কেন আমি
দাঈশ ছাড়লাম
আমি একজন মুসলিম। আমার মা-বাবা প্রথম যে
শব্দগুলোর সাথে আমাকে পরিচয় করান
সেগুলো হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ”-আল্লাহ ছাড়া কোনো
ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ
( ﷺ )আল্লাহর রসূল। তখন
থেকেই আমাকে যাই শেখানো
হতো একজন উত্তম মুসলিম হিসেবে
গড়ে তোলার উদ্যেশ্যেই শেখান
হতো।
ইসলামের সোনালি যুগ, খিলাফতের
দিনগুলো এবং ইসলামি শাসন এর ব্যপারে শুনার
পর প্রত্যেক মুসলিমের মনে ইসলামের
পুনঃজাগরণের এক আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়।
প্রত্যেক মুসলিমই চায় মুসলিম ভাইদের
মাঝে বিরাজমান থাকুক ঐক্য ও শান্তি এবং
বিশেষত একজন আস্থাভাজন নেতা যিনি
তাদের দেখভাল করবে, মুমিনদের
বিজয়ে নেতৃত্ব দিবেন।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে
আপনারা নিশ্চয়ই আমার পরম আনন্দের কথা
অনুমান করতে পারবেন যখন আমি প্রথম দাঈশ
এর ব্যপারে শুনি। হঠাৎ করেই মুমিনরা একজন
নেতা পেয়ে গেল এবং এই 'খিলাফাহ' খুব
দ্রুত এগোচ্ছিল।আমার মনে হল যে,
আমাদের এত দিনের দুআ কবুল হয়ে
গিয়েছে।
আমি সময়ের একজন সম্মানিত ‘আলিমের
কাছে দাঈশ-এর নির্ভরযোগ্যতা জানতে
চেয়ে চিঠি লিখি।তিনি উত্তরে বলেন
যে , শাম ও ইরাকের বিষয়গুলো অনেকটা
অস্পষ্ট। কিন্তু যে দলটি নিজেদের
দাওলাতুল ইসলামিয়্যাহ (ইসলামিক স্টেট) বলে
দাবী করছে, তা বৈধ খিলাফাহ নয় যার
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ
হল,কেউই জানত না কে এই খলিফা। আবু বকর
আল বাগদাদী- এই নামের পরিচয় ছাড়া কেউ
জানে না কে এই খলিফা; কেউ তার
অতীত সম্পর্কে এবং কোন গুণাবলির
কারনে তাকে (খলিফা) নির্বাচিত করা হল আর
তার দ্বীনী যোগ্যতা কতোটুকু ছিল-
এসব বিষয়ে জানে না।তবুও আমার দিল
শায়খের জবাব মেনে নিতে পারল না।
যে বিষয়টার জন্য উম্মাহ এত দীর্ঘ সময়
ধরে অপেক্ষায় ছিল তা নিতান্তই ভ্রান্তি
হবে তা আমার কাছে অচিন্তনীয় মনে
হলো। আমি ভাবলাম ওনার (শায়খ) নিশ্চয়ই
কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি ভাবলাম সত্য
নিজেই প্রকাশিত হবে খুব শীঘ্রই। তাই
দাঈশের ব্যপারে আমি আমার অনুসন্ধান শুরু
করলাম। সেই সময় তাদের ব্যপারে সঠিক
তথ্য দেওয়ার মতো লোক ছিল না
বললেই চলে। যা আমাকে আরো
দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলে।
আমি ইসতিখারা স্বলাত আদায় শুরু করি এবং আল্লাহ
সুবহানাহু তা’আলার নিকট আমার অন্তর প্রসারিত করা
জন্য দুআ করতে থাকি। আমি গলদ পথের
ব্যপারে খুবই ভীত ছিলাম। কী হবে
যদি আমি তাদের প্রত্যাখ্যান করি আর তারা সত্য
বলে প্রমাণিত হয়? অথবা কী হবে যদি
আমি তাদের গ্রহণ করি কিন্তু বাস্তবে তারা হয়
মুখোশধারী? কী করা উচিৎ আমার?
