ডাউনলোড
দৃঢ়প্রত্যয়ী শায়খের বিদায় যাত্রা
শায়খ উমর আব্দুর রহমান আল মিসরী (রহ.) এর স্মরণে
মুহাম্মাদ মুসান্না হাসসান (হাফিজাহুল্লাহ) এর বার্তা
সকল প্রশংসা জগত সমুহের পরিচালক আল্লাহ তায়ালার জন্য। দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবীকুলের শিরোমণি, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর, তাঁর সকল সাহাবীদের উপর এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা উত্তমভাবে ধৈর্য ও দৃঢ়তায় তাঁদের নীতি অনুসরন করবে এবং তাঁদের পথে চলবে।
আমেরিকার কোনো এক বন্দিশিবিরে থাকা অবস্থায় দৃঢ়তার পর্বততুল্য শায়খ উমর আব্দুর রহমান (রহ.) এর প্রিয় বন্ধুর ডাকে সাড়া দানের সংবাদ তীব্র দুঃখ ও বিষন্নতাসহ আমদের নিকট পৌঁছেছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।
জামেয়া আজহারের সূত্রে আমরা যতটুকু জানি যে, শায়খ উমার আব্দুর রহমান (রহ.) অর্ধশতাব্দি অতিবাহিত করেছেন আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ ও তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করার প্রচেষ্টায়, ইসলাম ও মুসলমানদের শক্তিশালী করায় এবং সমগ্র পৃথিবীর বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের কাফের ও মুরতাদদের পরাজিত করায়। আর বাকি অর্ধশতাব্দির অর্ধেক অতিবাহিত করেছেন যুগশ্রেষ্ঠ অপরাধী, একালের ফেরআউন আমেরিকার কারাগারে।
তাই আমরা মুসলিম জাতি, বিশেষ করে মিশরবাসির প্রতি শায়খের বিচ্ছেদ বেদনায় শোক প্রকাশ করছি। আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন ,তাঁকে প্রশস্ত জান্নাতের অধিকারি করুন এবং জাতিকে তাঁর থেকে উত্তম বিনিময় গ্রহন করার তাওফিক দিন।
শায়খ (রহ.) ছিলেন দাওয়াত ও জিহাদের এক অন্যতম আদর্শ পুরুষ। যেমন তিনি তাগুতি শাসন ব্যাবস্থা ও বস্তুবাদি রীতি-নীতির এবং এর ধারক-বাহকদের প্রতিরোধ করতে মিশরে জামায়াতে ইসলামি গঠন করেন। এর জন্য তিনি অনেক কুরবানি ও ত্যাগ স্বীকার করেন। মিশরে তিনি ৩ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন।
অতঃপর তাঁকে স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য করা হলে তিনি কমিউনিস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে এক বীর মুজাহিদ বেশে আফগানিস্তান প্রবেশ করেন।
গত শতাব্দির আশির দশকে তিনি সেখানে শায়খ আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রহ.) এর বাহিনীতে যোগ দেন এবং তাঁর সাথে মাকতাবুল খাদামাতে অংশ গ্রহন করেন।
মুজাহিদদের সেবার জন্য যা শায়খ আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রহ.) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাশিয়ার পরাজয় এবং শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহ.) শাহাদাতের পর তিনি জাতিকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় আমেরিকার প্রতিরোধে একত্রিত হওয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁর প্রচেষ্টায় আমেরিকা ও মিশরে অসংখ্য মুজাহিদ ভাইয়েরা তৎপর হয়ে উঠেছে। অবশেষে ১৯৯৩ সাল থেকে শাহাদাত পর্যন্ত তিনি আমেরিকার কারাগারে বন্দি ছিলেন। বন্দী হওয়ার পর থেকে তাঁর পদদ্বয় আর কখনো জেলের বাহিরে আসতে পারেনি।
এমন যুগই কি বীরের দল জন্ম দেয়?
এমন যামানাই কি পাহাড়সমূহকে বিলীন করে দেয়?
যে পাহাড়ের বিস্তৃতি ভূমির উপর গড়ে উঠেছে দেশগুলো।
অত:পর যখন সমস্ত ভূখণ্ড ভরে গেছে, তখন তা নি:শেষ হয়ে গেছে।
তারা উত্তরাধিকার সম্পদ তালাশ করেছে,
তাতে শুধু উচ্চ মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বই পেয়েছে।
হে সেই যামানার সাদৃশ্য অনুসন্ধানকারী! তুমি কোথায় তা পাবে?
তুমি তো যামানার উপর অসম্ভব বিষয় চাপাচ্ছো।
নিশ্চয়ই তাঁর মৃত্যুর পর যামানা তাঁর মতো কাউকে ফিরিয়ে দিতে অক্ষম।
এমন যামানাই কি পাহাড়সমূহকে বিলীন করে দেয়?
যে পাহাড়ের বিস্তৃতি ভূমির উপর গড়ে উঠেছে দেশগুলো।
অত:পর যখন সমস্ত ভূখণ্ড ভরে গেছে, তখন তা নি:শেষ হয়ে গেছে।
তারা উত্তরাধিকার সম্পদ তালাশ করেছে,
তাতে শুধু উচ্চ মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বই পেয়েছে।
হে সেই যামানার সাদৃশ্য অনুসন্ধানকারী! তুমি কোথায় তা পাবে?
