এই সংখ্যাটি মূলত মার্চ, ২০২১ এ মুজাহিদ ভাই আহমাদ আল-ঈসার লোন উলফ হামলা উপলক্ষে ইন্সপায়ার, তথা আল-মালাহিম মিডিয়ার পক্ষ থেকে প্রশংসা বার্তা ও প্রতিবেদন। সাথে রয়েছে ভবিষ্যৎ লোন উলফ মুজাহিদদের জন্য খুবই মূল্যবান কিছু নির্দেশনা।
ভিতরে দেয়া গাইডলাইনের কিছু বিষয়, যেমন আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ সহজ হওয়া ইত্যাদি, আমেরিকার লোন উলফ ভাইদের জন্যই প্রযোজ্য; আমাদের উপমহাদেশের জন্য নয়। তবে বাকি পুরো অংশ যেকোনো অঞ্চলের লোন উলফ মুজাহিদদের জন্য পড়ে রাখা অনেক উপকারী হবে ইন শা আল্লাহ। এই সংখ্যার একটি বড় আকর্ষণ হচ্ছে, জিহাদি অপারেশনে মিডিয়া ব্যবহারের গুরুত্ব ও কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত, চমৎকার একটি আলোচনা। বিভিন্ন দেশে আমাদের ভাইদের অপারেশনগুলোকে ধামাচাপা দিতে কাফির-গোষ্ঠী কী কী অপকৌশল ব্যবহার করে, এবারের ইস্যু থেকে সেই ব্যাপারেও আমরা জানতে পারবো।
বিঃদ্রঃ শেষ পৃষ্ঠায় উপরের দিকে আগের লেখার উপর বাংলা লেখা বসানোর আগে কিছু মূল ছবির কিছু রং এডিট করতে হয়েছে।
ভিতরে দেয়া গাইডলাইনের কিছু বিষয়, যেমন আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ সহজ হওয়া ইত্যাদি, আমেরিকার লোন উলফ ভাইদের জন্যই প্রযোজ্য; আমাদের উপমহাদেশের জন্য নয়। তবে বাকি পুরো অংশ যেকোনো অঞ্চলের লোন উলফ মুজাহিদদের জন্য পড়ে রাখা অনেক উপকারী হবে ইন শা আল্লাহ। এই সংখ্যার একটি বড় আকর্ষণ হচ্ছে, জিহাদি অপারেশনে মিডিয়া ব্যবহারের গুরুত্ব ও কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত, চমৎকার একটি আলোচনা। বিভিন্ন দেশে আমাদের ভাইদের অপারেশনগুলোকে ধামাচাপা দিতে কাফির-গোষ্ঠী কী কী অপকৌশল ব্যবহার করে, এবারের ইস্যু থেকে সেই ব্যাপারেও আমরা জানতে পারবো।
বিঃদ্রঃ শেষ পৃষ্ঠায় উপরের দিকে আগের লেখার উপর বাংলা লেখা বসানোর আগে কিছু মূল ছবির কিছু রং এডিট করতে হয়েছে।
ফাইল সাইজঃ ৪.৪ মেগাবাইট
অনলাইনে পড়ুন
ডাউনলোড করুন, পড়ুন এবং সাধ্যমতো ছড়িয়ে দিন
পিডিএফ ফাইলের টেক্সটগুলো এখানেই যুক্ত করা হলো।
প্রশংসা-বার্তা ও নির্দেশনা
কলোরাডো অপারেশন
আমেরিকা এবং এর ক্রুসেডার-জায়োনিস্ট মিত্রদের সাথে ইসলামী উম্মাহর লড়াই আজও বিরামহীনভাবে চলমান। এই যুদ্ধে মার্কিন ও পশ্চিমা শত্রুরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেমন একজোট হয়ে লড়ছে, ঠিক তেমনিভাবে মুসলিম জাতিও তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়েই যুদ্ধ করছে। এ যুদ্ধে আগ্রাসী, হানাদার শত্রুদের প্রতিরোধ করা শক্তি-সামর্থ্যবান সকলের উপর ফরজ দায়িত্ব। তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে, যেন তারা মুসলিমদের উপর জুলুম-নির্যাতন চালানো থেকে পিছু হটে এবং সেই ইহুদিদের সমর্থন দেয়া বন্ধ করে, যারা আমাদের ভূমিগুলো অন্যায়ভাবে দখলে নিচ্ছে আর আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের উপর অত্যাচার করছে। মুসলিমদের সবাইকে এক হয়ে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে, যাতে তারা মুসলিমদের ভূখণ্ডগুলোতে আর হস্তক্ষেপ করতে না আসে। তাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই মুসলিমদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার; যে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করছে প্রাচ্যের, পশ্চিমের, আরব, অনারব, ফর্সা-কালো, সকল মুসলিম। অংশ নিয়েছে শাম, মিশর, মরক্কো, সোমালিয়া, ইরাক, সুদান, আরব উপদ্বীপ, ভারত, সিন্ধ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, চ্যাড, ক্যামেরুন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা, রাশিয়া, চেচনিয়া - সমস্ত অঞ্চলের মুসলিমরা - যারা যেকোনো ভেদাভেদের উর্ধ্বে একটি অখন্ড জাতি, যে একতার ভিত্তি হলো এক দ্বীনের অনুসরণ এবং এক রবের দাসত্ব। অধিকার ও দায়িত্বের ক্ষেত্রেও তারা অভিন্ন। মহাদেশ থেকে মহাদেশব্যাপী বিস্তৃত এই উম্মাহকে ভিন্ন ভিন্ন নাগরিকত্ব কিংবা দুই দেশের বর্ডার দিয়ে বিভক্ত করা যাবেনা। এই উম্মাহর সবাই একক জাতির অংশ হিসেবে তাদের ত্যাগ ও কুরবানীগুলি তাদের দ্বীনের জন্যই পেশ করে; বুকের রক্ত এই দ্বীনের পথেই প্রবাহিত করে।
এরই সূত্র ধরে, আমরা জুলুমবাজ ও সন্ত্রাসী আমেরিকার মাটিতে চালানো সাম্প্রতিক হামলার প্রশংসা করছি এবং এজন্য মুসলিম উম্মাহকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। হামলাটি চালিয়েছেন শামের বরকতময় ভূমি থেকে আগত আমাদের বীর ভাই আহমাদ আল ঈসা। ভাই আহমাদ আল ঈসা শত্রুপক্ষের ক্ষয়-ক্ষতি ঘটিয়েছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে আন্তরিক প্রত্যেক মুসলিমকে আনন্দিত করেছেন, যাদেরকে প্রতিদিনই নিজেদের জাতির উপর মার্কিন ও পশ্চিমা ক্রুসেডারদের অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং সীমালঙ্ঘনের সাক্ষী হতে হয়। মার্কিন শত্রুদেরকে ক্রমশ আরও দুর্বল করে দিতে, আমেরিকা এবং অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মুসলিমদেরকে আমরা ভাই আহমেদের পথ অনুসরণ করার জন্য ব্যাপক আহ্*বান জানাচ্ছি। যে দেশে আছেন, হামলা সেখানেই চালান - এটাই সবচেয়ে উত্তম হবে, অথবা বাহির থেকেও করতে পারেন। আমাদের আহ্*বান - দুনিয়া ও আখিরাত, উভয় জগতের কল্যাণসমূহ অর্জন করার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি যেন এই যুদ্ধে নিজের ভূমিকা বুঝে নেয় এবং যুদ্ধের সারিতে তার অবস্থান নিশ্চিত করে নেয়।
আমেরিকা এবং এর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট মিলে লেভান্ত (পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল) ও ইরাকে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে, হাজারে হাজারে মুসলিম নিধন করেছে। তাদের অপরাধের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। আমাদের মুজাহিদদের এই অধিকার রয়েছে যে, তাঁরা সেই হত্যাগুলোর বদলা নিবে।
ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন রিপ্রেজেন্টেটিভ ম্যাডিসন কোথর্ন বলেন - সিরিয়ায় আমেরিকার বিমান হামলাগুলির প্রতিশোধ নিতেই আহমাদ আল ঈসা এই অপারেশনটি চালিয়েছেন। কোথর্ন জোর দিয়ে আরও বলেন, সিরিয়ার ব্যাপারে বাইডেনের আচরণ ও পলিসির কারণে এই হামলার দায় প্রেসিডেন্ট জো এর উপরই বর্তাবে।
ম্যাগাজিনের এবারের সংখ্যায় আমরা এই হামলা এবং আমেরিকান শত্রুদের উপর এর প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন করবো। আরো থাকবে একাকী মুজাহিদদের জন্য অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনা, যেন তাঁরা অপারেশন চালিয়ে আল্লাহর সাহায্যক্রমে সর্বোচ্চ ফলাফল নিয়ে আসতে পারেন।
১। মুজাহিদের পরিচয়
আহমাদ আল আলিউই আল ঈসা তাঁর বাবা-মায়ের সাথে ২০০২ ঈসায়ীতে সিরিয়ার রাকা শহর থেকে আমেরিকায় অভিবাসী হন। তখন তাঁর বয়স ছিলো তিন। এরপর থেকে বাকি জীবন আমেরিকাতেই ছিলেন এবং সেখানকার নাগরিকত্বও পান, যা পরবর্তীতে হামলার জন্য অস্ত্র যোগাড় করতে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছিলো এবং অপারেশনের কাজকে সহজসাধ্য করেছিলো। তিনি হামলার স্থান, কলোরাডো (Colorado) রাজ্যে থাকতেন। মার্শাল আর্ট আর কিকবক্সিং এর প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিলো; এগুলোতে বিভিন্ন পুরস্কারও জিতেছিলেন। একবার ২০১৭ সালে আমেরিকান এক ছাত্র তাঁকে উপহাস করে এবং তাঁর মুসলিম নামের জন্য অপমান করে। ভাই আহমাদ দেরি না করে সাথে সাথেই তাকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন এবং ঘুষি চালাতে থাকেন। তিনি সেই ছাত্রকে শেষে রক্তাক্ত করে ছেড়েছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাই আহমাদ বিভিন্ন ইসলামী পোস্ট করতেন এবং মুসলিম উম্মাহর খবরাখবর রাখতেন। তাঁর একটা পোস্ট ছিলো এমন-
"মেরি হিজাব পরিধান করেন। আর যিশু শূকর খান না এবং হাত ও হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করেন। বোঝাই যায়, তারা দু'জনেই মুসলিম ছিলেন।"
তাঁর আরেকটি পোস্ট ছিলো-
"মুসলিমদের ভুল থাকতে পারে, কিন্তু ইসলাম নিখুঁত।"
অন্য একটি পোস্টে, তিনি সমকামীদের বাড়তে থাকা জমায়েত ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন।
২। অপারেশন
মুজাহিদ আহমাদ আল ঈসা কলোরাডো রাজ্যের আর্ভাডা (Arvada) শহরের অধিবাসী ছিলেন। সেখান থেকে হামলার স্থান, একই রাজ্যের বোল্ডার (Boulder) শহর, প্রায় ২৫-৩০ মাইল বা আধ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত।
মুজাহিদ আহমাদ ১৬ই মার্চ, অর্থাৎ হামলা করার এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে, এধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন। এটি ছিলো AR-15 টাইপের চমৎকার একটি মেশিনগান। এটা রাইফেলটি M-16 মিলিটারি মেশিনগানের বেসামরিক সংস্করণ। তিনি কোনোরকম দৃষ্টি আকর্ষণ না করে বৈধ উপায়েই অস্ত্রটি কিনেছিলেন।
২২ শে মার্চ, সোমবার মুজাহিদ আহমাদ অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হন এবং অস্ত্রশস্ত্র সাথে করে বাছাই করা স্পটের দিকে রওনা দেন। লক্ষ্যস্থান ছিলো বোল্ডার শহরের King Soopers নামে বড় একটি সুপারমার্কেট, যেখানে লোকজন প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই এবং করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য জড়ো হয়ে থাকে। দুপুর ৩ টার দিকে তিনি অপারেশন শুরু করেন এবং প্রথমে সুপারমার্কেটের বাইরে থাকা ৩ জন আমেরিকানকে হত্যা করেন। এরপর দোকানের ভিতরে ঢুকে আরো ছয়জনকে হত্যা করেন। তখন একজন পুলিশ এসে পড়ে এবং আমাদের মুজাহিদ ভাই তাকেও হত্যা করেন (মোট ১০ জন)। এরপর আরো পুলিশ সদস্য উপস্থিত হলে তাদের সাথেও তাঁর সংঘর্ষ হয়। আহত হবার আগ পর্যন্ত ৩০ মিনিট ধরে তিনি অপারেশনটি চালিয়েছিলেন। খবরের কাগজ, দ্যা ডেনভার পোস্ট (The Denver Post) এ এসেছে যে, প্রতক্ষ্যদর্শীরা বলেছে হামলার সময় আমাদের মুজাহিদ হাসছিলেন। পুলিশরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো, "এই লোক তো আমাদেরকে নিয়ে হাসছে।”
