Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৯ || কুদসের মুক্তির পথ! ।। উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ || তৃতীয় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৯ || কুদসের মুক্তির পথ! ।। উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ || তৃতীয় পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
    “কুদসের মুক্তির পথ!”
    ।। উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ ||
    এর থেকে - তৃতীয় পর্ব​




    বিশ্বব্যবস্থা এবং মার্কিন প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ

    আমেরিকার সত্যিকার অর্থে সারা বিশ্বের সমুদ্রগুলোর ওপর রাজত্ব। এই ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়াও শক্তিশালী, কিন্তু আমেরিকার তুলনায় তাদের প্রভাব অনেক কম। বিশ্বব্যাপী ৭০% সমুদ্রে আমেরিকারই আধিপত্য এবং সব গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথে আমেরিকার দখল। এটি একটি নীতি যে, যার হাতে সমুদ্রের নিয়ন্ত্রণ, তার জন্য আকাশ ও স্থলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা কোনো কঠিন কাজ নয়।[ ]

    হেনরি কিসিঞ্জার সমুদ্রশক্তির মাধ্যমে বিশ্বে নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠার এই কৌশলকে ‘Diplomacy of a Hundred Thousand Tons’ অর্থাৎ ‘লাখ লাখ টন ওজনের কূটনীতি’ নাম দিয়েছিলেন, কারণ নৌশক্তির মাধ্যমেই আপনি বিশ্বকে আপনার কথা মানাতে পারেন।[ ]

    আমেরিকা বিশ্বের একমাত্র এমন শক্তি, যার নিজের ভূখণ্ডের বাইরে এত বিপুল সংখ্যক সামরিক ঘাঁটি ও সৈন্য মোতায়েন করা আছে যে, কখনো কখনো তাদের কংগ্রেস সদস্যদেরও জানা থাকে না যে তাদের সৈন্যরা কোথায় কোথায় deployed আছে। যার হাতে নৌশক্তি আছে, সে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য, যুদ্ধ ও রাজনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। ধারণা করুন, বিশ্বের ৮০টি দেশে আমেরিকার ৮০০-এরও বেশি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া ও চীন প্রভৃতি দেশের নিজ দেশের বাইরে সামরিক উপস্থিতি অত্যন্ত সীমিত, না থাকার মতোই।[ ] আমেরিকার বিশ্বের ১৫৯টি দেশে কমপক্ষে এক লক্ষ তিরাশি হাজার সৈন্য মোতায়েন করা আছে [ ]। এছাড়াও সিআইএ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার গোপন এজেন্ট এবং প্রাইভেট ফোর্সের সদস্যরা এই সংখ্যার বাইরে, যারা বিশ্বজুড়ে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় গোপন যুদ্ধে লিপ্ত।

    আমেরিকা তার বৈদেশিক সামরিক শক্তিকে বিশ্বব্যাপী এগারোটি কমান্ডে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি ভৌগোলিক এবং পাঁচটি অপারেশনের ধরন অনুযায়ী সাজানো। প্রতিটি বাহিনীর নিজস্ব সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক রয়েছে। এভাবে এটি পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণস্বরূপ, CENTCOM (সেন্ট্রাল কমান্ড) মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে কভার করে। এর সদর দপ্তর ফ্লোরিডায় অবস্থিত, অন্যদিকে এর অপারেশনাল বেস কাতারে। কাতারে Al Udeid Air Base নামে এর একটি বিশাল সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সবচেয়ে বড় সামরিক কেন্দ্র এবং বিশ্বব্যাপী পঞ্চম বৃহত্তম ঘাঁটি। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, জর্ডান, ইরাক, বাহরাইন, তুরস্ক ও সিরিয়াতেও তাদের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। পাকিস্তান ও মিসর প্রভৃতি দেশের সামরিক ঘাঁটিও আমেরিকা ব্যবহার করে আসছে, কারণ এসব দেশের সাথে তাদের গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, লজিস্টিক সহায়তা ও অন্যান্য পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে।

