Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফুঁ দিয়ে এই চেরাগ নিভানো যাবে না! -উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাঃ || মুজাহিদদের প্রতি বিশেষ নসিহ&#

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফুঁ দিয়ে এই চেরাগ নিভানো যাবে না! -উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাঃ || মুজাহিদদের প্রতি বিশেষ নসিহ&#



    ফুঁ দিয়ে এই চেরাগ নিভানো যাবে না!

    “জিহাদী আন্দোলন উপমহাদেশ” নানা প্রকার পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রদত্ত একটি দরস!

    উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
    মুখপাত্র, আল কায়েদা উপমহাদেশ

    আস সাহাব উপমহাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ও আন নাসর মিডিয়া কর্তৃক বাংলায় অনূদিত
    শাওয়াল ১৪৩৮ হিজরি




    অনলাইনে পড়ুন




    ডাউনলোড করুন
    PDF (781 KB)







    WORD (293 KB)







    Last edited by আবু আব্দুল্লাহ; 11-27-2017, 09:56 PM.
    আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!

  • #2
    ফুঁ দিয়ে এই চেরাগ নিভানো যাবে না!
    “জিহাদী আন্দোলন উপমহাদেশ” নানা প্রকার পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রদত্ত একটি দরস!

    উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
    মুখপাত্র, আল কায়েদা উপমহাদেশ


    আস সাহাব উপমহাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ও আন নাসর মিডিয়া কর্তৃক বাংলায় অনূদিত
    শাওয়াল ১৪৩৮ হিজরি




    ওরা আল্লাহর দ্বীনকে মুখের ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ওরা জানে না ফুৎকার দিয়ে এই প্রদীপ নেভানো যাবে না। “জিহাদী আন্দোলন উপমহাদেশ” পাকিস্তানে নানা প্রকার পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে দাওয়াত ও কিতালের ময়দানের সকল মুজাহিদ ও আনসারদের উদ্দেশ্যে উস্তাদ উসামা মাহমুদ (হাফিজাহুল্লাহ) এর দরস।

    বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
    সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
    পটভূমি বা প্রেক্ষাপট :
    অতীত তিন-চার বছরে বৈশ্বিক অঙ্গনে সারা পৃথিবীতে জিহাদী আন্দোলন এক বিশেষ ও অনন্য স্তরে অতিবাহিত করেছে এবং এখনো করছে। এই সময়ের মধ্যে ভালো ও মন্দের মাঝে এক বিরাট পার্থক্য হয়েছে। এই সময়ে পাকিস্তানী জিহাদেও উন্নতি অবনতি সাধন হয়েছে। জিহাদের নামে জিহাদবিরোধী কিছু ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আমাদের জামাআতের পক্ষ থেকে সম্পর্ক না থাকার বার্তাও এসেছে। তারপরেও মুজাহিদীনের উপর এই পরীক্ষার যামানা আরও বৃদ্ধি পেল এমনকি আজ জিহাদের সাথে সম্বন্ধযুক্ত জিহাদের বদনাম রটনাকারী কিছু লোক ঘোষণা দিয়ে ‘আইএসআই’-এর সাথে মিলেছে। এবং নিজে ছাড়া পাকিস্তানের জিহাদের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিবর্গকে সে শত্রুদের দালাল আখ্যায়িত করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই কথোপকথন আল্লাহর অনুগ্রহে আপনাদের সামনে পেশ করছি। আল্লাহ তা‘আলা কল্যাণকর কথা বলার ও কল্যাণজনক কাজ করার তাওফীক দিন। আল্লাহ তা‘আলা কথাগুলোকে হক ও হকের অনুসারীদের সাহায্য করার মাধ্যম বানিয়ে দিন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হকের পথে দৃঢ়পদ রাখুন। তিনি আমাদেরকে হকের সাহায্য করার তাওফীক নসীব করুন। আমিন!
    এটা মামুলি কোনো যুগ নয়!
    প্রাণপ্রিয় ভাইয়েরা! এই যুগের নাজুকতা সর্বদা আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, এটা ঈমানের জন্য সাধারণ কোনো যুগ নয়, বরং অত্যন্ত ভয়াবহ যুগ। এটা সেই যুগ, যখন (হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী) ফেতনা বৃষ্টির ন্যায় মুষলধারে বর্ষিত হবে।
    يُصبح الرجُلُ مؤمِناً و يُمسِيْ كافِراً
    এক ব্যক্তি সকালে মুসলমান থাকবে আর সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে।
    و يُمسِي مؤمنا ويُصبِحُ كافراً
    এবং সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে সকালে কাফের হয়ে যাবে (নাউযুবিল্লাহ!)
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কারণও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
    يَبِيعُ فِيهاَ أَقْوامٌ خَلاقَهُمْ و دِيْنَهُمْ بِعَرضٍ مِنَ الدُّنيا قلِيلٍ
    সে যুগে মানুষ দুনিয়াবী সামান্য সম্পদ ও বিলাসিতার জন্য নিজের ঈমান ও চরিত্র বিক্রি করে দিবে।
    অন্য এক হাদীসে সেই যুগকে ধোঁকাবাজির যুগ বলা হয়েছে। তিনি বলেন,
    يُكَذَّبُ فِيها الصَّدِقُ و يُصَدَّقُ فيها الكاذِبُ
    সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী ও মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী হিসেবে মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ করে তোলা হবে।
    و يُخوَّنُ فيها الأَمِيْنُ و يُؤتمَنُ فيها الخائِنُ
    বিশ্বস্তকে খেয়ানতকারী ও খেয়ানতকারীকে বিশ্বস্ত হিসেবে প্রসিদ্ধ করে তোলা হবে।
    হে আল্লাহ! আমাদের ঈমানকে হিফাযত করুন। আমাদের হকের পথে অটল রাখুন। হকের সহযোগিতা করার তাওফীক দিন। আমাদেরকে দ্বীনের আনসারদের সাথে গন্য করুন। আমিন!

    জিহাদ ও পরীক্ষা :
    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
    وَلَنَبلُوَنَّكُم حَتّىٰ نَعلَمَ المُجٰهِدينَ مِنكُم وَالصّٰبِرينَ وَنَبلُوَا۟ أَخبارَكُم
    وَلَنَبلُوَنَّكُمঅবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব। এই পরীক্ষার কারণ কী! তিনি বলেন, حَتّىٰ نَعلَمَ المُجٰهِدينَ مِنكُم যেন আমি আল্লাহর রাস্তায় লড়াইকারী, হাকীকী অর্থে জান কুরবানকারী মুজাহিদদের সম্পর্কে জেনে নিতে পারি। وَالصّٰبِرينَ এবং জিহাদের পথে সবরের সাথে অবিচল ব্যক্তিদের সন্ধান মিলে। وَنَبلُوَا۟ أَخبارَكُم এবং তোমরা যে দাবি কর ‘আমি মুমিন’, ‘আমি মুজাহিদ’, তোমাদের এ দাবির ব্যাপারে অবশ্যই আমি পরীক্ষা করব। আল্লাহর আরেক ফরমান হলো,
    ما كانَ اللَّهُ لِيَذَرَ المُؤمِنينَ عَلىٰ ما أَنتُم عَلَيهِ حَتّىٰ يَميزَ الخَبيثَ مِنَ الطَّيِّبِ ۗ
    আল্লাহর সুন্নত এটা নয় যে, তোমরা মুমিনগণ যে অবস্থায় আছ সে অবস্থায়ই তোমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। বরং আল্লাহর বিশেষ উদ্দেশ্য হলো, তিনি পরীক্ষা নিবেন বিপদ-মসিবত দিয়ে এবং কখনো কিছু সফলতাও দিবেন,
    وَنَبلوكُم بِالشَّرِّ وَالخَيرِ فِتنَةً
    (আমি তোমাদের ভালো ও মন্দ দ্বারা পরীক্ষা করব।)
    আল্লাহর উদ্দেশ্য কী? পরীক্ষা করা। আর পরীক্ষার দ্বারা উদ্দেশ্য কী?
    حَتّىٰ يَميزَ الخَبيثَ مِنَ الطَّيِّبِ
    যেন খবীস (নোংরা) তয়্যিব (উত্তম) থেকে পৃথক হয়ে যায়।
    জিহাদের ময়দানের ভায়েরা! আল্লাহ তা‘আলা মন্দ ও ভালো একস্থানে জমা করেন না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ভালো বানিয়েছেন। এমনটা হতে পারে না যে, এই জিহাদী আন্দোলনে যিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, মুসলিমদের হেফাজতের জন্য, মুসলিমদের হিদায়াতের জন্য এবং তাদের কল্যাণের জন্য নিজের সব কিছু কুরবানি করছে, জীবনকে লটারীর মাধ্যমে বাজি লাগায় সে এবং যে ইখলাস ও আখলাক থেকে খালি, যে জিহাদের বদনাম রটায়, যার কাছে নিজের জীবনসত্ত্বা, প্রসিদ্ধি, নিজের দুনিয়া কামাই করা উদ্দেশ্য, এই দুই শ্রেণির লোক একত্রে থাকতে পারে না। স্বর্ণকে খাঁটি করার জন্য অগ্নিকুণ্ডে ঢালতে হয়, আগুনে গরম করতে হয়, যেন ময়লা আবর্জনা দূরীভূত হয়ে খাঁটি সোনা পৃথক হয়ে যায়। এমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মুমিনদেরকেও পরীক্ষার পাত্রে ঢেলে দেবেন। তিনি বলেন,
    إِن يَمسَسكُم قَرحٌ فَقَد مَسَّ القَومَ قَرحٌ مِثلُهُ
    আজ যদি তোমাদের উপর জমীন সংকীর্ণ হয়ে যায়, তাহলে তোমাদের দুশমনের উপরেও এমন দিন অতিবাহিত হয়।
    এই যে কখনো একজনের বিজয় লাভ হয়, অপরজনের উপর পরীক্ষা আসে, একজনের জমীন ছিনিয়ে নেয়া হয়, ক্ষতির পর ক্ষতির সংবাদই আসতে থাকে, রোগে আক্রান্ত হয়, অমুক ভাই শহীদ হয়, অমুক ভাই গ্রেফতার হয়। আর বিপরীতে শত্রুরা শুধু সফলতা আর বিজয় লাভ করে। তোমাদের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে, অকল্যাণ পছন্দকারীদের (ওদের নিকট অকল্যাণ পছন্দকারী) অকল্যাণ থেকে জমিন সাফ করে দিয়েছে। আমার ভায়েরা! এটা হক-বাতিলের পরিচয় নয়। এই হার-জিত হক-বাতিলের পরিচয় নয়। এমন তো সর্বদাই হতে থাকে।
    وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ
    ঐ দিনগুলো যা আমি মানুষের মাঝে ঘুরপাক করাই, উলট-পালট করি।
    কখনো একজনকে দুনিয়াবী বিজয় দান করি, কখনো আরেক জনকে। তো এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হলো পরীক্ষা করা।

