অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্ট সিরিজ
নথি নাম্বার: SOCOM-2012-0000010 (পর্ব-০৩)
-শায়খ আতিয়াতুল্লাহকে পাঠানো শায়খ উসামা বিন লাদেনের চিঠি
নথি নাম্বার: SOCOM-2012-0000010 (পর্ব-০৩)
-শায়খ আতিয়াতুল্লাহকে পাঠানো শায়খ উসামা বিন লাদেনের চিঠি
দ্বিতীয় পত্রের পর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট:
১. ‘বিপ্লবের বিষয়ে উম্মাহর উদ্দেশ্যে একটি বিবৃতি’ সংযুক্ত ছিল। আমি সেটা সম্পর্কে অবগত হতে চাই। ওই বিবৃতির ওপর যদি ভাইদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়, তাহলে সেগুলো কেটে দিলে কোনো অসুবিধা নেই। আমি চাই, এরপর সেটি আল-জাজিরা চ্যানেলে প্রেরণ করা হোক। সেই সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমি নতুন একটা ফাইলে তার একটা কপি সংযুক্ত করেছি। ওই ফাইলে অন্য কোনো কিছু নেই। তাই আমি আশাবাদী খুব দ্রুত তা প্রকাশ করা হবে। কারণ ঘটনাপ্রবাহের গুরুত্ব ও দ্রুততা অনেক বেশি।
২. ‘আরব বিপ্লবগুলোর বিষয়ে একটি আলোচনার উপাদান’ শিরোনামে যে কাগজ আপনারা পাঠিয়েছেন, তা চূড়ান্ত পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনারা তা নিয়ে আলোচনা শুরু করুন। সম্ভবত আমি এর ওপর এবং আপনাদের ‘অন্য মিডিয়া অ্যাক্টিভিটিসের ওপর’ কিছু মন্তব্য যুক্ত করব। সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে আমার আগামী পত্রে আপনাদের সে সমস্ত মিডিয়া অ্যাক্টিভিটি নিয়ে আমি লিখতে চাই—যা আরব বিপ্লবগুলোর পর আপনারা দেখিয়েছেন।
৩. ‘ইয়েমেনের সঙ্কট নিরসনে একটি প্রস্তাবনা’ শিরোনামে একটি ফাইল সংযুক্ত রয়েছে। আপনি যদি ওই ফাইলে উপস্থাপিত ‘চিন্তা-ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি’ পুনঃবিন্যাস করেন এবং পুনরায় পরিমার্জনের কাজ করেন তাহলে ভালো হয়। এরপর তা আপনি আপনার নামে অথবা অন্য কারো নামে পাঠিয়ে দেবেন। আর যদি তা সমীচীন মনে না হয়, তাহলে আমার পুত্র খালেদের নাম দিয়ে দেবেন। ইয়েমেনের ‘উলামায়ে কেরাম ও শীর্ষস্থানীয় অভিজাত ব্যক্তিদের’ কাছে আলোচনাটা পেশ করা দরকার। পরিস্থিতি আমাদের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছে। তাই যথাসম্ভব দ্রুত তা প্রকাশ করতে হবে।
৪. সমস্ত অঞ্চলে যে সব ক্ষেত্রে ‘স্থিতি বজায় রাখা’ এবং ‘তাড়াহুড়া পরিহার করা উচিত’: আপনি সমস্ত অঞ্চলে আমাদের ভাইদেরকে এক জায়গায় অবস্থান করা এবং তাড়াহুড়ো না করার বিষয়ে যদি উপদেশ দিতেন তাহলে ভালো হতো। এক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে নামধারী ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে কোনো প্রকার সংঘর্ষে লিপ্ত হবার ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে চাই। খুব সম্ভব, পুরানো শাসনব্যবস্থার ধ্বংসস্তূপের ওপরেই নতুন সরকার গঠিত হবে। প্রবল ধারণা রয়েছে যে, অচিরেই জোট সরকার গঠিত হবে এবং মুসলিম ব্রাদারহুডসহ এ জাতীয় অন্য ইসলামী দলগুলোর অংশগ্রহণ থাকবে। এই অবস্থায় আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, আমরা মুসলিমদের মাঝে দাওয়াতের ব্যাপক প্রচার-প্রসারে মনোনিবেশ করব। আমরা আনসার বা সাহায্যকারী খুঁজব। সঠিক চিন্তা-চেতনা প্রচার-প্রসার করব। বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সামনে এমন সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়েছে যা এভাবে আমরা ইতিপূর্বে পাইনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলামী হুকুমত ও শাসনব্যবস্থা আসবে সালফে সালেহীনের মানহাজের ওপর ভিত্তি করে। বর্তমান সময়টা ইসলামের জন্য অনুকূল। সময় যত অতিবাহিত হবে, ততই যেন আমাদের দাওয়াতের গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। মুসলিম জনসাধারণের মধ্য থেকে উঠে আসা দাওয়াতের পক্ষের আনসার দিন দিন শুধু বৃদ্ধি পাবে। ইসলামী দলগুলোর আধুনিক প্রজন্মের মাঝে বিশুদ্ধ চিন্তা-চেতনার খুব বেশি প্রচার-প্রসার ঘটবে।
