↵
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
তাগুতের বিরুদ্ধে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় লড়াইকারী আমার প্রাণপ্রিয় মুজাহিদ ভাইগণ! দাওয়াহ ইলাল জিহাদের ময়দানে মেহনতকারী সকল জিহাদী ফোরাম ও মিডিয়ার ভাইগণ!
আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
অনেক দীর্ঘ সময় পরে হলেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অশেষ মেহেরবানীতে আমরা “কিতাবুত্ তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল, পঞ্চম পর্ব: আর কতকাল আমরা নিজেদেরকে এমনিভাবে ধোঁকা দিব?” কিতাবটি নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
দেরী করার কারণ ছিল- প্রথমতঃ আমার নিজের কমতি ও অযোগ্যতা, দ্বিতীয়তঃ এই পর্বটি রচনা করতে গিয়ে আমাকে অনেক বেশি বাধা-বিপত্তি ও পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে, আর সবশেষেঃ আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা, হিকমাহ্ ও ফয়সালা। তবে যাই হোক, কৃতজ্ঞতায় সিজদায় লুটাই সে রব্বে কারীমের দরবারে যিনি আমাদেরকে কিতাবটি শেষ করার তাওফীক দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
মুহতারাম ভাই! আমরা যারা কমবেশি ‘দাওয়াহ ইলাল জিহাদের’ ময়দানে কাজ করেছি, এই কাজ করতে গিয়ে অবশ্যই আমরা কিছু না কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেছি; একজন আলেম কিংবা পাক্কা দ্বীনদার অথবা দ্বীনের কোনো মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত দ্বীনী সাথী ভাইয়ের দুয়ারে যখন আমরা জিহাদের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছি আর সেই ভাই যখন ‘দাওয়াহ ইলাল জিহাদ’কে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কিংবা চুপ রয়েছেন, অথবা পাশ কাটিয়ে গিয়ে জিহাদ না করার পিছনে অদ্ভূত কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন, তখন আমাদের হৃদয় ব্যথিত হয়েছে, কখনো অন্তর ভেঙে খানখান হয়েছে, নিশ্চুপে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে আর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে কয়েকটি প্রশ্ন উদিত হয়েছে। যেমন:
ক. আমাদের দেশে আলহামদুলিল্লাহ, অগণিত মসজিদ-মাদরাসা-খানকাহ কিংবা দাওয়াতের মারকাজ রয়েছে, রয়েছেন অসংখ্য দ্বীনদার, ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কিন্তু জিহাদের দাওয়াত দিলে কেন সবাই সেটিকে এড়িয়ে যেতে চান? বা গ্রহণ করতে চান না?
খ. অনেক বড় আলেম, পীর সাহেব, দা’ঈ কিংবা ইসলামী রাজনীতিবিদ, কিন্তু তিনিও কেন জিহাদ করতে চান না, বা জিহাদের প্রতি কেন এত অনীহা? জিহাদের দাওয়াত দিলে এটা-সেটা বুঝিয়ে কেন তিনি পাশ কাটিয়ে যান? দ্বীনের এত গূঢ় তত্ত্ব বুঝলেও কেন জিহাদ বুঝতে চান না?
গ. বর্তমান সময়ে জিহাদ একটি ফরযে আইন আমল হওয়া সত্ত্বেও এ থেকে উম্মাহর দ্বীনদার শ্রেণি কেন এত পিছিয়ে থাকতে পছন্দ করেন?
ঘ. আরেকদল ভাই আছেন তারা জিহাদকে কেন অপব্যাখ্যা করেন? উম্মাহকে জিহাদ থেকে দূরে রাখতে কেন তারা নানাভাবে উম্মাহকে বিভ্রান্ত করেন?
ঙ. আল্লাহর সাথে আমাদের সত্যবাদিতার এত অভাব কেন? যে আল্লাহ আমাদেরকে নামাযের হুকুম দিয়েছেন, সেই আল্লাহই তো আমাদেরকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন, জিহাদকে ফরযে আইন করেছেন, কিন্তু কেন আমরা তাঁর এই হুকুমটিকে এতটুকু গুরুত্ব দেই না যতটুকু আমরা নফল নামায, তিলাওয়াত, যিকির কিংবা অন্যান্য আমল ও মেহনতকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকি?