সেই দিনগুলোতে আমি এই দুইয়ের
মধ্যে সতর্ক পথ অবলম্বনের পদক্ষেপ
নিয়েছিলাম।
আমি তাদের ব্যপারে সকল বার্তা খোলা মন
নিয়ে পড়তে লাগলাম। তাদের ব্যপারে
প্রশংসা প্রচার করলাম না আবার তাদের ব্যপারে
কুৎসাও রটাতাম না। কেউ যদি তাদের ব্যপারে
প্রশংসাসূচক বাণী উচ্চারণ করতো, এটা
জানার চেষ্টা করতাম যে এই প্রশংসা
নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ কিনা।যদি তা না
হতো, তাদেরকে এ ব্যপারে সতর্ক
করে দিতাম। এবং কেউ যদি তাদের গালমন্দ
করতো, আমি তাদেরকে ও ছেড়ে
দিতাম না।এদিকে আমার ইসতিখারা চলতে
লাগলো।
অবশেষে আল্লাহ তায়ালা আমাকে শামের
পবিত্র ভূমিতে ভ্রমণ করার সুযোগ দান
করেন। আমি ভাবলাম এখন আমি তাদের
ব্যপারে একটি বস্তুনিষ্ঠ প্রেক্ষাপট হতে
সত্য যাচাই করবো এবং তাদের ব্যাপারে
নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নিব। এবং এভাবেই আমার
যাত্রা শুরু হয়......
আমি যতটুকু আশা করেছিলাম তার চেয়ে
বেশি শিখেছিলাম ও জানতে
পেরেছিলাম। আমি দাইশ যোদ্ধাদের
পর্যবেক্ষন করি যাদের আমার কাছে
অত্যন্ত আন্তরিক এবং ইসলামি হুকুমাত
কায়েমের প্রতি বেশ নিষ্ঠাবান বলে
মনে হলো। তাদের অনেকেই এই
উদ্যেশ্যে বিলাসী জীবন উৎসর্গ
করেছে। সুতরাং নিশ্চয়ই তারা নিষ্ঠাবান।
কোনো ব্যক্তি তার জীবন
এমনিতেই এভাবে উৎসর্গ করতে
পারেনা, যদি না সে এই লক্ষ্যে অটল
থাকে।
অতঃপর, একটি ছোট্ট বিষয় আমার দৃষ্টি আকর্ষণ
করতে লাগল। এমন একটা বিষয় যা বাইরের কার
ও তেমন একটা অবগত হবার কথা নয়। যেমনঃ
দাওলাহর অধীন অঞ্চলগুলোর
বেশিরভাগ অঞ্চলই আসলে শত্রুমুক্ত হবার
পর তাদের আয়ত্তাধীন ছিল না; বরং অন্যান্য
দলের করায়ত্ত ছিল যাদের হাতে মূলত
হুকুমতের পতন হয়।দাওলাহ হয় মুসলিমদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ভূমির নিয়ন্ত্রন নেয়
অথবা ঘটনাক্রমে ওই এলাকায় দাওলা সংখ্যাগরিষ্ঠ
হওয়ার কারণে নিয়ন্ত্রন লাভ করে।দাওলাহ
সরাসরি যে অঞ্চলগুলোর দখল নিতে
পারে যেমন 'পালমিরা'। এটি মুলত একটি মরু
অঞ্চল যা খুব সহজেই যে কারো
পক্ষে নিয়ন্ত্রন নেওয়া সম্ভব। কিন্তু এটিই
একমাত্র চিন্তার বিষয় নয় যা আমি দেখেছি।
আল্লাহ যদি চাইতেন, যে কাউকেই
যেকোন কিছুর উপর অধিকার দান করতে
পারেন, হোক তাঁর বন্ধু বা শত্রু।
আমি দাওলাহ সমর্থকদের যে আখলাক
প্রত্যক্ষ করি, তা আমাকে আহত করে।
সাধারণ আচ্ছন্নতা ছাড়াও তাদের এক ধরনের
কঠোর, উদ্ধত মানসিকতা ছিল।ওয়াল্লহি আমি
তাদের বিরোধিতার কারণে একথা বলছি না,
আমি এসব মানুষদের সাথে মেলামেশার
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। তাদের জন্য,
শুধুমাত্র একটিই অভিমত ছিলঃ সঠিক অথবা ভুল।হয়