। এই অপারেশনের ফলাফল এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব
১ নম্বরঃ দশ জন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন ছিলো পুলিশ।
২ নম্বরঃ অপারেশনটি যেখানে চালানো হয়েছে, সেই সুপারমার্কেটটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।
৩ নম্বরঃ এই হামলা আমেরিকার জনগণের মধ্যে বিভক্তি বৃদ্ধি করেছে। ডানপন্থী আর বামপন্থীদের মাঝে বিভক্তি বেড়েছে । রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেট, দুই পার্টিরই নিজেদের সমর্থকদের সাথে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এটা দুইভাবে ঘটেছে-
ক) শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, তথা অ্যাংলো-স্যাক্সন লোকদেরকে টার্গেট করার ফলে ডানপন্থীরা এটাকে বামদের সাথে ঝগড়ার উপাদান হিসেবে লুফে নেয়। এই হামলার কিছুদিন আগেই এক খ্রিস্টান যুবক ৮ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিলো, যাদের মধ্যে ৬ জন ছিলো এশীয় বংশোদ্ভূত মহিলা (Atlanta Spa Shootings, March 16, 2021)। সেটা তখন বামপন্থীরা ডানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিলো।
খ) ডানপন্থীরা সারা আমেরিকা জূড়ে অবাধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়, বহন ও ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নেয়। আর বামপন্থীরা চায় এসব ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হোক। এই হামলাতে এমন একটি মেশিনগান ব্যবহৃত হয়েছে, যেটা গান-ভায়োলেন্স জাতীয় হামলাগুলিতে প্রায়শই ব্যবহার হয়ে থাকে। এই অপারেশন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে আলোচনায় নিয়ে আসে। ঘটনার পরপরই বাইডেন তার বক্তব্যে বলে যে, আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানার উপর আইনি বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে আর এক মিনিট দেরিও তার পছন্দ নয়।
৪ নম্বরঃ আমেরিকার জনগণ আর তাদের নেতাদের জন্য এই অপারেশন শোকের ঘনঘটা নিয়ে এসেছে। কলোরাডোর ঘটনার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বাইডেন বলে, "দশটি প্রাণ ঝরে গিয়েছে। এছাড়াও কলোরাডোতে আরো অনেক পরিবার গান-ভায়োলেন্সের কারণে বিধ্বস্ত... আর এর অনুভূতি - আমি কল্পনাও করতে পারছি না পরিবারগুলো কেমন বোধ করছে। নিহতদের এবং তাদের পরিবারের ও ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছ থেকে তাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নেয়া হয়েছে। যা ঘটে গেছে, তার সাথে মানিয়ে নিতে তাদেরকে এখন কঠিন একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।" বাইডেনের প্রতি আমাদের বার্তা হলো - এই হামলায় নিহতদের পরিবার আর কাছের মানুষদের ঠিক তেমনই বোধ হচ্ছে, যেমনটা বোধ করেছে ইয়েমেন, ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, ইরাক, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সোমালিয়া ও আরো অন্যান্য দেশে আমেরিকার আগ্রাসন, বোমাবর্ষণ, এবং সামরিক মিশনগুলোর কারণে নিহত মুসলিমরা। অতএব, হে বাইডেন, অনুভূতিগুলো তোমার কল্পনা করতে পারা উচিত।
সে আরও বলে, "আমার হৃদয় শোকে ভারাক্রান্ত। যারা বেঁচে ফিরেছে, তাদের জন্য আমাদের সকলের অন্তর সমব্যথী। তাদেরকে নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, লুকিয়ে থাকতে হয়েছে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে। তারা জানতো না তারা তাদের পরিবার আর বন্ধুদের আরেকবার দেখতে পাবে কিনা।" নিহতদের প্রতি শোক ও বেদনা জানাতে বাইডেন আমেরিকার পতাকা অবনমিত রাখতে নির্দেশ দেয়।
গভর্নর জ্যারেড পলিস (Jared Polis) হামলার ব্যাপারে বলে, “আমার হৃদয় আজকে ব্যথিত এবং আমি মনে করি আমাদের সবার অন্তর সত্যিই শোকে আচ্ছন্ন।" যারা বেঁচে ফিরেছে তাদের ব্যাপারে বলা হয়, "তারা আঘাতের এমন ক্ষতচিহ্ন নিয়ে ফিরেছে, যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এর প্রতিটি অংশই যন্ত্রণাদায়ক।"
মার্কিন রিপ্রেজেন্টেটিভ জো নেগুসে (Joe Neguse) জানায়, "বেদনা ও তীব্র যন্ত্রণায় আমার বুকটা ভারাক্রান্ত।" সে আরও বলে, "আমার জাতি আজ রাতে যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। যাদেরকে আমরা হারিয়েছি, তাদের পরিবারের জন্য আমি প্রার্থনা করছি।"
প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহ তা'আলার জন্যই যে, আমেরিকার আজকের পরিস্থিতি সেইসব অস্থিতিশীল মুসলিম দেশগুলোর তুলনায় খুব একটা ভিন্ন নয়, যেখানে যুদ্ধ-সংঘর্ষ আর মৃত্যু প্রতিদিনের ঘটনা। আমেরিকাকেও আজকাল প্রতিদিনই গোলাগুলি আর হত্যা দেখতে হচ্ছে। গান-ভায়োলেন্সের ব্যাপারে বাইডেন জনসমক্ষে তার বক্তব্যে বলেছে, “এই দেশে প্রতিদিন ৩১৬ জন মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়, প্রত্যেকটা দিন! এদের মধ্যে ১০৬ জন প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করে। এবছর শুরু থেকে নিয়ে ৮৫০ টিরও বেশি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এবং এতে জীবনহানি হয়েছে ২৫০ এর বেশি, আহত হয়েছে ৫০০। এটা মহামারীর আকার ধারণ করেছে।" সে আরও বলে, “প্রতিমাসে ৫৩ জন নারীকে তার সঙ্গীর হাতে গুলিবিদ্ধ হতে হয়।" এটাই হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারীদের অধিকার। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জানায়, "গান-ভায়োলেন্সের কারণে আমাদের পতাকা সবসময় অবনমিত রাখতে হয়।" এর কারণে আমেরিকাকে যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তার ব্যাপারে বাইডেন বলে, "এসব ঘটনায় হাসপাতালের বিল, শারীরিক চিকিৎসা, মানসিক আঘাতের চিকিৎসা, আইনি বিভিন্ন ফী, জেলখানার খরচ, কর্মঘন্টার অপচয় ইত্যাদি বাবদ এই জাতিকে প্রতি বছর ২৮০ বিলিয়ন ডলার গুণতে হয়; প্রতক্ষ্যদর্শীদের যে মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি হয়, তার কথা যদি বাদও দেই।" অস্ত্র সহিংসতার দলিল রাখা ওয়েবসাইট, Gun Violence Archive (gunviolencearchive.org) এর হিসাব অনুযায়ী শুধু গত এক বছরেই ৪৩,৫৮৯ জন (এর মধ্যে আত্মহত্যা ২৪,১৫৬। সূত্রঃ https://www.gunviolencearchive.org/r...aths?year=2020) নিহত হয়েছে। Accuracy in Media এর বরাতে জানা যায়, এবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কেবল শিকাগোতেই খুন হয়েছে ১২৩ জন (সূত্রঃ https://www.aim.org/aim-column/when-...-equal)। আমেরিকাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেমন করোনার গজবে আক্রান্ত করেছেন, তেমনি তাদেরকে এধরনের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দুর্দশাতেও ফেলেছেন।
শাইখ আবু ক্বাতাদা আল-ফিলিস্তিনি, আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন, তাঁর "Collection of Tweets” বইয়ের ২৪২ পৃষ্ঠায় বলেছেন, "মু'মিনদের উপর আল্লাহর নিয়ামতসমূহের একটি হলো এই যে, তাদের কাছে আল্লাহর কিতাব রয়েছে, যা আল্লাহর শত্রুদের মন-মানসিকতা ও হালচিত্র প্রকাশ করে দেয়। নিশ্চিত থাকুন , "فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ " - "অবশ্যই তারা যন্ত্রণা ভোগ করে" [৪:১০৪]। সুতরাং তাদের বাহ্যিক অবস্থা আর বাবুগিরি যেন আপনকে ধোঁকায় না ফেলে, কারণ পর্দার আড়ালে যন্ত্রণায় তারা আর্তনাদ করছে।"
৫ নম্বরঃ আমেরিকানদের মনে এই অপারেশন উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। কলোরাডোর ঘটনায় ওবামা এক মন্তব্যে বলে, “একটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়, কোনোরকম ভয়-ভীতি ছাড়াই আমাদের বাজারে যেতে পারার কথা। কেউ হঠাৎ বন্দুক নিয়ে হাজির হলে পালাবো কীভাবে, সেই মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই আমাদের স্কুলে যেতে পারার কথা, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে পারার কথা, দল বেঁধে উপাসনায় যেতে পারার কথা। আমাদের জীবন হওয়ার কথা এমন যে, ঘরের বাইরে পরের ভ্রমণটাই আমাদের শেষ ভ্রমণ কিনা সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকতে হবে না।" ওবামা বলতে থাকে, "আমাদের সেরকমই করতে পারার কথা ছিলো। কিন্তু আমেরিকাতে, আমরা সেটা পারছি না।"
হামলার পরদিন মঙ্গলবারে, কলোরাডো রাজ্যের নির্বাচিত সংসদ প্রতিনিধি, জো নেগুসে (Joe Neguse) বলে, "আমাদের বাজারগুলোতে আমাদের নিরাপদ বোধ করার কথা ছিলো। আমাদের স্কুল, সিনেমাহল এবং পাড়া-মহল্লায় আমাদের নিরাপদ থাকার কথা ছিলো।"
কিন্তু তারা কীভাবে নিরাপদ বোধ করতে পারে, যখন মুসলিমদেরকে তাদের কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে হয়? সুতরাং, ইনসাফের দাবি এটাই যে, মুসলিমদেরকে যে অবস্থার ভিতর দিয়ে যেতে হচ্ছে, তাদেরকেও তা টের পেতে হবে।
ছবিগুলো দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, এই অপারেশনের মোকাবেলা করতে তাদেরকে কী পরিমাণ নিরাপত্তা পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
-ওয়াশিংটন টাইমস
-জেফরি সাইমন,
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ায় সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ,