    জিহাদের পথে বিপদ আসার উদ্দেশ্য :
    যেগুলো আল্লাহ তা‘আলা নিজ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
    প্রথম উদ্দেশ্য : মুখলিস ও ইখলাস বিহীন লোকের মধ্যে পার্থক্য।
    আল্লাহ তা‘আলা ফরমায়েছেন,
    وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا
    (যেন আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের ব্যাপারে জানতে পারেন)
    যার ফলে মুমিন এবং মুনাফেক, মুখলিস ও গায়রে মুখলিস, মুজাহিদ ও গায়রে মুজাহিদ, মিথ্যা এবং সত্যের মধ্যে পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হয়,
    حَتّىٰ يَميزَ الخَبيثَ مِنَ الطَّيِّبِ
    এবং খারাপ থেকে ভালো পৃথক হয়ে যায়।
    এবং যে মন্দ হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে ভালো বলে প্রকাশ করেছে তারা পেছন ফিরে ভেগে যাবে এবং যে ভালো আল্লাহ তা‘আলা তাকে দৃঢ় রাখবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সত্য করে দেখাবেন। মিথ্যাবাদী লোকেরা স্রষ্টা এবং সৃষ্টিজীবের সামনে অপদস্থ ও পরাজিত হয়ে যায়। অন্যদিকে সত্যবাদীদের আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া এবং আখেরাতে উচ্চ মর্যাদা দান করেন।

    দ্বিতীয় উদ্দেশ্য : ঈমানদারদের উত্তম প্রতিদান বৃদ্ধি করা।
    যখন বিপদ আসে, কষ্ট বেড়ে যায় এবং সংকীর্ণতা অনুভব হতে থাকে তখন এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদারদের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
    عِظَمُ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ
    অধিক কষ্টের অধিক প্রতিদান।
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিপদ যত কঠিন হবে, বিপদ যত বড় হবে প্রতিদানও তত বৃদ্ধি পাবে। জান্নাতের মধ্যে ঈমানদারদের জন্য এবং মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা অনেকগুলো স্তর রেখেছেন। যখন কোনো আল্লাহওয়ালার উপর বিপদ আসে তখন তিনি মনে করেন, এর দ্বারা আমার গুনাহ মাফ হচ্ছে এবং জান্নাতের স্তরসমূহ থেকে অনেক উচ্চ স্তর আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য রেখেছেন। সেই স্তরে পৌঁছানো হচ্ছে এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য। তাই এ পরীক্ষা এসেছে, তবে ধৈর্য ধারণ শর্ত। প্রতিদানের নিয়তে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কোন জিনিসের উপর সবর? ঈমানের উপর সবর, জিহাদের উপর সবর এবং শরিয়তের অনুসরণের উপর সবর।

    তৃতীয় উদ্দেশ্য : শহীদদেরকে বাছাই করা।
    আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ویتخذ منکم شھداء অর্থাৎ তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে, যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছে, যারা আল্লাহ জন্য নিজেকে কুরবানি করার তামান্না করে, যাদের অন্তর একনিষ্ঠতায় পরিপূর্ণ তাদেরকে তিনি নিজের কাছে ডেকে নিয়ে যেতে চান।
    اِنَّ اللّٰهَ لا يَنظُرُ إلٰى أَجسامِكُمْ و لا أمْوالِكُمْ و لٰكن يَّنظُر الٰى قلوبكم
    নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের শরীরের দিকে তাকান না এবং তোমাদের মালের দিকেও তাকান না বরং তিনি তোমাদের অন্তরের দিকে তাকান।
    আল্লাহ তা‘আলা অন্তরের অবস্থা জানেন, অন্তরসমূহকে দেখেন তাই তিনি এই সমস্ত মুমিনদেরকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে যেতে চান, আর যখন তিনি তাকে নিজের সান্নিধ্যে নিতে চান তো সেই মুহূর্তে তার শত্রুকে তার ওপর বিজয়ী করে দেন। তখন সে দুশমনের বোমার আঘাতে, দুশমনের গুলির আঘাতে, দুশমনের কঠোরতার কারণে ও তার কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে শহীদ হয়ে যায়। দুশমন খুশি প্রকাশ করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তার মাধ্যমে মুমিনের ইচ্ছা পূর্ণ হয়, সারা জীবনের আশা বাস্তবায়িত হয়। তার মাধ্যমে সে তাঁর ঠিকানা পেয়ে যায় এবং সে তাঁর রবের পাশে জান্নাতে পৌছে যায়।

    চতুর্থ উদ্দেশ্য : মুজাহিদদের প্রশিক্ষণ এবং সংশোধন।
    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
    وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذينَ ءامَنوا
    অর্থাৎ যেন আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের সংশোধন করতে পারেন।
    সেই ঈমানদারের উপর যখন কোনো বিপদ আসে তখন সে তার গুনাহের উপর দৃষ্টি দেয়, সে বিরোধিতা এবং পিছিয়ে পড়ার মনোভাব প্রকাশ করে না বরং সে নিজের পর্যালোচনার সাথে কাজ করে। সাথে সাথে দৌড়ে যায় এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়। সে তখন নিজেকে পরিশোধিত করে, নিজের আন্দোলনকে সংশোধন করে, নিজের জামাতের ইসলাহ করে, নিজের পূর্ণ সফরটাকে আবার ঠিক করে নেয়, তখন সে এই বিপদের মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র করে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তার জিহাদী কার্যক্রম শক্তিশালী থেকে শক্তিশালী হয়। দ্রুত থেকে দ্রুততার সাথে সামনে বাড়ে। অভিজ্ঞতা অর্জন হয় এবং তার এই কার্যক্রম মুসলমান জনসাধারনের জন্য আরও অধিক রহমত এবং বরকতের কারণ হয়ে যায়।

    পঞ্চম উদ্দেশ্য : দ্বীনের দুশমনদের ধ্বংস করা।
    আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
    وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ
    অর্থাৎ যাতে কাফেরদেরকে ধ্বংস করতে পারেন।
    দ্বীনের শত্রুদের ধ্বংস এ বিপদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। মুমিনদের উপর যখন জালেমদেরকে সাময়িক বিজয় দেওয়া হয় তখন তাদের নষ্টামি, দ্বীনের বিরোধিতা এবং দ্বীনদারদের বিরোধিতা, দ্বীনের বিরুদ্ধে তাদের অন্তরে গোপন থাকা কঠিন ঘৃণা এবং বুকের মধ্যে লুকায়িত জানোয়ার থেকেও বেশি হিংস্র অন্তরটা খুলে সামনে এসে যায়। পাকিস্তানে এই জালেমদের অবস্থা দেখুন! এখন কেমনভাবে তাদের নষ্টামি, দ্বীনের বিরোধিতা এবং দ্বীনদারদের প্রতি ঘৃণা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থা দেখুন! বাংলাদেশে মুমিন এবং মুসলমানদের সাথে কত কিছু হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এই বাতিলদের বাতিল হওয়াটা এই বিপদের মধ্যে আরও অধিক স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রত্যেক প্রত্যক্ষকারী, ইনসাফ ও ন্যায়ের সাথে কাজ সম্পাদনকারীর অন্তরে জালেমদের নষ্টামির ব্যাপারে কোনো ধরনের সন্দেহ-সংশয় থাকে না এবং আল্লাহ তা‘আলাও তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করে দেন, তখন তাদের ধ্বংসের সময় নিকটবর্তী হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় প্রমাণ পরিপূর্ণ করে তাদের রশিকে টানা শুরু করে দেন, যেন মুমিনদের এই বিপদের মাধ্যমে মূলত মুজাহিদদেরই উপকার হয়।

