Announcement

Collapse
No announcement yet.

Bengali Translation || আমীরুল মু’মিনীন, শাইখুল কুরআন ওয়াল হাদীস, মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিজাহুল্লাহ) এর পক্ষ থেকে ১৪৪৬ হিজরির পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ‘অভিনন্দন বার্তা’

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • Bengali Translation || আমীরুল মু’মিনীন, শাইখুল কুরআন ওয়াল হাদীস, মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিজাহুল্লাহ) এর পক্ষ থেকে ১৪৪৬ হিজরির পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ‘অভিনন্দন বার্তা’

    مؤسسة الشهداء
    আশ শুহাদা মিডিয়া
    Ash Shuhada Media

    تـُــقدم
    পরিবেশিত
    Presents

    الترجمة البنغالية
    বাংলা অনুবাদ
    Bengali Translation

    بعنوان:
    শিরোনাম:
    Titled:


    من أمير المؤمنين، شيخ القرآن والحديث،
    المولوي هبة الله أخوندزاده (حفظه الله)،
    بمناسبة عيد الأضحى المبارك لعام 1446 ه،
    "رسالة تهنئة"

    আমীরুল মু’মিনীন, শাইখুল কুরআন ওয়াল হাদীস,
    মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিজাহুল্লাহ) এর পক্ষ থেকে
    ১৪৪৬ হিজরির পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ‘অভিনন্দন বার্তা’

    From the Ameerul Mu’minin, Shaikhul Qur’an Wal Hadith,
    Mawlavi Hibbatullah Akhundzada (Hafizahullah),
    On the occasion of the Blessed Eid-ul-Adha of the year 1446 Hijri,
    A ‘Message of Congratulations’




    روابط بي دي اب
    PDF (456 KB)
    পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৪৫৬ কিলোবাইট]








    روابط ورد
    Word (428 KB)
    ওয়ার্ড [৪২৮ কিলোবাইট]








    روابط الغلاف- ١
    book Banner [1.2 MB]
    বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.২ মেগাবাইট]








    روابط الغلاف- ٢
    Banner [284 KB]
    ব্যানার ডাউনলোড করুন [২৮৪ কিলোবাইট]







    *****


    আমীরুল মু’মিনীন, শাইখুল কুরআন ওয়াল হাদীস, মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিজাহুল্লাহ) এর পক্ষ থেকে ১৪৪৬ হিজরির পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ‘অভিনন্দন বার্তা’


    بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
    اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
    সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ্‌র, যিনি আমাদের পালনকর্তা। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য চাই এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আমাদের নফসের অনিষ্ট ও আমাদের কুকর্ম থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, কেউ তাকে বিপথগামী করতে পারে না। আর যাকে তিনি গোমরাহ করেন, তার জন্য কোনো পথপ্রদর্শক নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল।
    হামদ ও সালাতের পর,
    নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন—
    قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
    অর্থ: “(হে মুহাম্মাদ!) আপনি বলে দিন: নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু — সবই বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।” (সূরা আন-আ‘আম, ১৬২) (তাফসিরে কাবুলি)