"Lone Wolf Terrorism" বইয়ের রচয়িতা
৪। অপারেশনটির বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন প্রশংসনীয় দিক
১ নম্বরঃ মুজাহিদ আহমাদ আল ঈসা হামলার জন্য অস্ত্র নির্বাচনের কাজটি চমৎকার করেছেন। তিনি রাইফেলটি অর্ডার করেছেন এবং বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ ছাড়াই হস্তগত করেছেন। অস্ত্রের টাইপটাও ভাই আহমাদ ভালো বাছাই করেছেন। তিনি আক্রমণাত্মক প্রকৃতির একটি অস্ত্র পছন্দ করেছেন, গুলি ছোঁড়ার রেট, কম রিকয়েল (পশ্চাৎমুখী ধাক্কা) এবং লক্ষ্যভেদের ক্ষমতার জন্য যার আলাদা সুখ্যাতি আছে। এই রাইফেলটি ব্যবহার করা সহজ; দামও খুব বেশি নয়, প্রায় ৫০০ ডলারের আশেপাশে।
২ নম্বরঃ মুজাহিদ আহমাদ হামলার স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এমন একটি স্পট বাছাই করেছেন যেখানে লোকজনের জমায়েত হয়, এর ফলে মৃত্যুসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হামলার সময়টাও তিনি এমনভাবে বেছে নিয়েছেন, যখন করোনার ভ্যাক্সিন আর কেনাকাটার জন্য মানুষ সেখানে ভিড় করে।
৩ নম্বরঃ হামলা চলাকালীন টার্গেট নির্ধারণের ব্যাপারে মুজাহিদ আহমাদ আল ঈসা প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। তিনি তাঁর গুলির লক্ষ্য হিসেবে বাছাই করেছেন ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত সাদা চামড়ার অ্যংলো-স্যাক্সনদেরকে, যাদেরকে আমেরিকার দেশ-চালানো সম্প্রদায় হিসেবে ধরা হয়। আফ্রিকান, এশীয়, ভারতীয় কিংবা লাতিন জাতীয়তার কাউকে তিনি টার্গেট করেন নি।
৪ নম্বরঃ মুজাহিদ ভাই আহমাদ অপারেশনটি বেশ আকস্মিকতার সাথে করেছেন; এর জন্য মানুষ প্রস্তুত ছিলো না। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি আগে থেকে সতর্ক ছিলেন, যেন এরকম একটি হামলা করতে চাওয়ার ব্যাপারে কেউ তাঁকে সন্দেহ করতে না পারে।
৫। ইন্সপায়ার এর পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা
১ নম্বরঃ সবসময় এমন জায়গা নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন, যেখানে ভিড় করা লোকজনের পক্ষে লুকিয়ে থাকা বা পালানোর রাস্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন, যতক্ষণ না তাদেরকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যায় হত্যা করা যায়।
২ নম্বরঃ কোনো অপারেশনের জন্য কাজ গুছানোর সময় পুলিশ এবং শত্রুদের সাথে একেবারে শেষতক লড়াই করার ব্যাপারে মনের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প রাখবেন। মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। সেই অনুযায়ী আগে থেকেই যথেষ্ট গোলাবারুদ সহ প্রস্তুতি নিবেন।
৩ নম্বরঃ আপনার অপারেশনটিকে বিধ্বংসী রূপ দেয়ার চেষ্টা করবেন। এজন্য বিভিন্ন বিস্ফোরক ডিভাইস বা বোমা তৈরি করতে পারেন, যেগুলো ইন্সপায়ার ম্যাগাজিনের আগের সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অথবা লোকজন সমেত হামলার জায়গা জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য মলোটভ ককটেল বানিয়ে নিতে পারেন। উপরের গুলো সম্ভব না হলে অন্তত ম্যাচ, লাইটার এবং দাহ্য পদার্থ নিয়ে যাবেন, যেন কমপক্ষে স্থাপনাটা জ্বালিয়ে দেয়া যায়। অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক বা মিডিয়া, যেদিক থেকেই দেখা হোক, এধরনের বিধ্বংসী কাজগুলো শত্রুদের উপর অপারেশনের প্রভাব বহুগুণে বৃদ্ধি করে এবং প্রভাবকে দীর্ঘমেয়াদি করে।
৪ নম্বরঃ অস্ত্রশস্ত্র যোগাড় করে সেগুলো দিয়ে জিহাদি অপারেশন চালাতে হলে আমেরিকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতার সুবিধা নিন। অস্ত্রের মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে বা অস্ত্রের প্রসার কমাতে আইনি বিধি-নিষেধ আরোপ করা আমেরিকায় খুবই কঠিন; এর সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আপনাকে শুধু ইন্টারনেটে আর অস্ত্রশস্ত্রের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে, বৈধভাবে অস্ত্রের মালিকানা পাওয়ার জন্য আপনার কী কী লাগবে এবং কীভাবে অস্ত্রটা কিনতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় মেশিনগান কিনতে পারলে, তবে এতে যদি ঝামেলা পোহাতে হয়, তাহলে স্টেল্*থ ওয়েপন (সহজে শনাক্ত করা যায় না, এমন অস্ত্র) সংগ্রহ করার পথ খুঁজুন। এর জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের রেডিমেড বিভিন্ন পার্টস কিনে সেগুলো নিজে নিজে জোড়া দিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি অস্ত্র তৈরি করে নিতে পারবেন। এই পদ্ধতি অবলম্বনের দুইটি সুবিধা আছে:
১ম সুবিধাঃ পার্টস বিক্রয়ের উপর আইনি নিয়ন্ত্রণ কম। তাই এগুলো যোগাড় করা তুলনামূলক সহজ।
২য় সুবিধাঃ এতে অস্ত্রটির কোনো সিরিয়াল নম্বর থাকবে না।
যদি এই পদ্ধতিতে কাজ করতে কোনো বাধার সম্মুখীন হন, তাহলে চেষ্টা করুন ব্ল্যাক মার্কেট (চোরাই বাজার), ফ্রি সেলসের অফার কিংবা অনলাইনে ও বিভিন্ন জায়গায় দেয়া বিজ্ঞাপন থেকে অস্ত্রটি কিনতে। কারণ অস্ত্র বেচাকেনার এই অংশটা সরকারের নাগালের বাইরে থাকে।
মূলত বোঝার বিষয় হলো - আমেরিকাতে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রসার খুবই ব্যাপক; ৩৯০ মিলিয়নেরও বেশি অস্ত্র সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মার্কিনদের দেশে বন্দুক যোগাড় করার থেকে সহজ কিছু হয় না। সুতরাং, ছুরিকাঘাত বা তাদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়া জাতীয় হামলা করতে যাবেন না, যতক্ষণ না অস্ত্রশস্ত্রের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন এবং অপারেশনে সেগুলো ব্যবহার করছেন।
৫ নম্বরঃ অপারেশনের ব্যাপারে সবসময় একটি মিডিয়া বার্তা দিবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে হামলার ফলাফল কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে যখন প্রথম প্রথম জিহাদি হামলা শুরু হয়, তখন হামলাটি করার পেছনে কোনো ইসলামী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বা জিহাদি প্রেরণার ছিটেফোঁটা গন্ধ পাওয়ার সাথে সাথে তারা অপারেশনটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা দিতো। সময়ের সাথে সাথে আমেরিকান ও ক্রুসেডার পশ্চিমারা বুঝতে পারলো যে, এতে বরং তাদের দেশে জিহাদি হামলা বেড়ে চলেছে। তারা দেখলো একটা অপারেশন পরবর্তীতে আরেকটা অপারেশনের প্রেরণা যোগাচ্ছে, একজন বীর আরেকজন বীরকে উজ্জীবিত করছে, হামলা করার ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকা ব্যক্তি হামলা করতে বদ্ধপরিকর হচ্ছে, যে ভয়ে ছিলো, তার মধ্যে সাহসের সঞ্চার হচ্ছে, বিষণ্ন ব্যক্তি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠছে। এসব দেখে তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, কোনো অপারেশনকে জিহাদি হামলা বা সন্ত্রাসী হামলা তকমা দিলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। ফলে জিহাদি কর্মকান্ড সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা ও পশ্চিমারা তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনলো। তারা অপারেশনগুলিকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দেয়া বন্ধ করে দিলো। লোকের সামনে হামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য তারা গোপন করতে শুরু করলো, যদিও নিজেরা ঠিকই তা বুঝতে পারতো। হামলার জিহাদি দিকটাকে ধামাচাপা দিতে নানা বানোয়াট কথা তারা সামনে আনতে লাগলো, যেমনঃ হামলাকারী মানসিকভাবে অসুস্থ কিংবা নিজের সামাজিক পদমর্যাদা নিয়ে তার ভিতরে অসন্তোষ কাজ করতো ইত্যাদি। হামলাকারীর ধর্ম গোপন রেখে তারা বলতে লাগলো হামলার হামলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য "অজ্ঞাত" অথবা তদন্তসাপেক্ষ। আর অনতিবিলম্বে হামলাকারীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো তারা বন্ধ করে দিতো। এই সব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই; একটি হামলা যেন আরেকটি নতুন হামলা ডেকে না আনে। পশ্চিমাদের এই হীন কৌশলের পাল্টা জবাব হিসেবে আমরা জিহাদি অপারেশনে মিডিয়া ব্যবহারের পদ্ধতি ও এর গুরুত্ব নিয়ে কিছু আলোচনা করবো।
জিহাদি হামলায় মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে অপারেশনের প্রভাব অনেকগুণ বৃদ্ধি পায় এবং ফলস্বরূপ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার পক্ষ থেকে প্রতিদানও অনেকগুণ বেড়ে যায়। মিডিয়ার উপযুক্ত ব্যবহার হলে অপারেশনের সাথে বেশ কিছু ব্যাপার যুক্ত হয়, যা অপারেশনটিকে অসাধারণ কার্যকর করে তুলতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো, জিহাদি হামলার পেছনে আমাদের লক্ষ-উদ্দেশ্যগুলো সবার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হওয়া। আমাদের উদ্দেশ্য থাকে ফিলিস্তিনের ভাইদের পক্ষ হয়ে প্রতিশোধ নেয়া; হামলার কারণগুলোর মধ্যে এটাই সবথেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। এছাড়াও মিডিয়া বার্তা কাফিরদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তাদেরকে ক্রুদ্ধ করে তোলে। এই বার্তা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয় এবং তারা এই অপারেশনের কারণে আনন্দিত হয়। আর আপনার কাজ দেখে অন্যরাও কাজ করতে উদ্যোগী হয়, এভাবে আপনি আপনার ভাইদেরকে উৎসাহ দিলেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগালেন। পশ্চিমা দেশগুলাতে কত হামলাই না হয়েছে, যেখানে সেটার অনুপ্রেরণা ছিলো পূর্ববর্তী একটি হামলা! হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন -
مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ
