|| আমাদের নিহতরা তো জান্নাতে! ||
.
উ'হু'দে'র যু*দ্ধে মুসলিম বাহিনীর বাহ্যিক পরাজয়ের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ রক্তাক্ত হয়ে সাহাবাদের মধ্যে ফিরে আসেন। বিশুদ্ধ বর্ণনামতে, সেবার আনসারদের চৌষট্টি জন এবং মুহাজিরদের মধ্যে ছয়জন অর্থাৎ, মোট সত্তরজন সাহাবি শহীদ হন। রদিয়াল্লাহু আনহুম। কিন্তু যু*দ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বেঁচে ছিলেন কিনা, মক্কার কুরাইশ কাফিররা তখনও ঠিক জানতো না। সেসময় কুরাইশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আবু সুফিয়ান - যিনি তখনও মুসলিম হননি - আর মুসলিম বাহিনীর পক্ষ থেকে উমার ইবনুল খাত্তাব (রদিয়াল্লাহু আনহু)-এর এক উত্তপ্ত বাকযুদ্ধ হয়ে যায়। ইবনু আব্বাস (রদিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণনায় [১] সেই ঘটনার একটা দৃশ্য আমাদের সামনে ফুটে ওঠে –
.
“... (সেদিন) বিপুল সংখ্যক মুসলিম নিহত হন। (কিন্তু) দিনের শুরুটি ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাদের অনুকূলে। এমনকি (সেসময়) মুশরিকদের সাত বা নয়জন পতাকাবাহী নিহত হয়। মুসলিম সেনারা পাহাড়ের দিকে দৌড়ে যান; কিন্তু ওখানে পৌঁছার আগেই (শুনতে পান) লোকজন বলছে, ‘গুহার কাছে! গুহার কাছে!’ তারা তখন মিহরাসের নিচে। শয়তান চিৎকার করে বলে উঠে, ‘মুহাম্মাদ খতম!’ (ঐ মুহুর্তে) সংবাদটির সত্যতা নিয়ে কেউ কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি। আমাদেরও সন্দেহ হতে থাকে যে তিনি নিহত হয়েছেন।
.
এমন সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ দুই সা'দ এর কাঁধে ভর করে হাজির হন। চলার সময় তিনি একটু সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তেন। এই ভঙ্গি দেখে আমরা তাঁকে চিনতে পারি। তাঁকে দেখে আমরা এতটাই খুশি হই যেন আমাদের কোনো সমস্যাই হয়নি! তিনি ﷺ আমাদের দিকে উঠে আসতে আসতে বলেন, “আল্লাহর ক্রোধ ঐ জাতির বিরুদ্ধে কঠোর রূপ ধারণ করেছে, যারা তাদের রাসূলের চেহারা রক্তাক্ত করেছে।” আরেকবার বলেন, “হে আল্লাহ! আমাদের উপর ওদের বিজয়ী হওয়ার কোনো অধিকার নেই।”
.
এরপর তিনি ﷺ আমাদের কাছে এসে কিছুক্ষণ থাকেন। এরপর আবু সুফিয়ান পাহাড়ের নিচ থেকে চিৎকার করে তার দেবতার নাম বলে উঠে, ‘হুবাল মহান! হুবাল মহান! আবু কাবশার ছেলে (মুহাম্মাদ ﷺ) কোথায়? আবু কুহাফার ছেলে (আবু বকর) কোথায়? খাত্তাবের ছেলে (উমার) কোথায়?’
.
উল্লেখ্য, বুখারি ও আবু দাউদের ভিন্ন আরেকটি বর্ণনায় জানা যায় যে, প্রথমদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাদেরকে কোনো উত্তর দিতে নিষেধ করেছিলেন। আর তাই সেসময় প্রথমে আবু সুফিয়ান কোনো উত্তর না পেয়ে তার সঙ্গীদের দিকে ফিরে বলে ওঠে, ‘এদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে! তোমরা তাদের ভালই প্রতিশোধ নিয়েছো!’ [২] যাহোক, আমরা মূল বর্ণনায় ফিরে যাই –
.
তখন উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কি তার কোনো জবাব দিবো না?”। জবাবে নবী ﷺ বলেন, “অবশ্যই!” এরপর –
.
আবু সুফিয়ান: হুবাল মহান!
.
উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু): আল্লাহ সুমহান! মহিমাময়!
.
