আন নাফির বুলেটিন ইস্যু-২৫
“হায়, আমার সম্প্রদায় যদি জানতো!”
রজব || ১৪৩৯ হিজরী
আস সাহাব মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত ও আন নাসর মিডিয়া কর্তৃক বাংলায় অনূদিত
“জেনে রেখো! আমি সেদিনই ভক্ষিত হয়েছি যেদিন সাদা ষাড়টিকে ভক্ষণ করা হয়েছে...”। বাক্যটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে এবং তা সেই প্রসিদ্ধ গল্পরূপী ঘটনার অংশ যেখানে একটি সিংহ আপন ধূর্ততা দিয়ে তিনটি অসতর্ক ষাড়ের উপরও বিজয় লাভ করেছিল...।
আল্লাহ্ তাআলার সর্বজনীন নীতি, যার কখনও খেলাপ ও পরিবর্তন করা হয় না, তা হচ্ছে “পারস্পরিক বিভেদ, অমিল ও ঝগড়া-ঝাটির কারণে দুর্বলতা, কাপুরুষতা ও নৈরাশ্য সৃষ্টি হয়”৷ যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন-
وأطيعوا الله ورسوله ولا تنازعوا فتفشلوا وتذهب ريحكم واصبروا إن الله مع الصابرين
“তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করো না! অন্যথায় তোমরা সাহস হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের মনের দৃঢ়তা ও শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে, আর তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর! নিশ্চই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন”৷ (সুরা আনফাল: ৪৬)
উত্তর সিরিয়ার বিভিন্ন গ্রুপের মাঝে যে মতানৈক্য ও হানাহানি শুরু হয়েছে তাতে সবচে’ বেশী ইন্ধন যুগিয়েছে নুসাইরি ও দোসরেরা, কেননা এ হানাহানি কিছু ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে এবং সেই ফলাফল সূচনালগ্ন থেকেই ভোগ করা শুরু হয়ে গেছে৷
আর এক বিবাদ অন্য বিবাদের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং আগেরটা যেন নতুন মোড়কে এমন কোন নতুন সমস্যা আত্মপ্রকাশ করার আগে শেষ হতে চায় না, যা কোন বিশেষ ল্যাবরেটরিতে পরিকল্পিত এবং তা ত্বরিত গতিতে উত্তেজিত অবস্থায় অনভিজ্ঞ তালিবে ইলমদের থেকে প্রকাশিত এমন কোন নতুন ফতোয়ার অধীনে সংঘটিত হয়ে থাকে, যা আস্ফালন ও স্পর্ধা দেখানোর ক্ষেত্রে কোন অংশেই আগেরটার চেয়ে কম নয়। আর সেটাকে যদি দ্বীনের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকাশ করা হয় তাহলে তা আনসার ও মুহাজির সকলকে তাতে সম্মত করে ফেলবে এবং আল্লাহ্ যার প্রতি রহম করবেন সে ছাড়া সকলেই সংঘবদ্ধ হয়ে যাবে ও বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তির নিকট “আলওয়ালা ওয়ালবারা” একটি জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়াবে৷
আর এসবই জাহেলীয়াতের আহবান৷ যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি জাহেলীয়াতের আহবান দিয়ে ডাকবে সে জাহান্নামে হাঁটু গেড়ে উপবেশনকারীদের একজন”৷ (ইবনে হিব্বান)
যখন আনসারগণ বললেন, হে আনসারের দল! এবং মুহাজিরগণ বললেন, হে মুহাজিরদের দল! তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জাহেলীয়াতের আহবান করার কি হল? অতঃপর বললেন, এটা ছেড়ে দাও; কেননা তা ঘৃণিত কর্ম৷ এই নিষেধাজ্ঞাটি জীবিতদের বংশগৌরবের ক্ষেত্রে ছিল৷ এমনটিই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহঃ বলেছেন৷
সুতরাং আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআতের কর্মপদ্ধতি হচ্ছে- আপনার কারো সাথে বন্ধুত্ব রাখা হবে দ্বীনের স্বার্থে ও কারো সাথে শত্রুতা রাখা হবে দ্বীনের স্বার্থে এবং আপনার কাউকে ভালবাসা হবে দ্বীনের স্বার্থে ও কাউকে ঘৃণা করা হবে দ্বীনের স্বার্থে৷
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন “ইসলামের কোন বন্ধনটি সবচে’ বেশি মজবুত?” হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিঃ বলেন- “আমি বললাম আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলই ভাল জানেন”৷ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- “আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব করা এবং আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা করা”৷ (বাইহাকী)
