আমেরিকা এবং তার বর্তমান অবমাননাকর পরিস্থিতি
- শাইখ খালিদ আল-বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ (আল-কায়েদা জাযীরতুল আরব এর সম্মানীত আমীর)
- শাইখ খালিদ আল-বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ (আল-কায়েদা জাযীরতুল আরব এর সম্মানীত আমীর)
بسم الله الرحمٰن الرحيم
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
হে দুনিয়ার আনাচে-কানাচে বসবাসরত আমার মুসলিম ভাইয়েরা !
দুনিয়া এমন অনেক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করেছে, যে পরিস্থিতিগুলো অনেক সম্প্রদায়ের লেজ কেটে দিয়েছে। বর্তমান সময়ের মহামারী করোনাও এর অন্তর্ভূক্ত। এই করোনা শক্তিশালীকে নাজেহাল করে ছেড়েছে, ডাক্তার ও রাজনীতিবিদদের মাঝে লড়াই লাগিয়ে দিয়েছে। নিজের উপর গর্ববোধকারীরা; না এই মহামারীর মোকাবিলা করতে সক্ষম আর না এর ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। এই পরিস্থিতি ও ঘটনাগুলোর মাঝে এটাও রয়েছে যে, কীভাবে আরব ত্বগুতেরা ইসলাম ও মুসলিমদের চিরন্তন শত্রু ইহুদি ও দখলদারদের সঙ্গে স্থাপিত সম্পর্ককে স্বাভাবিক করে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং এর উপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেছে। প্রত্যেক সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) আরব এ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়কে সহায়তা দিয়েছে এবং কোটি কোটি উম্মতের সামনে একে সমর্থন করেছে। এতদঞ্চলের মুরতাদ শাসকেরা তাদের এই বিভ্রান্তি প্রকাশ করার এবং এর কথা ঘোষণা করার সাহসও দেখিয়েছে।
তবে আমি আমার বক্তৃতায় এই মুরতাদদের বিষয়ে আলোকপাত করব না, যাদের ভাগ্য আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের নতুন খোদাই করা প্রতিমা অর্থাৎ আমেরিকার পতনের পর আজ নিজেরাও একের পর এক পতিত হচ্ছে । বরং আমি ঐ সকল লোকদের চোখের সামনে আল্লাহর অপরিবর্তনীয় আইন সম্পর্কে আলোচনা করব যারা এই মনে করে বসে আছে যে তাদের জবাবদিহি করা হবে না বা যারা নিজেদেরকে এই ধোঁকার মাঝে ফেলে রেখেছে যে তারা আল্লাহর ক্রোধ থেকে বেঁচে যাবে ! আমাদের মুখজার সাদিক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন যেমনভাবে আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দেন, কিন্তু যখন তিনি পাকড়াও করেন তখন ছাড়েন না, অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পাঠ করলেন :
وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ
অনুবাদ : আর যখন আপনার প্রতিপালক কোন পাপী জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই ধরে থাকেন। নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও খুবই মারাত্নক, বড়ই কঠোর। [সুরা হুদ(১১):১০২] ‘‘
এই যুগে আমেরিকার চেয়ে বেশি অন্যায় আর কার হতে পারে? আমেরিকা কুফরের রক্ষণাবেক্ষণ করে, অনৈতিকতা ও দুর্নীতির পক্ষে ওকালতি করে, এবং সর্বত্র মানুষের ঘাড়ে দুর্নীতির বোঝা তারপরও তাদের কর্তৃত্বকে সমর্থন করা হচ্ছে। আজ আমেরিকাতে যা কিছু হচ্ছে, এগুলো তাদের অন্যায় নীতিমালা এবং অপরাধী ও শত্রুদের নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থনের প্রত্যাশিত ফলাফল ও এর অনিবার্য নিয়তি । আমেরিকার এই পদক্ষেপগুলি কেবল মুসলমান এবং ইসলামকেই প্রভাবিত করে না, বরং আমেরিকার অবিচার এবং অপরাধের পলিসিতে যেতে অস্বীকার করে এমন সমস্ত ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে । আল্লাহ তাআলা আমেরিকাকে অনেক অবকাশ দিয়েছেন । মারাত্মক নিপীড়ন এবং অহংকার পরিত্যাগ করার জন্য আল্লাহ তা'আলা অনেক অ্যালার্ম ঘন্টা এবং সতর্কতা বার্তা প্রেরণ করেছেন। নিজেদের ক্রমাগত নিপীড়ন এবং অন্যান্য অপরাধ থেকে বিরত থাক কিন্তু তাদের অহংকার খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে লাগল ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
