মোল্লা বেরাদার আখুন্দের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য
সংঘাত ও মানবিকতা বিষয়ক শিক্ষাকেন্দ্র কর্তৃক আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে আল-হাজ্ব মোল্লা বেরাদার আখুন্দ অতি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তৃতাটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন মাওলানা আবুল বাশার হাফিজাহুল্লাহ। অনূদিত বক্তৃতাটি নিচে উল্লেখ করা হলো-
শুরু করছি পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহ্* তায়ালার নামে। রহমত বর্ষিত হোক তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর।
শুরুতে কনফারেন্সে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রিয় মাতৃভূমি আফগানিস্তানের সংকট নিরসনকল্পে মতবিনিময়ের জন্য এখানে সমবেত হতে পেরে আমি যার পর নাই আনন্দিত।
শান্তি এবং এর প্রয়োজনীয়তা:
প্রতিটি সমাজ শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। কারণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নতি এবং সুখী ও সুন্দর জীবনযাপন করা সম্ভব নয়।
নিছক শ্লোগান দিয়ে শান্তি অর্জন করা যায় না; এর জন্য দরকার সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ গ্রহণ। আর শান্তি লঙ্ঘিত হয়, যখন মানুষের স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করা হয়।
শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ইসলামি ইমারাহর অঙ্গীকার :
ইসলামি ইমারাহ শুরু থেকেই যেকোনো উপায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে এবং সংঘাত নিরসনে আলোচনা ও সংলাপের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে থাকে। ইসলামি ইমারাহর উক্ত অবস্থানের স্বপক্ষে অতি সংক্ষেপে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হচ্ছে:
কাতারে রাজনৈতিক কার্যালয়:
ইসলামি ইমারাহ আফগান সংকটের সমাধান খোঁজে বের করতে কাতারে রাজনৈতিক কার্যালয় গ্রহণ করেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, মাতৃভূমি আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তাদের সদিচ্ছার কমতি নেই।
দোহা চুক্তি:
আমেরিকার সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর ইসলামী ইমারাহ সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিমত নির্ধারিত টাইমলাইন অনুযায়ী সকল বিদেশি সেনাকে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হবে ; এবং আফগানিস্তানের মাটি অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না। এই চুক্তি আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
আন্ত-আফগান সংলাপ:
দোহা চুক্তি অনুযায়ী আফগান সংকট নিরসনে ইসলামী ইমারাহ আন্ত-আফগান সংলাপ শুরু করেছে এবং এখনো তা চলছে। আশাকরি এর মাধ্যমে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির সংকট নিরসন হবে; আমাদের জাতি স্বাধীনতা লাভ করবে এবং তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ইসলামি সরকার গঠন করতে পারবে।
ছয়মাস বিলম্বে আন্ত-আফগান সংলাপের সূচনা:
দোহা চুক্তি অনুযায়ী ১০ই মার্চ ২০২০ এ সংলাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অপর পক্ষ বিভিন্ন বাহানায় সংলাপকে ছয়মাস বিলম্বিত করেছে। যথা সময়ে সংলাপ শুরু হলে আলোচনাকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া যেতো।
এই বিলম্বের ফলে সংলাপ পিছিয়ে পড়েছে বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের হাতে বহু নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সর্বসাধারণকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে ইসলামি ইমারাহ জিহাদ করছে। তবে সাধারণ মানুষের জানমালের যাতে ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে।
সর্বসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য ইসলামি ইমারাহর গৃহীত পদক্ষেপের কয়েকটি নিম্নরূপ:
– সর্বসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধে ইসলামী ইমারাহর বিশেষ কমিশন রয়েছে।
– ইসলামী ইমারাহর তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সর্বসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা হয়।
– সর্বসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ অভিযান বিলম্বিত করা হয়। অপর দিকে সাধারণ মানুষের বসতবাড়িতে অভিযান চালানো ও বিমান হামলা করা কাবুল সরকার এবং বিদেশি সেনাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
আন্ত-আফগান সংলাপের বর্তমান অবস্থা:
