আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“গাজার পয়গাম
উম্মাহর জাগরণ ও উম্মাহর জিহাদের যুগান্তকারী বাঁক” ।।
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || শেষ পর্ব
===================
“গাজার পয়গাম
উম্মাহর জাগরণ ও উম্মাহর জিহাদের যুগান্তকারী বাঁক” ।।
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || শেষ পর্ব
===================
সম্মানিত ঈমানদার ভাই ও বোনেরা!
বর্তমান পরিস্থিতির চরম বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো সারা বিশ্বের মুসলিমদের সামনে বন্ধু-শত্রুর মাঝে পার্থক্য করে দিয়েছে। রক্ত পিপাসু নেকড়েদের শরীর থেকে নেকড়ের চামড়া তুলে নিয়েছে। ঈমানদারদের প্রতিশোধ ও জিহাদের জযবা জাগিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে মানবতার দুশমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত করেছে।
গাজায় সংঘটিত এই 'কিয়ামতে সুগরা' ইজ্জত ও সম্মানের আলামত। যা আমাদের শিশু, মা, বোন ও ভাইদের উপর ভয়ঙ্কর বোমা বর্ষণের আকারে নেমে এসেছে। এর এক একটি দৃশ্য, এক একটি মুহূর্ত এবং সেখান থেকে ভেসে আসা এক একটি চিৎকার... প্রত্যেক হৃদয়বান ব্যক্তির হৃদয়কে গভীর থেকে আক্রান্ত করেছে।
দেখুন, এই যুদ্ধ এবং যে গতিতে তা চলমান আছে, এতে তার বার্তা পূর্বের তুলনায় অনেক স্পষ্ট, অনেক দৃঢ় ও মজবুত। মুসলিমরা তো দেখছেই, কাফেররাও যদি অপসংস্কৃতির চশমা খুলে ফেলে, তবে সেও খুব সহজেই জালেম ও মাজলুম, মুসলিমদের বন্ধু ও শত্রুদেরকে স্পষ্ট দেখতে পাবে। আজ পুরো বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে - কোনটা ইনসাফ আর কোনটা জুলুম? কোনটা মানবাধিকার আর কোনটা মানবাধিকারের নামে মানুষের অধিকার হরণ? কে জুলুম ও জালেমের পক্ষে অবস্থান করে সরাসরি কিংবা অপ্রকাশ্যে যুদ্ধ করছে, আর কে সত্য ও ন্যায়ের ঝাণ্ডাধারী হয়ে জুলুম ও অবাধ্যতার বিরুদ্ধে একাকী নিজের জান ও সন্তানকে কুরবানী করছে?
আমার প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! বিশেষ করে ঈমানের জযবায় উজ্জীবিত যুবক ভাইয়েরা!
প্রভাত যখন এতই স্পষ্ট, তখন মানুষে মানুষে, বরং খ্রিস্টানদের ছদ্মবেশে লুকায়িত রক্ত পিপাসু নেকড়েদেরকে পার্থক্য করা সহজ হয়ে গেছে। রহমানের বান্দা ও শয়তানের বান্দাদের পরিচয়ও আগের তুলনায় অনেক স্পষ্ট হয়ে গেছে। এই ঘটনা তাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ,যাদের দিলে আল্লাহর ভয় আছে। মুমিন বিশ্বাস করে যে, তাকে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের সামনে দাঁড়াতে হবে। অধিকাংশ মুসলিম জানে যে, আজ মাজলুম উম্মাহ যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই অবস্থায় প্রত্যেক আকেল, বালেগ ও সুস্থ মুসলিমদের উপর জিহাদ ফরয। তারা আরও জানে, ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরয হল এই জিহাদ। এই বুঝমান মুসলিমদের কাছে এটাও স্পষ্ট যে, ইসলামী জগতের প্রাণকেন্দ্র থেকে ভেসে আসা এই চিৎকার, এই বেদনাদায়ক দৃশ্য এবং গাজা থেকে আসা ভয়ঙ্কর খবরাখবর, এগুলো মূলত তারই ঈমান ও ইসলামের পরীক্ষা নিচ্ছে।
