পবিত্র শহর জেরুসালেমের গুরুত্ব বিশ্বজনীন। এটা বিশ্ব রাজনীতির পীঠস্থান, বিশ্বশান্তি ও অশান্তির সূতিকাগার। জেরুসালেম শান্ত তো পুরো বিশ্বশান্ত, জেরুসালেম অস্থির তো অস্থির পুরো জগত। এখন জেরুসালেমকে ইসরাইল তার নিজস্ব সম্পত্তি মনে করে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীসহ নেতারা অহরহ বলে থাকেন, তিন হাজার বছর আগে ইহুদিরাই নাকি গড়েছে এ শহর। তাই জেরুসালেম শুধুই ইহুদিদের। কিন্তু সভ্যতার সরলতম ইতিহাসও স্যা দেয় যে, এই এলাকায় মানববসতির শুরু ইহুদি জাতির জন্মেরও বহুকাল আগে। হজরত ইব্রাহিম আ: ছিলেন সেই আদি প্রজন্মগুলোরই অন্যতম প্রধান পুরুষ। তিনি জন্মে ছিলেন আজ থেকে কমপে পাঁচ হাজার বছর আগে এবং হেবরন নগরীতে তাঁর কবর এখনো অত রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে।
পবিত্র কুরআনেও এ সত্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ইব্রাহিম ইহুদি বা খ্রিষ্টান ছিলেন না, মুশরিকদের দলভুক্তও ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক আল্লাহতে আত্মসমর্পণকারী খাঁটি মুসলমান (সূরা ইমরান ৩: আয়াত ৬৭)। ইব্রাহিম আ:-এর সময় যে ইহুদি-খ্রিষ্টান ধারার শুরুই হয়নি, তখন তাদের অস্তিত্বই যে তখন ছিল না এ আয়াতে সে দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তিন হাজার বছর আগে জেরুসালেম সৃষ্টির হিসাবটাই আসলে ভুয়া।
বলা আবশ্যক, জেরুসালেমের মতো পাথুরে পাহাড়ি এলাকায় শহর গড়া দূরে থাক, বসবাস কারার চিন্তাও কোনো মানুষের মাথায় আসার কথা নয়। পরম স্রষ্টা আল্লাহ পাকের সরাসরি নির্দেশনা ছাড়া এই এলাকার সন্ধান পাওয়াও ছিল মানুষের সাধ্যের বাইরে। এখানে মানববসতির সূচনাটা ছিল বস্তুত কাবাঘর ও মক্কা নগরীর শুরুর মতো। কাবার মতোই জেরুসালেমের মতো রু এলাকাতেও মসজিদুল আকসা এবং মানববসতি গড়ে উঠেছিল আল্লাহ তায়ালারই প্রত্য নির্দেশনাতে, এ সংক্রান্ত সহি হাদিসগুলো সে কথাই বলে এবং সেটাই প্রকৃত সত্য।
ইহুদি জাতির উৎপত্তি আরো বহুকাল পরে মূলত হজরত ইব্রাহিম বংশের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মের নবী হজরত ইউসুফ আ: এবং তাঁর এগারো ভাইয়ের হাত ধরে। এদের মধ্যে বিন-ইয়ামিন ছাড়া অন্য দশজন ছিল ইউসুফ আ:-এর সৎভাই। এই বারো ভাই থেকেই শুরু বনি ইসরাইল তথা ইহুদিদের বারো গোত্রের। এরাই মিসরে আটকা পড়েছিল ফেরাউনের দাসত্বে। মূসা আ: তাদের মুক্ত করেছিলেন আল্লাহ পাকের নবী ও সব গোত্রের একক নেতা হিসেবে। লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে এরা বসতি গেড়ে ছিল সিনাই উপত্যকায়। তার আশপাশে ইয়াহুদ শহর এখনো বিদ্যমান।
সম্ভবত হুদ আ:-এর নামে অথবা সে নামের কোনো গোত্রপ্রধানের নাম থেকে হয়ে থাকবে ওই শহরের নাম। সেখান থেকেই বোধ করি শুরু ‘ইহুদি’ পরিচয়ের। যত দূর জানা যায় ‘বনি ইসরাইল’ নামেরও উৎপত্তি কোনো এক আল্লাহপ্রেমী বুজুর্গের নাম থেকে। মূসা আ:-এর পরও বনি ইসরাইল জাতি ওই পার্বত্য এলাকায় ছিল আরো বহু বছর। তারা অন্য নবীদের সাথেও অব্যাহতভাবে অবাধ্যতা করছিল যেমন করেছিল মূসা আ:-এর সাথে। তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ একের পর এক নবী পাঠিয়েছেন ওই এলাকায়। সেই নবীদেরই নেতৃত্বে একপর্যায়ে মুশরিকদের হাত থেকে জেরুসালেম পুনরুদ্ধার করে আল্লাহর নবী ও নবী সহযোগীরা তথা তৎকালীন মুসলমানেরা এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে মুসলিম শাসন। যারা নবীদের সাথে যোগ দেয়নি তারা রয়ে গিয়েছিল অবিশ্বাসী ও অমুসলিম ইহুদি হিসেবে। আল্লাহর নবীবিরোধী ইহুদি ধারার সূত্রপাত বস্তুত এভাবেই।
