সম্মানিত একজন শাইখের তার ছাত্র কে উদ্দেশ্য করে একটি বার্তা। যা ফোরামের সকল ভাইদের জন্য বিশেষভাবে তালিবুল ইলম ভাইদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল।
"শোন তোমার মনে যেসব কথা আসছে তোমার জায়গায় আমি হলে হয়তো আরো অনেক কিছু আসতো। যে অবস্থায় তুমি এখন আছ সে অবস্থায় এসব অন্তরে আসাটাই স্বাভাবিক। কারণ, সৃষ্টিগত ভাবেই আমরা দূর্বল । خلق الانسان ضعيفا দুনিয়ার নগদ চাকচিক্যের প্রতি সৃষ্টিগত ভাবেই আমাদের দূর্বলতা রয়েছে: زين للناس حب الشهوات কম বেশি আমরা সবাই পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হই।
এর মূল কারণ কি জান?
এর মূল কারণ হচ্ছে, আসলে আমাদের কারো কাছেই দুনিয়ার হাকিকতটা ঐভাবে স্পষ্ট না যেভাবে স্পষ্ট ছিল আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। আমরা মুখে তো বলছি দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, এখানকার ইজ্জত সম্মান সব ক্ষণস্থায়ী, হায়াতটা যে কোন মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে, আল্লাহর জন্য আল্লাহর দ্বীনের জন্য যদি কিছু একটা করতে পারি তাহলে অনন্তকালের সফলতা পেয়ে যাব- এগুলো আসলে আমাদের মুখেই থাকে। কাজে প্রকাশ পায় না।
কিন্তু আল্লাহ তাঁর কিছু বান্দাকে জোর করে এমন কাজে লাগিয়ে দেন যার পরিণামে সে ঐ অনন্তকালের সফলতাটা পেয়ে যায়। আল্লাহর এ আচরণটা সবার সাথে হয় না। আল্লাহ দয়া করে, মেহেরবানি করে যাকে দেন কেবল সেই পায়।
আচ্ছা বলতো, বর্তমানে সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের যে দূরাবস্থা, ইসলামের যে অসহায় অবস্থা এ অবস্থায় যদি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় থাকতেন তাহলে তিনি আমাদের মধ্যে যারা মুফতী মুহাদ্দিস হওয়ার ধান্ধায় লেগে আছে তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দিতেন ? যিনি সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাসের ছোট ভাই উমায়ের ও রাফে‘ সামুরাকে সেই তখন যুদ্ধে যেতে বারণ করেননি বরং উৎসাহের সঙ্গে সাথে নিয়েছেন ভাবতো তিনি তোমাকে কী পরামর্শ দিতেন?
তিনি স্বশরীরে যদিও এখন নেই কিন্তু তিনি কি বাস্তবেও নেই? তাঁর কথা, তাঁর মনোভাব কি এখনও যিন্দা নয় ? তাঁর পথটা কি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয় ? তিনি কেন এই বাচ্চাগুলোকে নিয়ে গেলেন? কারণ একটাই, তাঁর কাছে দুনিয়ার হাকিকত দিনের সূর্যের মতই স্পষ্ট ছিল। তিনি জানতেন, বেশি বেশি অজানা জিনিস জানার চেয়ে যা জানা হয়েছে তা নিয়ে জান্নাতের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়াই হল প্রকৃত সফলতা। কারণ, এরা কয়দিন বাঁচবে কে জানে ? অতএব দেরি না করে এক্ষনি ঝাঁপিয়ে পড়াই হল বুদ্ধিমত্তা। এজন্যই নবীজী কাউকেই এ থেকে বারণ করতেন না। অথচ তখন মুফতী হওয়ার, মুহাদ্দিস হওয়ার দরকার ছিল। এটাই হল নবীজীর বুঝ।
বলতো, আসলে ইলম কীসের নাম ?বর্তমানে ইলম বলে যা মনে করা হয় যে অনেক কিছু জানা, অনেক হাদীস জানা, আচ্ছা বলতো, এসব যদি এতই আগ্রহের জিনিস হতো তাহলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাফে, সামুরা কে কেন তা বুঝালেন না ?