চ. উম্মাহর উপর কুফ্ফারদের আগ্রাসন, নির্যাতন, গণহত্যা দেখেও কেন আমরা চুপ করে থাকি, কিংবা কেবল মিটিং-মিছিল-র্যালী আর দুআ করেই আমাদের ঈমানী দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে ভেবে বসে থাকি?
ছ. আমাদের উপর কেন পরাজিত মানসিকতা চেপে বসেছে? ইসলাম কায়েম করার প্রশ্নে আমরা কেন ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’ বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের মত কুফুরী ও শিরকী ব্যবস্থা কিংবা অন্যান্য মনগড়া পন্থা অবলম্বন করছি? আমরা দ্বীনদাররা ইসলামী(?) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি রাজপথে রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকি, তাহলে প্রকৃত জিহাদ ও শাহাদাতের পথে যেতে কেন আমাদের এত ভয় ও অনীহা?
জ. এক কথায়, দ্বীনদার হওয়া সত্ত্বেও ‘জিহাদের আযান’ কেন আমাদের কাছে এত অপ্রিয়? জিহাদের ডাক কেন আমাদের কাছে এত অপছন্দনীয়? জিহাদের আওয়াজ কেন আমাদের কাছে এত অপরিচিত, অবহেলিত, কারো কারো কাছে অসহনীয়? অথচ আল্লাহ পাকের হুকুম হল- আমরা যেন আল্লাহ, তাঁর রাসূল ﷺ ও তাঁর রাহে জিহাদ করাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি? (দেখুন: সূরা তাওবা: আয়াত নং-২৪)
মুহতারাম ভাই, তাহলে, আমাদের সমস্যাটা কোথায়? কেন এমন হচ্ছে?....................
হ্যাঁ ভাই, আমাদের মূল সমস্যাটা হল- ‘ওয়াহন’ তথা দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়। আর এই ওয়াহনের ফলাফল হল- জিহাদ বিমুখতা ও জিহাদ পরিত্যাগ।
দুঃখজনক বিষয় হল- জিহাদ পরিত্যাগের জন্য আমরা নিজেরা মনগড়াভাবে নানান অজুহাত ও বাহানা বানিয়ে নিয়েছি; আর দাবী করছি এগুলো হলো আমাদের ‘হিকমাহ’। যে যত বেশি জিহাদ থেকে পালানোর পন্থা বের করতে পারছি, সে ততবেশি নিজেকে ‘হিকমাহওয়ালা’ ভাবছি। আর শরীয়তের ভুল কিংবা অপব্যাখ্যা করে আমরা উম্মাহর সামনে জিহাদ না করার নানান কারণ তুলে ধরছি, নিজেরাও বিভ্রান্ত হচ্ছি এবং উম্মাহকেও বিভ্রান্ত করছি। সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনমনে আমরা আকীদা ও বিশ্বাসের নানান প্রাচীর দাঁড় করিয়েছি, যা আমাদেরকে জিহাদ থেকে বিরত রাখছে।
প্রিয় ভাই! আজকের আমাদের এই পর্বটিতে (কিতাবুত্ তাহরীদ, পঞ্চম পর্ব: আর কতকাল আমরা নিজেদেরকে এমনিভাবে ধোঁকা দিব?) এই সমস্ত ধোঁকার প্রাচীরগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং যথাসম্ভব কুরআন-হাদীসের বিভিন্ন দলীল ও যুক্তির মাধ্যমে সেগুলোকে খণ্ডন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ, কিতাবটি আমাদের সমাজের প্রতিটি দ্বীনদার ভাইয়ের অন্তরে নাড়া দিবে, সকল তবকার দ্বীনদারদেরকে জিহাদ নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে একরকম বাধ্য করবে এবং আমাদের প্রত্যেকের উপর আপতিত এই ফরযিয়াত আদায়ে উদ্বুদ্ধ করবে।
সবশেষে বলব, আমি (লেখক) একজন নগণ্য মানুষ, আমার ইলমও সীমাবদ্ধ। তথাপি যতটুকু সত্য ও সঠিক কথা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যা কিছু ভুল সেটি আমার নফস ও শয়তানের পক্ষ থেকে। আর আমি ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নই। কারো নজরে কোনো ভুল ত্রুটি ও অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে, মেহেরবানী করে কমেন্টে তা জানিয়ে দিলে আমি আপনাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব, ইনশাআল্লাহ্।