আমারই পরীক্ষা চলছে যে, এগুলো দেখার পর আমি চোখের উপর প্রতারণাপূর্ণ জিন্দেগির পর্দা দিয়ে রাখি কিনা? আমি দুনিয়া পূজায় লিপ্ত হয়ে, দুনিয়ার ভালোবাসার মোহে পড়ে এই তুচ্ছ ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে আমার জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছি কিনা? না দুনিয়াকে তার চেয়েও উত্তম, বরং সর্বোত্তম লক্ষ্যের জন্য কুরবানী করে আল্লাহর থেকে চিরস্থায়ী জান্নাত কিনে নিতে প্রস্তুত? এটাই পরীক্ষা।
আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল মুমিন বান্দা থেকে এই পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। এটাই আল্লাহর সুন্নাহ। পরীক্ষার এই পুলসিরাত অতিক্রম না করে জান্নাতে যাওয়া যায় না। তা অতিক্রম করতে হবে এবং এই অতল গহ্বরের উপর দিয়ে মর্যাদার পরীক্ষা দিয়েই সফলতা অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ
অর্থ: “(হে মুসলিমগণ!) তোমরা কি মনে করেছো যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ তাআলা তোমাদের মধ্য থেকে ঐ লোকদেরকে এখনও জেনে নেন নাই (স্পষ্ট করেন নাই), যারা তাঁর রাস্তায় জিহাদ করে এবং যারা (তাঁর রাস্তায় সুদৃঢ় থেকে) ধৈর্য ধারণ করে।” (সূরা আলে ইমরান ০৩ : ১৪২)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّىٰ نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ ﴿٣١﴾
অর্থ: (হে মুসলিমগণ!) আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো, যাতে দেখে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল এবং যাতে তোমাদের অবস্থাদি যাচাই করে নিতে পারি।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ৩১)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ ﴿٢١٤﴾
অর্থ: “(হে মুসলিমগণ!) তোমরা কি মনে করেছো, তোমরা জান্নাতে (এমনিতেই) প্রবেশ করবে, অথচ এখনও পর্যন্ত তোমাদের উপর সেই রকম অবস্থা আসেনি, যেমনটা এসেছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্ট এবং তাদেরকে করা হয়েছিল প্রকম্পিত, এমনকি রাসূল এবং তাঁর ঈমানদার সঙ্গীগণ বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহয্য কখন আসবে? মনে রেখ, আল্লাহর সাহয্য নিকটেই।” (সূরা বাকারা ০২: ২১৪)
অবস্থা যখন এমনই, তখন এই বাস্তবতাকে বুঝতে ও মেনে নিতে আর কীসের বাঁধা?
চলমান এই পরিস্থিতি, জালেম ও মাজলুমের টানাপোড়ন, কল্যাণ ও অকল্যাণের যুদ্ধ, জালেমের জুলুম ও জুলুমের নির্লজ্জতা, পশুত্ব ও শয়তানি, অপর দিকে মাজলুমদের অসহায়ত্ব, অক্ষমতা ও আর্তচিৎকার, সাহায্য ও সহযোগিতার আর্তনাদ - এসব অনর্থক নয়। এগুলোতে নিহিত আছে আমারই সফলতা কিংবা ব্যর্থতা। এরই মাধ্যমে ফায়সালা হবে আমার সাওয়াব কিংবা আযাবের। এটা আমার পরীক্ষা। এই সবের মাধ্যমে হয় আমার জান্নাত, না হয় (আল্লাহ মাফ করুক) ভিন্ন পরিণামের ফায়সালা হবে।