আপনি মুসলিম নতুবা কাফির।এখন,আপনার কাছে
এটা তেমন একটি খারাপ বিষয় মনে নাও হতে
পারে। কিন্তু এটা যা বুঝাচ্ছিল তা হল যদি আপনি
তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী খাপ খাইয়ে না
চলেন, তাহলে আপনি কাফির।উদাহরণস্বরূপ,
আপনার যদি (তাদের সাথে)ফিক্বহের
কোন বিষয়ে মতানৈক্য থাকে;
ফিক্বহ,আক্বীদা নয়, তাহলে আপনি
তাদের কেউ নন। এটা এ বাস্তবতা
সত্ত্বেও যে এমনকি সাহাবাগণ(রাদ্বিয়াল্লহু
আনহুম)ও ফিক্বহী বিষয়ে মতভেদ
করেছেন।
আরেকটা বৈশিষ্ট্য যা আমি তাদের থেকে
দেখেছিলাম তা হল- আপনি তাদের জন্য সারা
দুনিয়া জয় করে আনতে পারেন কিন্তু
আপনি যদি তাদের সাথে একটা বিষয়ে
ভিন্নমত পোষণ করেন, তাহলে আপনি
তন্মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তি হয়ে
যাবেন।যদিও তাদের যে বিষয়ে আমার
খুবই আঘাত লেগেছিল তা হল, তারা
অঙ্গীকারনামা ভঙ্গ করাকে তেমন কিছু
মনে করে না।
আমি ছোটবেলা থেকে এ শিক্ষা
নিয়েই বড় হয়েছি যে, মিথ্যা বলা একটি এমন
গুণাহ যা আপনাকে মুনাফিক্বের কাতারে
ফেলতে পারে।তবুও এ লোকেরা
তাদের নিজেদের চুক্তি ভঙ্গ করায়
কোন ভুল দেখে না।আমার এক ভাইয়ের
ঘটনা মনে পড়ে যার স্ত্রীকে তার
শ্বশুরবাড়ির দাওলাহর সমর্থক ভাইয়েরা তালাক
দিতে বাধ্য করেছিল। কেন? কারণ তার
স্ত্রী রাক্কায় যেতে চেয়েছিল
কিন্তু সে চায় নি।তাই, সেই তাদের
থেকে এই অঙ্গীকার নিয়ে রাজী
হল(তালাকে) যে,তাদের ছেলেকে
তার অনুমতি ছাড়া নিয়ে যাওয়া যাবে না আর তার
স্ত্রী ইদ্দতের সময় তাকে ছেড়ে
যাবে না(যা ইসলামী শরীয়াহ) এবং তার
ছেলে সপ্তাহের ৩ দিন তার সাথে
থাকবে।চুক্তির এক মাসের মধ্যেই মহিলা
আর তার পরিবার গায়েব হয়ে গেল।ঐ দিন
পরে সে জানতে পারল যে তারা রাক্কার
উদ্দেশ্যে চলে গেছে।
আমাদের এই তথাকথিত খিলাফাহ আমাদেরকে
কোন ইসলাম শিক্ষা দেয়? অকৃতজ্ঞতা,বদ-
আখলাক্ব আর অঙ্গীকার ভঙ্গ ?কিন্তু
এগুলোই তাদের নিকৃষ্টতম নয়। হালাবে যা
ঘটেছে তা আমাকে শিখিয়েছে যে
তাদের সাথে চেষ্টা করার কোন মানে
নেই।মুজাহিদীন জামাআত বাশার আল-আসাদ
বাহিনীর সাথে লড়ছিল এবং সকল দিক
থেকেই বিজয়ের অনুকুলে ছিল।এখন,
আমি যখন ‘মুজাহিদীন’ বলি, তখন আমি তাদের
কথা বলি যারা সুরিয়ায় ইসলামী শরিয়াহ
কায়েমের জন্য যুদ্ধে তাদের
জীবন ও বিলিয়ে দিয়েছেন।হয়ত তারা
নির্ভুল নন যার দাবি তারাও করেন না।
যে সব লোকদের দাওলাহ কতৃক মুরতাদ
অপবাদ আরোপিত করা হয়েছে কেবল
এজন্য যে তারা অন্যদের সাথে
সরকারবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে
যাদের গুপ্ত লক্ষ্য থাকতে পারে।এটা তা
সত্ত্বেও যে রাসূল ( ﷺ )
গাজওয়ায়ে উহুদের জন্য ১০০০ জন নিয়ে
যাত্রা করেছিলেন যাদের ৩০০ জনই ছিল