উল্লেখ্য, যে মক্কা-মদিনাসহ জেরুসালেম ও এই শহরগুলোর আশপাশের বিস্তৃত অঞ্চল আল্লাহ পাকের বিশেষ এলাকার অন্তর্ভুক্ত (২:১২৫; ৩:৯৬৯৭; ২২:২৬; ১৭:১; ৪৮:২৪ এবং এ সংক্রান্ত সহি হাদিসগুলো দ্রষ্টব্য)। এই অঞ্চল বস্তুত পে পৃথিবীর বুকে আল্লাহ তায়ালার রাজধানীবিশেষ। সে জন্য এই এলাকাতেই এসেছেন বিখ্যাত সব নবী-রাসূল। এখান থেকেই দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে আল্লাহর সব নির্দেশাবলি তথা কমান্ডস।
আর এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে দুনিয়া এবং হচ্ছে এখনো। আল্লাহ পাকের সেই অগণিত নবী-রাসূল এবং তাঁদের সহযোগীরাই মূলত ছিলেন এ অঞ্চল তথা জেরুসালেম গড়ে তোলার প্রধান কারিগর। সেই নবী-রাসূলদেরই অন্যতম ছিলেন হজরত দাউদ আ: এবং তাঁর সুযোগ্য পুত্র হজরত সোলায়মান আ:। ইহুদিরাও তা জানে ও মানে, তবে তাদের সেই মান্য করা নবীদের সময়কালে হয়ে ওঠেনি। কারণ নবীদের তাঁদের জীবদ্দশায় মেনে নিলে ইহুদিরা আর ইহুদি থাকত না, তারা মুসলমান হয়ে যেত।
অথচ সেই ইহুদিদের কাছেই হজরত ইব্রাহিম, ইউসুফ, মূসা, দাউদ ও সোলায়মান আ:সহ ওই অঞ্চলের সব নবী-রাসূল এবং সে সময়ের সব কুলীন ঈমানদার ও বুজুর্গ ব্যক্তিরা এখন অতি সম্মানিত। ইহুদিদের জাতীয় প্রতীক হিসেবে তাদের পতাকাতেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ডেভিড’ ‘স্রষ্টার’ তথা দাউদ আ:-এর তারকাচিহ্ন। এতে বোঝা যায় যে ইব্রাহিম আ:-এর মতো হজরত হুদ, ইয়াকুব, ইউসুফ, মূসা, দাউদ ও সোলায়মান আ:কেও ইহুদিরা তাদের নিজেদের জাতিভুক্ত বলেই মনে করে এসেছে সব সময়। কিন্তু পরম সত্যের চরম কথা হলো মহান আল্লাহ পাকের বিশিষ্ট ওই নবী-রাসূলগণ এলাকার বিচারে বৃহত্তর ইয়াহুদ অঞ্চলের অধিবাসী হয়তো ছিলেন, নির্দিষ্ট একটা গোত্রেও জন্মেছিলেন অবশ্যই; কিন্তু তাঁর কখনোই অবাধ্য ইহুদিদের দলভুক্ত ছিলেন না, বরং তাঁরা ছিলেন খাঁটি মুসলমান।
তাঁরা মুসলমান ছিলেন। কারণ তাঁরা বিশ্বস্ত ছিলেন এক আল্লাহর প্রতি, আল্লাহ পাকের সব হুকুম-আহকামের প্রতি, কাল ভেদে সেগুলোর পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রতি এবং অনুগত ছিলেন তাঁদের উত্তরসূরি অনাগত সব নবী-রাসূলসহ শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নবুয়তের প্রতিও। উল্লেখ্য, আল্লাহ পাকের নবী হওয়ার জন্য প্রথম শর্তই হলো মুসলমান হওয়া আর মুসলমান হওয়ার অন্যতম শর্ত আল্লাহ পাকের সব নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করা।
অর্থাৎ একালে মুসলমান হতে হলে যেমন অতীতের সব নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করা আবশ্যক, তেমনি অতীতের ঈমানদারেরাও বাধ্য ছিলেন তাদের আগের নবীরা এবং অব্যাহত পরের নবী থেকে শুরু করে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত সব ভবিষ্যৎ নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করতে। সে জন্যই অতীতের প্রত্যেক নবী তাঁদের নিজ নিজ উম্মতের কাছে বিস্তারিত বলেছেন, আরবের বুকে শেষ নবীর আগমনের বিষয়ে এবং তাদের নির্দেশ দিয়েছেন নিজেদের জীবদ্দশায় নবীজির দেখা পেলে সাথে সাথে অন্য সব নবুয়ত ছেড়ে নবীজির নবুয়তের অনুসারী হতে।