বলতো, তোমার সাথীরা অনেক জানার পর যদি তাদের অবস্থা হয় أن الله يحول بين المرء وقلبه কী হবে তাদের পরিণতি ?
আর তুমি যদি استجيبوا এই ডাকে সাড়া দেয়ার কারণে কিছু একটা হওয়ার আগেই হযরত মুসআব, সুমাইয়া, হামযা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)দের মত চলে যাও তাহলে তুমি কি ঠকে যাবে ? ওখানে গিয়ে কে আফসোস করবে ? তুমি না তোমার সাথীরা ? আফসোস তো আমরা সবাই করবো। কিন্তু কার আফসোসটা বেশি হবে ?
হাদীসে যে এসেছে, ওখানে ‘আহলে আফিয়াহ’ রা আফসোস করে বলবে হায়! হায়! আমাদের শরীর যদি কেঁচি দিয়ে কাটা হত তাহলে তো ‘আহলে বালা’ দের মত আজ আমরাও পুরস্কার পেতাম।
বলতো, এ ঘটনাটা কি ঘটবে না ? আফসোস কি আমরা করবো না ? করবো, অবশ্যই করবো। আমি করবো, তুমি করবে, আমরা সবাই করবো। এবার বল, আমাদের উপর যা যাচ্ছে এসব কারণে আফসোসটা একটু হলেও কি কম হবে না ?
শোন! আমরা যে (আলহামদুলিল্লাহ) হকের উপর আছি , এ মুহূর্তে আমাদের কাছ থেকে আল্লাহ যা চাচ্ছেন ঠিক সে পথেই হাঁটার চেষ্টা করছি তা তো ঠিক এমনই নিশ্চিত, যেমন দিনের সূর্য, তাইনা ? তাই যদি হয় তাহলে শোন, আল্লাহ কখনোই আমাদেরকে রিযিকের জন্য লাঞ্চিত করবেন না ইনশাআল্লাহ। কষ্টে হয়তো পড়তে পারি কিন্তু তা হবে ইজ্জতের সাথে। আর পুরস্কার তো আছেই ইনশাআল্লাহ। মন কখনও ছোট করো না। জিতবো ইনশাআল্লাহ আমরাই।
তুমি কি মনে কর, তোমার সাথীরা মাদরাসায় পড়িয়ে খুব ইজ্জতের সাথে থাকবে ? না কক্ষনোই না। আমাদের তো জানা আছে ভাই! কী মোআমালা সেখানে হয়।
তুমি যদি পড়ও বেশির চেয়ে বেশি কীই বা হতে পারবে? যারা পড়ছে কীইবা হতে পারবে ? তারা কি পারবে মোল্লা ওমরের মত হতে ? বিন লাদেনের মত হতে, শাইখ আইমানের মত হতে ?
লক্ষ আলেম মুফতী মুহাদ্দিস মিলেও তাদের একজনের সমান হতে পারবে ?
বলতো, তাঁরা কি শুরুতে জানতেন যে এক সময় তাঁরা এমন হয়ে যাবেন? তাঁদেরও তো কত কিছু কুরবানি দিতে হয়েছে?
তুমি সামনে কয়দিন, কয় বছর বাঁচবে জান না।
তুমি যা করছ তা সঠিক। সবারই করা দরকার ছিল। কিন্তু অধিকাংশই করছে না। এ কারণেই তোমার কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু মর্যাদা ... আল্লাহু আকবার।
বলতো, তুমি যদি থাকতে জিহাদের কোন ভূমিতে, আর দেখতে তোমার সাথীরা সবাই ময়দানে যাচ্ছে, তোমার আব্বা যাচ্ছে, তোমার উস্তাদরাও যাচ্ছে, তখন তুমিও যেতে, নিশ্চয় যেতে, পরিবেশটাই এমন। কিন্তু বলতো, তখন মর্যাদা কি এমনই পেতে যেমনটা এখন আমরা আল্লাহর কাছে আশা করি?