মুনাফিক।হ্যাঁ, আল্লাহ মুনাফিকদের মুখোশ
উন্মোচন করেছেন এবং আমরা
সুরিয়াতেও এটা দেখতে পাই যেঃ কুফফার
পৃষ্ঠপোষিত দলগুলির আস্তে আস্তে
ভাঙ্গন অথবা (জিহাদের ময়দান থেকে)
পলায়নে সমাপ্তি ঘটছে কিন্তু বাকী যারা
কুফফারদের লড়াই করছে, তাদের কেন
এমন অপবাদ আরোপ করা হবে? সেই
জন্য দাওলাহ কী করে? দাওলাহ (সিরিয়ার)
হুকুমতের সাথে লড়াইরত মুসলিম ভাইদের
উপর “ইশতিশহাদী হামলা” পরিচালনার জন্য
লোক পাঠায়।মুসলিম জনসাধারণের
আশীর্বাদপুষ্ট হুকুমতের বিরুদ্ধে
লড়াইকারী ভাইয়েরা বিস্ফোরণে ছিন্ন
ভিন্ন হয়ে যান কারণ দাওলাহ তাদের মুরতাদ
মনে করে।
সুবহানাল্লহ,এই খবর যখন আমাদের নিকট পৌঁছল
তখন আমি কাঁদতে উদ্যত হয়েছিলাম।হঠাৎ
মুসলিমরা দুই প্রান্ত থেকেই আক্রান্ত হলঃএক
প্রান্তে সরকারবাহিনী আর অন্য প্রান্তে
দাওলাহ। হায়!
তাই হে আমার প্রিয় সত্যান্বেষী ভাই ও
বোনেরাঃ দাওলাহ-কে বাহ্যিকভাবে
উজ্জ্বল ও উদ্দীপ্ত দেখায় কিন্তু দাওলাহ
সেই নকল ফজর এর অনুরূপ যা আসলটার
আগে উদিত হয় যার ব্যাপারে নবী
করীম ( ﷺ )আমাদেরকে
সাবধান করেছেন।দাওলাহর অন্ধ
সমর্থকদের আঁকা গোলাপরাঙ্গা ছবি যেন
তোমাদেরকে বোকা না বানায়।
ওয়াল্লহি(আল্লাহর কসম), যদি আমি তাদের
কোন খাইর কিছু জানতে পারতাম, এটাকে
দুনিয়ার সামনে প্রদর্শন করা আমার উপর একজন
মুমিন হিসেবে ওয়াজিব ছিল কিন্তু আমি যতই
গভীরে গিয়েছি, আমি ততই কলুষতা
পেয়েছি।আমি এটা বলছি না যে,দাওলাহ-
তে আন্তরিক ভাইবোনেরা নেই।
নিশ্চিতভাবেই, সেখানে তারা আছেন যারা
তাদেরকে হক্ব ভেবে অনুসরণ
করেছিলেন কিন্তু আপনি যখন কারও মাঝে
অবস্থান করবেন,তখন আপনি হয় এদের
ভ্রান্তির প্রতি অন্ধ হয়ে যাবেন অথবা
এদের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে
যাবেন।আমি দুআ করি যে, তাদের মধ্যে
থেকে যাদের এখনো খালিস দিল
আছে,তারা যেন ঈমানকে হেফাজত
করে হক্বের পথে ফিরে আসেন।
আমীন।আমি রাসূল ( ﷺ ) এর
একটি দুআর সাথে আপনাদের থেকে
বিদায় দিচ্ছি।আপনারা এটি বেশি করে পড়ুন এবং
আল্লাহ আপনাদের সবকিছু পরিষ্কার করে
দেবেনঃ
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﺭِﻧَﺎ ﺍﻟْﺤَﻖَّ ﺣَﻘًّﺎ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨَﺎ ﺍﺗِّﺒَﺎﻋَﻪُ ، ﻭَﺃَﺭِﻧَﺎ ﺍﻟْﺒَﺎﻃِﻞَ
ﺑَﺎﻃِﻠًﺎ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨَﺎ ﺍﺟْﺘِﻨَﺎﺑَﻪُ
হে আল্লাহ্, আমাদের হক্বকে হক্ব
হিসেবেই বুঝতে দিন আর আমাদের এই
তাওফিক দিন যাতে তা অনুসরণ করতে পারি ।
আর বাতিলকে বাতিল বলে বুঝতে দিন এবং
তা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
আমীন ইয়া রব্বিল ‘আলামীন।
ভাই আব্দুল্লহ আদাম
দাঈশ ছাড়লাম
আমি একজন মুসলিম। আমার মা-বাবা প্রথম যে
