মুজাহিদ ও শহীদদের বিস্ময়কর অনেক ঘটনাই তো আমরা শুনেছি, কিন্তু 'আনসার আল-ইসলাম'-এর সৈনিকদের ঈমানদীপ্ত দাস্তান কি আমরা শুনেছি ?
হ্যাঁ বন্ধুরা! আল্লাহ তা‘আলার গাইবি নুসরাতের এমন কিছু ঘটনাই আজ তোমাদের শোনাবো।
রবের নিকট ইস্তেখারা এবং দুয়া যখন গোয়েন্দা :
কোনো অভিযান পরিচালনা করা এবং সফল হওয়ার জন্য "গোয়েন্দা-তথ্য" অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় একটি বিষয়।
এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল মুসলিম সিপাহসালার 'সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী' (রহ.) বলেন-
"কোনো অভিযানের দুই-তৃতীয়াংশ জয় করেন গোয়েন্দারা, আর এক-তৃতীয়াংশ করেন সৈনিকরা"।
কিন্তু দুর্ধর্ষ জঙ্গি (জিহাদি) গোষ্ঠী আনসার আল-ইসলামের গোয়েন্দা কে? কেমন দক্ষ গোয়েন্দা তিনি? যার নিখুঁত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিটি অভিযান অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুজাহিদ অলৌকিক এক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মেসেজ দিয়েছেন। তিনি বলেন : "ঘুমই আমাদের গোয়েন্দা-রিপোর্ট" মানে! মানে আমরা যখনি কোনো অপারেশন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তখনই ‘ইস্তেখারা’ করি, যদি স্বপ্নে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ইশারা আসে তাহলেই সামনে অগ্রসর হই। অর্থাৎ ‘আল্লাহর নিকট ইস্তেখারা করাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা রিপোর্ট’। যেমন- কুখ্যাত নাস্তিক অভিজিৎ রায়ের নিকৃষ্ট চিন্তা-চেতনার ঘৃণ্য ‘কীট' মুসলিমদের মাঝে ছড়ানোর গুরুদায়িত্ব পালনকারী অভিশপ্ত দুই কুলাঙ্গারের উপর একসাথে অভিযান চালানোর ব্যাপারে আমরা একটু চিন্তিত ছিলাম, কারণ তাদের দুইজনই থাকতো ভিন্ন ভিন্ন দু’টি মার্কেটের সুরক্ষিত অফিসে। জনবহুল এলাকায় মার্কেটের ভেতর, যেখানে অভিযান চালিয়ে ফিরে আসা অত সহজ নয়। আবার সিকিউরিটি গার্ড, সি.সি. ক্যামেরা ইত্যাদি তো আছেই।
কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! এই অবস্থার মধ্যে এক সারিয়ার (অভিযান) কমান্ডার স্বপ্নে দেখলেন যে, তারা দুটো অভিযান পরিচালনা করে নিরাপদে ফিরে আসছেন। যদিও এই সারিয়ার কমান্ডার জানেন না যে, অপর আরও একটা সারিয়ারও প্রস্তুতি চলছে। অপারেশনের অন্যান্য মুজাহিদগণও একই দিনে ভালো ভালো কিছু স্বপ্নে দেখলেন।
আলহামদুলিল্লাহ! এই স্বপ্ন দেখার পর আমরা আত্মিক প্রশান্তির সাথে সামনে অগ্রসর হই।
আল্লাহর কৃপায় স্বপ্নে যা দেখা হয়েছিলো তারই বাস্তবায়ন ঘটলো! অকল্পনীয় সহজতা এবং নিরাপত্তার সাথে সারিয়া সফল করে মুজাহিদীনরা ফিরে এসেছেন। আলহামদুলিল্লাহ!
চাপাতি হাতে যখন মালাইকা!!