বড় শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। [সুরা সাজদা(৩২):২১]
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
وَمَا نُرْسِلُ بِالآيَاتِ إِلاَّ تَخْوِيفًا
আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশেই নিদর্শন প্রেরণ করি। [সুরা বনী-ইসরাঈল(১৭):৫৯]
আল্লাহর প্রেরিত ঝড়টি বাতাস এবং বৃষ্টির সমন্বয়ে এসেছিল যা তাদের ঘরগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং তাদের অনেক জমিনকে নষ্ট করে দিয়েছিল । অতঃপর আল্লাহ তার সম্প্রদায়কে রোগ-জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত করেছিলেন যা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল; যেমন এ্যানথ্রাক্স (Anthrax) বা এই জাতীয় অন্য কিছু । আল্লাহ তা'আলা আমেরিকাকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের শাস্তি দিয়েছেন । এটি আমেরিকাকে অবশ করে দিয়েছে ও রাজনীতিবিদদের দুর্বল করে দিয়েছে । এ ছাড়া আল্লাহ তাআলা তাঁর ইবাদত করনেওয়ালা মুজাহিদীন বান্দাদের হাতে যে আযাব নাযিল করেছেন তার আলোচনা তো সুবিশাল । এটি শুরু হয়েছিল রিয়াদে এবং ১৯৯৩ সালে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে প্রথম বোমা হামলার মধ্য দিয়ে । এরপরে, নাইরোবি ও দারুস-সালামে মার্কিন দূতাবাসগুলিতে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল । তারপরে, অ্যাডেনে ইউএসএস কোল (USS Cole) নামের মার্কিন সমুদ্র জাহাজ এর উপর আক্রমণ হয়েছিল । তারপরে, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনের (9/11) এর পবিত্র আক্রমণগুলি। তারপরে, আরব উপদ্বীপ, রিয়াদ, জেদ্দা, কুয়েতসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় মুজাহিদগণের পক্ষ থেকে অসংখ্য হৃদয়গ্রাহী অপারেশন পরিচালিত হয়েছে । সর্বোপরি ইরাক ও আফগানিস্তানে জিহাদি ধর্মঘট আমেরিকাকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সংকুচিত করে ফেলেছে। আর, তালেবান (আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত) এর সাথে শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য করেছে । তারপরে, সোমালিয়া এবং অন্যান্য জায়গার সেনাদেরকে লক্ষ্য বানানো হয়েছে এবং এরপর আমেরিকাতে লোন উলফ হামলাগুলি কথা না বললেই নয় ।
এত কিছুর পরেও পৃথিবীতে আমেরিকার অন্যায় ও অহংকার আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেছে । আমেরিকার অন্যায় কাজগুলি শুধু তাদের বিদেশী নীতিমালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের নিজেদের নাগরিকগণও তাদের অত্যাচার ও অবিচারের মধ্যে রয়েছে । সতীদাহ প্রথা, নিগ্রো এবং নিগ্রোদের সাথে সম্পর্ক রাখা নাগরিকদের বিরুদ্ধে বর্ণ বৈষম্য এখনও অব্যাহত রয়েছে । এগুলো এমন একরীতি যেন প্রবীণ মার্কিন রাজনীতিবিদ, প্রতিষ্ঠাতা এবং পূর্বসূরীদের দ্বারা সমর্থিত একটি রীতি । বর্তমানের অর্থনৈতিক নীতিগুলি বিপুল সংখ্যক দরিদ্র নাগরিকের পক্ষে নয় এর কারণে মানসিক অসুস্থতার সংখ্যা বেড়ে গেছে, বেকারত্ব ও আত্মহত্যার হারও তীব্র আকার ধারণ করেছে ।