আন্ত-আফগান সংলাপ শুরু হয়েছে ১২ই সেপ্টেম্বর। অগ্ৰগতি সকলের সামনেই রয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় সংলাপ সামনে এগোবে তা উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্ধারিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি অগ্ৰগতি। বরাবরের মতোই বলছি, সংলাপের মধ্য দিয়ে সকল ইস্যুর সমাধান করতে ইসলামি ইমারাহ পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
যে সকল বাধা শান্তি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করছে:
১/ ব্ল্যাক লিস্ট:
দোহা চুক্তি অনুযায়ী এত দিনে ব্ল্যাক লিস্ট ইস্যুর সুরাহা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। শান্তি প্রক্রিয়া ও ব্ল্যাক লিস্টিং কোনোভাবেই একসঙ্গে যায় না। এটা কীভাবে সম্ভব যে, এক পক্ষের আলোচকদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করে এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আলোচনার টেবিল থেকে দূরে রাখা হচ্ছে, আর অপর পক্ষ এসব ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে! অন্যদের মতো ইসলামি ইমারাহর সকল নেতৃবৃন্দের বিনা বাধায় ভ্রমণ সুবিধা থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনেও প্রতিটি মানুষের ভ্রমণ স্বাধীনতা স্বীকৃত।
২/ বন্দি মুক্তি:
ইসলামি ইমারাহর হাজার হাজার সমর্থক এখনো কারাগারে আটক রয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং বৈরিতা কমিয়ে আনতে মুজাহিদগণকে এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে।
আন্ত-আফগান সংলাপ শুরু হয়ে গেছে। তাই দোহা চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট বন্দিদেরকে আরো আগেই মুক্তি দেয়ার কথা ছিল।
মনে রাখতে হবে যে, দোহা চুক্তি খুবই যৌক্তিক ও বোধগম্য চুক্তি। এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। লড়াই অব্যাহত থাকার জন্য তারাই দায়ী যারা এখনো দোহা চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না।
৩/ অপপ্রচার:
বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে যে, আন্ত-আফগান সংলাপের সূচনালগ্ন থেকে কাবুল সরকারের প্রতিনিধিরা ব্যাপকভাবে হিংসাত্মক প্রোপাগান্ডা ও উদ্ভট প্রচারণা চালিয়ে আসছে,যা শান্তি প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
কাবুল সরকারের সহযোগিতায় এর গোয়েন্দা সংস্থা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাকেন্দ্রে হামলা করছে। অপহরণ, টার্গেট কিলিং-সহ আরো বহু অপকর্ম সুপরিকল্পিতভাবে করছে এবং সুযোগ বুঝে সুকৌশলে ইসলামি ইমারাহর উপর এসবের দায়ভার চাপানোর অপচেষ্টা করছে।
হাসপাতাল, শিক্ষাকেন্দ্র ও কাবুল ইউনিভার্সিটিতে হামলা,তাখার প্রদেশের একটি মসজিদ ও তাহফীজুল কুরআন মাদ্রাসায় বিমান হামলা, স্বেচ্ছাসেবক ও সাংবাদিকদের উপর হামলা তাদের অপকর্মের কয়েকটি নিদর্শন মাত্র। তারা মনে করে, এসব অপকর্ম তাদেরকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে সহযোগিতা করবে।
কারো অজানা নয় যে, কাবুল সরকার জনগণের কাঙ্ক্ষিত সরকার নয় , এর প্রতিনিধিরা জনপ্রতিনিধি নয়। তাই তাদের সাথে জনপ্রতিনিধিমূলক আচরণ করা বিশ্ববাসীর জন্য উচিত হবে না।
আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সর্বাঙ্গীন ইসলামি সরকারের বিকল্প নেই। ইসলাম ও আফগান মূল্যবোধের সুরক্ষা, মাতৃভূমির যুগপৎ উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও ঐক্যবদ্ধ জাতির নিশ্চয়তা কেবল মাত্র সর্বাঙ্গীন ইসলামি সরকার দিতে পারে।
ভবিষ্যত সরকার:
স্বাধীনতা অর্জনের পর ক্ষমতা কুক্ষিগত করা বা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা ইসলামি ইমারাহর লক্ষ্য নয়। ইসলামি ইমারাহ সকল আফগানকে সাথে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায়।
চার যুগ ধরে আফগান জাতি মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য সবধরনের মানসিক ও বস্তুগত ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং আজো তারা লক্ষ্যপানে ছুটে চলছে।
বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা ও জনগণের উন্নতি নিশ্চিত করতে ইসলামি ইমারাহ নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্ৰহণ করবে:
জাতি ও জনগণের সেবা:
বিদেশি শক্তির দখলদারিত্বের কারণে বিগত চার যুগ ধরে বিশেষ করে শেষের দুই যুগ আমাদের মহান আফগান জাতি পাহাড় সমান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কালাতিপাত করছে। ভবিষ্যৎ সরকার জনগণের দুর্দশা লাঘব, তাদের কল্যাণ ও উন্নতির উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করবে। ইসলামি ইমারাহ দুই যুগ ধরে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য দাঁত কামড়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলসমূহে বসবাসকারী নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। ইসলামি ইমারাহ জনকল্যাণের জন্য সামর্থ্যের সবই করছে এবং করে যাবে।
