاقَتۡ عَلَيۡهِمۡ أَنفُسُهُمۡ وَظَنُّوٓاْ أَن لَّا مَلۡجَأَ مِنَ ٱللَّهِ إِلَّآ إِلَيۡهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡ لِيَتُوبُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١١٨

                  “এবং অপর তিনজনকে যাদেরকে পেছনে রাখা হয়েছিল, যখন পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে গেল এবং তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলো; আর তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই-অতঃপর তিনি সদয় হলেন তাদের প্রতি, যাতে তারা ফিরে আসে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দয়াময়, করুণাশীল।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ১১৮)

                  বলতো বন্ধু! ক্ষমা করার পর আল্লাহ তা‘আলা ঐ তিন সাহাবীকে কী কী উপদেশ দিলেন, কী কী নসীহাহ্ করলেন? পরের আয়াত শুন-

                  يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩

                  “হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ১১৯)

                  এই সত্যবাদী কারা? এ সম্পর্কে তো তোমাকে আগেই বলেছি।


                  বন্ধু! এরপরে আল্লাহ পাক আর কী কী নসীহত করলেন জান কি?
                  مَا كَانَ لِأَهۡلِ ٱلۡمَدِينَةِ وَمَنۡ حَوۡلَهُم مِّنَ ٱلۡأَعۡرَابِ أَن يَتَخَلَّفُواْ عَن رَّسُولِ ٱللَّهِ وَلَا يَرۡغَبُواْ بِأَنفُسِهِمۡ عَن نَّفۡسِهِۦۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ لَا يُصِيبُهُمۡ ظَمَأٞ وَلَا نَصَبٞ وَلَا مَخۡمَصَةٞ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَطَ‍ُٔونَ مَوۡطِئٗا يَغِيظُ ٱلۡكُفَّارَ وَلَا يَنَالُونَ مِنۡ عَدُوّٖ نَّيۡلًا إِلَّا كُتِبَ لَهُم بِهِۦ عَمَلٞ صَٰلِحٌۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجۡرَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ١٢٠

                  “মদীনাবাসী এবং পাশ্ববর্তী এলাকাবাসীদের উচিত নয় রাসূলুল্লাহর সঙ্গ ত্যাগ করা, (জিহাদ ত্যাগ করে) পিছনে থেকে যাওয়া এবং নিজেদের জীবনকে রাসূলের প্রাণ অপেক্ষা অধিক প্রিয় মনে করা। এটি এজন্য যে, আল্লাহর পথে যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা তাদের স্পর্শ করবে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে ক্রোধের কারণ হয় এবং শত্রুদের পক্ষ থেকে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয়- তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত হয় নেক আমল। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের হক বিনষ্ট করেন না।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ১২০)

                  এই আয়াতগুলো থেকে একথা স্পষ্ট যে-
                  ১.আল্লাহ পাকের নির্দেশ, ‘তোমরা সত্যবাদীদের সাথে থাক’ আয়াতে সত্যবাদী বলতে ‘মুজাহিদীনে ইসলাম’ উদ্দেশ্য।
                  ২.কেননা, মুজাহিদগণই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে, আর এটি তারা প্রমাণ করে নিজের জীবন দিয়ে।
                  ৩.যারা জিহাদ থেকে পিছনে পড়ে থাকে, তারা নিজেদের ঈমানের দাবীতে প্রকৃতপক্ষে সত্যবাদী নয়। তাদের মধ্যে নিফাকের ব্যাধি গুপ্ত আছে। তাই এদের সাথে থেক না। তাহলে তোমার মধ্যেও এই ব্যাধি সংক্রমিত হবে!
                  ৪. আফসোস! এই আয়াতটিকে (‘তোমরা সত্যবাদীদের সাথে থাক’) এখন মুসলমানদের মধ্যে জিহাদ পরিত্যাগকারী বিভিন্ন দল নিজের জন্য, নিজেকে সত্যবাদী হিসেবে প্রকাশের জন্য দলীল হিসেবে, নিজেদের দল ভারী করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। এতে উম্মাহ্ বিভ্রান্তিতে পতিত হচ্ছে। আল্লাহ হেফাযত করুন। আমীন।

                  প্রিয় ভাই!

                  উপরের আয়াতের বর্ণনার পূর্বাপর, বিভিন্ন মুফাসসিরে কেরামের ব্যাখ্যায় বুঝে আসে সাদেকীন দ্বারা উদ্দেশ্য জিহাদে শরীক লোকেরাই। যদিও অর্থের ব্যাপকতায় দ্বীন ঈমানের ব্যাপারে সত্যবাদীদেরকেও বিভিন্ন তাফসিরে এই আয়াতে শামিল করা হয়েছে। তাই জিহাদ ফরযে কিফায়া অবস্থায় জিহাদ পরিত্যাগকারীগণ ‘সাদেকীন’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, জিহাদ ফরযে আইন অবস্থায় জিহাদ পরিত্যাগকারীগণ ‘সাদেকীন’ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা, যিনি প্রকৃত বিশ্বাসী, এবং যিনি সত্যিকার অর্থে আল্লাহ্র হুকুমের সামনে নিজের গর্দান সপে দিয়েছেন, তিনি কিভাবে একটি ফরয হুকুম পরিত্যাগ করে বসে থাকতে পারেন? একটি ফরযে আইন হুকুম বাদ দিয়েও কিভাবে তিনি সত্যিকারের আত্মসমর্পণকারী হতে পারেন? কিভাবে তিনি সাদেকীনদের কাতারে শামিল হতে পারেন? কিভাবে তিনি ‘সত্যবাদী’ হওয়ার দাবীদার হতে পারেন??

                  সুতরাং বন্ধু! আমি তোমার কাছে মসজিদুল হারামে বসে নির্জনে ইবাদত করবো না, বরং, তোমার প্রতি আল্লাহ পাকের নির্দেশ হচ্ছে, তুমি আমাদের (সত্যবাদী মুজাহিদীনে ইসলামের) সাথে জুড়ে যাও।



                  আরেকটি ঘটনা শুনাই তোমাকে।

                  عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَرَّ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ بِشِعْبٍ فِيْهِ عُيَيْنَةٌ مِنْ مَاءٍ عَذْبَةٍ فَقَالَ لَوِاعْتَزَلْتُ النَّاسَ فَأَقِمْتُ فِيْ هذَا الشِّعْبِ؟ وَلَنْ أَفْعَلَ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَذَكَرَ ذٰلِكَ لِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ لَا تَفْعَل فَإِنَّ مَقَامَ أَحَدِكُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهِ فِي بَيْتِهٖ سَبْعِيْنَ عَامًّا اَلَا تُحِبُّوْنَ اَنَّ يَغْفِرَ اللهُ لَكُمْ وَيُدْخِلُكُمُ الُجَنَّة؟ أُغْزُوْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَنْ قَاتَلَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

                  একদা রাসূল ﷺ এর একজন সাহাবী কোন এক গিরিপথ অতিক্রমকালে একটি মিষ্ট পানির ঝর্ণা দেখতে পেলেন। উক্ত ঝর্ণাটি তাকে খুবই মুগ্ধ করে ফেলল। এবং তিনি আনন্দে আপ্লুত হয়ে বলে ফেললেন, কতই না চমৎকার হতো যদি আমি লোকালয় পরিত্যাগ করে এ গিরিপথের পার্শ্বে অবস্থান করতে পারতাম! অতঃপর এক সময় তার এ আকাঙ্ক্ষার কথাটি রাসূল ﷺ এর কাছে আলোচনা করা হল। তখন তিনি ﷺ বললেন, “সাবধান! এরূপ (কামনা) করো না। কেননা, তোমাদের কারোও আল্লাহর পথে অবস্থিতি নিজ গৃহে সত্তর বৎসর নফল নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। তোমরা কি এ কথাটি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে মাফ করে দেন এবং পরিশেষে তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান। কাজেই (একাকী নিভৃতের/খালওয়াতের ইবাদত বাদ দিয়ে) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। কেননা, যে ব্যক্তি সামান্য সময়ও (فواق ناقة) আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” [তিরমিযী-১৬৫০, মেশকাত, তা’লীকুর রাগীব (২/১৭৪)]