যদি করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং মৃত্যুর বিষয়টি বিবেচনা করা হয় তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ । মহামারীর কারণে মৃতের সংখ্যা চার লক্ষেরও বেশি (হয়তো জানুয়ারি মাসের হিসাবে) । কেউ যদি এমনটা ভাবেন যে, এই ধ্বংস ও দুর্ভোগগুলি আমেরিকার অত্যাচার ও অবিচারের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই । তবে আমি বলব, সে আল্লাহর বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ; আল্লাহ যালিমদেরকে সুযোগ দেন । তাঁর পাকড়াও বেদনাদায়ক এবং অত্যন্ত কঠিন । পবিত্র কুরআনে প্রদত্ত উদাহরণগুলি এর সুস্পষ্ট প্রমাণ । ফেরাউনকে দেখুন; সে ও তার বাহিনী ভূ-পৃষ্টের উপর সবচেয়ে অহংকারী ছিল, আল্লাহর বান্দাদের অত্যাচার করত । তখন আল্লাহ তাদের মধ্যে একজন নবীকে প্রেরণ করেছিন এবং তাঁর সমর্থনে তাঁকে স্পষ্ট ওহী দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তাঁর বিরুদ্ধে কুফরি করেছিল ও নাফরমানি করেছিল । এরপরেও আল্লাহ তা'আলা তাদের সহ্য করলেন । তারপর তারা আরও অহঙ্কারী হয়ে ওঠেছিল এবং তাদের অপরাধ আরও বেড়ে গিয়েছিল । অতঃপর তাদের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল কঠিন আযাব । "আমি ফেরাউন ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করেছিলাম এবং তাদের সবাইকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছিলাম" । যা ঘটেছিল তার জন্য (ফেরাউন ছাড়া) যে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না । আল্লাহ মানুষদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করেছিলেন, কিন্তু তারা আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে গাফিল ছিল । আল্লাহ তাঁর পবিত্র বান্দাদেরকে নুসরাহ ও সম্মান দান করেছেন এবং তাদেরকে পূর্ব ও পশ্চিম উভয়েই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করেছেন।
আল্লাহ জাল্লা শানহু বলেন :
قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللّهِ وَاصْبِرُواْ إِنَّ الأَرْضَ لِلّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ
قَالُواْ أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِينَا وَمِن بَعْدِ مَا جِئْتَنَا قَالَ عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِي الأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ
وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَونَ بِالسِّنِينَ وَنَقْصٍ مِّن الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
فَإِذَا جَاءتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُواْ لَنَا هَـذِهِ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُواْ بِمُوسَى وَمَن مَّعَهُ أَلا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِندَ اللّهُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
وَقَالُواْ مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِ مِن آيَةٍ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ
فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ آيَاتٍ مُّفَصَّلاَتٍ فَاسْتَكْبَرُواْ وَكَانُواْ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ الرِّجْزُ قَالُواْ يَا مُوسَى ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ لَئِن كَشَفْتَ عَنَّا الرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِي إِسْرَائِيلَ
فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الرِّجْزَ إِلَى أَجَلٍ هُم بَالِغُوهُ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ
فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا وَكَانُواْ عَنْهَا غَافِلِينَ
وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُواْ يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ بِمَا صَبَرُواْ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُواْ يَعْرِشُونَ
মূসা (আলাইহিস সালাম) তার কওমকে বললেন, আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।
তারা বলল, আমাদের কষ্ট ছিল তোমার আসার পূর্বে এবং তোমার আসার পরে। তিনি বললেন, তোমাদের পরওয়ারদেগার শীঘ্রই তোমাদের শক্রদের ধ্বংস করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ভূ-পৃষ্টে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কেমন কাজ কর।
তারপর আমি পাকড়াও করেছি-ফেরাউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
অতঃপর যখন শুভদিন ফিরে আসে, তখন তারা বলতে আরম্ভ করে যে, এটাই আমাদের জন্য উপযোগী। আর যদি অকল্যাণ এসে উপস্থিত হয় তবে তাতে মূসার এবং তাঁর সঙ্গীদের অলক্ষণ বলে অভিহিত করে। শুনে রাখ তাদের অলক্ষণ আল্লাহরই এলেমে রয়েছে, অথচ এরা জানে না।
তারা আরও বলতে লাগল, আমাদের উপর জাদু করার জন্য তুমি যে নিদর্শনই নিয়ে আস না কেন আমরা কিন্তু তোমার উপর ঈমান আনছি না।
সুতরাং আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ তারা ছিল অপরাধপ্রবণ।
আর তাদের উপর যখন কোন আযাব পড়ে তখন বলে, হে মূসা আমাদের জন্য তোমার পরওয়ারদেগারের নিকট সে বিষয়ে দোয়া কর যা তিনি তোমার সাথে ওয়াদা করে রেখেছেন। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এ আযাব সরিয়ে দাও, তবে অবশ্যই আমরা ঈমান আনব তোমার উপর এবং তোমার সাথে বনী-ইসরাঈলদেরকে যেতে দেব।
অতঃপর যখন আমি তাদের উপর থেকে আযাব তুলে নিতাম নির্ধারিত একটি সময় পর্যন্ত-যেখান পর্যন্ত তাদেরকে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য ছিল, তখন তড়িঘড়ি তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করত।
সুতরাং আমি তাদের কাছে থেকে বদলা নিয়ে নিলাম-বস্তু তঃ তাদেরকে সাগরে ডুবিয়ে দিলাম। কারণ, তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল আমার নিদর্শনসমূহকে এবং তৎপ্রতি অনীহা প্রদর্শন করেছিল।
আর যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি এ ভুখন্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত রেখেছি এবং পরিপূর্ণ হয়ে গেছে তোমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত কল্যাণ বনী-ইসরাঈলদ ের জন্য তাদের ধৈর্য্যধারণের দরুন। আর ধ্বংস করে দিয়েছে সে সবকিছু যা তৈরী করেছিল ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় এবং ধ্বংস করেছি যা কিছু তারা সুউচ্চ নির্মাণ করেছিল।
[সুরা আরাফ(৭) : ১২৮-১৩৭]
