Announcement

Collapse
No announcement yet.

গণতন্ত্র: একটি আল্লাহদ্রোহী শাসন ব্যবস্থা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গণতন্ত্র: একটি আল্লাহদ্রোহী শাসন ব্যবস্থা

    গণতন্ত্র: একটি আল্লাহদ্রোহী শাসন ব্যবস্থা।

    প্রিয় সুধী!
     গণতন্ত্রের মহাপ্রতারণার স্বরুপ আজোও কি আপনাদের নিকট উন্মোচিত হয়নি?
     গণতন্ত্রের অতিসুন্দর মিথ্যা কথার বাস্তব চিত্র আজোও কি আপনাদের নিকট চিত্রায়িত হয়নি?
     এখনও কি আপনাদের নিকট বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি যে, আল্লাহদ্রোহী শাসন ব্যবস্থার এক চমকপ্রদ ধোঁকাতন্ত্রের অপর নামই হল গণতন্ত্র?

    আপনারা কি দেখেননি গণতন্ত্র আপনাদেরকে বলছে-

    “দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ” কিন্তু বাস্তবে আপনার মহল্লার পরিচয়হীন, শিক্ষার আলো বর্জিত, বরবর, অসভ্য, নেশাখোর, গুন্ডা ও যাবতীয় গুণহীন ইতর শ্রেণীর ঐ বখাটে ছেলেটির যতটুকু ক্ষমতা তা আপনার গোটা সুশীল সমাজেরও নেই।

    এই গণতন্ত্রই আপনাকে বলছে যে, “গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের পরিচালিত সরকার ব্যবস্থা।” অতঃপর সরকারী দলের একটি কুকুরের জন্যও যেভাবে সরকার পরিচালিত হয় তা আপনার দেশের জ্ঞানী-গুনী প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের জন্যও হয় না।

    এই গণতন্ত্রই আপনাদেরকে বলে, “আইন সবার জন্য সমান”। অতঃপর সরকারী দলের চিহ্নিত খুনী, ধর্ষক, সুদখোর-ঘুষখোর, অর্থ পাচারকারী লুটেরা ও জবরদখলকারীকে সাদরে খালাস দেয়া হয়; আর অপর দিকে নিরপরাধ ভদ্র, সুশীল ও সম্মানিত ব্যক্তিকে খুনী, ধর্ষক বা অপরাধী বানিয়ে জেলে পুরে রাখা হয়।

    এই গণতন্ত্রই তো বলে, “পুলিশ জনগণের বন্ধু; জনগণের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধায়ক একজন কর্মচারী বা সেবক মাত্র”। অথচ সরকার দলের গুন্ডা-বদমাশ, সন্ত্রাসী-চাদাবাজ, চেলা-চামুন্ডা বা পাতিনেতাদের থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচারকারী এমপি মন্ত্রীদের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তায় যেভাবে চাকরের ভূমিকা পালন করে তার বিপরীত সাধারণ জনগণের উপর জুলুম-অত্যাচার, ঘুষ-চাদাবাজী ও মিথ্যা মামলা প্রদানে সবচেয়ে বড় শত্রুর ভূমিকা পালন করে।

    এভাবেই গণতন্ত্র নামের মহাপ্রতারণাতন্ত্র আপনাদেরকে বলে রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই আপনাদের জন্য কিন্তু বাস্তবতা হল সবই গণতন্ত্রের ধারক মহাপ্রতারকদের এমপি-মন্ত্রী ও তাদের চেলা-চামুন্ডাদের জন্য।

    হে জনসাধারণ ও জ্ঞানী-গুণীজন!
    মহান আল্লাহ তা’আলার বার্তাবাহক, মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ﷺ একথাই তো বলে গিয়েছেন আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে যে, এমন একটি সময় আসবে যখন ‘জাবরিয়াহ’দের আবির্ভাব ঘটবে অর্থাৎ এমন শাসক বা রাষ্ট্রনেতাদের আবির্ভাব ঘটবে যারা কুরআনের আইনে রাষ্ট্র ও জনগনকে যথাযথভাবে পরিচালনা করবে না বরং তারা রাষ্ট্র ও জনগনকে পরিচালনা করবে নিজেদের তৈরি করা আইনে। তাদের পরিচয় ও শাসন সম্পর্কে রসূলুল্লাহ ﷺ সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।

    রসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন-

    يكون عليكم أمراء هم شر من المجوس» . رواه الطبراني في “الصغير” و “الأوسط”. قال الهيثمي: “ورجاله رجال الصحيح؛ خلا مؤمل بن إهاب، وهو ثقة” –

    ‘তোমাদের উপর এমনসব শাসকদের আগমন ঘটবে যে, তারা মাজুস (অগ্নীপূজক)-এর চেয়েও খারাপ হবে’। [আল-মুজামুস সাগীর, ত্বাবরাণী: ১০১৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২৩৫]

    সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ কোন একনিষ্ঠ অগ্নিপূজককে আপনি দেখবেন না যে, সে অন্য ধর্মের উপাসকের উপাসনায় অংশগ্রহণ করে। আপনি এও দেখবেন না, একজন একনিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্ভী মুসলিমদের ঈদুল আযহায় গরু জবাইয়ের ইবাদতে অংশ গ্রহণ করছে। কিন্তু গণতন্ত্র নামক ধোঁকাতন্ত্রের পূঁজারী মুসলিম শাসক হলেও দেখবেন, তার যে কপাল সর্বশক্তিমান আল্লাহকে সিজদা করে সে কপালেই হিন্দুদের পূঁজায় তিলক পরে।

    হাদিসটিতে একথাই বলা হয়েছে যে, একজন অগ্নিপূজক যিনি স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির উপাসনায় লিপ্ত হওয়ার মত ন্যাক্কারজনক গোমরাহীতে আকন্ঠ নিমজ্জিত এবং হেন অন্যায়-অপকর্ম নেই যাতে তার লিপ্ত হওয়া অসম্ভব তথাপি এই লোক তার আদর্শের মাসালায় অর্থাৎ অগ্নিকে উপাসক হিসেবে গ্রহণ করার পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের উপাসকের উপাসনায় শরীক হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু গণতন্ত্র বা ক্ষমতার পূঁজারী শাসকদের এই আদর্শটুকু অবশিষ্ট থাকবে না।

    মূলতঃ তারা হবে প্রতারক; বরং এরা ধর্মকে আবরণ হিসেবে ব্যবহার করবে প্রতিটি ধর্মের ধর্মপ্রাণ জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। এজন্য জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের উপর জুলুম-নির্যাতন-নিপীরণ, হত্যা-গুম-লুণ্ঠন চালাতে তাদের বিবেকে বাঁধবে না। গণতন্ত্রের প্রয়োজনে নিজেরাই মন্দিরে আক্রমন চালিয়ে দোষ চাপিয়ে দিবে নিরপরাধ মুসলিমদের উপর আবার মূর্তির পায়ে কুরআন রেখে দোষ চাপিয়ে দেবে নিরীহ হিন্দুদের উপর।

    রসূলুল্লাহ ﷺ আরোও এরশাদ করেন-

    يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ أُمَرَاءُ ظَلَمَةً، وَوُزَرَاءُ فَسَقَةً، وَقَضَاةٌ خَوَنَةٌ، وَفُقَهَاءُ كَذَبَةٌ، فَمَنْ أَدْرَكَ مِنْكُمْ ذَلِكَ الزَّمَانَ فَلَا يَكُونَنَّ لَهُمْ جَابِيًا، وَلَا عَرِيفًا، وَلَا شُرْطِيًّا- رواه الطبراني في “المعجم الأوسط” ٤١٩٠ و”الصغير” ٥٦٤ , والخطيب في “التاريخ”١١/٥٧٧ ; قال الهيثمي في “المجمع” ٥/٢٣٣ : رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الصَّغِيرِ وَالْأَوْسَطِ ، وَفِيهِ دَاوُدُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْخُرَاسَانِيُّ قَالَ الطَّبَرَانِيُّ : لَا بَأْسَ بِهِ ، وَقَالَ الْأَزْدِيُّ: ضَعِيفٌ جِدًّا ، وَمُعَاوِيَةُ بْنُ الْهَيْثَمِ لَمْ أَعْرِفْهُ ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ “انتهى –