তুমি তো যামানার উপর অসম্ভব বিষয় চাপাচ্ছো।
নিশ্চয়ই তাঁর মৃত্যুর পর যামানা তাঁর মতো কাউকে ফিরিয়ে দিতে অক্ষম।
বিশ্বের আনাচে-কানাচে অবস্থানকারী মুসলমান ও ইসলামী দলসমূহ,
যারা আল্লাহর কালীমাকে বুলন্দ করার জন্যে ও এ ধরাতে দীন প্রতিষ্ঠা করার জন্যে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, আমাদের জন্যে শায়খ উমার আব্দুর রহমানের মাঝে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
কারণ তিনি কাফেরদের নেতা, বাতিলের ইমামদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের সামনে সত্যকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। তিনি সবচেয়ে বড় সৎ কাজের আদেশ করেন, তা হলো- দীন প্রতিষ্ঠা করা, ইসলামী খেলাফত কায়েম করা আর এ কারণে শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা।
তিনি অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেন।
ফলে তাঁকে পশ্চিমা কাফেরদের দল, বিশ্বাসঘাতক শাসকগোষ্ঠী, গণতন্ত্রের মত নোংরা চিন্তা-চেতনার মোকাবেলা করতে হয়, যা তারা ইসলাম ও তার বিশ্বাসকে ধ্বংস করার জন্যে প্রণয়ন করে। তাকে জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক কাফের সংগঠনের মোকাবেলা করতে হয়। যা গঠন করা হয়েছিল সমগ্র বিশ্বে তাদের কর্তৃত্ব দৃঢ় করার জন্যে।
তিনি এ সবগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যান। এ পথে তাকে অনেক কষ্ট, পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, যা তিনি হাসিমুখে, দৃঢ়তার সাথে গ্রহন করে নেন। পরিশেষে মৃত্যুকে বরণ করে নেন।
এটাই বিশুদ্ধ মানহাজ, নবী ও আলেমদের মানহাজ, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের মানহাজ। যা ধারণ করা আমাদের প্রত্যেকের উপর আবশ্যক।
ইমাম মুসলিম রহ. তার সহীহ কিতাবে বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“আল্লাহ আমার পূর্বে যত নবীকে প্রেরণ করেছেন, প্রত্যেকেরই তাঁর অনুসারীদের থেকে একদল সাহায্যকারী ও সঙ্গী-সাথী ছিলেন। তার তাদের নবীর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরেছিল, তাঁর আদেশের আনুগত্য করেছিল।
তারপর তাঁদের চলে যাওয়ার পর তাঁদের যারা স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল, তারা এমন কথা বলতে লাগলো যা তারা নিজেরা করত না, তারা এমন কাজ করতে লাগলো যা তাদেরকে আদেশ করা হয়নি।
তাই যারা হাত দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন, যে তার জবান দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন, যে তার অন্তর দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন। আর এর বিপরীতে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।”
তারপর তাঁদের চলে যাওয়ার পর তাঁদের যারা স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল, তারা এমন কথা বলতে লাগলো যা তারা নিজেরা করত না, তারা এমন কাজ করতে লাগলো যা তাদেরকে আদেশ করা হয়নি।
তাই যারা হাত দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন, যে তার জবান দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন, যে তার অন্তর দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন। আর এর বিপরীতে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।”
মুসলমানদেরকে তাদের ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবনের ইবাদত তথা পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে ও গুনাহকে পরিত্যাগ করে আল্লাহর আদেশের আনুগত্যের প্রতি দাওয়াত প্রদান করা।
তাদেরকে একটি ভূমিতে কালিমাতুত তাওহীদের পতাকাতলে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য পরিহার করে ঐক্য ও মৈত্রীর দিকে দাওয়াত প্রদান করা।
দখলকৃত মুসলিম ভূমিগুলোর প্রতিরক্ষার জন্যে ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্যে, আমারদের ভূমি গুলোতে যারা শরীয়ত বাস্তবায়নে বাধা দেয় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রতি দাওয়াত প্রদান করা। চাই তারা পাশ্ববর্তী কাফের হোক অথবা তাদের গায়ের রঙ আমাদের মত হোক।
এ উদ্দেশ্য অর্জনের পথ গণতন্ত্র বা ভোটাভুটি নয়। বরং এর জন্যে দরকার কুরবানী করা, জান, মাল, ফসল ব্যয় করা।
কীভাবে সফলতা বা তার কাছাকাছি পৌঁছাবে * অথচ বীরপুরুষ, মৃত্যুকে বরণকারী কমে গেছে।
লেখক- মুহাম্মদ মুসান্না হাসসান
জামাআত কায়েদাতুল জিহাদ ভারতীয় উপমহাদেশ
আস-সাহাব ভারতীয় উপমহাদেশ
জামাআত কায়েদাতুল জিহাদ ভারতীয় উপমহাদেশ
আস-সাহাব ভারতীয় উপমহাদেশ
Comment