অনুরূপভাবে বাংলাদেশে সমকামী’দের রাঘববোয়াল এবং সমকামীদের অধিকার বিষয়ক পত্রিকা ‘রূপবান' -এর সম্পাদক নরপিশাচ জুলহাজ মান্নান ও তার সহযোগীকে জাহান্নামে পাঠানোর পূর্বে আমাদের পরিকল্পনা ছিলো শুধু জুলহাজকে হত্যা করা। সেখানেও আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণকালে এক মুজাহিদ স্বপ্নে দেখলেন যে, সে একটা সারিয়া করে নিরাপদে ফিরে আসছে এবং সেখানে দুটো মাথা পরে আছে। আলহামদুলিল্লাহ এবারো সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটলো। আল্লাহু আকবার! কত উত্তম গোয়েন্দা তথ্য! কত নিখুঁত গোয়েন্দা কার্যক্রম! যার তথ্যে কোনো ত্রুটি নেই।
সে মুজাহিদ জানালেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মুজাহিদীনে কেরাম যখন মানবরূপী এই পশুটার(সমকামী জুলহাজ মান্নান) বাসায় যায় তখনি বাঁধে বিপত্তি! প্রথমেই নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা, এরপর স্থানীয় লোকজন ও পথচারীদের গণজোয়ার, অতঃপর থানায় ফোন। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ উল্টো। বাধা যেন পাহাড়ের রূপ ধারণ করেছে। শত্রু বাহিনী দাঁত বের করে ধেঁয়ে আসছে। এখন উপায়! শত বাধার পাহাড় মাড়িয়ে অবশেষে মুজাহিদীনে কেরাম আল্লাহর অশেষ রহমতে অপারেশন সম্পন্ন করে বেরিয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ!
এবার ঘটে আরেক কাণ্ড! থানা থেকে অপারেশনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেড এলার্ট দিয়ে স্পটে চলে আসে কুখ্যাত পুলিশ (তাগুত) বাহিনী। সামনেই ফিরার পথে মুজাহিদীনের সেই দল। দেশের নামীদামী সংবাদ মাধ্যমগুলোর সৌজন্যে(!) আমরা জানতে পেরেছিলাম- "হামলাকারীরা ছিল পাঁচজন,তাদের একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়, কিন্তু অপর হামলাকারী পুলিশের উপর আক্রমণ করে, এতে আটক হামলাকারী পালিয়ে যায়।"
আর সি.সি. ক্যামেরার ফুটেজে ভেসে উঠল- চারজন একসাথে দৌড়ে চলে যাচ্ছে, তাদের ৩০-৪০ সেকেন্ড পর পঞ্চমজন দৌড়ে আসে।
এখন প্রশ্ন হলো, ‘পাঁচ'জনের মধ্যে ‘চার'জন যদি আগে চলে যায়, আর তাদের ৩০-৪০ সেকেন্ড পর পঞ্চমজন (যাকে আটক করা হয়েছিল) আসে,তাহলে পুলিশের উপর আক্রমণ করল কে? যার আঘাতে পুলিশ হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিল!
-এ বিষয়টি আমরা সাহায্যপ্রাপ্ত আটক মুজাহিদ ভাইয়ের বর্ণনা থেকে জানব ইনশাআল্লাহ!