    ‘শেষ জামানায় জালেম ও অন্যায়-অবিচারক শাসকদের আগমন ঘটবে। তাদের মন্ত্রীরা হবে ফাসেক (পাপিষ্ট, পঁচন ধরা), তাদের বিচারকরা হবে খেয়ানতকারী, তাদের (সাথে থাকা) আলেমরা হবে মিথ্যুক। তোমাদের মধ্যে যারা সেই জামানা পাবে, তারা ওদের কর-উসূলকারী, আরেফ এবং সৈন্য হতে যেও না। [মু’জামে আ্উসাত, ত্বাবরানী, হাদিস ৪১৯০; মু’জামে ছাগীর, ত্বাবরানী, হাদিস ৫৬৪; তারীখে বাগদাদ, খতীব-১১/৫৭৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২৩৩]

    রসূলুল্লাহ ﷺ আরোও বলেছেন-

    إنها ستكون عليكم أمراء من بعدي يعظون بالحكمة على منابر فإذا نزلوا اختلست منهم وقلوبهم أنتن من الجيف . رواه الطبراني. قال الهيثمي:٥/٤٢٩: و رجاله ثقات –

    ‘নিশ্চই আমার পর অচিরেই তোমাদের উপর এমন শাসকরা আসবে, যারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে গুরুগম্ভীর বক্তৃতা দিবে। তারা পরে যখন (মঞ্চ থেকে) নামবে, তখন তাদের (অর্থাৎ জনগণ) থেকে (ধনসম্পদ) আত্মসাৎ করবে। তাদের অন্তরগুলো হবে মৃত প্রাণীর চাইতেও দূর্গন্ধময়’। [ত্বাবরাণী: মাজমাউয যাওয়ায়ীদ- ৫/৪২৯]

    উপরোক্ত হাদিস দুটিতে শাসকচক্রের প্রকৃত পরিচয় ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট বার্তা রয়েছে। যাথা-

    এক. শাসকচক্রের প্রকৃত পরিচয়ঃ
     শাসকরা হবে জালেম ও অন্যায়-অবিচারক।
     তাদের মন্ত্রীরা হবে ফাসেক (পাপিষ্ট, পঁচন ধরা ও হক নষ্টকারী)।
     তাদের বিচারকরা হবে খেয়ানতকারী অর্থাৎ ন্যায়ের বিপক্ষে অন্যায়ের পক্ষে ফয়সালা প্রদানকারী।
     শাসকপন্থী আলেমরা হবে মিথ্যুক অর্থাৎ ইসলামকে জালিমদের পক্ষে অপব্যাখ্যাকারী।
     এরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে গুরুগম্ভীর অর্থাৎ জনকল্যাণের বক্তৃতা দিবে অতঃপর মঞ্চ থেকে নেমে জনগণের ধনসম্পদ আত্মসাৎ করবে।
     তাদের অন্তরগুলো হবে নিকৃষ্ট মৃত প্রাণীর চাইতেও দূর্গন্ধময়’

    দুই. আমাদের করণীয়ঃ
     তোমাদের মধ্যে যারা সেই জামানা (অর্থাৎ এরূপ শাসকচক্রদের) পাবে, তারা ওদের কর-উসূলকারী (অর্থ সংশ্লিষ্ট কোন পর্যায়ের সাহায্যকারী), আরেফ (উপদেষ্টা বা বুদ্ধি-বৃত্তিক সাহায্যকারী বা তথ্য প্রদানকারী) এবং সৈন্য (প্রতিরক্ষাকারী বা লাঠিয়াল বাহিনী) হতে যেও না।

    মুআয বিন জাবাল রা. বর্ণিত একটি হাদিসে এই শাসকচক্রের বৈশিষ্ট, তাদের শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি, সমকালীন যুগ ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে আরোও সুনির্দিষ্ট সংবাদ দেয়া হয়েছে।