    আল্লাহ তাআলা আরও বলেন—
    وَ أَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰہِ... وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
    অর্থ: “তোমরা হজ্ব ও উমরা পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন কর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।... আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি কঠোর।” (সূরা বাকারা, ১৯৬) (তাফসিরে কাবুলি)
    নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুরবানির বাস্তব নিদর্শন তুলে ধরে হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
    ضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ -صلى ﷲ عليه وسلم- بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ ذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ وسَمّى وَكَبّرُ قال: رَأَيْتُهُ وَاضِعًا قَدَمَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا وَيَقُولُ بسم ﷲ وﷲ اکبر، متفق عليه.
    আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি শিংযুক্ত সাদা-কালো মেষ কুরবানি করেন। তিনি নিজ হাতে তাদের জবাই করেন এবং ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির পাঠ করেন। আমি তাঁকে দেখেছি, তিনি পশুগুলোর পার্শ্বদেশে তাঁর পবিত্র পা রাখলেন এবং বললেন— ‘বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার।’” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
    অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে দুটি শিংযুক্ত কুরবানির পশু জবাই করেন, বিসমিল্লাহ ও তাকবির পাঠ করেন এবং কুরবানির সময় তাঁর পা দিয়ে পশুটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এতে কুরবানির গুরুত্ব ও মর্যাদা স্পষ্ট হয়।
    অন্য এক হাদীসে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
    مَا عَمِلَ آدَمِىٌّ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ إِنَّهَا لَتَأْتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلاَفِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ مِنَ الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا
    নহর দিবসে (ঈদুল আজহার দিনে) বান্দার কোনো আমল আল্লাহর কাছে কুরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এই কুরবানির পশু তার শিং, পশম এবং খুরসহ উপস্থিত হবে। আর এর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। কাজেই আনন্দচিত্তে কুরবানি করো।” (মিশকাতুল মাসাবীহ)
    প্রিয় আফগান মুজাহিদ ভাইয়েরা ও মুসলিম ভাইদের প্রতি!
    আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
    সর্বপ্রথম পবিত্র ঈদুল আজহার এই মহিমান্বিত আগমন উপলক্ষে আমি আপনাদের সকলকে অন্তরের গভীর থেকে মোবারকবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই। আল্লাহ তাআলা যেন আপনাদের ইবাদত, কোরবানি, হজ, সদকা এবং যাবতীয় সৎকর্মগুলো কবুল করে নেন—এই দোয়া করছি।
    এই ত্যাগ ও আনুগত্যের বরকতময় দিনগুলোতে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাদের উপর বহুবিধ নিয়ামত বর্ষণ করেছেন। বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক শাসনব্যবস্থা এবং শান্তি-নিরাপত্তার যে পরিবেশ আজ বিদ্যমান, তা আল্লাহর বড় দয়া। এই সফলতা এসেছে ইসলামী ইমারাহর মাধ্যমে, আমাদের শহিদ ও আহত ভাইদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের বদৌলতে এবং পুরো মুসলিম উম্মাহর দুআর বরকতে। অতএব, এ সব নেয়ামতের জন্য আমাদের উচিত আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা এবং তা আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা।