আবু সুফিয়ান: ইবনুল খাত্তাব! আমি হুবালের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে এই যুদ্ধে এসেছি! আবু কাবশার ছেলে (মুহাম্মাদ ﷺ) কোথায়? আবু কুহাফার ছেলে (আবু বকর) কোথায়? খাত্তাবের ছেলে (উমার) কোথায়?’
.
উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু): এই যে রাসূলুল্লাহ ﷺ ! এই হলেন আবু বকর, আর এই যে আমি উমার!
.
আবু সুফিয়ান: আজকের এইদিন হলো বদরের সেই দিনের প্রতিশোধের সমান! আর যুদ্ধ তো একটি (চলমান) অমীমাংসিত ব্যাপার, যেখানে উভয়পক্ষই পালাক্রমে বিজয়ী হয়!
.
উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু): এটা সমান সমান নয়! আমাদের নিহতরা তো জান্নাতে! আর তোমাদের নিহতরা জাহান্নামে!
.
আবু সুফিয়ান: এটা কেবল তোমাদের বিশ্বাস। আর এমনটা বাস্তবেই হয়ে থাকলে আমরা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত!
.
.
আজকের আলাপে বর্ণনার প্রাসঙ্গিক অংশ এটুকুই। সুবহানআল্লাহ! সুবহানআল্লাহ! আল্লাহর কসম করে বলছি, ঈমান এবং কুফরের চলমান দ্বন্দ্বে উল্লেখিত এই বাকযুদ্ধে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তার মু*জা-হি/দ আর তাঁদের সমর্থকদের খোরাক রয়েছে। আর জবাব রয়েছে মু*জা-হি/দ'দের মানহাজের বিরোধিতাকারীদের; হোক তারা কাফির, মুসলিম নামধারী মুনাফিক কিংবা জাহিল মুসলিম। ইতিহাসে এমন কতোবারই না হয়েছে – দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহর রাস্তার মু*জা-হি/দ'রা কাফিরদের ওপর কোনো হামলা করেছে। তারপর সেই ঘটনার দোহাই দিয়ে কাফিররা মুসলিমদের ওপরও আগ্রাসন কিংবা ড্রোন হামলা চালিয়েছে। আর তাতে মুসলিমদের জানমালের বাহ্যিক ক্ষয়ক্ষতি দেখেই কতো কাফিররা খুশি হয়ে গেছে, কতো মুনাফিকরা আল্লাহর রাস্তার নববী মানহাজকে বাতিল সাব্যস্ত করতে উদ্যত হয়েছে, আর কতো জাহিল মুসলিমরা আল্লাহর সেনাদলকেই তিরস্কার করে বসেছে। অথচ বাস্তবতা হলো, আমাদের নিহতরা তো জান্নাতে! আর ওদের নিহতরা জাহান্নামে!
.
কাফিরদের কথা তো বাদই দিলাম। ওরা তো আল্লাহর রাস্তার মু*জা-হি/দ'দের দোষ দিবেই। কিন্তু দুঃখজনক হলো মুসলিম উম্মাহর মধ্য থেকেই এসব ব্যাপারে কাফিরদের পক্ষপাতিত্ব করা অভাগাদের কার্যকলাপ। এদের জন্য সত্যিই আফসোস। এদের কথা-কাজে ইসলাম ও ইসলামের মু*জা-হি/দ'দের উপকার তো হয়ই না, তার চেয়ে বরং উল্টোটাই বেশি হয়; সাধারণ মুসলিমরা মু*জা-হি/দ'দের ব্যাপারে বিভ্রান্ত হয়। এবং অবশ্যই তাদেরকে এইসব ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সত্য হলো, এইসমস্ত আলাপ জুড়নেওয়ালাদের কেউ আল্লাহর রাস্তায় জি@হা@দের মানহাজকেই অপছন্দ করে; কেউ আবার জি@হা@দের মানহাজকে মুখে স্বীকৃতি দিলেও এই যুগের মু*জা-হি/দ'দের সমালোচনা করতে গিয়ে এসব বলে, নাহলে যে আবার নিজের ওপর মু*জা-হি/দ'দেরকে যথাসাধ্য সহায়তার ফারজিয়্যাত এড়ানো কষ্ট হয়ে যায়; আর কেউ কেউ স্রেফ নিজের ঘরকুনে স্বভাব লুকিয়ে বিশেষজ্ঞ সাজতেই এসব বলে বেড়ায়।
.
বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে যে বরকতময় ৯/১১ আক্রমণের মাধ্যমে যুগের হুবাল আমেরিকার পতনের শুরু, সেই হামলাকেও মুসলিমদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দোহাই দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। ‘৯/১১ এর কারণে এই হয়েছে, ওই ক্ষতি হয়েছে... আ-ফ-গা-নি-স্তা-নে এত এত সাধারণ মুসলিমের জানমালের ক্ষতি হয়েছে... পুরো দেশটা ধ্বংস হয়ে গেছে... সবই ৯/১১ এর কারণে হয়েছে। মু*জা-হি/দ'রা যদি ওই আক্রমণটাই না করতো, তাহলে তো কাফিররা আক্রমণ করতো না... ইত্যাদি ইত্যাদি।’
.
জবাবে আমরা বলি, আরও আগের কয়েক দশক ধরেই তো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল; আরও অনেক আগে থেকেই তো পবিত্র ভূমিগুলো কাফিরদের আগ্রাসনের স্বীকার হচ্ছিল; মুসলিমদের দ্বীন, ইজ্জত আর জানমালকে তুচ্ছজ্ঞান করা হচ্ছিল। ইরাকে কয়েক লক্ষ শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল। আর এই সবকিছুই তো ছিল বরকতময় মানহ্যাটান রেইডের আগেই! জবাবে আমরা বলি, পরবর্তীতে যখন ডব্লিউ.এম.ডি. [৩] এর মিথ্যা বাহানা দিয়ে গোটা ইরাককে ধ্বংস করা হলো, তখনও তো কাফিরদের ওজর ৯/১১ ছিল না। আর এটা প্রমাণ করে দেয় যে, মুসলিমদের ওপর আগ্রাসনের জন্য ওদের কোনো সত্য ওজর লাগে না।
.
জবাবে আমরা বলি, ৯/১১ এর বরকতময় হামলার ফলে আমেরিকা আর তার মিত্র কাফিরদের হওয়া ক্ষতির দায় (আদতে কৃতিত্ব) আ/ল-কা/য়ে/দা/র মু*জা-হি/দ'দের। আর তারপর আ-ফ-গা-নি-স্তা-নে কাফিরদের করা হামলায় মুসলিমদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দায় কাফিরদের। জবাবে আমরা বলি, আল্লাহর ইচ্ছায় ৯/১১ এর জের ধরেই তো দেড় যুগ পরের আ-ফ-গা-নি-স্তা-নে ‘আপোষহীন’ ইসলামি শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এসব ছাড়াও... সমস্তকিছু ছাপিয়ে... জবাবে আমরা বলি, “আমাদের নিহতরা তো জান্নাতে! আর ওদের নিহতরা জাহান্নামে!”
.
وَلَا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ ۖ إِنْ تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ ۖ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
.
“আর তোমরা (শত্রু) কওমকে ধাওয়া করতে দুর্বলতা দেখিয়ো না; যদি তোমরা কষ্ট পেয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের মতো ওরাও তো কষ্ট পায়; আর (বাস্তবতা তো হলো) তোমরা আল্লাহর কাছে এমন কিছুর আশা করো, যা ওরা আশা করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান।” [৪]
.
আবু উবাইদাহ আল-হিন্দি
২ রজব, ১৪৪৫ হিজরি
.
.
টিকা –
.
[১] মুসনাদে আহমাদ, ১/২৮৭, ২৮৮, ৪৬৩; মুসতাদরাক আল-হাকিম ২/২৯৬, ২৯৭, তিনি বলেন, ‘এর ইসনাদটি সহিহ, তবে বুখারি ও মুসলিম এটি উল্লেখ করেননি; যাহাবি তার সাথে একমত।
.
[২] সহিহুল বুখারি, অধ্যায়: যুদ্ধবিগ্রহ, পরিচ্ছেদ: উহুদ যুদ্ধ, হাদিস নং ৪০৪৩; আবু দাউদ, অধ্যায়: জিহাদ, হাদিস নং ২৬৬২ ও অন্যান্য।
.
[৩] WMD এর পূর্ণরূপ Weapons of Mass Destruction। আভিধানিক অর্থ বিরাটাকারে ধ্বংসযজ্ঞ হয় এমন অস্ত্র। সাধারণত পারমাণবিক অস্ত্রকে বোঝানো হয়।
.
[৪] সূরাহ নিসা, ৪: ১০৪
.