৫. ইয়েমেনের ভাইয়েরা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে যে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাচ্ছেন তার ব্যাপারে বলব, সবদিক ভালো করে বিবেচনা ও পর্যালোচনা করার আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে যেন পূর্ণরূপ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, সেই প্রত্যাশা রাখি। কারণ এই কাজের মাধ্যমে মুজাহিদদের ওপর রাজনৈতিক ও মিডিয়া অঙ্গন থেকে যে প্রতিক্রিয়া আসবে এবং মানুষজন তাদের ব্যাপারে যে ধারণা পোষণ করবে, সেটা আগেই ভেবে রাখতে হবে। এ কারণে এ বিষয়টা নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করা চাই।
৬. ইরাকে আমাদের ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে বলব, আপনারা এ যোগাযোগের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে এবং যোগাযোগ বিঘ্নিত হবার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করবেন।
৭. ইরান থেকে যে ভাইয়েরা আসবেন তাদের ব্যাপারে বলব, আপনাদের ওখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যাপারে আপনারা সবচেয়ে ভালো জানেন। একইভাবে বেলুচিস্তানের ব্যাপারেও জানেন। এ কারণে ইরান থেকে যারা আসবেন তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি নিরাপদ স্থানগুলোর ব্যবস্থা আপনারা করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম হেফাজতকারী।
৮. ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যে বক্তব্যের কথা আপনারা উল্লেখ করেছেন যে, ব্রিটেন অচিরেই আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে যাবে—এ ব্যাপারে আমার ধারণা, ব্রিটেনের অবস্থান ও কৌশল দামেস্কবাসীর মতোই। মুসলিমরা যখন দামেস্ক জয়ের দ্বারপ্রান্তে, খালিদ বিন ওয়ালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন তাদের ওপর হামলা করেছেন, আর তারা পরাজয়ের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, তখন তারা তড়িঘড়ি আবু ওবায়দা রাযিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে আমি মনে করি, তাদের সামনে পুরোপুরি দরজা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তারা সেখান থেকে সরে আসা হয়তো সম্ভব নয়।
৯. ইসলামী মাগরেবের ভাইদের ফরাসি বন্দী প্রসঙ্গে: ইসলামী মাগরেবে আমাদের ভাইদের হাতে যে সমস্ত ফরাসি বন্দী রয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমি সতর্ক করে দিতে চাই—লিবিয়ার জনগণের ব্যাপারে ফ্রান্সের অবস্থানের পর যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা ফরাসিদেরকে হত্যার অনুমোদন করে না। কারণ যদি তাদেরকে হত্যা করা হয়, তাহলে তার নেতিবাচক অনেক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কারণ ইতিমধ্যেই অধিকাংশ মানুষ (ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি) সার্কোজির সমর্থক বনে গিয়েছে। এখন যদি ফরাসি বন্দীদেরকে আমাদের হত্যা করতেই হয়, তাহলে সেটা যেন হয় লিবিয়ার ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহ শেষ হবার পর। অতএব তাদের সঙ্গে আচরণের ব্যাপারে আমার দৃষ্টিতে যে