ইসলামি ইমারাহ এসকল সেবা করছে কোনোরূপ বিদেশি সাহায্য ছাড়াই। বিশ্ববাসী, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের কাছে আফগান জনগণের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের পক্ষ থেকে শতভাগ স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হচ্ছে। ইসলামি ইমারাহ এসব বিষয়ে সমন্বয় সাধন ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।
জাতীয় সম্পদ:
একটি ইসলামি সরকারের উপর জনসেবা ও আরো যেসকল দায়দায়িত্ব রয়েছে, তা পালনের উপায় হচ্ছে জনস্বার্থে কাজ করা। ব্রীজ, টানেল, বেড়িবাঁধ, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র, খনি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুল, ইউনিভার্সিটি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালসহ জনকল্যাণ সংশ্লিষ্ট সকল স্থাপনাকে ইসলামি ইমারাহ সকলের যৌথ সম্পদ মনে করে এবং এসবের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করাকে নিজেদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য মনে করে।
নারী অধিকার:
ইসলামি সরকারের একটি দায়িত্ব হচ্ছে, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা। এর মধ্যে নারী অধিকারও রয়েছে। শিক্ষা, কর্ম, মালিকানা, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাবলম্বী হওয়ার অধিকারসহ সকল মৌলিক অধিকার ইসলাম নারীকে দিয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষ সময়ে প্রদত্ত উপদেশসমূহের একটিতে নারীর সাথে সদাচরণ করার আদেশ করেছেন।
দখলদারিত্বের ফলে আফগান নারীদেরকে নিজেদের অধিকারের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিগত ঊনিশ বছরে আফগানিস্তান বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থসাহায্য পেয়েছে। এরপরও স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে নারী ও শিশুদেরকে বহুবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দখলদারিত্বের ছত্রছায়ায় তারা যে কাজটি সফলভাবে করেছে তা হচ্ছে, নারী অধিকারের নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অনৈতিকতা ও ইসলাম বিরোধী সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। আফগান মূল্যবোধকে অবজ্ঞা করার এবং এর প্রতি আফগান নারীদেরকে বীতশ্রদ্ধ করার বিষয়টি নারী অধিকারের নামে সমাজের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বিগত দুই যুগে হাজার হাজার নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ইসলামি ইমারাহর শাসনামলে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নারী অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলামি ইমারাহর রয়েছে স্বচ্ছ ও সর্বজনীন নীতিমালা। তাতে ইসলাম ও আফগান মূল্যবোধের আলোকে নারী অধিকার এমনভাবে সুরক্ষিত হয়েছে যে, নারী তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না এবং ইসলাম ও আফগান মূল্যবোধ অক্ষত থাকবে। নারীর বিরুদ্ধে সকল অনৈতিক প্রথা ও রীতিনীতি থেকে নারীকে উদ্ধার করতে ইসলামি ইমারাহ বদ্ধপরিকর।
তারুণ্যের অপরিহার্যতা:
তরুণরা প্রতিটি সমাজের অমূল্য সম্পদ। আফগান জনগণের অর্ধেকই হচ্ছে তরুণ। ইসলামি ইমারাহর কর্মকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে বরাবরের মতো তরুণরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইসলামি ইমারাহ বিশ্বাস করে, আফগান যুবকদেরকে যথাযথভাবে পরিচর্যা করা গেলে তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যুবকদেরকে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ইসলামি ইমারাহর গুরুদায়িত্ব।
মিডিয়া ও বাকস্বাধীনতা:
ইতিবাচকভাবে জনমতকে চিত্রায়িত করা, গঠনমূলক সমালোচনা করা, বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা ইসলামি ইমারাহর নীতি। ইসলামি ইমারাহ মিডিয়াকে অপরিহার্য মনে করে এবং এটিকে সমাজ সংস্কার, সচেতনতা সৃষ্টি ও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে অপরিহার্য মনে করে। তবে বাকস্বাধীনতাকে ইসলামি মূলনীতি ও জাতীয় স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক বানানো যাবে না।
মাদকাসক্তি:
ইসলামি ইমারাহর শাসনামলে পপি চাষ প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। তদ্রূপ মাদকাসক্তের হারও ছিল জিরো পার্সেন্টের কাছাকাছি। কিন্তু দীর্ঘ দখলদারিত্বের ফলে এখন চার মিলিয়ন আফগান মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে বহু সংখ্যক নারী ও শিশু রয়েছে।