                  আলোচ্য হাদীসে - فواق ناقة শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ হলো উটের দুধ দোহন করার মাঝে সামান্য বিরতি। কিছু সময় দুধ দোহনের পর বাচ্চাকে ছেড়ে দেয়া হয় সে স্তনের দুধ এনে দেয়ার পর পুনরায় তা দোহন করা হয়। মধ্যবর্তী এ সামান্য সময়কে فواق ناقة বলা হয়। কিছু সংখ্যক ওলামায়ে কিরাম فواق ناقة এর ব্যাখ্যায় বলেন দুধ দোহনের সময় (দুই টানের মধ্যবর্তী যে সময় অর্থাৎ) একহাত পুনরায় ঐ স্থানে ধরার মধ্যবর্তী যে স্বল্প সময় তাকেই فواق ناقة বলা হয়।

                  এ সামান্যতম সময় যে ব্যক্তি দুশমনের মুকাবেলায় লড়াই করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। এ থেকে সুস্পষ্ট যে সমস্ত আমল অপেক্ষা জিহাদ অতি উত্তম ইবাদত। সুবহানাল্লাহ!!!

                  সুতরাং বন্ধু, তুমি যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে প্রকৃতঅর্থে ভালোবেসে থাক, মাগফিরাত কামনা কর, কম কষ্টে অধিক সওয়াব চাও,নিজের জন্য জাহান্নামকে হারাম করতে চাও,নিজের জন্য জান্নাতকে ওয়াজিব করে নিতে চাও, তবে হেরেম শরীফে এ.সি.-র হাওয়া উপভোগ করা আর নিভৃতে একাকী ইবাদত করা বাদ দিয়ে আমাদের কাছে তপ্ত ময়দানে চলে এস।

                  Comment


                  • #10
                    ***বন্ধু, আর কি বলব তোমায় বল! সবশেষে বলছি, তুমি ফরয বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে মগ্ন হয়ে আছো না তো? এতো ইবাদতেরপরও তুমি ফরয তরককারী হয়ে যাচ্ছ নাতো? নিজের মনকে একটি বুঝ দিয়ে নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা খাচ্ছ নাতো?

                    শয়তান বিভিন্ন সুরতে মানুষকে ধোকা দিয়ে থাকে। সে আলেমকে ইলমের জালে, আবেদকে ইবাদতের জালে, জাহেলকে জাহেলিয়াতের জালে, গুনাহগারদের গুনাহের জালে, মেহনতের সাথীদেরকে মেহনতের ধোঁকায় এবং নেককারদেরকে নেক সুরতে ধোঁকায় ফেলে।

                    শয়তান জাহেলদের অন্তরে অজ্ঞতার মহব্বত পয়দা করে দেয়। ফলে দ্বীনের ইলম হাসিল করা তাদের নিকট অসম্ভব বিতৃষ্ণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ইলম হাছিল করার জন্যও তার সময় হয়ে উঠে না। দুনিয়ার নানা ব্যস্ততা দেখিয়ে সে ‘অন্ধ’ থাকতেই পছন্দ করে। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।

                    শয়তান গুনাহগারদেরকে যে ধোকা দেয়া হয় তা তো স্পষ্ট, শয়তান মানুষের অন্তরে “অমুক গুনাহ কর্!” “তমুক গুনাহ কর্”, “ঐ গুনাহটা মনে হয় আরো আনন্দদায়ক, উপভোগ্য”, এই ধরণের ওস্ওয়াসা দিতেই থাকে। ফলে সে একটা গুনাহ করে কখনো পরিতৃপ্ত হতে পারে না, বরং একটি গুনাহ করার পর আরো বড় গুনাহ করার প্রতি তার আগ্রহ ও লোভ পয়দা হয়। একটি গুনাহের কারণে অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। এভাবে গুনাহ করতে করতে তার দিল্ (অন্তর) অন্ধকার রাত্রির ন্যায় কালো হয়ে যায়। ফলে ইবাদত বন্দেগী তার কাছে বিষতুল্য বোধ হয়। তাই তার কপালে তাওবা নসীব হয়না। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
                    কিন্তু যাদের ব্যাপারে শয়তান জানে যে, এই লোকগুলোকে দিয়ে কোনোভাবেই গুনাহের কাজ করানো সম্ভব নয়, যারা পরহেযগারআবেদশ্রেণি, তাদেরকে কী শয়তান হতাশ হয়ে ছেড়ে দেয়? কোনো অস্ওয়াসা দেয় না????.............

                    শয়তান জানে যে, এদেরকে যদি বলা হয়, জিনা (ব্যভিচার) কর্, এরা জীবন চলে যাবে কিন্তু জিনা করবে না, যদি বলা হয়, ‘সুদ খা, ঘুষ খা’, এরা না খেয়ে মরবে কিন্তু সুদ-ঘোষের ধারে কাছেও যাবে না। তাহলে এদের কী করা?

                    এদের ক্ষেত্রে শয়তানের পলিসি (কর্মপন্থা) হলো, “ইবাদত-ই যখন করবে, কম সওয়াবের ইবাদতে লিপ্ত থাক, অধিক দামী ইবাদত না করে কম সওয়াবের ইবাদতে লিপ্ত থেকে যিন্দেগী পার করে দাও।” কম সওয়াবের আমলের ফায়দা ও ফাযায়েল সম্বলিত হাদীসগুলোকে শয়তান তার সামনে ‘দামী ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ’রূপে তুলে ধরে। ফলে অধিক ফাযায়েলের আমলগুলো থেকে সে গাফেল থাকে।

                    প্রিয় ভাই! এটি এমন একটি মারাত্মক রোগ, যার দ্বারা বর্তমান যামানায় যারা দ্বীনদার হিসাবে পরিচিত, তাদের অনেক-ই/অধিকাংশ-ই কম-বেশী আক্রান্ত। আমলের গুরুত্ব না বুঝে, যখন যেটা মনে চায়, যখন যেটা করতে ভালো লাগে, সেই আমলেই ঝাঁপ দেয়। এক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার চাহিদা অপেক্ষা নিজের দীলের চাহিদা ও ভালো লাগাটাই অধিক প্রাধান্য পায়। অথচ “এই মুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার কী হুকুম, কী চাহিদা, সেটা পালন করাই” হচ্ছে প্রকৃত দ্বীন। ইবাদতের ক্ষেত্রে নিজের খাহেশ পুরা করাটাই দ্বীন নয়।

                    সমাজে যাদেরকে দ্বীনদার (আওয়াম কিংবা খাওয়াস) মনে করা হয়, তাদের অবস্থা হলো, আমরা নিজেরা দ্বীনের কোনো একটা শাখায় নিজেকে ব্যস্ত রাখি আর আত্মতুষ্টিতে ভুগি ও নিজের মনকে একটা বুঝ দেই, আলহামদুলিল্লাহ! আমি তো দ্বীনের মেহনতের সাথে লেগেই আছি। অনেক সওয়াব হাছিল করছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা শরীয়তের চাহিদা তথা “এই মুহূর্তে আমার উপর আল্লাহ পাকের হুকুম কী” তার কোনই তোয়াক্কা করি না।

                    আহ্! এই বিষয়টা আমরা কেন যে বুঝি না!

                    আপনাদেরকে ২০১৯ সালের সংবাদপত্রের একটি খবরের কথা বলব; খবরটি হল, এক ব্যক্তি তার জীবনে তিন হাজার বারের উপর উমরা পালন করেছেন।

                    একজন সাধারণ মানুষ তো শুনা মাত্রই বলতে শুরু করবে, সুব্হানাল্লাহ! লোকটার কী সৌভাগ্য! জীবনে এতবার উমরাহ করার সৌভাগ্য তার হয়েছে! কতবার আল্লাহর ঘরকে দেখার সৌভাগ্য তার হয়েছে! জীবনে কত হাজার বার আল্লাহর ঘর তাওয়াফের সৌভাগ্য তার কপালে জুটেছে! আল্লাহর রাসূলের রওযা মুবারকে কতবার সে সালাম দিয়েছে!..........
                    আহ্! এই ব্যক্তির মতো সৌভাগ্যবান আরো কেউ কি দুনিয়াতে আছে!
                    একটু থামুন, ভাই!...........