হকের বাঁক যে দিকেই মোড় নিক না কেন মুসলিমরা হকের সাথেই আবর্তিত হতে থাকবে, কোন দল বা সংগঠন বা ব্যক্তিস্বার্থের সাথে নয়৷
ইমাম শাফিয়ী রহঃ বলেছেন- “সমস্ত মুসলমানের এতে ইজমা রয়েছে যে, যে ব্যক্তির নিকট রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন সুন্নাত স্পষ্ট হয়ে যাবে তার জন্য অন্য কোন ব্যক্তির কথায় তা ছেড়ে দেওয়া জায়েয হবে না৷ (ই’লামুল মুওয়াক্কিয়ী’ন/মাদারিজুস সালিকীন)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহঃ বলেছেন- সুতরাং কারে জন্য নিজের প্রবৃত্তির বা দলের বা সংগঠনের বশবর্তী হয়ে হককে প্রত্যাখ্যান করে অন্য কিছুর অনুসরণ করা জায়েয হবে না৷ বরং তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত একমাত্র আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত করা, তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা এবং হকের অনুসরণ করা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা৷ আর এটাই হল “আলওয়ালা ওয়ালবারা” এর সবচে’ সুক্ষ্ম মাসআলা৷
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহঃ বলেছেন-
“যে ব্যক্তি কোন দলের দায়িত্ব নেয় তাকে সে দলের জিম্মাদার বলা হয়৷ সুতরাং সে যদি কোন ভালো কাজের দায়িত্ব নেয় তাহলে সেজন্য সে প্রশংসিত হয়, আর যদি সে কোন মন্দ কাজের দায়িত্ব নেয় তাহলে সেজন্য সে তিরস্কৃত হয়৷
আর সংগঠনের প্রধান ঐ ব্যক্তি যিনি কোন সংঘবদ্ধ দলের প্রধান৷ সুতরাং যদি তাঁরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বিষয়ের আদেশ দিয়েছেন তাতে কোনরূপ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি করা ব্যতিত জমে থাকে তাহলে তারা মুমিন। তাঁদের জন্য ঐ সকল সুবিধাগুলো থাকবে যা মুমিনদের জন্য থাকে এবং তাদের প্রতি ঐ সকল অসুবিধাগুলো আরোপিত হবে যা মুমিনদের প্রতি আরোপিত হয়ে থাকে৷ আর যদি তারা এতে কোন কমবেশি করে যেমনঃ তাদের সংগঠনে যারা যোগদান করেছে ন্যায়-অন্যায় সর্বক্ষেত্রে তাদের প্রতি স্বদলপ্রীতি করে, আর যারা তাদের সংগঠনে যোগদান করেনি; চাই সে ন্যায়ের ওপর থাকুক অথবা অন্যায়ের উপর থাকুক সর্বক্ষেত্রে তাদেরকে বর্জন করে চলে তাহলে এটাই হবে সেই বিচ্ছিন্নতা, যার তিরস্কার আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন৷ কেননা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিতভাবে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং মতানৈক্য ও বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে নিষেধ করেছেন৷ তেমনিভাবে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে পরস্পরকে সহায়তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে পরস্পরকে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন”৷ (আল ফাতাওয়া/রাসায়িলু ওয়া মাসায়িলু ইবনি তাইমিয়্যাহ)
আর সর্বনিকৃষ্ট সংঘবদ্ধতা হচ্ছে উহা, যা মুসলমানদের রক্তক্ষরণের জন্য এমন এক সময় করা হয়, যখন শত্রুরা আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে নিচ্ছে ও বৃত্তাবৃত করার প্রত্যাশা করছে এবং এই প্রতীক্ষা করছে যে, সৈন্যদের হত্যা করা, সরঞ্জাম ধ্বংস করা ও গোলাবারুদ ক্ষয় করার মাধ্যমে আমাদের একদল আরেকদলকে নিঃশেষ করে দিবে৷ নিঃসন্দেহে তখন আমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হবে; কিন্তু তা হবে এমন সময়ে যখন অনুশোচনা আমাদের কোনই কাজে আসবে না৷