অর্থঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো ভালো কাজের প্রচলন করে, সে তার এ কাজের সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা করবে সে এর বিনিময়েও সওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সওয়াব কোনো অংশে কমানো হবে না।
-https://sunnah.com/muslim:1017a
সুতরাং, আপনার কাজের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে যত অপারেশন চালানো হবে, আপনি সবগুলোর সওয়াব অর্জন করবেন।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হামলার পেছনে মুসলিমদের যে উদ্দেশ্য, মিডিয়া প্রকাশনাটি যেন সেই উদ্দেশ্যটি বহন করে; তা হচ্ছে, শত্রুদেরকে মুসলিম দেশগুলিতে আক্রমণ করা বন্ধ করতে হবে, মুসলিম জাতির উপর তাদের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, মুসলিমদের কোনো বিষয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা থেকে তাদেরকে বিরত থাকতে হবে এবং ইহুদিদের প্রতি তাদের সমর্থন উঠিয়ে নিতে হবে। লোন উলফ বা জিহাদি গ্রুপগুলোর তরফ থেকে তাদেরকে যখন এই বার্তাগুলি বারংবার পাঠানো হবে, তারা তখন এই ব্যাপারগুলো সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি করতে পারবে। এই উপলদ্ধি তাদেরকে আমাদের দাবিগুলো মেনে নিতে বাধ্য করবে আর এভাবেই মুসলিমরা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।
এসব কারণ বিবেচনা করলে বোঝা যায়, একাকী মুজাহিদকে জানতে হবে, কীভাবে সে মিডিয়ার মাধ্যমে তার অপারেশনের বার্তাটি পৌঁছে দিতে পারে, যাতে শত্রুপক্ষ এই পরিশ্রম পণ্ড করার সুযোগ না পায়। বেশ কিছু উপায়ে এই কাজটি করা যায়। যেমনঃ
- হেডক্যামেরা (বেল্ট/ক্যাপ দিয়ে মাথায় পরে থাকা যায়, এমন ক্যামেরা) দিয়ে অপারেশনের ভিডিও ধারণ করা এবং ফেসবুক বা ইউটিউবে সেটা লাইভ সম্প্রচার করা। এটাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা। এতে করে যে আততায়ী শত্রু নিউজিল্যান্ডে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছিলো, সে আর এই দিক থেকে এগিয়ে থাকলো না।
- অপারেশনের সময় ঐ দেশেরই কোনো মিডিয়া আউটলেটের সাথে যোগাযোগ করে অপারেশন এবং এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া (যেমনটা সাঈদ কোয়াশি ও শেরিফ কোয়াশি ভাইয়েরা ফ্রান্সে করেছিলেন), যাতে প্রতিপক্ষ পরবর্তীতে ব্যাপারগুলো গোপন করতে না পারে। মিডিয়ার যোগাযোগ নম্বর আগে থেকে সংগ্রহে রাখতে হবে।
- যদি তাদের মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, তাহলে এক বা একাধিক পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করে বার্তাগুলো পৌঁছে দেয়া যায়।
- টুইটার এবং ফেসবুকে নিজের আসল নাম দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন। আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা বার্তা অপারেশন চলাকালীন সময়ে পোস্ট করে দিন।
- আপনার টুইটে বা পোস্টে যে বার্তাটি দিবেন তা হবে এরকম -
"আমি ফিলিস্তিন এবং অন্যান্য ভূখণ্ডের মুসলিমদের আহ্*বানে সাড়া দিতে এই হামলাটি করেছি। আমেরিকা ও পশ্চিমারা আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সম্মানে যে আঘাত করেছে, আল্লাহর পবিত্র কিতাব এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে, সেগুলোর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমি এই হামলা করেছি। নিরাপদ থাকার স্বপ্নও তোমরা দেখতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুসলিমদেরকে তাদের মতো থাকতে দিবে, তাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা ছেড়ে দিবে এবং ইহুদিদেরকে সহযোগিতা করা বন্ধ করবে। আমি মুসলিম ভাইদেরকে আহ্*বান করছি, আপনারাও আমেরিকা এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হামলা চালান।"
- আপনার নিজের একটি ভিডিও রেকর্ডিং বানাতে পারেন, যেখানে আপনি আপনার উদ্দেশ্য এবং বার্তা তুলে ধরবেন। পরে অপারেশন চালানোর সময় ইন্টারনেটে ভিডিওটি আপলোড দিয়ে দিবেন। কেবল লিখিত বার্তা দেয়ার চেয়ে এমন করতে পারলে বেশি ভালো হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে অপারেশনের ভিডিও রেকর্ড করতে দিতে পারেন। আপনার বার্তা তারাই সরাসরি মিডিয়ার কাছে পাঠিয়ে দিবে। ২০১৩ সালে ব্রিটেনে ভাই আদেবোলাজো এরকমই করেছিলেন; যখন তিনি তার উদ্দেশ্যগুলো বলছিলেন, এক পথচারী তাঁর ভিডিও ধারণ করছিলো। অপারেশনের সময় এমন করতে পারা বেশ কঠিন, তবে সুযোগ থাকলে এটাই বেশি কার্যকর।
এছাড়াও হামলা চালানোর সময় জোরালো কণ্ঠে প্রচুর তাকবীর ধ্বনি দিবেন। শত্রুপক্ষ অপারেশনটি গোপন করতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে এটা একটা কারণ হিসেবে কাজ করবে। এর সাথে আমেরিকা এবং পশ্চিমা ক্রুসেডারদের নীতি-বহির্ভূত কাজকর্ম, মুসলিমদের ব্যাপারে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ইহুদিদের প্রতি তাদের সমর্থন, এই বিষয়গুলো উল্লেখ করবেন। এমনভাবে তাদের অপরাধগুলো তুলে ধরবেন, যেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবাই শুনে তা বুঝতে পারে।
মূল বিষয় হলো, অপারেশনের মাধ্যমে যে বার্তা দিতে চাওয়া হচ্ছে, তা যেন নষ্ট না হয়, কারণ এটা শুধু আপনার নয়, বরং পুরো মুসলিম উম্মাহর হক। শত্রুপক্ষ সুযোগ পেলেই বিশ্ববাসীর কাছে আপনাকে স্রেফ একজন উন্মাদ বা সাইকোপ্যাথ হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করবে। তারা বলতে চাইবে, অপারেশনটি আপনার মানসিক অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ কিংবা দুনিয়াবী কোনো তুচ্ছ বিষয়ের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলাটি করা হয়েছে। এর সবই তারা করবে হামলার পেছনে থাকা বিশুদ্ধ ইসলামী চেতনা এবং হামলার মহৎ উদ্দেশ্যগুলো ঢেকে রাখার জন্য। অপারেশনের পাশাপাশি বার্তাগুলো পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারেও যথেষ্ট গুরুত্ব না দিলে, এটাই হতে পারে তাদের সেই সুযোগ পেয়ে যাওয়ার কারণ। সুতরাং, এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন।, জিহাদি অপারেশনের সামরিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক প্রস্তুতিতে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, মিডিয়ার ব্যাপারগুলোও ততটাই গুরুত্বের সাথে নিবেন।
শেষ কথাঃ
আমরা আমেরিকায় এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে অবস্থানরত মুসলিমদেরকে জিহাদের দিকে আহ্*বান করছি। আপনাদের হাতে জিহাদি হামলা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, শত্রু আপনাদের সামনেই উপস্থিত, অস্ত্রও নাগালের মধ্যেই রয়েছে। এই উম্মাহ আপনাদেরকে চিৎকার করে ডাকছে। শুধু প্রয়োজন একটি দৃঢ় সংকল্প এবং এমন ইচ্ছাশক্তি, যা সমস্ত দ্বিধাকে ঝেড়ে ফেলবে। এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে পাবেন আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি আর চিরসুখময় জান্নাত।
জিহাদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত আল্লাহর সকল বান্দার জন্য খাস দু'আ করতে ভুলবেন না।
অনলাইনে পড়ুন
ডাউনলোড করুন, পড়ুন এবং সাধ্যমতো ছড়িয়ে দিন
পিডিএফ ফাইলের টেক্সটগুলো এখানেই যুক্ত করা হলো।
প্রশংসা-বার্তা ও নির্দেশনা
কলোরাডো অপারেশন
শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু
আমেরিকা এবং এর ক্রুসেডার-জায়োনিস্ট মিত্রদের সাথে ইসলামী উম্মাহর লড়াই আজও বিরামহীনভাবে চলমান। এই যুদ্ধে মার্কিন ও পশ্চিমা শত্রুরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেমন একজোট হয়ে লড়ছে, ঠিক তেমনিভাবে মুসলিম জাতিও তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়েই যুদ্ধ করছে। এ যুদ্ধে আগ্রাসী, হানাদার শত্রুদের প্রতিরোধ করা শক্তি-সামর্থ্যবান সকলের উপর ফরজ দায়িত্ব। তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে, যেন তারা মুসলিমদের উপর জুলুম-নির্যাতন চালানো থেকে পিছু হটে এবং সেই ইহুদিদের সমর্থন দেয়া বন্ধ করে, যারা আমাদের ভূমিগুলো অন্যায়ভাবে দখলে নিচ্ছে আর আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের উপর অত্যাচার করছে। মুসলিমদের সবাইকে এক হয়ে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে, যাতে তারা মুসলিমদের ভূখণ্ডগুলোতে আর হস্তক্ষেপ করতে না আসে। তাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই মুসলিমদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার; যে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করছে প্রাচ্যের, পশ্চিমের, আরব, অনারব, ফর্সা-কালো, সকল মুসলিম। অংশ নিয়েছে শাম, মিশর, মরক্কো, সোমালিয়া, ইরাক, সুদান, আরব উপদ্বীপ, ভারত, সিন্ধ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, চ্যাড, ক্যামেরুন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা, রাশিয়া, চেচনিয়া - সমস্ত অঞ্চলের মুসলিমরা - যারা যেকোনো ভেদাভেদের উর্ধ্বে একটি অখন্ড জাতি, যে একতার ভিত্তি হলো এক দ্বীনের অনুসরণ এবং এক রবের দাসত্ব। অধিকার ও দায়িত্বের ক্ষেত্রেও তারা অভিন্ন। মহাদেশ থেকে মহাদেশব্যাপী বিস্তৃত এই উম্মাহকে ভিন্ন ভিন্ন নাগরিকত্ব কিংবা দুই দেশের বর্ডার দিয়ে বিভক্ত করা যাবেনা। এই উম্মাহর সবাই একক জাতির অংশ হিসেবে তাদের ত্যাগ ও কুরবানীগুলি তাদের দ্বীনের জন্যই পেশ করে; বুকের রক্ত এই দ্বীনের পথেই প্রবাহিত করে।