                    নিঃসন্দেহে এই ব্যক্তি সৌভাগ্যবান। যে কোনো ছোট্ট থেকে ছোট্ট একটি (মোস্তাহাব) আমলের তাওফীক পাওয়াটাও অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু ব্যাপারটা এখানে নয়। এই লোকটি তিন হাজার বার উমরাহ করেছে, কিন্তু কেন? কিসের আশায়? আমরা লোকটি সম্পর্কে নেক ধারণা পোষণ করছি, ধরে নিচ্ছি, তার মাঝে লোক দেখানোর কোনো প্রবণতা ছিল না, অর্থাৎ তিনি সওয়াবের নিয়তে, আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করার মানসেই তিনি এতগুলো উমরাহ করেছেন!

                    এবার চিন্তা করুন, ঐ আবেদ লোকটি কী করেছেন? লোকটির যিন্দেগীতে একবার উমরাহ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ছিল, যা তিনি যখন জীবনের প্রথম বার উমরাহ করেছিলেন, তখনই আদায় হয়ে গিয়েছে। তাহলে বাকীগুলো হলো নফল উমরাহ।


                    আমরা নিশ্চয়ই জানি, এক ব্যক্তি সারা জীবনে যত সুন্নত ইবাদত করে, তার সবগুলিকে একত্রিত করলেও (গুরুত্ব ও সওয়াবের দিক থেকে) তার যিন্দেগীর কোনো একটি ফরযের সমান হবে না!


                    এবার আপনি তিন হাজার উমরাহকে এক পাল্লায় রাখুন, আর যে কোন একটি ফরযকে আরেক পাল্লায় রাখুন, কোনটা ভারী হবে? নিঃসন্দেহে ফরয আমলটি। বুঝতে পেরেছেন ভাই? এই লোকটি যদি বুদ্ধিমান হতেন, এত টাকা আর সময় ব্যয় না করে তিনি অবশ্যই এমন কোনো আমল খুঁজতেন যাতে অল্প সময়ে, অল্প খরচে অধিক সওয়াব লাভ হয়।


                    তাই যদি সওয়াবই উদ্দেশ্য হতো এবং তিনি আমলের গুরুত্ব বুঝতেন, তাহলে ঐ লোকটি তিন হাজার বার উমরাহ না করে এক সকাল বা এক বিকাল জিহাদের ময়দানে কাটিয়ে আসতেন কিংবা নফল উমরার টাকা গুলো ফরজ জিহাদে ব্যয় করতেন।
                    তাছাড়া জিহাদ বর্তমানে ফরযে কিফায়া নয়, ফরযে আইন হয়ে গিয়েছে। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ, আলেম, জাহেল, দীনদার, দুনিয়াদার, নেককার, ফাসেক-ফুজ্জার, সকল তবকার মুসলমানের উপর ফরয হয়ে গিয়েছে। কেউই এই ফরয হুকুমের আওতার বহির্ভূত নয়। তাই এই একটি ফরয হুকুমের সামনে, কেয়ামত পর্যন্ত এক ব্যক্তি যদি প্রতিদিন একশ করে উমরাহ করে, কিংবা কেয়ামত পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন কাবাঘরে ই’তিকাফ করে, কিংবা যিন্দেগীর সকল নামায হারামাইন শরীফাইনে আদায় করে (পৃথিবীর যে কোনো মসজিদে জামাতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ হুকুম), কিংবা কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিবছর একটি করে হজ্জ করে (জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয, আর বাকীগুলো হবে নফল), যদি কোনো ব্যক্তি এমন থাকে যে একাই কিয়ামত পর্যন্ত সকল নফল, সুন্নত, ওয়াজিব আমল করতে সক্ষম, তার এত সওয়াব এক পাল্লায় রাখা হলো আর আল্লাহর রাহে একটি মুহুর্ত জিহাদের ময়দানে কাটানোর সওয়াব এক পাল্লায় রাখা হলো, বলুন এবার, কোন্ পাল্লা ভারী হবে?

                    তাছাড়া ঐ ব্যক্তির সকল আমলের সাথে কি সেই ছয়টি পুরস্কারের ওয়াদা রয়েছে, যা একজন শহীদ প্রাপ্ত হবে, একজন শহীদ কবরে রিযিক প্রাপ্ত হবে, সে ব্যক্তি কি তা প্রাপ্ত হবে, একজন শহীদের দেহ কবরের মাটির জন্য হারাম করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি কি সেই মরতবা লাভ করবে, শহীদকে এমন প্রতিদান দেয়া হবে যে, সে দুনিয়াতে বারবার ফিরে আসতে চাইবে এবং বারবার শহীদ হতে চাইবে, কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি জান্নাত লাভ করেনও তিনি কি আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবেন?

                    প্রিয় ভাই! আপনি যদি আমলের গুরুত্ব বুঝে থাকেন, তাহলে নিচের হাদীসগুলোকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
                    عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ مَوْقِفُ سَاعَةٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ قِيَامٍ لَيْلَةِ الْقَدْرِ عِنْدَ الحَجَرِ الْأَسْوَدِ

                    রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “আল্লাহর পথে (পাহারার/জিহাদের কাজে/যুদ্ধের ময়দানে) একটি মুহূর্ত অবস্থান করা কদরের রাতে হাজরে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে ইবাদত করার চাইতে উত্তম।” (ইবনে হিব্বান ১৫৮৩, ইবনে আসাকির, বায়হাকী)

                    عَنْ آدَم بْنِ عَلِىٍّ قَالَ سَمِعْتُ إِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ: لَسَفَرَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَفْضَلٌ مِنْ خَمْسِيْنَ حَجَّةٍ
                    হযরত আদাম বিন আলী (রহ.) বর্ণনা করেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন,“আল্লাহর পথে জিহাদ করা পঞ্চাশবার হজ্ব করার চেয়ে উত্তম।” (সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর-৩/২/১৬৭-১৬৮, কিতাবুল জিহাদ, আব্দুলাহ ইবনে মুবারক)

                    عَنْ سَعِيْدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ قَالَ نَوْمَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ سَبْعِيْنَ حَجَّةً تَتْلُوْهَا سَبْعُوْنِ عُمْرَةً - (كشف الاستار كتاب الجهاد باب فضل الجهاد، مشارع اشواق)

                    হযরত সাঈদ বিন আব্দুল আজীজ (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাহে মুজাহিদের ঘুম ওমরাসহ সত্তর বার হজ্ব করার চেয়েও উত্তম।

                    عَنْ أَنَس بِنْ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ َعَلَيْهِ وَسَلَّمَ: غَزْوَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَعْدَ حَجَّةِ الْإِسْلَامِ أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ حَجَّةٍ. (كشف الاستار كتاب الجهاد باب فضل الجهاد، مشارع الاشواق الى مصارع العشاق: ٢٠٦/٢١٥)

                    হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেন, “ফরয হজ্ব আদায় করার পর আল্লাহ্ তা‘আলার রাহে কোনো একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এক হাজার বার হজ্ব করার চেয়ে উত্তম।” (ইবনে আসাকীর)

                    সুবহানাল্লাহ!