আল্লাহর অনুগ্রহে সকল মুজাহিদীন যখন একত্রিত হন তখন যে মুজাহিদকে মুরতাদ বাহিনী ধরে ফেলেছিল তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, ভাই! আপনার কি হয়েছিল একটু বিস্তারিত বলেন। তখন তিনি বললেন, আমি যখন সকলের সাথে আসছিলাম তখন আমি আমার ব্যাগের ওজনের কারণে একটু পেছনে পড়ে যাই। (উল্লেখ্য : এই মুজাহিদ অন্যদের থেকে বয়স্ক। শাহাদাতের আশায় এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি জিহাদে শরিক আছেন। -আল্লাহ তাঁকে কবুল করুন!) হঠাৎ দেখি মুরতাদদের একটা গাড়ি আমার সামনে এসে ব্রেক করল। অন্য ভায়েরা আমার চোখের আড়াল হয়ে গেল। এমতাবস্থায় মুরতাদবাহিনী আমাকে ঘিরে ফেলল। আমিও তাকবির দিয়ে সাধ্যানুযায়ী চাপাতি দিয়ে আঘাত শুরু করি। এক পর্যায়ে আমি রাস্তায় পরে যাই, আর তাগুতবাহিনী আমার দিকে পিস্তল তাঁক করে গুলি করতে করতে আমাকে কাবু করে ফেলে।
হঠাৎ দেখি আমাদের টিমের এক ভাই চাপাতি উঁচু করে তাদের দিকে ধেঁয়ে আসছেন। তারপর সেই ভাই আমাকে তাদের থেকে উদ্ধার করে বলল, আপনি দৌড়ে চলে যান। আমি দৌড়ে চলে আসি এবং কিছুদূর এসে সকল ভাইকেই পেয়ে যাই। এমনকি যে ভাই আমাকে উদ্ধার করল তাকেও দেখলাম সে এখানেই আছে। পরে আমি যখন আমার ঘটনা তাঁদের বললাম, তারা সবাই আশ্চর্য হলো। কারণ, আমার এই অবস্থার কথা তাঁরা বুঝতেই পারেননি। তাঁরা আমার অবস্থা কিছুই জানেন না। তাঁরা কেউ আমাকে সাহায্য করতেও যাননি। তারা শুধু আমার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। সুবহানাল্লাহ!
আমাদের সকলেরই ব্যাপারটা বুঝতে আর বাকি রইল না। আমরা সবাই বুঝলাম, আল্লাহ তা‘আলা এই মুজাহিদ ভাইকে মালাইকা দ্বারা সাহায্য করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ!
সাদাকাল্লাহুল আজিম ওয়া সাদাকা রাসূলুহুল কারিম। সুবহানআল্লাহ! রাখে আল্লাহ মারে কে? আল্লাহ (সুবহানাহু.) কি সত্য বলেন নি?
إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ
“যে আল্লাহকে সাহায্য করবে আল্লাহও তাকে সাহায্য করবেন।"
কুরআন সাক্ষী, বদর যুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে মুমিনদের সাহায্য করেছিলেন, তিনি কিন্তু এখনো সাহায্য করতে সক্ষম।
মৃত্যু যখন শাহাদাত।
শহীদ মুকুল রানা (রহ.) :
সর্ব কালেই আবু জাহেল,আবু লাহাবের প্রেতাত্মারা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের আলোকে নিভিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে ইসলামের কাণ্ডারি প্রেরণ করেছেন।
পুরো দেশ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গারদের দ্বারা ভরে যাচ্ছিল তখনি তাদের ‘‘যম" হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন শহীদ মুকুল রানা (রহ.)
শহীদ মুকুল রানা (রহ.) কে গত ২৩/২/১৬ ইং তারিখে বাংলাদেশের তাগুতবাহিনী গ্রেফতার করে এবং দীর্ঘ ৪ মাস পর তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এ পুরো সময়কাল তিনি তাগুতের গোপন টর্চারশেলে বন্দি ছিলেন। এ সময় মহান এ মুজাহিদের উপর নেমে আসে বর্বরতার বিভীষিকাময় নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন। তাগুতের লেলিয়ে দেওয়া হিংস্র হায়েনারা তাকে অমানুষিকভাবে প্রহার করতে থাকে।
পৃথিবীর ইতিহাস থেকে হজরত বেলাল-খাব্বাবের ঘটনা যেমন তুলি দিয়ে মুছে দেওয়া যায় না, তেমনিভাবে শহীদ মুকুল রানার উপর তাগুতিশক্তির লোমহর্ষক অত্যাচারের কথাও মুসলিম জনগণ ভুলে যাবে না।
শহীদ মুকুল রানার উপর ভয়ঙ্কর সব কুকুরেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ সকল দানবেরা তাঁকে উল্টোভাবে লটকিয়ে রাখত। ফেরাউনের প্রেতাত্মারা শাস্তি দিতে গিয়ে তাঁর একটি পা ভেঙ্গে ফেলেছিল। তাঁর দেহে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো। এত নির্যাতনের পরও তিনি ছিলেন ঈমানের বলে বলীয়ান। তাঁর থেকে 'তথ্য' পেতে হায়েনারা তাঁর দেহকে ইলেকট্রিক ঢিলমেশিন দিয়ে ঝাঁজরা পর্যন্ত করেছে।
কিন্তু শীশাঢালা প্রাচীরের এই মহান মুজাহিদের মুখ থেকে একটি তথ্যও হায়েনারা বের করতে পারেনি।
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লহিল আজিম!