স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া উচিত তা হলো, নারী বন্দীদেরকে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে, যেমনটা আমি আগে উল্লেখ করেছি। এখন মুক্তিপণ কী হবে তা আপনাদের এবং ওখানকার ভাইদের স্বার্থ বিবেচনা করে নির্ধারিত করতে হবে। আর পুরুষ বন্দীদের ব্যাপারে কথা হলো, ভাইয়েরা যদি নির্বাচন পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে তাদেরকে রক্ষা করতে পারেন তাহলে তো ভালো। আর যদি তাদেরকে হেফাযতে রাখতে জটিলতা তৈরি হয় তাহলে তাদের অর্ধেকের ব্যাপারে মুক্তিপণের সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। আর বাকি অর্ধেক বন্দীকে হেফাযতে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যারা অধিক উচ্চপদস্থ তাদেরকে হেফাযতে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর যদি তাতেও জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে অন্ততপক্ষে তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ফ্রান্সের নির্বাচন পর্যন্ত হেফাযতে রাখবে। আরেকটি কাজ করলে ভালো হয়। দ্বিপাক্ষিক আলোচনাগুলো যেন প্রকাশ্যে না হয়। তারা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবেন, যে সময়ের আগে বন্দীদেরকে মুক্ত করা হবে না। এর কারণ হলো ফরাসিরা যেন নির্বাচন আসার আগ পর্যন্ত বন্দী বিনিময় কার্যক্রমকে বিলম্বিত করতে না পারে, যা তাদের পক্ষে কাজে লাগবে। যদি ফ্রান্সের নির্বাচন পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যকার অবশিষ্ট সময়কাল খুব খাটো না হয়, তবু যেন বন্দী বিনিময় বিলম্বিত না হয়, সেটাই নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সোমালিয়ার ভাইদের কাছের ব্রিটিশ বন্দী প্রসঙ্গে: সোমালিয়ায় আমাদের ভাইদের কাছে যে ব্রিটিশ সেনা অফিসার বন্দী রয়েছে, তার ব্যাপারে আমার রায় হলো—ফ্রান্সের হাতে অথবা ফ্রান্সের মিত্র দেশগুলোর হাতে আমাদের যে সমস্ত বন্দী ভাই রয়েছেন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে আমরা ব্রিটিশ বন্দীকে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব পুরোপুরিভাবে। যদি সেটা সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে তো আমাদের উদ্দেশ্য হাসিল হলোই। আর যদি তারা প্রতিকূল পথে চলে এবং সার্কোজির নির্বাচনের আগে আফগানিস্তান থেকে বের হওয়ার জন্য ফরাসিদের ওপর চাপ সৃষ্টির একটা চাল হিসেবে ব্রিটিশ বন্দীকে হেফাযত করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায়, তাহলে অর্থ দিয়ে মুক্তিপণের পথে যাওয়া যেতে পারে। আর আমরা যে বিষয়টা পূর্বে উল্লেখ করেছি, ফরাসিদেরকে হত্যার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দিতে হবে—যদিও ইসলামী মাগরেবে আল-কায়েদার পক্ষ থেকে হত্যার বিষয়টা ঘটলে প্রতিক্রিয়া কিছুটা দুর্বল হবে।
- মূল উদ্দেশ্য: ব্রিটিশ বন্দীকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের বন্দী ভাইদের মুক্ত করা।
- যদি তা সম্ভব না হয়: তাহলে ফ্রান্সের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হবে।
- যদি এটাও সম্ভব না হয়: তাহলে অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেয়ার পথ নেয়া হতে পারে।
- ফরাসিদের হত্যা করা: এই মুহূর্তে আদর্শ বিকল্প নয়, কারণ এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা বিবেচনা করা দরকার। AQIM যদি ফরাসিদের হত্যা করে, তাহলে প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে দুর্বল হতে পারে।
*****
চলবে... ইনশাআল্লাহ
Comment