“দুর্বল চিত্তের কিছু লোক আছে, যারা মর্যাদার অধিকারী হতে চায়, কিন্তু সে জন্যে ত্যাগ স্বীকার করতে চায় না। সম্মান কখনো বিনা কষ্টে অর্জিত হয় না, কিন্তু এ কষ্ট তাদের কাছে বোঝার মত ঠেকে। আর তাই তারা মাথা উঁচু করে না দাঁড়িয়ে, বেছে নেয় বশ্যতা স্বীকারের পথ।
মূল্য মানুষকে দিতেই হবে, তা সে কেউ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, কিংবা হার মেনে মাথা নীচু করে। বরং, হার মানার যে খেসারত, তা মুক্তির খেসারতের চাইতে বহুগুণে বেশি। যে মুক্তির পথে হাঁটে, যে মাথা উঁচু করে চলে, তাকে খেসারত দিতে হয় একবার, কিন্তু যে জালিমের কাছে মাথা নত করেছে, তাকে খেসারত দিতে হয় বারবার, কড়ায়-গণ্ডায়। তারা ভাবে, তারা নিরাপদে জীবন পার করছে, কিন্তু বস্তুত, তাদের এই “নিরাপদ” জীবন অর্জিত হয়েছে, নিজেদের আত্মাকে স্বল্প মূল্যে বিকিয়ে দিয়ে, আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে, হাঁটু গেড়ে, প্রভুর জুতোয় মুখ ঘষে। এ জীবন “নিরাপদ” হতে পারে, কিন্তু এ জীবন কাপুরুষের জীবন।
তারা হতে পারতো মুক্ত-স্বাধীন, কিন্তু তারা বেছে নিয়েছে দাসত্বের পথ। তারা হতে পারতো দৃঢ়চেতা, কিন্তু তারা হয়েছে দুর্বল। তারা হতে পারতো শ্রদ্ধার পাত্র, কিন্তু তারা হয়েছে কাপুরুষ। তারা ভয় পেয়েছে, আর তাই সম্মান ও মর্যাদার পথ ছেড়ে দিয়েছে, কেননা, আত্মত্যাগ, রক্ত আর শ্রমের বিনিময়েই অর্জিত হয় গৌরব, আর এই কষ্টটুকু তারা স্বীকার করতে রাজি হয় নি বিধায়, বশ্যতার খেসারত তারা দিয়ে চলেছে বারবার। অথচ জান-মালের সামান্য মায়া ত্যাগ করলে আজ তারাই হত বিজয়ী। ভয় পেয়ে যে পিছু হটে, তাদেরকে চড়া মূল্য দিতে হয়, একবার নয়, বারবার। কিন্তু মুক্তির মূল্য কেবল একবারই দিতে হয়। অতীতে, ইহুদীরা তাদের নবীকে বলেছিল,
“...হে মূসা, সেখানে একটি প্রবল পরাক্রান্ত জাতি রয়েছে। আমরা কখনও সেখানে যাব না, যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তারা যদি সেখান থেকে বের হয়ে যায় তবে নিশ্চিতই আমরা প্রবেশ করবো...” (মায়িদা, ৫: ২২)
কাজেই তারা শাস্তিস্বরূপ মরুভূমিতে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছিল চল্লিশ বছর ধরে, মরুভূমির বালি তাদের কুড়ে কুড়ে খেয়েছে, নির্বাসনের অবমাননা তাদের ভোগ করতে হয়েছে, ভয় তাদেরকে তাড়া করে বেরিয়েছে- এর সব কিছুই কেবল একটি কারণে, তারা মুক্তি আর মর্যাদার ত্যাগ স্বীকার করতে সাহস করে নি, আর তার বিপরীতে চল্লিশ বছর ধরে তারা লজ্জা আর অবমাননার জীবন ভোগ করেছে, নিঃসন্দেহে, ভীরুতার মূল্য অনেক চড়া।