                    আশাকরি, এতক্ষণের আলোচনার দ্বারা হাদীসগুলোর মর্ম আপনাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

                    সুতরাং, আমরা কি বুঝতে পেরেছি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহিমাহুল্লাহ কেন তার প্রিয় বন্ধুকে বলেছিলেন, “ওহে হারামাইনের আবেদ ব্যক্তি! তুমি যদি আমাদেরকে জিহাদের ময়দানে দেখতে আর আমলের গুরুত্ব বুঝতে, তাহলে তুমি বুঝতে পারতে যে, তুমি আমলের নামে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের সাথে তামাশা করছ! পিচ্চি বাচ্চারা যেভাবে অনর্থক খেলা করে, তুমিও আমলের নামে ক্রীড়া-কৌতুক করছ! নিজেকে সওয়াবের আশা দেখিয়ে নিজেকে নিজেই ধোকা দিচ্ছ! আল্লাহকে পাওয়া আর আল্লাহ তা‘আলার হুকুম বাস্তবায়ন করাটাই যদি তোমার যিন্দেগীর মাকসাদ হত, তাহলে তো তুমি ঘরে বসে থাকতে না, কিংবা হারামাইন শরীফে অবস্থান করতে না, আমাদের সাথে জিহাদের তপ্ত ময়দানে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে, শহীদের মর্যাদা লাভ করতে, যেমনটি আমরা লাভ করছি! আমরা তো আল্লাহর ওয়াদাকে বাস্তবায়িত হতে দেখছি, তাঁর গাইবী মদদ নুসরত দেখে আমাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা তোমরা দেখতে পাচ্ছ না, তোমাদের ঈমানও আমাদের ঈমানের মতো হতে পারবে না; না, বন্ধু! কক্ষনো হবে না, কস্মিনকালেও না!

                    তাই বন্ধু, আর ঘরে বসে না থেকে চলে আস জিহাদের তপ্ত ময়দানে।......”?
                    প্রিয় ভাই!
                    আমরা অনেকেই আছি, যারা প্রায় প্রতি বছরই হজ্জ বা উমরা করি, কিংবা জিহাদ ব্যতীত অন্যান্য নেক আমল/মেহনত অনেক গুরুত্বের সাথে করে থাকি। আলহামদুলিল্লাহ! ঐগুলো তো ভাই অনেক সওয়াবের কাজ এবং অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু ভাই, আমাদের তো উচিত আরো অধিক ফযীলতের আমল তালাশ করা, তাইনা? যাতে করে আমরা আরো বেশি ফযীলত লাভ করতে পারি, যাতে আমাদের নেকীর পাল্লা আরো অনেক বেশি ভারী হয়ে যায়, যাতে আমরা আরো সহজে জান্নাতে যেতে পারি, যাতে আমাদের মহা-মহীয়ান প্রভু আমাদের প্রতি আরো বেশি সন্তুষ্ট হন, যাতে আমরা তাঁর সামনে আরো বেশি নেককার, মুত্তাকী ও সত্যবাদী হিসেবে দাঁড়াতে পারি! এটা কি আমরা চাইনা?
                    যেই আমলের প্রতি স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন, যেই আমলের প্রতি তিনি নিজের ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন, ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন, যে আমলের মাঝে কল্যাণের ফয়সালা করেছেন, যেই আমলের বিনিময়ে নিশ্চিত জান্নাতের ওয়াদা করেছেন, আমরা কি সেই আমলের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিবনা, বেশি মনোযোগী হবো না??
                    নবীজী ﷺ-এর যিন্দেগীর দিকে তাকিয়ে দেখি, কোন আমল/মেহনতকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, কোন আমল/মেহনতকে তিনি সর্বাপেক্ষা সওয়াব ও ফযীলতের বর্ণনা করেছেন? কোনটিকে তিনি ইসলামের চ‚ড়া ঘোষণা দিয়েছেন? তিনি নিজে কোন্ আমল/মেহনত সবচেয়ে বেশি করেছেন? তিনি কি ২৭ টি গাযওয়া আর ৪৬ টি সারিয়্যার নেতৃত্ব দেননি? তিনি কি তরবারির নবী ছিলেন না? তিনি কি যুদ্ধের নবী ছিলেন না? তিনি কি আল্লাহ্র দ্বীন কায়েমের জন্য রক্তাক্ত হননি? দন্ত মোবারক শহীদ করেননি?
                    সাহাবায়ে কেরামের যিন্দেগীর দিকে তাকিয়ে দেখি! তাঁরা কোন্ আমল/মেহনতকে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে করেছেন? তাঁরা কোন আমলের সাথে আজীবন লেগে থাকার শপথ করেছিলেন? তাঁরা কি এই শপথ করেননি-

                    نَحْنُ الَّذِيْنَ بَايَعُوْا مُحَمَّدًا
                    عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِيْنَا اَبَدًا
                    মুহাম্মদের সা. হাতে করেছি শপথ জিহাদের,
                    পিছু হটবনা কভূ পূর্বে মউতের।


                    সুতরাং ভাই, আমাদের কি উচিত নয়, আমরাও সাহাবায়ে কেরামের মত জিহাদকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসব, সবচেয়ে বেশি আপন করে নিব, নিজের যিন্দেগীর আসল কাজ বানাব, এই মেহনতের সাথে আজীবন লেগে থাকার শপথ করব, জিহাদ করতে গিয়ে যত কষ্ট ও পরীক্ষা আসবে তা হাসিমুখে মেনে নিব, অবশেষে শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে প্রেমময় প্রভুর সাথে মিলিত হবো??



                    *** আল্লাহ তাআলা হুকুম করেছেন কী, আর আমরা করছি কী!!!

                    প্রকৃতপক্ষে, জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার পরও অন্য কোনো মেহনতে লিপ্ত থাকা, জিহাদের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ না করা- আমলের নামে “আল্লাহর হুকুমের সাথে এক রকমের হঠকারিতা (!) করার নামান্তর। শুনতে খারাপ শুনা গেলেও এটাই কিন্তু ভাই বাস্তবতা!!


                    ধরুন! আপনি মরুভূমি দিয়ে যাচ্ছেন, আপনি অত্যন্ত পিপাসার্ত। পিপাসায় আপনার জীবন যাওয়ার উপক্রম। আপনি আমার কাছে একটু পানি চাইছেন। আমি আপনাকে পানি না দিয়ে এক বোতল গরম তেল এগিয়ে দিয়ে বললাম, নেন ভাই পান করুন। তাহলে আপনি আমাকে কী বলবেন, দূর হন আপনি! আমি মরছি; আর আপনি আমার সাথে হঠকারিতা করছেন! আমি চাইলাম কী, আর আপনি দিলেন কী? ঠান্ডা পানি না দিয়ে গরম তেল দিচ্ছেন আমাকে পান করতে!


                    প্রিয় ভাই, বলুন তো, আমার এহেন আচরণের কারণে আপনি কী আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিবেন, নাকি দূরে সরিয়ে দিবেন?


                    তাহলে, ঠিক একইভাবে, আল্লাহ তা‘আলা জিহাদকে ফরযে আইন করেছেন, এর অর্থ হল, আল্লাহ পাক এই মুহূর্তে আমাদেরকে হুকুম করছেন বা আমাদের কাছে চাচ্ছেন, আমরা যেন এখন জিহাদের মেহনত করি। আর বিপরীতে আমরা আল্লাহর সামনে বারবার অন্য কোনো আমল বা মেহনত পেশ করছি। জিহাদ বাদ দিয়ে অন্য কোনো আমল বা মেহনতে লিপ্ত থাকার অর্থই হচ্ছে, হে আল্লাহ! তুমি যতই বল, আমি কিন্তু জিহাদ করছি না। অমুক আমল করাটা কিংবা অমুক মেহনত করাটা আমার খুব ভালো লাগে, তাই এটিই বারবার করবো।

                    এর চেয়েও খারাপ কথা হলো, জিহাদ ফরযে আইন অবস্থায় জিহাদ না করার কারণে আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফরয তরককারী সাব্যস্ত হচ্ছি, যদিও আমরা হারামাইনে বসে মক্কা-মদীনা আবাদ করে থাকি। অথচ আমরা মনে করছি, আমরা তো অনেক ইবাদত করছি, আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করছি।


