অন্যায় তাকফিরের ব্যাপারে আপনার পা যেন পিছলে না যায়…
ড. আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ মুহাইসানী (হা.)
আজ রাতে আমি যে বিষয় সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, শুনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন এবং বিশেষ করে আমার মুজাহিদ ভাইরা, আপনাদের কর্ণ আমাকে কর্য হিসেবে দিয়ে দিন।
আপনার পা যেন পিছলে না যায়…
এটি একটি সমস্যা যা ‘এটি বলা হয়েছে’ অথবা ‘তারা বলেছেন’ মূলক অনেক জনশ্রুতির উপর ভর করে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে।
তবে আমরা যদি কুরআনের নির্দেশনা মানার ব্যগ্রতা প্রকাশ করে থাকি, তাহলে আমরা আল্লাহর বাণী অনুসরণ করতাম,
“আর যদি তাঁরা সেগুলো রাসূল পর্যন্ত অথবা তাঁদের নেতৃস্থানীয়দের নিকট পৌঁছে দিত, তাহলে এর মধ্যে অনুসন্ধান করার মত কিছু থাকলে অনুসন্ধান করে দেখা যেত।” (সূরা নিসাঃ ৮৩)
প্রিয় ভাইয়েরা,
এই বিষয়ে অজ্ঞতা অনেক ভাইদের পা পিছলে যাবার কারণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা আল্লাহর দরবারে তাঁর দ্বীনের উপর দৃঢ়চিত্ত থাকার প্রার্থনা করছি এবং আল্লাহর কাছে অবলম্বন কামনা করছি।
হে আমার সৌভাগ্যশালী ভাই! সুতরাং অন্যায় তাকফীরের ব্যাপারে আপনার পা যেন পিছলে না যায় এবং তাঁর (সা) সে কথার আওতায় এসে না যান, যেখানে তিনি (সা) বলেছেন, “যদি কোন ব্যক্তি তাঁর ভাইকে বলে ‘হে কাফির!’, তাহলে অবশ্যই তাদের একজন এর উপযুক্ত হয়ে যাবে।”
সুতরাং অন্যায় তাকফীরের ব্যাপারে আপনার পা যেন পিছলে না যায়, মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিরদের থেকে সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে উলামাদের জিবনী সংক্ষিপ্ত ভাবে আমি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি এবং সাহায্য কামনার বিষয়ে কথা বলার পূর্বে আমাদের অবশ্যই এখনকার সময়ের জিহাদী ময়দানগুলোর স্বচ্ছতার ব্যাপারে কথা বলা উচিৎ এবং এটি অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়।
ভাইদের মধ্যে একজন এসে আমাকে বলল, “হে শায়খ, অমুক অমুক দল আল্লাহর দ্বীন থেকে বের হয়ে গেছে।”
আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিভাবে?”
সে বলল, “তাঁরা সীমা অতিক্রমকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কাফীরদের সাহায্য কামনা করছে…, এবং সে বাগদাদীর দলকে বুঝাতে চাচ্ছিল।
তখন আমি তাঁকে বললাম, “এই কাজ কি দ্বীন ধ্বংসকারী বিষয়সমূহের একটি?”
সে তখন খুব আশ্চর্যের সাথে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কি এই বিষয়ে কোন ভিন্ন মত রয়েছে?”