শামের জিহাদে তার সূচনালগ্ন থেকেই ও দখলদারদের পাশবিক নির্যাতনকাল থেকেই নিরবচ্ছিন্নভাবে অবিরাম রক্তপাত, ইজ্জত লঙ্ঘন এবং সুন্নিদেরকে তাঁদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়ন করা চলে আসছে৷ বিশেষকরে “গুতা” অঞ্চলের মুসলিমদের তাঁবুতে যারা রয়েছে৷ সেখানে মানুষ ক্রমাগতভাবে গণহত্যার ভয়ে আতঙ্কিত থাকে৷ তাই আমাদের উচিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো৷ সুতরাং এ কথাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, যাবৎ আমরা ইসলামের চৌহদ্দির ভেতর বাকি থাকবো তাবৎ আমাদের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়ে ও নিজেদের মধ্যকার সকল বিরোধকে কমিয়ে এনে শত্রুর বিরুদ্ধে সকলে কেন্দ্রীভূত হয়ে একে অপরকে সহায়তা করার কোন বিকল্প নেই৷
সুতরাং এর উপর-ই ভিত্তি করে আমরা সকলকে হানাহানি বন্ধ করা, আল্লাহর শরীয়তের প্রতি মনোনিবেশ করা এবং আল্লাহর রজ্জু আঁকড়ে ধরার আহবান জানাচ্ছি৷ আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন-
فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما *
“অতএব তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা কখনও বিশ্বাস স্থাপনকারী হতে পারে না, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক হিসেবে মেনে না নিবে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তারা তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করবে এবং ওটা শান্তভাবে পরিগ্রহণ না করবে”৷ (সুরা নিসা: ৬৫)
واعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرقوا
“আর তোমরা একযোগে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়রূপে ধারণ কর ও বিভক্ত হয়ে যেয়ো না”৷ (সুরা আল ইমরান: ১০৩)
আমরা বিভিন্ন গ্রুপের সকল ভাইদেরকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদিসদ্বয় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-
بينكم حرام إن دمائكم وأموالكم وأعراضكم
“নিঃসন্দেহে তোমাদের রক্ত, ধন-সম্পদ ও ইজ্জত তোমাদের মধ্যে হারাম”৷
كل المسلم على المسلم حرام، دمه وعرضه ماله
“প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, ধন-সম্পদ ও ইজ্জত অপর মুসলমানের উপর হারাম”৷
আর যে সকল ভাইয়েরা সেই হানাহানিতে এখন পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেননি আমরা তাদেরকে লক্ষ্য করে বলছি, আপনারা আপনাদের অবস্থানেই দৃঢ় থাকুন৷ হযরত আলী রাযিঃ ও হযরত মুআবিয়া রাযিঃ এর মাঝে চলমান লড়াইয়ে হযরত সাআদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাযিঃ অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন৷ অথচ সেই দুই গ্রুপে হযরত আলী রাযিঃ এর পর তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন মানুষ ছিলেন না৷ এবং আপনারা গ্রুপগুলোর মাঝে মীমাংসা করে দেয়ার ও তাদেরকে আল্লাহর শরীয়তের দিকে মনোনিবেশের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণে এবং নুসাইরী শত্রু ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সকল শক্তি কেন্দ্রীভূতকরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান৷ এতেই আপনাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে এবং এতেই আপনাদের সম্মান ও মর্যাদা নিহিত রয়েছে৷
আমরা মহাশক্তিধর সুমহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থণা করি যে, তিনি যেন প্ররোচকদের সকল ষড়যন্ত্র অকৃতকার্য করে দেন এবং তাঁর মুজাহিদ বান্দাদের হৃদয়ে মুহাব্বত সৃষ্টি করে দেন ও তাঁদের বক্তব্যকে হক ও হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দেন এবং তাঁদের প্রতি তাঁর সুস্পষ্ট সাহায্য অবতীর্ণ করেন৷
অনলাইনে পড়ুন- http://risala.ga/78uj/
ডাউনলোড করুন
পিডিএফ
ওয়ার্ড
ইমেজ
“হায়, আমার সম্প্রদায় যদি জানতো!”