    প্রিয় ভাইয়েরা, এ সময়টি আমাদের সকলের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ দায়িত্ব পালনের আহ্বান। আমাদের উচিত—এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে শরিয়াহর বিজয়কে আরও সুদৃঢ় করা, ঐক্য ও সহযোগিতার বন্ধনকে মজবুত করা এবং প্রতিটি ব্যক্তি ও নেতা যেন নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে—তা নিশ্চিত করা। গাফলতির কোনো সুযোগ নেই। সময়মতো কাজ করা, একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আচরণ, দায়িত্বের প্রতি সম্মান দেখানো এবং সর্বাগ্রে নিজেদের জীবনেই শরিয়াহ বাস্তবায়নের জন্য সচেষ্ট হওয়া—এটাই প্রতিটি ব্যক্তির কর্তব্য। এরপর অন্যদের মাঝেও শরিয়াহর আহ্বান পৌঁছে দিতে হবে।
    সম্মানিত আলেমগণের দায়িত্ব এখানে সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেন:
    وَ إِذْ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَٰقَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلْكِتَٰبَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُۥ فَنَبَذُوهُ وَرَآءَ ظُهُورِهِمْ وَٱشْتَرَوْاْ بِهِۦ ثَمَنًۭا قَلِيلًۭا ۖ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ
    অনুবাদ: “আর যখন আল্লাহ কিতাবপ্রাপ্তদের নিকট থেকে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, ‘তোমরা অবশ্যই এ (আল্লাহর কিতাব) মানুষদের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে এবং তা গোপন করবে না,’ তখন তারা সে অঙ্গীকারকে পেছনে ফেলে দিল এবং এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করে (এই অঙ্গীকার) বিক্রি করে দিল। কতই না নিকৃষ্ট ছিল তাদের এই কেনাকাটা!” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৭]
    তাফসির: এ আয়াতের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, আহলে কিতাবের কিছু আলেমদের কাছ থেকে আল্লাহ স্পষ্টভাবে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন—তারা যেন আল্লাহর কিতাবের বিধান ও সুসংবাদ গোপন না করে, বিকৃত না করে; বরং সত্য ও নির্ভেজালভাবে তা মানুষদের সামনে তুলে ধরে। কিন্তু তারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী লাভের জন্য এ দায়িত্ব বিস্মৃত হয়ে যায়। তারা কিতাবের শব্দ ও অর্থ উভয়দিক থেকেই বিকৃতি ঘটায় এবং নিজের স্বার্থে ধর্মীয় সত্যকে পরিবর্তন করে ফেলে। এই আয়াতটি মুসলিম উম্মাহর উলামায়ে কেরামের জন্যও একটি সতর্কবাণী যে, তারা যেন দুনিয়ার প্রেমে পড়ে না যান। তারা সর্বদা ও সকল অবস্থায় সৎকাজের আদেশ দেবেন ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবেন এবং কখনও আল্লাহর বিধান মানুষদের থেকে গোপন করবেন না। কারণ রাসূলুল্লাহ বলেছেন: “যে ব্যক্তি জ্ঞান গোপন করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরাবেন।” [তাফসীর কাবুলি]
    একইভাবে, সমাজের প্রভাবশালী নেতা ও প্রবীণদের ওপরও অতি গুরুতর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে—তারা যেন সমাজে আল্লাহর শরিয়তের বিধান বাস্তবায়নে অবিচল থাকে। তারা যেন মানুষের হক আদায় নিশ্চিত করে এবং সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে শৃঙ্খলা বজায় রাখে। যদি এই নেতারা দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তবে পুরো শরিয়ত-ভিত্তিক সমাজব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
    একবার আহমাস গোত্রের যায়নাব নামক এক নারী আবু বকর সিদ্দীক রাযিয়াল্লাহু আনহুর নিকট একটি প্রশ্ন করেন:
    قَالَتْ مَا بَقَاؤُنَا عَلٰى هَذَا الأَمْرِ الصَّالِحِ الَّذِي جَاءَ اللّٰهُ بِهِ بَعْدَ الْجَاهِلِيَّةِ؟ قَالَ: بَقَاؤُكُمْ عَلَيْهِ مَا اسْتَقَامَتْ بِكُمْ أَئِمَّتُكُمْ. قَالَتْ: وَمَا الأَئِمَّةُ؟ قَالَ: أَمَا كَانَ لِقَوْمِكِ رُؤُوسٌ وَأَشْرَافٌ يَأْمُرُونَهُمْ فَيُطِيعُونَهُمْ؟ قَالَتْ: بَلَى. قَالَ: فَهُمْ أُولٰئِكَ عَلَى النَّاسِ.
    জয়নাব জিজ্ঞাসা করেন, “জাহেলিয়াতের যুগের পর আল্লাহ আমাদের যে কল্যাণময় দ্বীন দান করেছেন, আমরা কতদিন এ অবস্থায় টিকে থাকব?” তিনি উত্তরে বলেন, “যতদিন তোমাদের নেতারা দ্বীনের ওপর দৃঢ় থাকবেন, ততদিন তোমরাও এই কল্যাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।”

    তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “এই নেতারা কারা?” আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “তোমাদের কওমে কি কোনো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও সম্ভ্রান্ত লোক নেই, যাদের আদেশে তোমরা চলো?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আছে।” তখন তিনি বললেন, “তারা-ই তো জনগণের নেতা। তারা যদি ইসলামের প্রতি আন্তরিক থাকে এবং শরিয়তের প্রতি অনুগত থাকে, তাহলে জনগণও সৎ পথে থাকবে। কিন্তু যদি তারা শরিয়তকে ত্যাগ করে, তাহলে জনগণও তাদের অনুসরণে পথভ্রষ্ট হবে। আর এর দায়ভার সম্পূর্ণরূপে সেই নেতাদের ওপর বর্তাবে।” (বুখারী)
    সুতরাং আমাদের সমাজের নেতৃস্থানীয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের উচিত শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করা, জনগণের কল্যাণে ও দেশের স্বার্থে দ্বীনি দায়িত্বে অবিচল থাকা এবং দ্বীন থেকে বিচ্যুতি রোধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা।
    তাঁদের বিশ্লেষণ, গবেষণা, বক্তব্য, রচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে সমাজে একটি ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলা তাঁদের কর্তব্য। সমাজে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে তাঁদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে এবং সংঘাত ও বিপর্যয় রোধে আন্তরিকভাবে প্রয়াস চালাতে হবে।
    কারণ, সাধারণ মানুষ তাঁদের কথা শোনে—তাঁদের মতামত জনমত গঠনে গভীর প্রভাব রাখে। আর এ দিক থেকে এই দায়িত্বই হচ্ছে দ্বীনের প্রতি অন্যতম বড় খিদমত।
    ইসলামী ইমারাহর বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকল বিচারপতি ও কর্মচারীদের উদ্দেশে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, তাঁরা যেন নিজেদের গৌরবজনক দায়িত্ব পালন করেন পরিপূর্ণ গুরুত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে। জনগণের হক সংরক্ষণ এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য তাঁদেরকে আরও সচেষ্ট ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। বিচার এমনভাবে পরিচালিত হওয়া আবশ্যক, যাতে শক্তিশালী ও দুর্বল উভয় শ্রেণিকেই সমানভাবে বিবেচনা করা হয়। অপরাধ বিবেচনায় যেন রায় দেওয়া হয়, অপরাধীর পরিচয় বিবেচনায় নয়; আর প্রতিটি রায় যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নির্ধারিত সীমারেখা অনুযায়ীই হয়।
    মজলুমের হক আদায়, জালিমের জবাবদিহিতা এবং জনগণের অভিযোগসমূহ অবিলম্বিত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে নিষ্পত্তি—এই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য।
    আমাদের মুজাহিদদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি সত্যিকারের ইসলামী শাসনব্যবস্থার কায়েম এবং শরিয়াহর পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। এই মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হলো বিচার বিভাগের সঠিক কার্যক্রম ও নিষ্ঠাপূর্ণ খিদমত।
    তদ্রূপ, হজ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সৎ কাজের আদেশ ও মন্দের নিষেধ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়, অভিযোগ শুনানি এবং উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত বিভাগসমূহকেও নিজেদের দায়িত্ব পালনে দৃঢ় প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আলেম সমাজ ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় তাঁরা যেন নিজ নিজ ক্ষেত্র ও দায়িত্বসীমার মধ্যে জনগণকে নেকির পথে আহ্বান করে এবং শরিয়াহভিত্তিক শাসনব্যবস্থার প্রতি উৎসাহিত করে। এ লক্ষ্যে তাঁদের সকল সক্ষমতা ও মাধ্যম কাজে লাগানো অপরিহার্য।
    আমাদের দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা যেন দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও তৎপর হন—এমনই এক জোরদার আহ্বান সময়ের দাবি। একটি আত্মনির্ভরশীল ও পরনির্ভরতামুক্ত জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক ভিতকে দৃঢ় করতে হবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষায় যদি আমরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই, তবে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, আজকের বিশ্বে এই লক্ষ্যগুলো সম্পদ ও অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
    চলুন, আমরা সবাই একসঙ্গে এক হয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করি।
    ইসলামি ইমারাহর অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোরও উচিত হবে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া—তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং অগ্রগতির পথে সহায়ক ভূমিকা রাখা।
    পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং প্রাদেশিক গভর্নরদের উচিত হবে দেশে ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য যথাযথ সেবা নিশ্চিত করা। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা যেন সম্মানজনকভাবে হয় এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব সহায়তা প্রদান করা হয়।
    ইসলামি ইমারাহর নিরাপত্তা ও বেসামরিক খাতের কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান—আপনারা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সততা ও মনোযোগ বজায় রাখবেন। একে অপরের নির্ধারিত কাজের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এ ধরনের অনধিকার প্রবেশ বিশৃঙ্খলা, অবিশ্বাস ও জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করে। জনগণের সেবা করা ইবাদতের অংশ। আল্লাহ তাআলা আপনাদের উপর জনগণের কল্যাণের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন—এটা এক বিশেষ পরীক্ষাও বটে।