দ্বীনের একই কাজে যখন যেখানে কষ্ট বেশি, বাহ্যিক ফলাফল কম, তখন সেখানে মর্যাদাও বেশি, তাইনা ?
لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
প্রতিকুলতায় থেকে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস আর দ্বীনের জন্য কোরবানীর মূল্যায়নটা আল্লাহর নিকটে কি পর্যায়ের হবে সেটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়।
... ... فَإِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامًا الصَّبْرُ فِيهِنَّ مِثْلُ القَبْضِ عَلَى الجَمْرِ، لِلْعَامِلِ فِيهِنَّ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلًا يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِكُمْ» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ المُبَارَكِ: وَزَادَنِي غَيْرُ عُتْبَةَ - قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَجْرُ خَمْسِينَ رَجُلًا مِنَّا أَوْ مِنْهُمْ. قَالَ: «بَلْ أَجْرُ خَمْسِينَ رَجُلًا مِنْكُمْ»: (ترمذي ، ابو داود)
আরেক হাদীসে এসেছে:
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " طُوبَى لِمَنْ رَآنِي وَآمَنَ بِي، وَطُوبَى لِمَنْ آمَنَ بِي وَلَمْ يَرَنِي سَبْعَ مِرَارٍ. (مسند احمد)
পুরো হিন্দে একসময় কাজ তো উঠবেই ইনশাআল্লাহ। তোমরা যারা দালানের একদম নিচে নিজেদেরকে বিলীন করে দিচ্ছ দুনিয়া হয়তো জানবে না [জানার প্রয়োজনও নাই], কিন্তু আল্লাহর কাছে তোমাদের মত ভাইদের মর্যাদা ... আল্লাহু আকবার। কাজ যত গোপনে হয়, ইখলাছ তত বেশি হয়, এর পাওয়ারও তত বেশি। মুসলিম শরীফের এক হাদীসে এসেছে:
ان الله يحب العبد التقي الغني الخفيّ
যত কষ্ট, তত বড় মর্যাদা। যত সুবিধা তত মাহরূমী।
এ যুগে আল্লাহ যে আমাদের মত গুনাহগারদেরকে দ্বীনের এ বুঝটা দিয়েছেন তা কতবড় মেহেরবানি। এর শোকরিয়া হিসেবে নিজের সব কুরবান করে দিলেও তো কমই হবে। সত্যিই কম হবে। এটা আমরা পুরোপুরি বুঝবো ওপারে গেলে, তাই না ?
ভাই! যে কথাগুলো লিখলাম জানি কথাগুলো তুমিও জান, বরং আরো ভাল জান। কারণ সরাসরি ময়দানে থেকে কোরআন হাদীসের যে বাস্তব জ্ঞান হয় সেটা তোমার আমাদের চেয়ে বেশি। আমাদের উস্তাদে মুহতারাম মাওলানা ... দা:বা: বলতেন, কোরআন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হয়েছে- জিহাদে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে, ময়দানে থাকা অবস্থায়, ময়দান থেকে ফেরার পথে। আর এ অবস্থাটা তো মাদানী জিন্দেগীর হর-হামেশার চিত্র। তাই যে কোরআন এসকল পরিস্থিতিতে নাযিল হলো, সে কোরআন ভালভাবে বুঝে আসবে সেই পরিস্থিতিতে গেলেই। আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে তোমরা সেসব পরিস্থিতিতেই আছ। তাই বলছি, কোরআন হাদীসের আসল জ্ঞান তো মাদরাসার রসমী দরসে উপস্থিত না থেকেও সেসব ময়দানে তোমরাই হাছিল করছ।
তারপরও এই জানা কথাগুলোই যখন মোযাকারা হয় তখন বক্তা, শ্রোতা, লেখক, পাঠক সবার মধ্যেই প্রভাব পড়ে। শুধু এ উদ্দেশ্যেই কথাগুলো লিখা।
আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতের এই কাঁটাযুক্ত পথে দৃঢ়পদ থেকে জান্নাতে পৌঁছান। আমীন।"
"শোন তোমার মনে যেসব কথা আসছে তোমার জায়গায় আমি হলে হয়তো আরো অনেক কিছু আসতো। যে অবস্থায় তুমি এখন আছ সে অবস্থায় এসব অন্তরে আসাটাই স্বাভাবিক। কারণ, সৃষ্টিগত ভাবেই আমরা দূর্বল । خلق الانسان ضعيفا দুনিয়ার নগদ চাকচিক্যের প্রতি সৃষ্টিগত ভাবেই আমাদের দূর্বলতা রয়েছে: زين للناس حب الشهوات কম বেশি আমরা সবাই পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হই।
এর মূল কারণ কি জান?