এ কারণেই হজরত ইব্রাহিম, ইউসুফ, মূসা, দাউদ ও সোলায়মান আ:সহ সব নবী-রাসূলই ছিলেন শুধুই মুসলমান এবং নিখাঁদ মুসলমান। বংশ ও আঞ্চলিক পরিচিতি তাঁদের অবশ্যই ছিল; কিন্তু তা কখনোই স্থান পায়নি তাঁদের বিশ্বজনীন মুসলিম পরিচয়ের ওপরে।
এই মুসলিম জাতিসত্তা বস্তুত একটা ‘গ্লোবাল কনসেপ্ট’। এটা দেশ, কাল বা এলাকাভিত্তিক জাতির মতো খণ্ডিত, ুদ্র বা বিচ্ছিন্ন কোনো জাতীয়তা নয়। যে মুসলিম, সে মূলত একজন ইউনিভার্সাল সিটিজেন তথা বিশ্বনাগরিক। কারণ আল্লাহ নিজে ইউনিভার্সাল, তাই তাঁর একান্ত অনুগতরাও স্বাভাবিকভাবেই ইউনিভার্সাল তথা বিশ্বজনীন হতে বাধ্য। নিজের দেশ, কাল এবং এলাকার পরিচয় ঠিক রেখেও এ ইউনিভার্সাল সিটিজেন হওয়া সম্ভব।
তাই একজন মুসলমানের থাকতে পারে বাংলাদেশী, ভারতীয়, ইউরোপিয়ান, আমেরিকান বা আরবীয় পরিচয়। সে হতে পারে মুসলিম বাংলাদেশী, মুসলিম আরব অথবা মুসলিম আমেরিকান। অর্থাৎ প্রথমে সে একজন মুসলমান তারপর অন্য কিছু। এটাই একজন প্রকৃত মুসলমানের তথা সত্যিকারের ইউনিভার্সাল সিটিজেনের পরিচয়। এমন সিটিজেনদের জন্য বিশ্বের সব এলাকাই নিজস্ব এলাকা এবং সব জাতিই আপন জাতি তথা মানবজাতি। এটা বিশ্বভ্রাতৃত্বের মূল কথা। একতার এই তত্ত্ব আল্লাহ পাক অনাদিকাল ধরে মানুষের মধ্যে প্রচার করেছেন তাঁর নবী-রাসূলদের মাধ্যমে।
দুনিয়ার বুকে আল্লাহ পাকের সব নবী-রাসূল এবং তাঁদের সাহাবিরা সবাই ছিলেন এই বিশ্বনাগরিক, যদিও তাদের জন্ম-কর্মের জন্য ছিল নির্দিষ্ট এলাকা, ছিল নিজস্ব জনগণ ও ভাষা। তারা বিশ্বনাগরিক ছিলেন, কারণ তাঁদের বক্তব্য ও জীবনব্যবস্থা ছিল বিশ্বজনীন এবং তা প্রযোজ্য ছিল জগতব্যাপী। বিশ্বায়নের প্রয়োজনেই তাঁদের মিশনগুলো সবসময়ই ছাড়িয়ে গেছে তাদের নিজস্ব এলাকার সীমানা এবং ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। সে জন্যই তাঁদের সাথে নির্বিবাদে যুক্ত হতে পেরেছে বিশ্বের সব এলাকার সব শ্রেণীর মানুষ। এরাই একত্রে লাভ করেছে সম্মিলিত মুসলিম জাতি ও জনতার পরিচিতি।
একইভাবে হজরত দাউদ ও সোলায়মান আ:-এর নেতৃত্বাধীন মুসলিম জাহানেও যুক্ত হয়েছিল তাঁদের কালের বিবিধ দল, উপদল, জাতি ও গোত্র। তেমন অন্তর্ভুক্তির উদাহরণ হিসেবে সাবার রানী কর্তৃক পুরো জাতিসহ হজরত সোলায়মান আ:-এর রাজত্বে একীভূত হওয়ার কাহিনী গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে পবিত্র আল কুরআনে (২৭:২৯-৪২ দ্রষ্টব্য)। এমনকি তৎকালীন ইয়াহুদ বা বনি ইসরাইল গোষ্ঠীরও যারা ঈমান এনেছিল হজরত দাউদ ও সোলায়মান আ:-এর প্রতি, তারা অধিভুক্ত হয়েছে মুসলিম জাতির মধ্যে। আর এ মুসলমানরাই আল্লাহর নবীদের প্রত্য তত্ত্বাবধানে বিকশিত করেছিল আদি নবীদের হাতে সৃষ্ট প্রাচীন জেরুসালেম নগরীকে, গড়ে তুলেছিলেন আধুনিক জেরুসালেম।
নতুন আঙ্গিকের এই জেরুসালেমকেই বোধ করি তারা তিন হাজার বছর আগের জেরুসালেম বলছেন। কিন্তু সেটার নির্মাণেও তারা ছিলেন না। কারণ মুসলমান না হওয়ার কারণে তারা থেকে গিয়েছিলেন তাদের মূল গোষ্ঠীর নামে তথা ইহুদি ও অন্যান্য জাতিসত্তা হিসেবে। তারা ছিল অমুসলিম আর আল্লাহর নবীদের যেকোনো কাজের বিরোধিতা করাই ছিল এই অমুসলিমদের সব সময়ের একমাত্র কাজ। তাই ওই ইহুদিরা যে আল্লাহর নবীদের জেরুসালেম গড়ার কাজে অংশ নেয়নি তা বলাইবাহুল্য। আজকের ইহুদিরা সেই অমুসলিম ইহুদিদেরই উত্তরসূরি। তাই জেরুসালেমের উপর এদের অধিকারের দাবি একেবারেই অসার ও ভিত্তিহীন।