মোবাইল ও টিভির পর্দায় যেসব খবর আসছে, এগুলো শুধু খবরই নয়, এগুলোকে এক একটি বার্তা ও এক একটি আদেশ। এসব খবর এই অনুভূতি সৃষ্টি করে যে, এরা সবাই আমাকেই বলছে। এসব কিছু আমার জাগরণ, অগ্রগতি এবং আমাকেই উঠে দাঁড়ানোর জন্য আমার অন্তরে হাতুড়ি আঘাত করছে। এরা আমাকেই ডাকছে, আমি যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার মুহাব্বতের চাদর ছুড়ে ফেলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর ইবাদাতের জন্য নিজের জান-মালকে কুরবান করাকেই নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে নেই। এগুলো আমাকেই তৈরি করতে চাচ্ছে। আমি যেন সংকল্পের সাথে উঠে দাঁড়াই, হক ও হকপন্থিদের সাথি হই। দাজ্জালের বাহিনী তথা শয়তানের দলের মোকাবেলায় আল্লাহর বাহিনীর সৈনিক হই। দুনিয়া ও আখিরাতে নিজেকে সেই সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করি, যাদের পরিণতি হবে ইজ্জত, সম্মান, বিজয় ও সাফল্য। জিল্লত, লাঞ্ছনা, পরাজয় ও বরবাদি তাদের পরিণতি নয়।
এই উম্মত বন্ধ্যা নয়। এরা রাসূলে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত। এদের মাঝে এখনও এমন যুবক জন্ম নেয়, যাদের বক্ষে ঈমান ওয়ালা হৃদয় স্পন্দিত হয়। তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে দুনিয়ার চাকচিক্য এখনও নষ্ট করতে পারেনি। তারা আসল-নকল এবং ক্ষণস্থায়ী-চিরস্থায়ী নেয়ামতের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করা এখন কঠিন কিছু নয়।
আমরা আল্লাহর কাছে আশাবাদী, আজকের এই পরিস্থিতিতে উম্মাহর অনুভূতিশীল নওজোয়ানরা এভাবেই চিন্তা করবে। এভাবেই নিজেদের হিসাব করবে, এই গন্তব্যে চলার জন্যই পথ খুঁজবে। আর যখন এমনটি হবে, তখন আমরা আরও আশাবাদী যে, ইসলামী ইতিহাসের এই বাঁকটি পুরো উম্মাহর জাগরণের বাঁকে পরিণত হবে। এই স্তরটি উম্মতে মুসলিমার হেফাযতকারী মুজাহিদগণের জন্য সঠিক পথে অগ্রসর হওয়া এবং একটি সার্থক ও উদ্দেশ্যমূলক জিহাদ করার জন্য একটি সিদ্ধান্তকর বাঁক হিসেবে প্রমাণিত হবে। ইনশাআল্লাহ।
আমার ঈমানদার ভাই বোনেরা!
'উম্মাহ' ও 'ব্যক্তি' উভয়ের ক্ষেত্রেই সঠিক লক্ষ্য ও সংকল্পের গুরুত্ব - স্বীকৃত বিষয়। লক্ষ্য যদি হীন ও নিচু হয়, তখন পরিণতিও ব্যর্থতা, জিল্লত ও লাঞ্ছনাকর হয়। আর যদি লক্ষ্য উঁচু ও সেরা হয়, কিন্তু তার সাথে চেষ্টা, প্রচেষ্টা, কুরবানী ও আত্মত্যাগ না থাকে, তখন এই লক্ষ্যও অকার্যকর হয়। বরং এটি লক্ষ্যহীনতার এক প্রকার।
এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে ঈমান আনতে চাইলো। তবে সে এই শর্ত করলো যে, আমি সকল আমল করবো। কিন্তু আমাকে জিহাদ থেকে অব্যাহতি দিবেন এবং আমি সাদাকা দিবো না। অর্থাৎ কুরবানী করবো না।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইয়াতের হাত তুলে নেন এবং তাকে বলেন যে,
"فلا جهاد ولا صدقة، فبم تدخل الجنة إذا؟"
“জিহাদ করবে না, সাদাকা দিবে না, তবে জান্নাতে যাবে কিভাবে?”