কাজেই, মূল্য সকলকে পরিশোধ করতেই হবে, প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক দল এবং প্রত্যেক জাতি, হতে পারে সে মূল্য গৌরব অর্জনের মূল্য, অথবা শোষণ এবং দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ হবার মূল্য। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও, এবং বাস্তবতা থেকেও। তোমাদের সামনে তাজা উদাহারণ রয়েছে -- যারা সাক্ষ্য দেয়, বশ্যতার খেসারত, মর্যাদার খেসারত থেকে বহুগুণ ভারি, আর মুক্তির মূল্য পরিশোধে তোমাকে সামান্যই মূল্য দিতে হবে, যতটা আজ তুমি দাসত্বের জালে আটকা পড়ে দিচ্ছ। যারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত তারা প্রকৃত জীবনের স্বাদ পায়, আর যারা দারিদ্রের পরোয়া করে না, দুনিয়া তাদের পায়ে এসে নত হয়। যারা ক্ষমতাসীন আর সরকারকে ভয় করে না, তাদের ভয়ে ক্ষমতাসীন ব্যক্তি আর সরকার তটস্থ থাকে! শত শত উদাহারণ আছে সেইসব আজ্ঞানুবাহী বশীভূত লোকের, যারা তাদের বিবেক বিকিয়ে দিয়েছিল, তাদের উপর অর্পিত বিশ্বাস ভঙ্গ করেছিল, সত্যকে পরিত্যাগ করেছিল, কাদার মাঝে গড়াগড়ি খেয়েছিল এবং একসময় তারা বিলীন হয়ে গেছে, কেউ তাদের মনে রাখে নি ... তাদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন আল্লাহ, তাদের অভিশাপ দিয়ে গেছে মানুষ।
অপরদিকে, আমাদের হাতে এমন দৃষ্টান্ত আছে, যদিও তারা সংখ্যায় অপ্রতুল, তবুও তারা বশ্যতা স্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এবং নিজের পুরষত্বকে তারা বিসর্জন দেয় নি। তাদের যারা বেঁচে আছে তারা মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে, আর যারা মরে গেছে তারা মরে গেছে মাথা উঁচু রেখেই ... ”
- উস্তাদ সায়্যিদ কুতুব, বশ্যতার খেসারত
Collected:
মূল্য মানুষকে দিতেই হবে, তা সে কেউ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, কিংবা হার মেনে মাথা নীচু করে। বরং, হার মানার যে খেসারত, তা মুক্তির খেসারতের চাইতে বহুগুণে বেশি। যে মুক্তির পথে হাঁটে, যে মাথা উঁচু করে চলে, তাকে খেসারত দিতে হয় একবার, কিন্তু যে জালিমের কাছে মাথা নত করেছে, তাকে খেসারত দিতে হয় বারবার, কড়ায়-গণ্ডায়। তারা ভাবে, তারা নিরাপদে জীবন পার করছে, কিন্তু বস্তুত, তাদের এই “নিরাপদ” জীবন অর্জিত হয়েছে, নিজেদের আত্মাকে স্বল্প মূল্যে বিকিয়ে দিয়ে, আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে, হাঁটু গেড়ে, প্রভুর জুতোয় মুখ ঘষে। এ জীবন “নিরাপদ” হতে পারে, কিন্তু এ জীবন কাপুরুষের জীবন।
তারা হতে পারতো মুক্ত-স্বাধীন, কিন্তু তারা বেছে নিয়েছে দাসত্বের পথ। তারা হতে পারতো দৃঢ়চেতা, কিন্তু তারা হয়েছে দুর্বল। তারা হতে পারতো শ্রদ্ধার পাত্র, কিন্তু তারা হয়েছে কাপুরুষ। তারা ভয় পেয়েছে, আর তাই সম্মান ও মর্যাদার পথ ছেড়ে দিয়েছে, কেননা, আত্মত্যাগ, রক্ত আর শ্রমের বিনিময়েই অর্জিত হয় গৌরব, আর এই কষ্টটুকু তারা স্বীকার করতে রাজি হয় নি বিধায়, বশ্যতার খেসারত তারা দিয়ে চলেছে বারবার। অথচ জান-মালের সামান্য মায়া ত্যাগ করলে আজ তারাই হত বিজয়ী। ভয় পেয়ে যে পিছু হটে, তাদেরকে চড়া মূল্য দিতে হয়, একবার নয়, বারবার। কিন্তু মুক্তির মূল্য কেবল একবারই দিতে হয়। অতীতে, ইহুদীরা তাদের নবীকে বলেছিল,