উল্লেখ্য, এমন পাথুরে পাহাড়ি এলাকায় অট্টালিকা তৈরি করাও ছিল সে যুগের মানুষের বিদ্যা, বুদ্ধি ও শক্তির বাইরে। দুরূহ ওই কাজগুলো মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছিলেন পরম দয়াময় আল্লাহ পাক। এ ল্েয তিনি হজরত দাউদ আ:কে দিয়েছিলেন লোহা গালানোর বিশেষ মতা আর সোলায়মান আ:-এর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন তামার খনি। এ ছাড়া হজরত সোলায়মান আ:কে দেয়া হয়েছিল বিশাল দেহী শক্তিশালী জ্বিনদের ওপর পূর্ণ অধিকার, তারা সোলায়মান আ:-এর আদেশে অংশ নিতো কঠিন সব নির্মাণকাজে (৩৪:১০-১৩ দ্রষ্টব্য)। মহান আল্লাহ তায়ালার এসব দয়ার দান কাজে লাগিয়েই হজরত দাউদ-সোলায়মান তথা বাবা-ছেলে গড়ে তুলেছিলেন নয়নাভিরাম জেরুসালেম নগরী।
আল্লাহ পাকের সেই সব অপার রহমতের অনেক নমুনা এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সিনাই পর্বতমালাজুড়ে। সম্প্রতি সেখানে পাওয়া গেছে বহুকাল আগের তামার খনি, যাকে বলা হচ্ছে সোলায়মানের তামার খনি। ব্যাপক তামা উত্তোলনের চিহ্নও সেখানে বিদ্যমান এখনো। কিন্তু খনিগুলো এতই সরু ও দুর্গম যেকোনো মানুষের পে কোনোভাবেই সম্ভব নয় সেখান থেকে তামা বের করে তা শহর পর্যন্ত বহন করা, যা কি না সোলায়মান আ:-এর জন্য জ্বিন কর্তৃক তামা আহরণের কুরআনিক বিবরণীর সত্য তাকেই প্রতিষ্ঠিত করে (এ সংক্রান্ত নোভা ডকুমেন্টারি দ্রষ্টব্য)।
বলাইবাহুল্য যে আল্লাহ পাক তাঁর এসব বিশেষ দয়া ও ক্ষমতা কখনোই কোনো আল্লাহ-বিরোধী অমুসলিমকে দেন না। কোনো বিধর্মীর পে চেষ্টা করেও তা লাভ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর যত জ্ঞান-বিজ্ঞান, আবিষ্কার-স্থাপনা আছে তার সবই মূল কাঠামো গড়ে উঠেছে এক আল্লাহতে, বিশ্বস্ত কোনো না কোনো মুসলমানের হাতে, আল্লাহ পাকেরই একান্ত দয়ার দান তথা পুরস্কার হিসেবে। আর সেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত ধ্বংসাত্মক ও তিকর অপপ্রয়োগ সবই হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন তথা আল্লাহ পাকের করুণা লাভে অম অমুসলিমদের হাতে।
এ জন্যই আল্লাহ পাকের সংরতি এলাকায় অনুপম জেরুসালেম নগরীর নির্মাণ যে ছিল শুধু মুসলমানদেরই একক কীর্তি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে আল্লাহ পাকের অবাধ্য কোনো গোষ্ঠীর অংশ নেয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। তাই জেরুসালেমের ওপর উগ্র ইহুদিবাদীদের কর্তৃত্বের দাবি নিতান্তই অবাস্তব।
ইসরাইলি নেতৃত্বের এমন মিথ্যা বাগাড়ম্বর নতুন কিছু নয়। এই মিথ্যা অহমিকাই ছিল ইহুদি জাতির আজন্মকালের সঙ্গী। অহমিকার কারণেই তারা প্রত্যেক নবীর সাথে করেছে দুশমনি আর নবীর মৃত্যুর পর গায়ের জোরে তাঁকে প্রচার করেছে নিজেদের লোক হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা অস্বীকার করেছে শেষ নবী রাসূলুল্লাহ সা:কেও।