দীর্ঘ ৪ মাস জালিমের অত্যাচার আর নিপিড়নে পিষ্ট হয়ে গত ১৪/১৫ রমজান, ২০/২১ জুন ২০১৬ এ শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে মহান রাব্বুল আলামীনের সান্নিধ্যে চলে যান।
বন্দি হওয়ার আগ পর্যন্ত সবগুলো মেসেজের শেষে ভাই একটি কথা লিখতেন-ই "ভাই! দোয়া করবেন,আল্লাহ যেন আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন।"
এই ভাই বন্দি হওয়ার কয়েক মাস আগে সকল ভাইদের উদ্দেশ্যে ১ টি চিঠিও লিখেছিলেন। চিঠির শিরোনাম ছিল, “আসুন শাহাদাতের পেয়ালা থেকে পান করি”।
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলা ভাইয়ের তামান্না পূর্ণ করেছেন।
শাহাদাতের পর রমজান মাসে তাঁর ঘনিষ্ঠ অপর এক হাফেজে কোরআন মুজাহিদ ভাই তাঁকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলেন- ভাই! আল্লাহ তা‘আলা আপনার সাথে কেমন আচরণ করেছেন?
তখন তিনি ঐ হাফেজের হাত ধরে একটি বাগানের দিকে নিয়ে যান।
হাফেজে কোরআন বর্ণনা করেন, ফুল ও ফলে ভরপুর, বিভিন্ন পাখির গুঞ্জনে মুখরিত, সবুজ শ্যামল, আত্মতৃপ্তিকারী এমন সুন্দর বাগান আমি আর কখনো দেখিনি। সেখানে যাওয়ার পর আমি আরও অনেক যুবক-কিশোরকে দেখতে পেলাম। এবার ভাই আমার হাতটি ছেড়ে দিলেন। ভাইকে আমি আর দেখতে পাইনি। এমতাবস্থায় আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। শহীদ মুকুল রানা ভাইকে আরও অনেক মুজাহিদ ভাই স্বপ্নে ভালো ভালো অবস্থায় দেখেছেন।
অন্য এক মুজাহিদ ভাই দেখেছেন যে, তিনি সবুজ পাখির ডানায় উড়ে বেড়াচ্ছেন। অপর আর এক মুজাহিদ ভাই দেখেছেন তিনি বলতেছেন, আমি আমার কাজ সম্পন্ন করে এসেছি, এবার আপনারা আপনাদের কাজ জারি রাখেন।
ওরা চেয়েছিল ভাইকে মেরে ফেলতে, কিন্তু আল্লাহ ভাইকে চিরকালের জন্য জীবিত করে দিলেন।
তাইতো আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- (আয়াত) “যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না।" প্রিয় বন্ধুরা! ঐ বাগান আমাদের আহ্বান করছে। যাবে না সে বাগানে??
সূত্র:- আর-রিবাত মেগাজিন, প্রস্তুতি মুলক সংখ্যা। মেগাজিনটি এই সাইটে পাবেন- *http://arribatteam.wordpress.com
Comment