শরয়ী পদ্ধতিতে' শরয়ী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য
-মুহতারাম জাবীহুল্লাহ মুজাহিদ হাফিযাহুল্লাহ
কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান
[নোট: লেখাটি অনেকদিন আগের। অন্যদিকে লেখাটিও অনেক আগেই অনুবাদ করানো হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে আপনাদের সামনে যথাসময়ে পেশ করতে বিলম্ব হয়ে গেছে। আমরা আন্তরিকভাবে আপনাদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি।
দ্বিতীয়ত: লেখাটি অনেক আগের হওয়ার কারণে সবগুলো পয়েন্ট বর্তমান সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক মনে হবে না। তথাপিও এখানে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু থাকায় বিলম্বে হলেও উপস্থাপন করা হলো।]
-মুহতারাম জাবীহুল্লাহ মুজাহিদ হাফিযাহুল্লাহ
কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান
[নোট: লেখাটি অনেকদিন আগের। অন্যদিকে লেখাটিও অনেক আগেই অনুবাদ করানো হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে আপনাদের সামনে যথাসময়ে পেশ করতে বিলম্ব হয়ে গেছে। আমরা আন্তরিকভাবে আপনাদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি।
দ্বিতীয়ত: লেখাটি অনেক আগের হওয়ার কারণে সবগুলো পয়েন্ট বর্তমান সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক মনে হবে না। তথাপিও এখানে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু থাকায় বিলম্বে হলেও উপস্থাপন করা হলো।]
আমেরিকা আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালানোর সময় সামরিক আগ্রাসন শুরু করার পাশাপাশি মিডিয়া যুদ্ধ (media war) এবং প্রোপাগান্ডাও শুরু করেছে। মিথ্যা প্রপাগান্ডার মাধ্যমে তারা মুজাহিদদের সম্মান ও ভাব-মর্যাদা ক্ষুন্ন করে জনসাধারণকে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে৷ (তা আজও নিরবধি চলমান!)
কিন্ত আমরা জানি, আফগান জনসাধারণ আজও এই বিশ্বাস লালন করেন যে, তালেবানরাই এই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও প্রকৃত পাহারাদার ৷ এ কারণেই আমরা সব সময় তাদেরকে পাশে পেয়েছি এবং সদা সর্বদা তারাই ছিলেন আমাদের একমাত্র সহযোগী।
যদি কোন ব্যক্তি শত্রুর প্রোপাগাণ্ডার সম্মুখিন হয়, তাকে অবশ্যই মিথ্যা প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত না হয়ে বরং আমাদের উপর আস্থাশীল হওয়া উচিত। কেননা, এতদিন যাবত যারা আগ্রাসী আমেরিকার পক্ষাবলম্বন করেছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসীদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগীতা করেছে করেছে, আমরা এখনো তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করে যাচ্ছি ৷ এরপরও আমাদের অগ্রগতিতে দুশ্চিন্তার কী কারণ থাকতে পারে!
দোহা চুক্তি হলো আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল-ভিত্তি। সকলেরই কর্তব্য ছিলো চুক্তির প্রতিটি ধারা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেওয়া ৷ কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমেরিকা প্রথম থেকেই চুক্তির বিভিন্ন ধারা ভঙ্গ করে আসতেছে। আর এখন তো তারা মৌলিক-ধারা অর্থাৎ সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও তালবাহানা শুরু করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমেরিকা ও ন্যাটোভুক্ত দেশ সমূহের চুক্তি-ভঙ্গের নীতি সকলের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
(আমরা সতর্ক করে দিচ্ছি,) এভাবে চুক্তির ধারা ভঙ্গ করতে থাকলে আমরা তাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলব। পরবর্তীতে তাদের কোন কথাই আর বিশ্বাসের উপযুক্ত থাকবে না। ফলে এই আস্থাহীনতার কারণে আমরা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য হবো এবং এই যুদ্ধ এক ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে ৷ যার পূর্ণ দায়ভার চুক্তি ভঙ্গকারী রাষ্ট্রসমূহের উপরই বর্তাবে।
তবে যদি তারা আমাদেরকে আফগান থেকে তাদের সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহারের আশ্বাস দিতে পারে, তবেই কেবল আমরা তাদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করবো। কারণ, সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমেই সবকিছু সমাধান হয়ে যায়।
তুরস্কে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পূর্বের ন্যায় স্থির রয়েছে। (আমরা পরিস্কার বলে দিয়েছি) পৃথিবীর কোথাও যদি আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ বিষয়ে কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়, আর তাতে আফগানিস্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়, অথচ তখনো আফগানিস্তান আগ্রাসী শত্রুদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি; বহিরাগত শক্তি তখনো আফগানে বিদ্যমান রয়েছে। তাহলে আমরা উক্ত কনফারেন্সে কখনোই অংশগ্রহন করব না।
আর যারা আমাদেরকে উক্ত কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করাই তাদের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে পূর্ণ স্বাধীন। আমরা সে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবো যা আফগান জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য অধিক কল্যাণকর হবে।
এতে কোন সন্দেহ নেই, আমরা আমেরিকা ও তার দোসর ন্যাটোকে পরাজিত করেছি, বরং শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেছি। কিন্তু তারপরও আমরা ভবিষ্যতের শাসনব্যবস্থাকে শুধু আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। আমরা চাই এমন একটি ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক, যেটা সমস্ত আফগান জনসাধারণের আশা ও আকাঙ্খা, চাহিদা ও প্রত্যাশার বাস্তব প্রতিফলন হবে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, ভবিষ্যৎ ইসলামী শাসনব্যবস্থার সরকার-প্রধান কে হবে? আমরা এই বিষয়টি আফগানিস্থানের আন্তঃআলোচনা বৈঠকে উপস্থাপন করব। আর সেখানেই ইনশাআল্লাহ উক্ত বিষয়টি মিমাংসা হবে।