নবীজিকে মেনে নিজেদের ইহুদি পরিচয় ঘুচিয়ে মুসলমান হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র অল্প কয়েকজন, বাকিরা আকড়ে থেকেছে তাদের অমুসলিম ইহুদি পরিচিতিকেই শুধু তাদের চরম আত্মগরিমার কারণে, যদিও এই নবীজির আশাতেই তারা তাদের গ্রন্থের নির্দেশনা মতো মদিনাতে বসতি গেড়ে অপো করছিল যুগের পর যুগ ধরে। তারাই কি না এখন নিজেদের দাবি করছে স্রষ্টার প্রিয়পাত্র হিসেবে আর গলাবাজি করে বলে বেড়াচ্ছে যে জেরুসালেমসহ সব কিছুই তাদের হাতে গড়া, তাই সেসব সবই শুধু তাদের। কুটিল এই জাতির এহেন মিথ্যা ধান্ধাবাজি আর উৎপীড়ন বোধ করি পৃথিবী শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর শেষ হবে না।
পবিত্র কুরআনেও এ সত্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ইব্রাহিম ইহুদি বা খ্রিষ্টান ছিলেন না, মুশরিকদের দলভুক্তও ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক আল্লাহতে আত্মসমর্পণকারী খাঁটি মুসলমান (সূরা ইমরান ৩: আয়াত ৬৭)। ইব্রাহিম আ:-এর সময় যে ইহুদি-খ্রিষ্টান ধারার শুরুই হয়নি, তখন তাদের অস্তিত্বই যে তখন ছিল না এ আয়াতে সে দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তিন হাজার বছর আগে জেরুসালেম সৃষ্টির হিসাবটাই আসলে ভুয়া।
বলা আবশ্যক, জেরুসালেমের মতো পাথুরে পাহাড়ি এলাকায় শহর গড়া দূরে থাক, বসবাস কারার চিন্তাও কোনো মানুষের মাথায় আসার কথা নয়। পরম স্রষ্টা আল্লাহ পাকের সরাসরি নির্দেশনা ছাড়া এই এলাকার সন্ধান পাওয়াও ছিল মানুষের সাধ্যের বাইরে। এখানে মানববসতির সূচনাটা ছিল বস্তুত কাবাঘর ও মক্কা নগরীর শুরুর মতো। কাবার মতোই জেরুসালেমের মতো রু এলাকাতেও মসজিদুল আকসা এবং মানববসতি গড়ে উঠেছিল আল্লাহ তায়ালারই প্রত্য নির্দেশনাতে, এ সংক্রান্ত সহি হাদিসগুলো সে কথাই বলে এবং সেটাই প্রকৃত সত্য।
ইহুদি জাতির উৎপত্তি আরো বহুকাল পরে মূলত হজরত ইব্রাহিম বংশের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মের নবী হজরত ইউসুফ আ: এবং তাঁর এগারো ভাইয়ের হাত ধরে। এদের মধ্যে বিন-ইয়ামিন ছাড়া অন্য দশজন ছিল ইউসুফ আ:-এর সৎভাই। এই বারো ভাই থেকেই শুরু বনি ইসরাইল তথা ইহুদিদের বারো গোত্রের। এরাই মিসরে আটকা পড়েছিল ফেরাউনের দাসত্বে। মূসা আ: তাদের মুক্ত করেছিলেন আল্লাহ পাকের নবী ও সব গোত্রের একক নেতা হিসেবে। লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে এরা বসতি গেড়ে ছিল সিনাই উপত্যকায়। তার আশপাশে ইয়াহুদ শহর এখনো বিদ্যমান।
সম্ভবত হুদ আ:-এর নামে অথবা সে নামের কোনো গোত্রপ্রধানের নাম থেকে হয়ে থাকবে ওই শহরের নাম। সেখান থেকেই বোধ করি শুরু ‘ইহুদি’ পরিচয়ের। যত দূর জানা যায় ‘বনি ইসরাইল’ নামেরও উৎপত্তি কোনো এক আল্লাহপ্রেমী বুজুর্গের নাম থেকে। মূসা আ:-এর পরও বনি ইসরাইল জাতি ওই পার্বত্য এলাকায় ছিল আরো বহু বছর। তারা অন্য নবীদের সাথেও অব্যাহতভাবে অবাধ্যতা করছিল যেমন করেছিল মূসা আ:-এর সাথে। তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ একের পর এক নবী পাঠিয়েছেন ওই এলাকায়। সেই নবীদেরই নেতৃত্বে একপর্যায়ে মুশরিকদের হাত থেকে জেরুসালেম পুনরুদ্ধার করে আল্লাহর নবী ও নবী সহযোগীরা তথা তৎকালীন মুসলমানেরা এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে মুসলিম শাসন। যারা নবীদের সাথে যোগ দেয়নি তারা রয়ে গিয়েছিল অবিশ্বাসী ও অমুসলিম ইহুদি হিসেবে। আল্লাহর নবীবিরোধী ইহুদি ধারার সূত্রপাত বস্তুত এভাবেই।