অতঃপর উলামাগনের বক্তব্য এবং তাঁদের দলীলসমূহ আমি তাঁকে বর্ণনা করে শুনালাম, এরপর সে খুব বিস্মিত হল এবং আমাকে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমার সিরিজ বক্তব্য সমূহে বর্ণনা করে প্রকাশ করার আহ্বান জানালো।
সুতরাং আমি আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তিনি যেন তাঁর হেদায়াত দিয়ে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন।
কোন মতামতটি সবচেয়ে বেশি সঠিক সে বিষয়ে এখানে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না বরং এটি হল উলামাদের অবস্থানের (এ বিষয়ে) সংকলন। সুতরাং আপনার পা যেন পিছলে না যায় এবং মুজাহিদীনদের উপর অন্যায় ভাবে তাকফীর ঘোষণা করে নিজের জিহাদকে ধ্বংস করবেন না।
জেনে নিন হে সৌভাগ্যবান ভাইয়েরা, অতএব আপনার পা যেন পিছলে না যায়, এই ব্যাপারে উলামাদের ইজমা (ঐকমত্য) রয়েছে যে, মুসলিম জনগণ বা জামা’আতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য করা এবং তাদের (মুশরিকদের) বিজয় এনে দেয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।
অধিকন্তু জেনে রাখুন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সহায়তা করা ঈমান ভঙ্গকারী বিষয় সমূহের একটি এবং এরকম একটি স্পষ্ট ইরতেদাদ (আল্লাহর দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া) এর উদাহরণ হল যারা মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে nato বাহিনীকে সমর্থন জানায়।
শায়খ বিন বায রহি. তাঁর ফতওয়াতে বলেন, “ইসলামের উলামাগণ এই ব্যাপারে ইজমা পোষণ করেছেন যে, যে কেউ মুমিনদের উপর কাফিরদের সমর্থন করবে এবং যেকোনো উপায়ে তাঁদেরকে সহযোগিতা করবে সে তাঁদের মতই একজন কাফের হয়ে যাবে।”
শায়খ আহমাদ শাকির রহি. বলেন, “মিশরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইংরেজদেরকে যে কেউ যেকোনো ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে তা কম হোক অথবা বেশি, তাহলে এটি হবে দ্বীনত্যাগের চরমসীমা।”
অতএব আপনার পা যেন পিছলে না যায়, এটা জেনে নিন যে, বিচারের ক্ষেত্রে “সমর্থন দেওয়া” এবং “সাহায্য প্রার্থনা করা” সমান জিনিস নয়, কেননা “সমর্থন দেওয়া” অর্থ হল এমন ব্যক্তি যে নিজেকে মুসলিম দাবি করে মুসলিমদের উপর কাফিরদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সুতরাং এখানে মূল বিষয়টি কাফিররা নিয়ন্ত্রণ করছে (অপরদিকে মুসলিম নামধারী এটাকে সমর্থন জানাচ্ছে)।
সমর্থন বিষয়টিতে কাফিররা মূলে রয়েছে, অর্থাৎ এই যুদ্ধে কাফিররাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে। আর তারাই (কাফিররা) নিজেদের দলে যোগ দিতে নিজেদের মুসলিম দাবীকারী লোকদের আহ্বান জানায়, আর এটা (কাফেরদের দলে যোগ দেয়া, সাহায্য করা) কুফর।
অতএব আপনার পা যেন পিছলে না যায়, একটি বিষয়ে অবশ্যই নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে যে এ বিষয়ে উলামাদের ঐক্যমত রয়েছে, দ্রষ্টব্যঃ উলামা এবং সালাফগণ তাকফীর এর অধ্যায়ে মুসলিম কর্তৃক কাফিরদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য নেয়ার ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেননি এবং এ কাজকারীদের কাফের হিসেবে সাব্যস্তও করেন নি।