    রাজনৈতিক প্রভাব ও অনুপ্রবেশের প্রশ্নে এটি সুবিদিত যে পাকিস্তান ও মিশরের মতো দেশে কোনো সেনাপ্রধান সম্ভবত আমেরিকার সম্মতি ছাড়া নিযুক্ত হতে পারেন না। আমেরিকা অর্থনীতিকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এই আধিপত্যের একটি বড় মাধ্যম হলো ডলার। যদিও কিছু দেশ এর প্রভাব থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু যেহেতু বিশ্বের ৬০% মুদ্রার রিজার্ভ ডলারে থাকে, তাই বাণিজ্যও প্রধানত ডলারেই হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মতো ঋণদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আমেরিকার প্রভাবাধীন। এগুলো কেবল সেই সব দেশকেই ঋণ দেয় যারা তাদের শর্ত পূরণ করে, অথচ এসব শর্ত প্রায়ই আমেরিকার স্বার্থ বিবেচনা করে তৈরি করা হয়। আমেরিকা ঋণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে এবং নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়। এই হস্তক্ষেপ সরকারি ও প্রশাসনিক বিষয় থেকে শুরু করে শিক্ষা, আইন ও নিরাপত্তা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। শাস্তি দেয়ার জন্য এটি বাণিজ্যিক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। এইভাবে সরকার পরিবর্তন এবং দেশে বিপ্লব আনার ক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকা এতটাই বিখ্যাত যে, এই বিষয়ে একজন আমেরিকান কংগ্রেস সদস্যের মজার কথা প্রচলিত আছে। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে রাজনৈতিক বা সামরিক বিপ্লব ঘটে থাকে, কিন্তু কি কারণে আমেরিকায় এখন পর্যন্ত কোনো বিপ্লব ঘটেনি? তার উত্তর ছিল- “কারণ আমেরিকায় কোনো আমেরিকান দূতাবাস নেই।”

    বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতিসংঘও তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। জাতিসংঘের সিদ্ধান্তগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলো নিরাপত্তা পরিষদ, যার পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ, সমগ্র বিশ্ব যদি কোনো বিষয়ে একমতও হয়, কিন্তু এই পাঁচ সদস্যের মধ্যে কেউ একজনেরও ভেটো হলে সারা বিশ্বের মতামত বিফলে যায়। যেহেতু আমেরিকা অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী, তাই বিশ্বব্যাপী সিদ্ধান্তগুলিতে অন্যান্য চার সদস্যের তুলনায় আমেরিকার প্রভাব বেশি। গাজা যুদ্ধের সময় যতবারই যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তাব জাতিসংঘে উত্থাপন করা হয়েছে, আমেরিকা সেগুলোতে ভেটো দিয়েছে।
    আরও উল্লেখ্য, জাতিসংঘ বিশ্বজুড়ে শিক্ষা ও সচেতনতা, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, শরণার্থী সহায়তা, স্বাস্থ্য এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বৈশ্বিক কর্মসূচি পরিচালনা করে। এই সংস্থাগুলোকেও তারা তাদের বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA)—১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাকারী সংস্থা। বাইডেন ইসরাঈলের ইচ্ছায় এর তহবিল কমিয়ে দিয়েছিলেন, যা সংস্থাটিকে দুর্বল করে দেয়। অন্যদিকে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এর তহবিল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়।

    আমেরিকা তার USAID-এর মাধ্যমে সরাসরি এনজিওগুলোর একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
    গ্রাম পর্যায়ের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের প্রধান মিডিয়া ও সংসদ সদস্যদের ওপরও তারা প্রভাব বিস্তার করে এবং তাদেরকে দেশে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে।

    গাজা যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকার বিশ্বে কতটা প্রভাব, তা স্পষ্ট হয়েছে। গাজায় ভয়াবহ মানবতা বিরোধী অপরাধ ক্যামেরার সামনেই চলেছে, কিন্তু জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি যা গাজাবাসীর কোনো উপকারে এসেছে। কতবার জাতিসংঘকে আমেরিকা সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দিয়েছে, আবার কখনো সিদ্ধান্ত নিতে দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। এই যুদ্ধে এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, মানবাধিকার ও নারী অধিকারের মতো সুন্দর স্লোগান, যা জাতিসংঘ ও আমেরিকা সমর্থিত এনজিওগুলোর মাধ্যমে প্রচার করা হয়, তা আসলে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র ছাড়া কিছুই নয়।