এরই সূত্র ধরে, আমরা জুলুমবাজ ও সন্ত্রাসী আমেরিকার মাটিতে চালানো সাম্প্রতিক হামলার প্রশংসা করছি এবং এজন্য মুসলিম উম্মাহকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। হামলাটি চালিয়েছেন শামের বরকতময় ভূমি থেকে আগত আমাদের বীর ভাই আহমাদ আল ঈসা। ভাই আহমাদ আল ঈসা শত্রুপক্ষের ক্ষয়-ক্ষতি ঘটিয়েছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে আন্তরিক প্রত্যেক মুসলিমকে আনন্দিত করেছেন, যাদেরকে প্রতিদিনই নিজেদের জাতির উপর মার্কিন ও পশ্চিমা ক্রুসেডারদের অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং সীমালঙ্ঘনের সাক্ষী হতে হয়। মার্কিন শত্রুদেরকে ক্রমশ আরও দুর্বল করে দিতে, আমেরিকা এবং অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মুসলিমদেরকে আমরা ভাই আহমেদের পথ অনুসরণ করার জন্য ব্যাপক আহ্*বান জানাচ্ছি। যে দেশে আছেন, হামলা সেখানেই চালান - এটাই সবচেয়ে উত্তম হবে, অথবা বাহির থেকেও করতে পারেন। আমাদের আহ্*বান - দুনিয়া ও আখিরাত, উভয় জগতের কল্যাণসমূহ অর্জন করার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি যেন এই যুদ্ধে নিজের ভূমিকা বুঝে নেয় এবং যুদ্ধের সারিতে তার অবস্থান নিশ্চিত করে নেয়।
আমেরিকা এবং এর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট মিলে লেভান্ত (পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল) ও ইরাকে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে, হাজারে হাজারে মুসলিম নিধন করেছে। তাদের অপরাধের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। আমাদের মুজাহিদদের এই অধিকার রয়েছে যে, তাঁরা সেই হত্যাগুলোর বদলা নিবে।
ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন রিপ্রেজেন্টেটিভ ম্যাডিসন কোথর্ন বলেন - সিরিয়ায় আমেরিকার বিমান হামলাগুলির প্রতিশোধ নিতেই আহমাদ আল ঈসা এই অপারেশনটি চালিয়েছেন। কোথর্ন জোর দিয়ে আরও বলেন, সিরিয়ার ব্যাপারে বাইডেনের আচরণ ও পলিসির কারণে এই হামলার দায় প্রেসিডেন্ট জো এর উপরই বর্তাবে।
ম্যাগাজিনের এবারের সংখ্যায় আমরা এই হামলা এবং আমেরিকান শত্রুদের উপর এর প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন করবো। আরো থাকবে একাকী মুজাহিদদের জন্য অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনা, যেন তাঁরা অপারেশন চালিয়ে আল্লাহর সাহায্যক্রমে সর্বোচ্চ ফলাফল নিয়ে আসতে পারেন।
শামের মুজাহিদ আহমাদ আল ঈসার অপারেশন
১। মুজাহিদের পরিচয়
আহমাদ আল আলিউই আল ঈসা তাঁর বাবা-মায়ের সাথে ২০০২ ঈসায়ীতে সিরিয়ার রাকা শহর থেকে আমেরিকায় অভিবাসী হন। তখন তাঁর বয়স ছিলো তিন। এরপর থেকে বাকি জীবন আমেরিকাতেই ছিলেন এবং সেখানকার নাগরিকত্বও পান, যা পরবর্তীতে হামলার জন্য অস্ত্র যোগাড় করতে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছিলো এবং অপারেশনের কাজকে সহজসাধ্য করেছিলো। তিনি হামলার স্থান, কলোরাডো (Colorado) রাজ্যে থাকতেন। মার্শাল আর্ট আর কিকবক্সিং এর প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিলো; এগুলোতে বিভিন্ন পুরস্কারও জিতেছিলেন। একবার ২০১৭ সালে আমেরিকান এক ছাত্র তাঁকে উপহাস করে এবং তাঁর মুসলিম নামের জন্য অপমান করে। ভাই আহমাদ দেরি না করে সাথে সাথেই তাকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন এবং ঘুষি চালাতে থাকেন। তিনি সেই ছাত্রকে শেষে রক্তাক্ত করে ছেড়েছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাই আহমাদ বিভিন্ন ইসলামী পোস্ট করতেন এবং মুসলিম উম্মাহর খবরাখবর রাখতেন। তাঁর একটা পোস্ট ছিলো এমন-
"মেরি হিজাব পরিধান করেন। আর যিশু শূকর খান না এবং হাত ও হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করেন। বোঝাই যায়, তারা দু'জনেই মুসলিম ছিলেন।"
তাঁর আরেকটি পোস্ট ছিলো-
"মুসলিমদের ভুল থাকতে পারে, কিন্তু ইসলাম নিখুঁত।"
অন্য একটি পোস্টে, তিনি সমকামীদের বাড়তে থাকা জমায়েত ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন।
২। অপারেশন
মুজাহিদ আহমাদ আল ঈসা কলোরাডো রাজ্যের আর্ভাডা (Arvada) শহরের অধিবাসী ছিলেন। সেখান থেকে হামলার স্থান, একই রাজ্যের বোল্ডার (Boulder) শহর, প্রায় ২৫-৩০ মাইল বা আধ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত।
মুজাহিদ আহমাদ ১৬ই মার্চ, অর্থাৎ হামলা করার এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে, এধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন। এটি ছিলো AR-15 টাইপের চমৎকার একটি মেশিনগান। এটা রাইফেলটি M-16 মিলিটারি মেশিনগানের বেসামরিক সংস্করণ। তিনি কোনোরকম দৃষ্টি আকর্ষণ না করে বৈধ উপায়েই অস্ত্রটি কিনেছিলেন।
২২ শে মার্চ, সোমবার মুজাহিদ আহমাদ অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হন এবং অস্ত্রশস্ত্র সাথে করে বাছাই করা স্পটের দিকে রওনা দেন। লক্ষ্যস্থান ছিলো বোল্ডার শহরের King Soopers নামে বড় একটি সুপারমার্কেট, যেখানে লোকজন প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই এবং করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য জড়ো হয়ে থাকে। দুপুর ৩ টার দিকে তিনি অপারেশন শুরু করেন এবং প্রথমে সুপারমার্কেটের বাইরে থাকা ৩ জন আমেরিকানকে হত্যা করেন। এরপর দোকানের ভিতরে ঢুকে আরো ছয়জনকে হত্যা করেন। তখন একজন পুলিশ এসে পড়ে এবং আমাদের মুজাহিদ ভাই তাকেও হত্যা করেন (মোট ১০ জন)। এরপর আরো পুলিশ সদস্য উপস্থিত হলে তাদের সাথেও তাঁর সংঘর্ষ হয়। আহত হবার আগ পর্যন্ত ৩০ মিনিট ধরে তিনি অপারেশনটি চালিয়েছিলেন। খবরের কাগজ, দ্যা ডেনভার পোস্ট (The Denver Post) এ এসেছে যে, প্রতক্ষ্যদর্শীরা বলেছে হামলার সময় আমাদের মুজাহিদ হাসছিলেন। পুলিশরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো, "এই লোক তো আমাদেরকে নিয়ে হাসছে।”
। এই অপারেশনের ফলাফল এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব
১ নম্বরঃ দশ জন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন ছিলো পুলিশ।
২ নম্বরঃ অপারেশনটি যেখানে চালানো হয়েছে, সেই সুপারমার্কেটটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।
৩ নম্বরঃ এই হামলা আমেরিকার জনগণের মধ্যে বিভক্তি বৃদ্ধি করেছে। ডানপন্থী আর বামপন্থীদের মাঝে বিভক্তি বেড়েছে । রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেট, দুই পার্টিরই নিজেদের সমর্থকদের সাথে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এটা দুইভাবে ঘটেছে-
ক) শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, তথা অ্যাংলো-স্যাক্সন লোকদেরকে টার্গেট করার ফলে ডানপন্থীরা এটাকে বামদের সাথে ঝগড়ার উপাদান হিসেবে লুফে নেয়। এই হামলার কিছুদিন আগেই এক খ্রিস্টান যুবক ৮ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিলো, যাদের মধ্যে ৬ জন ছিলো এশীয় বংশোদ্ভূত মহিলা (Atlanta Spa Shootings, March 16, 2021)। সেটা তখন বামপন্থীরা ডানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিলো।
খ) ডানপন্থীরা সারা আমেরিকা জূড়ে অবাধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়, বহন ও ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নেয়। আর বামপন্থীরা চায় এসব ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হোক। এই হামলাতে এমন একটি মেশিনগান ব্যবহৃত হয়েছে, যেটা গান-ভায়োলেন্স জাতীয় হামলাগুলিতে প্রায়শই ব্যবহার হয়ে থাকে। এই অপারেশন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে আলোচনায় নিয়ে আসে। ঘটনার পরপরই বাইডেন তার বক্তব্যে বলে যে, আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানার উপর আইনি বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে আর এক মিনিট দেরিও তার পছন্দ নয়।
৪ নম্বরঃ আমেরিকার জনগণ আর তাদের নেতাদের জন্য এই অপারেশন শোকের ঘনঘটা নিয়ে এসেছে। কলোরাডোর ঘটনার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বাইডেন বলে, "দশটি প্রাণ ঝরে গিয়েছে। এছাড়াও কলোরাডোতে আরো অনেক পরিবার গান-ভায়োলেন্সের কারণে বিধ্বস্ত... আর এর অনুভূতি - আমি কল্পনাও করতে পারছি না পরিবারগুলো কেমন বোধ করছে। নিহতদের এবং তাদের পরিবারের ও ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছ থেকে তাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নেয়া হয়েছে। যা ঘটে গেছে, তার সাথে মানিয়ে নিতে তাদেরকে এখন কঠিন একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।" বাইডেনের প্রতি আমাদের বার্তা হলো - এই হামলায় নিহতদের পরিবার আর কাছের মানুষদের ঠিক তেমনই বোধ হচ্ছে, যেমনটা বোধ করেছে ইয়েমেন, ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, ইরাক, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সোমালিয়া ও আরো অন্যান্য দেশে আমেরিকার আগ্রাসন, বোমাবর্ষণ, এবং সামরিক মিশনগুলোর কারণে নিহত মুসলিমরা। অতএব, হে বাইডেন, অনুভূতিগুলো তোমার কল্পনা করতে পারা উচিত।
সে আরও বলে, "আমার হৃদয় শোকে ভারাক্রান্ত। যারা বেঁচে ফিরেছে, তাদের জন্য আমাদের সকলের অন্তর সমব্যথী। তাদেরকে নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, লুকিয়ে থাকতে হয়েছে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে। তারা জানতো না তারা তাদের পরিবার আর বন্ধুদের আরেকবার দেখতে পাবে কিনা।" নিহতদের প্রতি শোক ও বেদনা জানাতে বাইডেন আমেরিকার পতাকা অবনমিত রাখতে নির্দেশ দেয়।
গভর্নর জ্যারেড পলিস (Jared Polis) হামলার ব্যাপারে বলে, “আমার হৃদয় আজকে ব্যথিত এবং আমি মনে করি আমাদের সবার অন্তর সত্যিই শোকে আচ্ছন্ন।" যারা বেঁচে ফিরেছে তাদের ব্যাপারে বলা হয়, "তারা আঘাতের এমন ক্ষতচিহ্ন নিয়ে ফিরেছে, যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এর প্রতিটি অংশই যন্ত্রণাদায়ক।"