আজ আমরা সেই স্থানে রয়েছি যেখানে আমরা আল্লাহর আইন এবং প্রতিশ্রুতিগুলি আমেরিকাতে পূর্ণ হতে দেখছি । আমরা রাজনীতিবিদদেরকে ষাঁড়ের মতো একে অপরের সাথে লড়াই করতে দেখছি, মৌখিক অপব্যবহার করতে দেখছি । যখন কিনা আমেরিকার সর্বসাধারণের মাঝে খারাপ অবস্থা বিরাজমান করছে আর এটিই রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তিগুলোকে নষ্ট করে দেয় । এটি তাদের অস্তিত্বকে নিন্দিত করে এবং তার রাজনীতিবিদদেরকে ও তাদের অহংকারকে অভিশাপ দেয়। কংগ্রেসের উপর জনগণ আক্রমণ করেছে, আল্লাহর ইচ্ছায়; এটা তো শুধুমাত্র ভূমিকা । আর যে মনে করছে যে, হয়তো বিষয়টি এখনই শেষ হয়ে যাবে নয়তো কোন ব্যক্তি আমেরিকাকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাবে তবে সে ধোঁকার মধ্যে রয়েছে আর সে আমেদের শিকার । আল্লাহ চাহে তো, তিনি ঐ সকল হাতগুলোকে রুখবেন না যে হাতগুলো আমেরিকার নির্যাতনের বিরোধীতা করতে উঠে । প্রতিশোধ গ্রহণকারী সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলা ঐ সকল শহীদের রক্তের প্রবাহিত নদীগুলির প্রতিশোধ নিবেন যারা আমেরিকার আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে প্রবাহিত করেছেন । আমেরিকান সেনারাই লক্ষ লক্ষ নারীর সতিত্বকে পদদলিত করেছে । আমেরিকার অন্যায় যুদ্ধের ফলে লক্ষ লক্ষ নারী বিধবা হয়েছে এবং কয়েক মিলিয়ন শিশু এতিম হয়েছে । এই অপরাধী রাষ্ট্র থেকে, আমাদের ক্ষতগুলি নিরাময় হবে এবং আমাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে—আল্লাহর ইচ্ছায়! আল্লাহ তাআলার শক্তিশালী কুদরত ও শক্তির সাহায্যে বিশ্বের মাজলুমরা শীঘ্রই এই অপরাধী রাষ্ট্রের সমাপ্তিতে আনন্দিত হবে । বাধ্যকারী, প্রতাপশালী, মহিমান্বিত প্রতিপালক বলেছেন :
فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنصَرُونَ
وَأَتْبَعْنَاهُمْ فِي هَذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ هُم مِّنَ الْمَقْبُوحِينَ
অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, তৎপর আমি তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। অতএব, দেখ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে।
আমি তাদেরকে নেতা করেছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করত। কেয়ামতের দিন তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।
আমি এই পৃথিবীতে অভিশাপকে তাদের পশ্চাতে লাগিয়ে দিয়েছি এবং কেয়ামতের দিন তারা হবে দুর্দশাগ্রস্ত।
[সুরা কাসাস(২৮) : ৪০-৪২]
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর আনন্দিত হওয়া উচিত কেননা বিজয় নিকটবর্তী হয়ে গেছে । এবং মুসলিম উম্মাহকে প্রস্তুত থাকতে হবে আল্লাহর দ্বীন অনুসারে মানবতার নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য । উম্মাহর ওলামায়েকেরাম নেতৃবৃন্দ, মুজাহিদিন এবং সংস্কারক ব্যক্তিবর্গের উচিত, তারা ইসলাম ও মুসলমানদের জাতীয় স্বার্থকে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক লাভ-ক্ষতির হিসেব নিকেষ এবং নির্দিষ্ট ধারা ও উপশাখা গত মতপার্থক্যের ওপর প্রাধান্য দেবেন । তারা আল্লাহর কিতাব এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নতের বাইরে যে কোন গোলামী ও দাসত্ব থেকে উম্মতকে বাঁচানোর জন্য সকল বাঁধাকে নিঃশেষ করে দেবেন । মুসলিম নেতৃবৃন্দের এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিৎ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের অন্যান্য শত্রুরা আজ আমেরিকার রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের তোড়জোড় আরম্ভ করে দেবে । ইসলামের এই শত্রুরা মুসলিম উম্মাহর উপরে এক নতুন ধরনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে এবং এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়। তাদের আক্রমণের উদ্দেশ্য মুসলমানদের ঘাড় পদদলিত করা, নিজের সুবিধার জন্য উম্মতের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং আরো বহু অন্যায়-অবিচারের পথ উন্মুক্ত করার জন্য মুসলিম উম্মাহর সম্পদগুলো ব্যয় করা । সুতরাং তারা যেন নিজেদেরকে একই ছায়ায় একত্রিত করে আল্লাহর রাস্তায় ইসলামের সমর্থনে এক উম্মাহ হয়ে ইসলামের শত্রুদের মুখের উপর সে সব দরজা বন্ধ করে দেয়, অন্যায় অবিচার দিয়ে যেগুলো তারা উন্মুক্ত করতে চায়।
হে ইসলামের যুবকরা! আপনারা ধর্মের রক্ষক এবং বিশ্ব আধিপত্যে যুদ্ধের জ্বালানী । সুতরাং আপনারা ঐ সকল ব্যক্তিদের ছাড়া আর কারও উপর নির্ভর করবেন না যারা আমল করে আল্লাহর জন্য, যারা আল্লাহর দ্বীনের কল্যাণ কামনা করে, যারা কুরআন ও সুন্নাহর পদ্ধতি অনুসারে দ্বীনকে সমর্থন করে, যার আনুগত্য আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর ইবাদত গুজার মুমিনদের সাথে, যারা আল্লাহর পথে লড়াই করে যাতে বিশ্বজগতসমূহের পালনকর্তার বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়, যারা ইসলামের শত্রুদের চ্যালেঞ্জ করে নিপীড়িত মুসলমানদের সমর্থনে বুক উন্মুক্ত করে দাঁড়ায় । অতএব চটকদার স্লোগান আর গাল সর্বস্ব বুলি কখনোই যেন আপনাদেরকে প্রতারিত না করে । এবং প্রতারকের কান্না ও অশ্রুকে আপনার মন ও মগজ নিয়ে খেলতে দেবেন না । অতীতের ব্যর্থতাগুলিকে পুনরাবৃত্ত করবেন না । আপনি নিজেকে মনোনিবেশ করুন; আল্লাহর আইন সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গী যা আজকের বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত নয়, আমাদের অধিকৃত অঞ্চলসমূহ এবং এই উম্মাহর ইতিহাসের উপরে যে ধর্মটি একসময় অন্যান্য জাতির উপর আধিপত্যে ছিল । জেনে রাখুন যে, যদি আপনি আল্লাহর সাহায্যকারী হন তবে আল্লাহ আপনার সমর্থক এবং সাহায্যকারী হবেন । আর যদি আল্লাহ আপনার সমর্থক এবং সাহায্যকারী হয়ে যান তবে কেউ আপনার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না । আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। [সুরা মুহাম্মাদ(৪৭):৭]
আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
إِن يَنصُرْكُمُ اللّهُ فَلاَ غَالِبَ لَكُمْ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا الَّذِي يَنصُرُكُم مِّن بَعْدِهِ وَعَلَى اللّهِ فَلْيَتَوَكِّلِ الْمُؤْمِنُونَ
যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর পরাক্রান্ত হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানগনের ভরসা করা উচিত। [সুরা ইমরান(৩):১৬০]
হে উম্মতের সন্তানগণ!
সাহস বাড়াও ।
সময় এসে গেছে, তোমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার এবং বিশ্বকে তোমাদের দৃঢ় সংকল্প ও হিম্মতকে দেখিয়ে দেবার ।
অল্প সাহসী মানুষ কখনও মাহাত্ম্য অর্জন করতে পারে না ।
বরং, যারা অবিচল ও ধৈর্যশীল তারাই কেবল মাহাত্ম্য অর্জন করতে পারে ।
হে দৃঢ় সংকল্প ও হিম্মতওয়ালা যুবকেরা !
সাহসী হয়ে উঠো, সামনে এগিয়ে যাও ।
সম্মানের দিনের মতো আর কি কোন একটি দিনও আছে ?
সম্মানের পথে এগিয়ে যাওয়ার সময়ের প্রতিটি অন্তরায় আনন্দের সাথে সহ্য করো ।
কেননা এর বিনিময়ে তোমরা যে পুরস্কার পাবে তা নিঃসন্দেহে অনেক বেশী ।
হে সাহস, সম্মান এবং স্বাধীনতা প্রিয় যুবকেরা !