    ষষ্ঠ উদ্দেশ্য : উম্মাহর যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি।
    হে আমার ভাইয়েরা! হকের আন্দোলন, হেদায়েতের আন্দোলন এমন কার্যক্রম, যা মানুষকে হেদায়াতের দিকে নিয়ে আসে এবং মানুষের হেদায়েতের জন্য জালেমদের সাথে লড়াই করে। এগুলো অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব এবং ইমাম ব্যতীত চলতে পারে না। হকের আন্দোলনের জন্য প্রত্যেক যামানাতেই এবং প্রত্যেক স্তরে এমন কিছু ব্যক্তি প্রয়োজন, যাদের একনিষ্ঠতা-ধৈর্য-দৃঢ়তা-স্থিরতা ও দ্বীনের জন্য কুরবানি দেখে প্রত্যক্ষকারীরা হেদায়াতের দাওয়াত পেয়ে যাবে এবং তার পরবর্তীতে আসা হকের পথিকদের দৃঢ়তা এবং স্থিরতার শিক্ষা হয়ে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দোয়া শিখিয়েছেন-
    وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
    আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দিন।
    হেদায়াতের পথে ইমাম হওয়া অতি সহজ কাজ নয়। এই রাস্তা বিপদের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়।
    وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ
    অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহিমকে কিছু কাজের মাধ্যমে পরীক্ষা নিলেন, তখন তিনি তা পরিপূর্ণ করেন।
    আল্লাহ তা‘আলা উনাকে বিপদের ঘাঁটিতে ফেলে দিয়েছিলেন, আর যখন তিনি তাতে পাশ করলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বললেন,
    قالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاس إِمَامًا
    অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে লোকদের ওপর ইমাম বানিয়ে দেব।
    এটা কখন বলেছেন? বিপদের সমুদ্র থেকে সফল হয়ে বের হওয়ার পর। হে ভাইয়েরা! সঠিক পথের উপর যখন কাউকে অনুসরণীয় এবং ইমাম বানানো হয়, যেন পরবর্তীরা এই অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বকে দেখে নিজেদের অন্তরে দ্বীনের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি করতে পারে, দ্বীনের উপর আমল করতে পারে, দিনের পথে বড় বড় কুরবানির জন্য নিজেকে পেশ করতে পারে, তখন এই সমস্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা বিপদের মধ্যে ফেলে পরীক্ষা করেন। আব্দুর রশিদ গাজী রাহিমাহুল্লাহর দৃষ্টান্ত দেখুন। তাকেও এই বিপদের ঘাঁটিতে ফেলা হয়েছিল, তখন তিনি দৃঢ় এবং স্থির হয়ে গিয়েছিলেন, যার ফলে ইমাম হয়ে গেছেন। এই দৃষ্টান্ত যা তারা দেখিয়ে গেছেন, যার ফলে পাকিস্তানের মাটিতে জিহাদের কার্যক্রম দৃঢ়ভাবে গেঁড়ে যায়।

    যখন জান বাঁচানোর জায়েজ রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
    আমার ভাইয়েরা! যখন মুমিনদের উপর পরীক্ষা আসে এবং তার জন্য জান বাঁচানোর সকল জায়েয রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, তখন সে এমন কোনো দরজায় করাঘাত করতে পারে না, যে দরজা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়। সে এমন কোনো রাস্তায় বের হতে পারে না, যে রাস্তায় জান বেঁচে যায়, কিন্তু ঈমান থেকে সে মাহরুম হয়ে যায়। এ কারণেই মুসা আ. ও ফেরাউনের ঘটনায় যখন যাদুকররা ঈমান আনে আর ফেরাউন সেই নওমুসলিমদের উপর চাপ প্রয়োগ করে- ‘ফিরে এসো! নিজ ধর্মে ফিরে এসো! ঐ দ্বীনকে ছেড়ে দাও! যদি ফিরে না আস, দ্বীন পরিবর্তন না কর, আত্মসমর্পন না কর তাহলে জবাই হয়ে যাবে, কতল হয়ে যাবে, সমস্ত শরীর টুকরো টুকরো হয়ে যাবে!’ তখন এই মুমিনরা এবং নওমুসলিম আহলে ঈমানগণ কোন জিনিসের কামনা করেন? তারা কী প্রার্থনা করেছেন? তারা ফেরাউনের সামনে নতি স্বীকার করেনি। ক্ষমা ও নিরাপত্তা চায়নি। জীবন ফিরে পাওয়ার প্রার্থনা করেনি। তারা বুঝে গিয়েছিল যে, ঈমান আনয়নের সাথে সাথে বেঁচে থাকার সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই তাঁরা আল্লাহর কাছে ঈমানের উপর অটল থাকা ও ঈমানের উপরেই মৃত্যুবরণের দোয়া করেছেন-
    رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
    হে আল্লাহ! আমাদেরকে ঈমানের উপর দৃঢ় রাখুন এবং এই ঈমানের সাথেই মৃত্যু দিন।
    তাঁরা ঈমানের সাথে মৃত্যুর কামনা করেছেন। তাঁরা এমন জীবন কামনা করেননি, যে জীবনে চলাফেরা তো ঠিকই করা যায়, মুক্তি ও আজাদি তো মিলে, কিন্তু ঈমান থেকে মাহরুম হতে হয়।

    পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার মাদ্রাসা থেকে সনদ গ্রহণকারী ইমাম।
    পাকিস্তানে পরীক্ষার এই মাদ্রাসা দেখো! এই মাদরাসাতুল ইবতিলা (পরীক্ষার মাদ্রাসা) থেকে সনদ গ্রহণকারী ইমামদের দেখো! এই মাদ্রাসা কত ইমাম তৈরি করেছে। মাওলানা নিজামুদ্দীন শামযাই, মুফতী জামিলুর রহমান, গাজী শহীদ রহ. -এর পিতা মাওলানা আ. রশিদ গাজী রহ. ঐ সময় যখন সত্য বলা মৃত্যুর নামান্তর ছিল, তখন তারা ও তাদের ন্যায় অন্যরা ঐ সময়ের অনেক ইমাম, অনেক উলামা এই পরীক্ষার মধ্যে মাথা বিক্রি করেছেন আর ইমাম হয়ে গেছেন। তারপর এই অল্প কয়েক বছরের মধ্যে দেখুন এই পরীক্ষার পাত্র কেমন ইমামদের তৈরি করেছেন। মাওলানা নসীব খান এর রহ. এর ব্যক্তিত্ব দেখুন, যিনি আকুরাহ খটক হক্কানিয়া -এর শিক্ষক ছিলেন। মাওলানা আ. জাব্বার শাকের, ডা. ওসমান, মুমতাজ কাদরি (আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের উপর রহমত বর্ষণ করুন!) ‘নাওয়ায়ে আফগান’ পত্রিকার পরিচালক হাফেজ তাইয়িব নওয়ায (হাফেজ আ. মতিন), এই মেজর ডা. তারেক, মেজর ও ডাক্তারদের জন্য উপমা! এই ইমামদের ফিরিস্তি সংক্ষিপ্ত কিছু নয়। এটা অনেক দীর্ঘ। যারা পরীক্ষার পাত্র থেকে বের হচ্ছেন মাদ্রাসাতুল ইবতিলা থেকে তাঁরা সনদ নিচ্ছেন। পাকিস্তান এজেন্সিগুলোর শাস্তির ও লাঞ্ছনার কামরা থেকে চামড়াছেলা লাশ হয়ে বের হচ্ছেন। এ সকল ঘটনা এই পয়গামই দিয়ে যাচ্ছে যে, আমরা হলাম দৃষ্টান্ত। হকের উপর অটল হয়ে যাও! আল্লাহর দ্বীনের জন্য দৃঢ় হয়ে যাও! আল্লাহর দ্বীনের জন্য একত্র হয়ে যাও! আল্লাহর এই দ্বীনের জন্য ওয়ারিস তৈরি করো! আর এরাই সেই ওয়ারিস, যা এই যুগে আমরা পেয়েছি। প্রত্যেক তবকায় পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ! পাকিস্তানের উপর, উপমহাদেশের উপর এটা অনেক বড় নেয়ামত। এটা এই পরীক্ষার বরকত যে, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই ভূখণ্ডের মুসলমানদের এই উপমা পেশ করেছেন যে, এই উপমাদের পথে চলো! জান্নাতে যেতে চাও? আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ উদ্দেশ্য? আল্লাহ তোমার মাহবুব? আল্লাহর মুহাব্বত চাও? রাস্তা হলো এটা, আর এরা এর ইমাম। এই ইমামদের পেছনে চলো এবং হকের এই পথে অটল থাকো! (আল্লাহ তাঁদের উপর ব্যাপক রহমত বর্ষণ করুন!) জিহাদের ময়দানে যারা দুশমনের সামনে দৃঢ় থেকেছেন, তাদের উদাহরণও কম নয়। ‘অপারেশন জারবে আযব’ এর পূর্বে ও পরে অনেক উদাহরণ রয়েছে। উস্তাদ আসলাম (কারী ইয়াসিন) রহ. ইমাম ছিলেন। অনেক বড় উপমা ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। তিনি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় ভাই ও বড় সম্মানিত ভাই ছিলেন। আমাদের উসামা ইব্রাহিম ভাই (যার জিহাদি নাম জহির ভাই ও আমজাদ ভাই) আমাদের সকলের জন্য তাঁর জীবনীতেও আদর্শ ছিল। আর এখন যখন আল্লাহর কাছে চলে গেছেন, আল্লাহ তাদের বাছাই করেছেন; তো উপমা হয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের আমাদের অত্যন্ত প্রিয়, বিশ্বস্ত, সত্যবাদী, বাহাদুর ও সাহসিকতার ছবি, মহান নেতা সুহাইল ভাই (তারিক বাংলাদেশী ভাই), হিন্দুস্তানের অত্যন্ত প্রিয় ভাই হায়দারাবাদ এলাকা থেকে এসেছেন এবং এখানে এই কাফেলায় খুন ঢেলেছেন, মুহতারাম কারী উমর রহ. আল্লাহ তাঁদের উপর ব্যাপক রহমত নাযিল করুন ও তাঁদের মতো অন্যদের উপর অনুগ্রহ করুন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এই কাফেলা থেকে এক মুহূর্তের জন্যও পৃথক না করুন। এই কাফেলায় আমাদের দৃঢ়পদ রাখুন। আল্লাহ তা‘আলা এই সকল মুসলমানদেরকে যাদের অন্তরে ইখলাস আছে, যারা আল্লাহর দ্বীনকে নুসরত করতে চায়, আল্লাহ তাদেরকে জিহাদী কাফেলায় শামিল করুন।

