অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্ট সিরিজ
নথি নাম্বার: SOCOM-2012-0000010 (পর্ব-০২)
-শায়খ আতিয়াতুল্লাহকে পাঠানো শায়খ উসামা বিন লাদেনের চিঠি
নথি নাম্বার: SOCOM-2012-0000010 (পর্ব-০২)
-শায়খ আতিয়াতুল্লাহকে পাঠানো শায়খ উসামা বিন লাদেনের চিঠি
আধা-সমাধান বা আপসকামিতার আন্দোলনের বিষয়ে সতর্কতা:
আমাদের একটি বিষয় স্পষ্টভাবে জানা থাকা প্রয়োজন। যেসব আন্দোলন ‘আধা-সমাধান’ বা আপসকামিতার প্রবণতা দেখায়—উদাহরণস্বরূপ মুসলিম ব্রাদারহুডের কথা উল্লেখ করা যায়—সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা তাদের কর্মীদের চিন্তার জগতে এক ধরনের বিক্ষিপ্ততা লক্ষ্য করছে। বিশেষ করে উঠতি প্রজন্মের মাঝে এই বিষয়টি খুব বেশি প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। ব্রাদারহুডের সাথে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তি এ বিষয়টির উল্লেখ করেছেন; যখন শায়খ আবু মুহাম্মদের কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন পেশ করা হয়, সেসব প্রশ্নের একটি দীর্ঘ উত্তরের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ব্রাদারহুডের ওই ব্যক্তি এই চিন্তাগত বিক্ষিপ্ততার বিষয়টি সামনে আনেন। বিভিন্ন মিডিয়াতে সেই সাক্ষাৎকারের আলোচনা প্রচারিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মুসলিম ব্রাদারহুডের অভ্যন্তরে এমন একটি ধারা বেশ শক্তভাবে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে, যারা সালাফী চিন্তাধারা লালন করে।
অতএব, মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তাদের মতো আরও যারা রয়েছে, তাদের ইসলামের সঠিক চিন্তাধারায় ফিরে আসাটা এখন আল্লাহর ইচ্ছায় কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ কারণে ‘ইসলামী চিন্তাধারা স্পষ্ট করার কাজে যত বেশি মনোযোগ ও শ্রম দেয়া হবে’, তাদের ফিরে আসাটা তত দ্রুত ও সহজতর হবে। একারণেই বর্তমানে মুসলিমদের আন্দোলনগুলোকে হেফাজত করা এবং সেগুলোকে চূড়ান্ত গন্তব্য ও পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য নিরন্তর সাধনা ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সেই সাথে গত কয়েক দশক যাবত বিভ্রান্তির আবর্তে পতিত উম্মাহর সন্তানদের সঙ্গে অত্যন্ত কোমল ও নম্র আচরণ করতে হবে।
‘উম্মাহর পরিণতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দিকনির্দেশনা প্রদান ও শিক্ষা-দীক্ষা বিস্তারের এই দায়িত্ব’ এমন কারো অভাব অনুভব করছে, এমন একদল লোককে খুঁজছে, ‘যারা শরীয়তের নীতিমালার আলোকে পূর্ণ সচেতনতার সঙ্গে’ এই শূন্যস্থান পূরণ করবে। ইতিপূর্বে আমি এ বিষয়ে একটি আবেদন পেশ করেছিলাম—
- ১. উম্মাহর সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্য থেকে উলামায়ে কেরাম ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ‘মজলিসে শুরা’ গঠন করবেন।
- ২. যারা উম্মাহর সমস্যাগুলো নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা-পর্যালোচনা করবেন।
- ৩. এবং উম্মাহকে সঠিক রায়, পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।
নিঃসন্দেহে, মুজাহিদদের দায়িত্ব অনেক বেশি। কিন্তু এ কথাও আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, উপর্যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে আমাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টার বড় অংশ ব্যয় করা উচিত, যেন তার হক কোনোভাবেই নষ্ট না হয়। মুসলিম উম্মাহ অতীতেও পশ্চিমা আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিপ্লব করেছে। কিন্তু সেই বিপ্লবগুলো যেসব ‘প্রতি-বিপ্লব’ বা ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছিল, উম্মাহ আজ আবারও অনুরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।
এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের সামনে রাখা উচিত। আফগানিস্তানে জিহাদ করা ওয়াজিব (জরুরি), সেখানে আল্লাহর শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু একইভাবে আরও একটি বড় কর্তব্য পালনের পথ হলো এই জিহাদ। তা হচ্ছে—দেড় বিলিয়ন উম্মাহকে মুক্ত করা এবং তাদের পবিত্র বিষয়গুলো পুনরুদ্ধার করা। তাই যখন আমরা আফগানিস্তানে লড়াই চালিয়ে যাব এবং কুফরি বিশ্বের প্রধান শক্তির (আমেরিকা) রক্তক্ষরণ অব্যাহত রাখব, তখন তারা এক প্রকার দুর্বলতার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। সেই সময় বিশ্বের মুসলিম জনগণ বেশ কিছু দুঃসাহসী কাজ করতে সক্ষম হবে এবং পবিত্র বিষয়গুলো পুনরুদ্ধার করবে। এতদিন যে মুসলিম জনসাধারণ আমেরিকার তাবেদার শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার চিন্তাও করতে পারত না—কেউ এমন চিন্তা করলেই চাপের মুখে পড়ত এবং তার পতন ঘটত—এখন তারা নিজেদের অঞ্চল থেকে সেই চাপ দূর করতে পারবে। আমেরিকা তার এই বিশাল চাপ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে যখন যাকে ইচ্ছা পতন ঘটিয়ে দিত; আবার যাকে ইচ্ছা তাকে বহাল তবিয়তে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে রাখত। বড় শক্তির এই চাপ যখন ক্রমশ দূর হতে থাকবে, তখন জনসাধারণের হাতে সর্বব্যাপী বহু আন্দোলন ও বিপ্লব রচিত হবে। আর সেই জনসাধারণের কাতারে ইসলামপ্রেমী মানুষের সংখ্যাই হবে গরিষ্ঠ।
পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল মিডিয়া কার্যক্রম বৃদ্ধি:
- ১. বর্তমানে পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলভাবে মিডিয়া অ্যাক্টিভিটিস বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করা আমাদের দায়িত্ব।
- ২. উম্মাহকে দিকনির্দেশনা দানের ক্ষেত্রে আমাদের কর্মপ্রয়াস যেন হয় অত্যন্ত সুচিন্তিত।
- ৩. আমরা এমন সুনির্দিষ্ট রূপরেখার ওপর পথ চলব, যা আমরা সকলেই পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে প্রয়াসী হবো। কারণ এই পর্যায়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ।
- ৪. তাই এই পর্যায়ে আমাদের দিকনির্দেশনাগুলোর মাঝে বাহ্যিক বৈপরীত্য ও সাংঘর্ষিক প্রবণতার কোনো সুযোগ রাখা যাবে না।
স্বাভাবিকভাবেই, ‘জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা’ আগামী পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর একটি। কারণ এখনও পর্যন্ত ‘প্রতি-বিপ্লব রুখে দেয়ার জন্য’ জনসাধারণ পুরোপুরি জাগ্রত হয়নি। সে কারণে বর্তমানে আমাদের করণীয়—
- ১. জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
- ২. বিপ্লব ও আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাদেরকে বলতে হবে যে, শরীয়ত ও যুক্তির বিচারে এই আন্দোলন সফল করা তাদের কর্তব্য।
- ৩. এভাবেই সমস্ত মতপার্থক্য এড়িয়ে সরকার পতনের বিষয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।
- ৪. সেই সাথে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ‘সচেতনতা ও বিশুদ্ধ চিন্তাধারা প্রচার-প্রসারের কাজ’ করতে হবে।
- ৫. আর সমস্ত অঞ্চলে ভাইদের কাছে আমাদের বার্তা প্রেরণ করতে হবে, তারা যেন শায়খ মুহাম্মাদ কুতুবের ‘মাফাহিম ইয়ামবাগি আন তুসাহহাহ’ (مفاهيم ينبغي أن تصحح - কিছু ধারণার আবশ্যকীয় সংশোধন) গ্রন্থটি প্রচার-প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন।
উম্মাহকে দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুতি এবং এ বিষয়ে শূন্যস্থান পূরণের প্রচেষ্টার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমি বলতে চাই, এই পর্যায়ে যাদের বয়ান ও বক্তৃতার যোগ্যতা ও প্রতিভা রয়েছে—তা হোক গদ্যে বা পদ্যে, অডিও বা ভিডিওর মাধ্যমে, কিংবা পঠিতব্য আকারে—তাদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহর যুবকদের পথপ্রদর্শন ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমরা এমন যোগ্যতাসম্পন্ন ও প্রতিভাবান সকল ব্যক্তিকে স্বাগত জানাব। আর আফগানিস্তান ও ওয়াজিরিস্তানে ময়দানের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব আমরা ওখানকার সামরিক বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তিদের হাতেই ছেড়ে দেব—প্রচার মিডিয়ার ক্ষেত্রে যাদের যথেষ্ট পর্যায়ের ব্যুৎপত্তি নেই।
আমি আশা করব, আপনি শায়খ আবু ইয়াহইয়াসহ অন্য ভাইদের এ বিষয়টা জানিয়ে দেবেন, যাদের বয়ান, বক্তৃতা ও লেখালেখির ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা ও প্রতিভা রয়েছে। কাউকে বাদ না দিয়ে তাদের প্রত্যেকের রায় ও পরামর্শগুলো আমাকে জানাবেন। কারণ এই পর্যায়ে উপকারী কোনো বিষয় যার পক্ষেই হাজির করা সম্ভব, এমন কাউকেই আমাদের বাদ দেয়া উচিত নয়।
*****
চলবে... ইনশাআল্লাহ
Comment