সারা বিশ্বের কান তোমাদের কণ্ঠ শোনার জন্য অপেক্ষা করছে ।
জ্ঞান এবং অনুগ্রহ অর্জন করো কেননা জ্ঞান তোমাদের পথপ্রদর্শক হবে ।
জ্ঞানের ভূষণ ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে যোগ্য বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীগণ বেশ অবগত রয়েছেন।
তোমরা হচ্ছো ইসলামের সেরা সৈনিক ।
বিশৃঙ্খলার সময়ে তোমরা হচ্ছো ইসলামের স্তম্ভস্বরূপ ।
তোমরা হচ্ছো অন্যায়ের প্রত্যাখ্যানকারী ।
ক্লান্তিকে তোমরা নিজেদের উপর সওয়ার হতে দাও না ।
হে আমার উম্মতের সন্তানেরা!
তোমরা হচ্ছো সেরা পূর্বপুরুষদের সন্তান ।
যাদের কাছ থেকে সর্বদা দুর্দান্ত সব কর্ম প্রকাশ হতে থাকতো ।
আর আমাদের মধ্যে তো আল্লাহর এমন সব সিংহ রয়েছেন যারা কখনও অস্ত্র রাখে দেন না ।
তাদের রয়েছে এমন দুর্দান্ত সাহস যে তারা না ভয় পায় আর না ভয়ে কাঁদে ও চিৎকার করে ।
তোমরা হচ্ছো আল্লাহর পথে কঠোর প্রচেষ্টাকারী ।
তোমরা ঐ সাহসী সিংহের মতো, যে তার শিকারকে রক্ষা করে ।
আমাদের উৎসাহ দাতা আমাদের পূর্বপুরুষগণ; যারা ছিলেন মুক্ত ঈগলের মতো ।
তারা এই পথটিকেই বাছাই করেছেন আর এর জন্যই জন্ম নিয়েছেন ।
পূর্বপুরুষগণ তাদের ছোটদের এই একই মাহাত্ম্য ও সংকল্প শেখাতেন ।
اللهم انصر الإسلام و المسلمين و ارفع راية الدين و قوي جنودهم المخلصين و أذل، الشرك و المشركين و نكس راياتهم يا قوي يا عزيز
اللهم عليك بأمريكا و من والاها
اللهم عليك بأمريكا و من و الاها
اللهم منزل الكتاب و مجري السحاب سريع الحساب هازم الأحزاب اهزم أمريكا و حلفاءها و من و الاها و زلزلهم و انصرنا عليهم يا قوي يا متين
হে আল্লাহ, হে শক্তিশালী, হে পরাক্রমশালী! ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয় দান করুন, দ্বীনের ঝাণ্ডাকে উঁচু করুন, তাদের অনুগত সৈনিকদের শক্তিশালী করুন, শিরক ও মুশরিকদের লাঞ্ছিত করুন এবং তাদের ঝাণ্ডাকে নামিয়ে দিন ।
হে আল্লাহ! আপনি আমেরিকা এবং এর মিত্রদেরকে পরাজিত করুন ।
হে আল্লাহ! আপনি আমেরিকা এবং এর মিত্রদেরকে পরাজিত করুন ।
হে আল্লাহ, হে শক্তিশালী, হে দৃঢ়তাসম্পন্নকারী! আপনি তো কিতাব অবতীর্ণকারী, আপনি তো মেঘ প্রবাহক, আপনি তো দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, আপনি তো বিভিন্ন দলকে পরাজিতকারী সুতরাং আপনি আমেরিকাকে, এর সহযোগীদেরকে এবং যারা এর অনুগত তাদেরকে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করুন ।
و آخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين
و الصلاة و السلام على نبينا محمد و على آله و صحبه أجمعين
*****
সূত্র: নাওয়ায়ে গাযওয়ায়ে হিন্দ ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত
Comment