                    প্রিয় ভাই! কষ্ট নিবেন না!
                    যদি আমাদের এতই নেকীর দরকার হয়, তাহলে আমরা ময়দানে আসি! মা-বোনের উপর ধর্ষণ আর নির্যাতনের ষ্টীম-রোলার স্ব-চক্ষে দেখে যাই, বাপ-ভাই আর সন্তানের মর্মান্তিক খুন এসে নিজের চোখে দেখে যাই। তাদের জন্য যদি নিজের গায়ের রক্তের ফোঁটা ঝরাতে না পারি, কমপক্ষে এক ফোঁটা অশ্রæ বিসর্জন করে যাই। হারামাইন শরীফাইনের ফাইভ-স্টার হোটেলগুলোতে খাবারের নামে অপচয় না করে অনাহারী, দুর্ভিক্ষপীড়িত, মযলুম মুসলমানদের মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দিয়ে যাই। এত অর্থ সম্পদ অপচয় করে মক্কা-মদীনার এ.সির বাতাস না খেয়ে, ময়দানের উত্তপ্ত লূ হাওয়া খেয়ে যাই। তাহলে আরশের অধিপতি আমাদের প্রতি বেশি খুশি হবেন, বেশি সওয়াব দিবেন, বেশি নৈকট্য দান করবেন।
                    হ্যাঁ ভাই, আমরা যদি জিহাদের পাশাপাশি অন্য কোন আমল বা মেহনত করতে পারি, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি কোনো অভিযোগ থাকবে না।
                    প্রিয় ভাই! আমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে চিন্তা করি, আমরা আসলে নিজেদেরকে শরীয়তের অনুগামী করে নিয়েছি, নাকি শরীয়তকে আমাদের চাহিদা ও নফসের অনুগামী করে রেখেছি। বুদ্ধিমানদের জন্য এতক্ষণ যা আলোচনা করা হলো তা-ই অনেক বেশি!! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে জিহাদের গুরুত্ব বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।



                    Comment


                    • #11
                      =>স্ত্রীর প্রতি বীর মুজাহিদ আনোয়ার পাশার চিঠি
                      .................................................. ........................



                      ***জিহাদ প্রেমের এক অনুপম নিদর্শন:

                      হযরত আনোয়ার পাশা রাহিমাহুল্লাহ ঐসব বীর মুজাহিদদের অন্তর্ভূক্ত, যারা গোটা যিন্দেগী ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে জিহাদের ময়দানে ব্যয় করেছেন এবং যাদের বুকের তাজা রক্তে রচিত হয়েছে যুগে যুগে ইসলামের রক্তিম ইতিহাস। অবশেষে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাতের চির অমীয় সুধা পান করেন। তিনি জিহাদের উত্তপ্ত ময়দান হতে তাঁর প্রাণপ্রিয়া স্ত্রী শাহ্জাদী নাজিয়া সুলতানার নামে একটি পত্র প্রেরণ করেছিলেন, যা পরবর্তীতে তুর্কী পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ করা হয়েছে। আর সেখান থেকে অনুবাদ হয়ে ২২ এপ্রিল, ১৯২৩ ঈসায়ী তারিখে হিন্দুস্তানী পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়। এই চিঠিটি বিপুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী, কালজয়ী, আবেগময় ও শিক্ষণীয়, আর আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর রাসূল ﷺ ও তাঁর পথে জিহাদ করাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই চিঠিটি হতে আমাদের প্রত্যেককেই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

                      .................................................. .................................................. ..........................


                      প্রিয় নাজিয়া!
                      জীবনসঙ্গিনী আমার!
                      জীবন পথের একমাত্র পাথেয়, আনন্দ দানকারিনী প্রিয়া আমার!
                      সু-উচ্চ ও সু-মহান সত্ত্বা তোমার সংরক্ষক। তোমার শেষ পত্র আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। বিশ্বাস কর, তোমার এই পত্র সর্বদা বুকে জড়িয়ে রাখব। তোমার মায়ামাখা, প্রেমভরা স্নিগ্ধ অবয়ব আমি তো আর দেখতে পারব না, কিন্তু পত্রের ছত্রে ছত্রে, পরতে পরতে, অক্ষরসমূহে তোমার আঙ্গুলসমূহের নড়াচড়ার দৃশ্য যেন আমি দেখতে পাচ্ছি, যে আঙ্গুলিগুলো আমার চুল নিয়ে মাঝে মাঝে খেলা করত। তাবুর রশিগুলোতে মাঝে মাঝে তোমার চেহারার আলোকচ্ছটা ও প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। তোমার অবয়বের ঝিলিক সর্বদা দৃষ্টিতে অনুভব করি।

                      আহ্! তুমি লিখেছ, আমি তোমাকে ভুলে গিয়েছি, আর তোমার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও প্রেমের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ আমার নেই। তুমি লিখেছ, তোমার সোহাগ ও মহব্বতপূর্ণ হৃদয়কে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে এই দূর-দূরান্তে বিধ্বস্ত রণাঙ্গনে আগুন ও রক্ত নিয়ে আমি খেলা করছি। আর আমার এদিকে খেয়াল নেই যে, একজন নারী আমার বিচ্ছেদে সারারাত তন্দ্রাহীন নয়নে জেগে জেগে ছটফট করে আর তারকারাজি গণনা করতে থাকে।

                      তুমি লিখেছ যে, আমার জিহাদের সাথে মহব্বত আর তরবারির সাথে প্রেম। কিন্তু কথাগুলো লেখার সময় ঘুর্ণাক্ষরেও তোমার এ কথা চিন্তায় আসেনি, তোমার এই শব্দ সম্ভার, যা তুমি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও খাঁটি মহব্বতের গীতিতে লিখেছ, তা আমার হৃদয়ের রক্ত কিভাবে ঝরাবে, কিভাবে আমাকে হত্যা করবে?
                      ওগো প্রিয়া! আমি কিভাবে তোমাকে বিশ্বাস করাব, এই সুন্দর বসুন্ধরায় তোমার চেয়ে সুন্দর আর প্রিয় আমার কাছে আর কিছুই নেই। তুমিই আমার সকল ভালোবাসার শেষ পরিধি! আমার মন আমি কাউকে কোনো দিন দেই নি, কাউকে কোনো দিন ভালোবাসিনি, কিন্তু কেবল তুমিই এমন, যে আমার হৃদয়কে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছ। ভাগ্যলিপি থেকে আমাকে তুমিই অপহরণ করে আমাকে তোমার দাস বানিয়েছ। বল, এরপর কিভাবে তোমার থেকে পৃথক হব, হে আমার প্রাণের প্রশান্তি? তোমার এমন প্রশ্ন যথাযোগ্য।

                      শোন! আমি তোমার থেকে এই জন্য পৃথক হই নি যে, আমি ধন-সম্পদের অন্বেষী, লোভী ব্যক্তি। এ জন্যও পৃথক হই নি যে, আমার জন্য শাহী সিংহাসন কায়েম করছি, যেমনটি আমার শত্রু পক্ষ প্রচার করছে। আমি তোমার থেকে কেবল এই জন্য পৃথক হয়েছি যে, আল্লাহ তা‘আলার ফরয বিধান আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’-র চেয়ে বড় কোনো গুরু দায়িত্ব আর নেই। এটাই এমন ফরয কাজ, যার নিয়্যত করার দ্বারাই জান্নাতুল ফিরদাউস অবধারিত হয়ে যায়।

                      আলহামদুলিল্লাহ! আমি কেবল এই ফরযের নিয়্যত-ই করিনি; বরং তা বাস্তবে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছি। তোমার বিচ্ছেদ আমার অন্তরে সর্বদা এমন এক করাত চালনা করে, যা অবর্ণনীয় ব্যথা সৃষ্টিকারী, তবে এই বিরহে আমি অত্যন্ত খুশি। কেননা, তোমার অকৃত্রিম প্রেম ও ভালোবাসা এমন এক অমূল্য জিনিস, যা আমার দৃঢ় ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ ছিল!
                      আল্লাহ তা‘আলার হাজার শুকরিয়া যে, আমি এই পরীক্ষায় পূর্ণভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি। আর আল্লাহর মহব্বত এবং তার হুকুমকে নিজের মহব্বত ও মনের চাহিদার উপর প্রাধান্য দিতে সক্ষম হয়েছি। তোমারও সন্তুষ্ট ও রাজি থাকা এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা করা উচিত যে, তোমার স্বামী এত মজবুত ঈমান রাখেন যে, সে নিজে তোমার মহব্বতকে আল্লাহর মহব্বতের উপর কুরবানী করেছে।