উ'হু'দে'র যু*দ্ধে মুসলিম বাহিনীর বাহ্যিক পরাজয়ের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ রক্তাক্ত হয়ে সাহাবাদের মধ্যে ফিরে আসেন। বিশুদ্ধ বর্ণনামতে, সেবার আনসারদের চৌষট্টি জন এবং মুহাজিরদের মধ্যে ছয়জন অর্থাৎ, মোট সত্তরজন সাহাবি শহীদ হন। রদিয়াল্লাহু আনহুম। কিন্তু যু*দ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ বেঁচে ছিলেন কিনা, মক্কার কুরাইশ কাফিররা তখনও ঠিক জানতো না। সেসময় কুরাইশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আবু সুফিয়ান - যিনি তখনও মুসলিম হননি - আর মুসলিম বাহিনীর পক্ষ থেকে উমার ইবনুল খাত্তাব (রদিয়াল্লাহু আনহু)-এর এক উত্তপ্ত বাকযুদ্ধ হয়ে যায়। ইবনু আব্বাস (রদিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণনায় [১] সেই ঘটনার একটা দৃশ্য আমাদের সামনে ফুটে ওঠে –
.
“... (সেদিন) বিপুল সংখ্যক মুসলিম নিহত হন। (কিন্তু) দিনের শুরুটি ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাদের অনুকূলে। এমনকি (সেসময়) মুশরিকদের সাত বা নয়জন পতাকাবাহী নিহত হয়। মুসলিম সেনারা পাহাড়ের দিকে দৌড়ে যান; কিন্তু ওখানে পৌঁছার আগেই (শুনতে পান) লোকজন বলছে, ‘গুহার কাছে! গুহার কাছে!’ তারা তখন মিহরাসের নিচে। শয়তান চিৎকার করে বলে উঠে, ‘মুহাম্মাদ খতম!’ (ঐ মুহুর্তে) সংবাদটির সত্যতা নিয়ে কেউ কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি। আমাদেরও সন্দেহ হতে থাকে যে তিনি নিহত হয়েছেন।
.
এমন সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ দুই সা'দ এর কাঁধে ভর করে হাজির হন। চলার সময় তিনি একটু সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তেন। এই ভঙ্গি দেখে আমরা তাঁকে চিনতে পারি। তাঁকে দেখে আমরা এতটাই খুশি হই যেন আমাদের কোনো সমস্যাই হয়নি! তিনি ﷺ আমাদের দিকে উঠে আসতে আসতে বলেন, “আল্লাহর ক্রোধ ঐ জাতির বিরুদ্ধে কঠোর রূপ ধারণ করেছে, যারা তাদের রাসূলের চেহারা রক্তাক্ত করেছে।” আরেকবার বলেন, “হে আল্লাহ! আমাদের উপর ওদের বিজয়ী হওয়ার কোনো অধিকার নেই।”
.
এরপর তিনি ﷺ আমাদের কাছে এসে কিছুক্ষণ থাকেন। এরপর আবু সুফিয়ান পাহাড়ের নিচ থেকে চিৎকার করে তার দেবতার নাম বলে উঠে, ‘হুবাল মহান! হুবাল মহান! আবু কাবশার ছেলে (মুহাম্মাদ ﷺ) কোথায়? আবু কুহাফার ছেলে (আবু বকর) কোথায়? খাত্তাবের ছেলে (উমার) কোথায়?’
.
উল্লেখ্য, বুখারি ও আবু দাউদের ভিন্ন আরেকটি বর্ণনায় জানা যায় যে, প্রথমদিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাদেরকে কোনো উত্তর দিতে নিষেধ করেছিলেন। আর তাই সেসময় প্রথমে আবু সুফিয়ান কোনো উত্তর না পেয়ে তার সঙ্গীদের দিকে ফিরে বলে ওঠে, ‘এদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে! তোমরা তাদের ভালই প্রতিশোধ নিয়েছো!’ [২] যাহোক, আমরা মূল বর্ণনায় ফিরে যাই –
.
তখন উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কি তার কোনো জবাব দিবো না?”। জবাবে নবী ﷺ বলেন, “অবশ্যই!” এরপর –
.
আবু সুফিয়ান: হুবাল মহান!
.
উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু): আল্লাহ সুমহান! মহিমাময়!
.