শব্দগুলোর সাথে আমাকে পরিচয় করান
সেগুলো হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ”-আল্লাহ ছাড়া কোনো
ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ
( ﷺ )আল্লাহর রসূল। তখন
থেকেই আমাকে যাই শেখানো
হতো একজন উত্তম মুসলিম হিসেবে
গড়ে তোলার উদ্যেশ্যেই শেখান
হতো।
ইসলামের সোনালি যুগ, খিলাফতের
দিনগুলো এবং ইসলামি শাসন এর ব্যপারে শুনার
পর প্রত্যেক মুসলিমের মনে ইসলামের
পুনঃজাগরণের এক আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়।
প্রত্যেক মুসলিমই চায় মুসলিম ভাইদের
মাঝে বিরাজমান থাকুক ঐক্য ও শান্তি এবং
বিশেষত একজন আস্থাভাজন নেতা যিনি
তাদের দেখভাল করবে, মুমিনদের
বিজয়ে নেতৃত্ব দিবেন।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে
আপনারা নিশ্চয়ই আমার পরম আনন্দের কথা
অনুমান করতে পারবেন যখন আমি প্রথম দাঈশ
এর ব্যপারে শুনি। হঠাৎ করেই মুমিনরা একজন
নেতা পেয়ে গেল এবং এই 'খিলাফাহ' খুব
দ্রুত এগোচ্ছিল।আমার মনে হল যে,
আমাদের এত দিনের দুআ কবুল হয়ে
গিয়েছে।
আমি সময়ের একজন সম্মানিত ‘আলিমের
কাছে দাঈশ-এর নির্ভরযোগ্যতা জানতে
চেয়ে চিঠি লিখি।তিনি উত্তরে বলেন
যে , শাম ও ইরাকের বিষয়গুলো অনেকটা
অস্পষ্ট। কিন্তু যে দলটি নিজেদের
দাওলাতুল ইসলামিয়্যাহ (ইসলামিক স্টেট) বলে
দাবী করছে, তা বৈধ খিলাফাহ নয় যার
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ
হল,কেউই জানত না কে এই খলিফা। আবু বকর
আল বাগদাদী- এই নামের পরিচয় ছাড়া কেউ
জানে না কে এই খলিফা; কেউ তার
অতীত সম্পর্কে এবং কোন গুণাবলির
কারনে তাকে (খলিফা) নির্বাচিত করা হল আর
তার দ্বীনী যোগ্যতা কতোটুকু ছিল-
এসব বিষয়ে জানে না।তবুও আমার দিল
শায়খের জবাব মেনে নিতে পারল না।
যে বিষয়টার জন্য উম্মাহ এত দীর্ঘ সময়
ধরে অপেক্ষায় ছিল তা নিতান্তই ভ্রান্তি
হবে তা আমার কাছে অচিন্তনীয় মনে
হলো। আমি ভাবলাম ওনার (শায়খ) নিশ্চয়ই
কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি ভাবলাম সত্য
নিজেই প্রকাশিত হবে খুব শীঘ্রই। তাই
দাঈশের ব্যপারে আমি আমার অনুসন্ধান শুরু
করলাম। সেই সময় তাদের ব্যপারে সঠিক
তথ্য দেওয়ার মতো লোক ছিল না
বললেই চলে। যা আমাকে আরো
দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলে।
আমি ইসতিখারা স্বলাত আদায় শুরু করি এবং আল্লাহ
সুবহানাহু তা’আলার নিকট আমার অন্তর প্রসারিত করা
জন্য দুআ করতে থাকি। আমি গলদ পথের
ব্যপারে খুবই ভীত ছিলাম। কী হবে
যদি আমি তাদের প্রত্যাখ্যান করি আর তারা সত্য
বলে প্রমাণিত হয়? অথবা কী হবে যদি
আমি তাদের গ্রহণ করি কিন্তু বাস্তবে তারা হয়
মুখোশধারী? কী করা উচিৎ আমার?