মার্কিন রিপ্রেজেন্টেটিভ জো নেগুসে (Joe Neguse) জানায়, "বেদনা ও তীব্র যন্ত্রণায় আমার বুকটা ভারাক্রান্ত।" সে আরও বলে, "আমার জাতি আজ রাতে যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। যাদেরকে আমরা হারিয়েছি, তাদের পরিবারের জন্য আমি প্রার্থনা করছি।"
প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহ তা'আলার জন্যই যে, আমেরিকার আজকের পরিস্থিতি সেইসব অস্থিতিশীল মুসলিম দেশগুলোর তুলনায় খুব একটা ভিন্ন নয়, যেখানে যুদ্ধ-সংঘর্ষ আর মৃত্যু প্রতিদিনের ঘটনা। আমেরিকাকেও আজকাল প্রতিদিনই গোলাগুলি আর হত্যা দেখতে হচ্ছে। গান-ভায়োলেন্সের ব্যাপারে বাইডেন জনসমক্ষে তার বক্তব্যে বলেছে, “এই দেশে প্রতিদিন ৩১৬ জন মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়, প্রত্যেকটা দিন! এদের মধ্যে ১০৬ জন প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করে। এবছর শুরু থেকে নিয়ে ৮৫০ টিরও বেশি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এবং এতে জীবনহানি হয়েছে ২৫০ এর বেশি, আহত হয়েছে ৫০০। এটা মহামারীর আকার ধারণ করেছে।" সে আরও বলে, “প্রতিমাসে ৫৩ জন নারীকে তার সঙ্গীর হাতে গুলিবিদ্ধ হতে হয়।" এটাই হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারীদের অধিকার। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জানায়, "গান-ভায়োলেন্সের কারণে আমাদের পতাকা সবসময় অবনমিত রাখতে হয়।" এর কারণে আমেরিকাকে যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তার ব্যাপারে বাইডেন বলে, "এসব ঘটনায় হাসপাতালের বিল, শারীরিক চিকিৎসা, মানসিক আঘাতের চিকিৎসা, আইনি বিভিন্ন ফী, জেলখানার খরচ, কর্মঘন্টার অপচয় ইত্যাদি বাবদ এই জাতিকে প্রতি বছর ২৮০ বিলিয়ন ডলার গুণতে হয়; প্রতক্ষ্যদর্শীদের যে মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি হয়, তার কথা যদি বাদও দেই।" অস্ত্র সহিংসতার দলিল রাখা ওয়েবসাইট, Gun Violence Archive (gunviolencearchive.org) এর হিসাব অনুযায়ী শুধু গত এক বছরেই ৪৩,৫৮৯ জন (এর মধ্যে আত্মহত্যা ২৪,১৫৬। সূত্রঃ https://www.gunviolencearchive.org/r...aths?year=2020) নিহত হয়েছে। Accuracy in Media এর বরাতে জানা যায়, এবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কেবল শিকাগোতেই খুন হয়েছে ১২৩ জন (সূত্রঃ https://www.aim.org/aim-column/when-...-equal)। আমেরিকাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেমন করোনার গজবে আক্রান্ত করেছেন, তেমনি তাদেরকে এধরনের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দুর্দশাতেও ফেলেছেন।
শাইখ আবু ক্বাতাদা আল-ফিলিস্তিনি, আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন, তাঁর "Collection of Tweets” বইয়ের ২৪২ পৃষ্ঠায় বলেছেন, "মু'মিনদের উপর আল্লাহর নিয়ামতসমূহের একটি হলো এই যে, তাদের কাছে আল্লাহর কিতাব রয়েছে, যা আল্লাহর শত্রুদের মন-মানসিকতা ও হালচিত্র প্রকাশ করে দেয়। নিশ্চিত থাকুন , "فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ " - "অবশ্যই তারা যন্ত্রণা ভোগ করে" [৪:১০৪]। সুতরাং তাদের বাহ্যিক অবস্থা আর বাবুগিরি যেন আপনকে ধোঁকায় না ফেলে, কারণ পর্দার আড়ালে যন্ত্রণায় তারা আর্তনাদ করছে।"
৫ নম্বরঃ আমেরিকানদের মনে এই অপারেশন উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। কলোরাডোর ঘটনায় ওবামা এক মন্তব্যে বলে, “একটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়, কোনোরকম ভয়-ভীতি ছাড়াই আমাদের বাজারে যেতে পারার কথা। কেউ হঠাৎ বন্দুক নিয়ে হাজির হলে পালাবো কীভাবে, সেই মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই আমাদের স্কুলে যেতে পারার কথা, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে পারার কথা, দল বেঁধে উপাসনায় যেতে পারার কথা। আমাদের জীবন হওয়ার কথা এমন যে, ঘরের বাইরে পরের ভ্রমণটাই আমাদের শেষ ভ্রমণ কিনা সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকতে হবে না।" ওবামা বলতে থাকে, "আমাদের সেরকমই করতে পারার কথা ছিলো। কিন্তু আমেরিকাতে, আমরা সেটা পারছি না।"
হামলার পরদিন মঙ্গলবারে, কলোরাডো রাজ্যের নির্বাচিত সংসদ প্রতিনিধি, জো নেগুসে (Joe Neguse) বলে, "আমাদের বাজারগুলোতে আমাদের নিরাপদ বোধ করার কথা ছিলো। আমাদের স্কুল, সিনেমাহল এবং পাড়া-মহল্লায় আমাদের নিরাপদ থাকার কথা ছিলো।"
কিন্তু তারা কীভাবে নিরাপদ বোধ করতে পারে, যখন মুসলিমদেরকে তাদের কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে হয়? সুতরাং, ইনসাফের দাবি এটাই যে, মুসলিমদেরকে যে অবস্থার ভিতর দিয়ে যেতে হচ্ছে, তাদেরকেও তা টের পেতে হবে।
ছবিগুলো দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, এই অপারেশনের মোকাবেলা করতে তাদেরকে কী পরিমাণ নিরাপত্তা পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান-বার্নার্ডিনো আর লাস ভেগাসে গোলাগুলির ঘটনা থেকে নিয়ে ফ্রান্সের নীস আর বার্সেলোনাতে ভিড়ের উপর গাড়ি উঠিয়ে দেয়ার ঘটনা, লোন উলফরা পৃথিবীজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে এক অনন্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে।
-ওয়াশিংটন টাইমস
কলোরাডোতে হামলাকারীর মতো লোন উলফরা সন্ত্রাসী সংগঠনের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর।
-জেফরি সাইমন,
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ায় সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ,
"Lone Wolf Terrorism" বইয়ের রচয়িতা
৪। অপারেশনটির বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন প্রশংসনীয় দিক
১ নম্বরঃ মুজাহিদ আহমাদ আল ঈসা হামলার জন্য অস্ত্র নির্বাচনের কাজটি চমৎকার করেছেন। তিনি রাইফেলটি অর্ডার করেছেন এবং বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ ছাড়াই হস্তগত করেছেন। অস্ত্রের টাইপটাও ভাই আহমাদ ভালো বাছাই করেছেন। তিনি আক্রমণাত্মক প্রকৃতির একটি অস্ত্র পছন্দ করেছেন, গুলি ছোঁড়ার রেট, কম রিকয়েল (পশ্চাৎমুখী ধাক্কা) এবং লক্ষ্যভেদের ক্ষমতার জন্য যার আলাদা সুখ্যাতি আছে। এই রাইফেলটি ব্যবহার করা সহজ; দামও খুব বেশি নয়, প্রায় ৫০০ ডলারের আশেপাশে।
২ নম্বরঃ মুজাহিদ আহমাদ হামলার স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এমন একটি স্পট বাছাই করেছেন যেখানে লোকজনের জমায়েত হয়, এর ফলে মৃত্যুসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হামলার সময়টাও তিনি এমনভাবে বেছে নিয়েছেন, যখন করোনার ভ্যাক্সিন আর কেনাকাটার জন্য মানুষ সেখানে ভিড় করে।
৩ নম্বরঃ হামলা চলাকালীন টার্গেট নির্ধারণের ব্যাপারে মুজাহিদ আহমাদ আল ঈসা প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। তিনি তাঁর গুলির লক্ষ্য হিসেবে বাছাই করেছেন ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত সাদা চামড়ার অ্যংলো-স্যাক্সনদেরকে, যাদেরকে আমেরিকার দেশ-চালানো সম্প্রদায় হিসেবে ধরা হয়। আফ্রিকান, এশীয়, ভারতীয় কিংবা লাতিন জাতীয়তার কাউকে তিনি টার্গেট করেন নি।
৪ নম্বরঃ মুজাহিদ ভাই আহমাদ অপারেশনটি বেশ আকস্মিকতার সাথে করেছেন; এর জন্য মানুষ প্রস্তুত ছিলো না। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি আগে থেকে সতর্ক ছিলেন, যেন এরকম একটি হামলা করতে চাওয়ার ব্যাপারে কেউ তাঁকে সন্দেহ করতে না পারে।
৫। ইন্সপায়ার এর পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা
১ নম্বরঃ সবসময় এমন জায়গা নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন, যেখানে ভিড় করা লোকজনের পক্ষে লুকিয়ে থাকা বা পালানোর রাস্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন, যতক্ষণ না তাদেরকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যায় হত্যা করা যায়।
২ নম্বরঃ কোনো অপারেশনের জন্য কাজ গুছানোর সময় পুলিশ এবং শত্রুদের সাথে একেবারে শেষতক লড়াই করার ব্যাপারে মনের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প রাখবেন। মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। সেই অনুযায়ী আগে থেকেই যথেষ্ট গোলাবারুদ সহ প্রস্তুতি নিবেন।
৩ নম্বরঃ আপনার অপারেশনটিকে বিধ্বংসী রূপ দেয়ার চেষ্টা করবেন। এজন্য বিভিন্ন বিস্ফোরক ডিভাইস বা বোমা তৈরি করতে পারেন, যেগুলো ইন্সপায়ার ম্যাগাজিনের আগের সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অথবা লোকজন সমেত হামলার জায়গা জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য মলোটভ ককটেল বানিয়ে নিতে পারেন। উপরের গুলো সম্ভব না হলে অন্তত ম্যাচ, লাইটার এবং দাহ্য পদার্থ নিয়ে যাবেন, যেন কমপক্ষে স্থাপনাটা জ্বালিয়ে দেয়া যায়। অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক বা মিডিয়া, যেদিক থেকেই দেখা হোক, এধরনের বিধ্বংসী কাজগুলো শত্রুদের উপর অপারেশনের প্রভাব বহুগুণে বৃদ্ধি করে এবং প্রভাবকে দীর্ঘমেয়াদি করে।