এর মূল কারণ হচ্ছে, আসলে আমাদের কারো কাছেই দুনিয়ার হাকিকতটা ঐভাবে স্পষ্ট না যেভাবে স্পষ্ট ছিল আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। আমরা মুখে তো বলছি দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, এখানকার ইজ্জত সম্মান সব ক্ষণস্থায়ী, হায়াতটা যে কোন মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে, আল্লাহর জন্য আল্লাহর দ্বীনের জন্য যদি কিছু একটা করতে পারি তাহলে অনন্তকালের সফলতা পেয়ে যাব- এগুলো আসলে আমাদের মুখেই থাকে। কাজে প্রকাশ পায় না।
কিন্তু আল্লাহ তাঁর কিছু বান্দাকে জোর করে এমন কাজে লাগিয়ে দেন যার পরিণামে সে ঐ অনন্তকালের সফলতাটা পেয়ে যায়। আল্লাহর এ আচরণটা সবার সাথে হয় না। আল্লাহ দয়া করে, মেহেরবানি করে যাকে দেন কেবল সেই পায়।
আচ্ছা বলতো, বর্তমানে সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের যে দূরাবস্থা, ইসলামের যে অসহায় অবস্থা এ অবস্থায় যদি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় থাকতেন তাহলে তিনি আমাদের মধ্যে যারা মুফতী মুহাদ্দিস হওয়ার ধান্ধায় লেগে আছে তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দিতেন ? যিনি সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাসের ছোট ভাই উমায়ের ও রাফে‘ সামুরাকে সেই তখন যুদ্ধে যেতে বারণ করেননি বরং উৎসাহের সঙ্গে সাথে নিয়েছেন ভাবতো তিনি তোমাকে কী পরামর্শ দিতেন?
তিনি স্বশরীরে যদিও এখন নেই কিন্তু তিনি কি বাস্তবেও নেই? তাঁর কথা, তাঁর মনোভাব কি এখনও যিন্দা নয় ? তাঁর পথটা কি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয় ? তিনি কেন এই বাচ্চাগুলোকে নিয়ে গেলেন? কারণ একটাই, তাঁর কাছে দুনিয়ার হাকিকত দিনের সূর্যের মতই স্পষ্ট ছিল। তিনি জানতেন, বেশি বেশি অজানা জিনিস জানার চেয়ে যা জানা হয়েছে তা নিয়ে জান্নাতের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়াই হল প্রকৃত সফলতা। কারণ, এরা কয়দিন বাঁচবে কে জানে ? অতএব দেরি না করে এক্ষনি ঝাঁপিয়ে পড়াই হল বুদ্ধিমত্তা। এজন্যই নবীজী কাউকেই এ থেকে বারণ করতেন না। অথচ তখন মুফতী হওয়ার, মুহাদ্দিস হওয়ার দরকার ছিল। এটাই হল নবীজীর বুঝ।
বলতো, আসলে ইলম কীসের নাম ?বর্তমানে ইলম বলে যা মনে করা হয় যে অনেক কিছু জানা, অনেক হাদীস জানা, আচ্ছা বলতো, এসব যদি এতই আগ্রহের জিনিস হতো তাহলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাফে, সামুরা কে কেন তা বুঝালেন না ?