রজব || ১৪৩৯ হিজরী
আস সাহাব মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত ও আন নাসর মিডিয়া কর্তৃক বাংলায় অনূদিত
“জেনে রেখো! আমি সেদিনই ভক্ষিত হয়েছি যেদিন সাদা ষাড়টিকে ভক্ষণ করা হয়েছে...”। বাক্যটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে এবং তা সেই প্রসিদ্ধ গল্পরূপী ঘটনার অংশ যেখানে একটি সিংহ আপন ধূর্ততা দিয়ে তিনটি অসতর্ক ষাড়ের উপরও বিজয় লাভ করেছিল...।
আল্লাহ্ তাআলার সর্বজনীন নীতি, যার কখনও খেলাপ ও পরিবর্তন করা হয় না, তা হচ্ছে “পারস্পরিক বিভেদ, অমিল ও ঝগড়া-ঝাটির কারণে দুর্বলতা, কাপুরুষতা ও নৈরাশ্য সৃষ্টি হয়”৷ যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন-
وأطيعوا الله ورسوله ولا تنازعوا فتفشلوا وتذهب ريحكم واصبروا إن الله مع الصابرين
“তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করো না! অন্যথায় তোমরা সাহস হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের মনের দৃঢ়তা ও শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে, আর তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর! নিশ্চই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন”৷ (সুরা আনফাল: ৪৬)
উত্তর সিরিয়ার বিভিন্ন গ্রুপের মাঝে যে মতানৈক্য ও হানাহানি শুরু হয়েছে তাতে সবচে’ বেশী ইন্ধন যুগিয়েছে নুসাইরি ও দোসরেরা, কেননা এ হানাহানি কিছু ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে এবং সেই ফলাফল সূচনালগ্ন থেকেই ভোগ করা শুরু হয়ে গেছে৷
আর এক বিবাদ অন্য বিবাদের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং আগেরটা যেন নতুন মোড়কে এমন কোন নতুন সমস্যা আত্মপ্রকাশ করার আগে শেষ হতে চায় না, যা কোন বিশেষ ল্যাবরেটরিতে পরিকল্পিত এবং তা ত্বরিত গতিতে উত্তেজিত অবস্থায় অনভিজ্ঞ তালিবে ইলমদের থেকে প্রকাশিত এমন কোন নতুন ফতোয়ার অধীনে সংঘটিত হয়ে থাকে, যা আস্ফালন ও স্পর্ধা দেখানোর ক্ষেত্রে কোন অংশেই আগেরটার চেয়ে কম নয়। আর সেটাকে যদি দ্বীনের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকাশ করা হয় তাহলে তা আনসার ও মুহাজির সকলকে তাতে সম্মত করে ফেলবে এবং আল্লাহ্ যার প্রতি রহম করবেন সে ছাড়া সকলেই সংঘবদ্ধ হয়ে যাবে ও বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তির নিকট “আলওয়ালা ওয়ালবারা” একটি জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়াবে৷
আর এসবই জাহেলীয়াতের আহবান৷ যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি জাহেলীয়াতের আহবান দিয়ে ডাকবে সে জাহান্নামে হাঁটু গেড়ে উপবেশনকারীদের একজন”৷ (ইবনে হিব্বান)
যখন আনসারগণ বললেন, হে আনসারের দল! এবং মুহাজিরগণ বললেন, হে মুহাজিরদের দল! তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জাহেলীয়াতের আহবান করার কি হল? অতঃপর বললেন, এটা ছেড়ে দাও; কেননা তা ঘৃণিত কর্ম৷ এই নিষেধাজ্ঞাটি জীবিতদের বংশগৌরবের ক্ষেত্রে ছিল৷ এমনটিই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহঃ বলেছেন৷
সুতরাং আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআতের কর্মপদ্ধতি হচ্ছে- আপনার কারো সাথে বন্ধুত্ব রাখা হবে দ্বীনের স্বার্থে ও কারো সাথে শত্রুতা রাখা হবে দ্বীনের স্বার্থে এবং আপনার কাউকে ভালবাসা হবে দ্বীনের স্বার্থে ও কাউকে ঘৃণা করা হবে দ্বীনের স্বার্থে৷
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন “ইসলামের কোন বন্ধনটি সবচে’ বেশি মজবুত?” হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিঃ বলেন- “আমি বললাম আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলই ভাল জানেন”৷ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- “আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব করা এবং আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা করা”৷ (বাইহাকী)