সেই দিনগুলোতে আমি এই দুইয়ের
মধ্যে সতর্ক পথ অবলম্বনের পদক্ষেপ
নিয়েছিলাম।
আমি তাদের ব্যপারে সকল বার্তা খোলা মন
নিয়ে পড়তে লাগলাম। তাদের ব্যপারে
প্রশংসা প্রচার করলাম না আবার তাদের ব্যপারে
কুৎসাও রটাতাম না। কেউ যদি তাদের ব্যপারে
প্রশংসাসূচক বাণী উচ্চারণ করতো, এটা
জানার চেষ্টা করতাম যে এই প্রশংসা
নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ কিনা।যদি তা না
হতো, তাদেরকে এ ব্যপারে সতর্ক
করে দিতাম। এবং কেউ যদি তাদের গালমন্দ
করতো, আমি তাদেরকে ও ছেড়ে
দিতাম না।এদিকে আমার ইসতিখারা চলতে
লাগলো।
অবশেষে আল্লাহ তায়ালা আমাকে শামের
পবিত্র ভূমিতে ভ্রমণ করার সুযোগ দান
করেন। আমি ভাবলাম এখন আমি তাদের
ব্যপারে একটি বস্তুনিষ্ঠ প্রেক্ষাপট হতে
সত্য যাচাই করবো এবং তাদের ব্যাপারে
নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নিব। এবং এভাবেই আমার
যাত্রা শুরু হয়......
আমি যতটুকু আশা করেছিলাম তার চেয়ে
বেশি শিখেছিলাম ও জানতে
পেরেছিলাম। আমি দাইশ যোদ্ধাদের
পর্যবেক্ষন করি যাদের আমার কাছে
অত্যন্ত আন্তরিক এবং ইসলামি হুকুমাত
কায়েমের প্রতি বেশ নিষ্ঠাবান বলে
মনে হলো। তাদের অনেকেই এই
উদ্যেশ্যে বিলাসী জীবন উৎসর্গ
করেছে। সুতরাং নিশ্চয়ই তারা নিষ্ঠাবান।
কোনো ব্যক্তি তার জীবন
এমনিতেই এভাবে উৎসর্গ করতে
পারেনা, যদি না সে এই লক্ষ্যে অটল
থাকে।
অতঃপর, একটি ছোট্ট বিষয় আমার দৃষ্টি আকর্ষণ
করতে লাগল। এমন একটা বিষয় যা বাইরের কার
ও তেমন একটা অবগত হবার কথা নয়। যেমনঃ
দাওলাহর অধীন অঞ্চলগুলোর
বেশিরভাগ অঞ্চলই আসলে শত্রুমুক্ত হবার
পর তাদের আয়ত্তাধীন ছিল না; বরং অন্যান্য
দলের করায়ত্ত ছিল যাদের হাতে মূলত
হুকুমতের পতন হয়।দাওলাহ হয় মুসলিমদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ভূমির নিয়ন্ত্রন নেয়
অথবা ঘটনাক্রমে ওই এলাকায় দাওলা সংখ্যাগরিষ্ঠ
হওয়ার কারণে নিয়ন্ত্রন লাভ করে।দাওলাহ
সরাসরি যে অঞ্চলগুলোর দখল নিতে
পারে যেমন 'পালমিরা'। এটি মুলত একটি মরু
অঞ্চল যা খুব সহজেই যে কারো
পক্ষে নিয়ন্ত্রন নেওয়া সম্ভব। কিন্তু এটিই
একমাত্র চিন্তার বিষয় নয় যা আমি দেখেছি।
আল্লাহ যদি চাইতেন, যে কাউকেই
যেকোন কিছুর উপর অধিকার দান করতে
পারেন, হোক তাঁর বন্ধু বা শত্রু।
আমি দাওলাহ সমর্থকদের যে আখলাক
প্রত্যক্ষ করি, তা আমাকে আহত করে।
সাধারণ আচ্ছন্নতা ছাড়াও তাদের এক ধরনের
কঠোর, উদ্ধত মানসিকতা ছিল।ওয়াল্লহি আমি
তাদের বিরোধিতার কারণে একথা বলছি না,
আমি এসব মানুষদের সাথে মেলামেশার
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। তাদের জন্য,
শুধুমাত্র একটিই অভিমত ছিলঃ সঠিক অথবা ভুল।হয়
