জিহাদের কাজে নিয়জিত মুসলিম ভাইদের প্রতি এক বোনের নসিহা
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক, পরিচালক এবং একমাত্র আইন বিধায়ক। শান্তি ও দয়া বর্ষিত হোক সকল মানুষের নেতা এবং আদর্শ রসূল (সাঃ), তার পরিবারবর্গ, তার সাহাবীবর্গ (রাঃ) এবং শেষ দিবস পর্যন্ত যাদের পাগুলো তার দেখানো পথের উপর দৃঢ় থাকবে তাদের উপর।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَ*تُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَ*فْتُمُوهَا وَتِجَارَ*ةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْ*ضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّـهِ وَرَ*سُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَ*بَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّـهُ بِأَمْرِ*هِ ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
"বলো, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তানাদি, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার-পরিজন, তোমাদের বংশ-গোত্র এবং তোমাদের ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য-যা অচল হয়ে যাবে বলে তোমরা ভয় করো, তোমাদের বাড়ীঘরসমূহ যা তোমরা (একান্তভাবে) কামনা করো, যদি (এগুলো) তোমরা আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চাইতে বেশী ভালোবাসো, তাহলে তোমরা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর আযাবের ঘোষণা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো (জেনে রেখো); আল্লাহ তায়ালা কখনো ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।" (সূরা আত্ তাওবাঃ ২৪)
সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে এই আয়াতের মর্ম বুঝার তৌফিক দিয়েছেন। যদিও উম্মাহর অধিকাংশই এই আয়াতের সতর্কতা এবং হুমকির ব্যাপারে গাফেল তবুও, একটা অংশ জেগে উঠেছে এবং নিজেদের করণীয় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করছে এবং এটা অনুধাবন করছে যে আর বসে থাকার সময় এখন নেই। যেখানে আল্লাহ মুমিনদের জান-মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে সেখানে ঘুমের ঘোর চোখে নিয়ে ঝিমানোর সুযোগ নেই। আমি আমার এই জেগে উঠা ভাইদেরকেই কিছু কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আমার পরামর্শ ব্যক্ত করছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার মুসলিম ভাইয়েরা আজ নিজেদের অধঃপতন অনুভব করতে পারছেন। আজ তারা মুসলিম উম্মাহর পুনঃজাগরণের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। নিজেদের হারানো সম্মান এবং মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য তারা জিহাদের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। তারা বুঝতে পারছেন যে, জিহাদেই রয়েছে কল্যাণ, এটা আল্লাহ (সুব এর ই অসীম কৃপা। এই কঠিন সিদ্বান্তের ব্যাপারে আল্লাহ (সুবঃ) তাদের অন্তরকে বাছাই করেছেন সে জন্য আল্লাহরই শুকরিয়া জ্ঞাপন করি।
আমি আমার ভাইদেরকে বলতে চাই আপনারা যারা জিহাদের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এপথে সাহায্য, সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন তারা নিশ্চয়ই এটাও বুঝতে পারছেন এপথে শুধু সমর্থন, সাহায্যই একমাত্র পাথেয় নয়। শুধু এই ফরজ ইবাদতের দায় কোন রকম আদায় করে যাওয়াই এ কাজের উপায় নয়। জিহাদ যেমন উম্মাহর বিপর্যয়কে প্রতিহত করার চূড়ান্ত এবং একমাত্র উপায় তেমনি জিহাদকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা শক্তিশালী, দৃঢ় মুমিনের দল যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন, যাদের উপর আল্লাহর নুসরাহ আসার ব্যাপারে আল্লাহ (সুবঃ) আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। হাদীসে আছেঃ
"সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদা সত্যের (দীনে হকের) উপর বিজয়ী হয়ে থাকবে। যারা তাদের সহায়তা করা ছেড়ে দিবে তারা তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আল্লাহর নির্দেশ (কেয়ামত) আসা পর্যন্ত তারা এভাবেই হকের উপর অবিচল থাকবে।" (সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৯৮)
আমরা জানি যে, জিহাদ আজ ফরজে আইন এবং জিহাদে যোগদান করতে আজ পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং কর্যদাতার অনুমতির কোন প্রয়োজন নেই। এমনিভাবে কোন উস্তাদ নেতার অনুমতি নেওয়া ওয়াজিব নয়- এ ব্যাপারে উলামায়ে উম্মতদের ইজমা ও ঐক্যমত রয়েছে। চিন্তার বিষয় হলো- এই অতি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া জেনেও কি আমরা এই প্রতিবন্ধকতাগুলো থেকে নিজেদেরকে উম্মুক্ত করতে পেরেছি কিনা? এই বিষয়ে ভুল বুঝানোর কোন অপচেষ্টায় লিপ্ত আছি কিনা?