ফুকাহাগণ (ফকীহ) এই বিষয়ে একমত যে, সেইসব মুসলিমরা তাকফীর এর আওতায় পড়বেন না যারা জুলুমবাজ সীমালঙ্ঘনকারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য কামনা করেন এমন অবস্থায় যে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বেই কাফিররা যুদ্ধ করবে এবং মুসলিম বাহিনীর পতাকা কাফিরদের উপর সমুন্নত থাকবে। এবং মুসলিম বাহিনীর লাভের হিসাব সাহায্যকারী কাফিরদের থেকে মূখ্য হবে।
আর আমরা তার উপর তাকফীর করছি না এর মানে এই নয় যে এ কাজ করার অনুমতি আছে বরং (এর মানে) এ কাজকারীর উপর তাকফীর করাকে বর্জন করা। এটা আমাদের এই বিষয়ের ব্যাখ্যায়, ‘জুলুমবাজ সীমালঙ্ঘনকারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য চাওয়া, যখন নেতৃত্ব ও ক্ষমতা মুসলিমদের হাতেই থাকে’।
আর সবচেয়ে সঠিক মত হলো জমহুর ফুকাহাদের মত, “এটা হারাম এবং একে সকল অবস্থায় একটি অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা”। এটি মালেকি, শাফেয়ী, হাম্বলিদের মতামত এবং হানাফিরা এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন।
সুতরাং আপনার পা যেন পিছলে না যায়, এ দিকে লক্ষ্য রাখুন যে, যারা এ কাজকে হারাম সাব্যস্ত করেছেন এবং তিরস্কার করেছেন, যে ব্যক্তি এরকম সাহায্য চায় জমহুর উলামাগণ তাদের তাকফীর করেন নি। সুতরাং পার্থক্য হচ্ছে তাকফীর করা এবং হারাম সাব্যস্ত করার মাঝে এবং এর মানে এই নয় যে সমস্যাটি হালকাভাবে নেয়া যায়।
অপরদিকে সীমালঙ্গনকারীরা অত্যাচারী এবং তাঁদের আনুগত্য যদি কুফফারদের আদেশ-নিষেধের কাছে বাঁধা থাকে, তাহলে কুফফারদের পতাকা সমুন্নত হয়ে যাবে।
কাজেই, এই মারাত্বক সমস্যাটি কখনই হালকাভাবে নেয়া উচিৎ হবে না।
অতএব, আপনার পা যেন পিছলে না যায়, সতর্ক হোন এবং আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন যে, ইজতেহাদি যেসব বিষয়ে উলামাদের মাঝে ইখতিলাফ আছে, তাতে কুফর কিংবা রিদ্দা (দ্বীন ত্যাগ) হয় না।
এবং এখানে আমরা দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়বারের মতো বাহিনীর প্রধানদের সতর্ক করে দিচ্ছি যে, অত্যাচারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে আজ্ঞাবহ কাফিরদের সাহায্য চাওয়া এবং (যুদ্ধের) নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রনে থাকা কাফেরদের কাছে সাহায্য চাওয়ার মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে।
সুতরাং আপনার পা যেন পিছলে না যায়, জেনে রাখুন যে, যদি কেউ কোন কাফিরের কাছে সাহায্য চায়, এমন কাফিরের নিকট যাকে আপনি কাফির হিসেবেই দেখছেন কিন্ত সাহায্যপ্রার্থী গ্রহনযোগ্য ইজতেহাদি পার্থ্যকের দরুণ তাঁকে কাফির ভাবছে না, তখন এই ব্যাপারে আমাদের অবস্থান (এরকম সাহায্য চাওয়া যে হারাম সে ব্যাপার) তাঁদের উপর আপতিত হবে না (কারণ তাঁদের অবস্থানটি ইজতেহাদী দিক থেকে অনুমোদিত)।
এবং আপনার পা যেন পিছলে না যায়, আল্লাহ আপনার উপর তাঁর রহমত বর্ষণ করুন এবং এই ব্যাপারে সতর্ক হোন, যখন মুসলিম এবং কাফির কোন ধরণের পারস্পরিক অঙ্গীকার ছাড়াই একই সময়ে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাহলে সেটি সাহায্য চাওয়ার মধ্যে গণ্য হবে না। এবং এটি অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়।
আমার দৃষ্টিতে এই বিবৃতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন এবং একে ছড়িয়ে দিন। আল্লাহ আপনার অবস্থানকে সমুন্নত করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন আমাকে ও আপনাদেরকে দৃঢ় করেন এবং পাপ থেকে রক্ষা করেন।
সূত্রঃ almuwahideenmedia
ড. আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ মুহাইসানী (হা.)