    নফসানি খাহেশাত : এক মারাত্মক পরীক্ষা
    প্রিয় ভাইয়েরা! পরীক্ষার আরও একটি প্রকার আছে। উপরে যে প্রকার বর্ণনা করা হয়েছে সেটা তো মুশকিল, বিপদাপদ, সংকীর্ণতা ও কষ্টক্লেশ ইত্যাদির পরীক্ষা ছিল। আরও এক প্রকার পরীক্ষা আছে, যেটি এই সকল পরীক্ষা থেকে বেশি ভয়াবহ ও বেশি মুশকিল! এটা হলো মানুষের নফসের কামনা-বাসনার পরীক্ষা। তা হলো ধন-সম্পদ, ভোগ সামগ্রী, প্রসিদ্ধি, নেতৃত্বের মুহাব্বত ঈমান ও জিহাদের কষ্টের উপর অটল থাকার পরিবর্তে নিরাপত্তা ও শান্তিলাভের কামনার পরীক্ষা। আল্লাহর শপথ! নফসের এই কামনা ও মুহাব্বত অন্য সকল ফেতনা থেকে বেশি ভয়াবহ! বেশি ভারী! আবার তখন এই পরীক্ষা আরও বৃদ্ধি পায়, বেশি ভারি হয়ে যায়, যখন সফর দীর্ঘ হয় কিন্তু সাহায্য ও বিজয় অনেক দূর পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। বের তো হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে যে, জুলুমের ভিত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে; পাঁচ বছর, না হলে আট বা দশ বছরের মধ্যে কাবুল থেকে দিল্লি পর্যন্ত শরীয়তের ঝাণ্ডা দৃষ্টিগোচর হবে, কিন্তু যখন এই মঞ্জিল নজরে না আসে তো এমন মুহূর্তে খুব কম লোকেরাই অটল থাকতে পারে। নিজের সফর জারি রাখতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমাদের ও আপনাদের এর মধ্যে শামিল রাখুন! আমাদের দৃঢ় রাখুন!
    পরীক্ষার সময় অটলতা প্রদর্শন করা মুজাহিদীনের গুণাবলী :
    এমন পরীক্ষার সময়ে যারা দাঁড়িয়ে যায় ও দাঁড়িয়ে থাকে তারা ঈমানের হক আদায় করে। আমার ভাইয়েরা! ঈমান আল্লাহর আমানত। এই সপ্ত আকাশ উপর থেকে আল্লাহ তা‘আলার মহান আমানত। এবং এটা কেবল ঐ লোকেরাই উঠাতে পারে, যারা এর যোগ্য। ঐ মহান গুণাবলীর অধিকারী সৌভাগ্যবানদের অতিরিক্ত কিছু গুণ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য পেশ করতে চাই।
    আত্মসমর্পণ ও ইখলাস
    আত্মসমর্পণ ও ইখলাসে পরিপূর্ণ লোকেরা নিজের কোনো ভালো গুণ, নিজের কোনো সৌন্দর্য, নিজের যোগ্যতার সম্বন্ধ নিজের দিকে করে না। যবানেও নয়, অন্তরেও নয়, এমনকি আমলের মাধ্যমেও নয়। সে মনে করে যে, আমার সৌন্দর্য, আমার যোগ্যতা, আমার কাজগুলো, আমার এই ছোট ছোট কাজ, এই সবকিছু আমার বাহুবলে ও নিজের শক্তির বদৌলতে নয়। এমন মুমিন ব্যক্তি لَا حَوْلَ ولا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰه، و ما توفِيقِيْ إِلَّا بِاللّٰ (লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ) এর উপর ঈমান রাখে যে, এ সকল যোগ্যতা আল্লাহ তা‘আলা দিয়েছেন। আল্লাহ তাওফীক না দিলে আমি কোনো সৌন্দর্য, কোনো যোগ্যতা অর্জন করতে পারতাম না। এই লোকেরা নিজেকে এবং নিজের সবকিছু আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেয়। নিজের রজ্জুকে আল্লাহর হাওলা করে দেয় যে, আল্লাহ তাকে যেদিকে ঘুরায় সে সন্তুষ্ট থাকে। তার মাকসাদই হলো আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি। বাকী আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের কেমন পরিবেশে রাখবেন, কোন ধরনের রাস্তা দেবেন, পাহাড়ের উপর চড়াবেন, নাকি ময়দানে চালাবেন এটা আল্লাহর মর্জি। সুতরাং সে وَ أُفَوِّضُ أَمرِيْ إِلٰى اللّٰهِ (আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিজের সবকিছু সোপর্দ করে দিলাম।) -এই বাণী উচ্চারণ করে। এমন লোকদের প্রশংসা মানুষের করার প্রয়োজন হয় না। সে মানুষের প্রশংসাবাণী পছন্দ করে না। সে নিজের প্রশংসা শোনলে পলায়ন করে। কেউ তার প্রশংসা করুক -এটা সে পছন্দ করে না, এর উপর সন্তুষ্টও হয় না। সে প্রশংসা লাভের আসায় মানুষের দিকে তাকায় না। সে চায় না যে, মানুষ তার প্রশংসা করুক। এজন্য যে, সে কেবল আল্লাহকে দেখানোর জন্য সব কিছু করে।

    বিনয়:
    এই লোকদের উপর যখন পরীক্ষা আসে, চাই তা নেয়ামত পাওয়ার আকৃতিতে হোক, বিজয় ও শক্তি অর্জনের সুরতে হোক অথবা নেয়ামত ছিনিয়ে নেওয়ার সুরতে হোক। উভয় সুরতে তার বিনয় বৃদ্ধি পায়। সে তার রবের সামনে ঝুকে পরে। নিজের রবের সামনে অক্ষমতা প্রকাশ করে এবং আল্লাহর বান্দাদের সামনেও সে বিনয়ী হয়ে যায়। সুতরাং এই অতিরিক্ত পরীক্ষা আল্লাহর নৈকট্য লাভের কারণ হয় এবং আল্লাহর বান্দাদের জন্যও সে আরও অধিক কোমল ও দয়ালু হয়ে যায়।

    সুদৃঢ় বিশ্বাস:
    এমন লোকদের উপর যখন আল্লাহর পরীক্ষা বিপদ ও বঞ্চিত হওয়ার আকৃতিতে আসে এবং তার মধ্যে বৃদ্ধি পায় তখন আল্লাহর সাহায্যের উপর তার বিশ্বাস কখনো নড়বড়ে হয়ে যায় না, বরং সুদৃঢ় হয়ে থাকে। সে জানতে পারে আল্লাহ তাড়াতাড়ি সাহায্য পাঠাবেন। কিন্তু যদি তার সাহায্য আসতে দেরী হয়, তখন সে নিজের প্রজ্ঞাবান রবের হেকমতের উপর সন্তুষ্ট থাকে। সে বুঝতে পারে যে, لَا يَقْضِيَ اللّٰهُ لِلْمُؤْمِنِ قضاءً الا كان خيرًا لهُ আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য যে ফায়সালা করেন তার মধ্যেই মুমিনের কল্যাণ নিহিত। এই বিলম্ব তাঁর ঈমানের জন্য, আহলে ঈমানদের জন্য, সমস্ত উম্মতের জন্য এবং সকল মানুষের জন্য সে কল্যাণকর মনে করে। এবং এই আসায় সামনে বাড়ে যে, এখন নয় তো কাল সাহায্য আসবে। দেরি হচ্ছে তো এই দেরির কারণ সে এটা মনে করে যে, এর মধ্যে আল্লাহর হেকমত রয়েছে। সে আল্লাহর হেকমতের উপর বিশ্বাস রাখে এবং সে হাকিম রবের এই ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকে।

    আল্লাহর মুহাব্বত:
    তাঁর ক্ষত-বিক্ষত দিল ও রক্তাক্ত শরীরের জন্য এটাও বাস্তবিক উপশম হিসাবে সাব্যস্ত হয় যে, সে আল্লাহর মাহবুব বান্দা। এবং এটাও আল্লাহর মুহাব্বত। এই পরীক্ষার জন্য তাঁকে বাছাই করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো জাতিকে পছন্দ করেন তখন তাদের পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। সুতরাং তাদের সকল ‘আহ’ এবং সকল দুঃখ-কষ্ট আল্লাহর রাস্তার সকল বেদনা, সকল ভয়ভীতি, আল্লাহর নৈকট্য, আল্লাহর সাথে আরও বেশি মুহাব্বত এবং আল্লাহর মাগফিরাত লাভের কারণ হয়ে যায়। এবং এটাই আসল লক্ষ-উদ্দেশ্য হওয়া চাই।