আমি জিহাদের ব্যাপারে আত্ম-প্রত্যয়ী ভাইদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কোন মুসলিম যদি জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে প্রত্যয়ী হয় তাহলে তার প্রস্তুতির জন্য সময় দেয়া প্রয়োজন। কোন মুসলিম যদি পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে পরাজিত হয় তবে সে জন্য সে কৈফিয়ৎ দিতে বাধ্য থাকবে। উপরন্ত কোন মুসলিম যদি জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর জন্য একেবারেই প্রস্তুতি গ্রহণ না করে তবে সে অনুরুপ কাজের কারণে বা অনুরুপ অবস্থার জন্য পাপ অর্জন করছে। কারণ যখন জিহাদ ফারদ-আল-আইন তখন প্রস্ততিও ফারদ-আল-আইন এবং জিহাদ যখন ফারদ-আল-কিফায়া তখন প্রস্ততিও ফারদ-আল-কিফায়া। সুতরাং জিহাদের প্রস্তুতির হুকুম জিহাদের হুকুমের অনুরুপ।
ভাইয়েরা, যখন আল্লাহর দ্বীনের শত্রুরা মুসলিম উম্মাহর শাসনভার গ্রহণ করে এবং আল্লাহর শরীয়াহকে বাতিল করে মানবরচিত আইনকে বাস্তবায়িত করে, যখন তারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী ইহুদী ও খ্রিষ্টান প্রভুদের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনী আর পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়, যখন উম্মাহর সম্পদ লুণ্ঠিত হয় ও জুলুম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন কি আপনি আপনার মৌখিক সমর্থন আর নামমাত্র অর্থ সদাকা করে জিহাদের দায়িত্ব আদায় করতে চাইছেন?
আমাদের প্রস্তুতি এবং জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ এর ইবাদত পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে আমাদের অংশের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর এই দায়িত্ব পালনে আমাদের সামনে যে প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন তা আমাদেরকে কাটিয়ে উঠতেই হবে। পৃথিবীতে আল্লাহ 'আযযা ওয়া জালের হুকুম ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যথাসাধ্য পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এই কাজকে আঞ্জাম দিতে আমাদেরকে পর্যাপ্ত সময় এবং সবর দিতে হবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে আল্লাহ (সুবঃ) আমাদের নিকট কি আশা করেন--আর তা হল কুরবানী। আল্লাহ (সুবঃ) যেমন জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর ইবাদতকে পূর্ণতা দিতে আমাদের নিকট থেকে কুরবানী চান তেমনি এই পথে আমাদের সামনে যে সকল প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে তার ব্যাপারেও আমাদেরকে সচেতন করেছেন সূরা তওবার উল্লেখিত আয়াতে।
আমাদের অনেক ভাইয়েরাই বর্তমানে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর আবশ্যিকতা জানা এবং বুঝা সত্ত্বেও সূরা তওবায় বর্ণিত ৮টি প্রতিবন্ধকতার জালে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রেখেছেন। আমাদের অধিকাংশ পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তারা তাদের সন্তান্দেরকে কিছুতেই জিহাদ সংশ্লিষ্ট কোন কাজেই দেখতে চান না। আল্লাহ (সুবঃ) তাঁর কুরআনে পিতা-মাতার আনুগত্যের ব্যাপারে আমাদের হুকুম করেছেন। তবে সেটা অবশ্যই জিহাদের হককে রহিত করে নয়। উমর (রাঃ) বলেন, "যদি আমরা আমাদের পিতাদের অমান্য না করতাম, আমাদের কেউই জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহতে অংশগ্রহণ করতে পারতাম না।" পিতা-মাতার অবাধ্যতা এক্ষেত্রে একটি গুণ, যেহেতু সে আল্লাহর শরীয়াকে মান্য করেছে। আমাদেরকে অবশ্যই বান্দার হকের আগে আল্লাহর হককে প্রাধান্য দিতে হবে। যে ব্যাক্তি আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, সে পিতা-মাতার সাথে আল্লাহর জন্যই সম্পর্ক রাখে। এটা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার একটা উপায় মাত্র।