আজ রাতে আমি যে বিষয় সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, শুনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন এবং বিশেষ করে আমার মুজাহিদ ভাইরা, আপনাদের কর্ণ আমাকে কর্য হিসেবে দিয়ে দিন।
আপনার পা যেন পিছলে না যায়…
এটি একটি সমস্যা যা ‘এটি বলা হয়েছে’ অথবা ‘তারা বলেছেন’ মূলক অনেক জনশ্রুতির উপর ভর করে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে।
তবে আমরা যদি কুরআনের নির্দেশনা মানার ব্যগ্রতা প্রকাশ করে থাকি, তাহলে আমরা আল্লাহর বাণী অনুসরণ করতাম,
“আর যদি তাঁরা সেগুলো রাসূল পর্যন্ত অথবা তাঁদের নেতৃস্থানীয়দের নিকট পৌঁছে দিত, তাহলে এর মধ্যে অনুসন্ধান করার মত কিছু থাকলে অনুসন্ধান করে দেখা যেত।” (সূরা নিসাঃ ৮৩)
প্রিয় ভাইয়েরা,
এই বিষয়ে অজ্ঞতা অনেক ভাইদের পা পিছলে যাবার কারণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা আল্লাহর দরবারে তাঁর দ্বীনের উপর দৃঢ়চিত্ত থাকার প্রার্থনা করছি এবং আল্লাহর কাছে অবলম্বন কামনা করছি।
হে আমার সৌভাগ্যশালী ভাই! সুতরাং অন্যায় তাকফীরের ব্যাপারে আপনার পা যেন পিছলে না যায় এবং তাঁর (সা) সে কথার আওতায় এসে না যান, যেখানে তিনি (সা) বলেছেন, “যদি কোন ব্যক্তি তাঁর ভাইকে বলে ‘হে কাফির!’, তাহলে অবশ্যই তাদের একজন এর উপযুক্ত হয়ে যাবে।”
সুতরাং অন্যায় তাকফীরের ব্যাপারে আপনার পা যেন পিছলে না যায়, মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিরদের থেকে সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে উলামাদের জিবনী সংক্ষিপ্ত ভাবে আমি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি এবং সাহায্য কামনার বিষয়ে কথা বলার পূর্বে আমাদের অবশ্যই এখনকার সময়ের জিহাদী ময়দানগুলোর স্বচ্ছতার ব্যাপারে কথা বলা উচিৎ এবং এটি অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়।
ভাইদের মধ্যে একজন এসে আমাকে বলল, “হে শায়খ, অমুক অমুক দল আল্লাহর দ্বীন থেকে বের হয়ে গেছে।”
আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিভাবে?”
সে বলল, “তাঁরা সীমা অতিক্রমকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কাফীরদের সাহায্য কামনা করছে…, এবং সে বাগদাদীর দলকে বুঝাতে চাচ্ছিল।
তখন আমি তাঁকে বললাম, “এই কাজ কি দ্বীন ধ্বংসকারী বিষয়সমূহের একটি?”
সে তখন খুব আশ্চর্যের সাথে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কি এই বিষয়ে কোন ভিন্ন মত রয়েছে?”