    সাহায্য ও বিজয়ের প্রতি বিশ্বাস:
    ময়দানে সাহায্য ও বিজয়, যে ইসলামাবাদে শরিয়ত বাস্তবায়ন হয়ে যাবে, এই জাতির খিলাফত ব্যবস্থার দেখা মিলবে, আল্লাহর রহমত পাবে, তাদের উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবে, দিল্লিতে তাওহিদের ঝাণ্ডা দৃষ্টিগোচর হবে, হিন্দুস্তানের মুসলমানরা জুলুম থেকে মুক্তি পাবে। এই বিজয় ও সাহায্যের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ ক্ষেত্রেও নিরাশ হয়ো না; এর থেকেও তোমরা মাহরুম হবে না ইনশাআল্লাহ!
    َأُخرىٰ تُحِبّونَها ۖ نَصرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتحٌ قَريبٌ ۗ
    এবং যেটা তোমরাও পছন্দ কর।
    চিন্তা করুন, ‘যেটা তোমরা পছন্দ কর’। আল্লাহ তা‘আলা তো অমুখাপেক্ষী, যেটা তোমরা পছন্দ কর। কে এটা পছন্দ করে না যে, আল্লাহর শরিয়ত বাস্তবায়ন হোক? আমরা সবাই পছন্দ করি যে, আমাদের বিজয় লাভ হোক, সাহায্য পেয়ে যাই। আল্লারহ দ্বীনকে আমরা এই দুনিয়ার মধ্যে বিচারক হিসাবে দেখব। তো আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা যেটি পছন্দ কর সেটাও নিকটবর্তী; বেশি দূরে নয়।
    وَبَشِّرِ المُؤمِنينَ
    সুসংবাদ তো মুমিনদের জন্য।
    যে মুমিন বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ আমার মালিক, আমার খালিক, আমার হাকিম, তিনি সম্মান দান করেন, লাঞ্চনা দেন, জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। যে দুনিয়ার সকল বিষয়ে এই বিশ্বাস রাখে যে, যখন আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন তখন আমার উপর এই কষ্ট আসবে, আর যদি না চান তাহলে তো এই সবকিছু অর্জন হবে। তখনও এটা আমাকে কোনো প্রকার পীড়া দেয় না। তো আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
    وَبَشِّرِ المُؤمِنينَ
    ঐ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও; বিজয়ের সুসংবাদ, আল্লাহর নুসরতের সুসংবাদ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দূর্বলদের মুমিন বানিয়েছেন এবং তিনি আমাদের এই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে শামিল করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে এই পরীক্ষায় এবং সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করুন। আমাদের যে ভাই কয়েদখানা’য় রয়েছে, আমাদের যে ভাই পাকিস্তানের এজেন্সির কাছে বন্দি রয়েছে, সকল দ্বীনি জামাআত, জিহাদী দলের মুজাহিদগণ, মুমিনগন ও দায়ীগনকে আল্লাহ তা‘আলা আত্মসমর্পনকারী বানিয়ে দিন। আমীন!


    দৃঢ়তা প্রদর্শনকারী মুজাহিদীনের ভূমিকা :
    পরীক্ষার দুনিয়াবী ফলাফল :

    ঈমান ও দ্বীনের বড়ত্ব অন্তরে গেঁথে যাওয়া। মুমিনরা যখন বিপদাপদে দৃঢ়তা দেখায়, কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ করে তখন তাঁরা বুঝতে পারে যে, এই পরীক্ষার দ্বারা তাদেরকে এক মহান উদ্দেশ্যে এক বিশাল কষ্টের নিসাবে অতিবাহিত হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অতঃপর হকের জন্য যখন সে নিরাপদ ও স্থীরতার কুরবানি দেয়, অন্তরের কামনা-বাসনাকে যখন সে মেরে ফেলে, সবচেয়ে প্রিয় সাথীদের শাহাদাতের ফলে তার অন্তর যখমে জর্জরিত হয়, সবচেয়ে নিকটাত্মীয়দের থেকে সে দূরে সরে যায়, নিজের দেশের কুরবানি করে, হিজরতের মাধ্যমে উন্মাদের মতো জীবন বেছে নেয়, জিহাদ ও কিতালের ময়দানে, দাওয়াতের ময়দানে সর্বপ্রকার ভয়ভীতি ও আশঙ্কার সম্মুখীন হলে অটল থাকে, তখন এই সকল কুরবানির বদৌলতে ঈমান ও উচ্চাকাঙ্খার মাহাত্ম তার হৃদয়ের গভীরে গেঁথে যায়। অতঃপর সে কোনো মূল্যেই এই লক্ষ্য বিক্রি করে না। এই অভিশপ্ত দুনিয়ার কয়েকটি নিশ্বাসের জন্য আখেরাতকে বিক্রি করে দেয় না।
    লোভ ও উপঢৌকনের মোকাবেলায় মুমিনের জবাব :
    যদি কখনো দুনিয়ার উপঢৌকন এমন মানুষের জন্য হয় যে শত বাধা সত্ত্বেও জিহাদ পরিত্যাগ করেনি, তখন বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে তাদের উপঢৌকন দেওয়া হয়। কিন্তু যখন মুমিনরা এই উপঢৌকনকে লাথি মেরে ফেলে দেয় তখন এই শয়তান, জালেম ও হত্যাকারীরা মুমিনদেরকে নিরাপত্তার জীবন দেখিয়ে বলে যে, দেখ কেমন ভালো জীবন! আর তোমরা কোথায় আছ? পাহাড়ে উন্মাদের জীবন যাপন করছ! এর জবাবে মুমিনরা বলে,
    وَيٰقَومِ ما لى أَدعوكُم إِلَى النَّجوٰةِ وَتَدعونَنى إِلَى النّارِ
    হে লোকসকল! আমি তোমাদেরকে নাজাতের দিকে আহ্বান করি, আর তোমরা আমাকে আগুনের দিকে আহ্বান কর?
    আমি তোমাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে, তাঁর শরিয়তের দিকে, দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার দিকে এবং উঁচ্চতার দিকে আহবান করি, আর তোমরা লাঞ্চনা, জিল্লতি, নীচতা ও এই পঁচা দুনিয়ার দিকে আহবান করছ? তোমারা আমাকে আগুনের দিকে ডাকছ?
    تَدعونَنى لِأَكفُرَ بِاللَّهِ
    তোমরা আমাকে আহ্বান করছ, যেন আমি আল্লাহর না-শুকরিয়া করি?
    وَأُشرِكَ بِهِ ما لَيسَ لى بِهِ عِلمٌ
    তাঁর সাথে শিরক করি, যার ব্যাপারে আমার ইলম নেই?
    এই কুফরি নেযামের সামনে মাথা নত করি? এই জুলুমবাজির নিয়মের সামনে আত্মসমর্পন করি? আমি আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমেরিকাকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করব? আমেরিকার গোলামদের সামনে ঝুকে যাব? আল্লাহর দ্বীনের আদালতের নীতি আমাকে কী বলে? তাঁর দ্বীন আমার থেকে কী চায়? তাঁর চাওয়া ও কামনা ছেড়ে তোমাদের ও তোমাদের প্রভুদের চাওয়ার উপর, তোমাদের ইলাহ আমেরিকার চাওয়ার উপর এসে যাই? তোমাদের মুলহিদ ও মুশরিক প্রভুদের চাওয়া পাওয়া মেনে নেব? কেননা তোমরা তো এই পাকিস্তানকে মুলহিদদের (দ্বীন ত্যাগীদের) আড্ডাখানা বানাতে চাও। পাকিস্তানকে মুশরিকদের বিচরণগাহ বানাতে চাও। আর আমি
    وَأَنا۠ أَدعوكُم إِلَى العَزيزِ الغَفّٰرِ
    আমি তোমাদেরকে সম্মানিত ক্ষমাশীল রবের দিকে আহবান করি।
    لا جَرَمَ أَنَّما تَدعونَنى إِلَيهِ
    তোমরা যার দিকে আমাকে আহবান করো
    لَيسَ لَهُ دَعوَةٌ فِى الدُّنيا وَلا فِى الءاخِرَةِ
    দুনিয়া ও আখেরাতে তার কোনো গুরুত্ব বা স্থান নেই।
    وَأَنَّ مَرَدَّنا إِلَى اللَّهِ
    আমাদের ও তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থান তো আল্লাহর দিকেই।
    وَأَنَّ المُسرِفينَ
    যারা বাড়াবাড়ি করে, আল্লাহর বন্ধুদের সাথে, আল্লাহর রাস্তার সাথে, জিহাদের সাথে শত্রুতা রাখে, আল্লাহর রাস্তার মুসাফিরদের সাথে, দ্বীনের উলামাদের সাথে, মাদারেসের উপর জুলুম করে, আলেমদের অসম্মান করে
    هُم أَصحٰبُ النّارِ
    তারা সকলেই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। আর তারাই বলবে
    فَسَتَذكُرونَ ما أَقولُ لَكُم ۚ
    আমরা যা কিছু বললাম সবই তোমরা স্বরণ করবে।
    وَأُفَوِّضُ أَمْرِي إِلَى اللَّهِ ۚ
    আমার বিষয় আমি আল্লাহর কাছে সোপর্দ করলাম।
    إِنَّ اللَّهَ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ
    নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের সব কিছু দেখেন।