হকের বাঁক যে দিকেই মোড় নিক না কেন মুসলিমরা হকের সাথেই আবর্তিত হতে থাকবে, কোন দল বা সংগঠন বা ব্যক্তিস্বার্থের সাথে নয়৷
ইমাম শাফিয়ী রহঃ বলেছেন- “সমস্ত মুসলমানের এতে ইজমা রয়েছে যে, যে ব্যক্তির নিকট রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন সুন্নাত স্পষ্ট হয়ে যাবে তার জন্য অন্য কোন ব্যক্তির কথায় তা ছেড়ে দেওয়া জায়েয হবে না৷ (ই’লামুল মুওয়াক্কিয়ী’ন/মাদারিজুস সালিকীন)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহঃ বলেছেন- সুতরাং কারে জন্য নিজের প্রবৃত্তির বা দলের বা সংগঠনের বশবর্তী হয়ে হককে প্রত্যাখ্যান করে অন্য কিছুর অনুসরণ করা জায়েয হবে না৷ বরং তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত একমাত্র আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত করা, তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা এবং হকের অনুসরণ করা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা৷ আর এটাই হল “আলওয়ালা ওয়ালবারা” এর সবচে’ সুক্ষ্ম মাসআলা৷
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহঃ বলেছেন-
“যে ব্যক্তি কোন দলের দায়িত্ব নেয় তাকে সে দলের জিম্মাদার বলা হয়৷ সুতরাং সে যদি কোন ভালো কাজের দায়িত্ব নেয় তাহলে সেজন্য সে প্রশংসিত হয়, আর যদি সে কোন মন্দ কাজের দায়িত্ব নেয় তাহলে সেজন্য সে তিরস্কৃত হয়৷
আর সংগঠনের প্রধান ঐ ব্যক্তি যিনি কোন সংঘবদ্ধ দলের প্রধান৷ সুতরাং যদি তাঁরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বিষয়ের আদেশ দিয়েছেন তাতে কোনরূপ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি করা ব্যতিত জমে থাকে তাহলে তারা মুমিন। তাঁদের জন্য ঐ সকল সুবিধাগুলো থাকবে যা মুমিনদের জন্য থাকে এবং তাদের প্রতি ঐ সকল অসুবিধাগুলো আরোপিত হবে যা মুমিনদের প্রতি আরোপিত হয়ে থাকে৷ আর যদি তারা এতে কোন কমবেশি করে যেমনঃ তাদের সংগঠনে যারা যোগদান করেছে ন্যায়-অন্যায় সর্বক্ষেত্রে তাদের প্রতি স্বদলপ্রীতি করে, আর যারা তাদের সংগঠনে যোগদান করেনি; চাই সে ন্যায়ের ওপর থাকুক অথবা অন্যায়ের উপর থাকুক সর্বক্ষেত্রে তাদেরকে বর্জন করে চলে তাহলে এটাই হবে সেই বিচ্ছিন্নতা, যার তিরস্কার আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন৷ কেননা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিতভাবে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং মতানৈক্য ও বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে নিষেধ করেছেন৷ তেমনিভাবে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে পরস্পরকে সহায়তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে পরস্পরকে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন”৷ (আল ফাতাওয়া/রাসায়িলু ওয়া মাসায়িলু ইবনি তাইমিয়্যাহ)
আর সর্বনিকৃষ্ট সংঘবদ্ধতা হচ্ছে উহা, যা মুসলমানদের রক্তক্ষরণের জন্য এমন এক সময় করা হয়, যখন শত্রুরা আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে নিচ্ছে ও বৃত্তাবৃত করার প্রত্যাশা করছে এবং এই প্রতীক্ষা করছে যে, সৈন্যদের হত্যা করা, সরঞ্জাম ধ্বংস করা ও গোলাবারুদ ক্ষয় করার মাধ্যমে আমাদের একদল আরেকদলকে নিঃশেষ করে দিবে৷ নিঃসন্দেহে তখন আমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হবে; কিন্তু তা হবে এমন সময়ে যখন অনুশোচনা আমাদের কোনই কাজে আসবে না৷