বলতো, তোমার সাথীরা অনেক জানার পর যদি তাদের অবস্থা হয় أن الله يحول بين المرء وقلبه কী হবে তাদের পরিণতি ?
আর তুমি যদি استجيبوا এই ডাকে সাড়া দেয়ার কারণে কিছু একটা হওয়ার আগেই হযরত মুসআব, সুমাইয়া, হামযা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)দের মত চলে যাও তাহলে তুমি কি ঠকে যাবে ? ওখানে গিয়ে কে আফসোস করবে ? তুমি না তোমার সাথীরা ? আফসোস তো আমরা সবাই করবো। কিন্তু কার আফসোসটা বেশি হবে ?
হাদীসে যে এসেছে, ওখানে ‘আহলে আফিয়াহ’ রা আফসোস করে বলবে হায়! হায়! আমাদের শরীর যদি কেঁচি দিয়ে কাটা হত তাহলে তো ‘আহলে বালা’ দের মত আজ আমরাও পুরস্কার পেতাম।
বলতো, এ ঘটনাটা কি ঘটবে না ? আফসোস কি আমরা করবো না ? করবো, অবশ্যই করবো। আমি করবো, তুমি করবে, আমরা সবাই করবো। এবার বল, আমাদের উপর যা যাচ্ছে এসব কারণে আফসোসটা একটু হলেও কি কম হবে না ?
শোন! আমরা যে (আলহামদুলিল্লাহ) হকের উপর আছি , এ মুহূর্তে আমাদের কাছ থেকে আল্লাহ যা চাচ্ছেন ঠিক সে পথেই হাঁটার চেষ্টা করছি তা তো ঠিক এমনই নিশ্চিত, যেমন দিনের সূর্য, তাইনা ? তাই যদি হয় তাহলে শোন, আল্লাহ কখনোই আমাদেরকে রিযিকের জন্য লাঞ্চিত করবেন না ইনশাআল্লাহ। কষ্টে হয়তো পড়তে পারি কিন্তু তা হবে ইজ্জতের সাথে। আর পুরস্কার তো আছেই ইনশাআল্লাহ। মন কখনও ছোট করো না। জিতবো ইনশাআল্লাহ আমরাই।
তুমি কি মনে কর, তোমার সাথীরা মাদরাসায় পড়িয়ে খুব ইজ্জতের সাথে থাকবে ? না কক্ষনোই না। আমাদের তো জানা আছে ভাই! কী মোআমালা সেখানে হয়।
তুমি যদি পড়ও বেশির চেয়ে বেশি কীই বা হতে পারবে? যারা পড়ছে কীইবা হতে পারবে ? তারা কি পারবে মোল্লা ওমরের মত হতে ? বিন লাদেনের মত হতে, শাইখ আইমানের মত হতে ?
লক্ষ আলেম মুফতী মুহাদ্দিস মিলেও তাদের একজনের সমান হতে পারবে ?
বলতো, তাঁরা কি শুরুতে জানতেন যে এক সময় তাঁরা এমন হয়ে যাবেন? তাঁদেরও তো কত কিছু কুরবানি দিতে হয়েছে?
তুমি সামনে কয়দিন, কয় বছর বাঁচবে জান না।
তুমি যা করছ তা সঠিক। সবারই করা দরকার ছিল। কিন্তু অধিকাংশই করছে না। এ কারণেই তোমার কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু মর্যাদা ... আল্লাহু আকবার।
বলতো, তুমি যদি থাকতে জিহাদের কোন ভূমিতে, আর দেখতে তোমার সাথীরা সবাই ময়দানে যাচ্ছে, তোমার আব্বা যাচ্ছে, তোমার উস্তাদরাও যাচ্ছে, তখন তুমিও যেতে, নিশ্চয় যেতে, পরিবেশটাই এমন। কিন্তু বলতো, তখন মর্যাদা কি এমনই পেতে যেমনটা এখন আমরা আল্লাহর কাছে আশা করি?