    হুমকি-ধমকির বিপরীতে মুমিনদের কর্মনীতি :
    যখন মুমিনদের সামনে দুনিয়ার ধন-দৌলত ও বিভিন্ন উপঢৌকন উপস্থাপন করে ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন মুমিনদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় ও সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখালিখি শুরু হয়ে যায়, টিভি চ্যানেলে এসে বারবার বলতে থাকে, সমস্ত মাধ্যম প্রয়োগ করে যখন সফল না হয় তখন অতীত স্বরণ করিয়ে ভয় দেখানো হয় যে, তোমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার! তোমরা বন্ধ পথে যাচ্ছ! বন্ধ পথ!
    আলহামদুলিল্লাহ! এটা বন্ধ পথ নয়, এটা মহাসড়ক! এটা মহাসড়ক! এই পথ আল্লাহর দিকে যায়। আমরা বন্ধ পথে যাচ্ছি না। আলহামদুলিল্লাহ! যেদিন আমরা নিজেদের ঘর থেকে বের হয়েছি ইখলাসের সাথে বের হয়েছি। কে তোমাদের বলেছে সে এজন্য বের হয়েছে যে, সে ফ্লাট বানাবে, বড়বড় গাড়ি নিবে, খুব প্রসিদ্ধি অর্জন করবে, বড়বড় জায়গা নিজের নামে লিখবে? সে জানে যে, সে চীফ অফ আর্মি স্টাফ হবে না। এই পথের মুজাহিদ যেদিন ঘর থেকে বের হয়েছে সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েই বের হয়েছে। সে ঐ শামের দিকে বের হয়েছে, যে শাম সম্পর্কে তোমরা ভয় দেখাও- হত্যা! হত্যা! মৃত্যু!, যে শাহাদাত সম্পর্কে তোমরা ভয় দেখাতে, সে তো সেই শাহাদাত লাভের জন্যই বের হয়েছে! যখন তাঁর উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, হুমকি দেওয়া হয় তখন এই মুমিনদের উপমা ঐ দরবারী নওমুসলিমের মতো হয়, যারা ফেরাউনের দরবারে মুসলমান হয়েছে। যখন ফেরাউন তাদের ভয় দেখাল-
    فَلَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ مِنْ خِلَافٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمْ فِي جُذُوعِ النَّخْلِ
    আমি তোমাদের হাত পা উল্টাদিকে থেকে কেটে ফেলব, খেজুরের কাণ্ডে তোমাদের শুলিতে চড়াব, তোমাদের ফাসি দেব।
    কেউ বাঁচতে পারবে না। বোমা মেরে দেব, মিসাইল মেরে দেব, মাথায় গুলি করব, হত্যা করে ফেলব, জেলখানা ও রিমান্ডে ঢুকিয়ে দেব। ফেরাউন যখন তাদেরকে ভয় দেখায় তখন তারা বলে,
    قَالُوا لَنْ نُؤْثِرَكَ عَلَى مَا جَاءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِي فَطَرَنَا
    তারা বলল, কিছুতেই আমরা তোমাকে প্রাধান্য দিব না, যে স্পষ্ট সত্য আমাদের নিকেট এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার উপর।
    আল্লাহর শপথ! কখনো আমরা এ সত্য ছেড়ে দেব না। কিছুতেই তোমাদের সামনে ঝুকব না। এজন্য যে, আমরা সত্য চিনে ফেলেছি। জীবনের রাস্তা পেয়ে গিয়েছি যে, কোনটি মহাসড়ক আর কোনটি বন্ধ গলি। আমরা বুঝে ফেলেছি কোনটি উন্নতি কোনটি অবনতি, কোনটি উঁচুতা আর কোনটি নীচতা। আল্লাহর শপথ! আমরা তোমার দ্বীনে ফিরে আসব না। তোমার সামনে ঝুকব না। অতঃপর আগ্রসর হয়ে ফেরাউনের সামনে বলল,
    فَاقْضِ مَا أَنْتَ قَاضٍ
    তুমি যা করার কর!
    إِنَّمَا تَقْضِي هَذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
    তুমি তো কেবল এই দুনিয়াতেই করতে পারবে!
    তোমরা কেবল এই দুনিয়ার জীবনেই কিছু করতে পারবে। আমাদের আখেরাতের জীবনে তোমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। ফাঁসি দিলে তো দাও। এছাড়া আর কী করতে পারবে? তোমরা ডাক্তার উসমান রহ. -এর কোনো ক্ষতি করতে পেরেছ? এই যাদেরকে তোমরা ফাঁসি দিচ্ছ; দুই তিনশত ভাইকে তোমরা ফাঁসি দিয়েছ, তারা তো জান্নাতে পৌছে গেছে ইনশাআল্লাহ। দুনিয়াতেই তোমাদের ক্ষমতা আছে। আখেরাতে তোমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। এমন মুমিনগণ শক্তিশালীর চেয়ে শক্তিশালীদের মোকাবেলায়ও নিজের এই মহান ও অতুলনীয় সম্পদ ঈমান, আমলে সালেহ, দাওয়াত ও জিহাদ ইত্যাদির হিফাজত মূল বিষয় মনে করে। এরাই ঐ মুখলিস লোক, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা এই খাঁটি ও মহান দ্বীনের দাওয়াত ছড়িয়ে দেন। দায়ী এমন লোকেরাই হয়। তাদের মাধ্যমে দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে। এমন মুখলিসদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কুফরের মুকাবিলা করার জন্য, কুফরিকে খতম করার জন্য এবং এই অন্ধকারকে দূরীভূত করার জন্য বাছাই করেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমরা সবাই দূর্বল। আমরা দোয়া করি, যবান দ্বারা বলি, আল্লাহ তা‘আলা কার্যত অন্তর থেকে এমন বনিয়ে দিন। তিনি এমন মুমিনদের সিফাত আমাদের দান করুন। আমরা খুবই দূর্বল। তিনি আমাদের সাহায্য করুন। তিনি আমাদের শক্তি ও তাওফীক দান করুন।

    পরীক্ষা থেকে পলায়নকারীদের ভূমিকা :
    আসল পরীক্ষার সময় অবস্থান পরিবর্তন করা!

    আরও একটি গুণ ইতিহাসে পাওয়া যায় এবং ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে। কিছু হতভাগা এমনও আছে, যে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থায় হকের কথা বলে। কেননা এই সময়ে হক কথা বলতে কষ্ট হয় না। এই সময়ে হক কথা বললেও পুরষ্কার পাওয়া যায়। কিন্তু যখনই পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, বিপদাপদ বেড়ে যায়, তখনই তাঁর ঈমান, দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার উচ্চ লক্ষ্য নড়বড়ে হয়ে যায়। সে নিজের পথ ও দৃষ্টিভঙ্গির তরীকার উপর দ্বিতীয়বার দৃষ্টি ফেলে ফায়সালা করে।
    কুরআনের নকশা টেনে আনে!
    কিন্তু এই নজরে সানি তখন হয় যখন পরীক্ষা মাথার উপরে আসে। নিরাপত্তার সময় নয়। বুঝদার ও জ্ঞানীদের এই কথা তখন আর এলহাম হয় না, যখন দেহ ও জীবন আশঙ্কার সম্মুখীন না হয়। অপারেশন না হয়। যখন মুজাহিদরা বিজয়ী হয়, যখন অনেক এলাকা তাদের ক্ষমতাধীন থাকে, তখন মুজাহিদদের কথা শোনা হয়। তাদের উপমা আল্লাহ তা‘আলা এভাবে দেন-
    وَلَئِنْ جَاءَ نَصْرٌ مِنْ رَبِّكَ
    যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসে
    لَيَقُولُنَّ إِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ
    তাঁরা বলে আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম।
    আমরা তো পূর্বেও তোমাদের সাথে ছিলাম এখনও আছি। আমরা যখন ঐ দিকে ছিলাম, তখন ঐ দিকে তোমাদের কথাই বলতাম, তোমাদের প্রশংসা করতাম, লিখলে তোমাদের পক্ষে লিখতাম। আমরা যেখানেই থাকি তোমাদের মুজাহিদদের পক্ষপাতিত্ব ও অভিভাবকত্ব করি। তোমরা কষ্ট ও বিপদে ছিলে তো আমরা সেদিকে আরও বেশি বিপদে ছিলাম।
    إِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ
    আমরা তোমাদের হাত ও বাহু, তোমাদের জবান।
    أَوَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ الْعَالَمِينَ
    আল্লাহ কি বিশ্বজগতের সকলের অন্তরের বিষয়ে অধিক অবগত নন?
    তিনি জানেন কার অন্তরে কী আছে। অতঃপর তিনি বলেন, আমি এ অবস্থায় ছেড়ে দেব না।
    وَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْمُنَافِقِينَ
    আল্লাহ অশ্যই জেনে নেবেন কারা প্রকৃত মুমিন এবং কারা মুনাফিক।
    আল্লাহ আমাদের নিফাকের সিফাত থেকে হেফাজত করুন।
    মানুষ থেকে আগত বিপদ আল্লাহর আযাবের সমতুল্য মনে করা!
    যখন বিপদ আসে তখন এই লোকেরা এই বিপদকে আল্লাহর আযাব মনে করতে থাকে। উন্মাদনা, দুশমনের মোকাবিলা করা, ভয়ভীতি, অসুস্থতা এবং অবরোধ ইত্যাদিকে আল্লাহর আযাবের সমতুল্য মনে করে। এবং ‘আইএসআই’ এজেন্সিগুলোর শাস্তিপ্রদান, বন্দি করা আল্লাহর আযাবের সমান মনে করে।
    وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آَمَنَّا بِاللَّهِ
    কিছু লোক এমন আছে যারা বলে যে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লার উপর,
    فَإِذَا أُوذِيَ فِي اللَّهِ
    যখনই আল্লাহর জন্য তাদের কষ্ট দেওয়া হয়,
    جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللَّهِ
    তারা তখন মানুষের দেওয়া শাস্তিকে আল্লাহর আযাব মনে করতে থাকে।
    সে নিজের ধারনা অনুযায়ী এই উন্মাদনা, অবরোধ, গ্রেপ্তার হওয়া এবং দৌড়-ঝাপকে সে আসল শাস্তি মনে করতে থাকে। আর আল্লাহর আযাব এটা তো তাদের খেয়ালেই আসে না। এটা ঈমানী দূর্বলতার কারণে হয়। এটাই কারণ যে, এই হতভাগারা এই শাস্তিকে আসল শাস্তি মনে করতে থাকে। অথচ আল্লাহর আযাব এমন, যার কোনো কল্পনাই করা যায় না।
    فَيَوْمَئِذٍ لَا يُعَذِّبُ عَذَابَهُ أَحَدٌوَلَا يُوثِقُ وَثَاقَهُ أَحَدٌ
    সে দিন এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যেমন শাস্তি কেউ কখনো দেয়নি। এমন পাকড়াও করা হবে, যেমন পাকড়াও কেউ কখনো করেনি।