আপনি মুসলিম নতুবা কাফির।এখন,আপনার কাছে
এটা তেমন একটি খারাপ বিষয় মনে নাও হতে
পারে। কিন্তু এটা যা বুঝাচ্ছিল তা হল যদি আপনি
তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী খাপ খাইয়ে না
চলেন, তাহলে আপনি কাফির।উদাহরণস্বরূপ,
আপনার যদি (তাদের সাথে)ফিক্বহের
কোন বিষয়ে মতানৈক্য থাকে;
ফিক্বহ,আক্বীদা নয়, তাহলে আপনি
তাদের কেউ নন। এটা এ বাস্তবতা
সত্ত্বেও যে এমনকি সাহাবাগণ(রাদ্বিয়াল্লহু
আনহুম)ও ফিক্বহী বিষয়ে মতভেদ
করেছেন।
আরেকটা বৈশিষ্ট্য যা আমি তাদের থেকে
দেখেছিলাম তা হল- আপনি তাদের জন্য সারা
দুনিয়া জয় করে আনতে পারেন কিন্তু
আপনি যদি তাদের সাথে একটা বিষয়ে
ভিন্নমত পোষণ করেন, তাহলে আপনি
তন্মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তি হয়ে
যাবেন।যদিও তাদের যে বিষয়ে আমার
খুবই আঘাত লেগেছিল তা হল, তারা
অঙ্গীকারনামা ভঙ্গ করাকে তেমন কিছু
মনে করে না।
আমি ছোটবেলা থেকে এ শিক্ষা
নিয়েই বড় হয়েছি যে, মিথ্যা বলা একটি এমন
গুণাহ যা আপনাকে মুনাফিক্বের কাতারে
ফেলতে পারে।তবুও এ লোকেরা
তাদের নিজেদের চুক্তি ভঙ্গ করায়
কোন ভুল দেখে না।আমার এক ভাইয়ের
ঘটনা মনে পড়ে যার স্ত্রীকে তার
শ্বশুরবাড়ির দাওলাহর সমর্থক ভাইয়েরা তালাক
দিতে বাধ্য করেছিল। কেন? কারণ তার
স্ত্রী রাক্কায় যেতে চেয়েছিল
কিন্তু সে চায় নি।তাই, সেই তাদের
থেকে এই অঙ্গীকার নিয়ে রাজী
হল(তালাকে) যে,তাদের ছেলেকে
তার অনুমতি ছাড়া নিয়ে যাওয়া যাবে না আর তার
স্ত্রী ইদ্দতের সময় তাকে ছেড়ে
যাবে না(যা ইসলামী শরীয়াহ) এবং তার
ছেলে সপ্তাহের ৩ দিন তার সাথে
থাকবে।চুক্তির এক মাসের মধ্যেই মহিলা
আর তার পরিবার গায়েব হয়ে গেল।ঐ দিন
পরে সে জানতে পারল যে তারা রাক্কার
উদ্দেশ্যে চলে গেছে।
আমাদের এই তথাকথিত খিলাফাহ আমাদেরকে
কোন ইসলাম শিক্ষা দেয়? অকৃতজ্ঞতা,বদ-
আখলাক্ব আর অঙ্গীকার ভঙ্গ ?কিন্তু
এগুলোই তাদের নিকৃষ্টতম নয়। হালাবে যা
ঘটেছে তা আমাকে শিখিয়েছে যে
তাদের সাথে চেষ্টা করার কোন মানে
নেই।মুজাহিদীন জামাআত বাশার আল-আসাদ
বাহিনীর সাথে লড়ছিল এবং সকল দিক
থেকেই বিজয়ের অনুকুলে ছিল।এখন,
আমি যখন ‘মুজাহিদীন’ বলি, তখন আমি তাদের
কথা বলি যারা সুরিয়ায় ইসলামী শরিয়াহ
কায়েমের জন্য যুদ্ধে তাদের
জীবন ও বিলিয়ে দিয়েছেন।হয়ত তারা
নির্ভুল নন যার দাবি তারাও করেন না।
যে সব লোকদের দাওলাহ কতৃক মুরতাদ
অপবাদ আরোপিত করা হয়েছে কেবল
এজন্য যে তারা অন্যদের সাথে
সরকারবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে
যাদের গুপ্ত লক্ষ্য থাকতে পারে।এটা তা
সত্ত্বেও যে রাসূল ( ﷺ )
গাজওয়ায়ে উহুদের জন্য ১০০০ জন নিয়ে
যাত্রা করেছিলেন যাদের ৩০০ জনই ছিল