    এই দায়িত্ব পালনে আপনাদের সর্বান্তকরণে মনোযোগী হতে হবে, কারণ অবহেলা এখানে কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বদা সজাগ থাকুন, মানুষের প্রয়োজন পূরণের পথ সুগম করুন, তাদের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করবেন না, বরং তাদের কাজ সহজ করে দিন—আল্লাহও তখন আপনাদের কাজ সহজ করে দেবেন। মানুষের সময় নষ্ট করবেন না, তাদের জন্য দরজা বন্ধ করে রাখবেন না। তাদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ করুন, কথা বলুন, তাদের অভিযোগ ও সমস্যাগুলো শুনুন। এতে করে জুলুম প্রতিহত হবে, ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যাবে এবং প্রত্যেকে তার ন্যায্য অধিকার পাবে।
    আমাদের শাসনব্যবস্থা জনগণের জন্য অভিভাবক ও তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করবে—যেমন একজন পিতা তার সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল। জনগণের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের অর্পিত বিষয়গুলোর হেফাজত করার দায়িত্ব এ ব্যবস্থার উপরই বর্তায়।
    একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে—
    আবুশ শামাখ আজদি (রহ.) তাঁর চাচাত ভাইয়ের সূত্রে বর্ণনা করেন, যিনি রাসূলুল্লাহ এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি একবার মু‘আবিয়াহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে গিয়ে বললেন:
    আমি রাসূলুল্লাহ কে এ কথা বলতে শুনেছি—
    مَنْ وَلِيَ أَمْرًا مِنْ أَمْرِ النَّاسِ ثُمَّ أَغْلَقَ بَابَهُ دُونَ الْمِسْكِينِ وَالْمَظْلُومِ أَوْ ذِي الْحَاجَةِ، أَغْلَقَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى دُونَهُ أَبْوَابَ رَحْمَتِهِ عِنْدَ حَاجَتِهِ وَفَقْرِهِ أَفْقَرَ مَا يَكُونُ إِلَيْهَا
    যে ব্যক্তি মানুষের কোনো বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করল, কিন্তু তারপর দরিদ্র, নিপীড়িত ও প্রয়োজনাপন্নদের জন্য তার দরজা বন্ধ করে রাখল, আল্লাহ তাআলা তার সবচেয়ে বেশি দরকারের সময়, চরম দারিদ্র্যের মুহূর্তে তাঁর জন্য নিজের রহমতের দরজাগুলো বন্ধ করে দেবেন।” (মুসনাদে আহমদ)
    আমির ও নেতৃবৃন্দের আদেশ-নির্দেশ মান্য করা আবশ্যক। প্রত্যেকেই এই আনুগত্যের সীমানার মধ্যে থেকেই কার্যসম্পাদন করবে।
    হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক অমর উক্তি—
    إنه لا إسلام إلا بجماعة ، ولا جماعة إلا بإمارة ، ولا إمارة إلا بطاعة.
    ইসলাম জামাআত (দলবদ্ধতা) ছাড়া টিকতে পারে না, জামাআত সম্ভব নয় আমীর বা নেতৃত্ব ছাড়া, আর নেতৃত্ব টিকে না আনুগত্য ব্যতীত।” (সুনানে দারিমি)
    মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সাধারণ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রদের উচিত তাদের পাঠে মনোযোগী থাকা এবং নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। শিক্ষক, বই ও জ্ঞান—এই তিনের প্রতি তাদের সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং সময়ের সদ্ব্যবহার করে আত্মগঠনে ব্রতী হতে হবে।
    অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক কাজকর্মে সময় নষ্ট করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। যেকোনো ব্যস্ততা, যা লক্ষ্যচ্যুতি ঘটাতে পারে—তা কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। মূল উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি সদা নিবদ্ধ রাখতে হবে।
    আল-কুরআনে এসেছে—
    وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَنِ اللَّغۡوِ مُعۡرِضُوۡنَ
    তারা সেইসব লোক, যারা নিরর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত: ৩)
    রাসূলুল্লাহ বলেন—
    من حسن اسلام المرء ترکه ما لا یعنیه
    একজন ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন হলো, সে যা তাকে ঘিরে না বা যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, তা পরিত্যাগ করা।” (সুনানে তিরমিজি)
    স্মরণ রেখো—ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তোমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করবে। অতএব, নিজেদেরকে এমনভাবে গড়ে তোলো, যাতে তোমরা যোগ্য, দক্ষ ও বিশ্বস্ত মানুষ হয়ে উঠতে পারো। ইসলামের খেদমত, ইসলামী শাসনব্যবস্থা ও জনসাধারণের সেবা—এই লক্ষ্য সামনে রেখে পূর্ণ নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় তোমাদের অধ্যয়ন ও আত্মোন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে হবে।
    এই বছর আফগানিস্তান থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার হাজী আল্লাহর পবিত্র গৃহে গিয়ে হজের মহান ফরিযা পালন করছেন। আমি এ সকল হাজীদের নিকট—এবং সেইসাথে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পবিত্র ভূমিতে আগত সব সম্মানিত হাজীদের নিকট—অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা যেন আমাদের জন্য এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেন।
    গাযা ও ফিলিস্তিনের অন্যান্য ভূখণ্ডে নারী, শিশু এবং নিপীড়িত মুসলমানদের উপর জায়নবাদীদের অব্যাহত হামলা ও নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি। এসব অপরাধ মানবতার বিরুদ্ধে মারাত্মক অবিচার ও নির্লজ্জ নিপীড়নের শামিল। ইসলামী ইমারাহ পুনরায় দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছে যে, আমরা ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের পাশে অবিচলভাবে আছি। আমরা এই আগ্রাসন ও জুলুমের কঠোর নিন্দা জানাই এবং এসব অন্যায় অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানাই।