৪ নম্বরঃ অস্ত্রশস্ত্র যোগাড় করে সেগুলো দিয়ে জিহাদি অপারেশন চালাতে হলে আমেরিকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতার সুবিধা নিন। অস্ত্রের মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে বা অস্ত্রের প্রসার কমাতে আইনি বিধি-নিষেধ আরোপ করা আমেরিকায় খুবই কঠিন; এর সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আপনাকে শুধু ইন্টারনেটে আর অস্ত্রশস্ত্রের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে, বৈধভাবে অস্ত্রের মালিকানা পাওয়ার জন্য আপনার কী কী লাগবে এবং কীভাবে অস্ত্রটা কিনতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় মেশিনগান কিনতে পারলে, তবে এতে যদি ঝামেলা পোহাতে হয়, তাহলে স্টেল্*থ ওয়েপন (সহজে শনাক্ত করা যায় না, এমন অস্ত্র) সংগ্রহ করার পথ খুঁজুন। এর জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের রেডিমেড বিভিন্ন পার্টস কিনে সেগুলো নিজে নিজে জোড়া দিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি অস্ত্র তৈরি করে নিতে পারবেন। এই পদ্ধতি অবলম্বনের দুইটি সুবিধা আছে:
১ম সুবিধাঃ পার্টস বিক্রয়ের উপর আইনি নিয়ন্ত্রণ কম। তাই এগুলো যোগাড় করা তুলনামূলক সহজ।
২য় সুবিধাঃ এতে অস্ত্রটির কোনো সিরিয়াল নম্বর থাকবে না।
যদি এই পদ্ধতিতে কাজ করতে কোনো বাধার সম্মুখীন হন, তাহলে চেষ্টা করুন ব্ল্যাক মার্কেট (চোরাই বাজার), ফ্রি সেলসের অফার কিংবা অনলাইনে ও বিভিন্ন জায়গায় দেয়া বিজ্ঞাপন থেকে অস্ত্রটি কিনতে। কারণ অস্ত্র বেচাকেনার এই অংশটা সরকারের নাগালের বাইরে থাকে।
মূলত বোঝার বিষয় হলো - আমেরিকাতে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রসার খুবই ব্যাপক; ৩৯০ মিলিয়নেরও বেশি অস্ত্র সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মার্কিনদের দেশে বন্দুক যোগাড় করার থেকে সহজ কিছু হয় না। সুতরাং, ছুরিকাঘাত বা তাদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়া জাতীয় হামলা করতে যাবেন না, যতক্ষণ না অস্ত্রশস্ত্রের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন এবং অপারেশনে সেগুলো ব্যবহার করছেন।
৫ নম্বরঃ অপারেশনের ব্যাপারে সবসময় একটি মিডিয়া বার্তা দিবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে হামলার ফলাফল কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে যখন প্রথম প্রথম জিহাদি হামলা শুরু হয়, তখন হামলাটি করার পেছনে কোনো ইসলামী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বা জিহাদি প্রেরণার ছিটেফোঁটা গন্ধ পাওয়ার সাথে সাথে তারা অপারেশনটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা দিতো। সময়ের সাথে সাথে আমেরিকান ও ক্রুসেডার পশ্চিমারা বুঝতে পারলো যে, এতে বরং তাদের দেশে জিহাদি হামলা বেড়ে চলেছে। তারা দেখলো একটা অপারেশন পরবর্তীতে আরেকটা অপারেশনের প্রেরণা যোগাচ্ছে, একজন বীর আরেকজন বীরকে উজ্জীবিত করছে, হামলা করার ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকা ব্যক্তি হামলা করতে বদ্ধপরিকর হচ্ছে, যে ভয়ে ছিলো, তার মধ্যে সাহসের সঞ্চার হচ্ছে, বিষণ্ন ব্যক্তি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠছে। এসব দেখে তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, কোনো অপারেশনকে জিহাদি হামলা বা সন্ত্রাসী হামলা তকমা দিলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। ফলে জিহাদি কর্মকান্ড সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা ও পশ্চিমারা তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনলো। তারা অপারেশনগুলিকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দেয়া বন্ধ করে দিলো। লোকের সামনে হামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য তারা গোপন করতে শুরু করলো, যদিও নিজেরা ঠিকই তা বুঝতে পারতো। হামলার জিহাদি দিকটাকে ধামাচাপা দিতে নানা বানোয়াট কথা তারা সামনে আনতে লাগলো, যেমনঃ হামলাকারী মানসিকভাবে অসুস্থ কিংবা নিজের সামাজিক পদমর্যাদা নিয়ে তার ভিতরে অসন্তোষ কাজ করতো ইত্যাদি। হামলাকারীর ধর্ম গোপন রেখে তারা বলতে লাগলো হামলার হামলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য "অজ্ঞাত" অথবা তদন্তসাপেক্ষ। আর অনতিবিলম্বে হামলাকারীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো তারা বন্ধ করে দিতো। এই সব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই; একটি হামলা যেন আরেকটি নতুন হামলা ডেকে না আনে। পশ্চিমাদের এই হীন কৌশলের পাল্টা জবাব হিসেবে আমরা জিহাদি অপারেশনে মিডিয়া ব্যবহারের পদ্ধতি ও এর গুরুত্ব নিয়ে কিছু আলোচনা করবো।
জিহাদি হামলায় মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে অপারেশনের প্রভাব অনেকগুণ বৃদ্ধি পায় এবং ফলস্বরূপ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার পক্ষ থেকে প্রতিদানও অনেকগুণ বেড়ে যায়। মিডিয়ার উপযুক্ত ব্যবহার হলে অপারেশনের সাথে বেশ কিছু ব্যাপার যুক্ত হয়, যা অপারেশনটিকে অসাধারণ কার্যকর করে তুলতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো, জিহাদি হামলার পেছনে আমাদের লক্ষ-উদ্দেশ্যগুলো সবার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হওয়া। আমাদের উদ্দেশ্য থাকে ফিলিস্তিনের ভাইদের পক্ষ হয়ে প্রতিশোধ নেয়া; হামলার কারণগুলোর মধ্যে এটাই সবথেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। এছাড়াও মিডিয়া বার্তা কাফিরদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তাদেরকে ক্রুদ্ধ করে তোলে। এই বার্তা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয় এবং তারা এই অপারেশনের কারণে আনন্দিত হয়। আর আপনার কাজ দেখে অন্যরাও কাজ করতে উদ্যোগী হয়, এভাবে আপনি আপনার ভাইদেরকে উৎসাহ দিলেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগালেন। পশ্চিমা দেশগুলাতে কত হামলাই না হয়েছে, যেখানে সেটার অনুপ্রেরণা ছিলো পূর্ববর্তী একটি হামলা! হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন -
مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ
অর্থঃ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো ভালো কাজের প্রচলন করে, সে তার এ কাজের সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার এ কাজ দেখে তা করবে সে এর বিনিময়েও সওয়াব পাবে। তবে এতে তাদের সওয়াব কোনো অংশে কমানো হবে না।
-https://sunnah.com/muslim:1017a
সুতরাং, আপনার কাজের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে যত অপারেশন চালানো হবে, আপনি সবগুলোর সওয়াব অর্জন করবেন।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হামলার পেছনে মুসলিমদের যে উদ্দেশ্য, মিডিয়া প্রকাশনাটি যেন সেই উদ্দেশ্যটি বহন করে; তা হচ্ছে, শত্রুদেরকে মুসলিম দেশগুলিতে আক্রমণ করা বন্ধ করতে হবে, মুসলিম জাতির উপর তাদের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, মুসলিমদের কোনো বিষয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা থেকে তাদেরকে বিরত থাকতে হবে এবং ইহুদিদের প্রতি তাদের সমর্থন উঠিয়ে নিতে হবে। লোন উলফ বা জিহাদি গ্রুপগুলোর তরফ থেকে তাদেরকে যখন এই বার্তাগুলি বারংবার পাঠানো হবে, তারা তখন এই ব্যাপারগুলো সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি করতে পারবে। এই উপলদ্ধি তাদেরকে আমাদের দাবিগুলো মেনে নিতে বাধ্য করবে আর এভাবেই মুসলিমরা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।
এসব কারণ বিবেচনা করলে বোঝা যায়, একাকী মুজাহিদকে জানতে হবে, কীভাবে সে মিডিয়ার মাধ্যমে তার অপারেশনের বার্তাটি পৌঁছে দিতে পারে, যাতে শত্রুপক্ষ এই পরিশ্রম পণ্ড করার সুযোগ না পায়। বেশ কিছু উপায়ে এই কাজটি করা যায়। যেমনঃ
- হেডক্যামেরা (বেল্ট/ক্যাপ দিয়ে মাথায় পরে থাকা যায়, এমন ক্যামেরা) দিয়ে অপারেশনের ভিডিও ধারণ করা এবং ফেসবুক বা ইউটিউবে সেটা লাইভ সম্প্রচার করা। এটাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা। এতে করে যে আততায়ী শত্রু নিউজিল্যান্ডে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছিলো, সে আর এই দিক থেকে এগিয়ে থাকলো না।
- অপারেশনের সময় ঐ দেশেরই কোনো মিডিয়া আউটলেটের সাথে যোগাযোগ করে অপারেশন এবং এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া (যেমনটা সাঈদ কোয়াশি ও শেরিফ কোয়াশি ভাইয়েরা ফ্রান্সে করেছিলেন), যাতে প্রতিপক্ষ পরবর্তীতে ব্যাপারগুলো গোপন করতে না পারে। মিডিয়ার যোগাযোগ নম্বর আগে থেকে সংগ্রহে রাখতে হবে।
- যদি তাদের মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, তাহলে এক বা একাধিক পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করে বার্তাগুলো পৌঁছে দেয়া যায়।
- টুইটার এবং ফেসবুকে নিজের আসল নাম দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন। আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা বার্তা অপারেশন চলাকালীন সময়ে পোস্ট করে দিন।
- আপনার টুইটে বা পোস্টে যে বার্তাটি দিবেন তা হবে এরকম -
"আমি ফিলিস্তিন এবং অন্যান্য ভূখণ্ডের মুসলিমদের আহ্*বানে সাড়া দিতে এই হামলাটি করেছি। আমেরিকা ও পশ্চিমারা আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সম্মানে যে আঘাত করেছে, আল্লাহর পবিত্র কিতাব এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে, সেগুলোর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমি এই হামলা করেছি। নিরাপদ থাকার স্বপ্নও তোমরা দেখতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুসলিমদেরকে তাদের মতো থাকতে দিবে, তাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা ছেড়ে দিবে এবং ইহুদিদেরকে সহযোগিতা করা বন্ধ করবে। আমি মুসলিম ভাইদেরকে আহ্*বান করছি, আপনারাও আমেরিকা এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হামলা চালান।"