আপনি যদি বিবাহিত জীবন এবং সন্তানের দায়িত্ব পালন, দেখাশুনা করাকে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকেন তাহলে ভেবে দেখুন যে এটা একটা অজুহাত ছাড়া কিছু না। এই ফিৎনা আপনাকে জান্নাত থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখছে। আপনি তো বিবাহ করেছেন আপনার দ্বীনকে পূর্ণ করার লক্ষ্যে, রসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ পালনের লক্ষ্যে, সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার লক্ষ্যে। তবে কেন দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এই পথে চলার বাধা হয়ে যাবে? সাহাবারা একের অধিক বিবাহ করেছেন, তাদের অধিক সন্তান ছিল এবং পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের পরিমাণও ছিল সীমিত। তবুও তারা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ থেকে সরে দাঁড়ান নি। মক্কার মুসলিমরা যারা রসূল (সাঃ) এর সাথে হিজরত করেন নি পরিবারই ছিল তাদের পিছনে পরে থাকার কারণ, তাদের হতাশার কারণ। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُ*وهُمْ ۚ وَإِن تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُ*وا فَإِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ* رَّ*حِيمٌ
"হে ঈমানদার লোকেরা, অবশ্যই তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান সন্ততিদের মাঝে তোমাদের (কিছু) দুশমন রয়েছে, অতএব তাদের ব্যাপারে তোমরা সতর্ক থেকো, অবশ্য তোমরা যদি (তাদের) অপরাধ ক্ষমা করে দাও, তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করো এবং তাদের মাফ করার নীতি অবলম্বন করো, তবে আল্লাহ তায়ালা পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।" (সূরা আত্ তাগাবুনঃ ১৪)
আপনার অবশ্যকরণীয় জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর পথে যদি আপনার পরিবার যা কিনা আপনার সবচেয়ে কাছের তবে তাদের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যাওয়া একান্ত জরুরী। আপনার ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন আপনার জিহাদে অংশগ্রহণকে সমর্থন নাও করতে পারে, আপনাকে সাহায্য নাও করতে পারে। তারা আপনার জিহাদের পথের বাঁধা। আল্লাহর বিধান, শরীয়ত, ইসলামের সাথে যারা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে সেখানে রক্তের সম্পর্কের কোন মূল্য নেই। আল্লাহর সাথে সম্পর্কই সবচেয়ে বড় সম্পর্ক, সবচেয়ে বড় আত্মীয়তা।
আপনার ব্যবসা, চাকুরী, পড়াশুনা, সম্পদ, সামাজিক মর্যাদা আপনাকে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ থেকে উদাসীন করে রাখতে পারে না। জিহাদ আপনার নিকট স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দাবী করে। এক্ষেত্রে শুধু আপনার সমর্থনই যথেষ্ট নয়। আপনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি হয়েও যেমন সালাত, সিয়াম পালন করা থেকে বিরত থাকতে পারেন না তেমনি জিহাদ থেকেও দূরে থাকতে পারেন না। এসবই ইবাদত।
মক্কা বিজয়ের পর যখন আনসার (রাঃ) গণ নিজেদের ব্যবসা-খামার দেখাশুনার জন্য ফিরে যেতে চাইছিলেন তখন আল্লাহ (সুবঃ) এই আয়াত নাযিল করলেনঃ
وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
"আল্লাহর পথে অর্থ সম্পদ ব্যয় করো, (অর্থ সম্পদ আঁকড়ে ধরে) নিজেদের হাতেই নিজেদের ধ্বংসের অতলে নিক্ষেপ করো না এবং তোমরা (অন্য মানুষদের সাথে দয়া) অনুগ্রহ করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহকারী ব্যক্তিদের ভালবাসেন।" (সূরা আল বাক্বারাঃ ১৯৫)
আপনি নিজেকে মুজাহিদ হিসেবে ভাবছেন কিন্তু আপনার দৈনন্দিন নিয়মবাধা, চলাফেরা, আচার-ব্যবহারে কোন পরিবর্তনই আসেনি, আপনার নির্দিষ্ট কর্মসূচীর কোন ব্যাঘাতই ঘটেনি তা হতে পারে না। আপনি যে বাসগৃহে প্রশান্তি, নিরাপত্তা এবং উদ্বেগহীনভাবে পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বসবাস করছেন ভুলে যাবেন না তা সেই আকাশের নিচেই অবস্থিত আছে যেখানে থেকে কুফফাররা প্রতিদিন অগণিত মুসলিমদের ঘরের উপর ড্রোন ফেলে ধ্বংস করে দিচ্ছে তাদের সকলকে একসাথে। এমতাবস্থায় আপনি ঘরে বসে শুধু জিহাদের আকাংখা মনে পোষণ করবেন এটা আপনার অংশের দায়িত্ব পূরণ করে না। শুধু অন্তরের চিন্তা দিয়ে এবং মৌখিকভাবেই নয়, বাস্তব ক্ষেত্রেও আল্লাহকে, তাঁর রসূল (সাঃ) কে এবং জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহকে ভালবাসার প্রমাণ দেখাতে হবে। আপনাকে একপাশে রাখতে হবে পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, স্ত্রী, রক্ত, বংশ, আত্মীয়তা ও দাম্পত্য সম্পর্ক, সহায় সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য, চাকুরী ও পড়াশুনা, আরামদায়ক বাড়িঘর ইত্যাদি পার্থিব সুখ ও ভোগের উপকরণ আর অপর পাশে রাখতে হবে আল্লাহ, রসূল (সাঃ) এবং আল্লাহর পথে জিহাদের প্রতি ভালবাসাকে। আর জিহাদ বলতে জিহাদের সকল দাবী ও সকল দুঃখ কষ্টকে, সকল ত্যাগ ও বঞ্চনাকে, সকল যখম ও শাহাদাতকে এবং সকল যুলুম ও বেদনাকে বুঝানো হয়। নিঃসন্দেহে এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু তবু এটা করতেই হবে। আল্লাহ রসূল (সাঃ) এবং জিহাদকে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তা নাহলে সূরা তওবার ২৪ নং আয়াত আবার স্মরণ করে নিতে পারেন।قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَ*تُكُمْ وَأَمْوَالٌ
اقْتَرَ*فْتُمُوهَا وَتِجَارَ*ةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْ*ضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّـهِ
وَرَ*سُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَ*بَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّـهُ بِأَمْرِ*هِ ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي
الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
اقْتَرَ*فْتُمُوهَا وَتِجَارَ*ةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْ*ضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّـهِ
وَرَ*سُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَ*بَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّـهُ بِأَمْرِ*هِ ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي
الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
"বলো, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তানাদি, তোমাদের ভাই, তোমাদের পরিবার-পরিজন, তোমাদের বংশ-গোত্র এবং তোমাদের ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য-যা অচল হয়ে যাবে বলে তোমরা ভয় করো, তোমাদের বাড়ীঘরসমূহ যা তোমরা (একান্তভাবে) কামনা করো, যদি (এগুলো) তোমরা আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চাইতে বেশী ভালোবাসো, তাহলে তোমরা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর আযাবের ঘোষণা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো (জেনে রেখো); আল্লাহ তায়ালা কখনো ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।" (সূরা আত্ তাওবা-২৪)
নিজেকে মুজাহিদ হিসেবে প্রস্তুত করতে প্রয়োজন ঐকান্তিক নিষ্ঠা, একাগ্রতা, সবর এবং সময়। আল্লাহ কারো মধ্যে বহির্ভূত কোন আদেশ দেন না। মুসলিমরা এই নিষ্ঠা ও একাগ্রতা বাস্তবায়ন করতে সম্ভব বলেই আল্লাহ মুসলিমদের এই নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি যদি নিজেকে সেই বিশাল নেয়ামতের হকদার করতে চান যাকে আল্লাহ দ্বীনের পুনর্জীবনের জন্য বাছাই করবেন তবে নিজের জীবন, সম্পদ, সময় এবং পাথেয় আল্লাহ 'আযযা ওয়া জালের জন্য ব্যয় করুন। দুনিয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে নিজেকে পিছনে ফেলে রাখবেন না যা কিনা জাহান্নামীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিজেকে নিম্নের হাদীসের আঙ্গিকে আবারও যাচাই করে নিজের অবস্থান জেনে নিন। রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
"যদি তোমরা বাই'য়াল 'ইনা (এক ধরণের সুদের ব্যবসা), চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড় এবং গরুর লেজের অনুসরণে ব্যস্ত হয়ে যাও (অর্থাৎ দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়) এবং আল্লাহর জন্য জিহাদ পরিত্যাগ কর, আল্লাহ 'আযযা ওয়া জাল তোমাদের অপমানিত করবেন এবং সেই অপমান ততদিন পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে উঠানো হবে না যতদিন না তোমরা তোমাদের দ্বীনে প্রত্যাবর্তন কর।"