    মুআয বিন জাবাল রা. এরশাদ করেন-

    سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : خُذُوا الْعَطَاءَ مَا دَامَ عَطَاءً ، فَإِذَا صَارَ رِشْوَةً فِي الدِّينِ فَلَا تَأْخُذُوهُ ، وَلَسْتُمْ بِتَارِكِيهِ ؛ يَمْنَعْكُمُ الْفَقْرَ وَالْحَاجَةَ ، أَلَا إِنَّ رَحَى الْإِسْلَامِ دَائِرَةٌ ، فَدُورُوا مَعَ الْكِتَابِ حَيْثُ دَارَ ، أَلَا إِنَّ الْكِتَابَ وَالسُّلْطَانَ سَيَفْتَرِقَانِ ، فَلَا تُفَارِقُوا الْكِتَابَ ، أَلَا إِنَّهُ سَيَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يَقْضُونَ لِأَنْفُسِهِمْ مَا لَا يَقْضُونَ لَكُمْ ، إِنْ عَصَيْتُمُوهُمْ قَتَلُوكُمْ ، وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ أَضَلُّوكُمْ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ ، كَيْفَ نَصْنَعُ ؟ قَالَ: كَمَا صَنَعَ أَصْحَابُ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ، نُشِرُوا بِالْمَنَاشِيرَ ، وَحُمِلُوا عَلَى الْخَشَبِ ، مَوْتٌ فِي طَاعَةِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ حَيَاةٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ . اخرجه الطبراني في ” المعجم الكبير”: ٢٠/٩٠، و” المعجم الصغير”: ٢/٤٢، و مسند الشاميين : ١/٣٧٩, أبو نعيم في ” حلية الأولياء: ٥/١٦٦, قال الهيثمي : ” رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ ، وَيَزِيدُ بْنُ مَرْثَدٍ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ مُعَاذٍ ، وَالْوَضِينُ بْنُ عَطَاءٍ وَثَّقَهُ ابْنُ حِبَّانَ وَغَيْرُهُ ، وَضَعَّفَهُ جَمَاعَةٌ ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ : مجمع الزوائد: ٥/٢٢٨; الوضين بن عطاء الشامي ، مختلف في توثيقه, قال يحيى بن معين: ” الوضين بن عطاء لا بأس به, قال الإمام أحمد: ” الوضين بن عطاء ثقة ، ليس به بأس, قال ابن أبي حاتم : سألت أبي عن الوضين بن عطاء فقال: ” تعرف وتنكر-

    “আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে একথা বলতে শুনেছি ...... ভাল করে শুনে রাখো, (কুরআনের মাধ্যমে দ্বীন) ইসলামের পরিধি সচল হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা আল-কিতাব (কুরআন)-এর সাথে থাকবে তা যেখানেই যাক না কোনো, (কোনো অবস্থাতেই কুরআনকে ছাড়বে না)। ভাল করে শুনে রাখো, নিশ্চয় আল-কিতাব ও রাষ্ট্র ক্ষমতা অতিশিঘ্রই (একটি অপরটি থেকে) আলাদা হয়ে যাবে, (আল্লাহ’র কিতাব অনুযায়ী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা চলবে না; চলবে মানুষের বানানো আইন দিয়ে)। তখনও তোমরা আল-কিতাব থেকে আলাদা হয়ো না। ভাল করে শুনে রাখো, অতি শিঘ্রই তোমাদের উপর এমনসব আমীর-ওমরাগণ (রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রি, প্রশাসক’রা) আসবে, যারা তাদের নিজেদের জন্য (সুবিধা মতো) যে বিচার-ফয়সালা করবে, সে বিচার-ফয়সালা তারা তোমাদের জন্য করবে না। তোমরা যদি তাদের অবাধ্যতা প্রদর্শন করো তাহলে তারা তোমাদেরকে (বিভিন্ন অযুহাতে) হত্যা করে ফেলবে। আর তোমরা যদি তাদের আনুগত্য করো, তাহলে তারা তোমাদেরকে (আল্লাহ’র দ্বীন থেকে) পথভ্রষ্ঠ করে দিবে (অন্য বর্ণনায় ইবনে মাসঊদ রা. বলেন, إذا أطعتهم أدخلوك النار অর্থাৎ তাদের আনুগত্য করলে তারা তোমাকে দোযখে ঢুকাবে)। লোকেরা বললো: ইয়া রসূলাল্লাহ! (এমতাবস্থায়) আমরা কি করবো? তিনি বললেন: (তোমরাও তা-ই করবে) যেমনটা ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর সাহাবীগণ করেছিলেন। (অমান্য করার কারণে) তাদেরকে করাত দিয়ে চিড়ে ফেলা হয়েছিল, শুলিতে চড়ানো হয়েছিল (কিন্তু তারা আল্লাহ’র দ্বীন ছাড়েনি)। আল্লাহ’র নাফরমানীর জীবনের চাইতে আল্লাহ’র আনুগত্যের পথে মৃত্যুই শ্রেয়। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২০/৯০; আল-মু’জামুস সগীর, ত্বাবরাণী- ২/৪২; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী- ১/৩৭৯; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৫/১৬৬; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২২৮; অন্য বর্ণনার রেফারেন্স: মুসতাদরাকে হাকিম- ৪/৬২৯ হাদিস ৮৪৯০]