শামের জিহাদে তার সূচনালগ্ন থেকেই ও দখলদারদের পাশবিক নির্যাতনকাল থেকেই নিরবচ্ছিন্নভাবে অবিরাম রক্তপাত, ইজ্জত লঙ্ঘন এবং সুন্নিদেরকে তাঁদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়ন করা চলে আসছে৷ বিশেষকরে “গুতা” অঞ্চলের মুসলিমদের তাঁবুতে যারা রয়েছে৷ সেখানে মানুষ ক্রমাগতভাবে গণহত্যার ভয়ে আতঙ্কিত থাকে৷ তাই আমাদের উচিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো৷ সুতরাং এ কথাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, যাবৎ আমরা ইসলামের চৌহদ্দির ভেতর বাকি থাকবো তাবৎ আমাদের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়ে ও নিজেদের মধ্যকার সকল বিরোধকে কমিয়ে এনে শত্রুর বিরুদ্ধে সকলে কেন্দ্রীভূত হয়ে একে অপরকে সহায়তা করার কোন বিকল্প নেই৷
সুতরাং এর উপর-ই ভিত্তি করে আমরা সকলকে হানাহানি বন্ধ করা, আল্লাহর শরীয়তের প্রতি মনোনিবেশ করা এবং আল্লাহর রজ্জু আঁকড়ে ধরার আহবান জানাচ্ছি৷ আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন-
فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما *
“অতএব তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা কখনও বিশ্বাস স্থাপনকারী হতে পারে না, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক হিসেবে মেনে না নিবে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তারা তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করবে এবং ওটা শান্তভাবে পরিগ্রহণ না করবে”৷ (সুরা নিসা: ৬৫)
واعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرقوا
“আর তোমরা একযোগে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়রূপে ধারণ কর ও বিভক্ত হয়ে যেয়ো না”৷ (সুরা আল ইমরান: ১০৩)
আমরা বিভিন্ন গ্রুপের সকল ভাইদেরকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদিসদ্বয় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-
بينكم حرام إن دمائكم وأموالكم وأعراضكم
“নিঃসন্দেহে তোমাদের রক্ত, ধন-সম্পদ ও ইজ্জত তোমাদের মধ্যে হারাম”৷
كل المسلم على المسلم حرام، دمه وعرضه ماله
“প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, ধন-সম্পদ ও ইজ্জত অপর মুসলমানের উপর হারাম”৷
আর যে সকল ভাইয়েরা সেই হানাহানিতে এখন পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেননি আমরা তাদেরকে লক্ষ্য করে বলছি, আপনারা আপনাদের অবস্থানেই দৃঢ় থাকুন৷ হযরত আলী রাযিঃ ও হযরত মুআবিয়া রাযিঃ এর মাঝে চলমান লড়াইয়ে হযরত সাআদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাযিঃ অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন৷ অথচ সেই দুই গ্রুপে হযরত আলী রাযিঃ এর পর তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন মানুষ ছিলেন না৷ এবং আপনারা গ্রুপগুলোর মাঝে মীমাংসা করে দেয়ার ও তাদেরকে আল্লাহর শরীয়তের দিকে মনোনিবেশের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণে এবং নুসাইরী শত্রু ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সকল শক্তি কেন্দ্রীভূতকরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান৷ এতেই আপনাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে এবং এতেই আপনাদের সম্মান ও মর্যাদা নিহিত রয়েছে৷
আমরা মহাশক্তিধর সুমহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থণা করি যে, তিনি যেন প্ররোচকদের সকল ষড়যন্ত্র অকৃতকার্য করে দেন এবং তাঁর মুজাহিদ বান্দাদের হৃদয়ে মুহাব্বত সৃষ্টি করে দেন ও তাঁদের বক্তব্যকে হক ও হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দেন এবং তাঁদের প্রতি তাঁর সুস্পষ্ট সাহায্য অবতীর্ণ করেন৷
অনলাইনে পড়ুন- http://risala.ga/78uj/
ডাউনলোড করুন
পিডিএফ
ওয়ার্ড
ইমেজ
Comment