    এটাই হলো আমেরিকার বৈশ্বিক ব্যবস্থা, যা ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। এই যুদ্ধের কারণে উম্মাহর যে করুণ অবস্থা, তাতে উম্মাহর শাসক ও সেনাবাহিনীর ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ প্রসঙ্গে ইসরাঈলের সাথে এসব দেশের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা উপকারী হবে। পাশাপাশি এটাও দেখা জরুরি যে, এই দেশগুলো নিজেরাই কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা আল-আকসা মসজিদে ইহুদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কী ভূমিকা রেখেছে এবং আমেরিকান উপনিবেশবাদ রক্ষা ও শক্তিশালীকরণে তাদের অবদান কী?



    উম্মাহর শাসক ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

    পূর্বেই আমরা আলোচনা করেছি যে, উপনিবেশবাদের রূপ পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু তা বিলুপ্ত হয়নি। ব্রিটেন প্রভৃতি দেশের জন্য আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে মুসলিম বিশ্বে সরাসরি দখল বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তাই আমাদের এই ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রগুলির জন্ম দেওয়া হয়েছিল। এই দেশগুলো নিজেদের স্বাধীনতা শত্রুর হাত থেকে কেড়ে নেয়নি, বরং তা তাদেরকে শর্তসাপেক্ষে প্রদান করা হয়েছিল— আজ্ঞাবহতা ও আনুগত্যের শর্তে। এ বিষয়ে কিছু পশ্চিমা লেখকও লিখেছেন। যেমন, আমেরিকার প্রখ্যাত লেখক ডেভিড ফ্রমকিন তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত আরব সরকারগুলো জানত যে, তাদের প্রতিষ্ঠার শর্ত ছিল ফিলিস্তিনকে ইহুদীদের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করা।[ ]

    এই রাজ্যগুলো গঠনের মাত্র ১৩ থেকে ২৬ বছর পর ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ইহুদীদেকে নিজেদের উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং ইসরাঈলের জন্ম ঘোষণা করে। ফিলিস্তিনে এই ইহুদী দখল মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ ঘটনা ছিল, যা ইসলামের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত— এটা এই শাসক ও সেনাবাহিনীরাও জানত। তাই তারা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল এবং তাদের সম্মিলিত বাহিনী ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল। কিন্তু আসলে তারা সেই যুদ্ধে কী ভূমিকা পালন করেছিল? এটি বুঝতে শায়খ মুস্তাফা আস-সিবাঈ-এর একটি বই থেকে এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও স্মৃতিচারণ উদ্ধৃত করা হচ্ছে:
    “ড. মুস্তাফা আস-সিবাঈ (১৯১৫–১৯৬৪) সিরিয়ার ইখওয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড)-এর আমীর ছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে একজন কমান্ডার ও মুজাহিদ হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যুদ্ধ শেষে তাঁর স্মৃতিকথা ‘জিহাদুনা ফি ফিলিস্তিন’ (ফিলিস্তিনে আমাদের জিহাদ) লিখেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমরা কীভাবে উম্মাহ হিসেবে দুই চরম শত্রু ও নিকৃষ্টতম গাদ্দারদের মধ্যে পিষ্ট হয়েছি।”

    এই বইটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভারতীয় উপমহাদেশেও আমরা ঠিক একই ধরনের চরিত্রদের মুখোমুখি হয়েছি। এটি পড়লে সহজেই বুঝা যায় যে, ফিলিস্তিন দখলের এই যুদ্ধ আসলে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে চলমান এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো সর্বত্র একই ধরনের দালাল শাসকদের আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।



    আরও পড়ুন
    দ্বিতীয় পর্ব​
    Last edited by Rakibul Hassan; 5 days ago.
Working...
X