                      তোমার উপর তরবারীর দ্বারা জিহাদ করা ফরয নয়, কিন্তু তুমিও জিহাদের হুকুম থেকে বাহিরে বা মুক্ত নও। তোমার জিহাদ হলো, তুমিও নিজের মন ও ভালোবাসার উপর আল্লাহর চাহিদা ও ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিবে। স্বীয় স্বামীর সাথে প্রকৃত মহব্বতের আত্মীয়তাকে আরো মজবুত রাখবে।

                      লক্ষ্য কর, কখনো এই দুআ করবে না, তোমার স্বামী জিহাদের ময়দান থেকে যে কোনো ভাবেই হোক সুস্থ ও নিরাপদে তোমার প্রেমের কোলে ফিরে আসুক। এটা হবে নিজ স্বার্থ পূরণের দুআ। আর এটা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়ও নয়। অবশ্য তুমি এমন দুআ করতে থাকো, আল্লাহ যেন তোমার স্বামীর জিহাদকে কবুল করেন, তাকে কামিয়াবীর সাথে ফিরিয়ে আনেন, অন্যথায় শাহাদাতের অমীয় সুধা তাকে পান করান। তুমি জান, আমার মুখ কখনো শরাব দ্বারা নাপাক হয়নি; বরং সর্বদা কুরআন তিলাওয়াত ও যিকির দ্বারা তরতাজা ছিল।

                      ওগো প্রাণের প্রিয়া!
                      আহ্! সেই মুহূর্ত কতই না মুবারক হবে, যখন আল্লাহর রাহে এই মস্তক, যাকে তুমি খুব সুন্দর বলতে, শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে! সেই শরীর তোমার মহব্বতের দৃষ্টিতে সিপাহীদের শরীর নয়; বরং মাশুকদের নয়নসমূহের ন্যায় কোমল। আনোয়ারের সবচেয়ে বড় আশা ও আকাঙ্ক্ষা হলো, সে শহীদ হয়ে যাবে। আর বীর শ্রেষ্ঠ হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে যেন তার হাশর নাশর হয়। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। মৃত্যু তো সুনিশ্চিত। তাহলে মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কি অর্থ হতে পারে?
                      যখন মৃত্যু আসবেই, তাহলে মানুষ কেন বিছানায় পড়ে শুয়ে শুয়ে মৃত্যুবরণ করবে? আল্লাহর রাহে শাহাদাতের মরণ তো মরণ নয়; বরং ওটাই প্রকৃত জীবন, অবিনশ্বর জীবন।

                      প্রিয় নাজিয়া! আমার অসীয়ত শুনে নাও।
                      যদি আমি শহীদ হয়ে যাই, তাহলে আমার ছোট ভাই স্বীয় দেবর নূরী পাশার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিবে। তোমার পরে আমার কাছে তারই স্থান। আমি চাই যে, আমার আখিরাতমুখী সফরের পরে সে সারা জীবন বিশ্বস্ততার সাথে আস্থা ভরে তোমার খেদমত করে যাবে।
                      আমার দ্বিতীয় অসীয়ত এই যে, তোমার যতজন সন্তান-ই হোক না কেন, সকলকে আমার জীবনীর কথা শুনাবে। আর সকলকে জিহাদের ময়দানে ইসলাম ও দেশের খেদমতে প্রেরণ করবে। যদি তুমি এমন না কর, তাহলে স্মরণ রেখ, আমি জান্নাতে তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকব।
                      আচ্ছা! প্রিয়া নাজিয়া! বিদায়! জানি না, আমার অন্তর বলছে, এই পত্রের পর হয়তো তোমাকে আর কোনো পত্র লিখতে পারবো না। আজব কী, হতে পারে কালকেই শহীদ হয়ে যাবো। দেখ, তুমি ধৈর্য্য ধারণ করবে। তুমি আমার শাহাদাতে দুশ্চিন্তার পরিবর্তে আনন্দিত হবে যে, আল্লাহর রাহে আমি ব্যবহৃত হওয়া তোমার জন্য গৌরবের বিষয়।
                      সোনা আমার! এখন বিদায় নিচ্ছি। আমার কল্পনার জগতে তোমাকে শেষবারের মতো আরেকবার আলিঙ্গন করলাম।
                      ইনশাআল্লাহ, জান্নাতে দেখা হবে। এর পরে আর কোনো দিন তোমার-আমার বিচ্ছেদ হবে না। ইনশাআল্লাহ।
                      - তোমার আনোয়ার।


                      .................................................. .................................................. ...........................
                      তুরকানে আহবার’ থেকে সংকলিত
                      লেখক: আব্দুল মজীদ আতীক্বি, পৃ: ১২৭-১৩০

                      উল্লেখ্য, হযরত আনোয়ার পাশা রাহিমাহুল্লাহ চিঠিটি লিখার ঠিক পরের দিনই শাহাদাত বরণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা তার শাহাদাতকে কবুল করেন, জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্তবা দান করেন। আমাদেরকেও তাঁর সাথী হিসেবে শহীদী কাফেলার অন্তর্ভূক্ত করে নেন। আমীন।

                      Comment


                      • #12
                        =>স্ত্রী-সন্তানের প্রতি আব্দুল্লাহ্ আয্যাম রাহি. এর অন্তিম চিঠি
                        .................................................. ..............................


                        হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজ্তাহিদ ইমাম এবং বিংশ শতাব্দীর জিহাদের পুনর্জাগরণের রূপকার শাইখ ড. আব্দুল্লাহ্ ইউসুফ আয্যাম রাহি.।“আমার অন্তর জুড়ে রয়েছে শুধু জিহাদ, জিহাদ আর জিহাদ।” এই মর্মের একটা হৃদয়গ্রাহী বাণী আছে আব্দুল্লাহ আযযাম রহিঃ এর। তিনিও তার যিন্দেগীতে জিহাদ প্রেমের এক অনুপম আদর্শ স্থাপন করে গিয়েছেন। জিহাদপ্রেমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তিনি মুসলিম উম্মাহর প্রতি বিশেষ করে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের প্রতি একটি নসীহতনামা পেশ করেন। নিম্নে তার একটি অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল:

                        স্ত্রী-সন্তানের প্রতি শাইখের অন্তিম চিঠি:

                        .................................................. .....


                        সুপ্রিয়া! হে মোর সহধর্মিনী!!
                        ১৯৬৯ এর সে কষ্টকর সময়ের কথা আমার আজও মনে পড়ে। আমাদের ঘরে ছিল দু’কিশোর ও এক শিশুসন্তান, কাঁচা ইটের তৈরী ছিল আমাদের আবাসঘর। ছিল না কোনো আলাদা রান্নাঘর। তোমার উপরই ন্যস্ত করেছিলাম পুরো সংসার।
                        একদিন সন্তানরা বড় হল, আমাদের পরিচিতিও বৃদ্ধি পেল, অতিথিতে সরগরম হয়ে উঠল আমাদের ঘর। আর তুমি ছিলে তখন সন্তান-সম্ভবা। তোমার কষ্ট ও পরিশ্রমের অন্ত ছিল না।
                        কিন্তু সবকিছুই তুমি হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলে। তোমার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি, লক্ষ্য ছিল আমার সহায়তা করা। আল্লাহ তোমাকে সর্বোত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। সত্যিই আল্লাহর দয়া ও তোমার ধৈর্য না হলে আমার একার পক্ষে এ বিরাট বোঝা উঠানো সম্ভব ছিল না।

                        হে প্রিয়া আমার!
                        এ জীবনে তোমাকে দেখেছি দুনিয়াবিমুখ, পার্থিব বস্তুর প্রতি ছিল না তোমার কোনো অনুরাগ, দারিদ্র্যতার প্রতি ছিল না তোমার কোনো অভিযোগ।
                        আর স্বচ্ছল সময়েও দেখিনি তোমাকে বিলাসিতায় ডুবে থাকতে। দুনিয়াকে সব সময় তুমি রেখেছিলে হাতের মুঠোয়, হৃদয়ে ছিল না দুনিয়ার কোনো স্থান।