    আত্মসমর্পন করে ‘জ্ঞানী’ মনে করা!
    এমন বিজ্ঞ ও স্থান নির্ণয়কারী নিজের অবস্থাকে অত্যন্ত বিজ্ঞচিত ও বিশ্লেষক ভাবতে থাকে। সে তৎক্ষণাৎ পথ পরিবর্তন করে ফেলে। মিসাঈল, অবরোধ, বোম্বিং এবং উন্মাদনার মাঝে ভয় ও ত্রাসের মাঝে কি হয়েছে এর ফায়সালা? অতঃপর বিবেক ও নিজ বুঝের ফায়সালা হয়ে যায়। কিন্তু এই হতভাগা এখানেও থামে না। যখন শয়তানের কাছে নিজেরাই নিজেদেরকে সোপর্দ করে দেয় তখন শয়তান কিভাবে তাদের ছেড়ে দেবে? অতঃপর সে হক ও হকের পথিকদের ছেড়ে জালেমদের কাতারে পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায়। আর এটাকেই সে বিজ্ঞতা মনে করতে থাকে। এটাকেই সমজদারী বলতে থাকে। সেই আবার নিজেকে জ্ঞানপাপী ভাবে। আল্লাহ এমন সমঝদারী থেকে আমাদের হেফাজত করুন। তিনি আমাদের প্রথম কাতারের মুনিদের অন্তর্ভুক্ত বানান। ঈমানের পর আমাদের বুঝ দান করুন।

    আল্লাহর সাথে মুয়ামালা : আল্লাহ থেকে কোথায় গিয়ে বাঁচতে পারবে?
    আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মৃত্যু থেকে পলায়নকারী এই বিজ্ঞলোকদের সম্পর্কে কুরআনে বলেন,
    قُلْ لَنْ يَنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ إِنْ فَرَرْتُمْ مِنَ الْمَوْتِ أَوِ الْقَتْلِ
    আপনি বলুন, যদি তোমরা মৃত্যুভয়ে পলায়ন কর যে, বোম্বিংয়ে মারা যাবে, গ্রেপ্তার হবে, নিহত হবে, এমনিভাবে যারা পরীক্ষা থেকে পলায়ন করে তাদের বলে দিন-
    لَنْ يَنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ
    পলায়ন তোমাদের কোনো উপকারেই আসবে না।
    চাই তোমরা আজ দুশমনের দূর্গে গিয়ে বসে থাক এবং সেখানে তোমাদের অনেক বন্ধুও হয়ে যাক, কিন্তু সেখানেও তোমরা বাঁচতে পারবে না।
    وَإِذًا لَا تُمَتَّعُونَ إِلَّا قَلِيلًا
    একেবারে অল্প কিছুদিন তোমরা ভোগ করতে পারবে।
    কয়দিন বাঁচতে পারবে? পাঁচ বছর, দশ বছর, ষাট-সত্তর-আশি বছর? কয়দিন অতিবাহিত করবে? কোটি বছর? এত বছর জীবন যাপন করবে? আখেরাতের মুকাবেলায় এই জীবন কতটুকু? তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
    قُلْ مَنْ ذَا الَّذِي يَعْصِمُكُمْ مِنَ اللَّهِ
    বলে দিন, আল্লাহ থেকে কে তোমাদের বাঁচাবে?
    إِنْ أَرَادَ بِكُمْ سُوءًا أَوْ أَرَادَ بِكُمْ رَحْمَةً
    যদি তিনি তোমাদের ব্যাপারে মন্দ ফায়সালা করেন বা অনুগ্রহের ইচ্ছ করেন,
    وَلَا يَجِدُونَ لَهُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا
    তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে তাদের অভিভাবক বা সাহায্যকারী পাবে না।
    কেউ তোমাদের সাহায্য করবে না, তোমাদের বাঁচাবে না। কোনো সেফ হাউস পাবে না। আজ তোমরা দুশমনের সেফ হাউসে বসে আছ, কাল তোমাদের কোথাও স্থান হবে না। আমেরিকা তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। কোনো মুলহিদ বা মুশরিক বাঁচাতে পারবে না। দুনিয়ার কোনো বাহিনী তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
    হে আমার ভাই! আল্লাহ থেকে কোথাও গিয়ে বাঁচতে পারবে? আল্লাহ আমাদের ঈমান দান করুন। আমাদের সাহায্য করুন। তিনি আমাদের লাগাম ধরে রাখুন। সর্বদা আমাদের এই দোয়া করা উচিৎ-
    رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
    হে রব! আমাদের মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দিন এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন! কাফির গোষ্ঠীর উপর আমাদের সাহায্য করুন।
    رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
    হে আমাদের রব! আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন, আমাদের বাড়াবাড়িগুলোও মাফ করুন, আমাদের পা’গুলো দৃঢ় করুন, কাফির জাতির উপর আমাদের সাহায্য করুন।
    হে আল্লাহ! আমাদের অন্তর মজবুত করুন, ফেতনার এই জামানায় অন্তরকে ঈমানের উপর জমিয়ে রাখুন। এবং এই দোয়া করা
    رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
    হে রব! আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দিন এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসাবে মৃত্যু দান করুন।

    পরীক্ষা ও আল্লাহর বাণী :
    আমার প্রিয় ভাইয়েরা! আপনাদের নিকট আবেদন করতে চাই, এখনো মুজাহিদীনের উপর পরীক্ষার সময় চলছে। প্রত্যেক মুজাহিদ, প্রত্যেক দায়ী এই স্তরে অবশ্যই সূরা আহযাবের তাফসীর (যদি তাফসীর ফি জিলালিল কুরআন পাওয়া যায় তো এর থেকে, আর যদি না পাওয়া যায় তাহলে নির্ভরযোগ্য কোনো তাফসীরের কিতাব থেকে) পড়ে নেবেন। সূরা তাওবা, সূরা আনফাল, আলে ইমরান অবশ্যই পড়ে নেবেন। আল্লাহর শপথ! আমার ভাইয়েরা! এই কিতাব যিন্দা কিতাব। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুজেযা।
    لَقَدْ أَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيهِ ذِكْرُكُمْ
    আল্লাহ বলেন, অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট এমন কিতাব পাঠিয়েছি, যার মধ্যে তোমাদের আলোচনা রয়েছে।
    আমার আপনার আলোচনা আছে।
    أَفَلَا تَعْقِلُونَ
    তোমরা কি বুঝবে না?
    মনে হয় যেন কোরআন আজ নাযিল হয়েছে। আল্লাহর এই কিতাব আজ ঐ অবস্থাগুলোর ব্যাপারে কথা বলছে, যেগুলোর চেহারা ভিন্ন ভিন্ন, নাম ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু ভূমিকা একই। পরীক্ষা আমার ও আপনার জন্য যে, কে কোন ভূমিকা পালন করে, কোন দলের মধ্যে আপনি ভিড়ছেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রত্যেককে এই তাওফীক দান করুন যেন, আমরা কুরআন পড়তে পারি, কুরআনের নূর দিয়ে এই অবস্থাগুলো দেখতে ও বুঝতে পারি।

    পরীক্ষা কল্যাণের কারণ হয় :
    আমার অতি প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা! জিহাদে অংশগ্রহণকারী সকল কল্যাণপ্রাপ্ত মুজাহিদ ভাইয়েরা! চাই আপনি আমাদের জামাতের হোন বা জামাতের বাহিরে হোন সকল জিহাদী দায়ীদেরকে,যারা দাওয়াতের ময়দানে দিফায়ী জিহাদের মহান রণক্ষেত্রে লড়াই করছেন; সকল জিহাদী আনসারদেরকে, যারা জিহাদে সাহায্য করছেন এবং এখনো জিহাদে সাহায্য করা নিজের সৌভাগ্য মনে করছেন- আল্লাহর এই সকল সিংহদেরকে আমি মুবারকবাদ জানাই!
    মুমিন হওয়ার জন্য ঈমান, ইখলাস ও শরীয়তের অনুসরণ করা শর্ত। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ও আপনাদেরকে এই শর্ত পূরনের তাওফিক দিন। আল্লাহর শপথ! আমার ভাইয়েরা! পাকিস্তানি জিহাদ ও হিন্দের জিহাদের উপর যে পরীক্ষা এসেছে, আমরা সকলে এর উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। আমরা এই নেয়ামত পেয়ে সন্তুষ্ট ও খুশি। আল্লাহ আমাদের ইস্তেকামাত দান করুন। এই পরীক্ষার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। আল্লাহর শপথ! হিজরত ও জিহাদের ময়দানে যেখানেই মুজাহিদীনরা দুশমনের সামনে অটল আছেন, দুশমনকে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ দেখাচ্ছেন, সেখানেই সর্বপ্রকার বিপদ মুসিবত, বোম্বিং, অতর্কিত আক্রমণ, উন্মাদনাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। যেখানেই এই গুরাবারা মুজাহিদীনের সুরতে, দাওয়াতের ময়দানে বীরত্বের সুরতে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকছেন সেখানেই দাজ্জালি মিডিয়ার সকল শয়তান ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা মিলে ইসলাম ও জিহাদের এই মুবারক দাওয়াতের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। জেল ও রিমান্ডে প্রবেশকারী মহান মুমিনগণ ফেরাউনের গোলামদের দ্বারা আবর্তিত সকল শাস্তির মুকাবিলায় অটল থাকছেন আর আহাদ আহাদ করে চিৎকার করছেন, তবু আত্মসমর্পন করছেন না। বিগড়ে যাচ্ছেন না। এই সকল মহন যুবকদের রক্ত দিয়ে আজ উপমহাদেশে ঈমান ও ইখলাসের এক মহান ইতিহাস লিপিবদ্ধ হচ্ছে। এটা সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রহ. এর কাফেলার ধারাবাহিকতা, এটা ইসলামী রেনেসার অগ্রপথিকদের নতুন অধ্যায়। এটা ঐ ইতিহাস, যার মাধ্যমে আল্লাহর বন্ধুদের এক বিরাট সংখ্যা ও আপনি লাভবান হবেন, আবার উম্মতের খেয়ানতকারী কিছু গাদ্দারও দৃষ্টিগোচর হবে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ উপমহাদেশের জিহাদের উপর আবর্তিত এই পরীক্ষা নেয়ামত স্বরূপ এসেছে। এটা রহমত, কেননা এমন খেয়ানতকারীদের জন্য জমীন অত্যন্ত কঠিন ও সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাদের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জিহাদের অন্তর্ভুক্ত থেকে তাদের জন্য খেলার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ! তারা এখন তাদের মতো অন্যদের দিকেই ফিরে যাচ্ছে। সুতরাং আমি সকল কল্যাণপ্রাপ্ত মুজাহিদ, জিহাদের দায়ী ও আনসারদের সম্বন্ধ করে বলছি; তাদের নিকট আবেদন করছি যে, ‘জরবে আযব অপারেশন’ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যত পরীক্ষা এসেছে ও আসছে, এই পরীক্ষাগুলো নিজের জন্য কল্যাণজনক মনে করবেন। এই পরীক্ষা পাকিস্তানের মুসলিমদের জন্য, হিন্দুস্তানের মুসলিমদের জন্য, ইমারতে ইসলমিয়া আফগানিস্তানের মুবারক কাফেলার মুজাহিদ ও তাদের সহযোগী জনসাধারণের জন্য। এই পরীক্ষা কল্যাণজনক মনে করবেন।
    لَا تَحْسَبُوهُ شَرًّا لَكُمْ بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَكُمْ
    তোমরা এটাকে অকল্যাণকর মনে করবে না, বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।