হাদীসটি আমাদের অবস্থার বর্ণনা প্রকাশ করে। আর এই অপমানিত অবস্থা হতে মুক্তির জন্য দ্বীনে প্রত্যাবর্তন প্রয়োজন, মুজাহিদ হওয়া প্রয়োজন।
আমার শ্রদ্ধেয় পিতারা এবং ভাইয়েরা, আপনাদের উদাসীনতা এবং নির্লিপ্ততায় আজ নির্যাতত মুসলিমদের অন্তর হতাশায় ডুবে যাওয়ার উপক্রম। যালিমদের কারাগার থেকে নির্যাতত মুসলিম ভাই-বোনেরা তাদের শরীর থেকে নির্গত রক্ত দিয়ে আপনাদের বার্তা পাঠিয়ে আপনাদের সাহায্য প্রার্থণা না করে ধিক্কার দিচ্ছেন। আজ মুসলিম বোনেরা অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন। এরপরও আপনাদের অন্তরে সাড়া জাগে না? এরপরও আপনাদের ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছা হয় না? আপনারা যদি এটা বুঝে থাকেন যে, তারা আপনাদেরকে উত্তেজিত করতে চাচ্ছে, আপনাদের রাগকে উস্কে দিতে চাচ্ছে যাতে আপনারাও অস্ত্র হাতে নেন, তাহলে কেন তা এখনও করছেন না? কেন আপনারা এখনও নির্লিপ্ত এবং এখনও উত্তেজনা বোধ করেন না? সাহাবারা রসূল (সাঃ) এর একান্ত বাধ্য ও অনুগত ছিলেন তারপরও সাহাবাদের অনৈতিক কথা বা কাজে রসূল (সাঃ) রাগান্বিত হয়েছেন, এত রাগান্বিত হয়েছেন যে তার চেহারা মোবারকের রং পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে গিয়েছে। তাহলে আপনি কেন মুসলিমদের এই করুণ অবস্থায় অত্যাচারীদের উপর রাগ অনুভব করেন না, উত্তেজনা অনুভব করেন না? অতীত ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখুন মুসলিমদের অগ্রসরতার খবর শুনে না দেখেই রোমান এবং পারস্য সৈন্যরা ভয়ে পিছু হটে গিয়েছিল। তারা মুসলিম বাহিনীর সামনাসামনি আসতেও সাহস করেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন যদিও বা মুসলিমরা ছিল তাদের তুলনায় সংখ্যায় নগণ্য।
আমরা আপনাদেরকে সেই অবস্থায় দেখার দাবী রাখি যাতে আপনাদের সজাগ হওয়ার কথা জেনে শত্রুরা আমাদের দিকে পা বাড়াতেও ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
সম্মানিত ভাইয়েরা, আপনারা যদি এই আত্মসন্তুষ্টিতে থেকে থাকেন যে আপনারাতো জিহাদকে সমর্থন করছেন, সাহায্যও করছেন তাহলে আর কি সমস্যা - তাহলে বলব আপনি শয়তানের প্ররোচনায় রয়েছেন। আপনি কি নিজেকে ডান কাতারের মানুষ হিসেবেই তৈরি করতে ব্যস্ত, অগ্রবর্তীদের দলে থাকতে চান না?
আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ ۚ أُولَـٰئِكَ الْمُقَرَّ*بُونَ
"আর যারা অগ্রবর্তী তারা অগ্রবর্তীই হবে। এরাই বিশেষ নৈকট্যের অধিকারী।"
(সূরা আল ওয়াক্বেয়াঃ ১০-১১)
উসমান বিন আবী সাওদাও বলেছেন, আমাদের বলা হয়েছে যে এ আয়াতে অগ্রবর্তী বলতে যারা প্রথমে জিহাদে যেতে বের হয় তাদেরকে বুঝিয়েছে এবং তাদেরকে বুঝিয়েছে যারা প্রথমে সলাতের জন্য যায়। (ইবনে আবি শায়বা, সহীহ)সবশেষে আমরা আল্লাহ (সুবঃ) এর নিকটই দো'আ করি তিনি যেন এই মুসলিম উম্মাহর ঐক্যকে এবং দৃঢ়তাকে রক্ষা করেন। মুজাহিদদেরকে সর্বচ্চো মর্যাদা দান করেন, তাদের সাহায্য করেন এবং মুসলিম ভাই-বোনদেরকে অগ্রবর্তীদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আমীন।
আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّ*ضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ ۚ إِن يَكُن مِّنكُمْ عِشْرُ*ونَ صَابِرُ*ونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ ۚ وَإِن يَكُن مِّنكُم مِّائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِّنَ الَّذِينَ كَفَرُ*وا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُونَ
"হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। যদি আপনাদের মধ্যে বিশ জন দৃঢ়পদ লোক থাকে তবে তারা দুইশত লোকের উপর জয় লাভ করবে। আর যদি আপনাদের মধ্যে একশত জন দৃঢ়পদ লোক থাকে তবে তারা এক হাজার জনের উপর জয় লাভ করবে। কেননা তারা এমন লোক যারা (আল্লাহর শক্তি সম্পর্কে) কিছুই বুঝে না। (সূরা আল আনফালঃ ৬৫)
আলহামদুলিল্লাহী রব্বুল আলামীন ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু 'আলা রসূলিহীল কারীম।
Comment