উল্লেখ্য, যে মক্কা-মদিনাসহ জেরুসালেম ও এই শহরগুলোর আশপাশের বিস্তৃত অঞ্চল আল্লাহ পাকের বিশেষ এলাকার অন্তর্ভুক্ত (২:১২৫; ৩:৯৬৯৭; ২২:২৬; ১৭:১; ৪৮:২৪ এবং এ সংক্রান্ত সহি হাদিসগুলো দ্রষ্টব্য)। এই অঞ্চল বস্তুত পে পৃথিবীর বুকে আল্লাহ তায়ালার রাজধানীবিশেষ। সে জন্য এই এলাকাতেই এসেছেন বিখ্যাত সব নবী-রাসূল। এখান থেকেই দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে আল্লাহর সব নির্দেশাবলি তথা কমান্ডস।
আর এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে দুনিয়া এবং হচ্ছে এখনো। আল্লাহ পাকের সেই অগণিত নবী-রাসূল এবং তাঁদের সহযোগীরাই মূলত ছিলেন এ অঞ্চল তথা জেরুসালেম গড়ে তোলার প্রধান কারিগর। সেই নবী-রাসূলদেরই অন্যতম ছিলেন হজরত দাউদ আ: এবং তাঁর সুযোগ্য পুত্র হজরত সোলায়মান আ:। ইহুদিরাও তা জানে ও মানে, তবে তাদের সেই মান্য করা নবীদের সময়কালে হয়ে ওঠেনি। কারণ নবীদের তাঁদের জীবদ্দশায় মেনে নিলে ইহুদিরা আর ইহুদি থাকত না, তারা মুসলমান হয়ে যেত।
অথচ সেই ইহুদিদের কাছেই হজরত ইব্রাহিম, ইউসুফ, মূসা, দাউদ ও সোলায়মান আ:সহ ওই অঞ্চলের সব নবী-রাসূল এবং সে সময়ের সব কুলীন ঈমানদার ও বুজুর্গ ব্যক্তিরা এখন অতি সম্মানিত। ইহুদিদের জাতীয় প্রতীক হিসেবে তাদের পতাকাতেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ডেভিড’ ‘স্রষ্টার’ তথা দাউদ আ:-এর তারকাচিহ্ন। এতে বোঝা যায় যে ইব্রাহিম আ:-এর মতো হজরত হুদ, ইয়াকুব, ইউসুফ, মূসা, দাউদ ও সোলায়মান আ:কেও ইহুদিরা তাদের নিজেদের জাতিভুক্ত বলেই মনে করে এসেছে সব সময়। কিন্তু পরম সত্যের চরম কথা হলো মহান আল্লাহ পাকের বিশিষ্ট ওই নবী-রাসূলগণ এলাকার বিচারে বৃহত্তর ইয়াহুদ অঞ্চলের অধিবাসী হয়তো ছিলেন, নির্দিষ্ট একটা গোত্রেও জন্মেছিলেন অবশ্যই; কিন্তু তাঁর কখনোই অবাধ্য ইহুদিদের দলভুক্ত ছিলেন না, বরং তাঁরা ছিলেন খাঁটি মুসলমান।
তাঁরা মুসলমান ছিলেন। কারণ তাঁরা বিশ্বস্ত ছিলেন এক আল্লাহর প্রতি, আল্লাহ পাকের সব হুকুম-আহকামের প্রতি, কাল ভেদে সেগুলোর পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রতি এবং অনুগত ছিলেন তাঁদের উত্তরসূরি অনাগত সব নবী-রাসূলসহ শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নবুয়তের প্রতিও। উল্লেখ্য, আল্লাহ পাকের নবী হওয়ার জন্য প্রথম শর্তই হলো মুসলমান হওয়া আর মুসলমান হওয়ার অন্যতম শর্ত আল্লাহ পাকের সব নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করা।
অর্থাৎ একালে মুসলমান হতে হলে যেমন অতীতের সব নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করা আবশ্যক, তেমনি অতীতের ঈমানদারেরাও বাধ্য ছিলেন তাদের আগের নবীরা এবং অব্যাহত পরের নবী থেকে শুরু করে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত সব ভবিষ্যৎ নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করতে। সে জন্যই অতীতের প্রত্যেক নবী তাঁদের নিজ নিজ উম্মতের কাছে বিস্তারিত বলেছেন, আরবের বুকে শেষ নবীর আগমনের বিষয়ে এবং তাদের নির্দেশ দিয়েছেন নিজেদের জীবদ্দশায় নবীজির দেখা পেলে সাথে সাথে অন্য সব নবুয়ত ছেড়ে নবীজির নবুয়তের অনুসারী হতে।
এ কারণেই হজরত ইব্রাহিম, ইউসুফ, মূসা, দাউদ ও সোলায়মান আ:সহ সব নবী-রাসূলই ছিলেন শুধুই মুসলমান এবং নিখাঁদ মুসলমান। বংশ ও আঞ্চলিক পরিচিতি তাঁদের অবশ্যই ছিল; কিন্তু তা কখনোই স্থান পায়নি তাঁদের বিশ্বজনীন মুসলিম পরিচয়ের ওপরে।