দ্বীনের একই কাজে যখন যেখানে কষ্ট বেশি, বাহ্যিক ফলাফল কম, তখন সেখানে মর্যাদাও বেশি, তাইনা ?
لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
প্রতিকুলতায় থেকে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস আর দ্বীনের জন্য কোরবানীর মূল্যায়নটা আল্লাহর নিকটে কি পর্যায়ের হবে সেটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়।
... ... فَإِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامًا الصَّبْرُ فِيهِنَّ مِثْلُ القَبْضِ عَلَى الجَمْرِ، لِلْعَامِلِ فِيهِنَّ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلًا يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِكُمْ» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ المُبَارَكِ: وَزَادَنِي غَيْرُ عُتْبَةَ - قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَجْرُ خَمْسِينَ رَجُلًا مِنَّا أَوْ مِنْهُمْ. قَالَ: «بَلْ أَجْرُ خَمْسِينَ رَجُلًا مِنْكُمْ»: (ترمذي ، ابو داود)
আরেক হাদীসে এসেছে:
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " طُوبَى لِمَنْ رَآنِي وَآمَنَ بِي، وَطُوبَى لِمَنْ آمَنَ بِي وَلَمْ يَرَنِي سَبْعَ مِرَارٍ. (مسند احمد)
পুরো হিন্দে একসময় কাজ তো উঠবেই ইনশাআল্লাহ। তোমরা যারা দালানের একদম নিচে নিজেদেরকে বিলীন করে দিচ্ছ দুনিয়া হয়তো জানবে না [জানার প্রয়োজনও নাই], কিন্তু আল্লাহর কাছে তোমাদের মত ভাইদের মর্যাদা ... আল্লাহু আকবার। কাজ যত গোপনে হয়, ইখলাছ তত বেশি হয়, এর পাওয়ারও তত বেশি। মুসলিম শরীফের এক হাদীসে এসেছে:
ان الله يحب العبد التقي الغني الخفيّ
যত কষ্ট, তত বড় মর্যাদা। যত সুবিধা তত মাহরূমী।
এ যুগে আল্লাহ যে আমাদের মত গুনাহগারদেরকে দ্বীনের এ বুঝটা দিয়েছেন তা কতবড় মেহেরবানি। এর শোকরিয়া হিসেবে নিজের সব কুরবান করে দিলেও তো কমই হবে। সত্যিই কম হবে। এটা আমরা পুরোপুরি বুঝবো ওপারে গেলে, তাই না ?
ভাই! যে কথাগুলো লিখলাম জানি কথাগুলো তুমিও জান, বরং আরো ভাল জান। কারণ সরাসরি ময়দানে থেকে কোরআন হাদীসের যে বাস্তব জ্ঞান হয় সেটা তোমার আমাদের চেয়ে বেশি। আমাদের উস্তাদে মুহতারাম মাওলানা ... দা:বা: বলতেন, কোরআন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হয়েছে- জিহাদে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে, ময়দানে থাকা অবস্থায়, ময়দান থেকে ফেরার পথে। আর এ অবস্থাটা তো মাদানী জিন্দেগীর হর-হামেশার চিত্র। তাই যে কোরআন এসকল পরিস্থিতিতে নাযিল হলো, সে কোরআন ভালভাবে বুঝে আসবে সেই পরিস্থিতিতে গেলেই। আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে তোমরা সেসব পরিস্থিতিতেই আছ। তাই বলছি, কোরআন হাদীসের আসল জ্ঞান তো মাদরাসার রসমী দরসে উপস্থিত না থেকেও সেসব ময়দানে তোমরাই হাছিল করছ।
তারপরও এই জানা কথাগুলোই যখন মোযাকারা হয় তখন বক্তা, শ্রোতা, লেখক, পাঠক সবার মধ্যেই প্রভাব পড়ে। শুধু এ উদ্দেশ্যেই কথাগুলো লিখা।
আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতের এই কাঁটাযুক্ত পথে দৃঢ়পদ থেকে জান্নাতে পৌঁছান। আমীন।"
Comment