আবু সুফিয়ান: ইবনুল খাত্তাব! আমি হুবালের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে এই যুদ্ধে এসেছি! আবু কাবশার ছেলে (মুহাম্মাদ ﷺ) কোথায়? আবু কুহাফার ছেলে (আবু বকর) কোথায়? খাত্তাবের ছেলে (উমার) কোথায়?’
.
উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু): এই যে রাসূলুল্লাহ ﷺ ! এই হলেন আবু বকর, আর এই যে আমি উমার!
.
আবু সুফিয়ান: আজকের এইদিন হলো বদরের সেই দিনের প্রতিশোধের সমান! আর যুদ্ধ তো একটি (চলমান) অমীমাংসিত ব্যাপার, যেখানে উভয়পক্ষই পালাক্রমে বিজয়ী হয়!
.
উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু): এটা সমান সমান নয়! আমাদের নিহতরা তো জান্নাতে! আর তোমাদের নিহতরা জাহান্নামে!
.
আবু সুফিয়ান: এটা কেবল তোমাদের বিশ্বাস। আর এমনটা বাস্তবেই হয়ে থাকলে আমরা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত!
.
.
আজকের আলাপে বর্ণনার প্রাসঙ্গিক অংশ এটুকুই। সুবহানআল্লাহ! সুবহানআল্লাহ! আল্লাহর কসম করে বলছি, ঈমান এবং কুফরের চলমান দ্বন্দ্বে উল্লেখিত এই বাকযুদ্ধে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তার মু*জা-হি/দ আর তাঁদের সমর্থকদের খোরাক রয়েছে। আর জবাব রয়েছে মু*জা-হি/দ'দের মানহাজের বিরোধিতাকারীদের; হোক তারা কাফির, মুসলিম নামধারী মুনাফিক কিংবা জাহিল মুসলিম। ইতিহাসে এমন কতোবারই না হয়েছে – দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহর রাস্তার মু*জা-হি/দ'রা কাফিরদের ওপর কোনো হামলা করেছে। তারপর সেই ঘটনার দোহাই দিয়ে কাফিররা মুসলিমদের ওপরও আগ্রাসন কিংবা ড্রোন হামলা চালিয়েছে। আর তাতে মুসলিমদের জানমালের বাহ্যিক ক্ষয়ক্ষতি দেখেই কতো কাফিররা খুশি হয়ে গেছে, কতো মুনাফিকরা আল্লাহর রাস্তার নববী মানহাজকে বাতিল সাব্যস্ত করতে উদ্যত হয়েছে, আর কতো জাহিল মুসলিমরা আল্লাহর সেনাদলকেই তিরস্কার করে বসেছে। অথচ বাস্তবতা হলো, আমাদের নিহতরা তো জান্নাতে! আর ওদের নিহতরা জাহান্নামে!
.
কাফিরদের কথা তো বাদই দিলাম। ওরা তো আল্লাহর রাস্তার মু*জা-হি/দ'দের দোষ দিবেই। কিন্তু দুঃখজনক হলো মুসলিম উম্মাহর মধ্য থেকেই এসব ব্যাপারে কাফিরদের পক্ষপাতিত্ব করা অভাগাদের কার্যকলাপ। এদের জন্য সত্যিই আফসোস। এদের কথা-কাজে ইসলাম ও ইসলামের মু*জা-হি/দ'দের উপকার তো হয়ই না, তার চেয়ে বরং উল্টোটাই বেশি হয়; সাধারণ মুসলিমরা মু*জা-হি/দ'দের ব্যাপারে বিভ্রান্ত হয়। এবং অবশ্যই তাদেরকে এইসব ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সত্য হলো, এইসমস্ত আলাপ জুড়নেওয়ালাদের কেউ আল্লাহর রাস্তায় জি@হা@দের মানহাজকেই অপছন্দ করে; কেউ আবার জি@হা@দের মানহাজকে মুখে স্বীকৃতি দিলেও এই যুগের মু*জা-হি/দ'দের সমালোচনা করতে গিয়ে এসব বলে, নাহলে যে আবার নিজের ওপর মু*জা-হি/দ'দেরকে যথাসাধ্য সহায়তার ফারজিয়্যাত এড়ানো কষ্ট হয়ে যায়; আর কেউ কেউ স্রেফ নিজের ঘরকুনে স্বভাব লুকিয়ে বিশেষজ্ঞ সাজতেই এসব বলে বেড়ায়।
.
বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে যে বরকতময় ৯/১১ আক্রমণের মাধ্যমে যুগের হুবাল আমেরিকার পতনের শুরু, সেই হামলাকেও মুসলিমদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দোহাই দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। ‘৯/১১ এর কারণে এই হয়েছে, ওই ক্ষতি হয়েছে... আ-ফ-গা-নি-স্তা-নে এত এত সাধারণ মুসলিমের জানমালের ক্ষতি হয়েছে... পুরো দেশটা ধ্বংস হয়ে গেছে... সবই ৯/১১ এর কারণে হয়েছে। মু*জা-হি/দ'রা যদি ওই আক্রমণটাই না করতো, তাহলে তো কাফিররা আক্রমণ করতো না... ইত্যাদি ইত্যাদি।’
.
জবাবে আমরা বলি, আরও আগের কয়েক দশক ধরেই তো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল; আরও অনেক আগে থেকেই তো পবিত্র ভূমিগুলো কাফিরদের আগ্রাসনের স্বীকার হচ্ছিল; মুসলিমদের দ্বীন, ইজ্জত আর জানমালকে তুচ্ছজ্ঞান করা হচ্ছিল। ইরাকে কয়েক লক্ষ শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল। আর এই সবকিছুই তো ছিল বরকতময় মানহ্যাটান রেইডের আগেই! জবাবে আমরা বলি, পরবর্তীতে যখন ডব্লিউ.এম.ডি. [৩] এর মিথ্যা বাহানা দিয়ে গোটা ইরাককে ধ্বংস করা হলো, তখনও তো কাফিরদের ওজর ৯/১১ ছিল না। আর এটা প্রমাণ করে দেয় যে, মুসলিমদের ওপর আগ্রাসনের জন্য ওদের কোনো সত্য ওজর লাগে না।
.
জবাবে আমরা বলি, ৯/১১ এর বরকতময় হামলার ফলে আমেরিকা আর তার মিত্র কাফিরদের হওয়া ক্ষতির দায় (আদতে কৃতিত্ব) আ/ল-কা/য়ে/দা/র মু*জা-হি/দ'দের। আর তারপর আ-ফ-গা-নি-স্তা-নে কাফিরদের করা হামলায় মুসলিমদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দায় কাফিরদের। জবাবে আমরা বলি, আল্লাহর ইচ্ছায় ৯/১১ এর জের ধরেই তো দেড় যুগ পরের আ-ফ-গা-নি-স্তা-নে ‘আপোষহীন’ ইসলামি শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এসব ছাড়াও... সমস্তকিছু ছাপিয়ে... জবাবে আমরা বলি, “আমাদের নিহতরা তো জান্নাতে! আর ওদের নিহতরা জাহান্নামে!”
.
وَلَا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ ۖ إِنْ تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ ۖ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
.
“আর তোমরা (শত্রু) কওমকে ধাওয়া করতে দুর্বলতা দেখিয়ো না; যদি তোমরা কষ্ট পেয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের মতো ওরাও তো কষ্ট পায়; আর (বাস্তবতা তো হলো) তোমরা আল্লাহর কাছে এমন কিছুর আশা করো, যা ওরা আশা করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান।” [৪]
.
আবু উবাইদাহ আল-হিন্দি
২ রজব, ১৪৪৫ হিজরি
.
.
টিকা –
.
[১] মুসনাদে আহমাদ, ১/২৮৭, ২৮৮, ৪৬৩; মুসতাদরাক আল-হাকিম ২/২৯৬, ২৯৭, তিনি বলেন, ‘এর ইসনাদটি সহিহ, তবে বুখারি ও মুসলিম এটি উল্লেখ করেননি; যাহাবি তার সাথে একমত।
.
[২] সহিহুল বুখারি, অধ্যায়: যুদ্ধবিগ্রহ, পরিচ্ছেদ: উহুদ যুদ্ধ, হাদিস নং ৪০৪৩; আবু দাউদ, অধ্যায়: জিহাদ, হাদিস নং ২৬৬২ ও অন্যান্য।
.
[৩] WMD এর পূর্ণরূপ Weapons of Mass Destruction। আভিধানিক অর্থ বিরাটাকারে ধ্বংসযজ্ঞ হয় এমন অস্ত্র। সাধারণত পারমাণবিক অস্ত্রকে বোঝানো হয়।
.
[৪] সূরাহ নিসা, ৪: ১০৪
Comment