অতঃপর উলামাগনের বক্তব্য এবং তাঁদের দলীলসমূহ আমি তাঁকে বর্ণনা করে শুনালাম, এরপর সে খুব বিস্মিত হল এবং আমাকে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমার সিরিজ বক্তব্য সমূহে বর্ণনা করে প্রকাশ করার আহ্বান জানালো।
সুতরাং আমি আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তিনি যেন তাঁর হেদায়াত দিয়ে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন।
কোন মতামতটি সবচেয়ে বেশি সঠিক সে বিষয়ে এখানে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না বরং এটি হল উলামাদের অবস্থানের (এ বিষয়ে) সংকলন। সুতরাং আপনার পা যেন পিছলে না যায় এবং মুজাহিদীনদের উপর অন্যায় ভাবে তাকফীর ঘোষণা করে নিজের জিহাদকে ধ্বংস করবেন না।
জেনে নিন হে সৌভাগ্যবান ভাইয়েরা, অতএব আপনার পা যেন পিছলে না যায়, এই ব্যাপারে উলামাদের ইজমা (ঐকমত্য) রয়েছে যে, মুসলিম জনগণ বা জামা’আতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য করা এবং তাদের (মুশরিকদের) বিজয় এনে দেয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।
অধিকন্তু জেনে রাখুন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সহায়তা করা ঈমান ভঙ্গকারী বিষয় সমূহের একটি এবং এরকম একটি স্পষ্ট ইরতেদাদ (আল্লাহর দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া) এর উদাহরণ হল যারা মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে nato বাহিনীকে সমর্থন জানায়।
শায়খ বিন বায রহি. তাঁর ফতওয়াতে বলেন, “ইসলামের উলামাগণ এই ব্যাপারে ইজমা পোষণ করেছেন যে, যে কেউ মুমিনদের উপর কাফিরদের সমর্থন করবে এবং যেকোনো উপায়ে তাঁদেরকে সহযোগিতা করবে সে তাঁদের মতই একজন কাফের হয়ে যাবে।”
শায়খ আহমাদ শাকির রহি. বলেন, “মিশরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইংরেজদেরকে যে কেউ যেকোনো ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে তা কম হোক অথবা বেশি, তাহলে এটি হবে দ্বীনত্যাগের চরমসীমা।”
অতএব আপনার পা যেন পিছলে না যায়, এটা জেনে নিন যে, বিচারের ক্ষেত্রে “সমর্থন দেওয়া” এবং “সাহায্য প্রার্থনা করা” সমান জিনিস নয়, কেননা “সমর্থন দেওয়া” অর্থ হল এমন ব্যক্তি যে নিজেকে মুসলিম দাবি করে মুসলিমদের উপর কাফিরদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সুতরাং এখানে মূল বিষয়টি কাফিররা নিয়ন্ত্রণ করছে (অপরদিকে মুসলিম নামধারী এটাকে সমর্থন জানাচ্ছে)।
সমর্থন বিষয়টিতে কাফিররা মূলে রয়েছে, অর্থাৎ এই যুদ্ধে কাফিররাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে। আর তারাই (কাফিররা) নিজেদের দলে যোগ দিতে নিজেদের মুসলিম দাবীকারী লোকদের আহ্বান জানায়, আর এটা (কাফেরদের দলে যোগ দেয়া, সাহায্য করা) কুফর।
অতএব আপনার পা যেন পিছলে না যায়, একটি বিষয়ে অবশ্যই নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে যে এ বিষয়ে উলামাদের ঐক্যমত রয়েছে, দ্রষ্টব্যঃ উলামা এবং সালাফগণ তাকফীর এর অধ্যায়ে মুসলিম কর্তৃক কাফিরদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য নেয়ার ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেননি এবং এ কাজকারীদের কাফের হিসেবে সাব্যস্তও করেন নি।