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেন আমাকে এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে শয়তান ও তার দোসরদের ধোঁকা থেকে হেফাযত করেন এবং জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল রাখেন। তিনি যেন সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে, বিশেষ করে গাজার মুসলিম ভাই-বোনদের উপর চলমান ইয়াহুদী ও অন্যান্য কুফ্ফারদের আগ্রাসন ও গণহত্যা থেকে হেফাযত করেন। সারা বিশ্বের মুজাহিদ ভাইদেরকে বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ভাইদেরকে কবুল করেন, জিহাদের পথে অবিচল রাখেন, গাইবী মদদ ও নুসরত করেন, এবং আমাদের চক্ষু ও হৃদয়ে শীতলতা দানকারী ‘ফাতহে মুবীন’ দান করেন। আমীন ছুম্মা আমীন।
পরিশেষে, আল্লাহ পাক তাঁর দ্বীন কায়েমের জন্য ‘এলায়ে কালিমাতুল্লাহর’ এই ক্ষুদ্র মেহনতকে কবুল করুন, ঘুমন্ত মুসলিম উম্মাহর জাগরণের কাজে কিতাবটিকে ব্যবহার করুন, আমাদের নাজাতের উসীলা বানান, যেসকল আলেম-মুজাহিদ ভাই শত ব্যস্ততার মাঝেও অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে কিতাবটি সম্পাদনা করে দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে জাযায়ে খায়ের দান করুন, তাদেরকে এবং তাদের আহালদেরকে জিহাদ ও শাহাদাতের জন্য কবুল করুন, ক্ষমা করুন এবং তাদের অবস্থা ভালো করে দিন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
ব্যাক পেইজ
************************************************** ************
কিতাবুত তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল: পঞ্চম পর্ব
আর কতকাল আমরা নিজেদেরকে এমনিভাবে ধোঁকা দিব?
কিতাবের পিডিএফ লিংক:
https://archive.org/details/k-5_20231113
কিতাবের টেক্সট লিংক:
https://justpaste.it/70q7n
************************************************** ************
************************************************** ***********
এই পর্যন্ত প্রকাশিত “কিতাবুত তাহরীদ” এর পর্বগুলো পড়ুন নিচের লিংকে
পর্ব-১: আগ্নেয়গিরি হতে অগ্নুৎপাত:
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক-https://bit.ly/tahrid1
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/kitabuttahrid1
....................................
পর্ব 02: তাওহীদ ও জিহাদ
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid2
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/kitabuttahrid2
....................................
পর্ব ০৩: ভালোবাসি তোমায় হে জিহাদ!
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid3
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/tahrid3
......................................
পর্ব ০4: তোমাকেই শুধু চাই হে শাহাদাত!
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid4
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/tahrid4_20230125
************************************************** **********
************************************************** ***********
ইসলামের সোনালি অতীত, উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত বিজয়গাঁথা নিয়ে একটি কিতাব-
“কালজয়ী ইসলাম”
দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্ পোস্ট লিংক: https://bit.ly/kaljoyi-islam
পিডিএফ লিংক: https://bit.ly/kaljoie-islam
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
******************************************
কভার পেইজ
লেখকের কথা:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
তাগুতের বিরুদ্ধে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় লড়াইকারী আমার প্রাণপ্রিয় মুজাহিদ ভাইগণ! দাওয়াহ ইলাল জিহাদের ময়দানে মেহনতকারী সকল জিহাদী ফোরাম ও মিডিয়ার ভাইগণ!
আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
অনেক দীর্ঘ সময় পরে হলেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অশেষ মেহেরবানীতে আমরা “কিতাবুত্ তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল, পঞ্চম পর্ব: আর কতকাল আমরা নিজেদেরকে এমনিভাবে ধোঁকা দিব?” কিতাবটি নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
দেরী করার কারণ ছিল- প্রথমতঃ আমার নিজের কমতি ও অযোগ্যতা, দ্বিতীয়তঃ এই পর্বটি রচনা করতে গিয়ে আমাকে অনেক বেশি বাধা-বিপত্তি ও পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে, আর সবশেষেঃ আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা, হিকমাহ্ ও ফয়সালা। তবে যাই হোক, কৃতজ্ঞতায় সিজদায় লুটাই সে রব্বে কারীমের দরবারে যিনি আমাদেরকে কিতাবটি শেষ করার তাওফীক দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
কিতাবুত্ তাহরীদ্, পঞ্চম পর্ব নিয়ে কিছু কথা
মুহতারাম ভাই! আমরা যারা কমবেশি ‘দাওয়াহ ইলাল জিহাদের’ ময়দানে কাজ করেছি, এই কাজ করতে গিয়ে অবশ্যই আমরা কিছু না কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেছি; একজন আলেম কিংবা পাক্কা দ্বীনদার অথবা দ্বীনের কোনো মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত দ্বীনী সাথী ভাইয়ের দুয়ারে যখন আমরা জিহাদের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছি আর সেই ভাই যখন ‘দাওয়াহ ইলাল জিহাদ’কে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কিংবা চুপ রয়েছেন, অথবা পাশ কাটিয়ে গিয়ে জিহাদ না করার পিছনে অদ্ভূত কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন, তখন আমাদের হৃদয় ব্যথিত হয়েছে, কখনো অন্তর ভেঙে খানখান হয়েছে, নিশ্চুপে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে আর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে কয়েকটি প্রশ্ন উদিত হয়েছে। যেমন:
ক. আমাদের দেশে আলহামদুলিল্লাহ, অগণিত মসজিদ-মাদরাসা-খানকাহ কিংবা দাওয়াতের মারকাজ রয়েছে, রয়েছেন অসংখ্য দ্বীনদার, ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কিন্তু জিহাদের দাওয়াত দিলে কেন সবাই সেটিকে এড়িয়ে যেতে চান? বা গ্রহণ করতে চান না?
খ. অনেক বড় আলেম, পীর সাহেব, দা’ঈ কিংবা ইসলামী রাজনীতিবিদ, কিন্তু তিনিও কেন জিহাদ করতে চান না, বা জিহাদের প্রতি কেন এত অনীহা? জিহাদের দাওয়াত দিলে এটা-সেটা বুঝিয়ে কেন তিনি পাশ কাটিয়ে যান? দ্বীনের এত গূঢ় তত্ত্ব বুঝলেও কেন জিহাদ বুঝতে চান না?
গ. বর্তমান সময়ে জিহাদ একটি ফরযে আইন আমল হওয়া সত্ত্বেও এ থেকে উম্মাহর দ্বীনদার শ্রেণি কেন এত পিছিয়ে থাকতে পছন্দ করেন?
ঘ. আরেকদল ভাই আছেন তারা জিহাদকে কেন অপব্যাখ্যা করেন? উম্মাহকে জিহাদ থেকে দূরে রাখতে কেন তারা নানাভাবে উম্মাহকে বিভ্রান্ত করেন?
ঙ. আল্লাহর সাথে আমাদের সত্যবাদিতার এত অভাব কেন? যে আল্লাহ আমাদেরকে নামাযের হুকুম দিয়েছেন, সেই আল্লাহই তো আমাদেরকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন, জিহাদকে ফরযে আইন করেছেন, কিন্তু কেন আমরা তাঁর এই হুকুমটিকে এতটুকু গুরুত্ব দেই না যতটুকু আমরা নফল নামায, তিলাওয়াত, যিকির কিংবা অন্যান্য আমল ও মেহনতকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকি?