    পরিশেষে, পবিত্র ঈদুল আজহার এ আগমন উপলক্ষে আমি আবারো সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাই। আল্লাহ তা’আলা যেন আপনাদের ইবাদত, কোরবানি ও হজ্জ কবুল করেন এবং আপনাদের জীবনে সুখ-শান্তি ও কল্যাণ দান করেন।

    ওয়াস্‌সালামু ‘আলাইকুম

    আমীরুল মুমিনীন, শাইখুল কুরআন ওয়াল হাদীস মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
    ৭/১২/১৪৪৬ হিজরি
    ১৪/৩/১৪০৪ শামসি
    ৪/৬/২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
    *****


    *****

    مع تحيّات إخوانكم
    في مؤسسة الشهداء للإنتاج الإعلامي
    আপনাদের দোয়ায়
    আশ শুহাদা মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
    In your dua remember your brothers of
    Ash Shuhada Media
    Last edited by আশ শুহাদা মিডিয়া; 1 week ago.

  • #2
    অপ্রয়োজনীয় ও নিরর্থক কাজকর্মে সময় নষ্ট করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। যেকোনো ব্যস্ততা, যা লক্ষ্যচ্যুতি ঘটাতে পারে—তা কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে। মূল উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি সদা নিবদ্ধ রাখতে হবে।
    আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাউফিক দিন। আমীন..

    স্মরণ রেখো—ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তোমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করবে। অতএব, নিজেদেরকে এমনভাবে গড়ে তোলো, যাতে তোমরা যোগ্য, দক্ষ ও বিশ্বস্ত মানুষ হয়ে উঠতে পারো। ইসলামের খেদমত, ইসলামী শাসনব্যবস্থা ও জনসাধারণের সেবা—এই লক্ষ্য সামনে রেখে পূর্ণ নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় তোমাদের অধ্যয়ন ও আত্মোন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে হবে।
    ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে কবুল করে নিন।
    Last edited by Rakibul Hassan; 1 week ago.
    نحن الذين بايعوا محمدا ﷺ على الجهاد ما بقينا أبدا

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তাআলা শাইখকে হিফাজত করুন,
      শুহাদা মিডিয়ার ভাইদের মেহনত কবুল করুন, আমীন

      প্রিয় ভাইয়েরা। ফন্ট সাইজ আরেকটু বড় করলে পড়তে সুবিধা হয়
      জাযাকাল্লাহ খাইরান
      বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

      Comment


      • #4
        হে আল্লাহ্ , শাইখকে হিফাজত করুন, আমাদেরকে শাইখের উপদেশ গুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন, সকল মুজাহিদ ভাই ও তাদের পরিবারের যাবতীয় জরুরত আপনার গায়েবি খাজানা থেকে পূর্ণ করে দিন । আমাকে ময়দানে মুজাহিদ ভাইদের সঙ্গী হিসেবে কবুল করুন - আমীন

        Comment

        Working...
        X