আজকের পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য এবং আমাদের যুবক ভাইদের জন্য এটাই শিক্ষা, এটাই বার্তা।
বিশ্বাস করুন - ফিলিস্তিনি মুসলিম, ‘তুফানুল আকসা’ এবং গাজার মুসলিমদের এসব গরম খবর - এগুলো শুধু সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কান গরম করার জন্য নয়। এর দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে না আমাদের কোনো ফায়দা হবে, আর না মাজলুম উম্মাহর কোনো ফায়দা হবে? বরং আমরা যদি এই ইচ্ছা ও সংকল্প না করি যে, আমি জিহাদ ও ইস্তিশহাদের পথ অবলম্বন করলাম এবং নিজের জান, মাল, পরিবার ও সন্তান সহ নিজের কাছে যা আছে সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টিতে কুরবান করবো, তবে শুধু এধরনের আলাপ দ্বারা ক্ষতিই হবে।
দুনিয়াতে এখন কি হচ্ছে? মুসলিমদের শত্রু কে? ইসরাঈলের অস্তিত্ব ও তার জান কোন পাখিটির মধ্যে আছে? কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে? কার বিরুদ্ধে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে? কে দুই নম্বর শত্রু? কার ক্ষতি বেশি? যার ক্ষতি বেশি, তাকে অবশ্যই শত্রুর তালিকায় এক নম্বরে রাখতে হবে। এসবই গুরুত্বপূর্ণ কথা। এসব বিষয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ।
কিন্তু এসব কথাও অনর্থক, বেকার ও ক্ষতির কারণ হয়ে যাবে, যদি আমরা প্রত্যেকেই অগ্রসর হওয়ার, জিহাদ করার, কুরবানী দেয়ার ইচ্ছা ও সংকল্প না করি।
ইচ্ছা ও সংকল্প যদি সত্য দিল থেকে না হয়, তবেই বিপদ । যদি কাপুরুষতা, কৃপণতা এবং দুনিয়ার মুহাব্বতে আমাদের অন্তরে জং ধরে যায়, তবে আমাদের জানা শুনা যতই বাড়ুক, এরিস্টটল ও সক্রেটিসের বিজ্ঞান এবং জ্ঞানের বোঝা আমাদের মাথায় যতই ভারি হোক - আমাদের জিল্লতি, লাঞ্ছনা এবং আমাদের উপর থেকে জুলুম দূর করার ব্যাপারে এগুলো কোনও কাজে আসবে না। বরং আমাদের জ্ঞান, আমাদের সংখ্যা, আমাদের অস্ত্র এবং আমাদের টেকনোলজি - মৃতপ্রায় উম্মাহর জন্য গোলামী ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। এই সব নেয়ামত আল্লাহর দরবারেও আমাদের জন্য আযাবের কারণ হবে।
এটা আমাদের ‘ওয়াহান’। এক উম্মত হিসেবে তা(আমাদের দুনিয়ার প্রত ভালোবাসার ফলাফল) আজ গাজায় আমাদের মা-বোনদের উপর ফসফরাস বোমার আকারে নেমে আসছে। যদি এই ‘ওয়াহান’ না থাকতো, দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুর ভয় না থাকতো, তবে আল্লাহর কসম, মানব ইতিহাসের নিকৃষ্ট ও কাপুরুষ জাতি, বানর ও শুকরের সন্তানেরা আজ এত সাহসী হতে পারতো না। আজ তারা আমাদের মুজাহিদ মা-বোনদের উপর এবং সিংহের চেয়েও সাহসী মুজাহিদদের উপর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। মাত্র কয়েক দিনেই তাদের উপর দশ হাজারেরও বেশি বোমা বর্ষণ করেছে। তাদের বাড়ি-ঘর, মাদরাসা ও হাসপাতালগুলোকে ধ্বংসাবশেষে পরিণত করেছে। খাদ্য, ঔষধ, বিদ্যুৎ ও পানির মতো জরুরি জীবনোপকরণ তাদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।
এখন জরুরি হল - গাজাবাসী আমাদেরকে যে সবক দিয়েছে, জীবন মৃত্যুর যে পরিচয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছে, ইজ্জত ও সম্মানের যে রাস্তা আমাদেরকে দেখিয়েছে - আমাদের দিল ও জান দিয়ে তা কবুল করে নেয়া। এই পথেই অগ্রসর হওয়া এবং এটাকে মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মনে করা।