চ. উম্মাহর উপর কুফ্ফারদের আগ্রাসন, নির্যাতন, গণহত্যা দেখেও কেন আমরা চুপ করে থাকি, কিংবা কেবল মিটিং-মিছিল-র্যালী আর দুআ করেই আমাদের ঈমানী দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে ভেবে বসে থাকি?
ছ. আমাদের উপর কেন পরাজিত মানসিকতা চেপে বসেছে? ইসলাম কায়েম করার প্রশ্নে আমরা কেন ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’ বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের মত কুফুরী ও শিরকী ব্যবস্থা কিংবা অন্যান্য মনগড়া পন্থা অবলম্বন করছি? আমরা দ্বীনদাররা ইসলামী(?) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি রাজপথে রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকি, তাহলে প্রকৃত জিহাদ ও শাহাদাতের পথে যেতে কেন আমাদের এত ভয় ও অনীহা?
জ. এক কথায়, দ্বীনদার হওয়া সত্ত্বেও ‘জিহাদের আযান’ কেন আমাদের কাছে এত অপ্রিয়? জিহাদের ডাক কেন আমাদের কাছে এত অপছন্দনীয়? জিহাদের আওয়াজ কেন আমাদের কাছে এত অপরিচিত, অবহেলিত, কারো কারো কাছে অসহনীয়? অথচ আল্লাহ পাকের হুকুম হল- আমরা যেন আল্লাহ, তাঁর রাসূল ﷺ ও তাঁর রাহে জিহাদ করাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি? (দেখুন: সূরা তাওবা: আয়াত নং-২৪)
মুহতারাম ভাই, তাহলে, আমাদের সমস্যাটা কোথায়? কেন এমন হচ্ছে?....................
হ্যাঁ ভাই, আমাদের মূল সমস্যাটা হল- ‘ওয়াহন’ তথা দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়। আর এই ওয়াহনের ফলাফল হল- জিহাদ বিমুখতা ও জিহাদ পরিত্যাগ।
দুঃখজনক বিষয় হল- জিহাদ পরিত্যাগের জন্য আমরা নিজেরা মনগড়াভাবে নানান অজুহাত ও বাহানা বানিয়ে নিয়েছি; আর দাবী করছি এগুলো হলো আমাদের ‘হিকমাহ’। যে যত বেশি জিহাদ থেকে পালানোর পন্থা বের করতে পারছি, সে ততবেশি নিজেকে ‘হিকমাহওয়ালা’ ভাবছি। আর শরীয়তের ভুল কিংবা অপব্যাখ্যা করে আমরা উম্মাহর সামনে জিহাদ না করার নানান কারণ তুলে ধরছি, নিজেরাও বিভ্রান্ত হচ্ছি এবং উম্মাহকেও বিভ্রান্ত করছি। সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনমনে আমরা আকীদা ও বিশ্বাসের নানান প্রাচীর দাঁড় করিয়েছি, যা আমাদেরকে জিহাদ থেকে বিরত রাখছে।
প্রিয় ভাই! আজকের আমাদের এই পর্বটিতে (কিতাবুত্ তাহরীদ, পঞ্চম পর্ব: আর কতকাল আমরা নিজেদেরকে এমনিভাবে ধোঁকা দিব?) এই সমস্ত ধোঁকার প্রাচীরগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং যথাসম্ভব কুরআন-হাদীসের বিভিন্ন দলীল ও যুক্তির মাধ্যমে সেগুলোকে খণ্ডন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ, কিতাবটি আমাদের সমাজের প্রতিটি দ্বীনদার ভাইয়ের অন্তরে নাড়া দিবে, সকল তবকার দ্বীনদারদেরকে জিহাদ নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে একরকম বাধ্য করবে এবং আমাদের প্রত্যেকের উপর আপতিত এই ফরযিয়াত আদায়ে উদ্বুদ্ধ করবে।
সবশেষে বলব, আমি (লেখক) একজন নগণ্য মানুষ, আমার ইলমও সীমাবদ্ধ। তথাপি যতটুকু সত্য ও সঠিক কথা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যা কিছু ভুল সেটি আমার নফস ও শয়তানের পক্ষ থেকে। আর আমি ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নই। কারো নজরে কোনো ভুল ত্রুটি ও অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে, মেহেরবানী করে কমেন্টে তা জানিয়ে দিলে আমি আপনাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব, ইনশাআল্লাহ্।