আমরা চাই ইসলামি পদ্ধতিতে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। আর ইসলামী বিধানে সরকার গঠন ও রাষ্ট্র-প্রধান নির্বাচনের জন্য শুরা পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে, যার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য নির্বাচন করা সম্ভব। ইসলামের এই শুরা-পদ্ধতি আমাদের পছন্দনীয়, এবং এর উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমরা এর মাধ্যমেই পুরো আফগানের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
এর বিপরীতে কাবুল সরকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যে ভোট-পদ্ধতির প্রস্তাব করে, তা এখন আর আফগান জনসাধারণ পছন্দ করে না। কারণ, যতবারই এই প্রতারণা-পূর্ণ ভোট-পদ্ধতি গ্রহন করা হয়েছে, ততবারই চুড়ান্ত ফায়সালা জনসাধারণের ভোটের ফলাফলের উপর না হয়ে আমেরিকা-পন্থী মন্ত্রিদের চাহিদা ও আদেশ অনুযায়ী হয়েছে। যার ফলে রাষ্ট্র ও ক্ষমতায় অনৈক্য, বিভক্তি এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়া আর কিছুই লাভ হয়নি। মোটকথা এই ভোটপদ্ধতির শেষ পরিণাম মিথ্যা, ধোঁকা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
গত নির্বাচনেও সরকার জনগণকে কত ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অথচ এখনো সরকার কোন প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেনি। তাই আমরা আমাদের সংগ্রামী জাতিকে ধোকা ও প্রতারণাপূর্ণ কোন প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না এবং আমাদের দেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে চাই না। আর রাষ্ট্রকে যুদ্ধ ও ধ্বংস থেকে বাঁচানোর একমাত্র পথ হলো ইসলাম, এ ছাড়া আর কোন পথ নেই। নির্বাচনে কোন ভেজাল হবে না, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধীনে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব, এই কথা বলা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত হবে না ৷ কারণ, সাম্প্রতিক আমেরিকার নির্বাচনে আমরা দেখেছি সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। খোদ আমেরিকাতেই যদি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হয়, তাহলে এমন কোন অভিনব পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে আমাদের দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে ?
'আফগানিস্থানে অমুক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে অমুক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে না' কোন রাষ্ট্র যদি এমন কথা বলে, তাহলে এটা আমাদের অভ্যান্তরীন বিষয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা হবে। কখনোই তা আমরা মেনে নিব না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
'অমুক দেশে এমন ধোকাপূর্ণ নির্বাচনী পদ্ধতি চলতে দেওয়া হবে না' এ কথা আমরা যেভাবে কোন দেশের ব্যাপারে বলি না, অন্যদেশের উচিত আমাদের দেশের ব্যাপারে এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকা ৷ আমাদের চলমান জিহাদ থেকে অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে, আমরা স্বাধীনতার জন্যে সবকিছু করতে পারি।
আমাদের কাছে অন্যরাষ্ট্রের একটাই দাবী থাকতে পারে যে আমাদের দেশ থেকে তাদের উপর আক্রমন করা হবে না। আর আমরা তাদেরকে এর পূর্ণ নিশ্চয়তা দিচ্ছি ৷ তাই তাদের একথা মেনে নেওয়া উচিত যে, আফগানিস্থানের শাসনব্যবস্থার রুপরেখা একমাত্র আফগানীরাই নির্ধারণ করবে। এটা তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়, এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।
কাবুল প্রশাসনের কর্মচারীরা সব সময়ই মিথ্যার আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি এক কর্মচারী বলেছে, "তালেবানরা দেশকে ধ্বংস করে এখন আমেরিকার সাথে চুক্তি করে আল-ক্বায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ৷ অথচ এই কাজটা যদি বিশ বছর আগে করা হতো, তাহলে আমাদের দেশ আজ এত বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতো না।"
আমি তাকে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমেরিকার সাথে কৃত চুক্তিতে কোথাও এ কথা উল্লেখ নেই যে, আমরা অমুকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব বা অমুকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করব। হ্যা একথা উল্লেখ আছে যে, আমরা কাউকে আমেরিকা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আফগানের ভুমি ব্যবহার করার অনুমতি দেবো না।
বিশ বছর আগেও আমেরিকাকে আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা সংশোধনের আহ্বান করা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো, যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে প্রমাণ নিয়ে আসো। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করো ৷ কিন্তু আমেরিকা তার শক্তির নেশায় উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলো ৷ "উসামাকে আমাদের হাতে তুলে দাও" এ দাবীর উপরেই সে জেদ ধরে রইল ৷ (আলহামদুলিল্লাহ) আমরা তার যথাযথ জবাব দিয়েছি।
বর্তমানে যেমন আমরা শক্তিধর অহংকারীকে পায়ের তলায় পিষ্ট করেছি, ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ৷
সূত্র: নাওয়ায়ে গাজওয়ায়ে হিন্দ ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত
অনুবাদক:
husam, জুনিয়র মেম্বার, দাওয়াহ ইলাল্লাহু ফোরাম
আইডি লিঙ্ক: https://82.221.139.217/member.php?32761-husam
অনুবাদক:
husam, জুনিয়র মেম্বার, দাওয়াহ ইলাল্লাহু ফোরাম
আইডি লিঙ্ক: https://82.221.139.217/member.php?32761-husam
Comment