এই অধ্যায়ে আপনি দুই তাঁবুর যেকোনো একটাতে থাকবেন। উম্মাহর মুজাহিদগণ এখন শত্রুদের ব্লক, ফ্রন্ট ও চেম্বারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উম্মাহর উপর বয়ে যাওয়া প্রত্যেকটি জুলুমের এক একটি করে হিসাব নিচ্ছে। আমরা যদি এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারি, তবে আমরা দামি হয়ে যাবো। আমাদের জীবনের মূল্য ও আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আল্লাহর কাছে বেড়ে যাবে। উম্মাহর জীবনের এই মূল্যবান সময়ে, আমরা আমাদের ভাগ্য ও তাকদীরকে নিজেদের হাতে নষ্ট করে, নিজেকে নিজে ধ্বংস করবো না ইনশা আল্লাহ।
এতটুকুই কথা। অন্তরে ব্যথা ছিল, তা আপনাদের সামনে পেশ করলাম। মূল প্রশ্ন তো স্বয়ং আমাদের উপরেই। আমাদের ইচ্ছা করা, উঠে দাঁড়ানো, অগ্রসর হওয়া, জিহাদ ও ইস্তিশহাদের জন্য নিজেকে নিজে তৈরি করার উপর। ব্যক্তি ও উম্মাহর আন্দোলন এবং তাদের তাকদীরের ভালো মন্দের ব্যাপারে এটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এটাই সফলতার মূল ভিত্তি।
বাকি রইলো, ‘তুফানুল আকসা’ এবং তার পরে গাজায় ধারাবাহিক যুদ্ধ কি কি বার্তা আপনার অন্তরে উদয় করে? মুজাহিদ উম্মতের সামনে জিহাদের কোন পথ স্পষ্ট করে? এমন কোন শত্রু আছে যারা এই যুদ্ধে পুনরায় স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে যে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়া এবং তাদেরকে ধ্বংস করা ছাড়া আকসার বিজয় অর্জন করা সম্ভব নয়? এই যুদ্ধে আমাদের শাসক ও সেনাবাহিনীর কি ভূমিকা রয়েছে? এই যুদ্ধ বিশ্বনেতাদের চরিত্রের মুখোশ কীভাবে খুলে দিয়েছে? আকসাকে পুনরুদ্ধার করার এবং মুসলিম উম্মাহকে মুক্ত করার এই জিহাদ উম্মত হিসেবে আমার কাছে কি কামনা করে? আল্লাহ আমাকে তাওফীক ও সুযোগ দান করুন, আগামীতে যেন এই বিষয়ে আলোচনা করতে পারি।
আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন গাজায় অবরুদ্ধ আমাদের মা-বোন, ভাই ও বাচ্চাদেরকে সাহায্য করেন। তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফীক দেন।
হে আল্লাহ! হামাস মুজাহিদদের এবং আমাদের অন্যান্য ভাইয়ের কদম দৃঢ় করুন। তাঁদের ঈমান বাড়িয়ে দিন। প্রত্যেকটি পদে পদে তাঁদেরকে রাহনুমায়ি করুন। তাঁদের শত্রুদের অন্তরে তাঁদের ভয় ঢুকিয়ে দিন। তাঁদের হাতে শত্রুদেরকে অপদস্থ ও ধ্বংস করুন।
ইয়া আল্লাহ! উম্মাহর মুজাহিদগণকে তাওফীক দান করুন। তাঁদের জন্য পথ খুলে দিন। তাঁরা যেন মাজলুম গাজাবাসীকে মদদ ও নুসরত করতে পারে এবং ইহুদী ও খ্রিস্টান সৈন্যদের উপর আবাবীল হয়ে তাদেরকে নিঃশেষ করে দিতে পারে।
ইয়া আল্লাহ!আমাদের অন্তর থেকে ‘ওয়াহান’ এর রোগ দূর করে দিন। শাহাদাতের ভালোবাসা, আপনার ভালোবাসা এবং আপনার জান্নাতের ভালোবাসাকে অন্য সবকিছুর ভালোবাসা থেকে বৃদ্ধি করে দেন।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছেই প্রার্থনা করছি,আমাদেরকে আপনার দীনের বিজয় এবং উম্মতে মুহাম্মাদির সাহায্যের কাজে ব্যবহার করুন। এই পথে আমাদের রক্ত প্রবাহিত করুন। আমাদের রক্ত কবুল করুন। আমাদের জান এই কাজে কবুল করুন। আমরা যেন রোজ হাশরে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে লজ্জিত না হই। আমীন, ইয়া রব্বাল আলামীন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله الكريم!
আরও পড়ুন
১ম পর্ব
Comment