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেন আমাকে এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে শয়তান ও তার দোসরদের ধোঁকা থেকে হেফাযত করেন এবং জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল রাখেন। তিনি যেন সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে, বিশেষ করে গাজার মুসলিম ভাই-বোনদের উপর চলমান ইয়াহুদী ও অন্যান্য কুফ্ফারদের আগ্রাসন ও গণহত্যা থেকে হেফাযত করেন। সারা বিশ্বের মুজাহিদ ভাইদেরকে বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ভাইদেরকে কবুল করেন, জিহাদের পথে অবিচল রাখেন, গাইবী মদদ ও নুসরত করেন, এবং আমাদের চক্ষু ও হৃদয়ে শীতলতা দানকারী ‘ফাতহে মুবীন’ দান করেন। আমীন ছুম্মা আমীন।
পরিশেষে, আল্লাহ পাক তাঁর দ্বীন কায়েমের জন্য ‘এলায়ে কালিমাতুল্লাহর’ এই ক্ষুদ্র মেহনতকে কবুল করুন, ঘুমন্ত মুসলিম উম্মাহর জাগরণের কাজে কিতাবটিকে ব্যবহার করুন, আমাদের নাজাতের উসীলা বানান, যেসকল আলেম-মুজাহিদ ভাই শত ব্যস্ততার মাঝেও অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে কিতাবটি সম্পাদনা করে দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে জাযায়ে খায়ের দান করুন, তাদেরকে এবং তাদের আহালদেরকে জিহাদ ও শাহাদাতের জন্য কবুল করুন, ক্ষমা করুন এবং তাদের অবস্থা ভালো করে দিন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
-মুস‘আব ইলদিরিম
২৮ রবিউস্ সানি, ১৪৪৫ হিজরি
(১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ঈসায়ী)
রোজ: সোমবার, ০৪:৪৮ a.m
২৮ রবিউস্ সানি, ১৪৪৫ হিজরি
(১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ঈসায়ী)
রোজ: সোমবার, ০৪:৪৮ a.m
ব্যাক পেইজ
************************************************** ************
কিতাবুত তাহরীদ ‘আলাল ক্বিতাল: পঞ্চম পর্ব
আর কতকাল আমরা নিজেদেরকে এমনিভাবে ধোঁকা দিব?
কিতাবের পিডিএফ লিংক:
https://archive.org/details/k-5_20231113
কিতাবের টেক্সট লিংক:
https://justpaste.it/70q7n
************************************************** ************
************************************************** ***********
এই পর্যন্ত প্রকাশিত “কিতাবুত তাহরীদ” এর পর্বগুলো পড়ুন নিচের লিংকে
পর্ব-১: আগ্নেয়গিরি হতে অগ্নুৎপাত:
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক-https://bit.ly/tahrid1
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/kitabuttahrid1
....................................
পর্ব 02: তাওহীদ ও জিহাদ
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid2
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/kitabuttahrid2
....................................
পর্ব ০৩: ভালোবাসি তোমায় হে জিহাদ!
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid3
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/tahrid3
......................................
পর্ব ০4: তোমাকেই শুধু চাই হে শাহাদাত!
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid4
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/tahrid4_20230125
************************************************** **********
************************************************** ***********
ইসলামের সোনালি অতীত, উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত বিজয়গাঁথা নিয়ে একটি কিতাব-
“কালজয়ী ইসলাম”
দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্ পোস্ট লিংক: https://bit.ly/kaljoyi-islam
পিডিএফ লিংক: https://bit.ly/kaljoie-islam
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
******************************************
Comment