ফুকাহাগণ (ফকীহ) এই বিষয়ে একমত যে, সেইসব মুসলিমরা তাকফীর এর আওতায় পড়বেন না যারা জুলুমবাজ সীমালঙ্ঘনকারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য কামনা করেন এমন অবস্থায় যে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বেই কাফিররা যুদ্ধ করবে এবং মুসলিম বাহিনীর পতাকা কাফিরদের উপর সমুন্নত থাকবে। এবং মুসলিম বাহিনীর লাভের হিসাব সাহায্যকারী কাফিরদের থেকে মূখ্য হবে।
আর আমরা তার উপর তাকফীর করছি না এর মানে এই নয় যে এ কাজ করার অনুমতি আছে বরং (এর মানে) এ কাজকারীর উপর তাকফীর করাকে বর্জন করা। এটা আমাদের এই বিষয়ের ব্যাখ্যায়, ‘জুলুমবাজ সীমালঙ্ঘনকারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য চাওয়া, যখন নেতৃত্ব ও ক্ষমতা মুসলিমদের হাতেই থাকে’।
আর সবচেয়ে সঠিক মত হলো জমহুর ফুকাহাদের মত, “এটা হারাম এবং একে সকল অবস্থায় একটি অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা”। এটি মালেকি, শাফেয়ী, হাম্বলিদের মতামত এবং হানাফিরা এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন।
সুতরাং আপনার পা যেন পিছলে না যায়, এ দিকে লক্ষ্য রাখুন যে, যারা এ কাজকে হারাম সাব্যস্ত করেছেন এবং তিরস্কার করেছেন, যে ব্যক্তি এরকম সাহায্য চায় জমহুর উলামাগণ তাদের তাকফীর করেন নি। সুতরাং পার্থক্য হচ্ছে তাকফীর করা এবং হারাম সাব্যস্ত করার মাঝে এবং এর মানে এই নয় যে সমস্যাটি হালকাভাবে নেয়া যায়।
অপরদিকে সীমালঙ্গনকারীরা অত্যাচারী এবং তাঁদের আনুগত্য যদি কুফফারদের আদেশ-নিষেধের কাছে বাঁধা থাকে, তাহলে কুফফারদের পতাকা সমুন্নত হয়ে যাবে।
কাজেই, এই মারাত্বক সমস্যাটি কখনই হালকাভাবে নেয়া উচিৎ হবে না।
অতএব, আপনার পা যেন পিছলে না যায়, সতর্ক হোন এবং আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন যে, ইজতেহাদি যেসব বিষয়ে উলামাদের মাঝে ইখতিলাফ আছে, তাতে কুফর কিংবা রিদ্দা (দ্বীন ত্যাগ) হয় না।
এবং এখানে আমরা দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়বারের মতো বাহিনীর প্রধানদের সতর্ক করে দিচ্ছি যে, অত্যাচারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে আজ্ঞাবহ কাফিরদের সাহায্য চাওয়া এবং (যুদ্ধের) নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রনে থাকা কাফেরদের কাছে সাহায্য চাওয়ার মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে।
সুতরাং আপনার পা যেন পিছলে না যায়, জেনে রাখুন যে, যদি কেউ কোন কাফিরের কাছে সাহায্য চায়, এমন কাফিরের নিকট যাকে আপনি কাফির হিসেবেই দেখছেন কিন্ত সাহায্যপ্রার্থী গ্রহনযোগ্য ইজতেহাদি পার্থ্যকের দরুণ তাঁকে কাফির ভাবছে না, তখন এই ব্যাপারে আমাদের অবস্থান (এরকম সাহায্য চাওয়া যে হারাম সে ব্যাপার) তাঁদের উপর আপতিত হবে না (কারণ তাঁদের অবস্থানটি ইজতেহাদী দিক থেকে অনুমোদিত)।
এবং আপনার পা যেন পিছলে না যায়, আল্লাহ আপনার উপর তাঁর রহমত বর্ষণ করুন এবং এই ব্যাপারে সতর্ক হোন, যখন মুসলিম এবং কাফির কোন ধরণের পারস্পরিক অঙ্গীকার ছাড়াই একই সময়ে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাহলে সেটি সাহায্য চাওয়ার মধ্যে গণ্য হবে না। এবং এটি অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়।
আমার দৃষ্টিতে এই বিবৃতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন এবং একে ছড়িয়ে দিন। আল্লাহ আপনার অবস্থানকে সমুন্নত করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন আমাকে ও আপনাদেরকে দৃঢ় করেন এবং পাপ থেকে রক্ষা করেন।
সূত্রঃ almuwahideenmedia
Comment