- আপনার নিজের একটি ভিডিও রেকর্ডিং বানাতে পারেন, যেখানে আপনি আপনার উদ্দেশ্য এবং বার্তা তুলে ধরবেন। পরে অপারেশন চালানোর সময় ইন্টারনেটে ভিডিওটি আপলোড দিয়ে দিবেন। কেবল লিখিত বার্তা দেয়ার চেয়ে এমন করতে পারলে বেশি ভালো হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে অপারেশনের ভিডিও রেকর্ড করতে দিতে পারেন। আপনার বার্তা তারাই সরাসরি মিডিয়ার কাছে পাঠিয়ে দিবে। ২০১৩ সালে ব্রিটেনে ভাই আদেবোলাজো এরকমই করেছিলেন; যখন তিনি তার উদ্দেশ্যগুলো বলছিলেন, এক পথচারী তাঁর ভিডিও ধারণ করছিলো। অপারেশনের সময় এমন করতে পারা বেশ কঠিন, তবে সুযোগ থাকলে এটাই বেশি কার্যকর।
এছাড়াও হামলা চালানোর সময় জোরালো কণ্ঠে প্রচুর তাকবীর ধ্বনি দিবেন। শত্রুপক্ষ অপারেশনটি গোপন করতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে এটা একটা কারণ হিসেবে কাজ করবে। এর সাথে আমেরিকা এবং পশ্চিমা ক্রুসেডারদের নীতি-বহির্ভূত কাজকর্ম, মুসলিমদের ব্যাপারে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ইহুদিদের প্রতি তাদের সমর্থন, এই বিষয়গুলো উল্লেখ করবেন। এমনভাবে তাদের অপরাধগুলো তুলে ধরবেন, যেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবাই শুনে তা বুঝতে পারে।
মূল বিষয় হলো, অপারেশনের মাধ্যমে যে বার্তা দিতে চাওয়া হচ্ছে, তা যেন নষ্ট না হয়, কারণ এটা শুধু আপনার নয়, বরং পুরো মুসলিম উম্মাহর হক। শত্রুপক্ষ সুযোগ পেলেই বিশ্ববাসীর কাছে আপনাকে স্রেফ একজন উন্মাদ বা সাইকোপ্যাথ হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করবে। তারা বলতে চাইবে, অপারেশনটি আপনার মানসিক অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ কিংবা দুনিয়াবী কোনো তুচ্ছ বিষয়ের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলাটি করা হয়েছে। এর সবই তারা করবে হামলার পেছনে থাকা বিশুদ্ধ ইসলামী চেতনা এবং হামলার মহৎ উদ্দেশ্যগুলো ঢেকে রাখার জন্য। অপারেশনের পাশাপাশি বার্তাগুলো পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারেও যথেষ্ট গুরুত্ব না দিলে, এটাই হতে পারে তাদের সেই সুযোগ পেয়ে যাওয়ার কারণ। সুতরাং, এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন।, জিহাদি অপারেশনের সামরিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক প্রস্তুতিতে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, মিডিয়ার ব্যাপারগুলোও ততটাই গুরুত্বের সাথে নিবেন।
শেষ কথাঃ
আমরা আমেরিকায় এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে অবস্থানরত মুসলিমদেরকে জিহাদের দিকে আহ্*বান করছি। আপনাদের হাতে জিহাদি হামলা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, শত্রু আপনাদের সামনেই উপস্থিত, অস্ত্রও নাগালের মধ্যেই রয়েছে। এই উম্মাহ আপনাদেরকে চিৎকার করে ডাকছে। শুধু প্রয়োজন একটি দৃঢ় সংকল্প এবং এমন ইচ্ছাশক্তি, যা সমস্ত দ্বিধাকে ঝেড়ে ফেলবে। এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে পাবেন আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি আর চিরসুখময় জান্নাত।
নুআইম ইবনে হাম্মাদ থেকে বর্ণিত,
একজন লোক রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করলো, "কোন শহীদেরা উত্তম?” রাসূলুল্লাহ ﷺ উত্তর দিলেন, "যারা নিজেদেরকে যুদ্ধের সারিতে নিক্ষেপ করে এবং শত্রুদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় না, যতক্ষণ না তাদেরকে নিহত করা হয়। এরাই হলো তারা, যারা জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু কামরাগুলিতে থাকবে। তোমাদের রব তাদের দিকে হাসবেন, আর তোমাদের রব এই দুনিয়াতে কারো প্রতি হাসলে, তার জন্য কোনো হিসাব নেই।"
-আহমাদ (২২৪৭৬)
আবু বারযাহ (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তষ্ট হোন) থেকে বর্ণিত,
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ فِي مَغْزًى لَهُ فَأَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَقَالَ لأَصْحَابِهِ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا نَعَمْ فُلاَنًا وَفُلاَنًا وَفُلاَنًا . ثُمَّ قَالَ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا نَعَمْ فُلاَنًا وَفُلاَنًا وَفُلاَنًا . ثُمَّ قَالَ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا لاَ . قَالَ " لَكِنِّي أَفْقِدُ جُلَيْبِيبًا فَاطْلُبُوهُ " . فَطُلِبَ فِي الْقَتْلَى فَوَجَدُوهُ إِلَى جَنْبِ سَبْعَةٍ قَدْ قَتَلَهُمْ ثُمَّ قَتَلُوهُ فَأَتَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَوَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ " قَتَلَ سَبْعَةً ثُمَّ قَتَلُوهُ هَذَا مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ هَذَا مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ " . قَالَ فَوَضَعَهُ عَلَى سَاعِدَيْهِ لَيْسَ لَهُ إِلاَّ سَاعِدَا النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَحُفِرَ لَهُ وَوُضِعَ فِي قَبْرِهِ .
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ এক জিহাদে ছিলেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে গণিমাতের সম্পদ দান করলেন। তিনি ﷺ তাঁর সাহাবীদের বললেন, "তোমরা কি কাউকে হারিয়েছো?” লোকেরা বলল, "হ্যাঁ, অমুক, অমুক ও অমুককে।" তিনি ﷺ বললেন, "তোমরা কি কাউকে হারিয়েছো?” লোকেরা বলল, "হ্যাঁ, অমুক, অমুক এবং অমুককে।" তিনি ﷺ পুনরায় বললেন, "তোমরা কি কাউকে হারিয়েছ?” লোকরো বলল, "জি-না।" তিনি ﷺ বললেন, "কিন্তু আমি জুলায়বীব (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তষ্ট হোন) কে হারিয়েছি। তোমরা তাঁকে সন্ধান করো।" তখন তাঁকে নিহতদের মাঝে সন্ধান করা হলো। এরপর তাঁরা সাতটা লাশের পাশে তাঁকে খুঁজে পেল। তিনি এই সাতজনকে হত্যা করেছিলেন। এরপর শত্রুরা তাঁকে হত্যা করে। তখন নবী ﷺ তাঁর কাছে এলেন এবং ওখানে দাঁড়িয়ে বললেন, "সে সাতজন হত্যা করেছে; তারপর দুশমনরা তাঁকে হত্যা করেছে। সে আমার, আর আমি তাঁর। সে আমার আর আমি তাঁর।" অতঃপর তিনি ﷺ তাঁকে দু’বাহুর উপর উঠিয়ে নিলেন। একমাত্র রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর বাহুই তাঁকে বহন করছিল। তাঁর কবর খনন করা হলো এবং তিনি তাঁকে তাঁর কবরে রেখে দিলেন।
-https://sunnah.com/muslim:2472
একজন লোক রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করলো, "কোন শহীদেরা উত্তম?” রাসূলুল্লাহ ﷺ উত্তর দিলেন, "যারা নিজেদেরকে যুদ্ধের সারিতে নিক্ষেপ করে এবং শত্রুদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় না, যতক্ষণ না তাদেরকে নিহত করা হয়। এরাই হলো তারা, যারা জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু কামরাগুলিতে থাকবে। তোমাদের রব তাদের দিকে হাসবেন, আর তোমাদের রব এই দুনিয়াতে কারো প্রতি হাসলে, তার জন্য কোনো হিসাব নেই।"
-আহমাদ (২২৪৭৬)
আবু বারযাহ (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তষ্ট হোন) থেকে বর্ণিত,
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ فِي مَغْزًى لَهُ فَأَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْهِ فَقَالَ لأَصْحَابِهِ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا نَعَمْ فُلاَنًا وَفُلاَنًا وَفُلاَنًا . ثُمَّ قَالَ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا نَعَمْ فُلاَنًا وَفُلاَنًا وَفُلاَنًا . ثُمَّ قَالَ " هَلْ تَفْقِدُونَ مِنْ أَحَدٍ " . قَالُوا لاَ . قَالَ " لَكِنِّي أَفْقِدُ جُلَيْبِيبًا فَاطْلُبُوهُ " . فَطُلِبَ فِي الْقَتْلَى فَوَجَدُوهُ إِلَى جَنْبِ سَبْعَةٍ قَدْ قَتَلَهُمْ ثُمَّ قَتَلُوهُ فَأَتَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَوَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ " قَتَلَ سَبْعَةً ثُمَّ قَتَلُوهُ هَذَا مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ هَذَا مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ " . قَالَ فَوَضَعَهُ عَلَى سَاعِدَيْهِ لَيْسَ لَهُ إِلاَّ سَاعِدَا النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَحُفِرَ لَهُ وَوُضِعَ فِي قَبْرِهِ .
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ এক জিহাদে ছিলেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে গণিমাতের সম্পদ দান করলেন। তিনি ﷺ তাঁর সাহাবীদের বললেন, "তোমরা কি কাউকে হারিয়েছো?” লোকেরা বলল, "হ্যাঁ, অমুক, অমুক ও অমুককে।" তিনি ﷺ বললেন, "তোমরা কি কাউকে হারিয়েছো?” লোকেরা বলল, "হ্যাঁ, অমুক, অমুক এবং অমুককে।" তিনি ﷺ পুনরায় বললেন, "তোমরা কি কাউকে হারিয়েছ?” লোকরো বলল, "জি-না।" তিনি ﷺ বললেন, "কিন্তু আমি জুলায়বীব (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তষ্ট হোন) কে হারিয়েছি। তোমরা তাঁকে সন্ধান করো।" তখন তাঁকে নিহতদের মাঝে সন্ধান করা হলো। এরপর তাঁরা সাতটা লাশের পাশে তাঁকে খুঁজে পেল। তিনি এই সাতজনকে হত্যা করেছিলেন। এরপর শত্রুরা তাঁকে হত্যা করে। তখন নবী ﷺ তাঁর কাছে এলেন এবং ওখানে দাঁড়িয়ে বললেন, "সে সাতজন হত্যা করেছে; তারপর দুশমনরা তাঁকে হত্যা করেছে। সে আমার, আর আমি তাঁর। সে আমার আর আমি তাঁর।" অতঃপর তিনি ﷺ তাঁকে দু’বাহুর উপর উঠিয়ে নিলেন। একমাত্র রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর বাহুই তাঁকে বহন করছিল। তাঁর কবর খনন করা হলো এবং তিনি তাঁকে তাঁর কবরে রেখে দিলেন।
-https://sunnah.com/muslim:2472
জিহাদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত আল্লাহর সকল বান্দার জন্য খাস দু'আ করতে ভুলবেন না।
Comment