                        মনে রাখবে, জিহাদী জীবনই আনন্দ ও সুখের জীবন। জীবনকে বিলাসিতার গড্ডালিকা- প্রবাহে ভাসিয়ে দেয়ায় কোনো সুখ নেই। কষ্ট-ক্লেশে ধৈর্য ধারণ করা মহত্ত্বের পরিচয়।
                        তাই দুনিয়ার মোহ বর্জন কর, আল্লাহর ভালবাসা পাবে। মানুষের সম্পদ দেখে লোভ করো না, তারা তোমায় ভালবাসবে।
                        আল-কুরআন মানব জীবনের সেরা সাথী ও সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়। রাত্রির নামায, নফল রোযা ও গভীর রজনীর ইস্তিগফার অন্তরলোকে আনে স্বচ্ছতা, সৃষ্টি করে ইবাদাতের অনুরাগ এবং পুণ্যবানদের সৎসঙ্গ, স্বল্প সম্পদ, দুনিয়াদারদের থেকে দূরে থাকা এবং ভনিতা থেকে বিরত থাকলে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভূত হয়।

                        হে প্রিয়া!
                        আল্লাহর কাছে একান্ত কামনা, জান্নাতুল ফিরদাউসে পুনঃ আমাদের মিলন হোক, যেমনিভাবে দুনিয়াতে মিলিত হয়েছিলাম আমরা দু’টি প্রাণ!

                        হে আমার কলিজার টুকরা সন্তান-সন্তুতি!
                        মন ভরে কোনো দিন তোমাদের সঙ্গ দিতে পারিনি। আমার শিক্ষা ও তারবিয়াত তোমাদের ভাগ্যে কমই জুটেছে। অধিকাংশ সময় আমি তোমাদের থেকে বহু দূরে থেকেছি, কিন্তু আমি ছিলাম নিরুপায়। তোমরা জান, মুসলমানদের উপর বিপদের কালো মেঘ ছেয়ে আছে, যার গর্জনে দুগ্ধদানকারী মায়ের কোল থেকে তার দুগ্ধপোষ্য শিশু ভয়ে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে।

                        উম্মতের সংকটের ব্যাপকতা চিন্তা করলে কিশোর ললাটেও ভেসে উঠে বার্ধক্যের বলিরেখা। মুরগীর ন্যায় তোমাদের নিয়ে আমি খাঁচায় বাস করিনি। মুসলমানদের অন্তর বেদনায় জ্বলবে আর আমি আরামে বিশ্রাম নিব, সংসারসুখ উপভোগ করব? দুর্দশায় মুসলমানদের হৃদয় বিদীর্ণ হবে, নির্যাতনে জ্ঞান বিলুপ্ত হবে আর আমি ঘরে বসে থাকব? তা আমার পছন্দ নয়। কোনোদিন আমি কামনা করিনি বিলাসী জীবন, সুস্বাদু ভুনা গোস্ত এবং স্ত্রী সন্তান-সন্তুতিদের নিয়ে সংসার-সুখ উপভোগ ।

                        তোমাদের প্রতি আমার অসিয়াতঃ
                        (ক) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা আঁকড়ে থাকবে।
                        (খ) নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করবে ও কুরআন হিফ্জ করার চেষ্টা করবে।
                        (গ) জিহ্বার হিফাযত করবে, সংযত কথা বলবে।
                        (ঘ) নিয়মিত সালাত ও সিয়াম পালনসহ সৎসঙ্গ গ্রহণ করবে।
                        (ঙ) জিহাদী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে। মনে রাখবে, কোনো নেতার অধিকার নেই তোমাকে জিহাদ থেকে বিরত রাখার। অথবা “দাওয়াত ও ইরশাদের” সাথে জড়িত রেখে তোমাকে ভীরু কাপুরুষ ও জিহাদবিমুখ করার। জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর ব্যাপারে কারও অনুমতির অপেক্ষা করবে না। হাতে অস্ত্র তুলে নাও। ঘোড়সওয়ার হও। তবে ঘোড়-সওয়ারীর চেয়ে তীরন্দাযী আমার অধিক প্রিয়।
                        (চ) শরীয়াতের উপকারী ইলম অর্জন করবে।
                        (ছ) তোমরা সদা তোমাদের বড় ভাই মুহাম্মদকে মান্য করবে, তাকে সম্মান করবে, পরস্পর পোষণ করবে গভীর প্রীতি, শ্রদ্ধা ও ঐকান্তিক ভালবাসা।
                        (জ) তোমরা তোমাদের দাদা-দাদীর সাথে উত্তম আচরণ করবে, তোমাদের দু’ফুফু উম্মে ফইজ ও উম্মে মুহাম্মদকে শ্রদ্ধা করবে। আল্লাহর পরে তাদের অনুগ্রহ আমার উপর অনেক।
                        (ঝ) আমার রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে। আমার পরিবারের সাথে নেক আচরণ করবে এবং আমার বন্ধু-বান্ধবদের হক আদায় করবে।

                        আবার দেখা হবে বেহেশতের পুষ্পকাননে।
                        -আব্দুল্লাহ আযযাম।
                        .................................................. .................................................. ............................
                        [وصية الشهيد عبد الله عزام -رحمه الله

                        লিংক: https://archive.org/details/20221009_20221 ]



                        ১৯৮৯ সালের ২৪ নভেম্বর, শুক্রবার জুমার সালাতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে লুকানো বোমার বিস্ফোরনে স্বীয় দুই পুত্রসহ আব্দুল্লাহ্ আয্যাম রাহি. শহীদ হন। আল্লাহ তা‘আলা তার শাহাদাতকে কবুল করুন, জান্নাতুল ফিরদাউসে উঁচু মাকাম দান করুন। আমাদেরকেও তাঁর সাথী হিসেবে শহীদী কাফেলার অন্তর্ভূক্ত করে নিন। আমীন।

                        ****************************************

                        ****************************************



                        مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ رِجَالٞ صَدَقُواْ مَا عَٰهَدُواْ ٱللَّهَ عَلَيۡهِۖ فَمِنۡهُم مَّن قَضَىٰ نَحۡبَهُۥ وَمِنۡهُم مَّن يَنتَظِرُۖ وَمَا بَدَّلُواْ تَبۡدِيلٗا ٢٣ لِّيَجۡزِيَ ٱللَّهُ ٱلصَّٰدِقِينَ بِصِدۡقِهِمۡ وَيُعَذِّبَ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ إِن شَآءَ أَوۡ يَتُوبَ عَلَيۡهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٢٤

                        মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ (শাহাদাত লাভের) প্রতীক্ষায় আছে। আর তারা (তাদের সংকল্প) মোটেই পরিবর্তন করেনি। এটা এজন্য যেন আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং মুনাফেকদেরকে চাইলে শাস্তি দিবেন কিংবা ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৩৩ সূরা আহযাব: ২৩,২৪)


                        ****************************************
                        কিতাবুত্ তাহরীদআলাল ক্বিতাল
                        তৃতীয় পর্ব: ভালোবাসি তোমায়, হে জিহাদ!