এই মুসলিম জাতিসত্তা বস্তুত একটা ‘গ্লোবাল কনসেপ্ট’। এটা দেশ, কাল বা এলাকাভিত্তিক জাতির মতো খণ্ডিত, ুদ্র বা বিচ্ছিন্ন কোনো জাতীয়তা নয়। যে মুসলিম, সে মূলত একজন ইউনিভার্সাল সিটিজেন তথা বিশ্বনাগরিক। কারণ আল্লাহ নিজে ইউনিভার্সাল, তাই তাঁর একান্ত অনুগতরাও স্বাভাবিকভাবেই ইউনিভার্সাল তথা বিশ্বজনীন হতে বাধ্য। নিজের দেশ, কাল এবং এলাকার পরিচয় ঠিক রেখেও এ ইউনিভার্সাল সিটিজেন হওয়া সম্ভব।
তাই একজন মুসলমানের থাকতে পারে বাংলাদেশী, ভারতীয়, ইউরোপিয়ান, আমেরিকান বা আরবীয় পরিচয়। সে হতে পারে মুসলিম বাংলাদেশী, মুসলিম আরব অথবা মুসলিম আমেরিকান। অর্থাৎ প্রথমে সে একজন মুসলমান তারপর অন্য কিছু। এটাই একজন প্রকৃত মুসলমানের তথা সত্যিকারের ইউনিভার্সাল সিটিজেনের পরিচয়। এমন সিটিজেনদের জন্য বিশ্বের সব এলাকাই নিজস্ব এলাকা এবং সব জাতিই আপন জাতি তথা মানবজাতি। এটা বিশ্বভ্রাতৃত্বের মূল কথা। একতার এই তত্ত্ব আল্লাহ পাক অনাদিকাল ধরে মানুষের মধ্যে প্রচার করেছেন তাঁর নবী-রাসূলদের মাধ্যমে।
দুনিয়ার বুকে আল্লাহ পাকের সব নবী-রাসূল এবং তাঁদের সাহাবিরা সবাই ছিলেন এই বিশ্বনাগরিক, যদিও তাদের জন্ম-কর্মের জন্য ছিল নির্দিষ্ট এলাকা, ছিল নিজস্ব জনগণ ও ভাষা। তারা বিশ্বনাগরিক ছিলেন, কারণ তাঁদের বক্তব্য ও জীবনব্যবস্থা ছিল বিশ্বজনীন এবং তা প্রযোজ্য ছিল জগতব্যাপী। বিশ্বায়নের প্রয়োজনেই তাঁদের মিশনগুলো সবসময়ই ছাড়িয়ে গেছে তাদের নিজস্ব এলাকার সীমানা এবং ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। সে জন্যই তাঁদের সাথে নির্বিবাদে যুক্ত হতে পেরেছে বিশ্বের সব এলাকার সব শ্রেণীর মানুষ। এরাই একত্রে লাভ করেছে সম্মিলিত মুসলিম জাতি ও জনতার পরিচিতি।
একইভাবে হজরত দাউদ ও সোলায়মান আ:-এর নেতৃত্বাধীন মুসলিম জাহানেও যুক্ত হয়েছিল তাঁদের কালের বিবিধ দল, উপদল, জাতি ও গোত্র। তেমন অন্তর্ভুক্তির উদাহরণ হিসেবে সাবার রানী কর্তৃক পুরো জাতিসহ হজরত সোলায়মান আ:-এর রাজত্বে একীভূত হওয়ার কাহিনী গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে পবিত্র আল কুরআনে (২৭:২৯-৪২ দ্রষ্টব্য)। এমনকি তৎকালীন ইয়াহুদ বা বনি ইসরাইল গোষ্ঠীরও যারা ঈমান এনেছিল হজরত দাউদ ও সোলায়মান আ:-এর প্রতি, তারা অধিভুক্ত হয়েছে মুসলিম জাতির মধ্যে। আর এ মুসলমানরাই আল্লাহর নবীদের প্রত্য তত্ত্বাবধানে বিকশিত করেছিল আদি নবীদের হাতে সৃষ্ট প্রাচীন জেরুসালেম নগরীকে, গড়ে তুলেছিলেন আধুনিক জেরুসালেম।
নতুন আঙ্গিকের এই জেরুসালেমকেই বোধ করি তারা তিন হাজার বছর আগের জেরুসালেম বলছেন। কিন্তু সেটার নির্মাণেও তারা ছিলেন না। কারণ মুসলমান না হওয়ার কারণে তারা থেকে গিয়েছিলেন তাদের মূল গোষ্ঠীর নামে তথা ইহুদি ও অন্যান্য জাতিসত্তা হিসেবে। তারা ছিল অমুসলিম আর আল্লাহর নবীদের যেকোনো কাজের বিরোধিতা করাই ছিল এই অমুসলিমদের সব সময়ের একমাত্র কাজ। তাই ওই ইহুদিরা যে আল্লাহর নবীদের জেরুসালেম গড়ার কাজে অংশ নেয়নি তা বলাইবাহুল্য। আজকের ইহুদিরা সেই অমুসলিম ইহুদিদেরই উত্তরসূরি। তাই জেরুসালেমের উপর এদের অধিকারের দাবি একেবারেই অসার ও ভিত্তিহীন।