    উপমহাদেশের জিহাদী আন্দোলনের গুরুত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখুন!
    পরবর্তী আবেদন এই যে, আমার ভাইয়েরা! পাকিস্তানী জিহাদের এই মুবারক আন্দোলন এটা গাযওয়ায়ে হিন্দের আন্দোলন, তার গুরুত্ব ও মর্যাদা অন্তরে সদা জাগ্রত রাখুন। এটা কুফর ও ইলহাদের মুকাবিলায় ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতিরোধের আন্দোলন। এটা জিহাদি আন্দোলন, আমেরিকার গোলাম, দৌলত ও প্রসিদ্ধির পূজারী জেনারেলদের মুকাবিলায় মুখলিস, মুমিন ও মাজলুম জনতার আন্দোলন। এটা উপমহাদেশে আমেরিকা ও তার সাথে অঙ্গিকারাবদ্ধ মুশরিক হিন্দুদের অপশাসনের খতম করার আন্দোলন। এটা ঐ প্রতিরোধ আন্দোলন, যার উদ্দেশ্য হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এটা দ্বীনের হেফাজত, দ্বীনদারদের হেফাজত এবং উলামায়ে দ্বীনের হেফাজত করার আন্দোলন। এটা পাকিস্তানের মাজলুম জনতাকে হিন্দুস্তানের মুশরিক বাহিনীর মুকাবিলায় নিরাপত্তা বিধানের আন্দোলন। এটা আল্লাহর শাসন ব্যবস্থা, আল্লাহর জন্য ঘৃণা, আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও শত্রুতা পোষণের শরয়ী নীতিমালার উপর গড়ে উঠা আন্দোলন। এই আন্দোলন আমেরিকার কুফরি শাসন ব্যবস্থা খতম করা ও জিহাদী আন্দোলনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও তা স্থায়িত্ব করণের আন্দোলন। এটা ইসলাম বিজয়ের জন্য দাওয়াত ও জিহাদের শরয়ী পন্থা অবলম্বন এবং এর বিপরীতে শরীয়ত পরিপন্থী সকল পন্থা বর্জনের আন্দোলন। এটা কুফর, নিফাক, স্বার্থসিদ্ধি ও ধোঁকাবাজির বিপরীতে ঈমান, ইখলাস, সততা ও আমানতদারিতার আন্দোলন। এটা মূর্খতার বিপরীতে ইসলাম এবং ইনসাফের আন্দোলন। এটা ঐ আন্দোলন, যা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিভিন্ন গোত্র থেকে শুরু হয়ে করাচি, ইসলামাবাদ, ঢাকা, ফরিদপুর, দিল্লী, হায়দারাবাদ, রুকন, গুজরাট ও আসাম থেকে শুরু করে এখন বার্মায় কদম রাখছে। এই আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপনে লক্ষ লক্ষ মুসলমানের দোয়া, হাজার হাজার মুখলিসের ইখলাস এবং অগনিত আল্লাহর অলীদের অশ্রু ঝড়েছে এবং তাদের ‘আহ্’ ধ্বনি ও দোয়া শোনে আল্লাহ তা‘আলা একে দাঁড় করিয়েছেন। এই আন্দোলন আল্লাহ দাঁড় করিয়েছেন; এটা সেনাঘাঁটির ভেতরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। বরং এর শুরু হয়েছে সেনাঘাঁটির মোকাবিলায়। এটা তখন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, যখন জেনারেলরা আফগানিস্তান থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত জিহাদ বন্ধ করার ও ইসলাম মিটিয়ে দেওয়ার কসম খেয়েছিল। এটা তখন শুরু হয়েছে, যখন জাতির মা-বোনেরা বিকৃত জেনারেলদের মনোবাঞ্ছা পূরণের কারবার হয়ে গিয়েছিল। এই আন্দোলনের ঝাণ্ডা আযাদ গোত্রগুলো থেকে ঐ সময় উঠেছে, যখন আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের অপরাধে শিশু, বৃ্দ্ধ ও মহিলাদের পর্যন্ত জ্বালিয়ে ভষ্ম করা হয়েছিল। এজন্য আবেদন হলো হে আমার ভাইয়েরা! এই জিহাদী আন্দোলনকে কখনো এত হালকা মনে করবেন না যে, তা জেলখানার কালো কুঠরিতে শাস্তি ও দুর্ভোগের অতল গহবরে হারিয়ে যাবে, রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের শ্যেন দৃষ্টিতে পড়ে যাবে অথবা আইএসআই ও রাজিসি খবিস এজেন্সির তৎপরতা তা খতম করে ফেলবে। না! ইনশাআল্লাহ! এমনটা কখনো হবে না। এটা আল্লাহ হেফাজত করবেন। কেননা এটা উত্তম বৃক্ষ। এর ভিত্তি ঐ নেককার ব্যক্তিগণ স্থাপন করেছেন, যারা নিজেদের সব কিছু কুরবান করেছেন এবং আল্লাহর নিকট পৌঁছে গেছেন। এটা ঐ আল্লাহর অলীদের আন্দোলন, যারা আজও জিহাদে শামিল আছেন-আলহামদুলিল্লাহ! এবং তারা অগনিত। তারা আমাদের জামাতের ভেতরেও আছেন, আমাদের জামাতের বাহিরেও আছেন। সে সময় অতি নিকটে, যখন এ আন্দোলন সুদূর আফগানিস্তান থেকে দিল্লী ও ঢাকা পর্যন্ত তাগুতের ইশারায় চলমান তাদের পুতুল হয়ে নয় বরং এই সকল তাগুত ও শয়তানদের খেলাফ ইসলাম ও মুসলিম জনসাধাণের হেফাজত, তাদের হেদায়াত এবং তাদের কল্যাণকামী এবং মহান আন্দোলন রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ! শাহ আব্দুল আযীয ও সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রহ.-এর ইসলামী উপমহাদেশের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রহ.-এর কাফেলা দিল্লী থেকে কান্দাহার, সিন্ধু থেকে পেশাওয়ার এবং বালাকোট পযন্ত মাটি অনুসন্ধান করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে, আমাদের জামাতকে এবং এই ভূমির অন্যান্য কল্যাণপ্রাপ্ত মুজাহিদগণকে এই মুবারক তাহরীক প্রতিষ্ঠা করার তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে এই আন্দোলনের জন্য কবুল করুন। এবং আল্লাহ এই মুবারক আন্দোলনের হক আদায় করার তাওফীকও আমাদের দান করুন। আল্লাহ আমাদের সকল মুজাহিদকে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের সকল মুসলমানের জন্য রহমত ও হেদায়াতের মাধ্যম হিসেবে মঞ্জুর করে নিন।
    আমীন! ইয়া রব্বাল আলামিন!!
    رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
    রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম
    وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
    ওয়াতুব আলাইনা ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রহীম।

    و صلى اللّٰه تعالى علٰى خيرِ خلقِهِ مُحَمَّدٍ و آلهِ و صحبه اجمعِيْن
    والسلام علیکم و رحمة اللّٰہ و برکاتہ
    আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ।
      আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন।
      কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

      Comment


      • #4
        যাযাকাল্লাহ ..!! খুবই উত্তম পোষ্ট..

        Comment


        • #5
          জাজাকাল্লাহ।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ।
            আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন।

            Comment


            • #7
              আসসালামুআলাইকুম ভাই আমাকে কোন ভাই কি এই পিডিফ উল্লেখিত কোরআন আয়াত গুলো দিতে পারবেন।

              Comment


              • #8
                মাশাআল্লাহ।
                আল্লাহ আমাদের বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
                ফিরে এসো দ্বীনের পথে।

                Comment

                Working...
                X