    শাসকচক্রের বৈশিষ্ট, তাদের শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি ও সমকালীন যুগঃ
    হাদিসটিতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় আল-কিতাব ও রাষ্ট্র ক্ষমতা অতিশিঘ্রই (একটি অপরটি থেকে) আলাদা হয়ে যাবে।” অর্থাৎ এই শাসকচক্র আল্লাহ’র কিতাব অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করে কুরআনকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে অপসারণ করে দিবে। অতঃপর নিজেদের বানানো কিতাব বা সংবিধান বা তন্ত্র-মন্ত্র-মতবাদ দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করবে।

    অতএব,

     এই শাসকচক্রের বৈশিষ্ট হবে, তারা রাষ্ট্র থেকে কুরআনিক শাসন বা খিলাফাহ ব্যবস্থাকে অপসারণ করবে। [উল্লেখ্যঃ কুরআনিক শাসন ব্যবস্থাকে ইসলামী পরিভাষায় খিলাফাহ ব্যবস্থা বলা হয়।]

     অতঃপর তারা নিজেদের জন্য যে বিচার-ফায়সালা করবে তা জনসাধারণের জন্য করবে না।

     অধিকন্তু তাদের অপকর্মে ও আল্লাহদ্রোহীতায় আনুগত্য না করলে তারা বিভিন্ন অযুহাতে জনগণকে হত্যা করবে।

     আর আমাদের মধ্য হতে যদি কেউ তাদের আনুগত্য বা সমর্থন করে তবে রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তারা তোমাদেরকে (আল্লাহ’র দ্বীন থেকে) পথভ্রষ্ঠ করে দিবে (অন্য বর্ণনায় إذا أطعتهم أدخلوك النار অর্থাৎ তাদের আনুগত্য করলে তারা তোমাকে দোযখে ঢুকিয়ে দিবে)।

     এই চক্র আল্লাহর কিতাব বাদ দিয়ে নিজেরা কিতাব বা সংবিধান রচনা করবে। ফলে তাদের শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি হবে নিজেদের মনগড়া মতবাদ- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ।

     এই শাসকচক্রের সময়কাল হবে তখন যখন রাষ্ট্র পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ইত্যাদি মতবাদের ভিত্তিতে।

    এককথায়, এই শাসকচক্রের আগমন ঘটবে যখন আল্লাহ প্রদত্ত শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে। স্পষ্টতই এটাই সেই যুগ রসূলুল্লাহ ﷺ যে যুগ সম্পর্কে এই বরবর শাসকচক্রদের আগমনের কথা বলেছেন।

    প্রিয় ভাই! আপনার কি দেখতে পাচ্ছেন না, এই যুগের গণতন্ত্র পূঁজারী শাসকচক্রের সাথে হাদিসে বর্ণিত সকল বৈশিষ্টগুলো হুবুহু মিলে যায়। অতএব, হাদিসটিতে আমাদের জন্য করণীয় অংশে দৃষ্টিপাত করাই কাম্য।

    করণীয়ঃ
    “ইয়া রসূলাল্লাহ! (এমতাবস্থায়) আমরা কি করবো? তিনি বললেন: (তোমরাও তা-ই করবে) যেমনটা ঈসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর সাহাবীগণ করেছিলেন। (অমান্য করার কারণে) তাদেরকে করাত দিয়ে চিড়ে ফেলা হয়েছিল, শুলিতে চড়ানো হয়েছিল (কিন্তু তারা আল্লাহ’র দ্বীন ছাড়েনি)। আল্লাহ’র নাফরমানীর জীবনের চাইতে আল্লাহ’র আনুগত্যের পথে মৃত্যুই শ্রেয়।”

    মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, “হে আমাদের রব! এই গণতন্ত্রের পূঁজারী পথভ্রষ্ট শাসকচক্রের চক্রান্ত থেকে আপনি আমাদের রক্ষা করুন। আপনি আমাদের জন্য এমন কওমের ব্যবস্থা করে দিন যারা এই শয়তান ও তাদের প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থা চূর্ণ করে আপনার ইনসাফ ভিত্তিক কুরআনিক শাসন ব্যবস্থা কায়িম করবে। অধিকন্তু আপনি আমাদের সেই কওমের অন্তর্ভূক্ত করি নিন।” আমিন! আমিন!! আমিন!!!

    -সংগ্রহীত
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 04-07-2023, 11:35 AM.
Working...
X