উল্লেখ্য, এমন পাথুরে পাহাড়ি এলাকায় অট্টালিকা তৈরি করাও ছিল সে যুগের মানুষের বিদ্যা, বুদ্ধি ও শক্তির বাইরে। দুরূহ ওই কাজগুলো মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছিলেন পরম দয়াময় আল্লাহ পাক। এ ল্েয তিনি হজরত দাউদ আ:কে দিয়েছিলেন লোহা গালানোর বিশেষ মতা আর সোলায়মান আ:-এর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন তামার খনি। এ ছাড়া হজরত সোলায়মান আ:কে দেয়া হয়েছিল বিশাল দেহী শক্তিশালী জ্বিনদের ওপর পূর্ণ অধিকার, তারা সোলায়মান আ:-এর আদেশে অংশ নিতো কঠিন সব নির্মাণকাজে (৩৪:১০-১৩ দ্রষ্টব্য)। মহান আল্লাহ তায়ালার এসব দয়ার দান কাজে লাগিয়েই হজরত দাউদ-সোলায়মান তথা বাবা-ছেলে গড়ে তুলেছিলেন নয়নাভিরাম জেরুসালেম নগরী।
আল্লাহ পাকের সেই সব অপার রহমতের অনেক নমুনা এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সিনাই পর্বতমালাজুড়ে। সম্প্রতি সেখানে পাওয়া গেছে বহুকাল আগের তামার খনি, যাকে বলা হচ্ছে সোলায়মানের তামার খনি। ব্যাপক তামা উত্তোলনের চিহ্নও সেখানে বিদ্যমান এখনো। কিন্তু খনিগুলো এতই সরু ও দুর্গম যেকোনো মানুষের পে কোনোভাবেই সম্ভব নয় সেখান থেকে তামা বের করে তা শহর পর্যন্ত বহন করা, যা কি না সোলায়মান আ:-এর জন্য জ্বিন কর্তৃক তামা আহরণের কুরআনিক বিবরণীর সত্য তাকেই প্রতিষ্ঠিত করে (এ সংক্রান্ত নোভা ডকুমেন্টারি দ্রষ্টব্য)।
বলাইবাহুল্য যে আল্লাহ পাক তাঁর এসব বিশেষ দয়া ও ক্ষমতা কখনোই কোনো আল্লাহ-বিরোধী অমুসলিমকে দেন না। কোনো বিধর্মীর পে চেষ্টা করেও তা লাভ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর যত জ্ঞান-বিজ্ঞান, আবিষ্কার-স্থাপনা আছে তার সবই মূল কাঠামো গড়ে উঠেছে এক আল্লাহতে, বিশ্বস্ত কোনো না কোনো মুসলমানের হাতে, আল্লাহ পাকেরই একান্ত দয়ার দান তথা পুরস্কার হিসেবে। আর সেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত ধ্বংসাত্মক ও তিকর অপপ্রয়োগ সবই হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন তথা আল্লাহ পাকের করুণা লাভে অম অমুসলিমদের হাতে।
এ জন্যই আল্লাহ পাকের সংরতি এলাকায় অনুপম জেরুসালেম নগরীর নির্মাণ যে ছিল শুধু মুসলমানদেরই একক কীর্তি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে আল্লাহ পাকের অবাধ্য কোনো গোষ্ঠীর অংশ নেয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। তাই জেরুসালেমের ওপর উগ্র ইহুদিবাদীদের কর্তৃত্বের দাবি নিতান্তই অবাস্তব।
ইসরাইলি নেতৃত্বের এমন মিথ্যা বাগাড়ম্বর নতুন কিছু নয়। এই মিথ্যা অহমিকাই ছিল ইহুদি জাতির আজন্মকালের সঙ্গী। অহমিকার কারণেই তারা প্রত্যেক নবীর সাথে করেছে দুশমনি আর নবীর মৃত্যুর পর গায়ের জোরে তাঁকে প্রচার করেছে নিজেদের লোক হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা অস্বীকার করেছে শেষ নবী রাসূলুল্লাহ সা:কেও।
নবীজিকে মেনে নিজেদের ইহুদি পরিচয় ঘুচিয়ে মুসলমান হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র অল্প কয়েকজন, বাকিরা আকড়ে থেকেছে তাদের অমুসলিম ইহুদি পরিচিতিকেই শুধু তাদের চরম আত্মগরিমার কারণে, যদিও এই নবীজির আশাতেই তারা তাদের গ্রন্থের নির্দেশনা মতো মদিনাতে বসতি গেড়ে অপো করছিল যুগের পর যুগ ধরে। তারাই কি না এখন নিজেদের দাবি করছে স্রষ্টার প্রিয়পাত্র হিসেবে আর গলাবাজি করে বলে বেড়াচ্ছে যে জেরুসালেমসহ সব কিছুই তাদের হাতে গড়া, তাই সেসব সবই শুধু তাদের। কুটিল এই জাতির এহেন মিথ্যা ধান্ধাবাজি আর উৎপীড়ন বোধ করি পৃথিবী শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর শেষ হবে না।
Comment