                        Comment


                        • #13
                          আল্লাহ সকল মুসলিমের মনের ইচ্ছা পূরণ করুন ‌। খুব সুন্দর একটি পোস্ট।
                          Last edited by Munshi Abdur Rahman; 11-27-2022, 10:12 AM.
                          পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

                          Comment


                          • #14
                            জাযাকাল্লাহু খাইরান। অনেক সুন্দর হয়েছে। আল্লাহ তাআলা লেখকের কলমে ভরপুর বারাকা দান করুন। আমাদের সবাইকে ইখলাসের সাথে বাস্তবতা বুঝে জিহাদের রাস্তায় অটল রাখুন। আমাদেরকে দ্বীনের জন্য কবুল করুন। আমীন।
                            فَلۡيُقَٰتِلۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ يَشۡرُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا بِٱلۡأٓخِرَةِۚ وَمَن يُقَٰتِلۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيُقۡتَلۡ أَوۡ يَغۡلِبۡ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمٗا

                            কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জিহাদ করাই কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে জিহাদ করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব।(সূরা নিসা, আয়াত ৭৪)

                            Comment


                            • #15
                              Originally posted by farhad
                              ইন শা আল্লাহ্ খুব দ্রুত কিতাবুত তাহ‌রীদ এর ১, ২, ৩ খন্ড এক‌ত্রে বই আকা‌রে প্রকাশ করা হ‌বে। প্রথ‌মে ৫০ ক‌পি করা হ‌বে।
                              মুহতারাম farhad ভাই!
                              আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
                              আল্লাহ্ পাক আপনার এই মোবারক উদ্যোগকে কবুল ও মঞ্জুর করুন। আমীন।
                              কিতাবুত্ তাহরীদ্ কিতাবের লিখক মুহতারাম মুস‘আব ইলদিরিম ভাই এবং আমার (কল্যাণের সন্ধান) পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার সাথে যারা যারা এই মোবারক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করছেন, তাদেরকে “জাযাকুমুল্লাহু খাইরান” এবং অনেক অনেক দুআ ও আশীর্বাদ। আল্লাহ্ পাক আপনাদের কবুল করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে ভরপুর বারাকাহ্ দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
                              মুহতারাম ভাই! কিতাবটি ছাপানোর ব্যাপারে মুহতারাম লেখক কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সম্ভব হলে ছাপানোর সময় আপনি নিচের বিষয়গুলো কিতাবের অন্তর্ভূক্ত করে দিতে পারেন।
                              ক. কিতাবের শুরুতে “উৎসর্গ” এবং “কিতাবুত্ তাহরীদ্ ‘আলাল ক্বিতাল” কিতাবটি ইনশাআল্লাহ যাদের চুলকানি ও অন্তর্জ্বালা ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি করবে”- এই দুটি অংশ যোগ করে দিতে পারেন।
                              উৎসর্গ:-
                              “কিতাবুত্ তাহরীদ্ ‘আলাল ক্বিতাল” কিতাবটি সেই সকল মর্দে মুজাহিদ ফী সাবিলিল্লাহ্ ভাইদের প্রতি উৎসর্গ করা হল-
                              • যারা হক প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এবং তাগুত ও বাতিলের মূলোৎপাটনে শীশাঢালা প্রাচীর।
                              • যারা নিজেদের জান-মাল আল্লাহর কাছে বিক্রয় করে দিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।
                              • যারা নিজেদের বাড়ী-ঘর ত্যাগ করে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল ও গিরিগুহাকে নিজ আবাসস্থল বানিয়ে নিয়েছেন।
                              • যারা কখনো বন্দুকের ছায়াতলে আবার কখনো ট্যাংকের গোলায় জান্নাত খুঁজে বেড়ান।
                              • যারা অসহায় উম্মাহর নারী-শিশু ও মজলুমানদের ফরিয়াদের জবাবে অলী ও নাসীর (বন্ধু ও সাহায্যকারী) রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
                              • যারা উম্মাহর ইয়াতীম শিশুদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য নিজেদের সন্তানদেরকে ইয়াতীম করছেন।
                              • যারা উম্মাহর মা-বোনদের ইজ্জত-আব্রু আর সম্ভ্রম রক্ষার্থে নিজেদের মা-কে সন্তানহারা আর স্ত্রীকে বিধবা বানাচ্ছেন।
                              • যারা গভীর রজনীতে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মহান রবের দরবারে শাহাদাতের মৃত্যুর জন্য আবেদনে মগ্ন।
                              • যারা দুশমনের মোকাবেলা করতে গিয়ে হাত-পা, নাক-কান ইত্যাদি হারিয়ে পঙ্গুত্বের জীবন যাপন করছেন।
                              • যারা ঘোড়ার লাগাম ধরে কোনো অসহায় নারী ও শিশুর চিৎকার ও মজলুম ভাইয়ের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত।
                              আমার প্রাণপ্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা!
                              আপনাদের করকমলে আমার হ্রদয়ের উষ্ণ ভালোবাসার এক চিলতে এই নযরানা মেহেরবানী করে গ্রহণ করুন।
                              -মুসআব ইলদিরিম



                              “কিতাবুত্ তাহরীদ্ ‘আলাল ক্বিতাল” কিতাবটি ইনশাআল্লাহ যাদের চুলকানি ও অন্তর্জ্বালা ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি করবে:
                              • যারা তাদের প্রভু ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের খুশি করার জন্য কুরআন থেকে জিহাদকে সম্পূর্ণরূপে তুলে দিতে আগ্রহী।
                              • যারা কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য জায়গায় বর্ণিত জিহাদকে ‘ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ’ বলে আখ্যায়িত করে মুসলিম যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার কাজে লিপ্ত।
                              • যারা কুরআন হাদীসের অসংখ্য জায়গায় বর্ণিত জিহাদকে অস্বীকার করতে না পেরে শুধুমাত্র ‘আত্মরক্ষামূলক জিহাদে’র কথা বলে তাদের পরম বন্ধু ইয়াহুদী-খৃস্টানদের খুশি করতে চায়।
                              • যারা জিহাদকে নফসের জিহাদ, কলমের জিহাদ, কথার জিহাদ ও মিছিল-মিটিংয়ের জিহাদের মাধ্যমে অপব্যাখ্যা করে মুসলিম উম্মাহকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ করেছে।
                              • যারা জিহাদকে ‘বর্তমান যামানার জন্য অনুপযোগী ও হিকমাহ পরিপন্থী’ মনে করে।
                              • যারা দ্বীন কায়েমের সঠিক পথ পরিত্যাগ করে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও ‘পোপতন্ত্রের ইসলামী ভার্সন’ পীরতন্ত্রের মাধ্যমে দ্বীন কায়েমের ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত।
                              • যারা ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি’ কিংবা ‘রাজনীতি ও জিহাদ নিরপেক্ষ ধর্ম’ দিয়ে সমাজে দ্বীন কায়েম করতে ইচ্ছুক।
                              • যারা ধর্মকে রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে আলাদা করে বহু ইলাহ ও বহু রবের ইবাদতে লিপ্ত।
                              • তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ তাগুতের ভাড়াটিয়া বাহিনী, গোয়েন্দা বিভাগ, কাউন্টার টেররিজম ইত্যাদি যাদের মাথা ব্যথা কেবল মুজাহিদদেরকে নিয়ে।
                              • সেই সকল তথাকথিত ‘সুশীল সমাজ’ যারা চায় মুসলমান যুবকদের মাঝে খাহেশাহ্ ও ফাহেশাহ্ বিস্তার লাভ করুক।
                              • এক কথায় সকল নাস্তিক, মুরতাদ, তথাকথিত প্রগতিশীল, ইসলাম বিদ্বেষী।
                              ======যাদের চুলকানির একমাত্র ঔষধ “জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ”।
                              -মুসআব ইলদিরিম

                              খ. প্রতিটি পর্বের শুরুতে “প্রকাশকের কথা” শিরোনাম যোগ করে দিতে পারেন। আর প্রকাশকের কথা হিসেবে দাওয়াহ ইলাল্লাহ পোস্টে কিতাবের পরিচিতিমূলক যে কিছু কথা আছে সেগুলো যোগ করে দিতে পারেন।


                              গ. আর প্রতিটি পর্বের শুরু বা শেষে দাওয়াহ ইলাল্লাহ্ পোস্টের লিংক দিয়ে দিতে পারেন ইনশাআল্লাহ।
                              দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্ পোস্ট লিংকসমূহ:
                              প্রথম পর্ব: https://bit.ly/tahrid1
                              দ্বিতীয় পর্ব: https://bit.ly/tahrid2
                              তৃতীয় পর্ব: https://bit.ly/tahrid3
                              জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

                              Comment

                              Working...
                              X