“...হে মূসা, সেখানে একটি প্রবল পরাক্রান্ত জাতি রয়েছে। আমরা কখনও সেখানে যাব না, যে পর্যন্ত না তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তারা যদি সেখান থেকে বের হয়ে যায় তবে নিশ্চিতই আমরা প্রবেশ করবো...” (মায়িদা, ৫: ২২)
কাজেই তারা শাস্তিস্বরূপ মরুভূমিতে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছিল চল্লিশ বছর ধরে, মরুভূমির বালি তাদের কুড়ে কুড়ে খেয়েছে, নির্বাসনের অবমাননা তাদের ভোগ করতে হয়েছে, ভয় তাদেরকে তাড়া করে বেরিয়েছে- এর সব কিছুই কেবল একটি কারণে, তারা মুক্তি আর মর্যাদার ত্যাগ স্বীকার করতে সাহস করে নি, আর তার বিপরীতে চল্লিশ বছর ধরে তারা লজ্জা আর অবমাননার জীবন ভোগ করেছে, নিঃসন্দেহে, ভীরুতার মূল্য অনেক চড়া।
কাজেই, মূল্য সকলকে পরিশোধ করতেই হবে, প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক দল এবং প্রত্যেক জাতি, হতে পারে সে মূল্য গৌরব অর্জনের মূল্য, অথবা শোষণ এবং দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ হবার মূল্য। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও, এবং বাস্তবতা থেকেও। তোমাদের সামনে তাজা উদাহারণ রয়েছে -- যারা সাক্ষ্য দেয়, বশ্যতার খেসারত, মর্যাদার খেসারত থেকে বহুগুণ ভারি, আর মুক্তির মূল্য পরিশোধে তোমাকে সামান্যই মূল্য দিতে হবে, যতটা আজ তুমি দাসত্বের জালে আটকা পড়ে দিচ্ছ। যারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত তারা প্রকৃত জীবনের স্বাদ পায়, আর যারা দারিদ্রের পরোয়া করে না, দুনিয়া তাদের পায়ে এসে নত হয়। যারা ক্ষমতাসীন আর সরকারকে ভয় করে না, তাদের ভয়ে ক্ষমতাসীন ব্যক্তি আর সরকার তটস্থ থাকে! শত শত উদাহারণ আছে সেইসব আজ্ঞানুবাহী বশীভূত লোকের, যারা তাদের বিবেক বিকিয়ে দিয়েছিল, তাদের উপর অর্পিত বিশ্বাস ভঙ্গ করেছিল, সত্যকে পরিত্যাগ করেছিল, কাদার মাঝে গড়াগড়ি খেয়েছিল এবং একসময় তারা বিলীন হয়ে গেছে, কেউ তাদের মনে রাখে নি ... তাদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন আল্লাহ, তাদের অভিশাপ দিয়ে গেছে মানুষ।
অপরদিকে, আমাদের হাতে এমন দৃষ্টান্ত আছে, যদিও তারা সংখ্যায় অপ্রতুল, তবুও তারা বশ্যতা স্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এবং নিজের পুরষত্বকে তারা বিসর্জন দেয় নি। তাদের যারা বেঁচে আছে তারা মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে, আর যারা মরে গেছে তারা মরে গেছে মাথা উঁচু রেখেই ... ”
- উস্তাদ সায়্যিদ কুতুব, বশ্যতার খেসারত
Collected:
Comment