মুনাফিক।হ্যাঁ, আল্লাহ মুনাফিকদের মুখোশ
উন্মোচন করেছেন এবং আমরা
সুরিয়াতেও এটা দেখতে পাই যেঃ কুফফার
পৃষ্ঠপোষিত দলগুলির আস্তে আস্তে
ভাঙ্গন অথবা (জিহাদের ময়দান থেকে)
পলায়নে সমাপ্তি ঘটছে কিন্তু বাকী যারা
কুফফারদের লড়াই করছে, তাদের কেন
এমন অপবাদ আরোপ করা হবে? সেই
জন্য দাওলাহ কী করে? দাওলাহ (সিরিয়ার)
হুকুমতের সাথে লড়াইরত মুসলিম ভাইদের
উপর “ইশতিশহাদী হামলা” পরিচালনার জন্য
লোক পাঠায়।মুসলিম জনসাধারণের
আশীর্বাদপুষ্ট হুকুমতের বিরুদ্ধে
লড়াইকারী ভাইয়েরা বিস্ফোরণে ছিন্ন
ভিন্ন হয়ে যান কারণ দাওলাহ তাদের মুরতাদ
মনে করে।
সুবহানাল্লহ,এই খবর যখন আমাদের নিকট পৌঁছল
তখন আমি কাঁদতে উদ্যত হয়েছিলাম।হঠাৎ
মুসলিমরা দুই প্রান্ত থেকেই আক্রান্ত হলঃএক
প্রান্তে সরকারবাহিনী আর অন্য প্রান্তে
দাওলাহ। হায়!
তাই হে আমার প্রিয় সত্যান্বেষী ভাই ও
বোনেরাঃ দাওলাহ-কে বাহ্যিকভাবে
উজ্জ্বল ও উদ্দীপ্ত দেখায় কিন্তু দাওলাহ
সেই নকল ফজর এর অনুরূপ যা আসলটার
আগে উদিত হয় যার ব্যাপারে নবী
করীম ( ﷺ )আমাদেরকে
সাবধান করেছেন।দাওলাহর অন্ধ
সমর্থকদের আঁকা গোলাপরাঙ্গা ছবি যেন
তোমাদেরকে বোকা না বানায়।
ওয়াল্লহি(আল্লাহর কসম), যদি আমি তাদের
কোন খাইর কিছু জানতে পারতাম, এটাকে
দুনিয়ার সামনে প্রদর্শন করা আমার উপর একজন
মুমিন হিসেবে ওয়াজিব ছিল কিন্তু আমি যতই
গভীরে গিয়েছি, আমি ততই কলুষতা
পেয়েছি।আমি এটা বলছি না যে,দাওলাহ-
তে আন্তরিক ভাইবোনেরা নেই।
নিশ্চিতভাবেই, সেখানে তারা আছেন যারা
তাদেরকে হক্ব ভেবে অনুসরণ
করেছিলেন কিন্তু আপনি যখন কারও মাঝে
অবস্থান করবেন,তখন আপনি হয় এদের
ভ্রান্তির প্রতি অন্ধ হয়ে যাবেন অথবা
এদের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে
যাবেন।আমি দুআ করি যে, তাদের মধ্যে
থেকে যাদের এখনো খালিস দিল
আছে,তারা যেন ঈমানকে হেফাজত
করে হক্বের পথে ফিরে আসেন।
আমীন।আমি রাসূল ( ﷺ ) এর
একটি দুআর সাথে আপনাদের থেকে
বিদায় দিচ্ছি।আপনারা এটি বেশি করে পড়ুন এবং
আল্লাহ আপনাদের সবকিছু পরিষ্কার করে
দেবেনঃ
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﺭِﻧَﺎ ﺍﻟْﺤَﻖَّ ﺣَﻘًّﺎ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨَﺎ ﺍﺗِّﺒَﺎﻋَﻪُ ، ﻭَﺃَﺭِﻧَﺎ ﺍﻟْﺒَﺎﻃِﻞَ
ﺑَﺎﻃِﻠًﺎ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨَﺎ ﺍﺟْﺘِﻨَﺎﺑَﻪُ
হে আল্লাহ্, আমাদের হক্বকে হক্ব
হিসেবেই বুঝতে দিন আর আমাদের এই
তাওফিক দিন যাতে তা অনুসরণ করতে পারি ।
আর বাতিলকে বাতিল বলে বুঝতে দিন এবং
তা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
আমীন ইয়া রব্বিল ‘আলামীন।
ভাই আব্দুল্লহ আদাম
Comment