ইসলামি ইমারাহ পপিচাষ, এর ব্যবহার এবং মাদক চোরাচালানের মূলোৎপাটন চায়। পর্যায়ক্রমে পপি চাষ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে এবং আন্তর্জাতিক সমাজ ও সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে জীবিকার বিকল্প পথ বেছে নেয়া হবে।
পররাষ্ট্রনীতি:
১/ রাজনৈতিক সম্পর্ক:
দেশের স্বার্থে ইসলামি ইমারাহ অন্যান্য দেশের সাথে বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহের সাথে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। নেতিবাচক আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে ইতিবাচক ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের উপর জোর দিতে চায়।
ইসলামি ইমারাহর কোন বিদেশি এজেন্ডা নেই। অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা আমাদের নীতি নয় এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্যদেরকে নাক গলানোর সুযোগ দেবো না। আফগানিস্তানের মাটি পার্শ্ববর্তী দেশসহ অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে দেয়া হবে না।
ইসলামি মূলনীতি ও জাতীয় স্বার্থের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে ইসলামি ইমারাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা চাই না যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আঞ্চলিক ও অন্যান্য দেশের অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পরিণত হোক। আমরা স্বাধীন, স্বনির্ভর আফগানিস্তান চাই। আমরা চাই ইসলামি দেশসমূহ-সহ সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক।
২/ অর্থনৈতিক সম্পর্ক:
আফগানিস্তান বিদেশি বিনিয়োগ চায় এবং এর জন্য দেশটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিয়োগের জন্য খুবই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ দেশটি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ইসলামি ইমারাহ প্রতিটি আঞ্চলিক রাষ্ট্রের সাথে সুদৃঢ় বাণিজ্য সম্পর্ক চায়।
৩/ মানবিক সাহায্য ও মানবিক সম্পর্ক:
মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী দেশসমূহ, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক এনজিও, ব্যবসায়ী এবং মানবিক সংস্থাসমূহের নিরাপত্তার বিষয়ে ইসলামি ইমারাহ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইসলামি ইমারাহ এসকল ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পরিস্থিতির শিকার আফগান জনগণের সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। আক্ষেপের সাথে বলতে হচ্ছে, দেশ ও জাতির নামে কাবুল সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থসাহায্য পেয়েছে। কিন্তু অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির কারণে তা অভাবী মানুষের হাতে পৌঁছেনি। আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য সংস্থাসমূহকে অনুরোধ করা যাচ্ছে, তারা যেন ইসলামি ইমারাহর সাথে সমন্বয় করে স্বচ্ছ ও যথাযথ পন্থায় আফগান জনগণের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।
স্বাস্থ্যসেবা:
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইসলামি ইমারাহর বিশেষ কমিশন রয়েছে। ইসলামি ইমারাহর অধীনে স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবকরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন। ইসলামি ইমারাহ নিজের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলসমূহে হাসপাতাল নির্মাণ ও মেডিকেল পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ICRC , ইমার্জেন্সি ও MSF এর মতো বেশ কয়েকটি এনজিও-র সাথে কাজ করছে।
ইসলামি ইমারাহ সকল মুজাহিদকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বিধানের আদেশ করেছে। ইসলামি ইমারাহ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাসমূহের প্রতি আবারো আহ্বান জানাচ্ছে, তারা যেন মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের স্থান থেকে সমভাবে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসেন।
পরিশেষে আবারো বলছি, ইসলামি ইমারাহ যেকোনো মূল্যে দোহা চুক্তির আলোকে আন্ত-আফগান সংলাপ চালিয়ে যেতে চায়। ইসলামি ইমারাহ বিশ্বাস করে, আফগান সংকট নিরসনে দোহা চুক্তি একটি যৌক্তিক সমাধান আনতে সক্ষম। সকল পক্ষের উচিত চুক্তি মেনে চলা।
উক্ত কনফারেন্সের আয়োজকবৃন্দ, এবং এতক্ষণ যারা ধৈর্যসহ আমাদের মতামত শুনেছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করছি।
স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানের জন্য রইল শুভকামনা।
Comment